প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড: অভিবাসন, সংঘবদ্ধ অপরাবধ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ ৭ প্রতিবেদন

২০২৫ সালের গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডস (জিএসএলএ)-এর চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ১১টি দেশের ১৩টি সাহসী প্রতিবেদন। নানা হুমকি, চাপ ও অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও উন্নয়নশীল কিংবা রূপান্তরপর্বে থাকা দেশগুলোতে যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যান তাদের স্বীকৃতি জানাতে দেওয়া হয় এই পুরস্কার।

চলতি বছরের ২০ থেকে ২৪ নভেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ১৪তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স (জিআইজেসি২৫) অনুষ্ঠিত হবে। অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় এ সম্মেলনে ১ হাজার ৫০০-এর বেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক অংশ নিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রয়েছে ১৫০টির বেশি বিশেষজ্ঞ প্যানেল, ওয়ার্কশপ ও নেটওয়ার্কিং সেশন। রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

উন্নয়নশীল দেশের বিদ্যমান কঠিন পরিস্থিতিতে কর্মরত সংবাদিকদের কাছ থেকে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আহ্বান করা হয়। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত প্রতিবেদন। বিশ্বের ৯৭টি দেশ থেকে ৪১০টি প্রতিবেদন জমা পড়ে। বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, একটি সম্মাননা ফলক  এবং আসছে জিআইজেসি২৫-এ অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পাবেন।

জিএসএলএ পুরস্কার কমিটির পাঁচ সদস্যের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুইটি বিভাগে নির্বাচিত ১৩টি প্রতিবেদনের প্রতিটিই সাহসী ও সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উদাহরণ। যা বৈশ্বিক দক্ষিণ এবং রূপান্তরপর্বে থাকা দেশগুলোতে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর আলো ফেলতে সহায়তা করেছে।

পাঁচটি মহাদেশ থেকে অভিজ্ঞ অনুসন্ধানী সম্পাদকরা রয়েছেন বিচারক হিসেবে। ২০ জন বা এর কম কর্মী নিয়ে গঠিত ছোট ও মাঝারি সংবাদমাধ্যম (ফ্রিল্যান্সারসহ) থেকে ছয়টি এবং বড় সংবাদমাধ্যম থেকে সাতটি প্রতিবেদন বাছাই করেছেন তাঁরা। বিচারকদের দলে ছিলেন লাতিন আমেরিকান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম [এল ক্লিপ]-এর পরিচালক। তবে তাঁর সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা চলার সময় তিনি সেখানে অংশ নেননি।)

বড় সংবাদমাধ্যম বিভাগে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে সাতটি প্রতিবেদন। জিআইজেএনের অন্য পোস্টে ছোট ও মাঝারি সংবাদমাধ্যম বিভাগের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নেওয়া ছয়টি প্রতিবেদন সম্পর্কে লেখা হয়েছে।

বড় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অভিবাসন, সংঘবদ্ধ অপরাবধ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও উন্মোচন।

জুরি বোর্ডের আহ্বায়ক এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেবাইল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের পরিচালক শেইলা করোনেল বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বিপদ ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। তবুও তাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে যেভাবে কাজ করছেন এবং প্রতিবেদনের মান ধরে রেখেছেন, তা সত্যিই চোখে পড়ার মতো।”

২০২৫ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা: বড় সংবাদমাধ্যম বিভাগ

ডিসাইপলস: দ্য কাল্ট অব টি বি জোশুয়া — বিবিসি আফ্রিকা আই এবং ওপেনডেমোক্রেসি (নাইজেরিয়া)

BBC Africa Eye Disciples of TB Joshua

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, বিবিসি আফ্রিকা আই

তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়েছে যে: “এই অনুসন্ধানে এমন সব ভয়ংকর অপরাধ সামনে এসেছে, যা কল্পনাও করা কঠিন। বিশেষ করে সেই মানুষটির বিরুদ্ধে, যাকে একসময় ভবিষ্যতের সন্ত (ইশ্বর কাছের) হিসেবে ভাবা হতো।”

আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম যাজক ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘সিনাগগ চার্চ অব অল নেশনস’ নিয়ে টানা তিন বছর ধরে অনুসন্ধান চালায় বিবিসি আফ্রিকা আই। অনলাইনে এই গির্জার ভিডিও এক বিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। বিশ্বের নানা দেশের লাখ লাখ অনুসারী তাকে অন্ধের মতো পূজা করতো—এমনকি তাঁর ভক্তের তালিকায় কয়েকজন রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা যাজক টি.বি. যোশুয়ার নির্দোষ ভাবমূর্তি এই অনুসন্ধান প্রকাশের পর ভেঙ্গে পড়ে। অনুসন্ধানী দলটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়াসহ অন্তত এক ডজন দেশে এমন অনেক ভুক্তভোগীকে খুঁজে পায়, যাঁরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন—কিছু ক্ষেত্রে তা ছিল সহিংসও।

এই কাজের মূল ভরসা ছিল গির্জার ভেতরের লোকদের স্বীকারোক্তি—টি.বি. যোশুয়ার সাবেক “শিষ্যরা” প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। কীভাবে তাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তা স্পষ্টভাবে বলেছেন। প্রামাণ্যচিত্রের মতো করে তৈরি এ প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের ধরন এবং গল্প বলার ভঙ্গি এতটাই শক্তিশালী যে, জিএসএলএ পুরস্কার কমিটির অনেকেই এক বাক্যে বলেছেন: “অসাধারণ গল্প!”

লস ভুয়েলোস দে লা মুয়ার্তে: লিডারেস ইন্দিজেনাস আসেসিনাদোস এন উন তের্রিতোরিও ইনভাদিদো পোর ৬৭ নারকোপিস্তাস (ডেথ ফ্লাইটস: ইন্ডিজেনাস লিডার্স মার্ডার্ড ইন টেরিটরি ইনভেডেড বাই ৬৭ ড্রাগ গ্যাংস) — মঙ্গাবে লাটাম, আর্থ জিনোম

Mongabay Latam organized crime landing strips in the Amazon

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, মঙ্গাবে লাটাম

অ্যামাজনের দুর্গম অঞ্চলের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কীভাবে সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলছে—এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে অন্য কোথাও তেমন উঠে আসেনি। এক বছরের গভীর, গোছানো আর সাহসী অনুসন্ধানে মঙ্গাবে লাটাম পেরুর তিনটি অ্যামাজন অঞ্চলে মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত উড়োজাহাজ নামার গোপন স্থানের (এয়ারস্ট্রিপ) একটি বিশাল নেটওয়ার্ক উদ্ঘাটন করে। এসব পাচার পথের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসী নেতাদের হত্যা ও সহিংসতার সরাসরি যোগসূত্র তুলে ধরে।

তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক দলটি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন, সরেজমিন রিপোর্টিং আর প্রচলিত সোর্স ব্যবহার করে। আর্থ জিনোমের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সার্চ টুল ব্যবহার করে এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণের সঙ্গে বন উজাড় ঘটনার সম্পর্ক খুঁজে পায়।  ওপেনস্ট্রিটম্যাপ ও স্যাটেলাইট ছবির সাহায্যে তা যাচাই করে।

অনুসন্ধানী দলটি পেরুর তিনটি অঞ্চল—উকায়ালি, হুয়ানুকো এবং পাসকো—নিয়ে কাজ করে। যেখানে এরইমধ্যে ১৫ জন আদিবাসী নেতা হত্যার শিকার হয়েছেন। আরও ২৮ জনের জীবন হুমকিতে রয়েছে। কঠোর যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাদকপাচারের ৬৭টি গোপন এয়ারস্ট্রিপ শনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে ৩০টি সরাসরি আদিবাসীদের জমিতে তৈরি। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে: “বিশেষ করে সাতটি আদিবাসী এলাকা শুধু এয়ারস্ট্রিপ দিয়ে দখল করা হয়নি, বরং চারপাশ থেকেও ঘিরে ফেলা হয়েছে।”

একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়। যেখানে প্রতিটি ‘নার্কো-এয়ারস্ট্রিপ’-এর অবস্থান, ব্যবহার, চালুর তারিখ, সড়ক বা নদী থেকে দূরত্ব এবং তা সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে রয়েছে কিনা—এসব তথ্য রয়েছে।

সাংবাদিক ও সোর্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর সতর্কতা নেওয়া হলেও মাফিয়াদের পক্ষ থেকে সবসময়ই বড় ধরনের হুমকি আসার ঝুঁকি ছিল।

সেটেলমেন্টস অ্যাবাভ দ্য বিবিসি আই

BBC Eye Israeli land theft in the West Bank

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, বিবিসি আই

প্রতিবেদনটি নতুন ও আগ্রাসী উপায়ে ভূমি দখলের ঘটনা নিয়ে তৈরি। বিবিসি আই ছয় মাসেরও বেশি সময় নিয়ে অনুসন্ধানটি চালিয়েছে। পশ্চিম তীর— চরমপন্থী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা সেখানে গড়ে তুলছে তথাকথিত “হার্ডিং আউটপোস্ট”। এই অনুসন্ধানে দেখানো হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারদের ভূমি দখলের ঘটনা বেড়েছে। ফলে অনেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা উৎখাতের শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক দলটি আরও দেখিয়েছে যে, অবৈধ বসতি স্থাপন প্রক্রিয়ায় কীভাবে দুটি সংগঠন সহায়তা করেছে। কীভাবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নতুন কিছু বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস কর্মকাণ্ডকে দেখেও দেখেনি। তাঁরা স্যাটেলাইট ম্যাপিং, বিভিন্ন এনজিওর তথ্য, অসংখ্য সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। চরম প্রতিকূল ও হুমকির পরিবেশে নাটকীয় সব প্রামাণ্যচিত্র ধারণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

জিএসএলএ-এর বিচারকরা এই কাজটিকে “একটি সার্বিক ও শক্তিশালী উন্মোচন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে গল্প বলার কৌশল, ডেটা বিশ্লেষণ এবং পশ্চিম তীরে কীভাবে ভূমি দখলের প্রক্রিয়া চলে—তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরার দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ।

দ্য ফেইসেস অব রাশিয়ান অকুপেশন: মাস আইডেন্টিফিকেশন অব সোলজার্স হু টরচারড সিভিলিয়ান্স অ্যান্ড মাইনড ইউক্রেইনস্কিমস (ইউক্রেইন)

Schemes Russian minefields in Ukraine

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, স্কিমস

২০২২ সালের শেষ দিকের ঘটনা। ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের বালাকলিয়া শহর মুক্ত হওয়ার পর রাশিয়ার সামরিক ইউনিট জায়গাটি ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ উদ্ধার করে স্কিমস। তাতে পাওয়া যায় শত শত তথ্য। যা হয়ে ওঠে যুদ্ধাপরাধ প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যা ঘটনাগুলোকে বিস্তারিত নথিভুক্ত করতেই সাহায্য করেনি, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামসহ চিহ্নিত করতেও সক্ষম করেছে স্কিমসের অনুসন্ধানী সাংবাদিক দলটিকে।

ফ্ল্যাশ ড্রাইভের তথ্য বিশ্লেষণ নিয়ে স্কিমসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: “হাজার হাজার নাম বিশ্লেষণের পর, অনুসন্ধানকারীরা আলাদা করে নজর দেন সেই ব্যক্তিদের ওপর, যাদের বালাকলিয়ায় ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করার জন্য’ পুরস্কৃত করা হয়েছিল। গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাঁরা কয়েকজন রুশ সেনা সদস্য এবং এফএসবির কর্মকর্তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। যাঁরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্যাতন নিয়ে পরিকল্পিত প্রচারণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।”

এই সিরিজের দ্বিতীয় অনুসন্ধানে তুলে ধরা হয়েছে রাশিয়ার অ্যান্টিপার্সোনেল মাইন ব্যবহারের বিষয়টি। যা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। রুশ সেনাবাহিনীর দলিলপত্র, মাইন বসানোর কাজে নিযুক্ত প্রকৌশলীদের ভূয়সী প্রশংসা, এবং রুশ ‘স্যাপার’ রেজিমেন্টকে দেওয়া আদেশের নথি সংগ্রহ করে তাঁরা। তুলে ধরে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক যন্ত্রের তথ্য। যা বহু বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এতে করে বর্তমানে ইউক্রেন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে মাইন-দূষিত দেশ।

শুধু মাইন নয়, শহর মুক্ত হওয়ার পরও সেখানে পৌঁছানো সাংবাদিকরা নানা ধরনের মানসিক চাপ ও বিপদের শঙ্কায় দিন কাটিয়েছেন। বিশেষ করে রুশ গোপন নজরদারি ইউনিটের উপস্থিতির আশঙ্কা।

দ্য গাজা প্রজেক্টকলাবোরেশন অব ফিফটি জার্নালিস্টস ফ্রম থার্টিন মিডিয়া আউটলেটস, কোঅর্ডিনেটেড বাই ফরবিডেন স্টোরিজ

The Gaza Project investigates deaths of journalists in Gaza

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, দ্য গাজা প্রজেক্ট

গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির জের ধরে সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭৬ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে থেকে কিছু হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত হামলা ছিল কিনা— ১৩টি সংবাদমাধ্যমের যৌথ এই অনুসন্ধানী প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল তা খতিয়ে দেখা। নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দলটি তার কিছু প্রমাণও পেয়েছে। ইসরায়েল সরকার বারবার বলেছে যে— তাদের সামরিক অভিযানে কখনোই সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয় না। অনুসন্ধানটি এই দাবিকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তাদের কেস স্টাডিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেস হাউজ ধ্বংস, সাংবাদিক মোহাম্মদ আল জাজা এবং আহমেদ ফাতেমার মৃত্যু; এএফপি গাজা ব্যুরোর ভবনে শেল হামলা; এবং বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের নিহত হওয়ার ঘটনা। ঘোষণা দিয়ে বোমা বর্ষণের সময় যাঁরা মনে করেছিলেন, তাঁরা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন।

অনুসন্ধানী দলটি নতুন ভিডিও ফুটেজ, স্যাটেলাইট ছবি, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার, অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিস্তারিত টাইমলাইন তৈরি করে।

দ্য ডে ইসরায়েলি ট্যাংকস ফায়ার্ড ডিরেক্টলি অ্যাট এএফপি গাজা ব্যুরো শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য একাধিক ভিডিও, স্যাটেলাইট ছবি এবং অডিও বিশ্লেষণ ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরে ইসরায়েলি ট্যাংক কোথায় অবস্থান করছিল এবং তাঁরা কোন দিক থেকে চারটি শেল ছুড়েছিল।

ট্রেইলারেস, ট্রামপা পারা মিগ্রান্তেস (কার্গো ট্রাকস: ট্র্যাপ ফর মাইগ্রান্টস) — নোটিসিয়াস টেলেমুন্ডো অ্যান্ড দ্য ল্যাটিন আমেরিকান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (এল ক্লিপ), ইন কলাবোরেশন উইথ আইসিআইজে, বেলিংক্যাট, পিয়ে দে পাগিনা, চিয়াপাস প্যারালেলো (মেক্সিকো), এন উন × তামাউলিপাস (মেক্সিকো), প্লাজা পাবলিকা (গুয়াতেমালা), অ্যান্ড কন্ট্রাকোরিয়েন্টে (হন্ডুরাস)

Cargo Trucks: Trap for Migrants

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, নোটিসিয়াস টেলেমুন্ডো

এই আন্তঃসীমান্ত যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কাজ শুরুর সময় সাংবাদিকরা জানতে পারেন যে, মেক্সিকোতে মানবপাচার অভিবাসী চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো সরকারি তথ্য নেই। প্রথমবারের মতো তাঁরা একটি ডেটাবেস তৈরি করেন, যা অভিবাসীদের নিরাপত্তা হুমকির বিষয়কে উন্মোচন করে। প্রাণঘাতি এ হুমকির বিষয়টি এতোদিন গোপনই ছিল।

এই অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মেক্সিকোতে মানবপাচারের জন্য নতুন নতুন রুট ব্যবহার করা হচ্ছে। বড় ট্রাক ও ট্রেইলারে করে মানুষ পাচারের হার বেড়েছে। অপরাধীরা প্রায়ই শাস্তি পাচ্ছে না। অনেক সময় ট্রাকচালকদের ভয় দেখিয়ে পাচারে বাধ্য করা হচ্ছে। এ নিয়ে মামলা হলেও, দোষীরা খুব কম সাজা পাচ্ছে।

সাহসের সঙ্গে করা মাঠপর্যায়ের রিপোর্টিং এই অনুসন্ধানের ভিত্তি। দলটি ৭০টির বেশি তথ্য অধিকার চেয়ে আবেদন করে। চালায় সূক্ষ্ম ডেটা বিশ্লেষণ। কথা বলে বেঁচে ফেরা অভিবাসী, ট্রাকচালক, তাদের পরিবার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

মেক্সিকোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাধারণ ঝুঁকি তো আছেই। এর ওপর তামাউলিপাস ও চিয়াপাস রাজ্যে কাজ করা কয়েকজন সাংবাদিককে যখন আলাদা করে নির্দিষ্ট দেওয়া হয়, তখন তাদের বাড়তি নিরাপত্তার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে।

পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে মন্তব্যে করা হয়েছে: “কোনো কিছু নিয়ে সত্যিকার অর্থে লেগে থাকার অনন্য উদাহরণ এ প্রতিবেদন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধানী দলটি নিরসলভাবে সবকিছু অনুসরণ করেছে। এমন সব টুল ব্যবহার করেছে, যা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে বিশেষ করে তোলে।” অন্য একজন বিচারক বলেন: “এখানে এমন একটি গল্প বলেছে, যা আগে কখনো বলা হয়নি। প্রতিবেদনটি ভীষণ সংবেদনশীল ও প্রাসঙ্গিক।”

টার্কি’স ইইউফান্ডেড ডিপোর্টেশন মেশিনলাইটহাউস রিপোর্টস (নেদারল্যান্ডস) পলিটিকো (ইউরোপ), ডার স্পিগেল (জার্মানি), এল পাইস (স্পেন), লে মন্ডে (ফ্রান্স), এনআরসি (নেদারল্যান্ডস), সিরিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ফর অ্যাকাউন্টেবিলিটি জার্নালিজম অ্যাসোসিয়েশন (সিরিয়া), এতিলিয়াত রোজ (আফগানিস্তান), অ্যান্ড এলএস্প্রেসো (ইতালি)

Lighthouse Reports Turkey's EU-funded deportation machine

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, লাইটহাউস রিপোর্টস

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কীভাবে গোপনে তুরস্কের মাধ্যমে অভিবাসীদের জোর করে ফেরত পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছে—শক্তিশালী অনুসন্ধানের মাধ্যমে তা সামনে আনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইইউ শত শত মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তুরস্কে ৩০টি ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে আসা অভিবাসী ও শরণার্থীদের আটক ও দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

তবে মজার বিষয় হলো, ইউরোপ নিজে এসব মানুষকে সিরিয়া বা আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করে না। অথচ তুরস্ককে কোটি কোটি ইউরো দিয়ে তাঁরা এসব কাজ করাচ্ছে, যেন এসব মানুষ ইউরোপে ঢুকতে না পারে।

সাংবাদিকেরা শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক গোপন নথি বিশ্লেষণ করেছেন। অভিবাসী আটক কেন্দ্রগুলোর ভেতরের অবস্থা, নির্যাতন আর জোর করে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও বেরিয়ে এসেছে। আরো ভয়ংকর ব্যাপার হলো, প্রতিবেদনটি করতে গিয়ে তুরস্কে থাকা সিরীয় ও আফগান সাংবাদিকরাও ফেরত পাঠানোর ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে বিচারকেরা বলেছেন, কাজটি  ভীষণ “শক্তিশালী।”


রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

জিআইজেসি২৫ পুরস্কার

গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড: চূড়ান্ত তালিকায় কেন এই ছয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

এই বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে পেরু, লিবিয়া, চিলি, সিরিয়া, ভারত ও মিশরের ছয়টি প্রতিবেদন। যেখানে উঠে এসেছে অভিবাসন, বন্যপ্রাণী পাচার, দুর্নীতি এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারসহ নানা বৈচিত্র্যময় বিষয়।

ডেটা সাংবাদিকতা পুরস্কার

অগ্নিকাণ্ড থেকে দাসপ্রথা কিংবা ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ নিয়ে অনুসন্ধান—জিআইজেএনের সিগমা অ্যাওয়ার্ডস জয়ী দশ প্রতিবেদন

৮০টি দেশের ৪৯৮টি প্রতিবেদন থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেরা ১০টি ডেটাভিত্তিক সাংবাদিকতা প্রকল্প। আশার কথা হলো, ছোট সংবাদমাধ্যম থেকে এবার অনেক বেশি প্রতিবেদন জমা পড়েছে । ৩৫ জনেরও কম সাংবাদিক রয়েছে—এমন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেে এসেছে ২৩৮টি প্রতিবেদন।

পরামর্শ ও টুল

কর্পোরেট দুর্নীতির যোগসূত্র খুঁজতে পারেন এই টুল দিয়ে

নিয়ম ভাঙার কারণে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো জরিমানা দিচ্ছে। অথচ সাংবাদিকরা বুঝতে পারেন না যে, এই কোম্পানিগুলো হয়তো কোনো বড় করপোরেশন বা কোটিপতির মালিকানাধীন।