

আসাদের পতনের ছয় মাস পর সিরিয়ার ভেতরের অবস্থা অনুসন্ধান
একের পর এক সশস্ত্র বিদ্রোহী হামলার পর ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামেস্কের দখল নিলে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে । কয়েক দশক পর সিরিয়ার বহু নাগরিক প্রথমবারের মতো নিজ দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।
নির্বাসিত নাগরিক, ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক আর সাধারণ মানুষ যখন সীমান্ত পার হয়ে দেশে ঢুকছিলেন, স্বাধীনতা উদযাপন করছিলেন, তখন তাদের সামনে আসাদ শাসনের ছেড়ে যাওয়া নানা ধরনের অবকাঠামো উন্মোচিত হয়। যেমন—রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ । কিংবা ভয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত সেই সব কারাগার। স্বৈরশাসন ও গৃহযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত অপরাধ অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের কাছে যা ছিল সত্য উন্মোচনের সুবর্ণ সুযোগ।
জুনের মাঝামাঝি হামবুর্গে অনুষ্ঠিত ২০২৫ নেটেউইয়ার্ক রিসার্চে বার্ষিক সম্মেলনে একাধিক বক্তা সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তারা জানান, সিরিয়ার পুরনো শাসকদের মতোই নতুন শাসকদের কাছ থেকেও তথ্যপ্রাপ্তি আর জবাবদিহিতার সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে।
সিরিয়ার সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী আমের মাতার। যিনি ২০১২ সাল থেকে জার্মানিতে নির্বাসনে ছিলেন। আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে ফেরেন। কীভাবে তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস-এর কড়া পাহারায় থাকা বিশাল সব সংরক্ষণাগারগুলো দেখেছিলেন তার স্মৃতিচারণ করেন। তবে কয়েক সপ্তাহ পর তিনি যখন আবার সেখানে যান, দেখেন সেই সংরক্ষণাগারগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। বেশিরভাগই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি সিরিয়ার ১৫টিরও বেশি জায়গায় এগুলো মুছে ফেলার বিষয়টি নিজের চোখে দেখেছি… আমরা জানতাম এমন হবে, তাই আমরা আগেভাগেই এসব নিয়ে গবেষণার চেষ্টা করেছি।”
আমের মাতার মতো সিরিয়ার অধিকারকর্মী ও আইনজীবী মারিয়ানা কারকাউটলি এবং জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম এআরডির কায়রো ব্যুরো প্রধান আনা ওসিয়াসও আসাদ মস্কো পালিয়ে যাওয়ার ঠিক পরেই সিরিয়ায় আসা প্রথম কয়েকজনের মধ্যে ছিলেন। তারাও আলোচনায় যুক্ত হন। কারকাউটলি এবং ওসিয়াস ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সেশনে অংশ নেন। কারকাউটলি যুক্ত হন বোস্টন থেকে আর ওসিয়াস কায়রো। এই আলোচনাটি পরিচালনা করেন জার্মান সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এসডাব্লিউআরের ক্রিস্টিন বেকার। “নতুন” সিরিয়ায় তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মাতার, কারকাউটলি ও ওসিয়াস। তারা আলোচনা করেন কীভাবে নতুন শাসকগোষ্ঠী স্বচ্ছতা ও তথ্যপ্রাপ্তির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে। গত ছয় মাসে—যখন সবকিছু পাল্টে গেছে—সিরিয়ায় তাদের কাজের ধরন কীভাবে বদলে গেছে।
‘আমার জীবনের বড় স্বপ্ন’
আমের মাতার আরব বিশ্বের জন্য প্রকাশিত আল-হায়াত নামের দৈনিকে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। ২০১১ সালে তিনি সিরিয়ার বিক্ষোভ নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে গ্রেপ্তার হন। এরপর কয়েক মাস তাকে আটক রাখা হয় এবং নির্যাতন চালানো হয়। ২০২২ সালে জার্মানির এক আদালতে তিনি তার নির্যাতকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন—যিনি ছিলেন সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। পরে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত হন।
মাতার আইএস প্রিজন মিউজিয়ামের পরিচালকও— এটি একটি ভার্চুয়াল জাদুঘর ও আর্কাইভ। এটি সিরিয়ায় আইএস দখলের সময় তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কারাগারগুলোতে সংঘটিত অপরাধের নিখুঁত তথ্য ও নথিভিত্তিক দলিল সংরক্ষণ করে। এখানে ৭০ হাজার নথি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—যেগুলো সিরিয়া থেকে পাচার করে আনা। ভাইকে খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি এই প্রকল্পটি শুরু করেন ২০১৭ সালে। তার ভাই ২০১৩ সালে অপহৃত হয়েছিলেন।
মাতার তখন বার্লিনে, যখন তিনি শুনলেন আসাদ পালিয়েছে। “ওটা ছিল আমার জীবনের দারুণ এক মুহূর্ত,” স্মৃতিচারণ করেন তিনি। “আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, কারণ এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন—সিরিয়া যেন বাশার আল-আসাদের শাসন থেকে মুক্ত হয়… আমি কয়েক দিন ঘুমাতেও পারিনি।”

২০২৫ সালে নেটজউইয়ার্ক রিসার্চের বার্ষিক সম্মেলনে আসাদের শাসনের পতনের পর কারাগারগুলোর ভেতরে নিজের অনুসন্ধানী কাজের অভিজ্ঞতার নিয়ে বলছেন সাংবাদিক আমের মাতার। ছবি: টিআইডিইটিভিহামবুর্গ
আসাদের শাসনামলের পতনের পর মাতার যখন সিরিয়ায় ফিরে যান, তখন তিনি এক সময়কার কড়া পাহারায় থাকা, এখন পরিত্যক্ত সেই কারাগারগুলোর স্থাপত্যের কাঠামো যতটা সম্ভব নথিভুক্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি ও তার দল বিশেষ থ্রিডি ক্যামেরার সাহায্যে সপ্তাহজুড়ে সিরিয়ার বিভিন্ন কারাগারের কক্ষ ও বাইরের অংশ স্ক্যান করে ভার্চুয়াল মডেল তৈরি করেন। এর মধ্যে ছিল দামেস্কের উত্তরে অবস্থিত কুখ্যাত সেডনায়া সামরিক কারাগার। যেখানে বহু বছর ধরে মানুষকে আটক রাখা হতো, নির্যাতন চালানো হতো এবং অনেকেই নিখোঁজ হয়ে যেতেন।
মাতার জানান, তারা প্রায় এক মাস ধরে বিশাল এই সেডনায়া কমপ্লেক্সের প্রতিটি তলা স্ক্যান করেছেন। গত ছয় মাস ধরে সেখানে অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নিয়েছেন। এরপর তার দল এই সাক্ষ্য, কারাগারের গঠন, ছবি, নথি ও প্রমাণের সঙ্গে মিলিয়ে একটি ভিজ্যুয়াল ম্যাপ তৈরি করে। যেখানে প্রতিটি অংশে কী ঘটত, কী কাজে ব্যবহৃত হতো তা দেখানো হয়েছে। সংক্ষেপে বললে, তারা “এই কারাগারের প্রতিদিনের জীবনের চিত্র আবার নির্মাণ করার” চেষ্টা করছেন।
মাতারের দলের সদস্যরা সেডনায়া কারাগারে যেসব অনুসন্ধান চালিয়েছেন, সেখান থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়—মেঝে জুড়ে পড়ে আছে পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট, ঘরভর্তি ফেলে দেওয়া জুতো ও পোশাক। আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আত্মীয়স্বজনেরা প্রিয়জনদের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন—যদি কোনো সূত্র পাওয়া যায়। মাতার জানান, এখনো প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, সেডনায়া কারাগারের থ্রিডি ভার্চুয়াল ট্যুর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনলাইনে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি এমন কয়েকটি কারাগারের একটি, যেগুলো এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। “নতুন শাসকগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা সিরিয়ার এই ভয়ংকর ইতিহাস সংরক্ষণ করবে না। বরং, তারা আবারও এই ভয়ংকর কারাগারগুলো ব্যবহার করতে চায়,” বলেন মাতার। যা তার সিরিয়াতে ফিরে আসার সময়ের তুলনায় বড় পরিবর্তন। “প্রথম এক মাসে নতুন শাসনব্যবস্থা নিয়ে তেমন কোনো বড় নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না,” এটাও তিনি উল্লেখ করেন।
শুরুতে সিরিয়ায় অবস্থিত ১৬১টি কারাগারের তালিকা হাতে ছিল মাতারের। যেহেতু থ্রিডি ক্যামেরা পৌঁছাতে সময় লাগত, তাই তিনি সাধারণ ক্যামেরা দিয়েই অনেক কারাগারের ভেতরের দৃশ্য ধারন শুরু করেন। কারণ, তার ভাষায়, “প্রতিটি দেয়ালই একটি নথি”—কারণ বন্দিরা প্রায়ই তাদের নাম কয়েদখানার দেয়ালে খোদাই করে রাখতেন।
“আমরা সিরিয়ার প্রায় ৭২ বা ৭৩টি কারাগারে এই কাজ করেছি,” বলেন মাতার। “এটা তখন সহজ ছিল, কারণ তখন কেউ আমাদের থামাতে চাইছিল না। কিন্তু এরপর, মাস যেতে যেতে কাজটা কঠিন হয়ে উঠল।”
তিনি আরো জানান, এখনো তারা সেডনায়া ও পালমিরার তাদমোর কারাগারে শুটিং করছেন। তবে অধিকাংশ স্থানে আর ঢোকা যাচ্ছে না। কারণ সেগুলো আবার সক্রিয় কারাগারে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, “এটাই সবচেয়ে পাগলাটে ব্যাপার। আমরা তো ২০১১ সালে সিরিয়ার বিপ্লব করেছিলাম, যাতে আর কোনোদিন এই ভয়ংকর কারাগারগুলো না থাকে। অথচ নতুন শাসনের অধীনে এখন আবার ফিরে এল সেগুলো।”
তিনি দামেস্কের আল-খাতিব কারাগারেও গিয়েছিলেন। ২০১১ সালে তাকে আটকে রাখা কয়েকটি জায়গার মধ্যে এটিও একটি। গিয়ে দেখেন, বন্দিদের সঙ্গে আগের মতো একই ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। যেমন, সেলের দরজা খোলা হলে বন্দিদের দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তিনি বলেন, “আমি দেখতে চেয়েছিলাম… সেই সেলটা যেখানে আমাকে রাখা হয়েছিল। তারা দরজাটা খুলল, আর ভিতরে দেখি নতুন বন্দিরা বসে আছে। সেটা ছিল আমার জন্য ভীষণভাবে নাড়া দেওয়া এক মুহূর্ত… তারা ঠিক আগের মতোই মেঝেতে বসে আছে। একদম সেই ২০১১ সালের মতো। একই গন্ধ, একই পরিবেশ।”
‘আবারও সহিংসতার বৃত্তে ফেরা’
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কাজ করে আসছেন মারিয়ানা কারকাউটলি। তিনি একজন স্বাধীন অনুসন্ধানকারী, যিনি বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ–সংক্রান্ত তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করেন। এই কাজে তাকে সহায়তা করে সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টাবিলিটি (সিজেএ)।
কারকাউটলি বলেন, “আসাদের পতনের পরপরই আমরা সিরিয়ায় যাই, কারণ আমরা যেসব মামলা নিয়ে কাজ করছিলাম, সেগুলোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের হাতে ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম—এটাই সেই সময়, যখন আমরা এসব নথি সংগ্রহ করতে পারব, অবশেষে তথ্যপ্রাপ্তি সম্ভব হবে, এবং সেইসব স্থানে যাওয়া যাবে, যেখানে এই অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছিল।”

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কথা বলছেন মারিয়ানা কারকাউটলিকে (ফাইল ছবি)। নেটজউইয়ার্ক রিসার্চের প্যানেল আলোচনায় আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। ছবি: জাতিসংঘ, লোয়ি ফেলিপে
যুদ্ধাপরাধ মামলার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ ও সুষ্ঠ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে যে ধরনের নথিপত্র প্রয়োজন, সেই জায়গাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—সিরিয়াতে বর্তমানে এই প্রক্রিয়া শুরু করার মতো কোনো কাঠামোই নেই। আর কেউ শুরু করার আগ্রহও দেখাচ্ছে না।
“সেখানে সমস্যাটা হলো—বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে অ্যাটর্নি জেনারেল দুবার বদলানো হয়েছে। আর যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, কিংবা গণহত্যার মামলা শুরু করার জন্য আমাদের কাছে কোনো আইনি কাঠামোই নেই। কারণ সিরিয়ায় এখনো এই অপরাধগুলো আইনত অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত নয় বা এগুলোর বিচার হয় না,” ব্যাখ্যা করেন কারকাউটলি।
তিনি আরও বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো স্পষ্ট কৌশল নেই। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করাটা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি বর্তমান নেতাদের কাছে সাক্ষী বা বেঁচে ফেরা ভুক্তভোগীদের কথা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাটাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“প্রথম প্রশ্ন হলো: আমরা কীভাবে সিরিয়ার সরকারের কাছে পৌঁছাব? বিষয়টা কী অবাক করার মতো না যে, আমরা যতটা সহজে ইউরোপের বিচার বিভাগ ও যুদ্ধাপরাধ ইউনিটের সঙ্গে কথা বলতে পারি… ঠিক বিপরীতভাবেই আমাদের নিজেদের প্রধান আইনজীবির সঙ্গে কথা বলার অনুমতি মেলে না। আমার মনে হয়, এইটাই এখন আমাদের কাজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ,” বলেন তিনি।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, মনে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার আসাদের শাসনকালে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো তদন্ত কাজে সাহায্য করতে আগ্রহী নয়, এমনকি সেই সময়কার ঘটনাগুলো সংরক্ষণেও তাদের কোনো উৎসাহ নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আমের ও তার দল যা করছে, সরকার ঠিক এর বিপরীত পথে হাঁটছে। তাদের মনোভাব হলো—‘আমরা শুধু ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই, অতীতের কোনো অপরাধ নিয়ে ভাবতে চাই না… আমরা সহিংসতার সেই পুরোনো চক্রটাই আবার চালু করতে চাই।’”
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
মধ্যপ্রাচ্য এবং সিরিয়া নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আনা ওসিয়াস। তিনি বলেন, আসাদের পতনের খবর পেয়ে তার দল সঙ্গে সঙ্গেই কাজের জন্য দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে বৈরুতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং পরে সিরিয়ার লেবানন সীমান্তে পৌঁছায়।
“আমি কখনোই সেই সময়ের কথা ভুলব না। যখন আমরা সীমান্ত চেকপোস্টে পৌঁছলাম, তখন ভয়ে আমার শরীরে কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল। সেখানে দেখলাম কঠিন চেহারার এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। যার লম্বা দাড়ি আর হাতে অনেক অস্ত্র ছিল। সে আমাদের দিকে তাকিয়ে বড় একটি হাসি দিয়ে বলল, ‘সিরিয়ায় স্বাগতম… সাংবাদিক, আচ্ছা আপনারা সাংবাদিক, হ্যাঁ আসেন, ভিতরে আসেন!’”
আসাদ সরকারের পতনের পর নতুন সিরিয়ায় তিনি যখন প্রথম রিপোর্টিং করতে যান, তারপর থেকে এই এখন প্রতিবেদন তৈরির জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া আরো জটিল ও অস্বচ্ছ হয়েছে। আনা ওসিয়াস বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, এক শাসনব্যবস্থা থেকে অন্য শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফলে আমাদের কাজের ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন এসেছে; এখন সিরিয়ায় প্রবেশ করাটা আর আগের মতো সহজ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের এখনও অনুমতি নিতে হয়… প্রতিবেদন তৈরির জন্য আবেদন করতে হয়, কিন্তু অনেক সময় সেটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সময় নেয়, এবং কেন তা হয় তা জানা যায় না। কোনো স্বচ্ছতা নেই যে, কেন একজনের ভিসা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মঞ্জুর হয়, আবার কারো কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।” তবে তিনি যোগ করেন, “আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের অবস্থা স্থানীয় সাংবাদিকদের চেয়ে ভালো।”
আবার চালু হয়েছে সিরিয়ার সরকারি টেলিভিশন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা ঠিক ওই আগের মতোই, কেবল একটু উন্নত। আমরা এখন একটি আধুনিক সরকারি টিভি দেখতে পাচ্ছি। যদিও তারা এখনও পুরোপুরি সরকারের আদেশ মেনে চলে, এবং তারা [অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা]-কে সিরিয়ার নতুন রক্ষক হিসেবে প্রচার করছে। তাই দেখা যাচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা— এখনও বড় একটি সমস্যা।”
আলোচনায় হতাশাজনক চিত্র উঠে এলেও, সেশনটি একটি আশাবাদী মন্তব্য দিয়ে শেষ করেন সঞ্চালক ক্রিস্টিন বেকার। প্যানেলিস্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন: “আপনারা অনুসন্ধান করছেন, তথ্য নথিভুক্ত করছেন, প্রতিবেদন করছেন—আর যতদিন এটা হচ্ছে, ততদিন আমি মনে করি আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক আছে—কারণ এখন অন্তত কেউ দেখছে, বিষয়গুলো আর অন্ধকারে গোপনে ঘটছে না।”
নিচে নেটজউইয়ার্ক রিসার্চের প্যানেল সেশনের পুরো ভিডিওটি দেখতে পারবেন।
অ্যালেক্সা ভ্যান সিকল জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও সাংবাদিক। তিনি ডিজিটাল ও প্রিন্ট সাংবাদিকতা, প্রকাশনা, এবং আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাঙ্ক ও অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। জিআইজেএনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিদেশি সংবাদ ও ভ্রমণ ম্যাগাজিন রোডস অ্যান্ড কিংডমস-এর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ও পডকাস্ট প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া অ্যান্থনি বোরডেইনের জনপ্রিয় টিভি শো পার্টস আননাউন এর সম্পূরক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এক্সপ্লোর পার্টস আননাউন-এ লেখালেখি করতেন।