রানা সাবাগের বিদায়ী চিঠি এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য ১১ পরামর্শ
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কিয়েভে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিজম কনফারেন্সে রানা সাবাগ। ছবি: আন্দ্রে মার্টিন / আরপিডিআিই
২০০৬ সালে রানা সাবাগ যখন আরব রিপোর্টার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আরিজ) গড়ে তোলেন, তখন সেই অঞ্চলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি নেটওয়ার্কের চিন্তাকে আকাশকুসুম স্বপ্ন বলেই মনে হয়েছিল।
১৪ বছর আরিজ-এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর সম্প্রতি সরে দাঁড়িয়েছেন সাবাগ। বিদায়ী চিঠিতে স্মরণ করেছেন শুরুর সেই সময়ের কথা। তখন তিনি ভাবছিলেন, “যে আরবের বেশিরভাগ দেশই স্বৈরশাসনের অধীনে; যেখানে সহ্য করা হয়না মুক্তচিন্তা, স্বাধীন সাংবাদিকতা, বিস্তৃত স্বাধীনতা, বা বহুত্ববাদ; সেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চর্চাকে কিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়?”
কাজটা যে সহজ ছিল না তাও তিনি লিখেছেন চিঠিতে। স্মরণ করেছেন, কিভাবে অনেক প্রতিবেদন চাপা দিতে হয়েছে, আর দিনের পর দিন সইতে হয়েছে সহকর্মী হারানোর কষ্ট। এরপরও বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়েছে আরিজ; তৈরি করেছে দারুন সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
সাবাগ, জিআইজেএন-এর পরিচালনা পর্ষদ সদস্য। আরিজ প্রতিষ্ঠার আগে তিনি ছিলেন গোটা আরব অঞ্চলে কোনো দৈনিক রাজনৈতিক পত্রিকার প্রথম নারী সম্পাদক। এখন তিনি অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট-এ যোগ দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা সম্পাদক হিসেবে।
আরব অঞ্চলে কয়েক দশক কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এই অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সেগুলো গোটা বিশ্বের সাংবাদিকদের জন্যেও প্রাসঙ্গিক:
পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, বাধা যতই আসুক; হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনার অবশ্যই একটি স্বপ্ন ও লক্ষ্য থাকা চাই। কিভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাবেন এবং সামনে আসা বাধাগুলো মোকাবিলা করবেন, সেই পরিকল্পনাও আপনাকেই করতে হবে। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে নতুন কিছু শিখুন। অহংবোধ দূরে সরিয়ে রাখুন, কারণ পতনের শুরু এখান থেকেই। প্রযুক্তি ও পেশাগত দক্ষতা গড়ে তুলুন। সাংবাদিকদের ন্যায্য, সৎ ও স্বচ্ছ হওয়া খুবই জরুরি। আপনাকে অবশ্যই উদাহরণ হিসেবে থাকতে হবে… সামাজিক বাধাগুলোকে অতিক্রম করেই নারীদের কাজ করে যেতে হবে; নিজেদের জেন্ডারগত দৃষ্টিকোন থেকে না দেখে বরং পেশাগত জায়গা থেকে দেখুন। সব সাংবাদিকই অনুসন্ধানী সাংবাদিক নয়। কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা যে কোনো ধরনের সাংবাদিকতায় ভালো করেন। দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। উন্মোচন করতে পারেন লুকিয়ে থাকা সব বিষয়। ব্যর্থতা থেকে আমরা আরো শিখতে এবং উন্নতি করতে পারি। মনে রাখবেন, কষ্ট ছাড়া কোনো অর্জন হয় না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পরিসরে ঢুকতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজির ওপর ভালো দখল রাখতে হবে।
রানা সাবাগ যে বিদায়ী চিঠি লিখেছেন তা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।