

ডেটা সাংবাদিকদের গ্রীষ্মকালীন পাঠ্য তালিকা: যারা বিশ্বাস করেন সংখ্যা দিয়েও শক্তিশালী গল্প বলা যায়
ডেটা সাংবাদিকতা এখন আর শুধু যাচাই করা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন আবেগ, নৈতিকতা ও সৌন্দর্যবোধের সঙ্গে ডেটাকে যুক্ত করে এমন এক সাংবাদিকতার আকার নিয়েছে যা স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও বোঝাপড়ার পরিসরকে সম্প্রসারিত করে।
কার্যকর ডেটা সাংবাদিকতার জন্য শুধু শক্তিশালী বিশ্লেষণী সক্ষমতাই যথেষ্ট নয়; পাশাপাশি প্রয়োজন সহমর্মিতা, ভিজ্যুয়াল সাক্ষরতা, ডেটা বিষয়ে সচেতনতা, কৌশলগত চিন্তাশক্তি এবং নৈতিক সংবেদনশীলতা। যারা এই বহুমাত্রিক দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করতে আগ্রহী—আমাদের গ্রীষ্মকালীন বইয়ের এই তালিকাটি সেইসব ডেটা সাংবাদিকদের জন্য। এখানে প্রচলিত কারিগরি জানাশোনার বাইরেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রাখা হয়েছে।
আমি গত ১৩ বছর ধরে ডেটা সাংবাদিকতা পড়াচ্ছি। আর গত ছয় বছর ধরে পড়িয়ে আসছি ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, ডেটা ম্যানেজমেন্ট, বিগ ডেটা এবং ইনসাইটস সম্পর্কিত বিষয়গুলো। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে আন্তঃবিভাগীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলাটা কতটা জরুরি। তাই যখন আমি পড়ার উপকরণ সম্পর্কে বলি, তখন চেষ্টা করি এমন উৎসগুলোকে প্রাধান্য দিতে—যেগুলো সমাজবিজ্ঞান, মার্কেটিং, কিংবা কোনো সফটওয়্যার কোম্পানির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রকৌশলী বা গ্রাফিক ডিজাইনারের অভিজ্ঞতার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরে। এই তালিকা তৈরি করার সময় আমি শুধু আমার নিজস্ব পাঠ ও পাঠদানের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত মূল উৎসগুলোই বিবেচনা করিনি, বরং অন্যদের সুপারিশকৃত বইগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি।
ফলে, এই বই নির্বাচনের তালিকায় উঠে এসেছে নানা রকম চিন্তাধারার প্রতিফলন। নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ডেটা বিশ্লেষণ, শিল্পনির্ভর ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, নৈতিক দ্বন্দ্ব, স্টোরিটেলিং, বৈজ্ঞানিক বিবরণ থেকে শুরু করে শিক্ষাদানে সহায়ক বিষয়গুলোও। এই তালিকায় কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও উঠে এসেছে; যেমন: ডেটার মাধ্যমে নারী হত্যাকে দৃশ্যমান করা কতটা কঠিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে গণমাধ্যমের কাজকে ত্বরান্বিত করছে কিংবা কীভাবে আন্তরিক গল্প বলার মাধ্যমে শিশুদের বা ডেটার সঙ্গে অপরিচিতদের বোঝানো যায়—“সংখ্যা মানেই ভয় পাওয়ার কিছু নয়।”
এই পাঠ্য তালিকাটি বিশেষভাবে সেইসব ডেটা সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা শুধু তথ্য বিশ্লেষণই করেন না, বরং ডেটাকে ঘিরে ভাবেন, আলোচনা করেন, লেখেন, সংগ্রহ ও ধারণ এবং গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন। প্রতিটি বই একটি করে দরজা খুলে দেয়: কোনোটি কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে, কোনোটি গল্প বলার ক্ষমতা শানিত করে, আর কোনোটি নৈতিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এনে ডেটার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। ডেটা কেবল তথ্য নয়—যারা তা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে জানে, তাদের হাতে এটি হয়ে উঠতে পারে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, দৃশ্যমানতা, অর্থ, স্মৃতি, পুনরুদ্ধার এবং কাজের শক্তি।
এই তালিকায় রয়েছে চারটি মহাদেশ ও অন্তত আটটি দেশের বই ও রচনা। যা তুলে ধরে ডেটা সাংবাদিকতার এক বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। যেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নানা ভাষার (যেমন: ইংরেজি, জার্মান, তুর্কি, উর্দু ও ইন্দোনেশিয়ান) পদ্ধতি ও বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন শাখার জ্ঞান—যেমন: প্রকৌশল, সাংবাদিকতা, সমাজবিজ্ঞান, ভিজ্যুয়াল আর্টস, নারী অধ্যয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং শিক্ষা। এই বহুমাত্রিক সংমিশ্রণ ডেটা সাংবাদিকতাকে কেবল একটি কারিগরি অনুশীলন গণ্ডির মধ্যে না রেখে পরিণত করেছে সংস্কৃতিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধ একটি পঠন অভিজ্ঞতায়।
আপনি যদি প্রস্তুত থাকেন, তাহলে চলুন, শুরু করা যাক।
নতুন প্রকাশনা
চার্ট: ডিজাইনিং ক্রিয়েটিভ ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনস ফ্রম চার্টস টু আর্ট
নাদিয়েহ ব্রেমার (২০২৫)
ভাষা: ইংরেজি

ছবি: রাউটলেজ পাবলিশিংয়ের সৌজন্যে
পুরস্কারপ্রাপ্ত ডেটা সায়েন্টিস্ট ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন ডিজাইনার নাদিয়েহ ব্রেমারের লেখা এই বইটি ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ক্ষেত্রকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়। ২৮৪ পৃষ্ঠার এই অসাধারণ পাঠ্যটি পাঠককে এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণে নিয়ে যায়। যেখানে প্রচলিত গ্রাফিক্স পদ্ধতি থেকে শুরু করে শিল্পনির্ভর উপস্থাপনা পর্যন্ত নানাভাবে ডেটা রূপান্তরের গল্প বলা হয়েছে। এই বইয়ের ১৩টি সৃজনশীল অধ্যায়ে ব্রেমার দেখিয়েছেন কীভাবে ডেটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যায়, যা শুধু বোধগম্য নয়, বরং দৃষ্টিনন্দন, প্রভাবশালী এবং আবেগময়। লাইন চার্ট, বার গ্রাফ বা পাই চার্টের বাইরে গিয়ে তিনি উপস্থাপন করেছেন নানা ধরনের রূপান্তরমূলক কৌশল—যেমন: বৃত্তাকৃতি আকৃতি, অভিনব বিন্যাস এবং দৃষ্টিনন্দন কোডিং প্রযুক্তি। বইটিতে রয়েছে স্কেচ, প্রাথমিক খসড়া এবং লেখকের সৃজনশীল প্রক্রিয়া ঘিরে নানা অভিজ্ঞতার গল্প, যা ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনকে কেবল উপস্থাপনার মাধ্যম নয় বরং গল্প বলার এবং শিল্প প্রকাশের একটি রূপ হিসেবে তুলে ধরে। ব্রেমারের ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা আর আন্তর্জাতিক উদাহরণে সমৃদ্ধ এই বইটি ডেটা সাংবাদিক, ডিজাইনার এবং যারা ডেটার মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে চান—তাদের জন্য এক দুর্দান্ত অনুপ্রেরণা। ব্রেমারের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি ডেটা ও শিল্পের মধ্যকার সীমারেখাকে মুছে দেয় এবং পাঠকের কারিগরি ও নান্দনিক চিন্তাভাবনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে। (অনুরোধের ভিত্তিতে বইটির প্রাসঙ্গিক অংশ আলাদাভাবে পড়া যাবে।)
ڈیٹا وژولائزیشن” ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন (সেট)
সানা রশীদ ও জিশান উল হাসান (২০২৫)
ভাষা: উর্দু, ইংরেজি
চারসেটের এই বইগুলো ডেটা থেকে দ্রুত অর্থ উদ্ধারের ব্যবহারিক পদ্ধতির কথা বলে। এই সেটে রয়েছে “ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইন ট্যাবলো,” “ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন,” “পাওয়ার বিআই,” এবং “পাওয়ার বিআই (অ্যাডভান্স)” শিরোনামের বই। এটি বিশাল ডেটাসেট থেকে সাধারণ ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল ব্যবহার করে ডেটা সাংবাদিক, যোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক এবং আগ্রহীদের অর্থপূর্ণ তথ্য খুঁজে বের করার নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। উর্দু এবং ইংরেজি ভাষায় রচিত এই বইগুলো ডেটা সাংবাদিকদের জন্য এক বিশেষ সম্পদ। যা কার্যকর ডেটা গল্প বলা, কার্যকর গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা এবং বিশ্লেষণাত্মক ড্যাশবোর্ড তৈরিতে সহায়তা করে। এই সেটে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মৌলিক নীতি ও ধারণাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে এক্সেল, ট্যাবলো, পাওয়ার বিআই এবং পাইথন (ম্যাটপ্লটলিব ও সিবর্নসহ) ব্যবহারের উদাহরণ। যেগুলো ডেটা সাংবাদিকদের কাছে সহজলভ্য। সঠিক চার্ট টাইপ ও ফাংশন নির্বাচন থেকে শুরু করে উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশন ফরম্যাট তৈরি এবং পরিসংখ্যানগতভাবে স্পষ্ট চার্ট তৈরির বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। বোঝার জন্য দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদাহরণ।
এছাড়া, এই বইগুলো ডেটা সাংবাদিকদের ভিজ্যুয়াল সাক্ষরতার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তরান্বিত করে। লেখিকা সানা রশীদ এর চলমান কাজ অনুসরণ করতে আপনি তার গিটহাব পেজে যেতে পারেন।
কাউন্টিং ফেমিসাইড: ডেটা ফেমিনিজম ইন অ্যাকশন
ক্যাথরিন ডি’ইগনাসিও (২০২৪)
ভাষা: ইংরেজি

ছবি: এমআইটি প্রেস-এর সৌজন্যে
গবেষক ক্যাথরিন ডি’ইগনাসিও তার এই বইয়ে ডেটা ও নারীবাদের সম্পর্ককে একটি গভীর ও মনোগ্রাহী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। কীভাবে লাতিন আমেরিকার নারীবাদী ডেটা কর্মীরা পদ্ধতিগতভাবে নারী হত্যা বা ফেমিসাইড (মেয়েদের বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক হত্যাকাণ্ড) সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও নথিভুক্ত করেন—বইটিতে তা বর্ণনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ডেটা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে “যত্ন,” “স্মৃতি” এবং “ন্যায়বিচার” এর আলোকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছেন। মূলত, “যদি কাউকে গণনা না করা হয়, তাহলে সে যেন অস্তিত্বহীন।” সহযোগী গবেষণা প্রকল্প “ডেটা এগেইনস্ট ফেমিসাইড” থেকে উদাহরণ তুলে ধরে ডি’ইগনাসিও দেখান কীভাবে কর্মী, গবেষক, ডেটা বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকরা মিডিয়া, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং মাঠ পর্যায়ের উৎস থেকে তথ্য যাচাই করেন। এবং কিভাবে তারা এই ডেটা রাজনৈতিক বর্ণনা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নীতিমালা সংস্কারের মাধ্যমে সৃজনশীলভাবে ছড়িয়ে দেন। তিনি ডেটাকে শুধুমাত্র তথ্য বিশ্লেষণের হাতিয়ার হিসেবে দেখাননি বরং সামাজিক সহমর্মিতা ও পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া এবং কাঠামোগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সংগ্রামের একটি রূপ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন প্রচলিত ব্যবস্থাটি কীভাবে এমন কিছু সত্যকে অদৃশ্য করে তোলে যেগুলো সংখ্যায় মাপা যায় না — যেমন: ক্ষতি, যন্ত্রণা ও নির্বাক থাকা। কিন্তু নারীবাদী ডেটা চর্চা যখন প্রতিটি মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে, তখন তা কেবল আর তথ্য নয়, হয়ে ওঠে ন্যায়ের দাবি। ব্যক্তি ও সমাজ—দুই পর্যায়েই। এই বইটি সমতার খোঁজকে গুরুত্ব দেয়। এখানে ডেটা বিজ্ঞান, নারী অধ্যয়ন, সামাজিক আন্দোলন ও মানবাধিকার চর্চার সংযোগ তুলে ধরা হয়েছে। বইটি দেখায়—ডেটা শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি অনুভূতি, নৈতিকতা ও রাজনীতির বিষয়ও হতে পারে। যারা ডেটাকে পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ভাবেন, তাদের জন্য এটি একটি গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।
হ্যান্ডবুখ ডাটেন উন্ড কে আই ইম জার্নালিজমস (হ্যান্ডবুক অন ডেটা অ্যান্ড এআই ইন জার্নালিজম)
ক্রিস্টিনা এলমার, লরেঞ্জ ম্যাতসাত (২০২৪)
ভাষা: জার্মান
লেখক গবেষক ক্রিস্টিনা এলমার ও লরেঞ্জ ম্যাতসাতের লেখা সদ্য প্রকাশিত এই বইটি ডেটা সাংবাদিকতার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সমন্বয় তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ গাইড হিসেবে কাজ করে। বইটিতে ডেটা বিশ্লেষণ, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, ডেটা সংগ্রহ এবং সাজানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি পড়ার মাধ্যেমে আপনি উক্ত দক্ষতাগুলো আয়ত্ব করতে পারবেন। এছাড়া ভবিষ্যতের ডেটা সাংবাদিকতার উদাহরণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলো কিভাবে সাংবাদিকদের সহায়তা করবে তা নিয়েও রয়েছে আলোচনা। বিশেষ করে এআই টুল কিভাবে আরও নিখুঁত ও কার্যকর ডেটা সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করতে পারে—গুরুত্বের সঙ্গে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সে দিকটিও। এই বইটি সাংবাদিকদের কেবল ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কৌশলগুলোই বাতলে দেয় না বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত নৈতিক ও বাস্তব সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য কৌশলগত পরামর্শও প্রদান করে। যা ডেটা সাংবাদিকতায় আগ্রহীদের জন্য ভীষণ দরকারি পাঠ। বইটি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ভাষা ও তথ্য আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা এবং সঠিক ও আকর্ষণীয় প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করবে।Bottom of Form
ভেরি গাজেতেজিলিগি বে ভেরি মানিপুলাসিওনু (ডেটা জার্নালিজম অ্যান্ড ডেটা ম্যানিপুলেশন)
আয়শে ইয়ালমান (২০২৪)
ভাষা: তুর্কি

ছবি: নোবেল অ্যাকাডেমিক পাবলিশিংয়ের সৌজন্যে
ড. আয়শে ইয়ালমানের লেখা এই বইটি সাংবাদিকতায় ডেটার সঠিক ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে। এতে ডেটা সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কীভাবে সাংবাদিকরা সঠিকভাবে ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারেন, অর্থপূর্ণ তথ্য বের করতে পারেন এবং সঠিক ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করতে পারেন—এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে ডেটা বিকৃতির বিষয়টিও। বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপনার নৈতিক বাধ্যবাধকতাগুলো উদাহরণ আকারে তুলে ধরে বোঝানো হয়েছে যে, সাংবাদিকদের জন্য স্বচ্ছতা, নির্ভুলতা এবং নৈতিক দায়িত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই বইটি সাংবাদিকদের জন্য একটি অমূল্য নির্দেশিকা—যা ডেটা ব্যবহার করে সত্য ও নির্ভুল গল্প বলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সক্ষমতা প্রদান করে। বইটিতে ডেটার বিশ্বস্ত উন্মুক্ত উৎস নির্বাচন, সঠিক বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি প্রয়োগ, ডেটা বিশ্লেষণ ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের বিভিন্ন কৌশল এবং ডেটা সাংবাদিকতায় সম্মুখীন নৈতিক দ্বন্দ্ব মোকাবেলার উপায়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। তুরস্কে ডেটা সাংবাদিকতা কীভাবে প্রয়োগ করা হয়—বিশ্লেষণ করা হয়েছে তাও। আপনি চাইলে এই লিঙ্ক থেকে বইয়ের সূচিপত্র এবং নির্বাচিত অধ্যায়গুলো দেখতে পারবেন।
হিউম্যানাইজিং ডেটা স্ট্র্যাটেজি: লিডিং ডেটা উইথ দ্য হেড অ্যান্ড দ্য হার্ট
টিয়াংকাই ফেং (২০২৪)
ভাষা: ইংরেজি
তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান থটওয়ার্কস-এর ডেটা ও এআই স্ট্র্যাটেজি পরিচালক তিয়ানকাই ফেং। তার লেখা এ বইটি মানব ও ডেটার মধ্যে থাকা সাদৃশ্য বোঝার জন্য একটি যুক্তিনির্ভর কাঠামো তুলে ধরে। ডেটা সাংবাদিকরা প্রায়ই জনস্বার্থসম্পর্কিত তথ্য নিয়ে কাজ করার সময় ডেটা স্ট্র্যাটেজি (একটি প্রতিষ্ঠানের ডেটা কীভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা) নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। ফলে জনকল্যাণে ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ফেং ডেটা স্ট্র্যাটেজিকে মানুষের অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক করে তোলার জন্য কিছু পদ্ধতি তুলে ধরেছেন। তিনি ডেটা স্ট্র্যাটেজিতে মানুষের আবেগ, পক্ষপাত এবং প্রেরণার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণভাবে তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি ৫সি ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। যার মূল উপাদানগুলো হলো: দক্ষতা, সহযোগিতা, যোগাযোগ, সৃজনশীলতা এবং নৈতিকতা। তার মতে, এই উপাদানগুলোকে যদি কোনো ব্যবসা, প্রকল্প বা সংবাদকাহিনির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে তা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেও সহায়ক হতে পারে। ফেং তার পেশাগত অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত গল্প এবং সৃজনশীল উপাদান যেমন হাস্যরস, সঙ্গীত এবং মিম ব্যবহার করে জটিল কৌশলগত ধারণাগুলোকে সহজ ও আকর্ষণীয় করেছেন। এছাড়াও বইটি ডেটা কৌশলের সাধারণ ভুলগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট সমালোচনা করে এবং ডেটা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য একটি সুসংহত, নৈতিক ও কার্যকর ডেটা সংস্কৃতি গড়ার পরিষ্কার পথনির্দেশনা প্রদান করে।
পান্ডুয়ান প্রাকটিস বেলাজার জুরনালিস্মে ডেটা (প্র্যাকটিক্যাল গাইড টু লার্নিং ডেটা জার্নালিজম)
উতামি দিয়াহ কুসুমাওয়াতি (২০২৪)
ভাষা: ইন্দোনেশীয়

ছবি: স্ক্রিনশট, লেক্সিকা
গবেষক উতামি দিয়াহ কুসুমাওয়াতির রচিত সাত অধ্যায়ের এই ই-বুকটি প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য দ্রুত কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ প্রদান করে। যা ডেটা পরিশোধন (ডেটা ক্লিনিং) থেকে শুরু করে ডেটা বিশ্লেষণ এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন পর্যন্ত বিস্তৃত। বইটিতে ইন্দোনেশিয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডেটা সাংবাদিকদের জন্য দেওয়া প্রশিক্ষণের পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন শাখার মধ্যে পার্থক্য এবং শেখানো ও শেখার প্রয়োজনীয়তাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ে ধাপে ধাপে ডেটা সাংবাদিকতার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ডেটা মাইনিং (বড় আকারের ডেটা বা তথ্যভান্ডার থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্যাটার্ন, সম্পর্ক, প্রবণতা এবং উপযোগী তথ্য খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া), মৌলিক ও উন্নত বিশ্লেষণ, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং সাধারণত ব্যবহারিত কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার যেমন এমএস এক্সেল, গুগল শিটস, ওপেনরিফাইন, টাবুলা, ফ্লরিশ এবং কিউজিআইএস দিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরি। প্রতিটি অধ্যায়ে ব্যবহৃত ডেটাসেটের লিঙ্কও দেওয়া রয়েছে, যা শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা সরাসরি ডাউনলোড করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। বিস্তারিত ও সহজলভ্য গাইড হিসেবে হাতে-কলমে শেখানোর পদ্ধতিগুলো শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের ডেটা সাংবাদিকতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
জেন ক্রিস্টিয়ানসেন (২০২২)
ভাষা: ইংরেজি
জ্যেষ্ঠ গ্রাফিক্স সম্পাদক জেন ক্রিস্টিয়ানসেন তার এই বইয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে বিজ্ঞানের জটিল তথ্যকে সহজ, সুন্দর ও প্রভাবশালী ভিজ্যুয়াল বা চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। যারা বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে বোধগম্যভাবে ও আকর্ষণীয় করে ভিজ্যুয়ালি তুলে ধরতে চান, তাদের জন্য বইটি এক অমূল্য সম্পদ। সায়েন্টিফিক আমেরিকান ম্যাগাজিনে ভিজ্যুয়াল এডিটিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে ক্রিশচিয়ানসেন এই বইতে বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য উপস্থাপনায় শুধু তথ্যগত স্পষ্টতা নয়, নান্দনিক উপাদানগুলো দক্ষতার সঙ্গে একত্রিত করেছেন।
বইটিতে ডায়াগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক ভিজ্যুয়াল তৈরির পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হয়েছে—চিন্তার শুরু থেকে খসড়া তৈরি, তথ্য যাচাই ও উপস্থাপনার ধরন বেছে নেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পাঠককে যত্নসহকারে দিক নির্দেশণা দেওয়া হয়েছে। তথ্যকে নির্ভুল ও প্রভাবশালী ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে উপস্থানের কার্যকর কৌশলও তুলে ধরা হয়েছে। লেখিকা ক্রিশচিয়ানসেন মনে করেন, গ্রাফিক বা চিত্র উপস্থাপন শুধু তথ্য জানানোর মাধ্যম নয়—এটি গল্প বলার শক্তিশালী এক উপায়ও।
সমৃদ্ধ ভিজ্যুয়াল উদাহরণ, কেস স্টাডি ও বিশেষজ্ঞ মতামতে ভরা এই বইটি বিজ্ঞানের জটিল বিষয় সহজভাবে তুলে ধরতে আগ্রহীদের জন্য এক অনন্য সহায়ক। ক্রিশচিয়ানসেন শুধু গ্রাফিক ডিজাইনের টুল শেখান না, তিনি পাঠক-দর্শকের মনস্তত্ত্ব এবং ভিজ্যুয়াল গল্প বলার শক্তি সম্পর্কেও বলেন। বইটিতে বিভিন্ন ছবি ও উদাহরণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, যাতে গবেষক, একাডেমিক, সাংবাদিক ও ইনফোগ্রাফিক ডিজাইনাররা বৈজ্ঞানিক তথ্য কার্যকর ও নৈতিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে। তবে, বইটি এমন পাঠকদেরও কাজে লাগবে, যারা ভাবছেন—“কোথা থেকে শুরু করবেন?”
আই’ম নট আ নাম্বার্স পার্সন: হাউ টু মেইক গুড ডিসিশনস ইন আ ডেটা–রিচ ওয়ার্ল্ড
সেলেনা ফিস্ক (২০২৩)
ভাষা: ইংরেজি

ছবি: মেজর স্ট্রিট পাবলিশিংয়ের সৌজন্যে
সেলেনা ফিস্কের ১৯২ পৃষ্ঠার এই বইটি তাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, যারা সংখ্যা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন বা ডেটা নিয়ে কাজ করতে সংকোচ বোধ করেন। ফিস্কের মতে, ডেটাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বা একে জটিল বলে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং সঠিক প্রশ্ন, সহজ ব্যাখ্যা এবং অর্থ খুঁজে নেওয়ার আগ্রহ থাকলে—যে কেউ ডেটা পড়তে, বিশ্লেষণ করতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়াতে পারেন। বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শুরুতে থাকা সাংবাদিকদের জন্য ডেটা সাংবাদিকতা হতে পারে খুবই উপকারী একটি হাতিয়ার।
নিজের শিক্ষকতা ও নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা থেকে সেলেনা ফিস্ক বইটিতে এমন সব বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যা শিক্ষা, সামাজিক সেবা এবং স্বাস্থ্যসেবার পেশাজীবীদের কাজে লাগবে। তিনি দেখিয়েছেন—ডেটা কেবল গ্রাফ বা টেবিলেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা গল্প ও মানবিক প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে। মানবিক ও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা এই বইটি সবার জন্য ডেটা বোঝার ক্ষমতা উন্মুক্ত করেছে। যারা বলেন, “আমি সংখ্যায় কিছুই বুঝি না,” তাদের জন্য এটি হতে পারে এক নতুন ও পরিবর্তিত সূচণা বিন্দু।
ফিস্ক বলেন, ডেটা বোঝার ক্ষমতা শুধু বিশ্লেষক বা অঙ্কে পারদর্শীদের একচেটিয়া দক্ষতা নয়। বরং যে কেউ চর্চার মাধ্যমে ডেটা-ভিত্তিক চিন্তাভাবনা, লেখালেখি ও বিশ্লেষণে দক্ষতা গড়ে তুলতে পারেন। “ডেটার ভাষায় কথা বলা” নয়, বরং “ডেটা বোঝা ও তা ভাগ করে নেওয়া”—এই পদ্ধতির উপর জোর দিয়ে লেখিকা দেখিয়েছেন কীভাবে আরও সচেতন, স্বচ্ছ ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব। ডেটা থেকে যারা দূরে থাকেন, তাদের জন্য বইটি যেন এক উষ্ণ-আন্তরিক বার্তা আর আগ্রহীদের জন্য মানবিক দিকনির্দেশনা।
ডেটা স্টোরি: এক্সপ্লেইন ডেটা অ্যান্ড ইনস্পায়ার অ্যাকশন থ্রু স্টোরি
ন্য্যান্সি ডুয়ার্টে (২০১৯)
ভাষা: ইংরেজি
ডেটাভিত্তিক বর্ণনার ওপর লেখা এই বইয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ন্যান্সি ডুয়ার্টে গল্প বলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, গল্প বলার ক্ষমতা কীভাবে নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দেয় এবং ডেটার সঙ্গে মিলে তা আমাদের বিশ্বকে বোঝার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। ডুয়ার্টে যুক্তি দিয়েছেন উপস্থাপনা, প্রতিবেদন বা বিশ্লেষণ—ডেটার জগতে এসব প্রক্রিয়া প্রায়শই শুষ্ক ও যান্ত্রিক সংখ্যায় ভরা থাকে। অথচ গল্প বলার মধ্য দিয়েই প্রকৃত পরিবর্তন ও মানুষের সম্পৃক্ততা আনা সম্ভব। এই বইয়ে দেখানো হয়েছে কীভাবে ডেটাকে একটি কার্যকর গল্পে রূপান্তর করা যায়। শুধু তথ্য উপস্থাপন নয়, বরং তাতে অর্থ যোগ করে, শ্রোতাকে সম্পৃক্ত করে এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত বিষয়ক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বহু উদাহরণ ব্যবহার করে বোঝানো হয়েছে, কীভাবে গ্রাফ, টেবিল ও লেখাকে সাজাতে হয়—যা সহজ অথচ শক্তিশালী যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ডেটা ও মানুষের মধ্যে আবেগঘন সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডুয়ার্টে তার বর্ণনায় শুধু অন্তর্দৃষ্টি ব্যাখ্যা করা নয়, বরং অনুপ্রেরণা ও কার্যকর পদক্ষেপে উদ্বুদ্ধ করার দিকেও জোর দিয়েছেন। তিনি “প্রভাবহীন ডেটা” সমস্যাটি চিহ্নিত করেছেন এবং তা মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী গল্প বলার কাঠামো তুলে ধরেছেন।
ডব্লিউ ই বি ডু বোইস’স ডেটা পোরট্রেইটস: ভিজ্যুয়ালাইজিং ব্ল্যাক আমেরিকা
উইটনি ব্যাটল–বাপ্টিস্ট ও ব্রিট রাসার্ট (সম্পাদক) (২০১৮)
ভাষা: ইংরেজি

ছবি: ক্রনিকল বুকসের সৌজন্যে
আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সমাজবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রবক্তা ডব্লিউ. ই. বি. ডু বোইসের যুগান্তকারী ইনফোগ্রাফিক কাজের সঙ্গে সমকালীন পাঠকদের যুক্ত করেছে বই। বিশেষ করে ১৯০০ সালের প্যারিস এক্সপোজিশনের জন্য তিনি যে কাজ প্রস্তুত করেছিলেন তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে। বইটিতে আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের শিক্ষা, সম্পত্তি, শ্রম ও জনসংখ্যা বিষয়ে পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যা একদিকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে কাজ করেছে, অন্যদিকে সে সময়ের বর্ণ বৈষম্যের চিত্রও প্রকাশ করেছে।
ডু বোইস ও তার দল হাতে আঁকা দারুণ সব ডায়াগ্রামের মাধ্যমে শুধু তথ্যই উপস্থাপন করেননি, বরং শৈল্পিক স্পর্শ যুক্ত করে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের গল্পকে মর্যাদা দিয়েছেন। রঙিন গ্রাফিক্স, বৃত্তাকার ডায়াগ্রাম এবং সৃজনশীলভাবে সাজানো চার্টগুলো একই সঙ্গে নান্দনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করেছে। যা প্রমাণ করে—ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন কেবল প্রযুক্তিগত কাজ নয়, বরং সাংস্কৃতি ও নৈতিকতা প্রকাশেরও একটি মাধ্যম হতে পারে।
কাজটি ভিজ্যুয়াল সমাজবিজ্ঞান, বর্ণ ও প্রতিনিধিত্বের রাজনীতি এবং ডেটা আর্টের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। এমন একটি ঐতিহাসিক দলিল যা অতীতকে আলোকিত করার পাশাপাশি বর্তমান ও ভবিষ্যতকে অনুপ্রাণিত করে। তাই আজও, বইটি প্রতিটি ডেটা সাংবাদিকের পাঠ্য তালিকায় থাকা উচিত।
পিনার দাগ জিআইজেএন তুর্কি সম্পাদক ও কাদির হাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ মিডিয়া বিভাগের প্রভাষক। তিনি ডেটা লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশন (ডিএলএ), ডেটা জার্নালিজম প্ল্যাটফর্ম তুরস্ক এবং দাগমিডিয়ার সহ–প্রতিষ্ঠাতা। ২০১২ সাল থেকে পিনার এই বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিকদের জন্য কর্মশালা আয়োজন করে আসছেন, এবং গত তিন বছর ধরে তিনি সিগমা ডেটা জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ডের প্রি-জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।