প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তেল ও গ্যাস বিষয়ক রিপোর্টিং — পারমাণবিক বর্জ্য

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

আপনি যদি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রিপোর্ট করেন, তাহলে আমি আপনাকে একটু সময় নিয়ে কানাডার শিক্ষার্থী এলি ফ্রাঙ্কলিন বারটনের কথা ভাবতে বলব। ১৯০৪ সালে তিনি অন্টারিওর পেট্রোলিয়া কূপ থেকে তেল নিয়ে “গবেষণাগারের ওয়াটার বাথে থাকা তিন লিটারের বড় একটি ফ্লাস্কে রেখে,”  বানসেন চুল্লির (পরীক্ষাগারের চুল্লি) সাহায্যে তাপ দিতে থাকেন। এ থেকে যে বাষ্প তৈরি হয় সেগুলো আবার একাধিক নলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে দেন। এ সময় তিনি অপরিশোধিত খনিজ তেলের মধ্যে উচ্চমাত্রায় তেজস্ক্রিয় গ্যাসের উপস্থিতি দেখতে পান।

এটা ছিল ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় গ্যাস রেডন—বর্তমানে আমেরিকায় ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যুর দ্বিতীয় শীর্ষ কারণ এটি।

১৯৭৩ সালে মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিএ) প্রাকৃতিক গ্যাসে রেডনের উপস্থিতির কারণে তেজস্ক্রিয়তাজনিত সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন বিষয়ক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়,  রঙ-গন্ধ-স্বাদহীন রেডন তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মিশ্রণ ভূপৃষ্ঠে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে ফুসফুস ক্যানসার ও মৃত্যু ঘটায়।

ইপিএ এই রিপোর্টটি ৫০ বছর ধরে হালনাগাদ করেনি। এমনকি তেল-গ্যাস উত্তোলনের আধুনিক ফ্র্যাকিং পদ্ধতির যুগে এসেও সমস্যা আগের মতোই রয়ে গেছে।

উদাহরণস্বরূপ: এখনও নিউ ইয়র্কবাসীরা ফ্র্যাকিং পদ্ধতির  (চাপ প্রয়োগ করে মাটির গভীর থেকে তেল বা গ্যাস বের করে আনা) মাধ্যমে উত্তোলন করা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। শিল্প খাতের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী এতে এতটাই তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে যা ধীরে ধীরে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি, এই পরিস্থিতিকে উৎসাহিত ও সহায়তা করেছিলেন সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এবং তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা।

তেল ও গ্যাস শিল্পের তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক দুঃস্বপ্নের শুরুটা এখান থেকে।

ঝুঁকি পরিমাপ

এ শিল্পখাতটি কিন্তু বহু আগে থেকেই এইসব হুমকির কথা জানত। তাই দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে ছিল যে সরকার এ শিল্পের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর কোনো নিয়ম চালু করবে।

আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের কমিটি ফর এনভায়রনমেন্টাল বায়োলজি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথের ১৯৮২ সালের একটি প্রতিবেদনে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক ও সম্প্রদায়ের ওপর রেডনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা হয়। সেখানে বলা হয়: “তেল শিল্পের কাজে ব্যবহৃত প্রায় সব উপকরণেই পরিমাপযোগ্য পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ (রেডিওনুক্লাইড) থাকে, যা শেষ পর্যন্ত যন্ত্রপাতির ভেতরে, উৎপন্ন তরল পদার্থ বা ফেলে দেওয়া বর্জ্যের মধ্যে থেকে যায়।

আমি নিজে এটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি ২০১৬ সালে, যখন আমি রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের জন্য অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ওয়াটারওয়েস্ট ইনজেকশন ওয়েল (তেল এবং গ্যাস উত্তোলনের পর যে বর্জ্য পানি বা ওয়াটারওয়েস্ট তৈরি হয়, তা মাটির নিচে ইনজেকশন ওয়েল নামক স্থানে ফেলো হয়) নিয়ে রিপোর্ট করতে শুরু করি।

২০১৮ সালে ওহাইওর একজন কমিউনিটি সংগঠক আমাকে জানান যে, ওই রাজ্যের একটি তেল ও গ্যাস কোম্পানি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবহার করে এমন এক ধরনের তরল ডিআইসার তৈরি করেছিল। সাধারণ মানুষ যা তাদের ঘরের সামনে বা উঠানে বরফ গলানোর জন্য ব্যবহার করত। কোম্পানিটি দাবি করেছিল যে, এই পণ্যটি “পরিবেশ এবং পোষা প্রাণীর জন্য নিরাপদ” এবং লোজের (আমেরিকান খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি) স্টোরগুলোতেও বিক্রি করা হচ্ছিল।

তখন থেকে, আমি এ শিল্পের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব নিয়ে চলমান জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের গভীরে গিয়ে কাজ করতে  সক্ষম হয়েছি।

পারমাণবিক বর্জ্য

Drilling rig with brine pipeline. Photo: U.S. Department of Energy via Flickr Creative Commons (United States government work).

তেলের কূপ খননের সরঞ্জামসহ লবণাক্ত বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের পাইপলাইন। ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়, ফ্লিকার ক্রিয়েটিভ কমন্স থেকে সংগৃহীত

তেল ও গ্যাস কূপ থেকে কেবল তেল বা গ্যাস নয়, আরও অনেক কিছেই ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে।

প্রথমে রয়েছে তরল বর্জ্য। পারমাণবিক এ বর্জ্যটিকে খুব সাদামাটাভাবে “ব্রাইন” নামে ডাকা হয়।

শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই এক বছরে যে পরিমাণ ব্রাইন (লবণাক্ত ময়লা পানি) তৈরি হয়, তা যদি ব্যারেলে ভরে একের ওপর এক সাজানো হয়, তাহলে এই ব্যারেলগুলোর উচ্চতা চাঁদ ছুঁয়ে আবার পৃথিবীতে ফেরার পথকে ২৮ বার অতিক্রম করতে পারবে।

যেসব ট্যাঙ্ক ও ট্রাকে লবণাক্ত এ দূষিত পানি রাখা হয়, সেগুলোর ভেতরে অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এক ধরনের ঘন ময়লা জমে থাকে, যার তেজস্ক্রিয়তা প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকিরণের মাত্রার চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি হতে পারে

আরও ক্ষতিকর ও বিষাক্ত এক ধরনের বর্জ্য হলো ফ্লোব্যাক। চাপ প্রয়োগ করে মাটির গভীর থেকে তেল বা গ্যাস বের করে আনার সময় বালি ও রাসায়নিকের এ মিশ্রণটি ভূ-পৃষ্ঠে উঠে আসে।

বর্তমানে মাটির নিচের যেসব শক্ত পাথরের স্তর ফ্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভাঙা হচ্ছে, সেগুলোতে উচ্চ মাত্রার ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়াম বিদ্যমান। কূপ খননের সময় মাটির নিচ থেকে ওঠে আসা এসব পাথরচূর্ণ ও মাটি দেখতে সাধারণ মনে হলেও, এতে তেজস্ক্রিয়তা এত বেশি হতে পারে যে তা স্থানীয় ল্যান্ডফিলে ফেলা নিরাপদ নয়

তবুও, অনেকেই বলছেন যে এখানে দেখার কিছু নেই, এগুলো তেমন খারাপ নয়।

অসচেতনভাবে তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছে তেল ও গ্যাস শিল্পের নেপথ্যে কাজ করা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত কর্মীরা।

তাঁরা ঝুঁকি সম্পর্কে অজ্ঞ, তাঁরা বর্জ্য অপসারণ করেন এবং তা চুন, কয়লার ছাই আর গুঁড়ো করা ভুট্টার খোসার সঙ্গে মিশিয়ে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা  কমানোর চেষ্টা করেন। অথচ প্রয়োজনীয় কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই তাঁরা এটা করছেন, কখনও কখনও শুধু টি-শার্ট পরেই কাজে নেমে যান।

তাঁরা এ ধরনের ভয়াবহ দূষিত জায়গায় বসে দুপুরের খাবার খান, ধুমপান করেন। এমনকি মাঝে মাঝে বারবিকিউ পার্টিও করেন।

তাদের শরীরে এসব তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ছিটে পড়ছে। তাঁদের মুখমন্ডলে ও চোখ-মুখের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে ব্রাইন ও ফ্লোব্যাক। চারপাশে ঘুরছে বিষাক্ত ধুলা-বালি। তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো তাদের কাপড়ে জমা হচ্ছে। পায়ের বুটগুলো ক্ষয় করে ফেলছে। এতে তাদের পায়ের মোজাগুলো  ভিজে যাচ্ছে । বাড়িতে ফিরে তাঁরা এগুলো পরিবারিক ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে ফেলছেন কিংবা স্থানীয় কোনো হোটেলে, যেখানে তাঁরা থাকছেন। এভাবে আরও বেশি মাত্রায় দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।

উড়োজাহাজে চড়ার সময় একজন যাত্রী যেভাবে মহাকাশে থাকা বিকিরণের সম্মুখীন হন, বা সিটি স্ক্যানের এক্স-রে থেকে যে ধরনের বিকিরণ বের হয়, তেমন নয়। তেল ক্ষেত্রের তেজস্ক্রিয় বিষাক্ত বর্জ্য ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের মধ্যে চলা-ফেরা করলে সবসময় ধুলা ও ছোট ছোট কণা তৈরি হয়। যা অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করা কর্মীরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে বা মুখ দিয়ে গ্রহণ করতে পারেন। ফলে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলো তাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং শ্বাসনালী, অন্ত্র, হাড় বা রক্তের মতো সংবেদনশীল ও ক্ষতিকর স্থানে বিকিরণ ছড়ায়। আর এর পরিণতি ক্যান্সার।

“এই লোকগুলো গিনিপিগ,” ২০২০ সালে লুইজিয়ানার আইনজীবি স্টুয়ার্ট স্মিথ আমাকে বলেন। যিনি তেল ও গ্যাস শিল্পের তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসা কর্মীদের নিয়ে দেশের কিছু বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে সফলভাবে মামলা করেছেন

কৌশলে সমস্যা লুকানো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও গ্যাস শিল্পের ৯৬% বর্জ্য পানি—ব্রাইন ও ফ্লোব্যাক উভয়ই—ইনজেকশন কূপে ফেলে দেওয়া হয়।

এই দেশে এখন মোট ১,৮১,৪৩১টি তেল ও গ্যাস বর্জ্য পানির ইনজেকশন কূপ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি স্টারবাকস শপের বিপরীতে আছে গড়ে ১১টি করে ইনজেকশন কূপ। এসব গভীর ভূগর্ভস্থ গর্তে প্রতি মিনিটে প্রায় ২০ লাখ গ্যালন বর্জ্য ফেলা হয়।

আমার কয়েকজন সহকর্মী তাদের চমৎকার রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, ময়লা ফেলার এসব কূপগুলো শুধু ভূমিকম্পের মাত্রাই বৃদ্ধি করেনি, বরং আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় এসব দূষণগুলো আবার ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

দুঃখজনকভাবে, ইনজেকশন পদ্ধতিটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, এবং এটি বিশাল এলাকা জুড়ে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য আড়াল করার একটি বড় উদাহরণ।

১৯৭১ সালে এই শিল্প ও সরকার পক্ষের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে আয়োজিত একটি সম্মেলনে নতুন গঠিত ইপিএর সহকারী প্রশাসক (গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ বিভাগ) স্ট্যানলি গ্রিনফিল্ড বলেছিলেন, “আমরা আসলে জানি না, নিচে ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্যের কী হয়। আমরা কেবল আশা করি।”

ওই একই সম্মেলনে, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পেট্রোলিয়াম জিওলজিস্টসের থিওডর কুক বলেছিলেন, “স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে—এই পদ্ধতি সমাজের বর্জ্য সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান নয়।”

নিয়ন্ত্রণের অভাব

আমার কয়েকজন সহকর্মীর চমৎকার রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, ইনজেকশন ওয়েলগুলো শুধু ভূমিকম্পই সৃষ্টি করেনি, বরং আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় আবার ভূপৃষ্ঠে দূষণ ছড়িয়ে দিচ্ছে

তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও ইনজেকশন কূপকে ঘৃণা করে—এটা শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া এই শিল্পের অংশীদারাও এখন সক্রিয়ভাবে এই পদ্ধতি থেকে সরে এসে তেল ও গ্যাস বর্জ্য “শোধনের” ধারণা প্রচার করতে চাইছে।

কিন্তু সমস্যাটা হলো—এই বর্জ্যের মধ্যে থাকে অত্যন্ত জটিল উপাদানের সমষ্টি, যার মধ্যে সবধরনের তেজস্ক্রিয়তা বিদ্যমান। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের ১৯৮২ সালের প্রতিবেদনেই বলা আছে যে, পরিশোধন পক্রিয়ায় আগ্রহীদের এই বাস্তবতাটা বুঝতে হবে যে, কোনো রাসায়নিক পদ্ধতিতে তেজস্ক্রিয়তাকে পরিবর্তন বা নিষ্ক্রিয় করা যায় না। বরং যেকোনো শোধনপ্রচেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে খুব সামান্য তেজস্ক্রিয় উপাদানও ঘনীভূত হয়ে যেতে পারে। যার ফলে সৃষ্টি হতে পারে অনেক বেশি বিপজ্জনক কিছু।

দুই বছর আগে আমি ওহাইওর পরিবেশ কর্মী ও জ্বালানি দপ্তরের সাবেক এক বিজ্ঞানীর সাথে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার উত্তরের একটি পরিত্যক্ত ফ্র্যাকিং বর্জ্য শোধনাগার পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তখন সেখানে আমরা এমন একটি জায়গা খুঁজে পাই, যেখানে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পারমাণবিক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি পরবর্তী চেরনোবিলের ৯৯ শতাংশ জায়গার চেয়েও বেশি ছিল

পারমাণবিক শক্তি এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হলেও তেল গ্যাস শিল্পের পারমাণবিক বর্জ্যকে কখনোই নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি।

বিষয়টি আরো ভয়ঙ্কর ছিল যখন আমি জানতে পারি যে স্থানীয় কিছু ছেলে-মেয়ে সেখানে পার্টি করছিল। যদিও ইপিএ বলেছে যে “এই জায়গার দূষণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে” এবং “তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিঃশ্বাস বা খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে,” তাই, কেবল পার্টি করা মানুষেরাই যে একমাত্র ঝুঁকিতে ছিলেন, তা নয়।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন সেই প্ল্যান্টের কর্মীরা, যারা দূষণের সবচেয়ে বড় শিকার।  তাদের বলা হয়েছিল তাঁরা শিল্পের বর্জ্য শোধন করে দারুণ গর্বের কাজ করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিবার্হী আমাকে বলেন তাঁরা “সব বিধিমালা অনুসরণ করেছেন।” তবে দুর্ভাগ্যবশত, তেল ও গ্যাস শিল্পের পারমাণবিক বর্জ্যগুলো সরকারের পক্ষ থেকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, আজও তা অনিয়ন্ত্রিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পর তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন ও পরবর্তীতে নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশনকে। ফলে পারমাণবিক শক্তি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছিল। তবে তেল ও গ্যাস শিল্পের তেজস্ক্রিয়তা কখনোই নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়নি।

তাছাড়া, ১৯৮০ সালে এই শিল্পকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ছাড় ও সুবিধা দেওয়া হয়। আইনিভাবে যেখানে এ শিল্পের বর্জ্যকে অ-বিপজ্জনক হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়। যদিও এর মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক, ক্যান্সারের উপাদান, ভারী ধাতু এবং পারমাণবিক রেডিয়েশন ছিল।

এই একই সুবিধার আওতায় বাইরের দেশ থেকে তেলক্ষেত্রের বর্জ্যকে পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে এসে পশ্চিম টেক্সাসের মরুভূমিতে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। যেই কোম্পানি ওই জায়গাটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে তাঁরা [এই প্রতিবেদকের] বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে

At an anti-fracking protest in Washington, DC, a demonstrator holds up a bottle filled with well water contaminated by fracking . Image: Shutterstock

ওয়াশিংটন, ডিসিতে ফ্র্যাকিং পদ্ধতি বিরোধী প্রতিবাদে একজন প্রতিবাদকারী একটি বোতল উঁচু করে ধরেছেন। যেটির মধ্যে কূপের দূষিত পানি রয়েছে। যে দূষণ সৃষ্টি হয়েছে ফ্র্যাকিংয়ের কারণে। ছবি: শাটারস্টক

রিপোর্টগুলো যাঁরা করেছেন


এটি নিয়ে আরও কিছু সাংবাদিক কাজ করছেন:

  • ইনসাইডক্লাইমেটনিউজেরমার্থা পস্কোস্কি, কাইলি বেনস এবং ডিলান বাদদৌর, যাঁরা তেল ও গ্যাস বর্জ্যের জটিল বিষয়গুলো কভার করছেন।
  • ডিস্মগের শারন কেলি, জুলি ডারম্যানস্কি এবং নিক কানিংহ্যাম, যাঁরা শিল্পের গোপন নথি থেকে শুরু করে আর্জেন্টিনায় রেডিওঅ্যাকটিভ ফ্র্যাকিং বর্জ্য কভার করছেন। এর মধ্যে ডারম্যানস্কি কিছু বর্জ্যের ছবি তুলছেন।
  • প্রোপাবলিকার মার্ক অলাডে এবং ক্যাপিটাল অ্যান্ড মেইনের নিক বোলিন, যাঁরা ইনজেকশন ওয়েল সম্পর্কিত নানা সমস্যাকে একত্রে কভার করেছেন।
  • পাবলিকহারাল্ডের জোশুয়া প্রিবানিক এবং মেলিসা ট্রাউটম্যান, যাঁরা এই বিষয়ে অন্যদের থেকে অনেক আগে কাজ শুরু করেছেন।
  • নিউইয়র্কারেরসহযোগীলেখকএলিজা গ্রিসওল্ড, যিনি পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী বই লিখেছেন। যেখানে দক্ষিণ-পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার একটি কমিউনিটিতে তেল ও গ্যাস বর্জ্যের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির বর্ণনা রয়েছে।
  • এবংদ্যনিউইয়র্কটাইমসেরঅনুসন্ধানীসাংবাদিকইয়ান আরবিনা, যিনি ২০১১-২০১২ সালে তাঁর “ড্রিলিং ডাউন” সিরিজে ১০টি চমৎকার গভীরতাধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রতিবেদনের মধ্যে একাধিক বিস্ময়কর তথ্য উন্মোচিত হয়েছে, যেমন পেনসিলভানিয়া কীভাবে তেল ও গ্যাস শিল্পের রেডিয়াম প্রবাহিত করতে সাহায্য করছিল, যা অনেক পেনসিলভানিয়া কমিউনিটির পানির উৎসকে দূষিত করছিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র এবং সম্প্রচার নেটওয়ার্কগুলো আমেরিকার জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আচ্ছা বলেন তো, সিএনএন বা এমএসএনবিসি থেকে আপনি কতবার একটি লাইভ প্রতিবেদন দেখেছেন— যেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ঘটে চলা ফ্র্যাকিংয়ের ফলে উপচে পড়া তেল বা বিস্ফোরণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি?

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, যাদের শুধু বিখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দলই নেই, রয়েছে অসাধারণ এক জলবায়ু বিভাগও—তারা কিন্তু ফ্র্যাকিং এলাকাগুলোকে একরকম ছেড়েই দিয়েছে। আমার মতে, তারা যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে সংবাদ ব্যুরো স্থাপন করে, তেমনভাবে ফ্র্যাকিং-পীড়িত আমেরিকায়ও তাদের স্থায়ী অফিস খোলা উচিত ছিল।

বড় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফ্র্যাকিং বিষয়ক এই নীরবতা একদিকে যেমন আর্বিনার মতো সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি মুছে দিয়েছে, তেমনি তা আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার সক্ষমতাও দুর্বল করে ফেলেছে। ফলে, তারা এখন আর এই ভয়ংকর আগ্রাসী, প্রতারণামূলক এবং বিশৃঙ্খল শিল্প ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জটিল প্রক্রিয়া, পরিকাঠামো এবং চক্রান্তের গভীরে যেতে পারছে না।

সব রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের অংশগ্রহণ

তবে নজরদারির অভাব এবং একইসঙ্গে দুর্বল নিয়মকানুনের জগতে এই শিল্পের স্বাভাবিক প্রবণতাগুলো—খরচ বাঁচাতে ছোট পথে হাঁটা এবং পরিবেশ দূষণের দিকে ঝোঁক—এমন একটি বাস্তবতা তৈরি করেছে, যা বিজ্ঞান  ও পরিবেশ সাংবাদিকতার জন্য ভীষণ উপযোগী।

আর তা যতটা অদ্ভুতই মনে হোক না কেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের সাংবাদিকতার জন্য যথেষ্ট সহায়ক।

প্রগতিশীল কলেজ পত্রিকা থেকে শুরু করে চরম রক্ষণশীল পডকাস্ট—দুই ধরণের মাধ্যমেই আমি সাক্ষাৎকার দিয়েছি। অবশ্যই, দুই পক্ষই জলবায়ু পরিবর্তনসহ অনেক বিষয়ে একমত নয়। কিন্তু দুইপক্ষই তেল ও গ্যাস শিল্পের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সমস্যাটিকে বোঝার সক্ষমতা দেখিয়েছে যে, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই শিল্পটি, সরকারের একাধিক সহযোগী সংস্থার সমর্থনে শুধু দেশের পানি, বায়ু, ভূমি, মাটি ও কৃষিপণ্যই নয়, নিজেদের কর্মীসহ আশপাশের সাধারণ মানুষের ফুসফুস, রক্ত, আর হাড় পর্যন্ত দূষণ পৌঁছে দিয়েছে।

তাই জবাবদিহিতা, সুস্বাস্থ্য এবং ন্যায়ের লড়াইয়ে আমি এবং আমার সহকর্মীরা আপনাদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

সাংবাদিকতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা অথবা জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে হোক না কেন— আমি যে কারও সাথে যোগাযোগ করতে প্রস্তুত, যাঁরা এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে চান।

এ লেখাটি সোসাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টসে প্রকাশিত হয়েছিল। মূল লেখাটি এখানে পড়তে পারেন। এই সংস্করণে কিছুটা সম্পাদিত এবং অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হলো।


Justin Nobel reporterজাস্টিন নোবেল রোলিং স্টোন, হার্পার্স এবং অন্যান্য মার্কিন সাময়িকী, অনুসন্ধানী সাইট এবং সাহিত্য পত্রিকায় বিজ্ঞান এবং পরিবেশ নিয়ে লেখালেখি করেন। ২০২০ সালের রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা প্রতিবেদন আমেরিকার রেডিওঅ্যাকটিভ গোপনীয়তা ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্স রাইটার্স পুরস্কার লাভ করে। যা তাঁর সাম্প্রতিক বই পেট্রোলিয়াম-টু থার্টি এইট: বিগ অয়েলস ডেঞ্জারাস সিক্রেট অ্যান্ড দ্য গ্রাসরুটস ফাইট টু স্টপ ইট লেখার অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করে। তাঁর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ইকোনমিক হার্ডশিপ রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের ক্রেগ নিউমার্ক গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজম থেকে ম্যাকগ্রো ফেলোশিপ ফর বিজনেস জার্নালিজম সহায়তা পেয়েছে।

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

অনুসন্ধান পদ্ধতি গবেষণা

প্লেনস্পটার এবং পরিবহন পর্যবেক্ষকদের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আপনার অনুসন্ধানে যেভাবে সহায়তা করতে পারে

বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে শখ আছে মানুষের। কেউ পাখি দেখেন, কেউ বা সাপ। আবার কারও নেশা উড়োজাহাজ, জাহাজসহ নানা যানবাহনের দিকে। তাঁরা শুধু এগুলোর খোঁজখবর নিয়েই বসে থাকেন না। রীতিমতো আলোচনা করেন সামাজিক মাধ্যমে। আপনার অনুসন্ধানে এদের কাজে লাগাতে পারেন আপনি। পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

অনুসন্ধান পদ্ধতি

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে টিবিআইজে যেভাবে ‘সাইলেন্সড স্টোরিজ’ উন্মোচন করেছে 

আমাদের চারপাশে দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারির খবর চাপা পড়ে যায়। আসলে এসব খবর ধামাচাপা দিতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে চাপ দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। টিবিআইজে কীভাবে সাংসদদের সঙ্গে জোটে বেঁধে চুপ করিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করেছিল পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

নিকার২০২৫ সম্মেলনে আলোচিত আধুনিক, সময় সাশ্রয়ী ও বিনামূল্যের চারটি অনুসন্ধানী ডেটা টুল

যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে থাকেন এই প্রতিবেদনে তাঁদের জন্য থাকছে চারটি ডেটা টুলের সন্ধান। ধরুন, বেশ বড়সড় একটা অডিও ফাইল হাতে এসেছে, গোটাটা শোনারসময় করে উঠতে পারছেন না। সারাংশটা চাই, তাই তো? দেখুন এই প্রতিবেদনে এমন কিছুর সন্ধান মেলে কিনা।

গবেষণা ডেটাবেজ

বেসরকারি ডেটার বিকল্প উৎস ও আর্কাইভের তালিকা দেখুন এখানে

পরিসংখ্যানের জন্য সরকারি উৎসগুলো এককথায় অতুলনীয়। সেই সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোও ডেটার ভালো উৎস। বেশ কিছু সাংবাদিক সংগঠনও ডেটা সংরক্ষণ করে থাকে এবং দলের সদস্যদের কাছে প্রয়োজনমাফিক তথ্য যোগায়। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যবিষয়ক ডেটার খোঁজ কোথায় পাবেন তার সন্ধান থাকল।