প্রবেশগম্যতা সেটিংস

অলংকরণ: ন্যুক

লেখাপত্র

বিষয়

একটি বৈশ্বিক ট্রানজিট পয়েন্ট: দক্ষিণ এশিয়ায় মানব পাচার ও মানুষ চোরাচালান অনুসন্ধান

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

দারিদ্র্য ও বেকারত্বের উচ্চ হার, দুর্বল আইন প্রয়োগ আর সহজে অতিক্রমযোগ্য সীমান্ত থাকার কারণে দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় মানব পাচার এবং মানুষ চোরাচালানের একটি প্রধান উৎস, ট্রানজিট ও গন্তব্য

২০১০ সালের পর থেকে আফগানিস্তান, সিরিয়া ও লিবিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অস্থিরতার কারণে মানব পাচারের সমস্যা আরও বেড়েছে। এসব কারণে পাচারের পথ বা রুটগুলো বদলে গেছে। কর্মসংস্থানের খোঁজে যাওয়া অভিবাসীরা মিশে গেছেন যুদ্ধ ও নিপীড়ন থেকে পালানো শরণার্থীদের সঙ্গে। কোভিড-১৯ মহামারি আর ব্যাপক বেকারত্বের পর যে সংখ্যাটা বেড়েছে আরও।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালটি ছিল এশিয়ার অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর। অন্তত ২ হাজার ৫১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমান এবং চলমান অস্থিরতা ও দমননীতি থেকে পালানো আফগান নাগরিক।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ও নীতিগত আলোচনায় মানব পাচার আর মানুষ চোরাচালানকে গুলিয়ে ফেলা হয়। দুটির ধরন আলাদা হলেও এগুলো আন্তঃসংযুক্ত অপরাধমানব পাচারের মূল লক্ষ্য হলো শোষণ। এতে জোর, প্রলোভন বা প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে নিয়োগ ও পরিবহন করা হয় যৌন শোষণ বা জোরপূর্বক শ্রমে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী ও শিশু। অন্যদিকে, মানুষ বা মানব চোরাচালানের উদ্দেশ্য হলো অভিবাসনের আশায় যারা স্বেচ্ছায় বিদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে চায়, তাদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জন। চোরাচালানকারীরা প্রায়ই নিরাপদ পথের প্রতিশ্রুতি বা জাল নথিপত্র সরবরাহের মাধ্যমে এই কাজটি করে। তবে দুটি অপরাধের মধ্যে অনেক মিলও আছে—যেমন অভিবাসনের কারণ (যুদ্ধ, নিপীড়ন ও দারিদ্র্য), ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, এবং অভিবাসন রুট। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ একই সঙ্গে পাচার ও চোরাচালানের শিকার হন।

দক্ষিণ এশিয়ায় সাধারণ অভিবাসনপথগুলোর মধ্যে আছে দেশের অভ্যন্তরেই গ্রাম থেকে উন্নত রাজ্য বা শহরে অভিবাসন; অন্য দেশের  সীমান্ত পার হওয়া। যেমন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া; অথবা আন্তর্জাতিক রুট যেমন ইরান ও তুরস্ক হয়ে ইউরোপে, উত্তর আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে, কিংবা বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাওয়া। বৈধ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পাচার হওয়া মানুষের ক্ষেত্রেও  উপসাগরীয় দেশগুলো (গালফ স্টেটস) এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পথে একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

এই অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা দেখেছেন, চোরাচালান নেটওয়ার্কগুলো প্রায়ই শুরু হয় স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে—যারা বন্ধু বা প্রতিবেশীও হতে পারেন—এবং পরে তা সীমান্ত পেরিয়ে সংগঠিত সক্রিয় সিন্ডিকেটের আকার নেয়। এসব সিন্ডিকেট প্রায়ই জাল নথিপত্র ও চাকরির চুক্তিপত্র ব্যবহার করে, এবং কখনও কখনও সীমান্তরক্ষী, দূতাবাসকর্মী বা অন্যান্য কর্মকর্তার সহায়তাও পায়।

জিআইজেএন পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা এই বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এই অঞ্চলের দ্রুত বিস্তৃত আন্তঃদেশীয় সংগঠিত অপরাধ উন্মোচনের লক্ষ্যে তারা সোর্স নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। পাচার হওয়ার পর বেঁচে ফেরা ব্যক্তি, তাদের নিয়োগদাতা ও দালালের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। চোরাচালানের পথ ও পদ্ধতি চিহ্নিত করেছেন। এমনকি আফগান অভিবাসীর ছদ্মবেশ ধারন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

পাকিস্তান

মানব পাচার ও মানুষ চোরাচালান উভয় ক্ষেত্রেই উৎস এবং ট্রানজিট দেশ হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান। উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তান থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। যেখানে তারা কম জনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তান হয়ে ইরান সীমান্ত পেরিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বলকান অঞ্চলের দিকে পাড়ি জমায়। দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এই পথের ভয়াবহ ঝুঁকি এবং মানুষ কেন এই বিপদসংকুল পথে পা বাড়ায়, তার কারণ তুলে ধরেছে।

ডাংকি’ রুট

২০২৩ সালে কোয়েটা: হাউ পিপল আর স্মাগলড ইনটু ইউরোপ নামক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন সাংবাদিক সাহার বেলুচ। এখানে তিনি এমন এক “এজেন্টের” সঙ্গে কথা বলেন, যিনি প্রদেশের মধ্য দিয়ে মানুষ পরিবহনের কাজে জড়িত ছিলেন।

২০২০ সালের লকডাউনের দিনগুলোতে ইসলামাবাদের বিসিসি উর্দুর এই সম্প্রচার সাংবাদিক বেলুচিস্তান-ইরান সীমান্ত দিয়ে পেট্রোল ও খাদ্য সামগ্রী চোরাচালান নিয়ে অডিও রিপোর্ট তৈরি করছিলেন। তিনি কয়েক দফা শুনতে পান মানব পাচারকারীরাও অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করার জন্য এই পথ ব্যবহার করছেন। যা সাধারণভাবে “ডাংকি” (গাধা) রুট নামে পরিচিত, মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ যাওয়ার জন্য।

এরপরের সময়টা ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি। ইতালির উপকূলে ২০০ জনকে বহনকারী একটি অভিবাসী নৌকা ডুবে গেলে  ৯৪ জন যাত্রী মারা যান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানি-হাজারা হকি খেলোয়াড় শাহিদা রাজা, যিনি তার তিন বছরের ছেলের চিকিৎসার জন্য বেলুচিস্তানের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

রাজা সম্পর্কে একটি ভিডিও তৈরির সময় সাংবাদিক বেলুচ সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর তথ্য খুঁজতে শুরু করেন। তিনি চেয়েছিলেন মানব পাচারকারীদের সম্পর্কে যে যে তথ্য পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করবেন। তিনি বলেন “আমি টিকটক আর ফেসবুক ঘেঁটে দেখছিলাম। অনেক ‘এজেন্টের’ অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেলাম। যারা মানুষকে ইরান, তুরস্ক, গ্রিস ইত্যাদি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘ভিআইপি প্যাকেজ’ প্রস্তাব করছিল।”

তিনি যোগ করেন, “গোপনে নয়, সবকিছুই ঘটছিল খোলামেলাভাবে। তারা যাত্রাটাকে ‘অ্যাডভেঞ্চার’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছিল। কিছু অভিবাসী ইউরোপ পৌঁছানোর পরে নিজের ‘ভাই’ (এজেন্ট)-কে ধন্যবাদ জানিয়ে উদযাপনের ভিডিও আপলোড করত। যা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল এই এজেন্টরা আসলে কারা?”

বেলুচ এমন একজন এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যিনি বেলজিয়ামে আছেন বলে জানান (“তার নম্বর তার পেজে ছিল; এমন নয় যে তিনি লুকোচুরি করছিলেন”)। ওই এজেন্টের কাছে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশী বলে নিজের পরিচয় দেন বেলুচ। এজেন্ট তাকে বেলুচিস্তানের প্রদেশীয় রাজধানী কোয়েটায় যেতে বলে। কারণ সেখান থেকে তিনি তার “সার্ভিস” শুরু করেন। তার এই পরিষেবা পেতে আপনাকে সঙ্গে করে বেশকিছু অর্থ-কড়ি নিয়ে যেতে হবে।

কোয়েটায় পৌঁছানোর ঠিক আগে বেলুচ ওই এজেন্টকে ফোন করে বলে দেন যে তিনি একজন সাংবাদিক এবং মানব পাচার বিষয়ক একটি প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছেন। এজেন্ট ফোন কেটে দেন। “আমার চারপাশের সবাই তখন হেসে উঠেছিলেন এবং বলেছিলেন ‘তোমার সঙ্গে কেউ কেন কথা বলবে?’” এটি বেলুচের পেশাজীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, তবে অস্বস্তিকর সাক্ষাৎকারগুলোর একটি।

কোয়েটায় গল্প খুঁজে বের করার জন্য তার হাতে সময় ছিলো মাত্র দুদিন। এ অবস্থায় তিনি একজন পুরনো সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যিনি তাকে পানজপাইয়ের একজন “এজেন্টের” সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। পানজপাই কোয়েটা থেকে প্রায় ৫০–৫৫ কিলোমিটার (৩১–৩৪ মাইল) দূরে অবস্থিত বিস্তীর্ণ শুষ্ক এক এলাকা। সেখানে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন কিনা—এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। একজন চালক ও ভিডিও সাংবাদিক খাইর মুহাম্মদের সঙ্গে তিনি সেখানে পৌঁছান, যারা দুজনেই ব্রাহুই ভাষা বলতে পারেন (বেলুচিস্তানে পরিচিত ভাষাগুলোর একটি)।

চমকের বিষয় হচ্ছে, ভিডিওতে মুখ ঢেকে রাখা এজেন্টটি খোলাখুলি ও স্বাভাবিকভাবে বলেন অভিবাসীদের “খাঁচার মতো” ভ্যানে গাদাগাদি করে রাখা হয়, এবং কোয়েটা ও মাচের মতো জায়গায় এজেন্টদের মধ্যে মানুষ ভরা বাস নিলামে বিক্রি করা হয়। তিনি আরও বলেন কিছু কিছু নৃগোষ্ঠী, যেমন নিরাপত্তার কারণে পালানো হাজারাদের পাঞ্জাবিদের তুলনায় বেশি অর্থ দিতে হয়; কিছু যাত্রী স্বেচ্ছায় বাসের ট্রাঙ্কে বসতে রাজি হয়, আর সীমান্তরক্ষী আধাসামরিক বাহিনীকে ঘুষ দিতে দিতে হয়। এর পরিমাণ এমন, কেউ যদি ওই গ্রামের হয় তাহলে ৫ হাজার রুপি (প্রায় ৫৬ মার্কিন ডলার), আর যদি বাইরের বা অন্য গ্রামের হয়, তাহলে ৩০ হাজার রুপি (প্রায় ৩৩৮ মার্কিন ডলার)।

“তবে কেউ কেউ সীমান্তে পৌঁছানোর আগেই মারা যায়। তাদের মৃত্যু হয় পানিশূন্যতা আর ক্লান্তিতে। কারণ বেলুচিস্তান রুক্ষ-শুষ্ক কঠিন অঞ্চল; সেখানে অনেক রাস্তা বা যাতায়াতের সুবিধা নেই,” বেলুচ ব্যাখ্যা করেন। “এটি ভয়ঙ্কর ভূদৃশ্য।”

একটি বিশাল চক্র’

দৈনিক ডন এর সাংবাদিক মুহাম্মদ আকবর নোটেজাইও মানব পাচারের এই রুটটি নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে বন্দুকের নলের মুখে ডাকাতি, এবং ইরানি সীমান্তরক্ষীদের গুলির ঝুঁকির মতো অন্যান্য বিপদগুলোও পরীক্ষা করেছেন। এই ঘটনা উন্মোচনের জন্য তিনি আফগান অভিবাসীর ছদ্মবেশ ধারণ করে বেলুচিস্তান-আফগান সীমান্তের ডুক থেকে ইরান পর্যন্ত পিকআপ ট্রাকে ভ্রমণ করেন।

Dawn human smuggling exposé

আফগানিস্তান ও ইরানের মধ্যে মানুষ চোরাচালান ব্যবসা বোঝার জন্য ছদ্মবেশ ধারন করে সেখানে যান সাংবাদিক মুহাম্মদ আকবর নোটেজাই। ছবি: স্ক্রিনশট, ডন

জিআইজেএনকে তিনি বলেন, “আমি কাউকে বলিনি, আমার পরিবারকেও নয়।” একমাত্র ব্যক্তি যিনি এটি জানতেন, তিনি একজন সোর্স। যিনি তাকে একটি পাচারকারীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে সাহায্য করেছিলেন। আমাদের কথা ছিল  “যদি আমার সঙ্গে কিছু ঘটে, তিনি আমার পরিবার এবং ডন-এর সহকর্মীদের জানাবেন।”

বেলুচিস্তান-ইরান সীমান্তের চাঘাই জেলার বাসিন্দা আকবর ২০১৮ সালে ডন ইনভেস্টিগেশন্স এর জন্য মানব পাচার নিয়ে রিপোর্ট করেন। যেখানে তিনি এফআইএ [নিরাপত্তা সংস্থা] কর্মকর্তা, অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের লোকেদের সাক্ষাৎকার নেন। তিনি মূলত যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে পালানো আফগান অভিবাসী এবং পাঞ্জাবের ছোট শহরগুলো থেকে কর্মসংস্থানের খোঁজে আসা অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করতেন।

“পাঞ্জাবে তাদের মনে একটি ধারণা আছে যে ইউরোপ ভালো,” আকবর বলেন, যিনি তার লেখায় এই অভিবাসীদের ‘ড্রিম চেজার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। “আমি তাদের বলেছিলাম আমার কাছে শুধু কলম এবং কাগজ আছে, ক্যামেরা নেই, তাই তারা আমার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলল।” এই কাজটিই কয়েক বছর পর ছদ্মবেশ ধারন করে অনুসন্ধানী অভিযানের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি সীমান্তে যাওয়ার পথে যেসব জায়গাগুলোতে যেতে হতো সেগুলোর সবগুলোতেই ভ্রমণ করেন—কোয়েটা থেকে ৫০০–৭০০ কিলোমিটার (৩১০–৪৩৫ মাইল) দূরের অঞ্চলগুলোতেও। তিনি নিজেকে ট্র্যাক করা থেকে বাঁচাতে ফোন ও সিম কার্ড বদলে নেন এবং তার ভুমিকাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে দারি ভাষা শিখেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি এটাকে জনসেবা হিসেবে দেখেছিলাম, তাই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।”

আকবর জানান,  “২০১৮ সালের আগে বেলুচিস্তানে মানব পাচার সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষ খুব একটা জানতেন না।” যদিও বলা হয় এই রুট ১৯৭০-এর দশক থেকেই সক্রিয় ছিল, যখন বাঙালি ও শ্রীলঙ্কানরা সংঘাত ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, “প্রতিবেদন প্রকাশের পর কিছু পরিবর্তন তো হয়। কিছু সময়ের জন্য কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, কিন্তু এই চক্রটা যে এতোটা বিস্তৃত, এটিকে পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন।”

বাংলাদেশ

দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিবাসন ও মানব পাচারের মতো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঘিরে দেশটির অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র প্রথম আলোতে প্রতিবেদন করেছেন শরিফুল ইসলাম হাসান

তিনি যে সব ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে—লিবিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের নির্যাতন, দুবাইতে বিক্রি, বা সৌদি আরবে যৌন শোষণের শিকার হওয়া।

২০১৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি (ব্র্যাক) এর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইউথ প্ল্যাটফর্ম-এর সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। সংস্থাটি বিশ্বের বড় এনজিওগুলোর একটি।

“বর্তমানে, বাংলাদেশিরা সেন্ট্রাল মিডিটেরেনিয়ান রুট ব্যবহার করে লিবিয়ার মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দলে পরিণত হয়েছে,” বলে তিনি ব্যাখ্যা করেন। উদাহরণস্বরূপ, এই বছরের জানুয়ারিতে, কয়েকদিন আগে ইতালির উদ্দেশ্যে একটি অভিবাসী নৌকা ছাড়ার পর ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃতদেহ লিবিয়ার সৈকতে ভেসে আসে

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “বর্তমানে মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় পথ দিয়ে লিবিয়ার মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই সবচেয়ে বড় অংশ।” যেমন, জানুয়ারিতে ইতালিগামী একটি নৌকা ডুবির কয়েক দিন পর লিবিয়ার উপকূলে ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃতদেহ ভেসে আসে

হাসান যোগ করেন, “এই ব্যবসায় তিন থেকে চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথমটি হলো স্থানীয় লোকেদের মধ্যে থেকেই কেউ  ইউরোপে স্বপ্নের জীবনের লোভ দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের ফাঁদে ফেলে। তারা মানুষকে বলে বড় একটি নৌকায় ইউরোপে যেতে পারবে। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছালে তাদের বন্দী করে রাখা হয়, নির্যাতন করা হয়, এবং তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণের দাবি করা হয়। পরিবার যদি অর্থ দিতে না পারে, তাহলে তাদের হত্যা করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কখনো গ্রেপ্তার করা হয় না।”

তিনি উল্লেখ করেন, “যখন আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন করা শুরু করি, তখন কোনও আইন বা নিয়ম ছিল না। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে রোহিঙ্গাদের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পরই সরকার বঙ্গোপসাগর থেকে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদির অবৈধ রুটগুলোর দিকে নজর দিতে শুরু করে।”

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ মানব পাচার রোধে দুটি বড় আইন পাস করেছে। এই আইন সব ধরনের মানব পাচারকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করে, পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

ভারত

দিল্লিতে কর্মরত স্বাধীন সাংবাদিক পারি সাইকিয়া বলন, নেপাল, ভুটান, চীন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভাগাভাগি করে। বিশেষ করে আসাম প্রদেশ “মানব পাচারের প্রধান হট স্পটের মধ্যে একটি।”

এই অঞ্চলের বাসিন্দা সাইকিয়া তার পুরো পেশাজীবন জুড়ে ভারতের মানব পাচার নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। তিনি বলেন, এই ব্যবসার জন্য ভারত “একটি বৈশ্বিক ট্রানজিট, উৎস এবং গন্তব্যস্থান।” পাশাপাশি এখানে অহরহ অভ্যন্তরীণ পাচারের ঘটনা ঘটে—বিশেষ করে নারী ও অল্প বয়সী মেয়েদের জোরপূর্বক শ্রম বা যৌন শোষণে বাধ্য করা হয়।

সাংবাদিকতার তরুণ শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি প্রথম এই সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হন। তার বাবা একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা। ‍যিনি তাকে পরামর্শ দেন দিল্লি ও নয়ডা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এমন কয়েকজন পাচারের শিকার হওয়া মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে, যারা জাল নিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে বাসাবাড়িতে কাজের সাহায্যকারী হিসেবে বিক্রি হয়েছিলেন।

“সেখান ছিল ২২ জন মেয়ে: এদের কেউ কেউ মাত্র ১২, ১৩ ও ১৪ বছরের। কারো শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ, আর তারা অনেকেই অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছিল,” তিনি উল্লেখ করেন।

এটাই ছিল তার প্রথম প্রতিবেদন। এই সাংবাদিক বলেন, এটি ছিল তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তবে এখন ফিরে তাকালে তার অনুভূতি মিশ্র—একদিকে গর্ব, অন্যদিকে হতাশা। তিনি আরো বলেন, “আপনি যখন কোনো বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরে প্রতিবেদন করেন, আর দেখেন যে একই ঘটনা আবারো ঘটছে, তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না—তখন নিজের মনে প্রশ্ন আসে, অনুসন্ধান করে লাভটা কী, যদি তাতে কোনো কাজ না হয়?” কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “তাতেও আমি হাল ছাড়তে চাই না।”

২০২৪ সালে তিনি একটি দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি একজন অভিবাসী (‘সিং’) এর ৫০০ দিনের ভয়ংকর যাত্রা বর্ণনা করেন। যিনি ভারতের পাঞ্জাব থেকে পর্তুগালে যাওয়ার পথে একবার মানবপাচারের শিকার হন এবং দু’বার চোরাপথে পাচার হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলক কম জটিল আবাসিক প্রক্রিয়ার কারণে পর্তুগাল দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অভিবাসীর জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য ও প্রবেশপথে পরিণত হয়েছে।

সাইকিয়া ব্যাখ্যা করেন, “টেম্পরারি রেসিডেন্স কার্ড (টিআরসি) থাকলে অভিবাসীরা শেনজেন অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশে স্বল্প সময়ের জন্য ভ্রমণ করতে পারেন। পাচারকারীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে অবৈধভাবে ইতালি, জার্মানি বা স্পেনে পাচার করার বাজার তৈরি করেছে।” তিনি আরও বলেন, “মানুষকে বলা হয়, পথটা সহজ। কিন্তু দীর্ঘ স্থলপথের কষ্ট, প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঝুঁকি, কিংবা পৌঁছে যাওয়ার পর অবৈধভাবে কাজ করতে বা টিকে থাকার জন্য চাঁদা দিতে হতে পারে—এগুলো সম্পর্কে সতর্ক করা হয় না।”

এই সাংবাদিক ইউরোপে থাকা পাঞ্জাবি নারীদের জীবন নিয়ে ধারাবাহিক নিবন্ধ লিখছিলেন। তখনই অভিবাসী ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে ফোন কল আসা শুরু হয়—যাদের মধ্যে ছিলেন ‘সিং’। যিনি জানান যে তার পাসপোর্ট ‘ডংকার’ (পাচারকারীদের বহুল প্রচলিত সম্বোধন) দ্বারা বাজেয়াপ্ত হওয়ায় তিনি সাইপ্রাসে আটকে রয়েছেন।

তিনি সার্বিয়ার মধ্য দিয়ে যাত্রা করার পর ভূমধ্যসাগরের এই দ্বীপে পৌঁছান। ভারতীয়দের তখন সেখানে ভিসা-ছাড়া প্রবেশের অনুমতি ছিল। তার যাত্রায় দেখা বেশিরভাগ পাচারকারী ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার, যারা বিশেষভাবে অভিবাসীদের চোরাচালানের জন্য ছোট অতিথিশালা এবং নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন। ‘সিং’ জানান যে চোরাচালানকারীদের অর্থ পরিশোধের জন্য তার পরিবারকে জমি বিক্রি করতে হয়েছে। তাই তিনি শূণ্য হাতে বাড়ি ফিরতে অস্বীকার করেন।

From Punjab to Portugal route map trafficking

‘সিং’ এর ৫০০ দিনের অভিবাসন যাত্রা তুলে ধরেছেন ভারতীয় সাংবাদিক পারি সাইকিয়া। মানব চোরাচালানের এই রুটটি এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। ছবি: স্ক্রিনশট, রুরাল ইন্ডিয়া অনলাইন

সাইকিয়া বলেন “আমি তিন বছর ধরে তার কেস অনুসরণ করেছি। তিনি আমাকে বলেছিলেন এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলাচল করছেন, এবং যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার কাছ থেকে কোনো খবর না পাই, তাহলে আমি যেন দূতাবাসকে বিষয়টি জানাই।”

পাচারকারীরা অভিবাসনকে ব্যবসার মতো মার্কেটিং করে। “তারা দুটি প্যাকেজ অফার করে: একটি ইউরোপের জন্য এবং অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। ইউরোপের রুটের খরচ কম, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রুটের খরচ ৬০ লাখ রুপি (প্রায় ৬৮,০০০ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত হতে পারে” বলে তিনি ব্যাখ্যা করেন।

ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে অভিবাসীদের মৃত্যু কিংবা স্থলপথে মৃত্যুর খবর বাড়লেও, পুরো এশিয়া জুড়ে দালালচক্র ও মানবপাচার নেটওয়ার্ক নতুন নতুন কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভুয়া নিয়োগ এজেন্সি এবং মুখে মুখে প্রচার করা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারা মানুষকে ফাঁদে ফেলছে।

তিনি বলেন, “পাচারকারীরা খুব ভালোভাবেই জানে মানুষ কী শুনতে চায়। তারা ‘আশা’ বিক্রি করে। আর যখন নিজের দেশে সুযোগ সীমিত, তখন সেই আশাকে না বলা সত্যিই কঠিন।”


Sama Faruqiসামা ফারুকি একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান করছেন।

 

 

 

অলংকরণ: ন্যুক ২০০০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে সিওলের হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড আর্ট এডুকেশন বিভাগের ছাত্র এবং একই সঙ্গে ইলাস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করছেন। ২০২১ সালে হিডেন প্লেস এ প্রদর্শনীর পর থেকে তিনি বিভিন্ন ইলাস্ট্রেশন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। তার প্রধান আগ্রহ হলো হ্যান্ড ড্রইং, যা শিল্প জগত নিয়ে তার চিন্তাকে তুলে ধরে।

 

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

এশিয়া ফোকাস

এশিয়ায় ডেটা সাংবাদিকতা: বার্তাকক্ষ, তথ্য-উপাত্ত আর গোষ্ঠী সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা

এশিয়ায় ডেটা সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জগুলো খুব পরিস্কার: দুর্বল ডেটা ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতার প্রতি রাজনৈতিক বিরোধিতা, অনুদান নির্ভরতা আর বার্তাকক্ষের দুর্বল অবস্থা। কিন্তু গল্প বলার সৃজনশীল পদ্ধতিগুলো—ভিজ্যুয়াল আর্ট থেকে শুরু করে এআই চ্যাটবট এবং প্রশিক্ষণ—শক্তিশালী বার্তা দেয়।

এশিয়া ফোকাস

অবৈধ বালু উত্তোলন আর তলিয়ে যাওয়া শহর— এশিয়ার গণমাধ্যম যেভাবে পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট উন্মোচন করছে

জমি উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় “অস্বাভাবিক পরিমাণ বালু ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ভয়াবহ পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে”— এবং একই সঙ্গে অবৈধ বালু বাণিজ্যে জড়িতরা আন্ত:সীমান্ত অপরাধচক্রকে সহযোগিতা করছে। এশিয়াজুড়ে সাংবাদিকরা এখন জলবায়ু ও পরিবেশকে ধ্বংস করছে এমন আন্তসীমান্ত নির্ভর গল্পগুলোকে তুলে আনছেন— যা তাদের আরও গভীরে গিয়ে ঘটনা ও কারণ অনুসন্ধান এবং পরিবেশ ধ্বংসের নেপথ্যে থাকা শক্তিশালী স্বার্থগোষ্ঠীগুলোর সংযোগ খুঁজে পেতে সহায়তা করছে।

এশিয়া ফোকাস

‘প্রভাব অনেক সময় অদৃশ্য থাকে’: নেপালি সাংবাদিক কুন্দা দীক্ষিতের পেশাগত উত্থান-পতনের গল্প

সবচেয়ে বড় হুমকি আসে প্রতিশোধপরায়ণ রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে, যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলে, মানহানির মামলা করে, কিংবা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে জেলে পাঠায়। জেলার রিপোর্টাররা বেশি ঝুঁকিতে থাকে, কারণ তারা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকে। প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় অপরাধীরাই অনেক সময় সাংবাদিক হত্যা পর্যন্ত করে থাকে।

এশিয়া ফোকাস

এশিয়ায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: চ্যালেঞ্জের মধ্যেও প্রতিরোধ, রূপান্তর, সংহতি

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ২০২৫ সালের বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক অনুযায়ী, এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা “অত্যন্ত সংকটপূর্ণ” অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দশটি দেশের মধ্যে সাতটিই এখন এশিয়ায়: রাশিয়া, ভিয়েতনাম, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়া।