প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক রিপোর্টিং এবং মানসিক স্বাস্থ্য: সাংবাদিক ও বার্তাকক্ষের জন্য পরামর্শ

আপনি যদি একজন পরিবেশ সাংবাদিক হন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে—এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বার্তাকক্ষে বসে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা চরম আবহাওয়ার মধ্যে মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিং, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বড় কোনো ঘটনা দেখার অভিজ্ঞতা হোক না কেন—এই বিটে কাজ করা সাংবাদিকরা প্রায়ই ভোগেন মানসিক চাপে।

ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের গবেষণা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনই আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংকট। সম্প্রতি অক্সফোর্ড ক্লাইমেট জার্নালিজম নেটওয়ার্ক আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে আলোচনার সময় এ বিষয়ক গবেষণার কথা উল্লেখ করেন রয়টার্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক মিতালী মুখার্জি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ঠিক একইভাবে সত্য যে, সাংবাদিকতা আগের চেয়ে এখন মোটেও সহজ হয়নি।”

ওই ওয়েবিনারেই নিজের গবেষণা কাজ তুলে ধরেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্থনি ফাইনস্টিন।  যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করছেন এমন সাংবাদিকদের মানসিক যন্ত্রণার প্রভাব এবং শরণার্থী সংকট নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছেন এমন সাংবাদিকদের মানসিক চাপ নিয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তবে এবার প্রথমবারের মতো গবেষণা করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন এমন সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। গবেষণায় ৯০টি দেশের ২৬৮ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশ্নপত্র, নিজে পূরণযোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন স্কেল এবং ট্রমার পর মানসিক বিপর্যয় (পিটিএসডি) ও বিষন্নতা পরিমাপের বিদ্যমান মাপকাঠি ব্যবহার করে পরিচালিত এই জরিপে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন এমন সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ জানিয়েছেন—এই বিটে কাজ করার ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যে ধরনের প্রভাব পড়ে, বার্তা কক্ষে তা খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না।

ফাইনস্টিন বলেন, “২৫ বছর আগে যখন আমি বিপ্লব ও যুদ্ধ নিয়ে কাজ শুরু করি, তখনকার পরিস্থিতিটাও ছিল অনেকটা আজকের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার মতো। তখনও ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব’ কেউ গুরুত্ব সহকারে নিতো না। কিন্তু, ভালো কিছু তথ্য-প্রমাণ আসতে শুরু করলে মানসিকতাও বদলাতে থাকে।”
ওয়েবিনার আলোচনায় উঠে আসে—জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের ওপর এর প্রভাব এবং এই পরিস্থিতিতে বার্তাকক্ষগুলো কীভাবে তাদের সহায়তা করতে পারে। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ব্লুমবার্গ গ্রিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যারন চেন, ফ্রিল্যান্সার জলবায়ু সাংবাদিক জেসেট ও. এনানো এবং অক্সফোর্ড ক্লাইমেট জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সহযোগী পরিচালক দিয়েগো আরগুয়েদাস অর্তিজ।

মোরাল ইনজুরি

গবেষণার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে: জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন—এমন সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষন্নতা এবং ট্রমার পর মানসিক বিপর্যয়ের লক্ষণ গড়ের চেয়ে বেশি দেখা যায়। অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক সাংবাদিকই জানিয়েছেন, তারা মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার উদ্বেগ (৪৮ শতাংশ) ও বিষন্নতায় (৪২ শতাংশ) ভোগেন। প্রতি পাঁচজন সাংবাদিকের মধ্যে অন্তত একজন (২২ শতাংশ) জানিয়েছেন যে, তারা পিটিএসডির লক্ষণ—যেমন অনুভূতিশূন্যতা, বারবার ট্রমার স্মৃতি মনে পড়া, এড়িয়ে চলার প্রবণতা, এবং অতিরিক্ত সতর্কতা—অনুভব করেন।

অনেক সময় মাঠপর্যায়ে জলবায়ু বিপর্যয় নিয়ে কাজ করার সময় এই মানসিক অবস্থা তৈরি হয়। আবার বার্তাকক্ষে বসে ট্রমার ঘটনা নিয়ে কাজ করার মধ্য দিয়েও এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে।

ফাইনস্টিন বলেন, “আপনি যদি কানাডার মতো নিরাপদ একটি দেশে জীবদ্দশায় ট্রমার পর মানসিক বিপর্যয়ে আক্রান্ত হওয়ার গড় হার সম্পর্কে জানতে চান, দেখবেন তা মাত্র ৬ শতাংশ।” অথচ তার জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন—যেমন পরিবার কোনো সদস্য বা বন্ধুকে হারানো, ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়া, কিংবা দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল থেকে চলে আসা।

চাপ ও উদ্বেগের বড় উৎসগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে—কম বেতন, পর্যাপ্ত সহায়তা ও সম্পদের অভাব, এবং হয়রানি ও হুমকির মুখে পড়া। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা বা সমর্থন পান না।

জরিপে আরও উঠে এসেছে, জলবায়ু বিষয়ক সাংবাদিকদের মধ্যে নৈতিক অবস্থানচ্যুতিজনিত মানসিক আঘাত বা ধাক্কাতে (মোরাল ইনজুরি)  আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটি একটি ট্রমাজনিত প্রতিক্রিয়া, যাকে অধ্যাপক ফাইনস্টিন ব্যাখ্যা করেন এভাবে—“যখন কেউ এমন কিছু করে, দেখে, বা থামাতে ব্যর্থ হয়, যা তার নিজের নৈতিকতা বা মূল্যবোধের লঙ্ঘন , তখন তার বিবেক বা নৈতিক দিকটিতে যে ক্ষতি হয়- সেটিই হচ্ছে মোরাল ইনজুরি।

যদিও এটি কোনো স্বীকৃত মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত নয়, তবুও ফাইনস্টিন বলেন, “যখন কারও মধ্যে মোরাল ইনজুরির লক্ষণ থাকে—এবং আমি বলছি সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপটেই—তখন এর কিছু চাক্ষুষ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।” এর মধ্যে রয়েছে: পেশা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া, এড়িয়ে চলার প্রবণতা, সম্পর্ক নষ্ট করা কিংবা অতিরিক্ত মদ্যপানের মাধ্যমে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা। তিনি আরও বলেন, “কিছু মানুষের মানসিক কষ্ট কখনোই পুরোপুরি কাটে না।”

তবে ফাইনস্টিন জরিপের কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন। তিনি জানান, অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের ৮৩ শতাংশ মনে করেন, তাদের কাজের একটি ইতিবাচক মানসিক প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে, যারা বিশ্বাস করেন তাদের কাজ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জনআলোচনায় প্রভাব ফেলছে—তাদের মধ্যে বিষন্নতার লক্ষণ তুলনামূলকভাবে কম লক্ষ করা যায়। ফাইনস্টিন সতর্ক করে বলেন, এই গবেষণার উদ্দেশ্য মানসিক অসুস্থতার কারণ নির্ধারণ বা কোনো রোগ নির্ণয় করার জন্য ছিল না। বরং এর লক্ষ্য ছিল তথ্য থেকে শিক্ষা নেওয়া, ব্যবহারিক সমাধান খোঁজা, এবং এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।

বাঁ থেকে ডানে: রয়টার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিতালী মুখার্জি; ব্লুমবার্গ গ্রিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যারন চেন; ফ্রিল্যান্স জলবায়ু সাংবাদিক জেসেট ও. এনানো; অক্সফোর্ড ক্লাইমেট জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সহযোগী পরিচালক দিয়েগো আরগুয়েদাস অর্তিজ; এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্থনি ফাইনস্টিন। ছবি: স্ক্রিনশট, ইউটিউব, রয়টার্স ইনস্টিটিউট।

বার্তাকক্ষ ও সাংবাদিকরা কী করতে পারেন?
ওয়েবিনার আলোচনায় উঠে আসে, এ অবস্থায় সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিকরা কী ধরনের পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করতে পারেন।

মনস্তাত্ত্বিক চাপ কিছুটা কমানোর জন্য বিষয়বস্তুকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। যাতে ওই প্রতিবেদনগুলো পাঠকদের ওপর আরও গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। ম্যানিলার সাংবাদিক জেসেট ও. এনানো বলেন, “আমরা প্রায় প্রতিদিনই জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্যোগ ও ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছি। বড় চ্যালেঞ্জ হলো—কিভাবে আমরা এসব গল্প বলতে পারি যাতে মানুষ তা শুনে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করে।”

ব্লুমবার্গ গ্রিনের শ্যারন চেন জানান, তার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকেরা “নিজেদের কাজকে ভীষণ ইতিবাচকভাবে দেখেন এবং মনে করেন তাদের সাংবাদিকতা কারো না কারো উপকারে আসছে। তার প্রতিষ্ঠানের একজন নারী সাংবাদিক মানসিকভাবে উদ্বিগ্নতায় ভুগছিলেন। সে তখন হাত গুটিয়ে বসে না থেকে পাঠকদেরও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন—এতে করে তিনি নিজেও ভালো বোধ করেন। কেননা তার মনে হয়েছে সমস্যায় মোকাবিলায় তিনি কিছু একটা করেছেন। কোনো না কোনো ভাবে অবদান রাখছেন।

ওয়েবিনারে বক্তারা একমত হন যে, যুদ্ধ ও সংঘাত নিয়ে যে সাংবাদিকরা কাজ করেন তাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা পাওয়া যায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা এখনও ততটা প্রচলিত নয়। তবুও, ছোট ছোট সংবাদ সংস্থাগুলো পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

অক্সফোর্ড ক্লাইমেট জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সহযোগী পরিচালক দিয়েগো আরগুয়েদাস অর্তিজ বলেন, “আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে বার্তাকক্ষে এই বিষয়টি নিয়ে কথার বলার তেমন পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং সহযোগীতার অভাবও বিদ্যমান। এখানে আমার মূল বার্তাটি হলো— গণমাধ্যমগুলো কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। কেননা বছরের পর বছর ধরে  তারা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রিপোর্ট করতে পাঠায়, অথচ সেই কাজে প্রয়োজনীয় মানসিক ও পেশাগত সমর্থন দেয় না।… ধরুন, আপনি কাজ করার সময় পা ভেঙে ফেললেন, তখন আপনার প্রতিষ্ঠান হয়তো বিভিন্নভাবে আপনাকে সমর্থন করবে, কিন্তু আলাপটা যখন হয় জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাংবাদিকের মানসিক স্বাস্থ্যগত প্রভাব নিয়ে, তখন কিন্তু এমনটা ঘটে না।”

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরী। কোনো বার্তাকক্ষের পরিধি বড় হোক বা ছোট—তারা তাদের অবস্থার পরিবর্তন আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। আরগুয়েদাস অর্তিজ তুলে ধরেন, অ্যান্থনি ফাইনস্টিন যখন যুদ্ধ ও সংঘাত নিয়ে কাজ করার সময় মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম-কানুনে কীভাবে পরিবর্তন আনা যায় তা নিয়ে বার্তাকক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন, তখন অনেকেই পরিবর্তন আনে। নিজের বক্তব্য বোঝাতে তিনি উদাহরণ দেন নাইজেরিয়ার হিউমঅ্যাঙ্গেল মিডিয়ার। তাদের যদিও সাংবাদিকদের ছোট একটি দল রয়েছে, তবুও মাঠে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট আছে।

তিনি বলেন, “যে সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তন কভার করে… তারা নিয়ম-কানুন বদলাতে পারে। আর বিবিসি বা ব্লুমবার্গের মতো বড় প্রতিষ্ঠান—যেখানে প্রচুর বাজেট ও সুযোগ বিদ্যমান, সেখানে বড় পরিসরে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আবার ছোট আকারের বার্তাকক্ষগুলোর পক্ষেও তা করা সম্ভব।”

কাঠামোগত এবং ব্যক্তিগত পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হওয়া

ফাইনস্টিন আরো জানান, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানের সহজ ও সাশ্রয়ী উপায় রয়েছে। তিনি বলেন, “আমার অভিজ্ঞতা হলো, সামান্য একটু থেরাপির বিনিময়ে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। কখনও কখনও শুধু কয়েকটি সেশনই একজন সাংবাদিককে সাহায্য করতে পারে… আমার মনে হয়, সাংবাদিকদের যদি মানসিক সমস্যার কারণে কাজ থেকে বিরতি নেওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়, তাহলে তা প্রতিষ্ঠানেরই আর্থিক উপকারে আসে।”

“সরকার বা রাজনীতিবিদরা যা-ই বলুক না কেন, এবং যতই তারা এই সমস্যাটিকে [জলবায়ু পরিবর্তনের] অস্বীকার করুক না কেন, আপনি যদি নিজের জন্য সময় দেন এবং যত্নসহকারে আপনার সম্পর্কগুলো ধরে রাখেন, তাহলে আপনি নিজেকে সুরক্ষার জন্য কিছু একটা করছেন। আপনাদের এই ধরনের বার্তা দিতে হবে, এবং এর জন্য অঢেল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয় না,” তিনি আরও যোগ করেন।

এ পর্যায়ে ফাইনস্টিন ব্যাখ্যা করেন, উচ্চপর্যায়ের সাংবাদিকরা নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরলে তা বেশ কাজে লাগে। এতে করে বার্তাকক্ষ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সচেতনতা বাড়ে এবং তারা বিষয়টিকে আরো গুরুত্ব সহকারে দেখে।

সাংবাদিকরাও নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিজ উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। “আপনি কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন না। আপনাকে নিজের সাধ্য অনুযায়ী এখনই শুরু করতে হবে,” বলেন দিয়েগো আরগুয়েদাস অর্তিজ। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সাংবাদিক তাকে অক্সফোর্ড ক্লাইমেট জার্নালিজম নেটওয়ার্কের মতো একটি কমিউনিটি স্পেসের গুরুত্ব সম্পর্কে জানিয়েছেন, অথবা নিজেরাই নিজেদের কমিউনিটি তৈরি করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমি অনেকবার শুনেছি যে, সহকর্মীদের কমিউনিটি হিসেবে অক্সফোর্ড ক্লাইমেট জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (ওসিজেএন) কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সহকর্মীরা এখানে তাদের ভাবনা-চিন্তাগুলো ভাগাভাগি করে নেন। তা কীভাবে বিভিন্ন বার্তাকক্ষ ও নানা দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। কমিউনিটি হলো আরোগ্যের জায়গা… মানুষ আমাদের কাছে আসে এবং বলে: ‘আমি এখানে জলবায়ু বিজ্ঞান আর নীতিমালা নিয়ে জানার জন্য এসেছিলাম, কিন্তু থেকে গেছি, কারণ এটি এমন  জায়গা যেখানে আপন মানুষ আছে, সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ আছে।”

ফাইনস্টিনও সহমত প্রকাশ করে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে কমিউনিটির গুরুত্ব খুব ভালোভাবে বোঝা যায়। তিনি বলেন, “যদি আপনার চমৎকার একটি নেটওয়ার্ক আর তাদের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক থাকে, তাহলে তা শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাও তাই বলে। আপনি সাংবাদিকতার বাইরে তাকালেও দেখতে পাবেন—স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো বড় ধরনের মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেও আশেপাশে যদি সহায়ক পরিবেশ থাকে, তাহলে ফলাফল অনেক ভালো হতে পারে।”

নিচে ওয়েবিনার আলোচনার সম্পূর্ণ  ভিডিও দেখুন:

 


অ্যালেক্সা ভ্যান সিকল জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও সাংবাদিক। তিনি ডিজিটাল ও প্রিন্ট সাংবাদিকতা, প্রকাশনা, এবং আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক ও অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। জিআইজেএনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিদেশি সংবাদ ও ভ্রমণ ম্যাগাজিন রোডস অ্যান্ড কিংডমস-এর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ও পডকাস্ট প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া অ্যান্থনি বোরডেইনের জনপ্রিয় টিভি শো পার্টস আননাউন এর সম্পূরক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এক্সপ্লোর পার্টস আননাউন-এ লেখালেখি করতেন।

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

অনুসন্ধান পদ্ধতি গবেষণা

প্লেনস্পটার এবং পরিবহন পর্যবেক্ষকদের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আপনার অনুসন্ধানে যেভাবে সহায়তা করতে পারে

বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে শখ আছে মানুষের। কেউ পাখি দেখেন, কেউ বা সাপ। আবার কারও নেশা উড়োজাহাজ, জাহাজসহ নানা যানবাহনের দিকে। তাঁরা শুধু এগুলোর খোঁজখবর নিয়েই বসে থাকেন না। রীতিমতো আলোচনা করেন সামাজিক মাধ্যমে। আপনার অনুসন্ধানে এদের কাজে লাগাতে পারেন আপনি। পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

গবেষণা ডেটাবেজ

বেসরকারি ডেটার বিকল্প উৎস ও আর্কাইভের তালিকা দেখুন এখানে

পরিসংখ্যানের জন্য সরকারি উৎসগুলো এককথায় অতুলনীয়। সেই সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোও ডেটার ভালো উৎস। বেশ কিছু সাংবাদিক সংগঠনও ডেটা সংরক্ষণ করে থাকে এবং দলের সদস্যদের কাছে প্রয়োজনমাফিক তথ্য যোগায়। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যবিষয়ক ডেটার খোঁজ কোথায় পাবেন তার সন্ধান থাকল।

অনুসন্ধান পদ্ধতি গবেষণা

ডেনমার্কের কল্যাণ সংস্থার অ্যালগরিদমপদ্ধতি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধান

কল্যাণ সহায়তা বণ্টন পদ্ধতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে অ্যালগরিদমভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করছিল ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে দেখা গেল, বৈষম্য বিলোপে নেওয়া এই উদ্যোগে উল্টো বাড়ছে বৈষম্য।

Ranchland South Dakota stolen Indigenous land

গবেষণা পরামর্শ ও টুল

‘বিনামূল্যের জমির প্রকৃত মূল্য’: আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়ার ব্যক্তিগত ও জাতীয় ইতিহাস

ক্লারেন দুটো মূল প্রশ্নকে সামনে রেখে এগিয়েছেন: “পরিবারের মধ্যে, বা জাতির কাছে আমরা যে গল্পগুলো বলি সেগুলো আসলে কোনগুলো? কোন গল্পগুলো চেপে চাই আমরা? আর কেন আমরা কিছু গল্প কিছুতেই বলতে চাইনা?”