Image: Shutterstock
স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রধান অস্ত্র ডিজিটাল হামলা
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
নিয়ন্ত্রণ ও বন্দীত্ব থেকে শুরু করে শারীরিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এখানেই শেষ হলে কথা ছিল। পারস্পরিক সংযোগের এই যুগে এসে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের হুমকি আত্মপ্রকাশ করেছে, যেখানে রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতাবানেরা ডিজিটাল স্পেসে আক্রমণের মাধ্যমে সমালোচনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন ক্রমবর্ধমান হারে।
দমনপীড়নের ধরন বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোও এই হামলা এমনভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেন তারা পাঠকশ্রোতাদের জন্য নির্ভরযোগ্য সংবাদ ও তথ্য প্রদানের মিশনে অটল থাকতে পারে। এখন স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোকে সার্ভারে ব্রুট ফোর্স হামলা (পাসওয়ার্ড ও তথ্য চুরির জন্য পরিচালিত হ্যাকিং), সামাজিক মাধ্যমে অত্যাধুনিক আক্রমণ এবং ডিজিটাল আইনের প্রতিকূলতাও সামলাতে হচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রকাশনাগুলো যত বেশি ডিজিটাল এবং প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে, তাদের ওপর ততই প্রচণ্ড ও অভিনব হামলার শংকা বাড়ছে।
ডিজিটাল পরিবেশে উদ্বেগজনক প্রবণতা
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে, এমন প্রায় ৪০টি দেশের ৬০টির বেশি স্বাধীন সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত বছর কাজ করেছে মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (এমডিআইএফ); তাদের অর্থায়ন করেছে, এবং ব্যবস্থাপনা পরামর্শ দিয়েছে, যেন তারা রাজনীতিবিদ ও অভিজাততন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে এবং ব্যবসাকে যথেষ্ট শক্তিশালী করতে পারে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে গণমাধ্যমের জন্য বিদ্যমান ব্যাপক চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে আমরা একটি গভীর ধারণা পেয়েছি। আয়ের উৎসে বৈচিত্র্য আনা থেকে শুরু করে মহামারিতে ঘরে বসে কাজ করা পর্যন্ত অনেক বিষয় এর মধ্যে পড়ে। আমরা যেসব গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করি, তাদের অনেকেই ব্যবসার এসব “বিধিসম্মত” বাধার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ডিজিটাল হামলারও শিকার হচ্ছে, শুধুমাত্র ভালো সাংবাদিকতা করার কারণে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা এই ডিজিটাল হামলার অভিনবত্ব, পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়তে দেখছি। এ ধরনের সাইবার হামলা এতো জনপ্রিয়, কারণ এগুলো বিরূপ খবরকে দমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর, এবং এতে হামলাকারীদের জন্য সনাক্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম। তারা ভিপিএনের মাধ্যমে নিজেদের আড়াল করে রাখতে পারে এবং সহজেই নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করতে পারে। ডিজিটাল পরিসরে অন্যান্য্য চাপের মধ্যে রয়েছে সাইবার মানহানি, যা পদ্ধতিগতভাবে স্বচ্ছ হলেও অস্ত্র হিসেবে কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য।
২০২১ সালের বার্ষিক জরিপে দেখা গেছে, এমডিআইএফ সমর্থিত গণমাধ্যমগুলোর ৪১.৫% গত বছর হামলার শিকার হয়েছে। এসব হামলার বেশিরভাগই হয়েছে ডিজিটাল পরিসরে। আমাদের গণমাধ্যম অংশীদারেরা যে ধরনের হেনস্তার শিকার হচ্ছে তার মধ্যে ফিলিপাইনে সাইবার হামলা, এল সালভাদরে সাংবাদিকদের ওপর স্পাইওয়্যার নজরদারি, মালয়েশিয়ায় ফৌজদারি বিচার এবং ইথিওপিয়ায় সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং উল্লেখযোগ্য। এবছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের মূলমন্ত্র ছিল “ডিজিটাল অবরোধের মুখে সাংবাদিকতা।” তাই এই প্রবন্ধে আমরা দেখব, এই হামলাগুলো কীভাবে হয়েছে।
সাইবার মানহানির বিরামহীন মামলা
প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের স্বৈরাচারী শাসনে, ফিলিপাইনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা স্থবির হয়ে গেছে। তার নির্দেশনায়, সরকার বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনের সমালোচনা করা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। কখনও কখনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং লাইসেন্সিং সংস্থাগুলোকে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে। যেমন, ২০২০ সালে দেশটির কংগ্রেস – যার বেশিরভাগ সদস্যই প্রেসিডেন্টের সমর্থক – সেখানকার বৃহত্তম টিভি নেটওয়ার্ক, এবিএস-সিবিএনের ফ্র্যাঞ্চাইজি নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এভাবে মহামারির সময় লক্ষ লক্ষ ফিলিপিনোকে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
প্রতিহিংসামূলক পরিবেশ সত্ত্বেও কয়েকটি স্বাধীন গণমাধ্যম এখনো টিকে আছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মারিয়া রেসার প্রতিষ্ঠিত র্যাপলার এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত। ডিজিটাল হামলা এবং অ্যানালগ বিচার- এই দুইয়েরই লক্ষ্যবস্তু ছিলেন রেসা।
রেসা ও র্যাপলার অসংখ্য মামলা, তদন্ত এবং অনলাইন হামলার বিরুদ্ধে লড়ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের প্রতিষ্ঠাতাকে দশকের পর দশক জেলে কাটতে হবে। রেসার বিরুদ্ধে যেসব ডিজিটাল হামলা হয়েছে তার বেশিরভাগই ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণ। তাকে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিরামহীন স্রোত সামাল দিতে হয়েছে। তাঁর পেশাগত ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ১০,০০০ মন্তব্য বিশ্লেষণ করে র্যাপলার দেখতে পেয়েছে, প্রতিটি সমর্থনসূচক মন্তব্যের বিপরীতে আক্রমণাত্মক মন্তব্য ছিল ১৪টি। র্যাপলার ওয়েবসাইটও অনেকবার ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডস) হামলা ঠেকিয়েছে।
সাইবার মানহানিও সংবাদ সাইট দমনে ব্যবহৃত হয় এবং এই কাজে প্রেসিডেন্ট দুতার্তের কুখ্যাত সমর্থকেরা রীতিমত সিদ্ধহস্ত। ২০২০ সালে একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ীর কর্মকাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট করেছিল র্যাপলার। পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে মারিয়া রেসাকে সাইবার মানহানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌনকর্মী পাচারজনিত অপরাধের জন্য প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা অ্যাপোলো কিবোলোয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ নিয়ে রিপোর্টের কারণে, এবছর এই উপদেষ্টা ও তাঁর সহযোগীরা র্যাপলারের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ২০টিরও বেশি অভিযোগ এনেছে। সাইবার আইনে দায়ের করা মামলার স্রোতে র্যাপলারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং তাদের রিপোর্টিংয়ে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
স্পাইওয়্যার ও নজরদারি
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে সম্প্রতি সবচেয়ে বড় পতনের শিকার দেশগুলোর অন্যতম এল সালভাদর। ২০১৩ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ৩৮। সেটি এবছর নেমেছে ১১২-তে। এখন দেশটির স্বাধীন গণমাধ্যম ব্যাপক হামলা ও হুমকির শিকার হচ্ছে। কিন্তু সমর্থন ও নিরাপত্তা প্রদানের পরিবর্তে সরকারকে বরং প্রায়ই নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। যে সাংবাদিকেরা দুর্নীতি বা সরকারি তহবিল নিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন তাঁরা নিয়মিত সরকারি কর্মকর্তাদের হেনস্তা ও হুমকির মুখে থাকেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে যে সাংবাদিকদের সমালোচক বলে মনে করেন, মৌখিক হুমকির মাধ্যমে তাদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেন। অনেক সাংবাদিককে সামাজিক মাধ্যমে ব্লক করা হয় এবং তাদেরকে জনগণের শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
জঘন্য হামলাগুলোর একটি ছিলো কমপক্ষে ৩৫ সালভাদোরান সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করতে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ব্যবহার। তাঁদের ২২জনই শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল সংবাদ সাইট এল ফারোতে কাজ করতেন। রিপোর্টিংয়ের জন্য এল ফারো দফায় দফায় সরকারের আক্রমণের শিকার হয়েছে। নানা ধরনের নিরীক্ষা আপত্তি, মুদ্রা পাচার – এমন অনেক মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব হামলার বেশিরভাগই ছিল মারা সালভাটরুচার অপরাধী চক্রের সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাত উন্মোচনের প্রত্যুত্তরে। এল ফারোর প্রধান সম্পাদক অস্কার মার্টিনেজের ফোনে ৪২বার অনুপ্রবেশ করা হয়েছিল, আর অনুসন্ধানী সাংবাদিক কার্লোস মার্টিনেজ বলেছেন, হ্যাকাররা ২৬৯ দিন ধরে তার ফোনে ছিল। সালভাদোরান গণমাধ্যম ও অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের দাবি, এই হামলার পেছনে সরকারের হাত আছে, যদিও সরকারি কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করেছেন। আইনপ্রণেতারা ফৌজদারি আইনও সংস্কার করেছে, যা আরও জোরালোভাবে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরবে এবং অপরাধী গোষ্ঠীদের নিয়ে নির্দিষ্ট ধরনের রিপোর্টিংকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করবে।
পাঠকের মন্তব্যের জেরে ১২৪০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা
২০১৮ সালের নির্বাচনে মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোট যখন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তখন মনে হচ্ছিল, দেশটি স্বাধীন হওয়ার ৬০ বছর পরে এসে হয়ত এই প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে সাবেক ক্ষমতাসীন জোট ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর থেকে পরিস্থিতি উল্টো দিকে গড়াতে শুরু করেছে।
২০১৮ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের পুরোভাগে ছিল মালয়েশিয়াকিনি। ডিজিটাল উদ্ভাবনে স্বকীয় এই গণমাধ্যম গত ২০ বছরে দেশটির রাজনৈতিক ভাষ্য ও সংবাদের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। ভোটের লড়াই ও গণনা নিয়ে তাদের ভারসাম্যপূর্ণ কাভারেজ এই নির্বাচনের স্বচ্ছ্বতা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সম্ভবত, একারণেই সাবেক শাসক দল ফিরে আসার পর থেকে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি এত বেশি মামলা ও হেনস্তার শিকার হয়েছে।
২০২১ সালে, পাঠকের করা মন্তব্যের জের ধরে আদালত অবমাননার মামলা হয় মালয়েশিয়াকিনির বিরুদ্ধে। বিচারে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়, কারণ বিচার বিভাগের কাছে মনে হয়েছিল পাঠকের মন্তব্যগুলো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। যে পাঁচটি মন্তব্যের জেরে মামলাটি হয়েছিল, তাতে সাবেক মূখ্য মন্ত্রীদের বেকসুর খালাস দেওয়া এবং আদালত ও বিচার ব্যবস্থার কার্যকরিতা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন পাঠকেরা। দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্র মালয়েশিয়াকিনি তাদের সংবাদ সাইট থেকে মন্তব্যগুলো সরিয়ে নেয়। তবে আদালতের রায়ে বলা হয়, সংবাদ পোর্টালটির উচিত ছিল মন্তব্য যাচাই করা। তাদেরকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঁচ লাখ রিঙ্গিত (১ লাখ ২৪ হাজার মার্কিন ডলার) জরিমানা দিতে বলা হয়। কথিত ডিজিটাল অপরাধের দায়ে ভয়াবহ জরিমানার মুখে দাঁড়িয়ে মালয়েশিয়াকিনি সমস্যার সমাধান খুঁজেছে ইন্টারনেটেই। গণমাধ্যমটি এই জরিমানার অর্থ সংগ্রহের জন্য পাঠকদের সহায়তা চায় এবং অবিশ্বাস্যভাবে, ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে পাঁচ ঘন্টারও কম সময়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
গণমাধ্যমের সামজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টের কণ্ঠরোধ
ইথিওপিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসেন ২০১৮ সালে। এরপর নবগঠিত সরকার কারারুদ্ধ সাংবাদিক ও ব্লগারদের মুক্তি প্রদান করে এবং বছরের পর বছর বন্ধ থাকা ২০০টিরও বেশি সংবাদ সাইট ও ব্লগ খুলে দেয়। ফলে, সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে এই প্রথমবারের মতো দেশটিতে স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্র উন্মুক্ত হতে শুরু করে।
তবে ২০২০ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া টাইগ্রে যুদ্ধ অনেক দমনমূলক নীতি ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে সাংবাদিক গ্রেফতার, গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিহিংসামূলক ভাষা প্রয়োগ, এবং সেল্ফ সেন্সরশিপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধপ্রবণ এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ করাসহ রিপোর্টিংয়ের ওপর প্রায়োগিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মূলধারার চ্যানেলগুলো যখন এমন সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে, তখন পাঠক-সম্পৃক্তির জন্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সামাজিক মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়; শুধু তথ্য জানানো নয়, বিতর্কের একটি জায়গা তৈরির জন্যেও। তবে, এই বাড়তি কাজ প্রতিকূল শক্তির অবাঞ্ছিত দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
সম্প্রতি দেশটির স্বাধীন সংবাদপত্র আদ্দিস মালেদা ও তাদের একটি সাময়িকী হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তাদের ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন নিয়ন্ত্রণ, হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ব্যক্তিগত একাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর হ্যাকাররা ইচ্ছাকৃতভাবে সেখান থেকে এমন কন্টেন্ট পোস্ট করে, যা ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড পরিপন্থী। এর জের ধরে আদ্দিস মালেদার অ্যাকাউন্ট দু’মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। নাইরোবি ও ডাবলিনে ফেসবুকের পলিসি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্টটির নিয়ন্ত্রণে ফিরে পেতে এবং পুনরায় চালু করতে সংবাদপত্রটির সঙ্গে কাজ করেছে এমডিআইএফ। তবে এটি বেশ দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট কত সহজে ছিনতাই হতে পারে, এই ঘটনা শুধু সেটিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় না, বরং একটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানির প্রতিক্রিয়া কতটা অপর্যাপ্ত হতে পারে, তাও তুলে ধরে।
সরকারের প্রয়োজন সমাধানের অংশীদার হওয়া, সমস্যার নয়
এটা ঠিক যে স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য আরও বেশি বৈশ্বিক দর্শকশ্রোতার কাছে সংবাদ ও তথ্য পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছে ডিজিটালাইজেশন। কিন্তু এটি তাদের কিছু দুর্বলতাও সামনে নিয়ে এসেছে, যার সুযোগ প্রতিপক্ষও নিতে পারে। ডিজিটাল হামলার মাধ্যমে সরকার প্রায়ই গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অথচ তাদের উচিত ছিল অনলাইন সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা বিধানে স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করা এবং কার্যকরভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা ও উৎসাহ দেয়া। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে; তাদের স্বাধীন গণমাধ্যমের একাউন্টগুলোকে আরও নিরাপত্তা দেওয়া উচিত এবং ছিনতাই হওয়া অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে আরও দ্রুত, আরও সক্রিয় এবং স্বচ্ছ্ব পদ্ধতি গড়ে তোলা উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সরকার ও বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে সচেতন না হলে, গণমাধ্যমের ওপর ডিজিটাল হামলা কেবলই বাড়বে।
এই পোস্ট প্রথম প্রকাশিত হয় মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ওয়েবসাইটে। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
আরও পড়ুন
টিপস টু আনকভার দ্য স্পাই টেক ইওর গভর্নমেন্ট বাই
হামলা ও নিপীড়নের শিকার সাংবাদিকদের থেকে যা শেখার আছে
মুক্ত, সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের জন্য মানুষকে সংবাদ, তথ্য ও বিতর্কের ক্ষেত্র যোগান দেয় যেসব স্বাধীন গণমাধ্যম, বিশ্বজুড়ে তাদের উন্নয়নে বিনিয়োগ করে মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড।