প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

সম্পাদকের বাছাই: ২০২০ সালে সাব সাহারান আফ্রিকার সেরা অনুসন্ধান

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

সাব-সাহারান আফ্রিকায়, সবচে ভালো সময়েও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সেই কাজটি হয়ে পড়েছে আরো কঠিন। তবুও, এই মহাদেশের সাংবাদিকরা পাঠকদের স্বার্থে রিপোর্টিংয়ের নতুন নতুন সব উদ্ভাবনী পথ বের করেছেন। তারা দারুন সব প্রতিবেদনও তৈরি করে যাচ্ছেন।

সাব সাহারান আফ্রিকার ৫০টি দেশজুড়ে বসবাস করেন ১১০ কোটি মানুষ। ছবি: উইকিপিডিয়া

এবছর, জিআইজেএন সম্পাদকের বাছাই সিরিজে, আফ্রিকা সম্পাদক বেনন হারবার্ট ওলুকা নির্বাচন করেছেন সাব-সাহারান আফ্রিকার সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। কয়েকটি কারণে এই অনুসন্ধানগুলো বাছাই করা হয়েছে: কিছু রিপোর্টে দেখা গেছে রিপোর্টারদের আন্তসীমান্ত জোট, কিছু প্রতিবেদন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৈরি করেছে উল্লেখযোগ্য প্রভাব। আবার কোথাও সাংবাদিকরা খবরের গভীরে যেতে ব্যবহার করেছেন উদ্ভাবনী সব টুল।

ভিক্টোরিয়া হ্রদের দূষণ পরীক্ষা (কেনিয়া)

কিসাত নদীর মুখে শৈবালে পূর্ণ হয়ে আছে ভিক্টোরিয়া হ্রদ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তোলা ছবি। কৃতজ্ঞতা: জেফ অ্যাঙ্গোট / ন্যাশন

ভিক্টোরিয়া হ্রদ, আফ্রিকার সবচে বড় স্বাদু পানির আধার। এই হ্রদকে ঘিরে অবস্থান তিনটি দেশের: কেনিয়া, উগান্ডা ও তানজানিয়া। এটি এই মহাদেশের সবচে বড় জলপথ, নীল নদেরও উৎস। এই হ্রদ ঘিরে কোনো অনুসন্ধান পরিচালনা করতে এমন একটি রিপোর্টিং দল প্রয়োজন ছিল, যারা সীমান্তের বাধা জয় করতে পারে। ২০২০ সালের এপ্রিলে, নেশন মিডিয়া গ্রুপ (এনএমজি) ঠিক এমনই একটি উদ্যোগ নেয়। 

তিন মাস ধরে অনুসন্ধানের পর, দলটি যখন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখন সেটি এমন সাড়া ফেলে, যা এই অঞ্চলে বিরল। পূর্ব আফ্রিকার তিনটি দেশের প্রিন্ট, অনলাইন, রেডিও ও টেলিভিশনের সাংবাদিকদের সাহায্য নিয়ে, ভিক্টোরিয়া হ্রদের ২৮টি ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে পানি, মাছ ও পলিমাটির নমুনা সংগ্রহ করে এনএমজি। তারা পরীক্ষা করে দেখতে পায়: সেসব নমুনায় বিভিন্ন মাত্রায় অন্তত আটটি ধাতুর উপস্থিতি আছে। সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, দস্তা, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ ও ফ্লোরাইড। সবচে বিষাক্ত ধাতুগুলোর মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৫ গুন বেশি। এসব তথ্য দিয়ে এনএমজির রিপোর্টিং দল তৈরি করে বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, যা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হয়েছে তিনটি দেশজুড়ে। দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করে কেনিয়ার এনটিভিডেইলি ন্যাশন-এ; তানজানিয়ার দ্য সিটিজেন-এ; উগান্ডার এনটিভি উগান্ডাডেইলি মনিটর-এ; এবং আঞ্চলিক সংবাদপত্র, দ্য ইস্ট আফ্রিকান-এ। 

নীল নদের তীর বিদেশীদের হাতে (উগান্ডা)

উগান্ডার মায়ুগে বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে চারটি কমিউনিটিতে মোট ৭,৫০০ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে তিনটি কমিউনিটি গড়ে উঠেছে হৃদের তীর ঘেঁষে। একটি বনের মধ্যে। ছবি কৃতজ্ঞতা: ইনফোনাইল

আফ্রিকান দেশগুলোর রাজধানীর বাইরে, সবচে দামি ও কাঙ্ক্ষিত জমিগুলো আছে নীল নদের তীর ঘেঁষে, যার বেশিরভাগই ব্যবহার হয় পর্যটন ব্যবসার কাজে।  কিন্তু জমিগুলোর মালিক কারা, তা নিয়ে জানাশোনা কমই ছিল। উত্তর পেতে, উগান্ডা-ভিত্তিক অলাভজনক জিও-জার্নালিজম প্রতিষ্ঠান, ইনফোনাইল নজর দেয় নীল নদ অববাহিকায়। শুরু করে একটি আন্তসীমান্ত রিপোর্টিং প্রকল্প। এই অনুসন্ধানে যুক্ত হয় নীল নদ ঘিরে থাকা ১১টি দেশ। রিপোর্টিংয়ের কাজ জোরদার করার জন্য সাংবাদিক, গবেষক ও সংবাদমাধ্যম নিয়ে কাজ করা কিছু সংগঠনকে এক জায়গায় এনেছিল ইনফোনাইল। এসব সংগঠনের মধ্যে ছিল: সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক ওয়াটার জার্নালিস্টস আফ্রিকা, স্বাধীন ভূমি পর্যবেক্ষণ উদ্যোগ ল্যান্ড ম্যাট্রিক্স, পুলিৎজার সেন্টারকোড ফর আফ্রিকা। এই প্রতিবেদন থেকে উন্মোচিত হয়: এসব জায়গার দুই তৃতীয়াংশই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। প্রতিবেদনটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে টেক্সট, ডেটা-ভিত্তিক ম্যাপ, ড্রোন, স্যাটেলাইট ইমেজ, ও ভিডিও তথ্যচিত্র। গত সেপ্টেম্বরে, এটি জিতেছে ২০২০ আফ্রিকান ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের সেরা ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের পুরস্কার।  

আফ্রিকার ফিনসেন ফাইলস (আন্তসীমান্ত প্রকল্প)

স্ক্রিনশট: আইসিআইজে

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের বেশ কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়া নথি হাতে পাওয়ার পর বাজফিডের সাংবাদিকরা জোট বেঁধেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে)-র সঙ্গে। আইসিআইজে পরবর্তীতে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করে সেনোজো আফ্রিক-কে। বুরকিনা ফাসো-ভিত্তিক সেনোজো, জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন। তারাই পুরো আফ্রিকা মহাদেশে এই অনুসন্ধানটি সমন্বয় করেছে। ফিনসেন ফাইলসে অন্তত ২,৫০০টি সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের রিপোর্ট ছিল। তাতে বলা হয়: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। ২০টি আফ্রিকান দেশে ছড়িয়ে থাকা সেনোজোর সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক বেশ কয়েক মাস ধরে খতিয়ে দেখেছেন আফ্রিকা সংশ্লিষ্ট লেনদেনগুলো। পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া ও ক্যামেরুন, দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার বোতসোয়ানা ও নামিবিয়া, পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়া ও তানজানিয়া; এমন নানা দেশের অবৈধ অর্থ লেনদেন নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রায় ২০টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সেনোজো ও আইসিআইজে ২০১৮ সালেও জোট বেঁধে কাজ করেছে। তখন তারা কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছিল ওয়েস্ট আফ্রিকা লিকস নথিপত্র নিয়ে।

একটি কোভিড-১৯ লকডাউন মৃত্যু (দক্ষিণ আফ্রিকা)

কোভিড-১৯ লকডাউনের প্রথম দিনেই পুলিশের হামলায় আহত হয়ে পরবর্তীতে মারা যান পেট্রুস “পিয়েটম্যান” মিগেলস। স্ক্রিনশট: ভিউফাইন্ডার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন ২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয়; তখন এই ভাইরাসের বিস্তার কমানোর জন্য বিশ্বের অনেক দেশের সরকারই পুরো দেশজুড়ে লকডাউনের নির্দেশ দেয়।  আফ্রিকার অনেক দেশে, পুলিশ এই লকডাউন বাস্তবায়ন করেছে কঠোর হাতে। প্রায়ই লকডাউনের নির্দেশ ভঙ্গকারীদের মারধর করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে, মারধরের শিকার এমনই এক ব্যক্তি পেট্রুস “পিয়েটম্যান” মিগেলস। লকডাউনের প্রথম দিনেই পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি মারা যান। পুলিশ বলেছিল, তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত থেকে দেখা গেছে: মিগেলস স্বাভাবিক কারণেই মারা গেছেন। কিন্তু স্বাধীন অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, ভিউফাইন্ডার-এর সাংবাদিকদের সন্দেহ হয়, এবং তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। সেই অনুসন্ধানের ফলাফল থেকে দেখা গেছে: মিগেলস মারা গিয়েছিলেন পুলিশের হামলার কারণে, কোনো স্বাভাবিক কারণে নয়। এই অনুসন্ধানের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টে, পুলিশ কর্মকর্তারাও তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরবর্তীতে কাজ খুব অল্পই হয়েছে।  

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি (ঘানা/নাইজেরিয়া)

http://gty.im/912015114

ঘানার গিডিওন সারপং ও নাইজেরিয়ার অলিভিয়া এনডুবুইসি তিন মাস ধরে অনুসন্ধান করেছিলেন: কিভাবে বিশ্বের প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আফ্রিকার কিছু দেশে মুনাফা করা সত্ত্বেও সরকারকে কোনো কর দেয় না। নথিপত্র সংগ্রহ ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে এই দুই সাংবাদিক দেখেছেন: কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি এক দশকেরও বেশি সময়ে ঘানা ও নাইজেরিয়ার সরকারকে কোনো কর দেয়নি। তবে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে মূল আলোচনায় না রেখে, প্রতিবেদনটিতে মনোযোগ দেওয়া হয় দুই দেশের কর আইনের দুর্বলতার দিকে। বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করার গুরুত্বের দিকেও নজর দেওয়া হয়। এই অনুসন্ধান প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ মাস পর, অ্যাকশন এইডের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়: আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার ২০টি উন্নয়নশীল দেশ, এসব প্রযুক্তি কোম্পানির কাছ থেকে সম্ভাব্য ২৮0 কোটি ডলারের রাজস্ব হারিয়েছে। 

কোভিড-১৯ দুর্নীতির খোঁজে (জিম্বাবুয়ে)

জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রীয় ভবনে প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাওয়া ও অর্থমন্ত্রী মিথুলি নেকুবে-র সঙ্গে ড্রাক্স ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি ডেলিশ নেগুওয়া (বামে)। ছবিটি তোলা হয়েছে গত ৮ এপ্রিল। কৃতজ্ঞতা: জিমলাইভ

বছরের শুরুতে যখন পুরো বিশ্ব লকডাউনের তোড়জোড়ে ব্যস্ত, তখন জিম্বাবুয়ের কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী এই মহামারি থেকে মুনাফা করার উপায় খুঁজছিলেন। জিমলাইভ ডট কম-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়: সরকার মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সের এক কোম্পানিকে ২০ লাখ ডলারের কাজ দিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর, পরিচালিত হয় আরো কিছু অনুসন্ধান। হোপওয়েল চিনোনোসহ আরো কিছু সাংবাদিকের রিপোর্টিং, অনুসন্ধানফলো-আপের পর প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাওয়া বাধ্য হন ড্রাক্স ইন্টারন্যাশনাল নামের সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে। বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. ওবাদায়া মোয়োকে। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তবে জিম্বাবুয়েতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত এসব ‍দুর্নীতির খবরের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্যদের নাম আসা শুরু হলে, সরকারের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়। সাংবাদিক এমডুডুজি মাথুথুর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় এবং তাঁর বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফলে অজ্ঞাতবাসে চলে যেতে হয় মাথুথুকে। আরেক অনুসন্ধানী সাংবাদিক চিনোনোকেও হুমকি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এবছর দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

কোভিডে নগদ মুনাফা (ঘানা)

স্ক্রিনশট: বিবিসি আফ্রিকা আই

কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে দ্রুত অর্থ উপার্জনের চেষ্টা শুধু সরকারি কর্মকর্তা ও বড় বড় ব্যবসায়ীরাই করেনি। ঘানার সাংবাদিক আনাস আরিমিয়াও আনাস এবং বিবিসি আফ্রিকা আই, দুটি ছদ্মবেশী অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছে, ভেষজবিদ ও চিকিৎসাকর্মীরাও একই কাজ করেছে। করোনা কোয়াকস নামের প্রথম অনুসন্ধানটির মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়: কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা হিসেবে কিভাবে ভুয়া সব জরিবুটি বিক্রি করছেন ঘানার ভেষজবিদরা। ক্যাশিং ইন অন কোভিড নামের দ্বিতীয় অনুসন্ধানটির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে: দেশটির চিকিৎসাকর্মীরা হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য কেনা পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বাইরে বিক্রি করছেন। 

অনুসন্ধানের বিষয় যখন প্রেসিডেন্ট মাসিসি (বোতসোয়ানা)

ছবি কৃতজ্ঞতা: আইএনকে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম

কোভিড-১৯ লকডাউনের পুরো সময় জুড়ে বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোগুয়েতসি মাসিসিকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল আইএনকে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম। অবশ্য বিষয়টি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নয়। জিআইজেএন-এর এই সদস্য সংগঠন খুঁজে বের করে, বেশ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবসায়িক চুক্তির খবর যেগুলোর সাথে প্রেসিডেন্ট নিজে জড়িত ছিলেন। আইএনকে রিপোর্ট করে, অন্তত ১০টি কোম্পানি এবং বিতর্কিত অনেক ব্যবসায়ীর সাথে মাসিসির ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত আছে। এই অনুসন্ধানী দল আরো উন্মোচন করে: সরকারের ইজারা দেওয়া একটি খামারের দখল নিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট নিজেই দরপত্রের শর্তাবলী লঙ্ঘন করেছেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের তিন মাস পর, মাসিসিকে এই খামারটি ইজারা দেওয়া হয়।  

লুটের সম্পদ ফিরিয়ে আনার অস্বচ্ছ চুক্তি (নাইজেরিয়া)

নাইজেরিয়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়েমি ওসিনবাজো। ছবি কৃতজ্ঞতা: ফিন্যান্স আনকভারড

নাইজেরিয়ার প্রিমিয়াম টাইমস ও যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্স আনকভারড-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই অনুসন্ধান প্রশ্ন তোলে: সাবেক রাজনীতিবিদদের লুট করা এবং যুক্তরাজ্যে লুকিয়ে রাখা অর্থ পুনরুদ্ধারে নাইজেরিয়ার সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিগত সরকারগুলোর সময় রাজনৈতিক নেতারা যেসব অর্থ পাচার করেছেন, সেগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদু বুহারির সরকারের নেওয়া বেশ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। সাংবাদিকদের অভিযোগ: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে গোপনে এমন কিছু চুক্তি করা হয়েছে, যাতে করে কিছু অর্থ আর ফিরিয়ে আনার উপায় থাকবে না। বিতর্কিত এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতেও কিছু ফলো-আপ প্রতিবেদন করেছেন এই সাংবাদিকরা। 

খনির টাকা কোথায় যাচ্ছে (দক্ষিণ আফ্রিকা)

২০১৮ সালের করাপশন ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “খনিজ উত্তোলন সংক্রান্ত রাজস্বের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে বিকৃতি ও অসমতা। এবং এখানে দুর্নীতি-অনিয়মের সুযোগও আছে।” ছবি কৃতজ্ঞতা: অ্যাকশন এইড এসএ

বিশ্বের বড় বড় খনিজ উত্তোলন কোম্পানিগুলো, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে এবং সেই অর্থগুলো কোথায় গেছে – ২০১৫ সালের আগে এই বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারেই ছিল দেশটির সাধারণ মানুষ। কারণ কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষকে কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছে, সেই তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে – এমন কোনো আইন সেখানে পাঁচ বছর আগে ছিল না। কিন্তু অর্থগুলো কোথায় গেছে, তা জানতে সাহায্য করেছে জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন, অক্সপেকার্স সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর ডেটা-ভিত্তিক অনুসন্ধান। অক্সপেকার্সের এই প্রতিবেদন তৈরি সম্ভব হয়েছে সাম্প্রতিক একটি আইনি পরিবর্তনের কারণে, যার ফলে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোকে অর্থ লেনদেনের তথ্য উন্মুক্ত করতে হচ্ছে। অক্সপেকার্স এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য অন্যান্য কিছু সংগঠনের সঙ্গেও জোট বেঁধেছিল। যেমন পাবলিশ হোয়াট ইউ পে সাউথ আফ্রিকা, পাবলিশ হোয়াট ইউ পে ইউকে, ও গ্লোবাল উইটনেস। এই অনুসন্ধানটির ফলে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ জানতে পেরেছে খনিজ উত্তোলনের কোম্পানিগুলো সরকারকে কী পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছে। অনুসন্ধানটি করার ক্ষেত্রে অক্সপেকার্সের #মাইনঅ্যালার্ট ডিজিটাল টুলের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

প্রেসিডেন্টের গোপন সিমেন্ট চুক্তি (মালাউয়ি)

ডিরেক্টর অব স্টেট রেসিডেন্স, পিটার মুখিতোর লেখা একটি চিঠি। কৃতজ্ঞতা: পিআইজে মালাউয়ি

এই প্রতিবেদনে, মালাউয়ির দ্য প্ল্যাটফর্ম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এমন কিছু নথিপত্র প্রকাশ করে, যেখান থেকে দেখা যায়: দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়িক পরিবারের স্বার্থে সিমেন্ট আমদানি করার আইন পরিবর্তন করেছেন। এই আইনের ফলে, প্রেসিডেন্ট নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য করমুক্তভাবে সিমেন্ট আমদানি করতে পারবেন। কিন্তু তার কোনো সহযোগী বা ব্যবসায়িক অংশীদার সেটি করতে পারবেন না। 

আধুনিক শ্রম-দাসত্বের গল্প (নাইজেরিয়া/উগান্ডা)

নিজ দেশে চাকরি স্বল্পতার কারণে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের বাসিন্দাই বিদেশে পাড়ি জমাতে চান ভালো সুযোগ-সুবিধার খোঁজে। কিন্তু প্রায়ই, তাদের পড়তে হয় অমানবিক সব পরিস্থিতির মধ্যে। তাদের এসব দুর্দশার কথা তুলে ধরার মতো কেউ থাকে না, এবং সরকারের কাছ থেকেও কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না। আফ্রিকার এসব অভিবাসী শ্রমিকদের কেমন কঠোর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেদিকে আলো ফেলেছে ২০২০ সালের দু’টি অনুসন্ধান। প্রথমটি ছিল উগান্ডার এক সাংবাদিকের ছদ্মবেশী অনুসন্ধান, যেখানে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছেন এবং সেখানে কয়েক মাস কাজ করেছেন ভৃত্য হিসেবে। দ্বিতীয় অনুসন্ধানটি করেন এক নাইজেরিয় সাংবাদিক। তাঁর কাজ থেকে উন্মোচিত হয়েছে: কিভাবে আফ্রিকা ও আফ্রিকার বাইরে দাস হিসেবে কাজ করছেন কমবয়সী নারীরা। দুই অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু এক হলেও, সেগুলো আফ্রিকান শ্রমিকদের আধুনিক দাসত্বের দুটি ভিন্ন ভিন্ন দিক তুলে এনেছে।


বেনন হারবার্ট ওলুকা জিআইজেএন আফ্রিকার সম্পাদক। তিনি উগান্ডার মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক। বেনন, দেশটির সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, দ্য ওয়াচডগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এবং আফ্রিকান ইনভেস্টিগেটিভ পাবলিশিং কালেক্টিভের সদস্য। 

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।