প্রবেশগম্যতা সেটিংস

ছবি: শাটারস্টক

লেখাপত্র

বিষয়

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অ্যাসাইনমেন্টে যুক্ত হওয়ার আগে ফিক্সারদের যা জানা উচিত

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

অপরিচিত দেশ আসা বিদেশি সংবাদদাতা বা নিজ দেশে এমন কোনো অঞ্চলে প্রতিবেদন করতে যাওয়া সাংবাদিক, যিনি স্থানীয় ভাষাটা জানেন না বা  রীতিনীতি বোঝেন না, কিংবা বার্তাকক্ষের বাইরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাফল্য নিয়েও যদি কথা বলতে হয়—সব ক্ষেত্রেই প্রায়ই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকেন: তিনি হচ্ছেন ফিক্সার।

ফিক্সার—যারা স্থানীয় সাংবাদিক সহযোগী, এনেবলর বা প্রডিউসার হিসেবেও পরিচিত—জটিল সব প্রতিবেদন তৈরি সম্ভব করে তোলেন। তাদের ছাড়া পরিবেশগত অপরাধ, মানব পাচার, দুর্নীতি বা বিদ্রোহ নিয়ে অনেক বৈশ্বিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়তো সূচনা বিন্দুতেই পৌঁছাতে পারত না।

আফ্রিকান ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের আহ্বায়ক এবং অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর সাবেক সম্পাদক বিওরেগার্ড ট্রম্প ফিক্সারকে এমন একজন হিসেবে বর্ণনা করেন, যিনি নিশ্চিত করেন যেন একজন সাংবাদিক “বিমানবন্দরে নেমেই সরাসরি কাজে নেমে পড়তে পারেন।”

ফিক্সাররা সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেন, প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন, অনুবাদ করেন, পথনির্দেশনা দেন এবং অনেক সময় সাংবাদিকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করেন। ট্রম্প বলেন, “তারাই এমন মানুষ, যারা আপনাকে কোনো বস্তিতে নিয়ে যেতে পারেন, সেখানে সবচেয়ে অপছন্দনীয় কিছু চরিত্রের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আবার একই সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী, এমনকি কোনো মন্ত্রী বা কখনো কখনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও আপনার সাক্ষাৎ নিশ্চিত করতে পারেন।”

তবে তাদের এই গুরুত্ব সত্ত্বেও, অনেক ফিক্সার চুক্তি, ন্যায্য পারিশ্রমিক বা নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই কাজ করেন। এ কারণে অনুসন্ধানী অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়ার আগে স্পষ্ট নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।

ফিক্সারদের এই ভূমিকা কীভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং সেরা চর্চা সম্পর্কে তাদের পরামর্শ জানতে, জিআইজেএন প্রায় অর্ধডজন সম্পাদক ও ফিক্সারের সঙ্গে কথা বলেছে।

খোলামেলা স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন

মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত জিআইজেসি২৫–এ বক্তব্য দিচ্ছেন ইমানুয়েল ডগবেভি। জিআইজেএনের জন্য অল্ট স্টুডিওর পক্ষ থেকে ছবিটি তুলেছেন সামসুল সাঈদ ।

আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই শুরু থেকেই যোগাযোগকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন। ঘানার অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং ঘানা বিজনেস নিউজ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইমানুয়েল ডগবেভি পরামর্শ দিয়েছেন, “অনুসন্ধানটি কী নিয়ে এবং এতে কী ধরনের ঝুঁকি বা সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকতে পারে—এসব বিষয়ে ফিক্সারদের পূর্ণাঙ্গভাবে জানানো উচিত। কাজে নামার আগে তারা যেন স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন, ঠিক কী ধরনের পরিস্থিতিতে তারা জড়াতে যাচ্ছেন।”

কাজ নিয়ে যদি আগে থেকে পরিষ্কার ধারণা থাকে তাহলে ফিক্সারদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় যে তারা অ্যাসাইনমেন্টটি গ্রহণ করবেন কিনা। পাশাপাশি লজিস্টিক পরিকল্পনা, কতটুকু এলাকাজুড়ে তাদের কাজ করতে হবে— সে সম্পর্কিত বোঝা-পড়া এবং প্রতিবেদনের ক্রেডিট ও পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা করতেও সহায়তা করে। একই সঙ্গে এটি ঝুঁকির জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং প্রতিবেদক দলের সঙ্গে আস্থা গড়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ট্রম্প বলেন, অনেক ফিক্সার “অভিজ্ঞতার অভাবে ফাঁদে পড়ে যান। তারা আসলে যে পরিস্থিতির ভেতরে ঢুকছেন, তার পরিণতি সম্পর্কে খুব একটা জানেন না।”

কিছু ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা নিয়মিত সংবাদ প্রতিবেদনের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ অনেক ওয়াচডগ সাংবাদিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধ নিয়ে অনুসন্ধান করেন। এসব প্রতিবেদনের লক্ষ্যবস্তু হন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, যারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। এতে ফিক্সারদের জন্য আইনি, নিরাপত্তা ও সামাজিক ঝুঁকি তৈরি হয়।

সংবাদ সম্পাদক ও বিবিসির সাবেক সংবাদদাতা টোমি ওলাদিপো বলেন, সম্পাদকীয় নৈতিকতার মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টিও থাকা উচিত। তিনি বলেন, “আপনার সম্পাদকীয় মানদণ্ড নির্ধারণ করুন—অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। এর পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্ট থাকুন, এবং আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন ও কী অর্জন করতে চান—এসব বিষয়ে যেন কোনো সন্দেহ না থাকে, তা নিশ্চিত করুন।”

সবকিছু লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ঠিক করে নিন

ফিক্সার হিসেবে কাজ করার বহু বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে ডগবেভির। তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা ও অনুবাদ থেকে শুরু করে লজিস্টিক ও সম্পাদকীয় সহায়তা পর্যন্ত— প্রতিটি সহযোগিতামূলক কাজের শুরুটা হওয়া উচিত কার কী দায়িত্ব সে সম্পর্কিত একটি পরিষ্কার বোঝাপড়া দিয়ে। ডগবেভি ব্যাখ্যা করেন, “আমরা জুম বৈঠকে সব শর্ত ও নিয়মগুলো স্পষ্ট করে ঠিক করে নিই। এতে সবার কাছে পরিষ্কার থাকে, কার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে।”

অ্যাঙ্গোলার মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক ও ফিক্সার ইসরায়েল ক্যাম্পোস জোর দিয়ে বলেন, ফিক্সারদের নিজেদের সক্ষমতা সম্পর্কে সৎ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আপনি কী দিতে পারবেন আর কী পারবেন না—সে বিষয়ে পরিষ্কার থাকুন। যোগাযোগসূত্র, পরিবহন বা থাকার ব্যবস্থা—যাই হোক না কেন, যা প্রয়োজন তা আপনি দিতে পারবেন কিনা, তা নিশ্চিত করুন।”

এই পর্যায়ে চুক্তি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কাজে ফিক্সারের স্বার্থ সুরক্ষিত করে এবং পারিশ্রমিক, প্রতিবেদনের ক্রেডিট ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলোর লিখিত রেকর্ড তৈরি করে। কাম্পোস পরামর্শ দেন, “সব শর্ত ও নিয়ম লিখিতভাবে থাকা উচিত। আপনি যে কাজটি করছেন, তা বন্ধুত্বের কাজ নয়। এটিকে পেশাদার ভঙ্গিতেই দেখতে হবে।”

ট্রম্প একমত যে কাজের শর্তাবলি সবসময় লিখিতভাবে স্পষ্ট করা উচিত। তিনি বলেন, “এটা খুব জটিল হতে হবে এমন নয়। কিন্তু আমার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবং আমি আপনার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছি—এমন একটি মৌলিক চুক্তিই পরে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সাহায্য করে। সাংবাদিকতা নয়টা-পাঁচটার কাজ নয়, তাই প্রাপ্যতা, তথ্য-উপাত্ত (অডিও–ভিডিও ফুটেজ, ডেটা বা তথ্যসূত্রের তালিকা) এবং পারিশ্রমিকের কাঠামো স্পষ্ট করে উল্লেখ করা দরকার।”

তবে ডগবেভি সতর্ক করে বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে এসব চুক্তি কার্যকর করা কঠিন হতে পারে। তিনি বলেন, “কোনো বিদেশি সাংবাদিক আপনার সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেছে, কিন্তু তিনি এই দেশে থাকেন না। একজন আফ্রিকান ফিক্সার হিসেবে আপনি কীভাবে সেই চুক্তি কার্যকর করবেন?” তিনি প্রশ্ন তোলেন। “এ ধরনের চুক্তিতে হয়তো বলা থাকে, কোনো শর্তভঙ্গ হলে বিষয়টি ইউরোপীয় আদালতের অধীনে পড়বে। [কিন্তু] শেষ পর্যন্ত আপনাকে সেই ব্যক্তির সততার ওপরই নির্ভর করতে হয়।”

নাইজেরিয়ান ফিক্সার শাফা’আতু সুলেইমান একটি অ্যাসাইনমেন্টের কথা স্মরণ করেন, যা তিনি কোনো চুক্তি ছাড়াই নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “অ্যাসাইনমেন্টটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, আর পারিশ্রমিকও ছিল খুব কম।”

ট্রম্পের কাছে ন্যায্যতার বিষয়টি শুধু প্রতিবেদন তৈরির পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, “গল্পটি শেষ হলে আপনি ওই ব্যক্তির দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে পারেন না।” পরিস্থিতি যদি জটিল আকার ধারণ করে, সে জন্য আগেই একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, “ফিক্সারের জন্য একটি এক্সিট প্ল্যান থাকা দরকার, যা আগেভাগেই ঠিক করতে হবে।”

কৃতিত্ব ও স্বীকৃতির বিষয়টিও একটি সংবেদনশীল প্রশ্ন। ট্রম্পের যুক্তি, যেসব ফিক্সার প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত—হোক তা শুধু ‘অতিরিক্ত প্রতিবেদন:’ হিসেবেই। তবে ক্যাম্পোস সতর্ক করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পরিচয় গোপন রাখাই সুরক্ষার অংশ হতে পারে। শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশে কখনো কখনো নাম উল্লেখ না করাই ফিক্সারদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ধরনের স্বীকৃতি।

নিরাপত্তা সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিনশারীরিক, আইনি ডিজিটাল

অস্থিতিশীল পরিবেশে অনুসন্ধানী কাজের ক্ষেত্রে প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্টের কেন্দ্রে নিরাপত্তাকে রাখতে হয়—এমনকি বিদেশি বা পরিদর্শক দলটি যখন প্রতিবেদনটি দ্রুত করতে আগ্রহী থাকে, তখনও। ডগবেভি স্মরণ করেন, একটি শিল্পাঞ্চলের কাছে চিত্রধারণের সময় তিনি এক নিরাপত্তাকর্মীর হাতে আটক হয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেন, “যতটা ভালো হওয়া উচিত ছিল, আমার ঝুঁকি মূল্যায়ন ততটা ছিল না। এখন আমি প্রতিটি প্রকল্পকে ভিন্নভাবে দেখি। কোনো প্রকল্প গ্রহণ করার আগে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মেপে দেখি।”

ফিক্সারদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঝুঁকির মাত্রার সঙ্গে পারিশ্রমিক  ন্যায্য  ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। ডগবেভি বলেন, “আপনি যদি আমাকে দিনে ১০০ ডলার দেন, তাতে আমার বিপদের মূল্য পূরণ হবে না। আপনি চলে যাওয়ার পরেই আমাকে পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়। তাই এখন আমি আমার ফি নির্ধারণের সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা করি, এবং কোনো সমস্যা হলে আইনি সহায়তার জন্যও অর্থ রাখি।”

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে বিমা সুবিধা, স্থানীয় আইনি সহায়তা এবং ডিজিটাল সুরক্ষা। তিনি বলেন, “আপনাকে ইউরোপের কারো সাহায্য পাঠানোর অপেক্ষা করতে হবে না।” এছাড়া তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিক্সারদের সবসময় তাদের তথ্য সুরক্ষিত রাখা উচিত— শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, যোগাযোগ এনক্রিপ্ট করা এবং সংবেদনশীল তথ্য ঝুঁকিপূর্ণ বা অরক্ষিত ডিভাইস থেকে দূরে রাখা।

ক্যাম্পোস পরিদর্শনকারী সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “অনেক সময় বিদেশি সংবাদদাতারা দেশ ছাড়ার পরও প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়… কিন্তু স্থানীয় ফিক্সারই সেখানে থেকে যান, পরবর্তী পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।”

শেষ পর্যন্ত, নিরাপত্তা ন্যায্যতার একটি সূচক। ডগবেভি সংক্ষেপে বলেন, “যদি আমরা অন্যায় উন্মোচন করি এবং ন্যায় অনুসন্ধান করি, আমাদেরই প্রথমে একে অপরকে ন্যায্যতা ও সুরক্ষা দিতে হবে।”

আপনার আইনি নৈতিক সীমা সম্পর্কে জানুন

খুব সহজেই সাংবাদিক ও ফিক্সারের সম্পর্ক অস্বাভাবিক ও ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারে। ট্রম্প ব্যাখ্যা করেন, “সাংবাদিক বা তাদের সংস্থার হাতে অধিকাংশ ক্ষমতা থাকে। আমি দেখেছি মানুষ ফিক্সারদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করে। কিন্তু তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তাই তাদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।”

তাই, প্রতিটি সহযোগিতামূলক প্রকল্পে নৈতিকতা ও পারস্পরিক সম্মান থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। ডগবেভি স্মরণ করেন, একজন সহকর্মী একটি প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন, কারণ বিদেশি সাংবাদিকরা তার সতর্কতা উপেক্ষা করে বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত এমন একটি জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন। ডগবেভি বলেন, “তার কথা শোনা উচিত ছিল। ফিক্সাররা এলাকা ও গোষ্ঠীগুলোকে ভালোভাবে বোঝেন। তারা যদি বলেন পরিস্থিতি নিরাপদ নয়, তাহলে সেটাকে সম্মান করতে হবে।”

আইনি সচেতনতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, মানহানি, এবং মানুষ বা স্থান রেকর্ড করা কিংবা ছবি তোলার বিষয়ে প্রযোজ্য আইনগুলো ফিক্সারদের জানা থাকা উচিত। ডগবেভি পরামর্শ দেন, “কোনো বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে মাঠে নামার আগে আপনার দেশে কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ—এটা অবশ্যই জানতে হবে। সতর্ক না হলে কোনো সমস্যা হলে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকিতে আপনিই পড়তে পারেন।”

তিনি সাংস্কৃতিক ও আইনি সংবেদনশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথাও জোর দিয়ে বলেন। তিনি বলেন, “যদি আপনার ফিক্সাররা বলে যে আমরা কোনো মাজার বা মন্দিরের কাছে যাচ্ছি এবং জুতা খুলতে হবে—তাহলে সেটাই করুন। স্থানীয় রীতি ও কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো উপেক্ষা করলে সাংবাদিক চলে যাওয়ার পর ফিক্সারের জন্য গুরুতর প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।”

কাম্পোস যোগ করেন, যেহেতু এটি একটি পেশাগত সম্পর্ক, তাই এখানে পেশাদারিত্বের কোনো বিকল্প নেই। ফলে কাজের শুরুতেই সব শর্ত ও নৈতিক সীমারেখা স্পষ্টভাবে ঠিক করে নিতে হবে এবং পুরো কাজের সময়টা জুড়েই সেগুলো মেনে চলতে হবে।

আবেগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

ফিক্সারের কাজ কখনো কখনো বিচ্ছিন্ন এবং মানসিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে। নর্ডিক দেশগুলিতে ফিক্সার হিসেবে কাজ করা এলিজাবেথ ঘোরঘে বলেন, “কখনো কখনো এটি একাকীত্বের মতো অনুভূত হয়।” তিনি জোর দেন, বন্ধু ও পরিবারের মতো শক্তিশালী সমর্থন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ, যারা আপনার কাজ বুঝতে পারে। এটি কাজের সঙ্গে যুক্ত চাপ সামলাতে সহায়তা করে।

সংঘাত বিষয়ক সংবাদ থেকে শুরু করে দুর্নীতি বা সহিংসতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন যাই হোক না কেন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কাজগুলো প্রায়ই ফিক্সারদের ট্রমার মুখোমুখি করে। ডগবেভি বলেন, “আপনি কোনো খুনের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছেন এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত শুনছেন—আপনি ট্রমায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই কারণেই আপনার মানসিক সহায়তার প্রয়োজন। সাংবাদিকরা প্রায়ই মানসিক সুস্থতাকে উপেক্ষা করেন, কিন্তু আপনার ঝুঁকির মূল্য নির্ধারণের (ফি) সময় বিষয়টিকে অবশ্যই বিবেচনায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।”

সম্ভব হলে চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্টের পর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা বা থেরাপির জন্য বাজেট রাখার পরামর্শ দেন ডগবেভি। তিনি বলেন, “এটিকে আপনার ঝুঁকি ভাতার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। যদি মানসিকভাবে সমস্যায় পড়েন, তবে আপনার মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা পাওয়ার সুবিধা থাকা উচিত।”


জন চুকউ একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি নাইজেরিয়ার লাগোসে অবস্থান করছেন। তিনি আফ্রিকায় সাহারা অঞ্চলের রাজনীতি, স্বাস্থ্য, সামাজিক ন্যায়, সংঘাত এবং প্রযুক্তি নিয়ে লেখেন। ফরেন পলিসি, নিম্যান রিপোর্টস এবং আইজেনেট-এর মতো প্রকাশনায় তার কাজ প্রকাশিত হয়েছে।

 

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টার: ২০২৫ সালের সেরা গাইড ও টিপশিট

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য প্রাসঙ্গিক নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা রয়েছে এই রিসোর্স সেন্টারে । বর্তমানে এর আর্কাইভে ১৪টি ভাষায় ২ হাজারের বেশি টিপশিট ও গাইড থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণমূলক ভিডিও রয়েছে। আমাদের বাছাই করা এই বছরের সেরা গাইড ও টিপশিটগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

অনুসন্ধান পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

বার্তাকক্ষে এআই চ্যাটবট: যেভাবে নিজেদের রিপোর্ট ব্যবহার করে বাড়ানো যায় পাঠকের আস্থা

সোশ্যাল মিডিয়া এখন আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে খুব একটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, তাহলে আপনি কীভাবে আপনার পাঠকের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন? কীভাবে টেকসই ট্রাফিক বজায় রাখবেন এবং পাঠককে আপনার কনটেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখবেন?

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ব্রাজিলের ফ্যাক্ট-চেক প্রকল্পের নতুন উদ্যোগ: ভুল তথ্য শনাক্তে লেবেল নয়, গুরুত্ব পাবে উৎস ও কৌশল

ব্রাজিলে যৌথভাবে পরিচালিত ফ্যাক্ট-চেক উদ্যোগ কমপ্রোভা। এটি এখন আর “মিথ্যা,” “বিভ্রান্তিকর,” “ব্যঙ্গাত্মক” বা “প্রমাণিত”—এই ধরনের  শব্দ বা লেবেলগুলো ব্যবহার করছে না। বরং ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় তারা আরও কার্যকর ও বড় পরিসরে কাজ করছে।  

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ছিল না অফিস-কর্মীবাহিনী, তারপরও যেভাবে সফল স্থানীয় অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ‘মিল মিডিয়া’

“তখন আমি একটি পোস্ট লিখেছিলাম। যেখানে বোঝানোর চেষ্টা করি, এটা একটা নতুন ধরনের পত্রিকা হবে। যা ছিল দুঃসাহসী দাবি। কারণ তখন কেবল একজন মানুষ ছিল, কোনো অফিস ছিল না, কোনো কর্মীবাহিনী ছিল না, এমনকি কোনো ফ্রিল্যান্সারও ছিল না।”