ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করুন, নিজের ভুল থেকেই শিখুন
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
ওপেন সোর্স রিপোর্টিং ও গোয়েন্দা সংস্থায় যাঁরা কাজ করেন নিঃসন্দেহে তাঁরা ভীষণ প্রতিভাবান। প্রায় প্রতিদিনই বিস্ময়কর সব অনুসন্ধান, জটিল বিষয়ের আরও গভীর অন্বেষণ এবং কোনো ছবি বা ভিডিও কোথায় ধারণ করা হয়েছে, তা এক নিমিষেই খুঁজে বের করায় ব্যস্ত থাকেন তাঁরা।
এ মানুষদের কাজ দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। আমাদের মতো আমজনতা কীভাবে তাদের পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা চিন্তা করতে পারি? হয়তো জন্মগতভাবেই তাঁরা প্রতিভাবান। তবে শুরুতেই কি তাঁরা এ কাজে এতোটা পারদর্শী ছিলেন? একটা সময় তাঁরাও তো নবিশ হিসেবে কাজে নেমেছিলেন। ব্যর্থতার স্বাদ নিতে হয়েছে তাঁদেরও। হয়তো তা অসংখ্যবার। তবে তাঁরা কিন্তু এখনও হাল ছাড়েননি। কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এটাই তাদের শ্রেষ্ঠ করে তুলেছে।
ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি (ওসিন্ট) নিয়ে কাজে নেমে কিছু পরিমাণ ব্যর্থতা কিন্তু আপনাকে বরণ করতে হবে। যা খানিকটা প্রত্যাশিতও। গুরুত্বপূর্ণ নথিপ্রমাণের কোনো সামান্য একটি অংশ না থাকার কারণে হয়তো কোনো একটি অনুসন্ধান আর আলোর মুখ দেখেনি। হতে পারে ছবি বা ভিডিওটি কোন জায়গার তা আর শনাক্ত (জিওলোকেটেড) করা সম্ভব হয়নি। কিংবা কোনও একজনের পরিচয় কখনও উদ্ধার করা যায়নি। যদিও ওই অনুসন্ধানে আপনি আপনার সেরাটা দিয়েছেন। তবে আপনার ওই পরিমাণ পরিশ্রমও যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু ঠিক আছে (আপাতত)। হতাশা, অক্ষমতার অনুভূতি থেকে মাঝে মাঝে নিজের ওপর করুণা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে হাল ছেড়ে দেওয়া কাজের কথা না।
তাই আসুন এমন কিছু উপায় নিয়ে আমরা আলোচনা করি, যেখানে আপনি নিজেই নিজের ভুলগুলো ধরতে পারবেন এবং আপনার সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলোর মুখোমুখি হবেন। এতে আপনি আরও ভাল ওপেন সোর্স বিশ্লেষক বা অনুসন্ধানী হয়ে উঠতে পারবেন।
আত্মতুষ্টির বিপদ: ব্যর্থতাই বরং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ যাচাই করতে বাধ্য করে
কতশতবার যে আমি সঠিক পথে এগো্চ্ছি এই বিশ্বাস নিয়ে এগোনোর পর ধাক্কা খেয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হয়তো আমি আমার অনুসন্ধানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ও খুবই নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছি, তারপরও । আমি যা খুঁজে পাওয়ার আশা করছিলাম তা কোথাও পাওয়া যায়নি। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, আমি আর নতুন কিছু যোগ করতে পারিনি।
এ পর্যায়ে এক পা পিছিয়ে এসে আমাদের সমস্ত পদক্ষেপগুলোর পুনর্মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কোনো একটা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় তা ধরতে না পারলে অনুসন্ধানের পর সেই ভুলটি শনাক্ত এবং সংশোধন করাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।
তাই অনুসন্ধানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আপনার সমস্ত ডেটা যাচাইয়ের অভ্যাস অপরিহার্য। শুধুমাত্র মুখ দেখে কোনোকিছুরই মূল্য নির্ধারণ করা উচিত নয়। আপনার কাজই হচ্ছে দুইবার কিংবা তিনবার করে যাচাই করা। আপনি যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন, তখন আপনি আপনার ফলাফলগুলো নিয়ে যেন পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী থাকেন।
একজন ভালো ওএসআইএনটি বিশ্লেষকের গুণ হচ্ছে দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে সে কখনও কোনো সম্ভাবনাকে ছেঁটে ফেলবে না। ছোটখাটো ব্যর্থতাগুলোই অনুসন্ধানের প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। এবং পরবর্তীতে আমাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেও সংযত করে।
নিশ্চিত ধারণা যেখানে বিভ্রম: ব্যর্থতা কীভাবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া থেকে আমাদের বিরত রাখে ও বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়ায়
যখন আমরা অনুসন্ধানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের ক্ষমতাকে পরিমার্জন করি, তখন ভুল তথ্য চিহ্নিত করা, পক্ষপাত এড়ানো এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকে ভালো কিছু ঘটতে পারে, যদিও তা ওএসআইএনটির ক্ষেত্রে এক ধরনের বিপজ্জনক সমস্যা।
প্রতিবারই আপনার মনে হবে আপনি সবকিছু ঠিকঠাক করেছেন। আপনি সবকিছু দুইবার করে যাচাই করেছেন। কিন্তু বারবার একই দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছেন, যা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। আর আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানুষ হিসেবে আমরা কেউই শতভাগ সঠিক নই, আমাদেরও ভুল হয়। মাঝে মধ্যে এ ভুলগুলোই ওসিন্ট বিশ্লেষকদের পা মাটিতে রাখতে সাহায্য করে। আপনি নিশ্চয়ই এমন দাবি নিয়েও হাজির হতে চান না যে, আপনি সবসময় নির্ভুল ছিলেন। একজন খুব ভাল ওসিন্ট বিশ্লেষক দাবিও করবেন না যে, তিনি সবকিছু খুঁজে পেয়েছেন। আর এমন দাবি যদি করে বসেন তাহলে আপনি কিন্তু নিজেই নিজেকে বোকা বানাচ্ছেন।
আপনি সবসময় নির্ভুল বা নিশ্চিত, এমন লোভ কিন্তু প্রলুব্ধকর, মনে রাখবেন: এটি একটি বিভ্রম।
শাণিত হন: ব্যর্থতাকে আলিঙ্গনের মানসিকতাই আপনার আত্ম-উন্নয়নের হাতিয়ারই
আপনি যতই দক্ষ হোন না কেন, সবসময় কেউ না কেউ থাকবে, যে আপনাকে অসম্পূর্ণ মনে করবেই।
একজন ওসিন্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনি যখন আপনার যাত্রা শুরু করবেন, তখন দারুন সব পেশাদারদের মুখোমুখি হবেন। তাঁরা ছেয়ে আছে সর্বত্র। আপনি সবসময় তাদের মতো হতে চাইবেন। এমনকি আপনি তাদের ছাড়িয়ে যেতেও চাইবেন। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম। আমি যেমন নিজেকে বলেছিলাম, “একদিন আমি ওমুককে ছাড়িয়ে যাব। আমি এটা অনেক দ্রুত আর দারুণভাবে করবো।” আমি ভালোকরেই জানতাম, আমি কতদূর যেতে চাই, কোথায় পৌঁছাতে চাই।
কিন্তু আপনি কি জানেন যে, গত কয়েক বছরে আমি আসলে কতজনকে অতিক্রম করতে পেরেছি? একজনও নয়। কারণ তাঁরা কেউ আমার জন্য বসে ছিলেন না। তাঁরা তাদের নিজস্ব গতিতে এগোচ্ছিলেন। তাঁরাও সম্ভবত অন্যদের ছাড়িয়ে যাওয়ার বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করছিলেন। যাদের তাঁরা নিজেদের তুলনায় অনেক বেশি সফল বলে মনে করেন।
অন্যদের চেয়ে ভাল হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আমরা যে ব্যর্থতার মুখোমুখি হই, তা আমাদের দক্ষতা বাড়ায়, আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেয়। একটা সময় আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি আর কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন না; আপনি আপনার আগের আমির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত। যা আত্মোন্নতির আশ্চর্য চালিকা শক্তি।
উপসংহার
ওপেন সোর্স নিয়ে কাজ করার অর্থ হল ডেটার অফুরন্ত সমুদ্রে ডুব দেওয়া। আপনি কনটেন্টের সমুদ্রে ডুব দিয়ে সবকিছু যাচাই আর ধাঁধার সমাধান করতে শিখবেন। তবে এমনও দিন আসবে যখন আপনি ব্যর্থ হবেন। আপনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, কিছুই কাজ করবে না। আপনার মনে হতে পারে ওসিন্ট আপনার জন্য নয়। এমন দিন কিন্তু আসবে-যাবে। তবে আপনি কীভাবে তা মোকাবিলা করছেন, তা-ই ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতে আপনি পেশাদার হিসেবে কেমন হয়ে উঠবেন।
ব্যর্থতাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। আমাদের অবশ্যই আগে থেকে অনুমান করতে হবে, ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করতে হবে এবং ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে হবে। যাঁরা ব্যর্থতা থেকে লজ্জায় দূরে সরে যায়, তাদের থেমে থাকা নিন্দনীয়। তাঁরা কখনও একজন (ভালো) ওসিন্টের জায়গা নিতে পারবে না।
লেখাটি প্রথমে এখানে প্রকাশিত হয়। অনুমতি নিয়ে খানিকটা পরিমার্জনের পর পুনরায় প্রকাশিত হলো। আপনি মূল নিবন্ধের ভিডিও সংস্করণও এখানে দেখতে পারেন।
সোফিয়া সান্তোস একজন জ্যেষ্ঠ ওএসআইএনটি বিশ্লেষক এবং সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্সের দলনেতা, যেখানে তিনি বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, সশস্ত্র সংঘাত, ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং অনুসন্ধান করেন। পর্তুগালে জন্ম নেয়া সোফিয়া বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।