Data Training Faculty of Communication New Media and Communication Izmir University of Economics
ছোট নিউজরুমে ডেটা ব্যবহার
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
ছোট নিউজরুমকেও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ডেটা ব্যবহারের ওপর। যদিও এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই তারা নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। যেমন, তহবিলের অভাব, সীমিত মানব সম্পদ, আর প্রচলিত সাংবাদিকতা সম্পর্কে পুরানো ধ্যান-ধারণা।
আর ডেটা নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে সময় বাঁচিয়ে দিতে পারে জেনারেটিভ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)। যা ছোট নিউজরুমকে ডেটা নিয়ে দ্রুত কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি কার্যকারিতাও বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই জায়গায় খানিকটা শঙ্কাও আছে। তবে পরিসংখ্যানগত শুদ্ধতা নিশ্চিত করা, দ্রুত ডেটা বাছাই এবং সময় নষ্ট না করে কোড লেখার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে বড়, মাঝারি এবং এমনকি ছোট নিউজরুমও জটিল রিপোর্টিং প্রকল্প নিতে পারে অনায়াসেই।
(আপনার সংবাদ সংগ্রহে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে আরও জানতে, এআই এবং সাংবাদিকতা সম্পর্কিত প্যারিস চার্টার দেখুন, জিআইজিএন যার সহযোগী)
এক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করাটা ভাল: ছোট নিউজরুম কীভাবে এ থেকে উপকৃত হতে পারে? এই নতুন টুল কী সব ধরনের ডেটা নিয়ে কাজ করতে পারে? টুলগুলোতে কি সব ধরনের ডেটা ব্যবহার করা যাবে?
ছোট নিউজরুম কীভাবে কাজ শুরু করতে পারে?
নিচে কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে এ বিষয়ক পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে
- ছোট নিউজরুমের জন্য ডেটা সাংবাদিকতা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- ছোট দলে ডেটা বিশ্লেষণের সুবিধাগুলো কি কি?
- সীমিত বাজেট আর স্বল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে কিভাবে আপনি ডেটা সাংবাদিকতার প্রভাবশালী প্রকল্প বাছাই করতে পারেন?
- ছোট নিউজরুমের জন্য কি ধরনের ডেটা প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং ফ্রি অনলাইন কোর্স (মকস) উপযোগী হতে পারে?
- ডেটা নিয়ে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারদর্শী ছোট নিউজরুম কিভাবে গঠন করবেন?
- ছোট নিউজরুম কি ধরনের ডেটা টুল ব্যবহার করতে পারে (কম বা বিনা খরচে)?
- নিউজরুমের জন্য ভালো ওপেন ডেটা সোর্সের উৎস কি?
- সম্প্রতি সিগমা অ্যাওয়ার্ড জিতেছে এমন ছোট আকারের নিউজরুমের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
- ডেটা-নির্ভর সিদ্ধান্ত কিভাবে নিউজরুমের জনবলকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেয়?
ছোট নিউজরুমের জন্য ডেটা সাংবাদিকতা কেন গুরুত্বপূর্ণ? ছোট দলে নিউজ-ডেটা বিশ্লেষণের সুবিধাগুলোই বা কি কি?
ছোট নিউজরুমের উচিৎ ডেটার ব্যবহার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করা। এছাড়া ডেটানির্ভর সংবাদ তৈরিতে বিনিয়োগও বাড়ানো দরকার। কারণ তা নির্ভুল সাংবাদিকতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ ও আস্থা অর্জনের বড় ধরনের সুযোগ করে দেয়।
একদিকে যেমন ডেটার ব্যবহার ছোট নিউজরুমকে আরও নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য, বিশদ ও দ্রুত সংবাদ সরবরাহ করতে সাহায্য করে, তেমনি এ ধরনের সাংবাদিকতা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের পাশাপাশি তাদের আগ্রহও বাড়িয়ে তোলে।
তা ছাড়া রিয়েল-টাইম ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দ্রুত ভুল তথ্য শনাক্ত ও তা সংশোধন করা সম্ভব হয়। যা সংবাদকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরতেও সাহায্য করে।
বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা নিয়ে তা বিশ্লেষণ করে পাঠকের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে আরও গভীর ও বিস্তারিত প্রেক্ষিত তৈরি করা সম্ভব।
তাছাড়া বিস্তারিত ডেটা বিশ্লেষণ নিউজরুমের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। পাঠকদের দৃষ্টি আর্কষণের মাধ্যমে আগ্রহ বৃদ্ধি করে।
বিশেষ করে, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন অনেক জটিল বিষয়কে পাঠকের কাছে সহজে তুলে ধরতে সাহায্য করতে পারে। সাহায্য করতে পারে ভবিষ্যত প্রবণতা সম্পর্কিত পূর্বাভাস দিয়েও।
ডেটা-নির্ভর সংবাদ পরিবেশন ও উপস্থাপনের মাধ্যমে নিউজরুমগুলো তাদের সক্ষমতাকে আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে।
সীমিত বাজেট আর স্বল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে আপনি কিভাবে শক্তিশালী ডেটা সাংবাদিকতা নির্ভর প্রকল্প তৈরি করতে পারেন?
মনে রাখবেন, সংযোগই মূল চাবিকাঠি। তাই সবসময় আলাপ-আলোচনা চালাতে থাকুন, এবং কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা জানান। যোগাযোগ বা সংযোগ নেই মানে, ডেটানির্ভর ভালো গল্পও নেই!
আপনার ভূমিকা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহল হোন, এবং ডেটা পাইপলাইনের ধাপগুলো অনুসরণ করুন: বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা সংগ্রহ, ডেটা রূপান্তর (সাধারণত ডিজিটাল থেকে কাগজে), ডেটা বাছাই, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং সবশেষে প্রতিবেদন তৈরি।
ডেটা সম্পর্কিত তথ্য ভাগাভাগি ও তা বিন্যস্ত করা (ডেটা, ফাইল, নোট, ইত্যাদি) অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
ক্যালেন্ডার দেখে নয়, প্রকল্পের কথা বিবেচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
মেটাডেটা সম্পর্কে জানুন। যা ডেটাসেট সম্পর্কে ধারণা দেয়ার পাশাপাশি কাজকে সহজ করে তোলে। অপরিচিত শব্দের জন্যে ডেটা অভিধান তৈরি করতে পারেন। ডেটাসেটগুলো কীভাবে কাজে লাগাবেন বা তা থেকে কী ধরনের তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে— আপনার যদি এ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে তবে তা আপনার কাজের সময় বাঁচিয়ে দিবে। এটাই হচ্ছে মেটাডেটার শক্তি!
নোট নিন ও নিয়মিত রেকর্ড রাখুন। সময় বাঁচানোর জন্য আপনি যা কিছু করেন তা নথিভুক্ত করুন এবং প্রকল্পের জন্য আপনি যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন সে সম্পর্কে আপনার বার্তাকক্ষকেও ভাবতে বাধ্য করুন। এছাড়া, নিয়মিত অপরিশোধিত ডেটা সংরক্ষণ করাটা আপনার প্রকল্পের জন্য ফলপ্রসু হবে।
নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার চেষ্টা করুন। এক্সেল এবং একই রকম টুল ব্যবহার করা এখন মামুলি ব্যাপার। তবে ‘আর’ (R) বা পাইথনের (Python)-এর মতো প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার বিষয়টিও আপনার পরিকল্পনায় থাকা উচিত। এর সঙ্গে সমর্থক টুল হিসেবে বার্তাকক্ষে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)-কে নিয়ে আসা উচিত।
কাজ করুন ডেটা স্টোরি ফ্লোচার্ট নিয়ে। এতে উন্নত সংস্করণ বা পরিবর্ধন যোগ করা যেতে পারে। যদি মনে করেন কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে তাহলে, আগের ফ্লোচার্টের ওপর ভিত্তি করেও কাজ করতে পারেন।
এ পর্যায়ে একটি দারুণ কেস স্টাডির কথা তুলে ধরছি :
অরটাকের তিনব্যক্তির একটি ডেটা দল মিলে বানিয়েছে টার্কি: আ গোল্ড মাইন অব ট্রলস। চলমান এই অনুসন্ধানী সিরিজটি এক্সের (আগের টুইটার) কমপক্ষে ১৮১টি অ্যাকাউন্টের সমন্বয়ে গঠিত একটি ট্রল নেটওয়ার্ক দলের তথ্য উন্মোচন করেছে। পাশাপাশি বিশ্লেষণ করেছে টাইমলাইন, লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য উদ্দেশ্যগুলোও। অনুসন্ধানী দলটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে তাদের তৈরি সব ডেটাসেট।
যে সব বার্তাকক্ষ স্বল্প বাজেট ও কর্মীদল দিয়ে ডেটা সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তারা ধাপে ধাপে এভাবে অগ্রসর হওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
- প্রয়োজন বিশ্লেষণ।
- ডেটার উৎস শনাক্ত (ফ্রি ওপেন ডেটা প্ল্যাটফর্মসহ)।
- ছোট হলেও একটি ডেটা দল গঠন করুন। (যেমন, দুজন ব্যক্তি— যাদের এ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা আছে এবং অন্য দুজন ব্যক্তি— যারা মৌলিক ডেটা বিশ্লেষণ টুল সম্পর্কে ওয়াকিবল।)
- আপনার দলকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিন (ওএসআইএনটি (OSIN), এআই (AI), মক (MOOC)। এছাড়া বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে অভ্যন্তরীণ কর্মীদলকেও প্রশিক্ষিত করুন।)
- ডেটা প্রকল্পগুলো কী হবে তা নির্ধারণ করুন (সুনির্দিষ্ট ব্যাপ্তি ও পরিসীমাসহ জনস্বার্থ সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো বাছাই করুন)।
- তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণে মনোযোগী হন (প্রযুক্তি নির্ভর বিষয়গুলো জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে সম্পাদনের মাধ্যমে আপনি সাংবাদিকতার অংশগুলোতে বেশি সময় ও জোর দিতে পারবেন।
- ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন বৈচিত্র্যের দিকে মনোযোগ দিন (কাজ অনুসারে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন করুন)।
- পাঠকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া এবং উন্নত যোগাযোগ স্থাপন করুন (সোশ্যাল মিডিয়া, প্রচারণা ও জরিপের মাধ্যমে তা করতে পারেন।)
- নিয়মিতভাবে পাঠকের প্রতিক্রিয়া অনুসরণ করুন। বার্তাকক্ষকে উৎসাহিত করুন ওপেন টুল ব্যবহারে।
- ওপেন সোর্স ডেটা জার্নালিজম টুল ব্যবহার করুন। (এটি ব্যবহার করা সহজ এবং কাস্টমাইজযোগ্য)।
- ওপেন ডেটা সোর্স তালিকা তৈরি করুন (স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক), তথ্যের স্বাধীনতা (ফোয়া) এবং তথ্যের অধিকার (আরটিআই)-এর অনুরোধ জানান।
- স্ট্রাকচার্ড ডেটা সোর্স ব্যবহার করুন যেগুলো বিশ্লেষণ করা সহজ। স্ট্রাকচার্ড ডেটাসেট কখনও কখনও আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রতিবেদনের জন্য আপনার ডেটাসেট আপডেট এবং বিভিন্নভাবে ভাগ করতে গিটহাব (GithHb) ব্যবহার করুন।
এগুলো মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ : প্রতিটি প্রতিবেদনই একটি ডেটানির্ভর গল্প হতে পারে, প্রতিজন সাংবাদিক ডেটা সাংবাদিক হতে পারেন এবং প্রতিটি নিউজরুম ডেটা প্রকল্প তৈরি করতে পারে।
ছোট নিউজরুমের জন্য উপযোগী হতে পারে কি ধরনের ডেটা প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও মুক?
- সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের জন্য ডেটা প্রশিক্ষণ।
- বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। দৈনিক খবরের ক্ষেত্রে ডেটা সাংবাদিকতাকে খানিকটা কঠিন বলে মনে করতে পারেন ছোট বার্তাকক্ষের প্রতিবেদকেরা। এ কারণে, তারা বাইরের সোর্স থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন, বা প্রশিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। ছোট বার্তাকক্ষের ডেটা বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, বিভিন্ন ধরণের ডেটা প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ এবং ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স বা মক (MOOCs) রয়েছে, যা কাজে লাগতে পারে।
- ওয়েব থেকে আকর্ষণীয় নতুন কনটেন্টের জন্য অনলাইন অ্যালার্ট ব্যবহার করুন।
- কাজ করুন স্থানীয় ডেটা ট্র্যাকারদের সঙ্গে। স্থানীয় সিটিজেন ডেটা রিপোর্টার নেটওয়ার্ক তৈরি করার কথা বিবেচনা করুন।
কিভাবে আপনি একটি ছোট বার্তাকক্ষ গঠন করবেন? দলটি দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে কার্যকর ডেটা নিয়ে কাজ করতে পারে?
- ডেটা প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে প্রস্তুতি নিন।
- ডেটা নিয়ে কাজ করার জন্য আপনার পছন্দের ফাইল ও সাইট ব্যবহার করুন।
- যোগাযোগ তালিকা তৈরি করুন (তালিকাটি সব সময় হালনাগাদ করবেন)।
- আপনার অবসর সময়ে ডেটাবেস ব্যবহারের অনুশীলন করতে থাকুন।
- আপনার দলের সদস্যদের চর্চা, অনুশীলন এবং সময়সীমা বেধে দিন।
- আপনি যখন ডেটা প্রকল্পের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির কাজ করবেন, তখন বিশেষ ডেটাবেস ফাইল রাখুন।
- প্রায়ই ডেটাবেস ব্যবহার করুন এবং তাদের হালনাগাদ করুন।
- নিজেকে “অন্যরকম কিছু” খুঁজতে বাধ্য করুন বা নতুন উপায়ে ডেটা অনুসন্ধান পদ্ধতি শেখার জন্য চাপ দিন।
- একটি দল-ভিত্তিক পদ্ধতি আবিষ্কার করুন যা থেকে সবাই উপকৃত হবে।
ডেটা ব্যবহারের মাধ্যমে একটি আকর্ষণীয় গল্প বলার সিদ্ধান্ত নেয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ।
ছোট বার্তাকক্ষ কোন ধরনের ডেটা টুল ব্যবহার করতে পারে (কম বা বিনা খরচে)?
ছোট নিউজরুমগুলো প্রায়ই ডেটা নির্ভর সংবাদ তৈরির জন্য সহজ প্রাপ্য ও ব্যবহারযোগ্য টুল ব্যবহার করে। তবে সম্পাদকীয় স্বাধীনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ— আপনার টুলগুলোর সোর্স (ওপেন সোর্স সংস্করণগুলো অগ্রাধিকারযোগ্য) – এবং ডেটা সাংবাদিকতার নৈতিক কাঠামো বিবেচনা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। ছোট বার্তাকক্ষের জন্য এখানে সহজ কিছু ডেটা টুলের কথা উল্লেখ করা হলো।
- ভয়েন্ট টুলস (Voyant Tools) :ডিজিটাল টেক্সেটেরর জন্য ওয়েব-ভিত্তিক পঠন এবং বিশ্লেষণ টুল।
- মাইক্রোসফট এক্সল বা গুগল শিট : প্রায় প্রতিটি কম্পিউটারে স্প্রেডশিট সফটওয়্যার পাওয়া যায়, যা ডেটা বিশ্লেষণ, যাচাই এবং সহজ ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য আদর্শ। এ টুলগুলো ডেটা নির্ভর প্রকল্পের জন্য দুর্দান্ত সূচনা হতে পারে।
- জিপিটি এক্সেল: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সমর্থিত অ্যাড-অন এবং টুলগুলো আরো উন্নত ও বিকশিত করা হয়েছে।
- ওপেনরিফাইন: ওপেন সোর্স টুল যা ডেটা বাছাই এবং সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো জটিল ডেটা সেট বিন্যাস ও যাচাইয়ের জন্য আদর্শ।
- ট্যাবুলা: ওপেন সোর্স ডেটা জার্নালিজম টুল, যা পিডিএফ ফাইল থেকে ডেটা স্ক্র্যাপ করতে সাহায্য করে।
- আর (R): পরিসংখ্যানগত কম্পিউটিং ও ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন করার প্রোগ্রামিং ভাষা। ডেটা মাইনিং, বায়োইনফরমেটিক্স এবং ডেটা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও ’আর’ ব্যবহার করা হচ্ছে।
- পাইথন: আরেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা যা আপনাকে দ্রুত কাজ করতে এবং পদ্ধতিগুলোকে আরও কার্যকরভাবে সংহত করতে দেয়।
- ডেটার্যাপার: এ টুলটি আপনাকে ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেসের জন্য ইন্টারেক্টিভ গ্রাফ, মানচিত্র এবং ইনফোগ্রাফিক্স তৈরি করতে দেয়। এখানে কোডিং দক্ষতার প্রয়োজন নেই। তবে টুলটি প্রতিবেদনে ভিজ্যুয়াল বর্ণনাকে শক্তিশালী করতে পারে। ডেটার্যাপার রিভার (Datawrapper River) বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে।
- ফ্লোরিশ: এটি ইন্টার্যাক্টিভ ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরির প্ল্যাটফর্ম। এর সহজ ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেস এবং সমৃদ্ধ ছবির সংগ্রহ দিয়ে আপনি আপনার ডেটা-চালিত সংবাদের ভিজ্যুয়াল বর্ণনাকে শক্তিশালী করতে পারেন। নিউজরুমের জন্য ফ্লোরিশ ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
- ট্যাবলেউ পাবলিক: একটি প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহারকারীদের ডেটা বিশ্লেষণ করতে এবং ইন্টার্যাক্টিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করতে দেয়। এর বিনামূল্যের সংস্করণ ছোট নিউজরুমের জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী বিকল্প।
- ট্রেলো বা এয়ারটেবল: এ ধরনের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল আপনার ডেটা-চালিত প্রকল্পগুলোর সংগঠন এবং কর্মপ্রবাহকে স্ট্রিমলাইন করতে পারে। এটি দিয়ে ডেটাসেট নিয়ন্ত্রণ, বণ্টন ও কাজের গতিবিধি অনুসরণ করা যেতে পারে।
এ টুলগুলো ছোট নিউজরুমকে ডেটা নির্ভর প্রকল্প নিয়ে দক্ষভাবে কাজ করতে সাহায্য করতে পারে। তবে কোন টুলটি ব্যবহার করাটা সর্বোত্তম তা নিউজরুমের প্রয়োজন, দক্ষতা ও বাজেটের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
নিউজরুমের জন্য ভাল উন্মুক্ত ডেটা উৎস কোথায় পাবেন?
- সরকারী সংস্থা: অফিসিয়াল সরকারী সাইটগুলো অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে উন্মুক্ত ডেটা প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেটাডটগভ (data.gov), যুক্তরাজ্যের ডেটাডটগভডটইউকে (data.gov.uk)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, আবহাওয়া, অর্থনীতিসহ অন্যান্য অনেক বিষয়ে পরিসংখ্যানগত তথ্যের একটি বিশাল ভাণ্ডার ।
- আন্তর্জাতিক সংস্থা: জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সংস্থা বিভিন্ন বিষয়ে উন্মুক্ত ডেটা প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন, মানবাধিকার, পরিবেশ, অর্থনীতি এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর তৈরি আন্তর্জাতিক ডেটাসেট রয়েছে।
- শহর এবং পৌরসভা: অনেক দেশের স্থানীয় সরকার ওপেন ডেটা প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। যেখানে যানজট, পানির ব্যবহার, নগর রূপান্তর প্রকল্প, সবুজ পরিসর এবং অনুরূপ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য থাকতে পারে। যেমন: ইস্তানবুলের পৌর সরকারের ওয়েবসাইট, আইএমএম ওপেন ডেটা পোর্টাল (নিচের স্ক্রিনশট ভিডিও দেখুন)
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন একাডেমিক উন্মুক্ত ডেটাসেটের যোগান দেয়। যে ডেটা সামাজিক বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- মিডিয়া : কিছু কিছু মিডিয়া খোলাখুলিভাবে সংবাদ অভিলেখাগার (আর্কাইভ), রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণার ডেটা, নির্বাচনের ফলাফল এবং অন্যান্য সংবাদ-ভিত্তিক ডেটা সেট সংরক্ষণ করে। যেমন বিয়ানেট এবং প্রোপাবলিকা।
- এনজিও: বেসরকারী সংস্থাগুলো প্রকাশ্যভাবে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত ডেটাসেট সবার জন্য তুলে ধরতে পারে। যেখানে আপনি মানবাধিকার লঙ্ঘন, পরিবেশ দূষণ, অভিবাসন, শ্রম অধিকার, বৈষম্য এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারেন। এখানে নারীহত্যা এবং বার্ধক্য ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যের কিছু উদাহরণ রয়েছে।
- গবেষণা প্রতিষ্ঠান: বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও ফাউন্ডেশনগুলো নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরভাবে গবেষণা পরিচালনা করে এবং তাদের কাজের ফলাফল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারে। তাদের এসব ডেটাসেটে অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, ফৌজদারি বিচার, শিক্ষা এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্র সম্পর্কিত তথ্য থাকতে পারে।
উপরের সূত্রগুলো ডেটা রিপোর্টিংয়ে সহায়ক হতে পারে। তবে ডেটার সঠিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি ডেটা উৎসের নতুনত্ব, নির্ভরযোগ্যতা এবং নির্ভুলতাকে সবসময় বিবেচনায় নিতে হবে।
ইস্তানবুলের পৌর সরকারের উন্মুক্ত ডেটা পোর্টাল (নিচে) অফিসিয়াল ডেটাসেট সরবরাহ করে।
সাম্প্রতিক সিগমা পুরষ্কার জিতেছে এমন ছোট পরিসরের নিউজরুমের কেস স্টাডি থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
সিগমা এমন একটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার কর্মসূচী, যা ডেটা সাংবাদিকতায় শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে। ডেটা বিশ্লেষণ, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডেটা নির্ভর গল্প তুলে ধরেছে এমন প্রতিবেদন তৈরির নেপথ্যে বিভিন্ন বিভাগের সেরা অনুশীলন ও উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দেয়।
এটি ডেটানির্ভর প্রতিবেদন তৈরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেও পুরস্কৃত করে এবং এ ধরনের কাজকে উৎসাহিত করে। সিগমা পুরষ্কারপ্রাপ্ত প্রতিবেদনের রাউন্ড-আপ ডেটাবেস-এ চোখ বুলিয়ে দেখুন, যেখানে বিগত চার বছরে জমা দেওয়া ২ হাজার ২০০টি প্রকল্পের তথ্য রয়েছে। এখানে বাজেট, কর্মী, পদ্ধতি, সময়কাল, বিষয়, বিষয়বস্তু ইত্যাদির বিবরণ রয়েছে। যা থেকে আপনি অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
দৈনন্দিন সংবাদের ক্রমবর্ধমান অবিচ্ছেদ্য অংশ ডেটা সাংবাদিকতা। ছোট নিউজরুমগুলোর পক্ষেও যেটিকে আর আগ্রহ্য করা সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে ছোট নিউজরুমে ডেটানির্ভর সংবাদ তৈরি করতে হবে। যা বর্তমানের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জনসাধারণের বোঝাপড়াকে গভীর করে, জটিল বিষয়গুলোকে সহজ করে তুলে ধরে এবং গল্প বলার পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করে। আমাদের উল্লিখিত টুল ও পরামর্শগুলো আপনার ডেটা সাংবাদিকতার পথকে সহজ ও সাশ্রয়ী করবে বলে আমরা মনে করি।
লেখাটি পিনার দাগের ইউজিং ডেটা ইন স্মল নিউজরুম উপস্থাপনা থেকে নেয়া হয়েছে।
পিনার দাগ জিআইজেএন তুর্কি সম্পাদক ও কাদির হাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক। তিনি ডেটা লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশন, ডেটা জার্নালিজম প্ল্যাটফর্ম তুরস্ক এবং দাগমিডিয়ার সহ–প্রতিষ্ঠাতা। ডেটা সাক্ষরতা, ওপেন ডেটা, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডেটা সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া তিনি সিগমা ডেটা জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ডের জুরি বোর্ডের সদস্য।