প্রবেশগম্যতা সেটিংস

ঘানার সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় তথ্য যাচাইয়ের তথ্য উপস্থাপন করছেন কোয়াকু ক্রোবেয়া আসান্তে ছবি: সামসুল সাইদ

লেখাপত্র

বিষয়

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

লা চামা এবং এল পানার সঙ্গে পরিচিত হন। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৪তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (জিআইজেসি২৫) পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত দুই সংবাদ উপস্থাপকের সঙ্গে। মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য নয়, বরং মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এদের তৈরি করা হয়েছে।

কোলাবরেটিং টু ফাইট ইলেক্টোরাল ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইন্স” প্যানেলে একটি ভিডিও দেখানো হয়। ওই ভিডিওতে এই দুই এআই উপস্থাপকের একজন ভেনেজুয়েলার উচ্চারণে জানান, কেন তাদের তৈরি করা হয়েছে, “আমাদের সম্পাদকরা চাইছিলেন, মিডিয়া আউটলেটটির প্রতি মানুষের যে বিশ্বাস রয়েছে, তা ব্যবহার করে এআই অ্যাভাটাররা কনটেন্টগুলো ছড়িয়ে দিক।”

লা চামা এবং এল পানাকে তৈরি করেছে লাতিন আমেরিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নেটওয়ার্ক কানেক্টাস। এই দুই এআই অ্যাভাটার ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সংবাদ উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে দেশটিতে সাংবাদিকদের প্রতি চরম বৈরি আচারণ ও সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। এটি ছিল জিআইজেসি২৫ প্যানেলে প্রদর্শিত তিন প্রকল্পের একটি।

ভেনেজুয়েলা: সাংবাদিকদের রক্ষা করছে এআই উপস্থাপক, লড়ছে মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে 

আমরা এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে যখন এআই-চালিত মিথ্যা তথ্য ইন্টারনেটে খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। কানেক্টসের পরিচালক কার্লোস এডুয়ার্দো হুয়ের্টাস দেখাচ্ছিলেন কিভাবে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। আর এই লড়াইয়ে অংশ নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দুই বছরে মিথ্যা তথ্য আর অপতথ্যকে স্বল্পমেয়াদি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের “গ্লোবাল রিস্কস রিপোর্ট ২০২৫”।

লা চামা ও এল পানার এআই অ্যাভাটারগুলো ছিল কানেক্টসের “ভেনেজুয়েলা ভোটা” এবং “#লাহোরাডিভেনেজুয়েলা (#LaHoraDeVenezuela)” উদ্যোগের অংশ। এর মাধ্যমে সরকারি মিথ্যা তথ্য ও সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো হয়েছিল। প্রচলিত সাংবাদিকতা যখন রিপোর্টারদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্তার দিকে ঝুঁকে পড়ে। মোট ১৪টি সংবাদমাধ্যম, তথ্য প্ল্যাটফর্ম এবং স্বাধীন সংস্থা তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে নির্বাচনের সময় সরকারি প্রচারণার মোকাবিলা করেছিল।

প্যানেল আলোচনা শেষে হুয়ের্টাস জিআইজেএনকে বলেন, “নির্বাচনের সময় এআই একটি ঝুঁকিপূর্ণ টুলও হতে পারে, কারণ এটি দিয়ে মিথ্যা তথ্য তৈরি করা আর তা ছড়ানোটা সহজ। কিন্তু সাংবাদিকরা যদি নতুন সব উপায়গুলোকে ব্যবহার করে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তবে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাংবাদিকতাকে রক্ষা করতে পারবে।”

হুয়ের্টাসের সঙ্গে, মিডিয়া ফাউন্ডেশন ফর ওয়েস্ট আফ্রিকার প্রকল্প ব্যবস্থাপক কুয়াকু ক্রোবেয়া আসান্তে এবং ডেটালিডস-এর প্রকল্প প্রধান সোনিয়া ভাস্কার মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে আরো কিছু কৌশল ব্যবহারের কথা বলেন। তাদের নিজ নিজ দেশে—ঘানা ও ভারতে—২০২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্যানেলটি সঞ্চালনা করেন মেক্সিকোর অ্যানিমাল পলিটিকোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক নায়েলি রোলডান

ঘানা: তথ্য যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে তৈরি জোট

ঘানায় ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়টাতে ফ্যাক্ট-চেক ঘানা, ঘানা ফ্যাক্ট এবং ডুবাওয়ার সদস্যরা মিলে ঘানা ফ্যাক্ট-চেকিং কোয়ালিশন গঠন করেন। আসান্তে বলেন, সঠিক তথ্য তুলে ধরা আর মিথ্যা তথ্যের বিস্তার রোধে কাজ করে এমন নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে তারা এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করেন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কোয়ালিশনের পক্ষ হতে ঘানার উত্তরে এবং দক্ষিণে একটি করে মিডিয়া সিচুয়েশন রুম তৈরি করা হয়।

প্রযুক্তি-চালিত মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা চরমভাবে বৃদ্ধির কারণে নির্বাচন বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরি করাটা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে, কেননা এ ধরনের খবর খুব দ্রুত গতিতে ছড়ায়। তাছাড়া, নির্বাচনের সময়ে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে তৈরি প্রচারণা ফলাফলকে প্রভাবিত করে এবং বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ভোটারদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে।

“যখন আপনি আলাদা হয়ে কাজ করেন, তখন আপনার অর্জনের পাল্লা খুব বেশি ভারী হয় না। আর অনেক সময় একই কাজ বারবার করতে হয়,” আসান্তে বলেন। “কিন্তু একসঙ্গে কাজ করলে আপনি আরও মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন, আরও তথ্য পেতে পারেন, আর সেগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেন,” যোগ করেন তিনি।

কোয়ালিশনটি নির্বাচনের সময় ছড়ানো বিভিন্ন ধরনের গল্প ও বার্তা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেছে। যাতে মিথ্যা তথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং উত্তেজনা ছড়ানো কনটেন্টগুলো চিহ্নিত করা যায়। তারা চিহ্নিত করা ভুল দাবির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে রিপোর্টও তৈরি করেছে।

“আমরা দেখেছি সমন্বিত নেটওয়ার্কগুলো এক্স-এ ভুয়া প্রচারণা চালাচ্ছে। আর পুরনো ছবি ও ভিডিও আবার ব্যবহার করা হচ্ছে,” বলেন আসান্তে।

শক্তি: ভারত তথ্য যাচাই কালেক্টিভ

ভারতে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ও ডিপফেক সনাক্তকরণে সহায়তার জন্য একশ’র বেশি তথ্য যাচাইকারী ও সংবাদ প্রকাশকের সমন্বয়ে গঠিত শক্তি: ইন্ডিয়া ফ্যাক্ট-চেকিং কালেক্টিভ সম্মিলিতভাবে কাজ করেছিল।

শক্তির ওয়েবসাইট অনুসারে, ১০টিরও বেশি ভাষায় ৬,৬০০-এর বেশি তথ্য যাচাই রিপোর্ট প্রকাশ করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রচেষ্টায় ডিপফেক ও সিন্থেটিক মিডিয়া বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীরাও সহায়তা করেছেন বলে উল্লেখ করেন ভাস্কার।

সহযোগিতা কার্যকর করা

কার্যকর সহযোগিতার জন্য সদস্যদের মধ্যে বিশ্বাস থাকা এবং সবার কাছে কাজের কৌশল স্পষ্ট হওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন প্যানেলিস্টরা।

“এটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে, তহবিল কোথা থেকে আসছে, কে কোন কাজটি করছে, কাজের কাঠামো ও প্রক্রিয়া কী—এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা থাকা উচিৎ,” আসান্তে বলেন।

তারা আরও বলেন, তথ্য যাচাই উদ্যোগগুলো কতটা টেকসইভাবে চলতে পারবে তা মূল্যায়ন করাও জরুরি।

“কিন্তু আপনি যদি… এমন পরিকল্পনা করতে পারেন যা এই কাজকে দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে নিতে পারে, তাহলে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি প্রকৃতপক্ষে সহায়তা করতে পারে,” যোগ করেন আসান্তে।

প্রচলিত সাংবাদিকতার দক্ষতাগুলো এখনও গুরুত্বপূর্ণ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সনাক্তকরণ টুল থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রচলিত রিপোর্টিং দক্ষতা বা কৌশলগুলো এখনও অপরিহার্য।

“টুলগুলো খুব উন্নত হয়েছে, কিন্তু সনাক্তকরণের টুলগুলো তদারকিতে এখনও পিছিয়ে,” প্যানেলের পরে জিআইজেএনকে এই কথা বলেন ভাস্কার। তিনি যোগ করেন “সনাক্তকরণ টুলগুলো কেবল সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে, কিন্তু এগুলো যথেষ্ট নয়। আমরা এখনও আমাদের চূড়ান্ত সমাধান থেকে অনেক দূরে আছি।”

“আমরা এখনও  সাংবাদিকতার দক্ষতার ওপরই নির্ভর করছি,” তিনি যোগ করেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

জিআইজেসি২৫ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা

কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে নিরাপদ রাখতে পাঁচ পরামর্শ  

নিজেকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে সাংবাদিকদের সচেতন থাকা উচিত। কেননা আক্রমণ বিভিন্ন দিক থেকে আসতে পারে। স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে বা যেখানে গণতন্ত্রের অবনতি ঘটছে, সেখানে সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য কর নিরীক্ষা, প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা এবং কুৎসা বা অপবাদ ছড়ানো সাধারণ ঘটনা।

জিআইজেসি২৫

সাংবাদিকদের আর্থিক ব্যবস্থার যে খাতগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করতে বললেন এই নোবেলজয়ী

এখন চীন ও কেইম্যান আইল্যান্ডসের মধ্যে নানা কর্মকান্ড চলছে, এবং দক্ষিণ এশিয়ায়, মরিশাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং আমার সন্দেহ, এখানে কিছু ঘটছে। ভারত থেকে অর্থ মরিশাসে যাচ্ছে এবং আবার ভারতে ফিরে আসছে। এই ঘুরে আসার কারণটা কী?

জিআইজেসি২৫ পুরস্কার

জিআইজেসি গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড জিতে নিলো মেক্সিকো, পেরু, নাইজেরিয়া ও মিশরের সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুরে ১৪তম বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সম্মেলনে (জিআইজেসি২৫) গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড (জিএসএলএ)  জিতে নিয়েছে মেক্সিকোর অভিবাসী হয়রানির ঘটনা, আমাজনের আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ, রাশিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বৈদেশিক যোদ্ধা নিয়োগ, এবং আফ্রিকার তথাকথিত ধর্মগুরুকে নিয়ে সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

জিআইজেসি২৫

মিথ্যাচার রোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় “প্রয়োজন চরম সহযোগিতা”- জিআইজেএন সম্মেলনে নোবেলজয়ী মারিয়া রেসা

স্বৈরাচারের উত্থান, প্রযুক্তিখাতে প্রভাবশালী ওলিগার্কদের দৌরাত্ম্য, গণমাধ্যমের তহবিল ঘিরে স্থবিরতা, আর সাংবাদিকদের ওপর সাইবার ও শারীরিক আক্রমণের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মারিয়া রেসা বলেন—আর হয়তো মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বহু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চিরতরে হারিয়ে যাবে।