সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে বিস্ফোরক শনাক্ত করবেন কীভাবে?
টীকা: যে কোনো বিস্ফোরক অস্ত্রই (এক্সপ্লোডেড অর্ডন্যান্স, সংক্ষেপে ইও) মারাত্নক বিপজ্জনক। এ সম্পর্কে না জেনে কিংবা যথাযথ প্রশিক্ষন ছাড়া ধারে-কাছে যাবেন না। অনলাইনে বিস্ফোরক অস্ত্রের ছবি পোস্ট করার সময়ও সতর্ক করবেন এ ব্যাপারে। আপনি যদি এ ধরনের বিপজ্জনক কোনো বস্তুর হদিস পান, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
অবিস্ফোরিত স্থল মাইন, রকেট, বোমা, গ্রেনেড ও অন্যান্য বিস্ফোরক প্রায়ই অবিস্ফোরিত থেকে যায়। অবিস্ফোরিত এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ (আনএক্সপ্লোডেড অর্ডন্যান্স, সংক্ষেপে ইউএক্সও) যুদ্ধ ও সংঘাত শেষ হওয়ার কয়েক দশক পরও একই রকম বিপজ্জনক।
এ অস্ত্রগুলো সাধারণত অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ (ইউএক্সও) নামেও পরিচিত, যা আগাম কোনো সংকেত ছাড়াই হঠাৎ বিস্ফোরিত হতে পারে। তাই যুদ্ধ বা সংঘাত পরিস্থিতি শেষ হলেও বেসামরিক মানুষকে হতাহত করতে পারে।
ল্যান্ডমাইন মনিটরের ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, পেতে রাখা ল্যান্ডমাইন ও বিস্ফোরক যুদ্ধাস্ত্রের আঘাতে মোট ৪ হাজার ৭১০ জন আহত হন, পরিসংখ্যানটি বৈশ্বিক হিসাবে কম-বেশি হতে পারে। অলাভজনক সংস্থা হালো ট্রাস্ট ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত ৮৫৫ জন বেসামরিক নাগরিককে শনাক্ত করেছে। যারা ৫৫০টির মতো মাইন-সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বা মৃত্যুবরণ করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা বিস্ফোরকের ছবি থেকে নাগরিক সমাজ ও গবেষকেরা অবিস্ফোরিত অস্ত্র (ইউএক্সও) ও বিস্ফোরক অস্ত্র (ইও) শনাক্ত করতে পারেন। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বিস্ফোরক অস্ত্র সম্পর্কিত কোন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেমন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্র সম্পর্কিত ভুল বর্ণনা। যুদ্ধের সময় এগুলো যতটা ভয়ানক বলে দাবি করা হয়েছিল,পরবর্তীতে দেখা যায় তা কয়েকগুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে অস্ত্রগুলো নিস্ক্রিয় করার সময় যে কেউ প্রচন্ড আহত হতে পারেন বা মৃত্যুও হতে পারে।
কী আছে এই গাইডে
বিস্ফোরক অস্ত্র সম্পর্কিত অক্সফোর্ড রেফারেন্সের সংজ্ঞা অনুসারে” যে কোন যুদ্ধাস্ত্র, যার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য রয়েছে, যেমন বোমা ও ওয়ারহেড; নিয়ন্ত্রিত ও অনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র; কামান, মর্টার, রকেট এবং ক্ষুদ্রাকৃতির অস্ত্র ও গোলাবারুদ; মাইন, টর্পেডো, এবং গভীর ও বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ করতে সক্ষম এমন অস্ত্র।”
আমাদের এ গাইডটির লক্ষ্য অনলাইনের ছবি দেখে যতটা সম্ভব নির্ভুলভাবে বিস্ফোরক অস্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও উৎস চিহ্নিত করার জন্য প্রাথমিক ধারণা দেয়া। যেন তা অস্ত্র সম্পর্কিত ভুল তথ্য কিংবা ক্ষতিকারক বয়ানকে রুখে দিয়ে যুদ্ধ পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা বা অস্ত্র নিস্ক্রিয় প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে পারে।
বিস্ফোরক গোলাবারুদ বিভিন্ন রকমের হয়। তবে এখানে আমরা অনলাইনের উন্মুক্ত রিসোর্স ব্যবহার করে সচরাচর দেখা যায় এমন কয়েকটি সাধারণ বিস্ফোরক অস্ত্র চিহ্নিত করার দিকে মনোযোগ দেব। আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন রিসোর্সের একটি তালিকাও করেছি, যা আপনি এই গাইডের শেষে পাবেন।
নৌপথে ব্যবহার করা হয় এমন গোলাবরুদ নিয়ে আমরা এখানে আলোচনা করব না। কারণ মাঝে মধ্যে উপকূলে ভেসে আসা জাহাজবিধ্বংসী মাইন বাদে সামাজিক মাধ্যমে এগুলো নিয়ে খুব বেশ ছবি পোষ্ট করা হয় না।
গাইডটি পড়ে থাকা অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ (ইউএক্সও) সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে। তবে এতে বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা গোলার টুকরো বা বুলেটের খোসা, বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট গর্ত বা ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত বিস্তারিত বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত নয়। বিস্ফোরণের পর বারুদের খোসার ওপর দৃশ্যমান লেখা বা অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমে তা শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে। গাইডে এ বিষয়ক কিছু পরামর্শ রয়েছে, তবে অক্ষত বস্তুর ক্ষেত্রে যা সাধারণত সহজ।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অনলাইনে এগুলো শনাক্তের সবসময় প্রাথমিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলনা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা প্রয়োজন।
যেভাবে শুরু করবেন আপনার অনুসন্ধান
অনলাইনে পাওয়া যেকোনো ছবি খোঁজার সময় খেয়াল রাখবেন ছবিটি শতভাগ সঠিক কিনা। এটি ছবি খোঁজার প্রথম ধাপ। কেননা অনলাইনে যেকোনো ছবি বসিয়ে বা বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পোস্ট করা হতে পারে। এভাবে বিস্ফোরক অস্ত্র সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তাই এ কাজে হাত দেয়ার সময় পূর্ণাঙ্গ সত্যতা ও মৌলিকতা যাচাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কীভাবে তা করবেন? এর জন্য দেখে নিতে পারেন বেলিংক্যাটের সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইকরণ গাইডটি।
ছবি বস্তুটি যদি ঝরাজীর্ণ বা গাঁয়ে কাদামাটি লেগে না থাকে, অর্থাৎ ভালো রেজ্যুলিউশনের হয়, তবে রিভার্স ইমেজ খুঁজতে পারেন। পাশাপাশি দুটি ছবি যাচাই করেও দেখতে পারেন। এরসঙ্গে অস্ত্রের ধরন বা মডেলের সম্ভাব্য মিলগুলোও দেখে নিন। মনে রাখবেন রিভার্স ইমেজ সার্চের সুযোগ কেবল গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বেলিংক্যাটের গাইডে রিভার্স ইমেজ খুঁজতে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যকার মূল পার্থক্য তুলে ধরার পাশাপাশি তা ব্যবহারের কৌশলগুলোরও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এখানে।
অনুসন্ধান শুরুর আগে প্রথমে আপনি ওপেন সোর্স মিউনিশনস পোর্টালটিতে ঢুঁ মারতে পারেন, এখানে যাচাইকৃত শত শত বিস্ফোরক অস্ত্রের ছবি রয়েছ। কোথায় আর কখন ছবিগুলো তোলা হয়েছে খুঁজে দেখতে পারেন তার ভিত্তিতেও।
নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য
যখন আপনি নিশ্চিত হবেন যে ছবিটি শতভাগ সঠিক আর এতে প্রদর্শিত বস্তুটি পূর্বে শনাক্ত করা হয়নি, তখন আরও নিবিড়ভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে বস্তুটির পরিচয় জানতে পারবেন।
১. লেখা দেখে তথ্য উদ্ধার
বড় আকৃতির গোলাবারুদে অনেক সময় সঠিক মডেল, ধরন এবং অন্যান্য তথ্য লেখা থাকে। যেমন কবে তৈরি, উৎপাদন লট ইত্যাদি। বস্তুটির গাঁয়ে বা আশেপাশে ছিটকে পড়া কোনো টুকরো, যেমন গোলাবারুদের বাক্সে যদি এ ধরনের লেখা বা লেবেল দেখতে পান, তাহলে সহজেই সঠিক মডেলটি শনাক্ত করতে পারবেন।
যেমন, ন্যাটো তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে তৈরি অস্ত্রে কেজ কোড (কমার্শিয়াল অ্যান্ড গভার্নমেন্ট এনটিটি কোড) দেয়া থাকে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সংস্থার সরবরাহকারীদের বোঝার জন্য পাঁচ-সংখ্যার এ শনাক্তকরণ নম্বর দেয়া হয়। এ কোডগুলো আপনি পাবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিফেন্স লজিস্টিক এজেন্সি(ডিএলএ)-র অনলাইন ডেটাবেসে। এ কোডগুলো দিয়ে সিরিয়া ও ইয়েমেনে ব্যবহারিত গোলাবারুদের উৎস অনুসন্ধান করা হয়েছে।
বিস্ফোরক অস্ত্রের মডেল বৈচিত্র্যের কারণে স্পষ্টভাবে মুদ্রিত লেবেল এবং সংকেতের অর্থ শনাক্ত করাটা কঠিন। তবে বিস্ফোরক অস্ত্রের নির্দিষ্ট ধরণ ও উৎসের ওপর ভিত্তি করে এগুলোর শনাক্তের বিভিন্ন গাইড রয়েছে। যেমন কোলাবরেটিভ অর্ডন্যান্স ডেটা রিপোজিটরি (সিওআরডি)। এটি ল্যান্ড মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরক অস্ত্র কীভাবে চিনবেন এ সম্পর্কিত পাঁচ হাজারেরও বেশি তথ্যবহুল একটি ডাটাবেস। আরেকটি উদাহরণ হলো বোম টেকস উইদাউট বর্ডারসের বেসিক আইডেন্টিফিকেশন গাইড টু অ্যামিউনিশন ইন ইউক্রেন। এখানে রাশিয়া কর্তৃক আক্রমণে ব্যবহৃত প্রতিটি বিষ্ফোরক অস্ত্রের তথ্য রয়েছে।
২. রঙ
বিস্ফোরক অস্ত্রের রঙ থেকেও এর ধরন ও মডেল শনাক্ত করা যায়। রঙ দেখে বস্তুর মধ্যে থাকা বিস্ফোরকের ধরণ বোঝা যায়। আবার এগুলো কী ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়, তাও বোঝা যায়। যেমন, ন্যাটো তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের জন্য যে গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হয় নীল রঙের। আর ওপরে সাদা কালি দিয়ে লেখা থাকে।
অলাভজনক সংস্থা গ্লোবালসিকিউরিটিডটওআরজির দেয়া কালার কোডের তালিকা। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়। এটি আপনার কাজে লাগতে পারে। এছাড়া, তাদের একটি গাইডও রয়েছে। যেখানে বুলেট— বিস্ফোরক রাউন্ডসহ — কলার কোড দেখে কীভাবে চিহ্নিত করতে হয়, এখানে রয়েছে সে বিষয়ক কিছু পরামর্শও।
৩. আকৃতি, ধরন ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য
শনাক্ত করার মতো চিহ্ন— যেমন লেবেল, স্ট্যাম্প বা রঙ যদি না থাকে, তাহলে পরবর্তী ধাপ হল এর আকৃতি এবং আকার যাচাই। বিস্ফোরক অস্ত্রগুলোর বিভিন্ন ধরন, আকার এবং ফর্ম রয়েছে। নিচের ছবি আপনাকে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে।
ছবির গুণগত মান ও বাড়তি তথ্যের ওপর নির্ভর করে বস্তুর আনুমানিক আকার পরিমাপ করা সম্ভব হতে পারে। তবে কাজটি কীভাবে করবেন। সহায়ক কিছু পরামর্শ ও কৌশল রয়েছে এই গাইডে।
প্রাসঙ্গিক সূত্র
ছবিতে দেখানো বস্তুর ধরন বা মডেল নিয়ে যদি এখনও অস্পষ্টতা থাকে, তবে বেশ কিছু সূত্র রয়েছে যা আরো বেশি সুনির্দিষ্ট ও দরকারী প্রসঙ্গ সরবরাহে সাহায্য করবে।
১. অবস্থান
নির্দিষ্ট ধরনের অস্ত্রগুলো মূলত সীমিত কিছু জায়গাকে লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হয়। তাই যে জায়গা থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে ওখানের ভৌগলিক অবস্থান জানুন। এটি গবেষকদের বস্তুটি শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
রাশিয়া যেমন পশ্চিম ইউক্রেনে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমি অপারেশন চালায়নি। তাই, পশ্চিম ইউক্রেনের দূরবর্তী এলাকা থেকে পাওয়া ছবিগুলো প্রধানত আকাশপথে ছোঁড়া আধুনিক অস্ত্র, যেমন দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা এরিয়াল বোমা।
বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে একাধিক বোমা বিস্ফোরণের জন্য ব্যবহার করা হয় ক্লাস্টার বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পাঁচটি অঞ্চল এবং ৪১টি দেশে এগুলো ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায়। ১০০টিরও বেশি দেশ স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে এ ধরনের যুদ্ধাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এগুলো বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। তাই অনেক দেশকে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হয়েছে।
জিওলোকেটিং ইমেজ সম্পর্কে আরও জানতে, এখানে ও এখানে আমাদের পূর্ববর্তী গাইডগুলো পড়তে পারেন।
২. সময়
ঘটনার সময়কালও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
যেমন, ২০১৬ সালের আগে ইউক্রেনের কোনো ঘটনার সঙ্গে পশ্চিমা সংযোগ থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ ২০১৬ সালের আগে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী পশ্চিমাদের কাছ থেকে খুব একটা সমর্থন পায়নি।
তাই সময়কাল গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেল যুদ্ধ শুরুর আগেই অস্ত্রগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এসআইপিআরআই) ১৯৫০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত প্রধান প্রধান অস্ত্র সরবরাহের একটি ওপেন ডেটাবেস তুলে ধরে। তাই সময় জানলে ছবি থেকে তথ্য বের করাটা সহজ।
মনে রাখবেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি বা ভিডিওতে অনেক সময় নির্দিষ্ট বস্তুর ওপর ফোকাস করা হয় না। ছবিতে যদি একাধিক বস্তু থাকে, তবে তা কখনও কখনও বিস্ফোরক অস্ত্র শনাক্তের সূত্র হিসেবেও কাজ করতে পারে।
আবার নির্ধারিত বছরের আগে উৎপাদিত কোনো বিস্ফোরক বস্তুর ছবি শনাক্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ এসব অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের সময়সীমা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ার পিটিকেএম-১আর ল্যান্ড মাইনের কথা ভাবুন। ২০২১ সালে প্রথমবার জনসাধারণের সামনে এটিকে দেখানো হয়। ঠিক পরের বছর ২০২২ সালে প্রথমবার ইউক্রেনে ব্যবহার করা হয়। তাই, যদি কোনো ছবি ২০২১ সালের আগের হয়, তবে পিটিকেএম-১আর ল্যান্ড মাইনের মতো দেখা গেলেও, তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদিও অস্ত্রটি জনসমক্ষে আসার আগেই গোপনে ব্যবহার করা হতে পারে— এমন একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা থেকেই যায়।
একটি ছবি কখন তোলা হয়েছিল বা ভিডিও কখন ধারণ করা হয়েছিল তা বের করতে অনুসন্ধানকারীরা বিভিন্ন কৌশল নিয়ে থাকেন। যা”ক্রোনোলোকেশন” নামে পরিচিত। এখানে ছায়ার দৈর্ঘ্য অনুসরন বা বিভিন্ন তারিখের উপগ্রহ চিত্রের তুলনা করা হয়। দেখা হয় যে ছবির দৃশ্যমান ল্যান্ডমার্কগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে কিনা। বেলিংক্যাট ক্রোনোলোকেশনের গাইডে কিছু কৌশলের কথা বলা হয়েছে।
৩. অন্যান্য বস্তু
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি বা ভিডিওতে অনেক সময় নির্দিষ্ট বস্তুর ওপর ফোকাস করা হয় না। ছবিতে যদি একাধিক বস্তু থাকে, তবে তা কখনও কখনও বিস্ফোরক অস্ত্র শনাক্তের সূত্র হিসেবেও কাজ করতে পারে।
ছবিতে দেখা বিস্ফোরক অস্ত্রের আশেপাশে প্রায়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন টুকরা বা খণ্ডিত বস্তু দেখা যায়। যেমন শেল ক্যাসিং, ফিউজ, শার্পনেল, গোলাবারুদের বাক্স বা যন্ত্রপাতি। এগুলো বিস্ফোরক অস্ত্রের ধরন ও মডেল শনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, গোলাবারুদ বহনের জন্য ব্যবহৃত বাক্সে শনাক্তকরণ চিহ্ন থাকে। ল্যান্ড মাইনের ক্ষেত্রে প্রায়ই প্লাস্টিকের তৈরি সেফটি ক্যাপ থাকে যা বসানোর আগে সরিয়ে ফেলা হয়। এগুলো আশেপাশে পড়ে থাকতে পারে এবং সূত্র হিসেবেও কাজ করে থাকে।
শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার উদাহরণ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি দেখে বিস্ফোরক অস্ত্র কীভাবে শনাক্ত করবেন— এমন কিছু কৌশল জানার পর চলুন বাস্তব কিছু উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি।
নিচে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট দেখতে পাচ্ছেন। যা পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্কের বুদেনোভস্কি জেলার পাওয়া বিস্ফোরক অস্ত্রের ছবি। রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম VKontakte-এর জনপ্রিয় চ্যানেল “Типичный Донецк” এ ছবিটি পাওয়া গেছে। এতে প্রায়ই ওই এলাকার লড়াইয়ের খবর প্রকাশ করা হয়।
১. বস্তুটিতে কি কোনো কিছু লেখা আছে? উত্তর হচ্ছে, না। বস্তুটি ক্ষয়প্রাপ্ত, মরিচা ধরেছে এবং দুর্ভাগ্যবশত শনাক্ত করার মতো কোনো চিহ্নও নেই। এছাড়া খোলা বাতাসে পড়ে থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।
২. বস্তুটি রঙ কী? এটি হালকা সবুজ রঙের কিন্তু ছবিটির ডানদিকে প্রচণ্ড মরিচা ধরেছে। এ অবস্থায় বস্তুটির আসল রঙ ও ব্যান্ড শনাক্ত করাটা খানিক কঠিন।
৩. বস্তুর আকার ও ধরন কি? এটির কি কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে? বস্তুটি লম্বাটে আকৃতির। এর বাম দিকে সহজেই চেনা যায় এমন ফিন এবং স্পিগট রয়েছে। এর সবচেয়ে প্রশস্ত অংশের ডানদিকে রয়েছে গোলাকার চিহ্ন। ব্যাপকভাবে মরিচা ধরলেও “অবটুরেটিং রিংস” (যা কামানের গ্যাস সীল করার জন্য ব্যবহৃত হয়) হিসাবে চেনা যায়।
আমাদের উপরের ডিসিশন ট্রি অনুসারে, আমরা এটিকে এক ধরনের মর্টার হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। ওপেন সোর্স মিউনিশনস পোর্টালের মাধ্যমে যাচাই করে অন্যান্য মর্টারের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে যা নিশ্চিত করা যেতে পারে। যদিও আরো তথ্য ছাড়া এটিকে নির্দিষ্ট মডেলের নাম দিতে আমরা অক্ষম, কারণ দেখানো বস্তুটি ক্ষয়প্রাপ্ত এবং এতে কোনও দৃশ্যমান স্ট্যাম্পিং বা লেখা নেই।
অন্যান্য টুল ও উৎস
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা বিস্ফোরক অস্ত্রের ধরন শনাক্ত করতে সাহায্য করে এ নির্দেশিকাটি। তবে বিস্ফোরক অস্ত্রের বিভিন্ন ধরন ও বৈচিত্র্যের কারণে তা খুঁজে বের করতে আরও প্রয়োজন হতে পারে। আমরা একটি রিপোজিটরিতে সহায়ক কিছু কৌশল লিপিবদ্ধ করেছি।
রিপোজিটরি একটি জীবন্ত নথি। নতুন তথ্য যুক্ত করার মাধ্যমে এটিকে সবসময় হালনাগাদ করা হয়। এতে প্রতিটি রিসোর্সের ধরন, গোলাবারুদের উৎস বা ব্যবহারের অবস্থান যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। যা সবার জন্য উন্মুক্ত। বেশিরভাগ রিসোর্স ব্যবহার করতে আপনাকে কোনো পয়সা খরচ করতে হবে না, তবে নিবন্ধন করার প্রয়োজন হতে পারে। আর কিছু ক্ষেত্রে অল্প কিছু টাকা লাগতে পারে।
তবে, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি কম্পিউটার ভিশন ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে বিস্ফোরক অস্ত্র শনাক্তের কাজ শুরু হয়েছে। যদিও বিকাশ চলমান। বেশ কয়েকটি স্টার্ট-আপ যেমন VFRAME এবং Tech4Tracing এ নিয়ে কাজ করছে। ফলে শুধু সামাজিক মাধ্যমের ছবিই নয়, অদূর ভবিষ্যতে লাইভ ড্রোন ছবি দেখেও তা শনাক্ত করাটা সহজ হতে পারে।
মূল লেখাটি বেলিংক্যাটে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। সহজ আর সাবলিলভাবে তুলে ধরার জন্য লেখাটিতে কিছু শৈলীগত সম্পাদনা করা হয়েছে।
অ্যান্ড্রো ম্যাথিউসন লন্ডনের কিংস কলেজে যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের পিএইচডি ছাত্র। এছাড়া তিনি ২০২৪ বেলিংক্যাট টেক ফেলো।