

أكسيل جورد هامليخو من لجنة التحقيق في المهمة وسونيا روللي، المراسلة في راديو فرنسا الدولي يحللون الصورة على اليسار - قبل دقيقة من مقتل إثنين من خبراء الأمم المتحدة في مارس ۲٠١٧ . الصور : بإذن من إس في تي
সাংবাদিকদের জন্য যে হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে পারেনি জাতিসংঘ
বাম পাশের ছবিটি ২০১৭ সালের মার্চে জাতিসংঘের দুই বিশেষজ্ঞকে হত্যার কিছুক্ষণ আগে তোলা। ডানপাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেটি বিশ্লেষণ করছেন মিশন ইনভেস্টিগেটের অ্যাক্সেল গর্ড হুমলিখ্যা এবং রেডিও ফ্রান্সের রিপোর্টার সোনিয়া রোলে। ছবি কৃতজ্ঞতা: এসভিটি
২৭ নভেম্বর, ২০১৮। মধ্য ইউরোপ সময়, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। পাঁচটি আলাদা সংবাদমাধ্যমে একসাথে প্রকাশ হলো একটি অনুসন্ধান। বেরিয়ে এলো, নিজ কর্মী হত্যার ঘটনা কিভাবে ধামাচাপা দিয়েছিল জাতিসংঘ। নিরবতার এই বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছিল, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে পাঁচটি গণমাধ্যম নিজেদের মধ্যে সব ধরণের তথ্য বিনিময় করেছিল অবাধে। সাংবাদিকতার পরিভাষায় একে বলে, র্যাডিকেল শেয়ারিং।
তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, জাতিসংঘের দুই মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ – মাইকেল শার্প ও জাইদা কাতালান খুন হয়েছেন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআরসি) রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের হাতে। এবং খুনিরা তাদের সাথে কাজ করছিলেন দোভাষীর ছদ্মবেশে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ডিআরসি সরকারের সংশ্লিষ্টতা, ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করা হয় জাতিসংঘের নিজস্ব তদন্তে। এই সত্য জানাজানি হওয়ার পর হতবাক বনে গিয়েছিল গোটা কূটনৈতিক বিশ্ব।
এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার দাবি উঠেছে। কারাগারে পাঠানো হয়েছে ডিআরসি সেনাবাহিনীর এক কর্নেলকে। তিনি যে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা উন্মোচিত হয়েছে এসভিটির সাংবাদিকদের উদ্ধার করা ফোন রেকর্ড থেকে।
“জাতিসংঘের মতো এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিয়েছে, তা উদঘাটনের জন্য” সম্প্রতি ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটরস পদক জিতেছে সুইডেনের টিভি নিউজ ম্যাগাজিন এসভিটি মিশন ইনভেস্টিগেট এবং তাদের চার সহযোগী সংবাদমাধ্যম।
হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ২০১৭ সালে। তখন কঙ্গো সরকার দাবি করে, এই ঘটনার সাথে বিদ্রোহী গ্রুপ কামুইনা এনসাপু জড়িত। নিজেদের দাবির সমর্থনে, তারা হত্যার একটি নৃশংস ভিডিও প্রকাশ করে। জাতিসংঘের প্রধান তদন্তকারী তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে এই দাবির সঙ্গে সুর মেলান। এমনকি, নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া মোটরসাইকেল ট্যাক্সি ব্যবহারের জন্য, তিনি নিহত দুই কর্মীরও সমালোচনা করেন।
এই অনুসন্ধানে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সুইডেনের এসভিটি, ফ্রান্সের লে মঁদ ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন এবং জার্মানির সুডয়চে সাইটুং। জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া নথিপত্র, বিভিন্ন সোর্স থেকে পাওয়া অডিও, হত্যাকাণ্ডের ভিডিও বিশ্লেষণ এবং বেশ কিছু সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে, তারা উন্মোচন করে কিভাবে এই ঘটনায় জড়িত ছিল কঙ্গোর সেনাবাহিনী, আর প্রকৃত ঘটনা কিভাবে আড়াল করতে চেয়েছে জাতিসংঘ। এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায়, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার দাবি উঠেছে। কারাগারে পাঠানো হয়েছে ডিআরসি সেনাবাহিনীর এক কর্নেলকে। তিনি যে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা উন্মোচিত হয়েছে এসভিটির সাংবাদিকদের উদ্ধার করা ফোন রেকর্ড থেকে।
প্রতারণার কূটনীতি
এই অনুসন্ধানের জন্য মিশন ইনভেস্টিগেট জিতেছে ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এবং তাদের “প্রতারণার কূটনীতি” নামের পর্বটি শুধু সুইডেনেই দেখেছে ১০ লাখের বেশি দর্শক।
মিশন ইনভেস্টিগেট-এর প্রধান প্রতিবেদক ও প্রযোজক অ্যাক্সেল গর্ড হুমলিখ্যা বলেছেন, এই অনুসন্ধানে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান (র্যাডিকেল শেয়ারিং) করা হয়েছে অবাধে। এতে করে প্রতিবেদন তৈরি যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয়েরও কোনো সুযোগ থাকেনি। সেই সাথে ঝুঁকির মুখে থাকা রিপোর্টারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেছে, এবং সবাই মিলে অনলাইনে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়েছে।
পাঁচটি গণমাধ্যম অবাধে তথ্য বিনিময় করেছে। অতি সংবেদনশীল সোর্স ছাড়া, বাকি সব ক্ষেত্রে তথ্য উন্মুক্ত ছিল। এই তথ্যউপাত্ত ব্যবহার করে নিউজরুমগুলো তাদের নিজেদের মতো করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, স্বাধীনভাবে।
র্যাডিকেল শেয়ারিং ধারণাটি জনপ্রিয় হয় পানামা পেপার্স অনুসন্ধানে। এই প্রকল্পে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো, যে যা-ই পেতো অন্য সবার সাথে বিনিময় করতো। সাধারণত, এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয় অনেক বড় আকারের ডেটা নিয়ে কাজের সময় বা আন্তসীমান্ত সহযোগিতামূলক প্রকল্পে। এমন ক্ষেত্রে, সবাই একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
জাতিসংঘের লুকোছাপা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে, এই পাঁচটি গণমাধ্যমও অবাধে তথ্য বিনিময় করেছে। অতি সংবেদনশীল সোর্স ছাড়া, বাকি সব ক্ষেত্রে তথ্য উন্মুক্ত ছিল। এই তথ্যউপাত্ত ব্যবহার করে নিউজরুমগুলো তাদের নিজেদের মতো করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, স্বাধীনভাবে।
“এই অনুসন্ধানে, ফাঁস হওয়া তথ্যের বড় ভাণ্ডার ছিল, আমাদের কাছে, যা সামাল দিতে অন্যদের সাহায্য দরকার হয়ে পড়ে,” বলেছেন হুমলিখ্যা। “ সাহায্য প্রয়োজন ছিল কঙ্গোর স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে; নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে কলকাঠি নাড়ার জন্য দরকার ছিল ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে। ভাষা বুঝতে, ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী জানতে, এবং এমন আরো অনেক বিষয়ে সাহায্য দরকার হয়েছিল। এটি আন্তর্জাতিকভাবে জোটবদ্ধ অনুসন্ধানের একটি দারুন উদাহরণ। আমরা বৈঠক করেছি প্যারিসে, যা কিনা পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করে দিয়েছে। এরপর গ্রুপ চ্যাট করেছি সিগন্যালে, প্রতি মাসে এনক্রিপ্টেড কনফারেন্স অংশ নিয়েছি সুডয়চে সাইটুংয়ের ব্যবস্থাপনায়।”
চুপ করাতেই হত্যা
২০১৭ সালের ১২ মার্চ বুনকোনডি গ্রামের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয় কাতালান ও শার্পকে। তারপর তাদের মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয় অগভীর কবরে।
ডিআরসি সরকার ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দুই মানবাধিকার কর্মীকে হত্যা করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা, তবে কারণ অজানা। তাদের দাবি, মৃত্যুর কারণ নিরাপত্তাকর্মী না নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে না নেওয়া।
আশ্চর্যজনকভাবে, দুজন দোভাষী ইচ্ছাকৃতভাবে এই সতর্কবার্তার একেবারে বিপরীত অনুবাদ করে, ঠিক এভাবে: “আপনারা সেখানে যেতে পারেন; কোনো সমস্যা নেই।”
কিন্তু মিশন ইনভেস্টিগেটের প্রতিবেদনে এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা ষড়যন্ত্র এবং হত্যার মূল উদ্দেশ্য উন্মোচিত হয়। তারাই প্রমাণ করে দেয় – কাতালান ও শার্প ঐ অঞ্চলে কঙ্গো সেনাবাহিনীর নৃশংসতার প্রমাণ খুঁজছিলেন – বিশেষ করে গণকবর – আর একারণেই তাদেরকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, জাতিসংঘের এই দুই বিশেষজ্ঞকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লিংগালা ভাষায়। আত্মমর্যাদার খাতিরে এই একটি ভাষাতেই কখনো কথা বলে না কামুইনা এনসাপুর বিদ্রোহীরা।
আরেকটি অডিও রেকর্ডিং থেকে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন, জাতিসংঘের এই দুই বিশেষজ্ঞকে সতর্ক করেছিলেন এক বিদ্রোহী নেতা। বলা হয়েছিল, বুনকোনডিতে গেলে “তাদের ওপর হামলা হতে পারে”। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, দুজন দোভাষী ইচ্ছাকৃতভাবে এই সতর্কবার্তার একেবারে বিপরীত অনুবাদ করে, ঠিক এভাবে: “আপনারা সেখানে যেতে পারেন; কোনো সমস্যা নেই।” জাতিসংঘের নথিপত্র ঘেঁটে সাংবাদিকরা বের করেছেন, এই দুজন দোভাষী আসলে ছিলেন কঙ্গোর নিরাপত্তা বাহিনীর ছদ্মবেশী এজেন্ট। আর চাঞ্চল্যকর এই তথ্যটিই বাদ দেওয়া হয় জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ জাইদা কাতালানের (ডানের ছবিতে) মা ও বোন মারিয়া ও এলিজাবেথ মোর্সবি (বামের ছবিতে) দেখছেন কাতালানের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হওয়া ষড়যন্ত্রের প্রমাণাদি। ছবি কৃতজ্ঞতা: এসভিটি
এসভিটি-র অনুসন্ধান দল এই ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রকেও সনাক্ত করে। তিনি ছিলেন কঙ্গো সেনাবাহিনীর কর্নেল জ্যঁ দ্য দিউ মাম্বুয়েনি । ফোন রেকর্ড থেকে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগের কয়েক দিনে তিনি কথা বলেছেন সেই ছদ্মবেশী দোভাষীদের সঙ্গে। হত্যার অভিযোগে আদালতে যখন দুই বিদ্রোহীর বিচার চলছে, তখনও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন কর্নেল। সেলফোন টাওয়ারের ডেটার সঙ্গে ফাঁস হওয়া তথ্য মিলিয়ে, এই মিথ্যাচার উন্মোচন করেন সাংবাদিকরা।
এসভিটি নিউজের ইনভেস্টিগেটিভ এডিটর নিলস হ্যানসন বলেছেন, অবাধ তথ্য বিনিময়ের এই প্রক্রিয়া সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও অনেক কাজে এসেছে।
“এই অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত সবারই, ফাঁস হওয়া তথ্যে প্রবেশাধিকার ছিল। ফলে সবাই এখান থেকে নিজেদের মতো করে একটা উপসংহার টানতে পেরেছে,” বলেছেন হ্যানসন। “এভাবে অনুসন্ধানটি আরো পাকাপোক্ত হয়েছে। কারণ সব সাংবাদিকই একে অপরের ভুল শুধরে দেবার সুযোগ পেয়েছেন। রিপোর্টিংয়ে কোনো ফাঁক থেকে যাচ্ছে কিনা, তা-ও বুঝতে পেরেছেন। এটি ছিল একসঙ্গে কাজ করার নতুন এক পদ্ধতি: বৃহত্তর স্বার্থে একে অপরের রিপোর্টিংকে প্রভাবিত করার জন্য সবাই সবাইকে বিশ্বাস করেছেন।”
নানা দেশের গণমাধ্যম, এক সাথে জোট বেঁধে কাজ করার কিছু সমস্যাও আছে, স্বীকার করেন হুমলিখ্যা। কারণ গোপন নথি, ও না-জানিয়ে করা রেকর্ডিং সম্পর্কে একেক দেশের আইন একেক রকম।
নিহত কাতালান এবং তার বোন এলিজাবেথ মোর্সবি – দু’জনেরই স্বভাব ছিল, গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করা। তাদের এই অভ্যাসই, অনুসন্ধানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ১১ মার্চ, অর্থ্যাৎ হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগের দিন, তাদেরকে ফোনে যে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল, তা রেকর্ড করে রেখেছিলেন কাতালান। তার বোন এলিজাবেথ রেকর্ড করেন, তাদের বাড়িতে আসা জাতিসংঘ কর্মকর্তার কথাবার্তা। রেকর্ডে সেই কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “এই রিপোর্টে, আমি ‘সেনাবাহিনী’ বা এজাতীয় কিছু উল্লেখ করিনি। কারণ আমরা বিষয়টি নিয়ে কঙ্গোর সঙ্গে কাজ করে যেতে চেয়েছি। আমরা রিপোর্টটি এমনভাবে করতে চাইনি যেন তারা সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। তারা চায় না, তাদেরকে অভিযুক্ত করা হোক।”
হুমলিখ্যা বলেছেন, “ভুয়া দোভাষীর প্রমাণ দেখার পর আমি প্রথমে খুব অবাক হই। ভাবছিলাম, এও কি সম্ভব? জাতিসংঘ, তাদেরই দুজন বিশেষজ্ঞের হত্যাকাণ্ড চেপে রাখবে, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তাও আবার কাবিলার মত নৃশংশ শাসকের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে। কেন তারা এমন করবে? আমি তাদের এই মানসিকতা বুঝতে পারি অডিও রেকর্ডিংগুলো শোনার পর… নিহতদের পরিবারের কাছে, সব মানুষের কাছে তারা এই উদ্ভট যুক্তি দিয়ে গেছে। এটি পুরোপুরি প্রতারণা।”
জোটবদ্ধতার শক্তি
নানা দেশের গণমাধ্যম, এক সাথে জোট বেঁধে কাজ করার কিছু সমস্যাও আছে, স্বীকার করেন হুমলিখ্যা। কারণ গোপন নথি, ও না-জানিয়ে করা রেকর্ডিং সম্পর্কে একেক দেশের আইন একেক রকম।
তবে, গোপনে রেকর্ড করা অডিও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগী গণমাধ্যমগুলো অনেক সতর্ক ছিল বলে জানান সুইডিশ এই সাংবাদিক। রেকর্ডিংয়ের সময় সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রদেশে ছিলেন, তা-ও বিবেচনায় নিতে হয়েছিল। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন বিশেষভাবে সতর্ক ছিল গোপন নথি ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তাদের আইনে যা বৈধ, তারা শুধু সেগুলোই রিপোর্টে ব্যবহার করেছে।
কখন এটি প্রকাশ করা হবে তা নির্ধারণ করতে গিয়েও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে সাংবাদিকদের এই আন্তর্জাতিক জোটকে। কারণ রেডিও, ম্যাগাজিন টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ সাইট, টিভি ডকুমেন্টরি; সব ধরণের মাধ্যমই এখানে ছিল। টিভির ক্ষেত্রে যেমন, গল্পটি সম্পাদনা করতে অতিরিক্ত পাঁচ সপ্তাহ সময় লেগেছে।
“পাঠকরা জানেন, পাঁচটি আলাদা সংবাদমাধ্যম একই তথ্য নিয়ে কাজ করেছে এবং একই রকম উপসংহারে পৌঁছেছে।” — অ্যাক্সেল গর্ড হুমলিখ্যা
হুমলিখ্যা বলেছেন, প্রতিবেদন প্রকাশের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে যৌথ সিদ্ধান্তটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা ঠিক করে রেখেছিলেন, প্রতিবেদন সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বা সংশ্লিষ্টদের কাছে বক্তব্য চাওয়া হবে তখনই, যখন ঝুঁকির মুখে থাকা পশ্চিমা সাংবাদিকরা কঙ্গো থেকে বেরিয়ে আসবেন, এবং এসভিটির ভিডিও সম্পাদনা শুরু হবে। এসভিটি-র কঙ্গোলিজ মিডিয়া সহযোগীরা অবশ্য পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে একসাথে স্টোরি প্রকাশ করতে পারেনি; মূলত, হুমকি ও নিপীড়নের কথা চিন্তা করে। তবে এই জোটে থাকার কারণে তাঁরা তথ্যগুলো প্রচার করেছে “রিপোর্টিংয়ের ওপর রিপোর্টিং” করার মাধ্যমে। এই অনুসন্ধানে কাজ করা দুই সাহসী কঙ্গোলিজ সাংবাদিকের নাম শেষপর্যন্ত প্রকাশ করা গেছে বলে জিআইজেএন-কে জানিয়েছেন হুমলিখ্যা। তাঁরা হলেন: ক্যালেব ক্যাবান্দা ও সোস্থেন ক্যাম্বিডি। দুজনই কাজ করেন অ্যাকচুয়ালাইট নামের একটি গণমাধ্যমে।
হুমলিখ্যা বলেছেন, এগুলোর সঙ্গে ছিল “একজোট হয়ে প্রচার-প্রচারণা। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন আমাদের ভিডিওটি তাদের ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছিল। আমরা তাদের সেই ভিডিওর লিংক শেয়ার করেছি আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে। দেখা গেছে, আমাদের সবার প্রতিবেদনই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, কঙ্গোর স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর সহযোগিতা ছাড়া প্রকল্পটি কোনোভাবেই সফল হতো না। তারাই এই অনুসন্ধানের সত্যিকার নায়ক। কারণ তারাই প্রত্যক্ষভাবে মাঠে গিয়ে কাজ করেছেন। এবং বিপজ্জনক জায়গাতে এই বিষয়ের ওপর রিপোর্টিং করার পরিণতিও তারা ভোগ করেছে।”
হুমলিখ্যা বলেছেন, র্যাডিকেল শেয়ারিং মডেল অনুসরণ করার অন্যতম বড় সুবিধা ছিল পাঠক-দর্শকের বিশ্বাস অর্জন।
“আগে, আপনি হয়তো নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা করতেন। বিশ্বাস করতেন যে, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই এবং তারা সত্যি কথাই বলছে। কিন্তু এখন পাঠকরা জানেন, পাঁচটি আলাদা সংবাদমাধ্যম একই তথ্য নিয়ে কাজ করেছে এবং একই রকম উপসংহারে পৌঁছেছে। আমার মনে হয়, কঙ্গোর সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ সেখানকার রাজনীতিবিদরা সবসময়ই তাদের হুমকির মধ্যে রাখত এবং নিন্দা করত। জোটবদ্ধ এই অনুসন্ধানের ফলে কঙ্গোর সংবাদমাধ্যমগুলো পাঠকদের জোরের সঙ্গে বলতে পেরেছে – তাদের সঙ্গে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও একমত, এই তথ্যগুলো সত্যি, এবং ঘটনার জন্য আসলে ঐ লোকগুলোই দায়ী। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই এমন পরিবেশে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোয়ান ফিলিপ বেশ কয়েকটি পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক। কাজ করেছেন দুই ডজনের বেশি দেশে। এখন তিনি থাকেন বস্টনে। ১৫ বছর ধরে তিনি কাজ করেছেন সাউথ আফ্রিকা সানডে টাইমসের প্রধান রিপোর্টার ও লন্ডন ব্যুরো প্রধান হিসেবে।