

অগ্নিকাণ্ড থেকে দাসপ্রথা কিংবা ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ নিয়ে অনুসন্ধান—জিআইজেএনের সিগমা অ্যাওয়ার্ডস জয়ী দশ প্রতিবেদন
বিশ্বের ডেটা সাংবাদিকতার সেরা কাজগুলোকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিবছর দেওয়া হয়—সিগমা অ্যাওয়ার্ডস। নতুন আয়োজক হিসেবে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (জিআইজেএন) ২০২৫ সালের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে।
এ বছর ৮০টি দেশের ৪৯৮টি প্রতিবেদন থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেরা ১০টি ডেটাভিত্তিক সাংবাদিকতা প্রকল্প। এ কাজটি করেছেন ১৭ জন বিচারক। জমা পড়া প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে ছিল ৪৫৭টি একক প্রকল্প এবং ৪১টি একাধিক রিপোর্টের সংকলন। আশার কথা হলো, ছোট সংবাদমাধ্যম থেকে এবার অনেক বেশি প্রতিবেদন জমা পড়েছে । ৩৫ জনেরও কম সাংবাদিক রয়েছে—এমন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেে এসেছে ২৩৮টি প্রতিবেদন।
আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম সিগমা অ্যাওয়ার্ডসের নতুন আয়োজক হিসেবে এবার যুক্ত হয়েছে জিআইজেএন। এখানে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা বিভাগ রাখা হয়নি। লক্ষ্য, সীমাবদ্ধতার বিধি-নিষেধ ছাড়াই অংশগ্রহণকারীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কাজ জমা দিতে পারেন। যা নতুন ধরনের ডেটাভিত্তিক সাংবাদিকতা প্রকল্প জমা দিতে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের উৎসাহিত করে।
বিজয়ী প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ডেটানির্ভর গল্প। যেখানে নৃশংসতা ও এর প্রভাবগুলো উন্মোচিত হয়েছে। যেমন—মেক্সিকোতে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর সহিংসতার ফলে জনজীবনে কী প্রভাব পড়ছে তা বিশ্লেষণ; ইউক্রেনের সঙ্গে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে রাশিয়া কীভাবে বন্দিদের ভাড়াটে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে তা অনুসন্ধান; ইকুয়েডরে অবৈধভাবে জমি কেনাবেচার সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র উন্মোচন; এবং ১৯ শতকে দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার তথ্য ফাঁস।
ওয়েবিনারে যেসব বিষয় ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে, তার অনেকগুলোই অন্যান্য দেশেও প্রয়োগযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের আবাসিক ভবনগুলোতে ব্যবহৃত দাহ্য ক্ল্যাডিংয়ের প্রাণঘাতী ঝুঁকি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মিঠা পানির স্তরের ক্ষয় ও দূষণ, এবং কিছু লোক বা গোষ্ঠী কীভাবে মানুষের আবেগ ও ভয়কে কাজে লাগিয়ে বার্তা আদান-প্রদান অ্যাপের নিউজ চ্যানেলগুলোতে তথ্য বিকৃত করছে।
“প্রতি বছরই সিগমা অ্যাওয়ার্ডে জমা পড়া প্রতিবেদন এবং বিজয়ী প্রকল্পগুলোর গুণগত মান ও উৎকর্ষতা বাড়ছে,” বললেন জিনা চুয়া। তিনি সাংবাদিক অ্যারন পিলহোফারের সঙ্গে এই পুরস্কারের সহ-প্রবর্তক। তিনি আরো বলেন, “এই পুরস্কারের লক্ষ্যই হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ডেটা সাংবাদিকদের মধ্যে আইডিয়া ও প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া। আর এই লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে দেখতে পাওয়ার বিষয়টি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।”
দুটি ধাপে প্রতিবেদনগুলো বাছাই করা হয়। প্রথম ধাপে ২৪টি দেশের ৫০টি প্রকল্পকে শর্টলিস্ট করেন ২২ জন বিচারকের একটি জুরি বোর্ড। এরপর সে তালিকা থেকেই নিপুণ পর্যালোচনার মাধ্যমে পুরস্কার কমিটি ১০টি বিজয়ী প্রকল্প নির্বাচন করে।
প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ডেটা প্রযুক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন সিগমা পুরস্কার কমিটির সদস্যরা। যেগুলোর মধ্যে ছিল মেশিন লার্নিং টুলসের ব্যবহার, থ্রিডি রিকনস্ট্রাকশন ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং কষ্ট করে সংগ্রহ করা বিভিন্ন রেকর্ডের কঠোর বিশ্লেষণ। ভালো গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংখ্যার উপস্থাপন প্রতিবেদনগুলোকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
এই বছরের সিগমা বিজয়ীদের তালিকা (বর্ণানুক্রমিকক্রমে) দেখুন। তাদের অর্জনকে উদযাপন করুন, অনুপ্রাণিত হন।
প্রকল্প বিজয়ীরা:
ফোর্টি একরস অ্যান্ড আ লাই—সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টেগ্রিটি, রিভিল, মাদার জোন্স (ইউএসএ)

এই প্রকল্পটি মার্কিন ইতিহাসের ১৫০ বছর আগের জমি নিয়ে সংঘটিত নির্যাতনের ঘটনাগুলো উদ্ঘাটনের পাশাপাশি প্রকৃত ভুক্তভোগীদের জীবিত বংশধরদের কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা তুলে ধরে। ছবি: স্ক্রিনশট, মাদার জোন্স।
শক্তিশালী এই সিরিজ প্রতিবেদনটি ডেটা সাংবাদিকতা, নতুন জিনতাত্ত্বিক গবেষণা পদ্ধতি এবং ১৯ শতকের নথিপত্র সংগ্রহ ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দাসত্ব থেকে মুক্ত মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এই প্রকল্পে সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টেগ্রিটির সাংবাদিকরা দুই বছর ছয় মাস ধরে ১ হাজার ২৫০ জন মানুষের তথ্য খুঁজে বের করে, যাঁরা সে সময়ে দাস হিসেবে কাজ করেছেন। পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে যাদের জমি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাদের অনেকের কাছ থেকে সেই জমি জোর করে কেড়ে নিয়ে দেওয়া হয় তাদেরই সাবেক শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের হাতে। সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো—এই প্রকল্পে ১০০টি পারিবারিক বংশবৃত্তান্তের ক্রম (family tree) তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে সাংবাদিকরা ওই দাসদের ৪১ জন জীবিত উত্তরাধিকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। তাদের জানান, মুক্তি পাওয়ার পর তাদের পূর্বপুরুষরা এক সময় জমি পেয়েছিলেন।
পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, “এটি মেশিন লার্নিং টুলসের অসাধারণ ব্যবহার। যা গোপন থাকা ইতিহাসের সত্যগুলো উন্মোচন করেছে। আর এমন একটি পাবলিক সার্চ রেপোজিটরি তৈরি করেছে যা থেকে ভবিষ্যতে আরও শত শত গল্প তৈরি হতে পারে এবং যা একটি সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষের অধিকার ও সম্পদ সংরক্ষণের নীতিগুলোকে সামনে নিয়ে আসবে। এটি ইতিহাস সংক্রান্ত নথি ও তথ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সৃজনশীল ও দক্ষ প্রয়োগের একটি দৃষ্টান্তমূলক সাংবাদিকতা প্রকল্প।”
বিল্ডিংস র্যাপড ইন সলিড গ্যাসোলিন— রয়টার্স (স্পেন)

রয়টার্স উন্মোচন করেছে যুক্তরাজ্যের গ্রেনফেল টাওয়ারে ২০১৭ সালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী ভবনের বাইরের স্থাপত্য ক্ল্যাডিং (ক্ষয় বা তাপ থেকে সুরক্ষার জন্য ভবনের বাইরের অংশে দেওয়া ধাতব স্তর)। যা এখনো বিশ্বজুড়ে ব্যবহার হচ্ছে। একই ধরনের আগুন ২০২৪ সালে স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় একটি উচ্চ ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: স্ক্রিনশট, রয়টার্স
এই প্রকল্পটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, ২০১৭ সালের লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ড থেকে আসলে কোনো শিক্ষাই নেওয়া হয়নি। ফলে আবারও মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। এবং এখনো বিশ্বের হাজারো আবাসিক ভবনের জন্য যা হুমকি হয়ে রয়েছে। জটিল এ বিষয়টি ব্যাখ্যার জন্য ডেটা ও গ্রাফিক্স ব্যবহারের একটি অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে রয়টার্সের দলটি দেখিয়েছে একটি উচ্চ ভবনে দাহ্য প্যানেলের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর কীভাবে তা ১০ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।
ভবন তৈরির উপকরণগুলো কোথা থেকে এসেছে এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জড়িত অনুসন্ধানী দলটি তা খুঁজে দেখেছে। পর্যালোচনা করেছে অগ্নিকাণ্ড ও বিধিমালাসংক্রান্ত প্রতিবেদন। এমনকি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা পরীক্ষাও চালিয়েছে তাঁরা। বিশেষ করে, নতুন ধরনের স্ক্রল-নির্ভর ভিডিও অ্যানিমেশন ও থ্রিডি চিত্র ব্যবহার করে প্রতিবেদনটিকে আরো আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সিগমা অ্যাওয়ার্ডস প্যানেল মন্তব্য করেছে: “এই অনুসন্ধানটি গভীরভাবে দেখিয়েছে যে, দাহ্য ক্ল্যাডিং কীভাবে ভ্যালেন্সিয়ার উচ্চ ভবনের আগুনে ঘি ঢেলেছে। গ্রেনফেল দূর্ঘটনার পরও কীভাবে বিশ্বজুড়ে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দক্ষভাবে ও নিপুণতার সঙ্গে গল্প বলার কৌশল, শক্তিশালী গবেষণা এবং জটিল ও কারিগরি বিষয়গুলো তুলে ধরে চমৎকার ভিজ্যুয়ালের ব্যবহারের জন্য প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে আলাদা হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক দলটি অগ্নি-নিরাপত্তার মতো জটিল বিষয়কে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরেছে। যার বাস্তব প্রভাব বিদ্যমান। এটি ডেটা সাংবাদিকতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ—যেখানে সব মানদণ্ড পূরণ হয়েছে।”
ক্যারোসেল অব ইমোশনস—টেক্সটি (ইউক্রেন)

ইউক্রেনের শীর্ষ ১০০টি টেলিগ্রাম চ্যানেলের পোস্টে আবেগপ্রবণ ভাষা ব্যবহারের হার বিশ্লেষণ করে টেক্সটি দেখতে পায় যে, এর মধ্যে দুই ডজনেরও বেশি চ্যানেল বেশিরভাগ সময়ই ভুল তথ্য বা উত্তেজক ভাষা ছড়িয়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট, টেক্সটি.ওআরজি.ইউএ
ইউক্রেনের টেলিগ্রাম ম্যাসেজিং অ্যাপ নিয়ে আগে যেসব অনুসন্ধান হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই রুশ প্রচারণা বা ভুয়া কনটেন্ট নিয়ে করা। কিন্তু ছয় মাসব্যাপী এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুঁজে দেখা হয়েছে যে, দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো কীভাবে সূক্ষ্ম কৌশল ব্যবহার করে লোকেদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “আমরা ভাষার গঠন বিশ্লেষণ করেছি এবং কৌশলগুলো চিহ্নিত করেছি। এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করে একটি বার্তাকে আরও আবেগপূর্ণ করে তোলা হয়। ফলে পাঠকের মনোযোগ সত্য ঘটনা ও প্রমাণ থেকে সরে যায়।”
সিগমা প্যানেলের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়: “আধুনিক মিডিয়ায় ব্যবহৃত বিভ্রান্তিকর কৌশল নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য বিচারকরা সাংবাদিক দলটির ভূয়াসী প্রশংসা করেছেন। ইউক্রেনসহ অন্যান্য দেশে টেলিগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র হলেও, এখানে প্রায়ই নিউজরুমের মান ও নৈতিকতার ঘাটতি চোখে পড়ে। এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানী দলটি কঠিন একটি একাডেমিক প্রকল্পকে সহজবোধ্য, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”
ইউক্রেনের বেশিরভাগ মানুষের খবরের প্রধান উৎস—এমন সর্বাধিক জনপ্রিয় ১০০টি চ্যানেল পর্যালোচনা করে টেক্সটি দেখতে পায়, এর মধ্যে তিনটি চ্যানেলে কনটেন্ট বিকৃতির হার ছিল রীতিমতো ৯৬ শতাংশ বা তারও বেশি। আর বাকি চ্যানেলগুলোর ক্ষেত্রে এই হার ছিল ২ শতাংশ থেকে ৯১ শতাংশের মধ্যে। অনুসন্ধানী দলটি তথ্য বিকৃতির ১০টি কৌশল চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে “লোডেড ল্যাঙ্গুয়েজ” (আবেগপ্রবণ বা পক্ষপাতদুষ্ট ভাষা / উত্তেজক শব্দচয়ন) ব্যবহার, ভয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত করা এবং সন্দেহ ছড়ানো অন্যতম।
“বিচারকেরা প্রশংসা করেছেন যে, একজন প্রযুক্তিপ্রেমীর দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকল্পে ওপেন সোর্স মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া খুব স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে কেন শুধু তৈরি মডেল ব্যবহার না করে নির্দিষ্ট কাজের জন্য আলাদাভাবে মডেল প্রস্তুত করা জরুরী। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটি কাজ। আর সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক!”
টেরানেক্সাস দুরান: দ্য কানেকশনস বিহাইন্ড ল্যান্ড ট্রাফিকিং ইন ইকুয়েডর’স ড্রাগ ওয়্যারহাউজ)— উনিদাদ দে ইনভেস্তিগাসিওন তিয়েরা দে নাদিয়ে, কনেক্টাস (ইকুয়েডর)

এই প্রকল্পটি দেখিয়েছে মাদক চোরাচালানকারী ও তাদের সহযোগীরা কীভাবে জোরপূর্বক কৌশলের মাধ্যমে ইকুয়েডরের উপকূলীয় শহর দুরানে সরকারি ও ব্যক্তিগত মালিকানার জমিগুলো দখল করে নিচ্ছে। ছবি: স্ক্রিনশট, ইনভেস্টিগেশন দুরান
চক্রের হাতে চলে গেছে ইকুয়েডরের উপকূলীয় শহর দুরানের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ। সাহসী প্রতিবেদন আর শক্তিশালী ডেটা সাংবাদিকতা কৌশল ব্যবহার করে সাংবাদিকদের দলটি ভূমি পাচারের গোপন চক্রের তথ্য উন্মোচন করেছে। এ জন্য অনুসন্ধানী দলটিকে এমন একটি অঞ্চলে যেতে হয়েছে, যেখানে গণমাধ্যমকে দমন করা হয়, সাংবাদিকদের ভয় দেখানো হয় এবং সরকারি নথি জাল করা হয়। সেই কঠিন পরিবেশে টিয়েরা দে নাদিয়ে ও কনেক্টাস দেখাতে পেরেছে কীভাবে অপরাধী গোষ্ঠীগুলো পৌর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে ভয়ভীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে জমি দখল করেছে, ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি দখলে নিয়েছে এবং মাদক পাচারের ঘাঁটি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ শহরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছে। এই প্রতিবেদন তৈরিতে অনেক লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক দলটি ম্যাপিং ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে জমির রেকর্ড ও সরকারি নথি ঘেঁটে জমি কেনাবেচার তথ্য তুলে ধরেছে।
সিগমা পুরস্কার কমিটির মন্তব্য অনুযায়ী: “অত্যন্ত বিপজ্জনক কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় প্রতিবেদনে ডেটা সাংবাদিকতার কৌশল কীভাবে সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়, তার এক অসাধারণ উদাহরণ টেরানেক্সাস দুরান প্রকল্পটি। তথ্য-প্রমাণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদকরা তুলে ধরেছেন—অপরাধী চক্র কীভাবে ধাপে ধাপে দুরানের উপকূলীয় শহরে বসবাসরত ইকুয়েডরবাসীর পায়ের তলার জমি কেড়ে নিচ্ছে। এটি একটি স্থানীয় প্রতিবেদন। বিশ্বের যেসব অঞ্চলে আবাসন সংকট, সহিংসতা ও অস্থিরতা বেড়ে চলেছে এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠী জমি ও নানা শ্রেণির মানুষের সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে—সেখানে এই ধরনের অনুসন্ধান পুনরায় করা উচিত।”
দ্য প্রাইস অব বাখমুত — মিডিয়াজোনা, বিবিসি নিউজ রাশিয়ান (রাশিয়া)
নথিপত্র সংগ্রহ ও অনুসন্ধানী তথ্য বিশ্লেষণের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হিসেবে মিডিয়াজোনা এবং বিবিসি নিউজ রাশিয়ান যৌথভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পেছনের ভয়াবহ গোপন তথ্য উন্মোচন করেছে। নিহত সৈনিকদের পরিবারের কাছে পাঠানো ক্ষতিপূরণের দলিলসহ বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক উৎসের ওপর নির্ভর করে তাঁরা দেখাতে সক্ষম হয়— ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার কীভাবে তাদের বাহিনীতে বন্দিদের নিয়োগ দিয়েছিল। যারা বাখমুত শহরের ২০ মাসব্যাপী ভয়াবহ যুদ্ধে (জানুয়ারি ২০২২ থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত) বেপরোয়া হামলায় অংশ নেয়। রাশিয়ার ভেতরে ভিন্নমত ও যুদ্ধ সম্পর্কিত তথ্য ফাঁসের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকায় এই প্রকল্পে নির্দিষ্ট কিছু সোর্স ও দলের সদস্যদের পরিচয় রক্ষার কাজটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়েছে।
“দ্য প্রাইস অব বাখমুত দেখিয়েছে ওয়াগনারের ভাড়াটে বাহিনী কীভাবে হাজার হাজার বন্দিকে নিয়োগ দিয়ে নির্মমভাবে ‘মানুষ খুন’ করতে তাদের নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে,” লিখেছেন একজন সিগমা বিচারক। তিনি আরো বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে পাঠানো অর্থ, চ্যাট রুমের আলোচনা, মামলা এবং সেনা পরিচয়পত্রে থাকা বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে সাংবাদিকরা এই কপট নিয়োগ ব্যবস্থাকে এবং ‘বিনামূল্যের’ নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রাণঘাতী শোষণের ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। যা দুর্দান্ত ও অনুপ্রেরণামূলক কাজ।” ওয়েবসাইটে হাজার হাজার পাঠকের পাশাপাশি প্রতিবেদনটি ইউটিউবে এক মিলিয়নেরও বেশি দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
আন্ডার দ্য সারফেস — লা মন্ডে, ডাটাডিস্তা, দে স্টান্দার্ড, ফ্যাক্টা, দাগব্লাডেত ইনফরমাশন, রিপোর্টার্স ইউনাইটেড, অ্যারিনা ফর জার্নালিজম ইন ইউরোপ, জার্নালিজমফান্ড ইউরোপ (ফ্রান্স)

এই অনুসন্ধানটি দেখিয়েছে দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে ইউরোপের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সম্প্রসারণকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ছবি: স্ক্রিনশট, লা মন্ডে
এটি একটি পরিবেশভিত্তিক, ডেটা-নির্ভর গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। এটি চাইলে অন্য মহাদেশেও প্রয়োগ করা সম্ভব। আন্ত-সীমান্ত এই অনুসন্ধানী প্রকল্পটি ইউরোপের ভূগর্ভস্থ পানির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দৃশ্যমান নয় এমন একটি সংকটকে তুলে ধরেছে। সাতটি সহযোগী সংবাদমাধ্যমের ১৪ জন সাংবাদিক অসংখ্য নথি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, ইউরোপের স্বাদু পানির ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে। যেটুকু বাকি আছে সেটাও প্রায় অপূরণীয় দূষণের মুখে। এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইউরোপের মোট ভূগর্ভস্থ পানির ২৬ শতাংশ (পৃষ্ঠতলের পরিমাপ অনুযায়ী) এরইমধ্যে “নাজুক অবস্থায়” পৌঁছেছে। এর কারণ হলো শিল্পক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিষিদ্ধ কীটনাশক ও অতিক্ষুদ্র দূষকের সংস্পর্শে আসা। গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, প্রতিবেদনটি শুধু সংকটের দিকে আঙ্গুল তোলেনি বরং সফলভাবে দেখিয়েছে এই হুমকি কীভাবে কৃষক, রপ্তানিকারক ও গ্রামের সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করছে।
সিগমা প্যানেলের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে: “এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েক দশক আগে নিষিদ্ধ হলেও রাসায়নিক পদার্থগুলো এখনও ভূগর্ভস্থ পানিতে টিকে আছে। উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরও প্রতিবেদনটি একঘেয়ে হয়ে ওঠার ঝুঁকিতে ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে এটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব হয়। একঘেয়ে বিস্তারিত বর্ণনায় না যেয়ে প্রতিটি দূষকের তথ্য খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে গল্প বলার ধারায় ছেঁদ না পড়ে।”
প্রকল্পটিতে উন্নত ডেটা প্রযুক্তির একাধিক ব্যবহার চোখে পড়ে। যার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে ক্ষুদ্রমাত্রার পরিবেশদূষক পর্দাথ বিশ্লেষণ, ম্যাপলাইব্রি জেএস লাইব্রেরি (MaplibreGL JS) এবং ওপেনস্ট্রিটম্যাপ (OpenStreetMap) ব্যবহার করে ইন্টারেক্টিভ মানচিত্র তৈরি, এবং ইন-হাউস টুল ব্যবহার করে স্ক্রলিটেলিং ফিচার ব্যবহার।
জুরিরা আরও যোগ করেন: “বিচারকরা এই কাজের গতিশীল ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা, গভীর বিশ্লেষণ এবং স্বচ্ছ ও পুনরায় প্রয়োগযোগ্য পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন।”
ভোতার এনত্রে বালাস (ভোট বিটুইন দ্য বুলেটস)—ডাটা সিভিকা, আনিমাল পলিটিকো, মেক্সিকো এভালুয়া (মেক্সিকো)

এ প্রকল্পটিতে মেক্সিকোর তিনটি সংবাদমাধ্যম একসঙ্গে কাজ করে দারুণ একটি ডেটাসেট তৈরি করে—যা পুরো দেশের রাজনৈতিক-অপরাধমূলক সহিংসতার ব্যাপ্তি চিত্রায়িত করে। ছবি: স্ক্রিনশট, ডেটাসিভিকা
মেক্সিকোতে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ওপর সুসংগঠিত হামলা কীভাবে সাধারণ জনজীবনকে প্রভাবিত করছে—এর মাধ্যমে তা দারুণভাবে তা তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপরাধ নিয়ে একটি বিশাল ডেটাবেস তৈরি করে সহজ ইন্টারঅ্যাকটিভ মানচিত্র ও ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে প্রভাবের মাত্রাকে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে। মেক্সিকোর এই গভীর সমস্যাটি নিয়ে নির্ভরযোগ্য সরকারি তথ্য খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই ডেটা সিভিকা ও তাদের গবেষণা-সহযোগীরা এমন একটি টুল তৈরি করেছেন, যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রাজনৈতিক-অপরাধমূলক সহিংসতার খবরগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুঁজে বের করে। এরপর সেই তথ্যগুলো সাজিয়ে একটি প্ল্যাটফর্মে তা সবার জন্য সহজলভ্য করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, এটি মেক্সিকোতে এই বিষয়ে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিতভাবে তৈরি করা ডেটাবেস। যা এখনও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য।
সিগমা প্যানেল মন্তব্য করেছে: “ভোটার এনত্রে বালাস দেখিয়েছে, অপরাধীদের জন্য মেক্সিকোর নির্বাচন কীভাবে যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হয়েছে। সহিংসতার মাধ্যমে ঠিক করা হচ্ছে কে ভোটে দাঁড়াতে পারবে বা অংশ নিতে পারবে। প্রতিবেদনে ডেটা, মানচিত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ভয় দেখিয়ে স্থানীয় ক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা চলছে।
পোর্টফোলিও উইনার্স
লাস্ট স্টোরি — (গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাংক)

অক্টোবর ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গাজায় চারটি প্রধান জনবসতিতে ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রে চালানো ৩৭টি হামলার তথ্য নথিভুক্ত করেছে লাস্ট স্টোরি। ছবি: স্ক্রিনশট, লাস্ট স্টোরি
লাস্ট স্টোরির বৈচিত্র্যময় এই প্রকল্পগুলো তৈরি হয়েছে নির্ভরযোগ্য ডেটা উৎসের ভিত্তিতে। এমন এক বাস্তবতার মধ্যে করা হয়েছে যেখানে কাজ করাটা ছিল শারীরিকভাবে বিপজ্জনক। কার্যকরভাবে প্রায় অসম্ভব। গাজায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের ঘনঘন অনুপস্থিতি এবং চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলো।
যেখানে অন্য অনেক সংবাদমাধ্যম মূলত সামরিক জবাবদিহিতা এবং ত্রাণ সংকটের ওপর আলো ফেলে, সেখানে এই প্রকল্পে যুদ্ধ কীভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে, তা বিশ্লেষণ করেছে। তথ্য বিশ্লেষণ, চার্ট এবং হৃদয়স্পর্শী মানবিক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে যে, ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে তা কিডনি রোগীদের কীভাবে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে। আর প্রবীণদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার আর শিশুশ্রম ও অপুষ্টির হারগুলো কীভাবে বেড়ে গেছে।
সিগমার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: লাস্ট স্টোরির প্রতিবেদন সরাসরি হৃদয়ে গিয়ে লাগে। সচেতনতা তৈরি করার এই ক্ষমতা ডেটাভিত্তিক সাংবাদিকতায় অত্যন্ত মূল্যবান। গাজা উপত্যকার মতো বিশ্বের অন্যতম সংঘাতপীড়িত এলাকা থেকে সাহসী সাংবাদিকদের একটি দল এই প্রতিবেদনগুলো নিখুঁতভাবে তৈরি করেছেন। তাঁরা গভীর থেকে কথা বলেছেন, সেই কারণেই এই গল্পগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে।”
এই কাজগুলো প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করা হয়েছে। প্রতিটি গল্প আলাদা, কিন্তু একটি দৃশ্যমান পরিচিতি (ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি) আছে যা সবগুলো প্রতিবেদনকে একসূত্রে বাঁধে। চোখে পড়ে উপস্থাপনা শৈলীর প্রতি যত্ন—ডেটা ও রিপোর্টের সঙ্গে সেই শৈলী মিলে এমন এক শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করেছে, যা পাঠকের মনে দাগ কাটে। লাস্ট স্টোরি এমন গল্প বেছে নিতে জানে, অনেক সময় অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো যেগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে না।
সালুদ কন লুপা — (পেরু)

পুরস্কারজয়ী রিপোর্টের অংশ হিসেবে সালুদ কন লুপা যে কয়টি ডেটা ভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পেরুর সরকারি ও বেসরকারি ফার্মেসিগুলোতে ইনসুলিন ওষুধের ভয়াবহ ঘাটতি নিয়ে করা বিশদ এই প্রতিবেদনটি। ছবি: স্ক্রিনশট, সালুদ কন লুপা
একটি ছোট দল হয়েও সালুদ কন লুপা গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থমূলক অনুসন্ধান পরিচালনা করে। যেখানে মাঠপর্যায়ের প্রচলিত সাংবাদিকতার আর কাঠখড় পুড়িয়ে সংগৃহীত নথির সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ পদ্ধতি। তাদের প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে লেনদেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের গর্ভধারণ এবং বিপজ্জনক কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের পেছনের নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতা।
সালুদ কন লুপা পেরুর একটি ছোট নিউজরুম থেকে উচ্চমানের, অর্থবহ এবং ডেটাভিত্তিক সাংবাদিকতার একটি উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা জরুরি জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে ধরে।”
সিগমা বিচারকরা উল্লেখ করেছেন, “এই প্রতিবেদনগুলো কঠোর ডেটা বিশ্লেষণ, সরকারি তথ্য চেয়ে অনুরোধ এবং গভীর মাঠ রিপোর্টিংয়ের উপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচন করে এবং ভুক্তভোগীর কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরে। কিছু গল্প এমনও ছিল যা জননীতিতে প্রভাব ফেলেছে অথবা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে। মানসম্পন্ন এবং অর্থবহ ডেটা সাংবাদিকতার অন্যতম উদাহরণ হয়ে উঠেছে পেরুর ছোট সংবাদকক্ষ সালুদ কন লুপা—যারা জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যার ওপর আলো ফেলে।”
এসসিএমপি গ্রাফিক্স — সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট (হংকং)

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট তাদের পোর্টফোলিও প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে এমন সব ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন উপস্থাপন করেছে যা হংকংয়ের বিদেশি গৃহকর্মীর কঠিন জীবনযাত্রার পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে। ছবি: স্ক্রিনশর্ট, এসসিএমপি
ভালো গ্রাফিক্সের শক্তি হচ্ছে এক নজরে জটিল বিষয়গুলো সহজেই তুলে ধরার । সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের নয়জনের গ্রাফিক্স দলটি অবৈধ ভবন থেকে শুরু করে ইউক্রেনের ট্রেঞ্চ (মাটি খুঁড়ে তৈরি প্রতিরক্ষামূলক খাদ) যুদ্ধে প্রাণঘাতী ঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এমন ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরি করেছেন। যা ভালো ডেটা সাংবাদিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁরা হংকংয়ের ৩ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি গৃহকর্মীর কঠিন জীবনযাত্রার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন—যাদের অনেকেই জেলখানার চেয়েও সংকীর্ণ এক অগোছালো কক্ষে থাকতে হতো। এ কাজটি অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যাখ্যামূলক সাংবাদিকতার মডেল। যা শুধু শব্দ বা সংখ্যার মাধ্যমে করা সম্ভব নয়।
সিগমা পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “এসসিএমপি গ্রাফিক্স টিম অসাধারণ একটি ভিজ্যুয়াল সিরিজ তৈরি করেছে। যেখানে গৃহকর্মীদের অজানা জীবন থেকে শুরু করে অবৈধ নির্মাণ ও বড় বড় আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলো উঠে এসেছে। যা জনসাধারণের জটিল বিষয়গুলোকে প্রাণবন্ত, মানবিক গল্পে পরিণত করেছে।
আমরা বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছি যে, কীভাবে তাঁরা সৃজনশীলতা, ডেটা এবং গল্প বলার পদ্ধতিকে একত্রিত করে মানুষের অভিজ্ঞতার আলোকে তা উপস্থাপন করেছে। যা ডেটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে জটিল বিষয়গুলোকে বলিষ্ঠ ও সুন্দর গল্পে রূপ দেওয়ার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।”
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।