‘আমরা আজন্ম ডিজিটাল’: মালয়েশিয়াকিনির সাফল্য নিয়ে প্রেমেশ চন্দ্রন
দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়াকিনির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রেমেশ চন্দ্রন পদত্যাগ করেছেন। মালয়েশিয়াকিনি হলো মালয়, ইংরেজি, চীনা, ও তামিল ভাষায় প্রকাশিত মালয়েশিয়ার একটি অনলাইন সংবাদ সাইট, যার দৈনিক ইউনিক পেজভিউ এক লাখের বেশি।
মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম পরিবেশ রক্ষণশীল। সেখানে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই সরকারের মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন। এমন পরিবেশে নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রেখে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে মালয়েশিয়াকিনি। এই স্বাধীনতা মূলত তাদের ব্যবসায়িক মডেলের কল্যাণে, যেখানে আয়ের অর্ধেকটাই যোগান দেন গ্রাহকেরা এবং বাকি অর্ধেক আসে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে, যে মডেল আরও অনেক সংবাদমাধ্যম তাদের নিজ দেশে প্রয়োগ করতে চেয়েছে। মালয়েশিয়াকিনি সরকারি বিজ্ঞাপন নির্ভর নয়।
১৯৯৯ সালে মাত্র পাঁচ সদস্যের দল নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। আর এখন সেটি ১০০ জন কর্মীর এক প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে মালয়েশিয়ার রাজনীতির সবচেয়ে টালমাটাল সময়, আর মালয়েশিয়াকিনিতে চন্দ্রনের দুই দশক সমান্তরালে এগিয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে চন্দ্রন তাঁর অবিচল যাত্রার প্রতিটি মাইলফলক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রশ্ন: ১৯৯৯ সালে কোন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়াকিনি চালু করলেন?
উত্তর: তখন আমরা ভেবেছিলাম, ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পারব। সেই সময় অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম ছিল মূলত ক্ষমতাসীন দলের মালিকানাধীন বা তাদের অনুগত। একেই বিশেষজ্ঞরা বলেন, মিডিয়া ক্যাপচার।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির (মোহাম্মদ) এমনভাবে আইন পরিবর্তন করেছিলেন, যেন ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত না হয়। এর ফলে গণমাধ্যম পরিসরে দ্বৈত আইনী ব্যবস্থা তৈরি হয়। মুদ্রণ ও সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য এক আইন, আর ইন্টারনেটের জন্য আরেক। আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছি এবং স্বাধীন সংবাদ প্রকাশে আমরা ইন্টারনেট কাজে লাগাতে পারি কি না, সেটাই দেখতে চেয়েছি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের প্রসার বাড়বে।
সেই দিনগুলোতে আমাদের সামাজিক মাধ্যম ছিল না। হাতে ফোন ছিল না এবং আমাদের সবার ডায়াল-আপ মডেম সাইট ছিল। তবে আশা ছিল, ইন্টারনেটের এই ব্যবহার আমাদের সরকারি নিয়ন্ত্রণের অচলাবস্থা অতিক্রম এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা বিকাশের সুযোগ করে দেবে।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়ার মতো রক্ষণশীল পরিবেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বরূপটা কেমন, যেখানে অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন?
উত্তর: মালয়েশিয়ায় একেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে একেক রাজনৈতিক দলের প্রভাব আছে। তাই স্বাধীন গণমাধ্যম বলতে আমরা কেবল মালিকের এজেন্ডা থেকে স্বাধীনতা বুঝিয়ে থাকি। আমি আসলে বুঝাতে চাইছি, এটি এমন এক গণমাধ্যম প্লাটফর্ম যা পেশাদার সাংবাদিক ও সম্পাদকেরা পরিচালনা করেন, যাঁরা সত্যিকার অর্থেই যথাযথ ও নির্ভুল সাংবাদিকতা করার চেষ্টা চালিয়ে যান। জানেন, তখন আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করব বলেও ভাবিনি, সেটি একটি বড় লাফ হতো এবং তা করাও বেশ কঠিন ছিল। নিছক দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মৌলিক ও সঠিক রিপোর্টিং, সরকারি ও বিরোধী উভয় পক্ষের নেতাদের বক্তব্য… একধরনের সাধারণ জনপরিসর তৈরি করাই ছিল আমাদের প্রথম লক্ষ্য।
প্রশ্ন: ২০১৮ সালে, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ায় সরকার পরিবর্তন হয়েছে। মালয়েশিয়াকিনি দারুণ রিপোর্টিং করেছে এবং তারাই প্রথম এই পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। যা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের বলুন। কীভাবে করলেন?
উত্তর: প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় মাঠপর্যায়ে আমাদের কর্মী বেশি ছিল, তবে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের সঙ্গেও আমাদের ভালো যোগাযোগ ছিল। দেশের বিভিন্ন অংশে কীভাবে গণনা চলছিল, তা জানাবোঝার ক্ষেত্রে আমাদের পরিচালনা কৌশল কাজে দিয়েছে। সেই ফলাফল দ্রুত জোগাড় করার সক্ষমতাও আমাদের ছিল।
অবশ্য নির্বাচন কমিশন ফল গণনা করলেও তা ঘোষণা করছিল না। গণনা কী, তা তো আপনি জানেন-ই, তবে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল না। একটা সময় পর নিশ্চিত হয়ে যায়, বিরোধী দল জয়ী হয়েছে। তবে অন্য গণমাধ্যমগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় ঘোষণা করতে চায়নি যে বিরোধী দল জয়লাভ করেছে।
তারা মূলত বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখেছিল এবং ফলাফল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে ছিল। নির্বাচন কমিশনও দেরি করছিল। তাই শুধুমাত্র অনানুষ্ঠানিক গণনা ব্যবহার করে আমরা ফলাফল ঘোষণা করেছি। তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ মালয়েশিয়াকিনির ওয়েবসাইটে এসেছে, কিন্তু সেটি তখনো বন্ধ হয়নি।
প্রশ্ন: ঐ দিনের সংবাদকক্ষ কেমন ছিল?
উত্তর: বিকাল ৫টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। রাত সাড়ে ৭টা বা ৮টার মধ্যে নির্বাচনী ফলাফল সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়ে যাই, আর প্রায় সাড়ে ৮টা বা তার পরে সরকার আমাদের সাইট বন্ধের আদেশ দেয়। টেলিকম কোম্পানিগুলোকে আদেশ দেয়া হয় যেন, কেউ আমাদের ইউআরএল টাইপ করলে তা সঠিক আইপি অ্যাড্রেসে না যায়।
দুটি প্রতিষ্ঠান মেনে নিলেও অন্য দুটি এই আদেশ অনুসরণ করেনি। আমাদের সাইট ট্রাফিকে বড় ধরনের পতন হয়েছিল। তবে এই ধরনের সেন্সরশিপ ঠেকাতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। তাই আধঘন্টা বা কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ট্রাফিক আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ঐদিন সরকারের পক্ষ থেকে আমরা অনেক বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিক্রিয়া আশঙ্কা করছিলাম।
সংবাদকক্ষে প্রচণ্ড উত্তেজনা কাজ করছিল। যে মুহূর্তে সরকার [আমাদের বিরুদ্ধে] ব্যবস্থা নেয় আমরা বুঝতে পারি তারা ভীত যে তারা নির্বাচনে হেরে গেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো, সরকার পরাজয় স্বীকার করবে, কি করবে না। রাত ১১টার মধ্যে বিরোধী দল সরকারকে পরাজয় স্বীকারের ডাক দেয়। কিছুটা সময় যায়, তবে অবশেষে রাত ২টায় ঘটনাটি ঘটে।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকিনির পাঠক কারা? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কি পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: আমাদের প্রচুর পাঠক আছে, কারণ আমরা চারটি ভাষায় খবর প্রকাশ করি: ইংরেজি, মালয়, চীনা, ও তামিল। আপনি আমাদের একনিষ্ঠ রাজনৈতিক পাঠক পাবেন, যারা নিয়মিত রাজনীতির খবরাখবর রাখতে চান। মৌসুমী পাঠকও পাবেন, যারা কোনো বড় ঘটনায় আমাদের সংবাদ পড়েন। এই হলো প্রধান দুই ভাগ।
ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া একেবারেই নগরায়িত একটি দেশ, যেখানে ৭৫% নাগরিক শহরাঞ্চলে বাস করে। প্রায় ৯০% মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছায়। সংবাদপত্র বা টেলিভিশন তুলনায়, এখন ইন্টারনেটই মানুষের সংবাদ তথ্য প্রাপ্তির প্রথম উৎস। অন্য যে কোন গণমাধ্যমের তুলনায় ইন্টারনেট বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছায়। সে অর্থে তাদের সবাই আমাদের সম্ভাব্য পাঠক।
প্রশ্ন: অনেক প্রতিষ্ঠানই মালয়েশিয়াকিনির ব্যবসায়িক মডেল অনুকরণ করার চেষ্টা করেছে, যেখানে গ্রাহক ও বিজ্ঞাপনদাতা উভয়ের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ করে রাজস্ব আসে, কিন্তু তারা সবাই ব্যর্থ। আপনার গোপন রহস্য কী?
উত্তর: প্রায় ২০ বছর আগে ২০০২ সালের শুরুর দিকে আমরা গ্রাহক সাবস্ক্রিপশন শুরু করি। এই পথ বেশ কঠিন ছিল। প্রথম পাঁচ, ছয়, সাত বছর, গ্রাহক পেতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। মানুষ সাবস্ক্রিপশন মডেল গ্রহণ করার কথা বলে, কিন্তু এমন কিছু নয় যা আপনি খুব দ্রুত ও সহজে করে ফেলতে পারবেন। সুইচ অন করলেন, আর সব কাজ করবে, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। যথেষ্ট যন্ত্রণা সামলানোর প্রস্তুতি আপনার থাকতে হবে।
একটু আগেভাগেই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি, কারণ আমাদের আর উপায় ছিল না। [স্বাধীন] রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আমরা বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর করতে পারছিলাম না। এটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, বিজ্ঞাপনদাতারা জেঁকে বসবে। গ্রাহক সাবস্ক্রিপশন ও অনুদান নির্ভরতা – এ দুয়ের একটিকে আমাদের বেছে নিতে হত। আমরা অনুদান নির্ভরতা চাইনি। তাই আগেভাগেই সাবস্ক্রিপশনে মন দেই। অবশ্য আমাদের চীনা ও ইংরেজি বিভাগ-ই কেবল সাবস্ক্রিপশন-নির্ভর। তামিল ও মালয় বিভাগ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
একটি সুনির্দিষ্ট প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী শ্রেণী এবং সর্বস্তরের পাঠক শ্রেণী – এই দুইয়ের কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে সঠিক ভারসাম্যটাই আমরা খুঁজেছি। আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পাঠক-শ্রেণীতে আটকে থাকলে চলবে না, এবং একটি বড় শ্রোতা গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে হবে।
প্রশ্ন: প্রযুক্তি ও সম্পাদকীয় এই দুয়ের মাঝে ভারসাম্য কেমন?
উত্তর: অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান একজন সম্পাদক বা সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তারপর তাঁরা সম্পাদকীয়তে অনেক জোর দেন। তখন আপনার বার্তাকক্ষ হয়ে যায় বড়, কিন্তু প্রযুক্তি ও বিক্রয় বিভাগ হয়ে যায় ছোট।
আমি সাংবাদিক ছিলাম। কিন্তু পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে মনোনিবেশ করেছি, আর আমার অংশীদার স্টিভেন [সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্যান] সম্পাদক হয়েছিলেন। অনেক সফল কার্যক্রমের ক্রীড়ানক সাংবাদিক ও সম্পাদকেরা নন। আর আমার মতে, এটিই মূল অংশ। প্রযুক্তি, বিজ্ঞাপন, ও বিক্রয় কোনটিই প্রতিষ্ঠানের গৌণ বিষয় নয়। এর সবগুলোই খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়াকিনি শূন্যের ওপর গড়ে উঠেনি। গত ২০ বছর ধরে [দেশটি] গণতন্ত্রায়ণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। গণতন্ত্রের যে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, আমরা তার বাহন হয়ে উঠেছিলাম। গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে – শুধু এই ধারণাকে সমর্থন করার জন্য অনেকে আমাদের সাবস্ক্রাইব করেছে। আমার মতে, একে নিছক সাবস্ক্রিপশন ক্রয় হিসেবে দেখা ঠিক নয়। এটা অনেকটা লক্ষ্যের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মত।
পাঠকদের সঙ্গে একবার আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুললে, তারা সাবস্ক্রাইব করে। এটি যতটা না ‘সংবাদ পড়ার জন্য’ তার চেয়ে অনেক বেশি আপনার ওপর আস্থার জন্য, আপনার প্রতি বিশ্বাসের জন্য।
প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠান যেন স্বাধীনভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে, সেজন্য আপনি কী এখন এটিকে অলাভজনক হিসেবে গড়তে চান?
উত্তর: হ্যাঁ। মালিকানা পর্যায়ে আমরা অলাভজনক কাঠামো স্থাপন করছি। সিংহভাগ মালিকানা স্টিভেন ও আমার এবং আমরা এখানে লাভের জন্য আসিনি। অন্য বেসরকারি খাতে আমাদের মালিকানা স্থানান্তরের চেয়ে আমরা এটিকে ফাউন্ডেশন করতে চেয়েছি: মালিকানা ও পরিচালনা উভয়ই। তবে মালয়েশিয়াকিনি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এটি গার্ডিয়ান ও অন্যান্য মডেলের মতো, যেখানে আপনার বাণিজ্যিক কার্যক্রম আছে, তবে মালিকানা স্কাউট ট্রাস্টের মতো অলাভজনক।
প্রশ্ন: ২০১১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান মার্দেকা রিভিউ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় মালয়েশিয়াকিনি তাদের উদ্ধার করেছিল। আপনি একটি যৌথ সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ চালু করেছিলেন, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দামে একজন পাঠক মালয়েশিয়াকিনি ও মার্দেকা রিভিউ – উভয় সংবাদ মাধ্যমের কন্টেন্ট পড়তে পারতেন। গণমাধ্যম জগতে সংহতির এ এক বিরল নিদর্শন। আপনি বলবেন, এটি কেন করেছেন?
উত্তর: মার্দেকা রিভিউ চীনা ভাষার একটি স্বাধীন সংবাদ প্লাটফর্ম। তারা আমাদের চেয়ে কিছুটা ছোট; লোকবল বলতে মাত্র পাঁচ, কী ছয়জন। তবে তারা অর্থ সংকটে পড়েছিল এবং প্রায় বন্ধ হবার দ্বারপ্রান্তে ছিল।
সেসময়, আমাদের চীনা সংস্করণও বিনামূল্যে ব্যবহার করা যেত। আমরা বলেছিলাম: দেখুন, আমরা কেন যৌথ সাবস্ক্রিপশন শুরু ও রাজস্ব ভাগাভাগি করছি না। তাই আমরা একটি বিশেষ সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ চালু করি, যার আওতায় খুব পরিমিত মূল্যে আপনি চীনা ভাষার মালয়েশিয়াকিনি ও মার্দেকা রিভিউ পড়তে পারেন। তাদের সঙ্গে আমরা অর্ধেক রাজস্ব ভাগাভাগি করেছি, এমনকি সাবস্ক্রিপশন ব্যবস্থাপনা ও অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বও আমরা পালন করেছি।
ভাবনাটি ছিল এমন যে, আমরা যতই একই রকমের কাজ করি, একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি, তারপরও সহযোগিতার সুযোগ সবসময়ই থাকে এবং অন্যের সাফল্যও নিশ্চিত করা যায়। এটি সত্যিই অনেক সমর্থন এনে দিয়েছে।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো কাজ করছে, আমরা তাদের সহায়তার চেষ্টা করি। অন্য সংগঠনগুলো আমাদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও আমরা সব সময়ই তাদের সঙ্গে সংহতি স্থাপন করি। এটি শুধুমাত্র মালয়েশিয়াকিনির বিষয় নয়।
প্রশ্ন: আপনি কি কখনো ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ডের মতো দেশে সম্প্রসারণের চিন্তা করেছেন?
উত্তর: আমরা অন্য দেশের অন্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখি। তবে আমরা সম্প্রসারণ করিনি, কারণ সংবাদ একটি স্থানীয় বিষয় এবং আপনার একটি বড় ধরনের স্থানীয় রুচি আছে। আমার মনে হয় না, ব্র্যান্ড এভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে। আর গণমাধ্যমের সার্বভৌমত্বের একটি শক্তিশালী চেতনাও আমাদের আছে। সত্যিকার অর্থে স্বাধীন সংবাদ ও তা উন্নয়নের বিষয়টি সেই দেশের মানুষের সিদ্ধান্ত। অনেক সংগঠন প্রশিক্ষণ, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ও যৌথ প্রকল্পের জন্য আসে। তবে মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা কখনো মালয়েশিয়ার বাইরে সম্প্রসারণের চিন্তা করিনি।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়াকিনি কীভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে? যেমন; মালয়েশিয়া ট্র্যাকারে কোভিড-১৯ দারুণ কাজ করছে।
উত্তর: আমরা আজন্ম ডিজিটাল। ইন্টারনেটের শুরুর দিকের বছরগুলোতে ভালো সফটওয়্যার ছিল না। আমরা যখন শুরু করি তখন ওয়ার্ডপ্রেস ও বিভিন্ন টুলের মতো সাধারণ জিনিসেরও অস্তিত্ব ছিল না। শুরু থেকে নিজেদের অনেক সফটওয়্যার আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। বছরের পর বছর ধরে আমরা একটি খুব শক্তিশালী সফটওয়্যার দল পেয়েছি এবং আমাদের নিজস্ব কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রয়েছে যার নাম নিউজ গ্রাফ।
আমরা একটি সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম তৈরি করেছি এবং আমাদের নিজস্ব ডেটা ড্যাশবোর্ড আছে। তাই আমরা বছরের পর বছর ধরে অনেক সফটওয়্যার তৈরি করেছি এবং তাতে উন্নত হয়েছি। আমরা খুব টেক-স্যাভি এবং আমরা দ্রুত প্রযুক্তি তৈরি করতে পারি। প্রযুক্তি হলো এই প্রতিষ্ঠানের একটি মূল দিক।
মালয়েশিয়াকিনি গড়েই উঠেছে সম্পাদকীয় দক্ষতার ওপর। আমাদের একটি শক্তিশালী বিজ্ঞাপন বিক্রয় দল আছে এবং আমরা একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি দলও পেয়েছি। এই সংগঠনের তিনটি মূল অংশ রয়েছে।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়া এখন পরিবর্তনের চূড়ায়। আপনার কী মনে হয়, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? আর বর্তমানে দেশটিতে স্বাধীন গণমাধ্যমের অবস্থা কী?
উত্তর: নিঃসন্দেহে মালয়েশিয়া বলতে যা বোঝায়, তা নিয়ে একটি দ্বন্দ্ব আছে। একদিকে এটি আরও ইসলামি ও বদ্ধ সমাজ হতে পারে। তবে বহুত্ববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেশটি আরও বেশি গণতন্ত্র ও উদার সমাজের পথেও হাঁটতে পারে। জনসংখ্যার দিক থেকে মালয় ও মুসলমান জনগোষ্ঠী দ্রুত বাড়ছে। আর এই পরিবর্তনটা বিশাল।
অনেক মানুষও মনে করে, বিশ্বায়ন কাজ করেনি। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অভিজাতরা দুর্নীতিগ্রস্ত…. এই বিষয়গুলো ঘিরে মালয়েশিয়াতে আমরা একই ধরনের প্রবণতা দেখছি।
প্রশ্ন: আপনি এখন কী করতে যাচ্ছেন?
উত্তর: আমি এখনও সামাজিক ইস্যুতে যুক্ত থাকব। পরিবেশ ইস্যু, আবাসন ও অন্যান্য ধরনের ইস্যু নিয়ে আমি ভাবছি। তাই আমি বিষয়গুলো নিয়েই থাকব, অন্যান্য সুযোগের সন্ধান করব, এবং মালয়েশিয়াকিনি তরুণদের হাতে থাকবে। তবে আমি এখনও সামজিক পরিসরে থাকব।
সম্পাদকের নোট: মালয়েশিয়াকিনি জিআইজেএনের একটি সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং চন্দ্রন জিআইজেএনের এশিয়া অঞ্চলের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজম এই প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশ করে এবং অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হল। মূল স্টোরি এখানে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন
প্রথাগত গণমাধ্যমের ডিজিটাল রূপান্তর: এশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে যা শেখার আছে
মেকিং ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম সাসটেইনেবল: মালয়েশিয়াকিনি’জ স্টিভেন গান
আফটার ২০ ইয়ারস ফাইটিং ফর ডেমোক্রেসি, হোয়াটস নেক্সট ফর মালয়েশিয়াকিনি?
রাক্ষা কুমার, ভারতভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি মূলত মানবাধিকার, ভূমি, ও বন অধিকার নিয়ে কাজ করেন। ২০১১ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, গার্ডিয়ান, টাইম, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ও হিন্দুর মতো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের হয়ে রিপোর্ট করেছেন। আপনি তাঁর আরও লেখা এখানে পড়তে পারেন।