প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Gavel on computer keyboard
Gavel on computer keyboard

Image: Shutterstock

লেখাপত্র

বিষয়

স্ল্যাপের বিরুদ্ধে লড়াই: মামলার আপদ যেভাবে ঠেকাচ্ছেন সাংবাদিকেরা

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

Gavel on computer keyboard

ছবি: শাটারস্টক

নেস্টর নেগা ইতোগা ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ বার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। মামলার চাপে তিনি নিজের অনুসন্ধানী প্রকল্পগুলোতে কাজ করারও সময় পাচ্ছেন না।

ক্যামেরুনভিত্তিক এই সাংবাদিক একটি আন্তর্জাতিক কাঠ কোম্পানির সম্ভাব্য শ্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে রিপোর্টিং করেছিলেন। এরপর কোম্পানিটি তাঁর বিরুদ্ধে মানহানি ও মিথ্যা সংবাদ উপস্থাপনের মামলা দায়ের করে। পাঁচ বছর ধরে এই মামলাগুলোই ইতোগাকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে। 

“বৈশিষ্ট্যগত কারণেই মামলাগুলো প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করে এবং এই যন্ত্রণা চিরস্থায়ী, যা শুধু আমাকেই গ্রাস করে না, আমার আত্মীয়, স্ত্রী ও ছয় সন্তানকেও উদ্বেগে ফেলে দেয়,” বলেন ইতোগা। “এই মামলার ফলে আমার সাপ্তাহিক অনুসন্ধানী ম্যাগাজিন লে রেনার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মীদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়েছে। নতুন কোনো অনুসন্ধানে নামার মতো সময় নেই। পেশাগত কাজ থেকে আয়ের সুযোগ কমে গেছে, অনেক চুক্তি বাতিল হয়েছে।”

মামলা চালাতে গিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়েছে বলে জানান ইতোগা। অবশ্য তাঁর মতো সাংবাদিকদের জন্য এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। বিশ্বজুড়ে ক্রমেই সাংবাদিকদের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে -এর সংক্ষিপ্ত রূপ)। 

দারিও মাইলো, দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক একজন আইনজীবী। তাঁর কাজ মূলত যোগাযোগ আইন নিয়ে, এবং তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্ল্যাপস-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রুপের একজন সদস্য। তিনি বলেন, “নিশ্চিতভাবেই বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত উদ্বেগজনক এক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে ক্ষমতাধর কোম্পানি বা সরকারি কর্মকর্তারা মামলার মাধ্যমে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। যেমন, মানহানি আইন প্রয়োগ করে।” 

২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত এই ধরনের যত মামলা হয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখেছে বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সেন্টার। তাদের প্রতিবেদনে দেখা যায়, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ায় এ ধরনের মামলা সবচেয়ে বেশি, এবং মোট মামলার দুই-তৃতীয়াংশই ফৌজদারি অভিযোগে।

SLAPP findings from Business & Human Rights Resource Centre

স্ল্যাপস মামলা ক্রমেই হয়ে উঠছে একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ছবি: স্ক্রিনশট (বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার)

রিপোর্টে দেখা যায়, এ ধরনের ভয়ভীতিমূলক মামলা বেশি করছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান (খনিজ উত্তোলন, কৃষি ও কাঠশিল্প)। এর ফলে পরিবেশ ও মানবাধিকার ইস্যু কাভার করা রিপোর্টাররা বেশি চাপের মুখে পড়ছেন।

লন্ডনভিত্তিক মিডিয়া ডিফেন্সের আইনি কর্মকর্তা, জোয়ানা কনোলি-ও পৌঁছেছেন একই ধরনের উপসংহারে।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই মামলাগুলো করা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ছক ধরে।” এটি বিশেষভাবে সত্য যুক্তরাজ্যের জন্য, যেখানকার কুখ্যাত মানহানি আইনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের দায় থাকে অভিযুক্তের ওপরই। “এবং যখনই আপনি বুঝে যাবেন যে, কৌশলটি বেশ কার্যকর, তখনই এটি বেশি বেশি ঘটতে থাকবে। লন্ডনে এমন অনেক আইনি প্রতিষ্ঠান (ল ফার্ম) আছে, যেগুলো শুধু মানহানির মামলা নিয়েই কাজ করে। এক অর্থে এটি এখন একটি ব্যবসায়িক মডেলের অংশ। আইনজীবীদের জন্য তো বটেই, একই সঙ্গে যাঁরা এসব মামলা করছেন, তাঁদের জন্যও,” বলেন কনোলি।

ইতোগার ঘটনা ছাড়াও অ্যানা পিনারিউ ও সুচানি ক্লোয়টারের অভিজ্ঞতা থেকেও একই ধরনের উপসংহারে পৌঁছানো যায়। 

থাইল্যান্ডের এক মুরগি খামারে বার্মিজ শ্রমিকদের হয়রানি নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন থাইল্যান্ডভিত্তিক সাংবাদিক ক্লোয়টার। এর প্রতিক্রিয়ায় খামারের অনৈতিক চর্চা নিয়ে তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত দেশটির শ্রম আদালত সেই শ্রমিকদের ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন থাই বাথ (৪৩ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের পর ক্লোয়টার একটি পোস্টে লিখেছিলেন, শ্রমিকেরা “দাসত্বের মামলায়” জিতেছেন।

“খামারটির মালিক অবশ্য এমনটা আশা করেননি। তাই তিনি স্থানীয় আদালতে আমার বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন,” এক ইমেইলে জানান ক্লোয়টার।

শুরুতে তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আপিল কোর্ট এই রায় বাতিল করে। কিন্তু এখন তিনি অপেক্ষা করছেন থাই সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য। বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, থাইল্যান্ডেই স্ল্যাপস মামলা হয় সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ বছরে হয়েছে ৪৯টি। 

মামলাটি ক্লোয়টারকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় এবং এর জেরে তিনি সাংবাদিক হিসেবে নিজের সক্ষমতা নিয়েই পড়েছেন দ্বিধার মুখে। 

তিনি লিখেছেন, “আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, এটি কীভাবে সম্ভব। আমি একজন সাংবাদিক এবং সেই মালিকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো ইস্যু নেই। আমি সে সময় গর্ভবতীও ছিলাম। ফলে এটি আমার জন্য ছিল খুবই আবেগঘন বিষয়। খুব ভয়ও পেয়েছিলাম।”

রোমানিয়ান সাংবাদিক অ্যানা পিনারিউ কাজ করেন জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন রাইজ প্রজেক্টে। তাঁর মাথার ওপর ঝুলছে ৫ লাখ ইউরোর (৫ লাখ ৯০ হাজার ইউএস ডলার) মানহানি মামলা। এই মামলা দায়ের করা হয় একটি রিপোর্ট প্রকাশের পর। সেই রিপোর্টে তিনি বলেছিলেন, রোমানিয়ার কোম্পানি বিএসজি বিজনেস সিলেক্ট এবং এর মালিক সিমোনা চিলাভু তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ত্রুটিপূর্ণ কোভিড মাস্ক কেনে, সেটি বেশি মুনাফায় বিক্রি করেছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির কাছে।  

গত জুলাইয়ে পিনারিউ-র পক্ষে রায় দেন আদালত। কিন্তু বিএসজি ও এর মালিক চিলাভু যেকোনো সময় আপিল করতে পারেন। 

“কেউ যখন আধা মিলিয়ন ইউরো দাবি করে বসে, তখন তা খুবই চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আপনি হয়তো ভাববেন, ‘ওহ্! আমি তো সারা জীবনেও এত টাকা উপার্জন করতে পারব না’”, বলেন পিনারিউ।

তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাটি রোমানিয়ায় ক্রমবর্ধমান স্ল্যাপের একটি নজির মাত্র। বলেন, “আমি খেয়াল করেছি, এ ধরনের মামলা রোমানিয়ায় হরহামেশাই হচ্ছে।” 

স্ল্যাপের ব্যবচ্ছেদ

কনোলি বলেন, স্ল্যাপ-এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই, আর এই বিষয়টিই আদালত, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

স্ল্যাপস-এর ক্ষেত্রে, প্রায়ই মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি ও সাংবাদিকের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। মামলাগুলোর মাধ্যমে প্রায়ই অন্যায্য ও বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এর মধ্যে চলতে থাকে নিরন্তর প্রি-ট্রায়াল মোশন, যেটি আইনি ব্যয়ভার আরও বাড়িয়ে দেয়। আরও আছে ফোরাম-শপিং; যার অর্থ হলো, মামলা দায়েরকারী এমন বিচারব্যবস্থার খোঁজ করেন, যেখানে তিনি সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন।  

হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনাও ঘটে অহরহ। “[তারা] সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ব্যক্তিগতভাবে, সাংগঠনিকভাবে নয়। কারণ, তাদের চেষ্টা মূলত, সেই সাংবাদিককেই ভয়ভীতি দেখানো,” বলেন কনোলি। 

সব বৈশিষ্ট্যই দেখা গিয়েছিল “মিনারেল স্যান্ডস বনাম রেডেল” মামলায়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার এক আদালতে অস্ট্রেলীয় খনিজ কোম্পানির দায়ের করা এই মামলাকে স্ল্যাপস বলে অভিহিত করা হয়। মামলাটি করা হয়েছিল পরিবেশবাদী আইনজীবী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে। 

ওয়েস্টার্ন কেপ-এর ডেপুটি জাজ প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিসিয়া গোলিয়াথ তাঁর রায়ে লিখেছিলেন, “খনিজ কোম্পানিগুলো অন্যায্যভাবে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করছে, যা অভিযুক্তরা কোনোভাবেই দিতে পারবেন না। এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো বাস্তবিক সম্ভাবনা নেই জেনেও তারা এসব মামলা দায়ের করছে।”

এই মামলার লিগ্যাল ডিফেন্স দলের সদস্য মাইলো বলেছেন, মামলাটি এখনো চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয়নি। তবে স্ল্যাপের কথা ভাবলে সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত এটিকে স্ল্যাপ মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে কি না, তা আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ওপর নির্ভর করবে। তবে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকার আইনে এ ধরনের মামলায় সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। 

স্ল্যাপের বিরুদ্ধে লড়াই

ক্লোয়টারের সঙ্গে গলা মিলিয়ে পিনারিউও বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে স্ল্যাপ মামলাটি আদালতে যাওয়ার পর তিনি বেশ কয়েক দফা সংশয়ে পড়েছেন। 

তিনি বলেন, “আপনি নিজেকেই জিজ্ঞাসা করা শুরু করবেন যে, ‘আমি এগুলো কী করছি?’ আপনি কী লিখেছেন, সেগুলো নিয়ে সংশয় তো আছেই, আপনি খোদ নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবেন। কারণ, আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, কেন মানুষ এগুলো করছে।”

তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন যে, তাঁর কাজ জনসেবামূলক ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং তিনি আর দমবেন না। 

“আমি এটি বারবার করব। এ জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করলেও কিছু যায় আসে না। কারণ, এটি সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সবকিছু জানার অধিকার। এখানে কোনো শাসক, রাজনৈতিক নেতা বা পক্ষের সম্পৃক্ততা আছে, তা বিবেচ্য নয়। এই কাজ করা আমাদের দায়িত্ব।”

পিনারিউয়ের মতো মাইলোও জোর দিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের এসব মামলার হুমকিতে দমে যাওয়া উচিত নয়। 

“আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরামর্শটি দেব, তা হলো: ভয় পাবেন না। কারণ, ভয় পেলেই স্ল্যাপের স্বার্থসিদ্ধি হয়,” বলেন মাইলো। “বাস্তবে যে সাংবাদিকেরা স্ল্যাপ মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, তাঁদের উচিত ভালো আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। এমন বিশেষজ্ঞ ঠিক করা, যারা এই ধরনের মামলার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন।”

আইনি প্রতিনিধি হিসেবে যাঁদের ঠিক করা হবে, তাঁরা যেন সাংবাদিকতার বিষয়টিও বোঝেন, তা নিশ্চিত করার দিকেও জোর দিয়েছেন পিনারিউ।

তিনি সাংবাদিকদের এমন ভালো আইনজীবী খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন, “যিনি সত্যিই আপনার প্রতিবেদনগুলো পড়বেন, নথিপত্র দেখবেন, এবং ইস্যুটি নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।”

 স্ল্যাপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৮০-র দশকেযুক্তরাষ্ট্রের দুই আইনের অধ্যাপক প্রথম এই স্ল্যাপ পরিভাষা ব্যবহার করেছিলেন। এই ধরনের মামলার ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতেও স্ল্যাপবিরোধী আইন পাস হতে থাকে। বর্তমানে, ৩১টি রাজ্যে আছে স্ল্যাপবিরোধী আইন, যার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্রুত ছাড়া পাওয়ার আবেদন জানাতে পারেন, এবং আইনজীবীর ফি ও বিচারিক ব্যয়ভার ফেরত পেতে পারেন। একই ধরনের আইন এখন দেখা যায় কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও কেবেক প্রদেশ এবং অস্ট্রেলীয় ভূখণ্ডে। যুক্তরাষ্ট্রে, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো কিছু রাজ্যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পাল্টা “স্ল্যাপব্যাক” মামলাও করতে পারেন। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে এনে হেনস্তা করার জন্য তিনি স্ল্যাপ মামলাকারীর বিরুদ্ধেও আনতে পারেন ক্ষতিপূরণের দাবি। এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশ বড় আকারের হয়। 

RCFP Map of US states with anti-SLAPP statutes

স্ল্যাপ-বিরোধী আইন আছে, এমন রাজ্যগুলোর মানচিত্র। ছবি: স্ক্রিনশট (আরসিএফপি)

তবে স্ল্যাপ মামলার বিরুদ্ধে এসব পাল্টা আইনি প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ এখনো বিবেচিত হয় ব্যতিক্রম হিসেবে। 

নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ৬০টি ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্বাক্ষর করা ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় “বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে স্ল্যাপবিরোধী আইনি ব্যবস্থা থাকলেও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোথাও এখন পর্যন্ত স্ল্যাপের বিরুদ্ধে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

কনোলি জানিয়েছেন, তিনি আরও অনেকের সঙ্গে মিলে ইউরোপের আইনজীবীদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, যারা স্ল্যাপ মামলার শিকার হওয়া সাংবাদিকদের স্বেচ্ছায় আইনি সেবা দেবে। স্ল্যাপ মোকাবিলার জন্য তিনি ও তাঁর সংগঠন যে বেশ কয়েকটি সমাধান নিয়ে কাজ করছে, সেগুলোর একটি হলো এই নেটওয়ার্ক। 

স্ল্যাপস মোকাবিলার আরেকটি ধাপ হলো, সেসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর তালিকা তৈরি, যারা বারবার এই ধরনের মামলা করে। বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার যেমন শনাক্ত করেছে থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, থাম্মাকাসেট-কে। গত পাঁচ বছরে তারা ৩১টি স্ল্যাপস মামলা দায়ের করেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে হন্ডুরাসভিত্তিক ইনভেরসিওনেস লোস পিনারেস। তারা করেছে এমন ২২টি মামলা।  

স্ল্যাপবিরোধী তৎপরতারও উত্থান হচ্ছে বলে জানান কনোলি। বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষ একটু একটু করে পাল্টা জবাব দেওয়ারও চেষ্টা করছে। যারা স্ল্যাপস মামলা করছে, তাদের নাম সবাইকে জানানো এবং লজ্জা দেওয়ার মতো অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন করারও চেষ্টা চলছে।”

আরেকটি ধাপ হচ্ছে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষিত করে তোলা। বিশেষভাবে ফ্রিল্যান্সার ও ছোট সংগঠনে কাজ করা সাংবাদিকদের জানানো উচিত তাঁদের অধিকার সম্পর্কে। তাঁরা যেন এই ধরনের মামলার চিঠি দেখে ভয় পেয়ে না যান, তা নিশ্চিত করা। 

“আপনি যদি ছোট জায়গায় বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন, তাহলে যেকোনো প্রতিবেদন প্রকাশের আগে একটি চেকলিস্ট বানিয়ে নিলে উপকার হবে। এতে করে, আপনার বিরুদ্ধে স্ল্যাপ দায়ের করা হলেও আপনি জানবেন যে, আপনি লড়ার জন্য তৈরি। 

গত জুনে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি কার্যনির্বাহী গ্রুপ স্ল্যাপবিরোধী মডেলসংক্রান্ত নির্দেশনার একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। তারা এই প্রস্তাব পাস করা ও ইইউ আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। এখানে “জনগণের অংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলাকে” সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে: 

“যে দাবি জনস্বার্থের বিষয়ে একজন বিবাদীর জন-অংশগ্রহণ থেকে উদ্ভূত এবং যার মধ্যে আইনি যোগ্যতার অভাব রয়েছে, যা স্পষ্টত ভিত্তিহীন, অথবা যেখানে অধিকার বা আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহারের বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান, এবং এ কারণে যে বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যবহারের উদ্দেশ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, সত্য প্রমাণ করা বা প্রয়োগ করা নয় বরং ভিন্ন কিছু। ”

ইইউর তৈরি করা খসড়ায়, মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ও সময় ব্যয় হয়ে যাওয়ার আগেই যেন সেগুলো খারিজ করে দেওয়ার ব্যবস্থা এবং স্ল্যাপের একটি কাঠামো দাঁড় করানোর কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গার আইনের মিল আছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে মিনারেল স্যান্ড মামলার সময় রায়ের যুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্যের আইন দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছিল বলে জানান গোলিয়াথ।  

ইইউ যে ধরনের স্ল্যাপবিরোধী আইন তৈরির আলোচনা চালাচ্ছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে যা এরই মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে, তা এটি মোকাবিলার একটি উপায়। তবে কোন কোন মামলা স্ল্যাপ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, সেগুলো শুরুতেই শনাক্ত করে ফেলার উপায় তৈরির দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন মাইলো। আরেকটি কৌশল হলো, এসব মামলা থেকে সুরক্ষার জন্য সাধারণ একটি আইন তৈরি করা, যার কথা বলা হয়েছিল মিনারেল স্যান্ডস মামলার সময়। 

স্ল্যাপবিরোধী আইন তৈরির পক্ষে ক্লোয়টারও। তাঁর মতে, এটি ছাড়া মানবাধিকার ইস্যুতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাধারণ মানুষ জানতে পারবে না। 

সাংবাদিকদের অবশ্যই তাঁদের প্রতিবেদনগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে, সতর্কভাবে প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু যখন মানবাধিকারের মতো সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে কাজের প্রশ্ন আসবে, তখন এসব বিষয় কাভার করা সাংবাদিকদের জন্যও একটি মৌলিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত। ক্লোয়টার বলেন, “আগেই বলেছি, আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখন চিন্তা করুন, যদি বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ১০ হাজার সাংবাদিক ভয়ের মধ্যে থাকেন, তাহলে কী হবে? পীড়িতদের কণ্ঠ তাহলে কীভাবে শোনা যাবে?”

এই প্রতিবেদনের জন্য ইতোগার সাক্ষাৎকার ফরাসি থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেছেন জিআইজেএন-এর ফরাসিভাষী আফ্রিকা সম্পাদক ম্যাক্সিম ডোমেগনি।

আরও পড়ুন

সাংবাদিকদের জন্য মামলা ও আইনি ঝুঁকি এড়ানোর গাইড

হাও টু সাকসেসফুলি ডিফেন্ড ইওরসেল্ফ ইন হার ম্যাজেস্টি’স লাইবেল কোর্টস

ইন্ডিয়া: ইউজিং লিগাল একশন টু সাইলেন্স জার্নালিস্টস

ফ্রেঞ্চ জার্নালিস্টস অন ট্রায়াল ফর কলিং আজারবাইজান এ ডিক্টেটরশিপ


Jared Schroeder profile pictureজ্যারেড শ্রোয়েডার টেক্সাসের ডালাসের সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, তথ্যপ্রবাহ ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিস্থিতি কেমন- তা নিয়ে তিনি বিশেষভাবে কাজ করেন। তাঁর বই: “দ্য প্রেস ক্লজ অ্যান্ড ডিজিটাল টেকনোলজি’স ফোর্থ ওয়েভ।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত ৮টি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে। যেখানে উঠে এসেছে ভুয়া লেখক-বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্য; টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল; বিদেশে রাজনীতিবিদের সম্পদের খোঁজ— এমন নানা বিষয়।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।