

কেউ কি আপনাকে অনুসরণ করছে? নজরদারির শিকার সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ
লন্ডন শহরের ঠান্ডা শীতের এক দিন: উঁচু উঁচু ভবনগুলোর ফাঁক গলে শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। জানালায় ঝলমল করছে সূর্যের আলো। নগরকর্মীরা তাদের স্কার্ফগুলো আরো আঁটসাঁট করে গলায় জড়িয়ে নিচ্ছেন।
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাংবাদিকদের মধ্যে আমিও একজন। নজরদারি মোকাবিলার বিভিন্ন কৌশল হাতেকলমে শেখার জন্য জড়ো হয়েছি। মূলত এটাই দেখার চেষ্টা করা হবে যে, নজরদারির শিকার হচ্ছেন—এমনটা জানার পরও ওই রিপোর্টার তাঁর অনুসরণকারীকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হচ্ছেন কিনা।
দু’জন করে একটা দল তৈরি করে আমাদের বলা হলো নির্দিষ্ট পথ ধরে যেতে —আমাদের গন্তব্য ব্লুমবার্গের অফিস থেকে কাছের একটি মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত। সেখান থেকে কয়েক পা দূরে সেন্ট পল ক্যাথেড্রাল । তারপর হেঁটে একটি শপিং মলের দিকে এগোতে হবে। যেখানে আবার অন্তত ৬০ সেকেন্ড দাঁড়াতে হবে। আমরা এক মাইলেরও কম পথ পাড়ি দিচ্ছি। কিন্তু এইটুকু পথের মধ্যেই আমাদের পাঁচটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
আমরা জানি যে আমাদের অনুসরণ করা হচ্ছে। আমাদের ওপর চোখ রাখার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের সবার কাছে আমাদের ছবি পাঠানো হয়েছে। তাই তাঁরা জানে আমরা কী পোশাক পরেছি, কার সঙ্গে আছি। এমনকি আমরা কোন পথে যাবো—সেটাও।
আমাদের কাজ হলো কারা আমাদের ওপর চোখ রাখছে, তা চিহ্নিত করা এবং কিছু বুঝতে না দিয়েই আমরা যে তাদের চিনে ফেলেছি তা প্রমাণের জন্য তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য মনে রাখা। (তবে তারা যদি ধরে ফেলে যে আমরা তাদের চিনতে পেরেছি, তাহলে আমরা বাদ পড়ব। কারণ বাস্তব পরিস্থিতিতে, নিজের পিছু নেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি চোখাচোখি করা নিরাপদ নয়।)
অনেকেই মনে করছেন যে, ১৬ জন সাংবাদিকের একটি দলের জন্য এ কাজটি মোটেও কঠিন নয়। দলের মধ্যে আবার রয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, সংবাদমাধ্যমের খ্যাতনামা সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্সার আর সম্পাদক। এদের মধ্যে কারো কারো আবার চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে প্রশিক্ষণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। কেউ কেউ নিরাপত্তা প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। তাদের জন্য এ কাজটি খুব একটা কঠিন না—শুনতে এমন মনে হয়, তাই না?
তাছাড়া একদল সাংবাদিক একসঙ্গে থাকলে ধরে নেওয়া হয় যে এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই ছোটখাট খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ধরতে পারদর্শী হবেন। কেউ হয়তো কখনও ছদ্মবেশ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে, পেশাগতভাবে একজন রিপোর্টার মানুষের আচরণ, পরিস্থিতি ও ঘটনা পর্যবেক্ষণে দক্ষ হবেন। তাহলে আমরা কতজন অনুসরণকারীকে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন বলে মনে হয়? উত্তর, একজনও না।
“আমি ভেবেছিলাম: ‘তিনি নিশ্চয়ই একজন পুরুষ হবেন,’ আমার মনে এ ধারণাটাই গেঁথে ছিল,” বলেন এক নারী সাংবাদিক, যাকে আসলে অনুসরণ করছিলেন আরেকজন নারীই। আমার সঙ্গী ও আমি কিছু লোককে লক্ষ্য করেছিলাম, যাঁরা খুবই সাদামাটা জায়গায় ছবি তুলছিলেন—সাধারণ রাস্তার এক কোণে, অথবা টিউব স্টেশনের বাইরে। কয়েকজনকে সন্দেহজনকও লাগছিল। কিন্তু আমরা তখনই নিশ্চিত হলাম, যখন দুইজন তরুণ আমাদের সঙ্গে একই ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে উঠল এবং আমাদের সঙ্গেই যাত্রা করল। যেহেতু আমরা শেষ কামরায় ছিলাম, তাই স্পষ্ট দেখতে পেলাম যে তারা আমাদের সঙ্গে একই স্টেশনে নেমে ধীরগতিতে হাঁটছে। আমরা যেখান থেকে তাদের দেখছি— তা ছিল তাদের নজরের বাইরে— জায়গাটা এতই ভালো ছিল যে আমি একটি ছবিও তুলে ফেলি।
অথচ পরে জানা গেল, তাঁরা আসলে আমাদের মতোই অন্য দুই সাংবাদিক, একই অনুশীলনে অংশ নিচ্ছিলেন।
আরও খারাপ হলো, যখন টের পেলাম যে, আমি তাদের একজনকে চিনতাম—কিন্তু তাঁর চেহারা খেয়ালই করিনি।
আমরা এতটাই নিশ্চিত ছিলাম যে আমাদের পিছু নেওয়া লোকদের ধরে ফেলেছি—এরপর আর কাউকে খোঁজার দরকার মনে করিনি।
আমাদের আসল অনুসরণকারী ছিলেন একজন নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। যিনি চেকার্ড কোট ও বিনি টুপি পরে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না জাগিয়ে নিশ্চিন্তে আমাদের অনুসরণ করছিলেন। পরে তিনি আমাদের দেখালেন যে, আমার সবুজ কোট কীভাবে আমাকে সহজেই শনাক্তযোগ্য করে তুলেছিল। আর তিনি সবসময় যা পরেন, তাই পরেছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষের সাথে অনায়াসে মিশে যেতে পেরেছিলেন। এমনকি তিনি তাঁর কুকুরটিকেও সাথে আনার কথা ভেবেছিলেন। কারণ কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছেন এমন কাউকে সহজে সন্দেহ করার কথা মাথায় আসে না।
একটি দল ভীষণ অবাক হয়ে যায়—যখন তাঁরা জানতে পারে যে তাদের অনুসরণ করেছিল মূলত লম্বা স্কার্ফ পরা এক তরুণ। যাকে দেখলে মনে হয় তাঁর গন্তব্য কোনো বিনিয়োগ ব্যাংকের দিকে। কিন্তু ওই তরুণ আসলে তাদের অনুসরণ করছিল। আরেকটি দল আরও বোকা বনে যায়, যখন তাঁরা জানতে পারে একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাদের পিছু নিয়েছিলেন। যাঁর অগোছালো চেহারা দেখে আপনি ভুলেও তাকে মিশন ইমপসিবল-সিক্সের মতো কোনো ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রের গোপন গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে ভাববেন না।
সবশেষে, আমরা সবাই যখন একত্রিত হলাম তখন আমাদের সেদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠটি শেখানো হয়—আর তা হচ্ছে আপনার পিছু নেওয়া ব্যক্তির চেহারা বা আচরণ সম্পর্কে আগে থেকে মনগড়া কোনো অনুমান করলেই আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন।
কেউ আপনার ওপর চোখ রাখছে কিনা তা চিহ্নিত করুন
এই অনুশীলনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে একজন মনে করেন, সাম্প্রতি তাঁর কাজের কারণে হয়তো তাকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। অতীতেও তিনি সন্দেহ করেছিলেন যে কেউ তাঁর ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে। তিনি যে ধরনের বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চালান, সে বিষয়টির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি সবসময়ই চিন্তার। তিনি জানান, “আমি যত ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে পারি, নিচ্ছি।”
আরেকজন সাংবাদিক বলেন, অতীতে তিনি নজরদারির শিকার হয়েছেন। শুরুতে তিনি ভাবেননি যে এটি নিয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কঠিন শিক্ষা পেয়েছেন—গণতান্ত্রিক দেশেও এমন লোক থাকতে পারে, যাঁরা আপনার চলাফেরার ওপর নজর রাখতে চায়, দেখতে চায় আপনি কার সঙ্গে দেখা করছেন।
আমাদের আজকের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন ফ্র্যাঙ্ক স্মিথ। তিনি গ্লোবাল জার্নালিস্টস সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক। সংস্থাটি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, “সাংবাদিক হিসেবে আমাদের সবকিছুতে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। সচেতন থাকা আর আতঙ্কিত হওয়ার মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে।”
এই অনুশীলনে আমরা নির্দিষ্ট একটি পথ অনুসরণ করছিলাম। বাস্তবে আমরা অনেক সময় একই পথ বারবার ব্যবহার করি—কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথ, ট্রেন বা টিউব স্টেশন থেকে প্রিয় ক্যাফেতে যাওয়ার রাস্তা, অফিসের রুট কিংবা শিশুদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথ। ফলে নজরদারি চালানো কারও পক্ষে খুব সহজেই আমাদের নিয়মিত চলাচলের সময় ও গন্তব্য জেনে নেওয়াটা খুব একটা অসম্ভব নয়।
স্মিথ বলেন, রাস্তা পরিবর্তন করাই নজরদারি এড়ানোর অন্যতম সেরা উপায়। যাঁরা নজরদারির শিকার হতে পারেন বলে মনে করেন, তাদের জন্য তিনি “পারিপার্শ্বিক অবস্থার ব্যাপারে সচেতন” (situational awareness) থাকার পরামর্শ দেন।

সাংবাদিকদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে এবং চারপাশের যেকোনো অস্বাভাবিক বস্তু ও ব্যক্তিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ছবি: শাটারস্টক
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এখানে উপস্থিত প্রতিটি নারী সুস্পষ্টভাবে পরিস্থিতিগত সচেতনতার বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন—আপনি রাতে যখন একা কোনও এলাকায় হাঁটেন, তখন আপনি আপনার চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হতে শিখেন।” রিপোর্টারদেরও একই মনোভাব ধারণ করা উচিত, বিশেষ করে তাদের কর্মকাণ্ড বা সংবেদনশীল প্রকল্পের বিষয়ে কাজ করার সময় এবং দৈনন্দিন জীবনেও।
তিনি আরও বলেন, আপনি যদি আক্রমণের ধরন চিন্তা করে দেখেন, তাহলে সেখানে কিছু কঠিন লক্ষ্যবস্তু আর কিছু সহজ লক্ষ্যবস্তু থাকবে: নিজেকে আপনি কঠিন লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ভাবুন… অন্যপক্ষের কাজ হলো আপনার সোর্স খুঁজে বের করা। আপনি কোথায় থাকেন—এসব বের করা। কিন্তু কখনই তাদের কাজকে সহজ করে দেবেন না।”
ডিজিটাল ও মোবাইল ফোনের নজরদারির ঝুঁকি সম্পর্কে সব সাংবাদিককেই সচেতন থাকতে হবে। তবে তিনি বলেন, “শারীরিক নজরদারি বা সরাসরি আপনাকে কেউ অনুসরণ করছে বা আপনার ওপর চোখ রাখছে কিনা তা বিবেচনায় নেওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্থির নজরদারি — যেমন কারো বাড়ি বা কর্মস্থলের ওপর নজরদারি, অথবা চলাচলের ওপর নজরদারি— পায়ে হেঁটে, গণপরিবহণে, অথবা এ দুটোই। তাই মানুষ এবং যানবাহন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “নজরদারির উদ্দেশ্য হতে পারে তথ্য সংগ্রহ করা বা আপনার চারপাশের মানুষজন সম্পর্কে জানা—আপনি কার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, সে সব খবর নেওয়া। এটাই ছিল [হারভে] ওয়েইনস্টাইনের লক্ষ্য, অথবা এটি হতে পারে মানুষকে ভয় দেখানো, প্রমাণ ধ্বংস করা, এমনকি আক্রমণ, গুম বা অপহরণের আগে নজরদারি চালানো। যখন কোনো সাংবাদিক খুন হন, তখন সাধারণত প্রমাণ পাওয়া যায় যে খুন হওয়ার আগে তাঁরা নজরদারির শিকার হয়েছিলেন।”
জান কুসিয়াক নামক একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল। ২০১৮ সালে বাগদত্তাসহ স্লোভাকিয়ায় তিনি খুন হন। একটি সরকারি তদন্তে জানা যায় যে, খুন হওয়ার আগে তিনি নজরদারির শিকার হয়েছিলেন, পাশাপাশি অন্য সাংবাদিকদের ওপরও চোখ রাখা হয়েছিল।
মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের ১৫টি দেশে সাংবাদিকদের ওপর ২০২৩ সালে বালকান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং নেটওয়ার্কের করা অনুসন্ধানে দেখা যায়, “মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নজরদারি চালায় এমন নতুন নতুন স্পাইওয়্যার যেমন পেগাসাস থাকার পরও ‘প্রচলিত’ ধরনের নজরদারি, যেমন টেলিফোনে আড়ি পাতা বা সশরীরে নজরদারি এখনও সবচাইতে জনপ্রিয় পদ্ধতি।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নজরদারি পরিচালনা করা ব্যক্তিদের মধ্যে “রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ রয়েছে যাঁরা সাংবাদিকদের সূত্র জানতে বা গোপন তথ্য বের করতে চায়।”
জরিপটি যদিও সাংবাদিকদের ওপর চালানো সব ধরনের নজরদারি নিয়ে ছিল। ২০২৪ সালে ইউরোপে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, “নজরদারি সাংবাদিকদের গোপনীয় সোর্সদের সুরক্ষাকে নষ্ট করে, সাংবাদিকদের আতঙ্কিত করে এবং তাদের সংবেদনশীল অনুসন্ধানে বাধা দেয়।”
সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ
যদি কোনো সাংবাদিক মনে করেন যে কেউ তাঁদের পিছু নিয়েছে, তবে তাদের কী করা উচিত, তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। ফ্র্যাঙ্ক স্মিথ বলেন, “ঘটনাটি লন্ডন, ওয়াশিংটন ডিসি বা মস্কোয় হলে আলাদা আলাদা পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে,” তবে সাধারণভাবে তিনি বলেন, আপনার মনে হচ্ছে যে, কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে বা পেছন পেছন আসছে, ভুলেও সরাসরি তাঁর মুখোমুখি হবেন না। এবং চোখে চোখ না মেলানোর চেষ্টা করুন।
তিনি আরও বলেন, “যদি আপনি মনে করেন আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছেন, তাহলে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন—কোনো দোকান বা ক্যাফেতে ঢুকে পড়ুন… এতে করে আপনি একটু হাফ ছাড়তে পারবেন এবং কেউ যদি পেছনে থেমে যায়—তাকেও দেখার সুযোগ পাবেন।”—নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফ্র্যাঙ্ক স্মিথ।
“২০০০-এর দশকের সিরিয়ায় আপনি যদি এ অবস্থায় কারো চোখের দিকে তাকাতেন, তাহলে আপনাকে তখনই অপহরণ করা হতো” তিনি ব্যাখ্যা করেন। “তাই আপনি কোনো অবস্থাতেই চোখের দিকে তাকাবেন না।”
যদি মনে হয় যে আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, স্মিথ যোগ করেন, আপনি আপনার চারপাশের পরিবেশের ওপর চোখ বুলানোর চেষ্টা করুন। কাজটি করবেন খুব সহজাতভাবে—কাউকে বুঝতে না দিয়ে। যেন আপনাকে দেখে কিছু বোঝা না যায়। “ফোন এখানে ভালো ”অনুসঙ্গ” হতে পারে, তবে আপনি যদি চোখে পড়ার মতো সামান্য কিছুও করতে যান, তাঁরা কিন্তু টের পেয়ে যাবে।”
এছাড়া, নিশ্চিত করুন যে আপনি কোনও নির্জন, অন্ধকার বা নিঃসঙ্গ জায়গায় হাঁটছেন না। সম্ভব হলে একা না থাকার চেষ্টা করুন। তিনি বলেন, “আপনার সাথে যে আছেন, তাঁর ব্যাপারে ভাবুন। দুইজনকে অপহরণ করা অনেক কঠিন। আপনি যদি মনে করেন আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, তাহলে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন—কোনো দোকান বা ক্যাফেতে ঢুকে পড়ুন।” তিনি আরো যোগ করেন, “মাঠে কাজের সময় আপনি আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। তাই কোনো দোকান বা ক্যাফেতে বা কোনো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়ে আপনি একটু হাফ ছাড়তে পারবেন এবং কেউ যদি আপনার পেছনে থেমে যায়—তাকেও দেখার সুযোগ পাবেন।
স্মিথের কাছ থেকে পাওয়া কয়েকটি চূড়ান্ত টিপস:
- আপনার নিয়মিত যাতায়াতের পথ বিশ্লেষণ করুন—আপনি যেখানে যাবেন, সে জায়গার মানচিত্র পর্যালোচনা করুন—আর ফোনের ম্যাপে বারবার তাকানো এড়িয়ে চলুন।
- অস্বাভাবিক বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন। যদি এক, দুই বা তিনবার একই ব্যক্তিকে দেখতে পান, তাহলে সতর্ক হন।
- পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সজাগ থাকুন: আপনার যদি মনে হয় যে কেউ আপনার ওপর চোখ রাখছে, তাহলে সতর্ক হন — তবে তা প্রকাশ করবেন না। কোনভাবেই যেন বোঝা না যায় যে আপনি বিষয়টি টের পেয়েছেন।
- যদি মনে হয় যে কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে তাহলে চারদিক দেখার ভান করে তাকান, কিন্তু আলাদা করে তাঁর দিকে নজর দিবেন না— এভাবে তাঁরা কিছু টের পাওয়ার আগেই আপনি সাবধান হওয়ার সময় পাবেন। বিপদের মাত্রা অনুমান করতে পারবেন।
- আপনাকে অনুসরণের কাজটা কঠিন করতে আপনার পথ বদলে ফেলুন।
- যদি নিশ্চিত হন আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, তবে রাস্তা থেকে অন্যত্র সরে যান। সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সিগন্যাল ব্যবহার করুন।
- যে ব্যক্তি আপনাকে অনুসরণ করছে বলে মনে করছেন তাঁর বিবরণ লিখে রাখুন: তাঁর লিঙ্গ, বর্ণ, উচ্চতা, বয়স, ওজন, চুলের রঙ, পোশাকের ধরন, এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যদি মনে হয় অনুসরণকারী ব্যক্তি গাড়িতে রয়েছেন, তাহলে গাড়ির মডেল বা ব্র্যান্ড লক্ষ্য করুন।
সোর্স প্রোটেকশন প্রোগ্রাম শিরোনামে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি লন্ডনের সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এবং ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল।
লরা ডিক্সন জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি কলম্বিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে কাজ করেছেন। তাঁর লেখা দ্য টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আইডব্লিইএমএফ এবং পুলিৎজার সেন্টার থেকে ফেলোশিপ প্রাপ্ত।