প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড: চূড়ান্ত তালিকায় কেন এই ছয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

গেল ১৩ মে ঘোষণা করা হয়েছে ২০২৫ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডস (জিএসএলএ)-এর ছোট ও মাঝারি সংবাদমাধ্যম বিভাগের চূড়ান্ত তালিকা। এতে জায়গা করে নিয়েছে ছয়টি প্রতিবেদন। নানা হুমকি, চাপ ও অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যান তাদের স্বীকৃতি জানাতে দেওয়া হয় এ পুরস্কার।

প্রসঙ্গত, ১২ মে ঘোষণা করা হয় বৃহৎ সংবাদমাধ্যম বিভাগের চূড়ান্ত তালিকা। যেখানে সাহসিকতার সঙ্গে অনুসন্ধানের মাধ্যমে উন্মোচিত সাতটি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে।

১৪তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (জিআইজেসি২৫) বিজয়ীদের নাম ঘোষণাসহ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা হবে। আসছে ২০ থেকে ২৪ নভেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হবে অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন জিআইজেসি২৫।

এই প্রতিযোগিতায় ৯৭টি দেশ থেকে ৪১০টি প্রতিবেদন জমা পড়ে। পাঁচ সদস্যের জিএসএলএ-এর বিচারক প্যানেলের পক্ষ থেকে বলা হয় সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিপুণভাবে তুলে ধরে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছে ছোট ও মাঝারি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো।

এই বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে পেরু, লিবিয়া, চিলি, সিরিয়া, ভারত ও মিশরের ছয়টি প্রতিবেদন। যেখানে উঠে এসেছে অভিবাসন, বন্যপ্রাণী পাচার, দুর্নীতি এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারসহ নানা বৈচিত্র্যময় বিষয়। (দ্রষ্টব্য: বিচারকদের দলে ছিলেন লাতিন আমেরিকান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম [এল ক্লিপ]-এর পরিচালক। তবে তার সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা চলাকালে তিনি সেখানে অংশ নেননি।)

“এই বছর চূড়ান্ত তালিকায় যাঁরা জায়গা করে নিয়েছেন, আমরা তাদের সাহস, সৃজনশীলতা এবং জবাবদিহিতার প্রতি অঙ্গীকারকে সম্মান জানাই,” বলেন শেইলা করোনেল। তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেবাইল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের পরিচালক এবং পুরস্কার কমিটির আহ্বায়ক। তিনি আরো বলেন, “তাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ, বিশেষ করে এমন একটি সময় যখন সংবাদমাধ্যম ও গণতন্ত্র নানা দিক থেকে আক্রমণের মুখোমুখি।”

ছোট ও মাঝারি আকারের সংবাদমাধ্যম থেকে নির্বাচিত সাহসী অনুসন্ধানী প্রকল্পগুলো দেখে নেওয়া যাক:

২০২৫ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা: ছোট মাঝারি সংবাদমাধ্যম

আয়াকুচো এবং হুলিয়াকা: রেডিওগ্রাফি অব হোমিসাইডসআইডিএল-রিপোর্তেরোস (পেরু)

Ayacucho radiografia de homicidos

ছবি: স্ক্রিনশট, আইডিএল-রেপোর্তেরোস

বড় কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করাটা সাধারণত কঠিন হয়। আইডিএল-রেপোর্তেরোস এই কাজটাই করে দেখিয়েছে। পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তের বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভে সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধান চালায় তারা। সরকারের অস্বীকৃতি, তথ্যের ঘাটতি এবং সামরিক দমনপীড়নের পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তারা খুঁজে বের করেন আয়াকুচো শহরে ১০ জন এবং হুলিয়াকা শহরে আরও যে ১৮ জন বিক্ষোভকারী মারা যান, তাঁরা কেউই নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য হুমকি ছিলেন না—তবু সেনা ও পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে তাঁরা নিহত হন।

রিপোর্টাররা ভিডিও ক্লিপ, ওপেন সোর্স টুল, রেকর্ডের জন্য আবেদন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ব্যবহার করে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সাবধানতার সঙ্গে তুলে ধরেন। তাদের ভাষায়, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ছিল “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।”

এছাড়া, দেশজুড়ে চলা প্রতিবাদের সময়গুলোতে জরুরি অবস্থার কারণে সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি কঠিন পরিবেশ তৈরি হয়। যেখানে ১৫৩ জন পেরুভিয়ান সাংবাদিক আক্রমণের শিকার হন। এই প্রেক্ষাপটেই আইডিএল-রেপোর্তেরোসের সাংবাদিক এবং তাদের সোর্সরা সরকারের সমর্থক গোষ্ঠীর হুমকি ও হয়রানির মুখে পড়েন। এমনকি ভয় দেখাতে তাদের অফিসেও হানা দেওয়া হয়।

ডিলেইড এক্সিকিউশন: দ্য সিরিয়ান রেজিম ডিটেইন্স মাইনর্স ইন প্রিজন্স টু এক্সিকিউট দেম আপন রিচিং এইটিন — সিরাজ, দারাজ, এসএলডিপি (সিরিয়া)

SIRAJ, DARAJ Syrian Regime detaining minors in prison

ছবি: স্ত্রিনশর্ট, দারাজ

আমরা জানতাম যে, সিরিয়ার সাবেক আসাদ প্রশাসনে শিশুদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটা ছিল বেআইনি। কিন্তু, সিরিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ফর অ্যাকাউন্টেবিলিটি জার্নালিজম (সিরাজ)-এর দুর্দান্ত ও শিউরে ওঠা অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য উঠে আসে। দেখা যায়, তারা একটি বিকল্প পথ বেছে নিয়েছিল—যা পৌঁছেছিল নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার চূড়ান্ত সীমায়। এই প্রতিবেদনে এমন সব প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, অন্তত দুই ডজন শিশুকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রেপ্তার করে কোনো বিচার ছাড়াই ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত আটক রাখা হয়। এরপর তাদের পাঠানো হয় তথাকথিত “মিলিটারি ফিল্ড কোর্ট”-এ। যেখানে দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এমনকি ওই শিশুদের এবং তাদের পরিবারকে এ সম্পর্কিত কোনো ধরনের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়নি।

এই অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব আদালতের ১৪,৮৪৩টি মৃত্যুদণ্ডের আদেশের তথ্য। বেরিয়ে আসে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র। যার মধ্যে রয়েছে ১১৪ জন আটককৃত শিশুর ঘটনাও। যেখানে পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়নের কথাও রয়েছে।

ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স কৌশল ও স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে রিপোর্টাররা বন্দিশিবিরগুলোর অবস্থান ও সেখানকার পরিস্থিতি নিশ্চিত করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো—তাঁরা বিচার ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ও গ্রেপ্তারের আদেশসংক্রান্ত ফাঁস হওয়া নথিপত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। যেখানে শিশুদের আটক করার সুপরিকল্পিত কৌশল, তাদের নাম, বয়স ও আটক হওয়ার তারিখ স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল।

অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে হৃদয়বিদারক অথচ গভীরভাবে শক্তিশালী গল্প বলার ধরনকেও প্রশংসা করেছেন গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের বিচারকরা। প্রতিবেদনে ভবিষ্যৎ মৃত্যুদণ্ডের জন্য আটক রাখা একমাত্র বেঁচে যাওয়া একজন ব্যক্তি,  শিশুদের পরিবার আর একজন প্রাক্তন নিরাপত্তারক্ষীর সাক্ষ্যও তুলে ধরা হয়েছে। যিনি অঘোষিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মুহূর্তগুলোর ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছেন। একটি জেল থেকে অন্য একটি জেলে স্থানান্তরের কথা বলে কৌশলে আটকৃতদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।

হারমোসিলা কেস: দ্য অডিও অ্যান্ড চ্যাটস দ্যাট শুক পাওয়ার ইন চিলিসাইপার, দ্য ক্লিনিক (চিলি)

CIPER, The Clinic audio chats in Chile

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, চিপার

এটি চিলিতে ঘটা দুর্নীতির একটি ক্লাসিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সিপার (Ciper) ও দ্য ক্লিনিক (The Clinic) এর সাংবাদিকরা একটি বড় দুর্নীতির চক্রের প্রতিটি স্তর উন্মোচন করেছেন। এর ফলে দেশটির একাধিক সরকারি খাতজুড়ে বহুজনের বিরুদ্ধে বিচারিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গল্পটির সূচনা হয় একটি অডিও রেকর্ডিং দিয়ে। যেখানে এক প্রভাবশালী আইনজীবী তাঁর ব্যবসায়িক ক্লায়েন্টকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন যে, তিনি যেন সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার জন্য একটি “ব্ল্যাক বক্স” তৈরি করেন।

সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধানে নেমে তাঁর মোবাইল ফোনের তথ্য ও ম্যাসেজের ট্রান্সক্রিপ্ট বের করেন। এই আইনজীবীকে বিচার বিভাগ, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং প্রশাসনের মধ্যে এক প্রভাবশালী “সেতু” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমনকি দেখা যায়, সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। এরপর একে একে কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির বহুস্তরীয় চিত্র উঠে আসে। যা ছিল একের পর এক অনিয়মের “পেঁয়াজের খোসা” খুলে যাওয়ার মতো বিষয়।

চিলির জবাবদিহিতামূলক আইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত নথিপত্রের পাশাপাশি দলটি তদন্ত সংক্রান্ত গোপন দলিলপত্র এবং রাজস্ব সেবার রেকর্ডও সংগ্রহ করে এবং শত শত লোকের সাক্ষাৎকার নেয়। এতে করে সাংবাদিকরা মিথ্যা প্রচারণা, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস এবং একাধিক আইনি হুমকির সম্মুখীন হন।

দ্য কস্টস অব রিলায়েন্স’ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাম্বিশনসহিমাল (ইন্ডিয়া)

Himal India endangered wildlife investigation

ছবি: স্ক্রিন শট: হিমাল

সরকারি ও শক্তিশালী কর্পোরেট বাধার মধ্যেও হিমাল ভারত সরকার অনুমোদিত সবচেয়ে পরিচিত বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন প্রকল্পের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। বিপন্ন প্রজাতিগুলোর উৎস অনুসন্ধান এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। পূর্ব ভারতের হাতি আর মায়ানমার থেকে আসা বিপন্ন প্রজাতির জটিল প্রাণী সরবরাহ শৃঙ্খলা ঘিরে দমবন্ধ করা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দলটি অবৈধ প্রক্রিয়া, বন থেকে প্রাণী ধরে আনার অভিযোগ, সরকারের দুর্বল তত্ত্বাবধান এবং বিপন্ন জীববৈচিত্র্যের জন্য উদ্বেগজনক প্রভাব আবিষ্কার করে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই প্রকল্পটি এমন একটি বিষয় ও চর্চার ওপর নতুন আলো ফেলে যা নিয়ে ভারতের মিডিয়া এবং নীতিনির্ধারকরা সবসময় নীরব থাকতে দেখা যায়। সাংবাদিকদার প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি দলটি মাঠ পর্যায়ের সাহসী সাংবাদিকতা কৌশল ব্যবহার করে শক্তিশালী ডেটা বিশ্লেষণ করে। সরাসরি পরিদর্শন করে দূরবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলো।

কাজটি করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আইনি ধমকির মুখে পড়েন। যার মধ্যে ছিল পুলিশি অভিযোগও। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও জামিন অযোগ্য অপরাধের মামলা করা হয়। যা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।

দ্য কালামাটা ট্র্যাপ: হানড্রেডস অব মাইগ্র্যান্টস ড্রাউন অন দেয়ার ওয়ে টু ইউরোপএআরআইজে – আরব রিপোর্টার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (গ্রীস)

ARIJ Kalamata trap migrants drowning heading to Europe

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, এআরআইজে

এই অনুসন্ধানে তুলে ধরা হয়েছে এমন এক আইনি ব্যবস্থার কথা, যা আফ্রিকা থেকে ইউরোপে অভিবাসীদের আসাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য তৈরি। কিন্তু মানব পাচারকারীদের সত্যিকার অর্থে বিচার করা বা ব্যাপক হারে অভিবাসন সংকটের মূল কারণগুলো উন্মোচনের উদ্দেশ্যে নয়। ২০২৩ সালের জুনের কথা। আমরা দেখতে পাই, একটি মাছ ধরার নৌকাতে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত লোক বোঝাই করার কারণে গ্রীস উপকূলের কাছে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে। নৌকাটি ডুবে গেলে প্রায় ৭৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি।

এআরআইজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কীভাবে ওই ঘটনার দায় এড়াতে গ্রীস কর্তৃপক্ষ নয়জন মিশরীয় অভিবাসীকে আটক ও বিচারের মুখোমুখি করে। যা ছিল একটি “আইনি ফাঁদ”। উদ্দেশ্য, প্রকৃত কারণ ও অপরাধীদের আড়াল করে রাজনীতি ও সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া।

গ্রীস কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল—এর পাশাপাশি প্রকল্পটি আরও দেখিয়েছে কে বা কারা আসলে এই নৌকাডুবি ও অন্যান্য অভিবাসনসংক্রান্ত সামুদ্রিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এই প্রতিবেদনে মানব পাচারকারীদের সাক্ষাৎকার, উত্তর আফ্রিকায় পাচার নেটওয়ার্কের বিস্তারিত মানচিত্র এবং গ্রীক কর্মকর্তাদের কাঠামোগত ব্যর্থতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

জিএসএলএ-এর বিচারকরা প্রতিবেদনটির প্রশংসা করে এটিকে “খুবই শক্তিশালী” বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের মতে, “এই প্রতিবেদনটি চমৎকার তথ্যনির্ভর এবং নৌদুর্ঘটনার সময়কাল ধরে কী কী ঘটেছিল তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।”

দ্য রাশিয়ান ট্র্যাপ: রিক্রুটিং ইজিপশিয়ানস উইথ দ্য লিউর অব মানি অ্যান্ড ন্যাশনালিটিমাসরাওয়ি (ইজিপ্ট)

Masrawy Egypt The Russian Trap investigation

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, মাসরাউই

কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এমনভাবে সত্য উন্মোচন করে, যা শ্রোতাদের হতবাক করে দেয়। এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়, যেগুলো অনেকেই আগে ভাবেননি। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক ভয়ংকর গোপন কর্মকাণ্ড। যেখানে উঠে আসে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য রাশিয়া কীভাবে তরুণ আরব পুরুষ—বিশেষ করে মিশরীয় শিক্ষার্থীদের—নিয়োগ দিচ্ছিল। শুধু তা-ই নয়, বিদেশি নাগরিকদের বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্রে টানার জন্য রাশিয়া কীভাবে নিজেদের নিয়োগ নীতিমালা বদলে ফেলেছে, তা-ও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে রাশিয়ান ও মিশরীয় দালালদের ভূমিকা। স্বেচ্ছাসেবকদের কীভাবে নানা রকম আর্থিক সুবিধা ও অভিবাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এবং কম প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণ মিশরীয়দের তাড়াহুড়ো করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর গল্পও।

জিএসএলএ প্যানেল শুধু এই তথ্যগুলো নয়, বরং প্রতিবেদনের গভীর মানবিক দিকটিরও প্রশংসা করে। যেখানে নিহত বা নিখোঁজ সৈন্যদের পরিবারের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা আর কষ্টগুলো অনেক যত্ন করে তুলে ধরা হয়েছে। অনেক পরিবার জানতেই পারেনি তাদের প্রিয়জন আসলে কোথায়, কেমন আছেন বা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা।

বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ায় প্রধান প্রতিবেদককে সোর্স, তথ্য এবং সম্পাদকীয় টিমকে নিরাপদ রাখতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে নজরদারি ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

সাংবাদিক দলটি তাদের অনুসন্ধানের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও দুস্প্রাপ্য তথ্য সংগ্রহ করে। যার মধ্যে ছিল—তরুণ মিশরীয়দের সঙ্গে রুশ দালাল এবং সামরিক ইউনিটগুলোর চুক্তিপত্র, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের অভিযোগপত্র, এবং রুশ সরকারের দেওয়া ভ্রমণ ভিসা—কিছু ক্ষেত্রে যেগুলো ছিল সাধারণ ট্যুরিস্ট ভিসা।


রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

পরামর্শ ও টুল

কর্পোরেট দুর্নীতির যোগসূত্র খুঁজতে পারেন এই টুল দিয়ে

নিয়ম ভাঙার কারণে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো জরিমানা দিচ্ছে। অথচ সাংবাদিকরা বুঝতে পারেন না যে, এই কোম্পানিগুলো হয়তো কোনো বড় করপোরেশন বা কোটিপতির মালিকানাধীন।

অনুুদান ও ফেলোশিপ ডেটা সাংবাদিকতা পুরস্কার

কারা পাচ্ছেন সিগমা অ্যাওয়ার্ডস, সংক্ষিপ্ত তালিকা ঘোষণা জিআইজেএনের

এবারের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ২৪টি দেশের ৫০টি ডেটা সাংবাদিকতা প্রকল্প স্থান করে নিয়েছে।

জলবায়ু

দ্য পুডিংয়ে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, জলবায়ু পরিবর্তনের গল্প পেয়েছে নতুন মাত্রা

আচ্ছা, জলবায়ু পরিবর্তন কথাটা শুনলে আপনার কেমন লাগে? ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ৫০ বছর পর আপনার শহরের জলবায়ু কেমন হবে, তা কিভাবে অনুভব করবেন। ডেটা চিত্রায়নের মাধ্যমে সেটাই সহজবোধ্য করে তুলে ধরা হয়েছে।

ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে হয়রানি-নির্যাতন, একটি ম্যাচ অ্যাপের ব্যর্থতা অনুসন্ধান

সারাবিশ্বের ডেটিং অ্যাপের জয়জয়কার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তো বটেই। কমপক্ষে ৪০ শতাংশ সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছে এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে। কিন্তু ম্যাচ অ্যাপ প্রতিষ্ঠানটি আদৌ কি তার গ্রাহককে নিরাপত্তা দিতে পেরেছিল ? দেখুন এই প্রতিবেদনে?