করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে রিপোর্টিংয়ে কাজে আসবে যে ৫টি টিপস্
ছবি: পিক্সাবে
কোভিড-১৯ কাভারেজে চ্যালেঞ্জের কথা আলোচনা করতে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের উদাহরণ ব্যবহার করেছেন দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক গ্যারি শুয়িটজার। এবিসি নেটওয়ার্কের সহযোগী কেএসটিপি-র সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে যেভাবে তড়িঘড়ি করে রিপোর্ট করা হচ্ছে, তাতে “মহামারি নিয়ে ভুয়া তথ্যের ঝড়” উঠবার আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জার্নালিস্টস রিসোর্সের সঙ্গে আরেকটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কোভিড-১৯ নিয়ে তথ্যের যে “সুনামি” দেখা যাচ্ছে, তার অর্থ পাঠক-দর্শকদের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে সাংবাদিকদের।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর একটি টিকার জন্য এখন পুরো বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীরা এই রোগ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জেনেছেন, তার সীমাবদ্ধতাগুলোও পাঠকদের সামনে তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন হেলথ নিউজ রিভিউর প্রকাশক শুয়িটজার। তাঁর পরামর্শ: “যদি নিশ্চিত কিছু না থাকে, তাহলে দয়া করে কোনো নিশ্চয়তার কথা বলবেন না।”
কোভিড-১৯ টিকা তৈরির জন্য প্রতিযোগিতারত কোম্পানিগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি তাদের ট্রায়াল সম্পর্কে তথ্য জানিয়েছে। কোনো বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ না করে সেই তথ্য জানানো হয়েছে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে। এতেই তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু, এসব প্রেস রিলিজে আসল তথ্য খুব কমই থাকে।
কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত কী জানা গেছে এবং কী জানার বাকি আছে, সে সম্পর্কে রিপোর্টারদের ধারণা দিতে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছে জার্নালিস্টস রিসোর্স। এদের মধ্যে ছিলেন: একাডেমিক জার্নাল জেএএমএ-র প্রধান সম্পাদক হাওয়ার্ড বাউচনার; অনলাইন সংবাদমাধ্যম, এসটিএটি-র বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিষয়ক জেষ্ঠ্য রিপোর্টার, হেলেন ব্র্যানসওয়েল; ভ্যাকসিন এডুকেশন সেন্টারের পরিচালক পল অফিট; দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাভার করা রিপোর্টার জাকারি ব্রেনান; এবং শুয়িটজার, যিনি একই সঙ্গে ইউটিভার্সিটি অব মিনেসোটায় স্কুল অব পাবলিক হেলথের সহযোগী অধ্যাপক।
এখানে থাকছে তাদের দেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
১. ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিভিন্ন পর্যায় থেকে কী ধরনের তথ্য পাওয়া সম্ভব, আর কী পাওয়া সম্ভব নয়; তা সাংবাদিকদের ভালোমতো বুঝতে হবে। কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে ঘোষণা যদি একাডেমিক জার্নালে প্রকাশের বদলে, সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়; তাহলে সতর্ক হোন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার ও কেনাবেচা করা যাবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। টিকা ও অন্যান্য ওষুধের জন্য পরীক্ষামূলক গবেষণা চলে বেশ কয়েকটি পর্যায়ে। এখানে বলে রাখা ভালো: এফডিএ সমর্থিত কোনো তৎপরতার পক্ষে সমর্থন অন্যান্য দেশের গবেষণা থেকেও আসতে পারে। এফডিএ-র প্রাইমার অন ক্লিনিক্যাল রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, টিকা সংক্রান্ত পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপে (প্রথম পর্যায়) সাধারণত ২০ থেকে ১০০ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ করে।
এই প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল থেকে টিকার কার্যকরিতা সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না, বলেছেন ব্র্যানসওয়েল।
“এখান থেকে বলা যাবে না যে, ভ্যাকসিনটি কাজ করে, কী করে না। প্রথম পর্যায়ে দেখা হয়: এটি কোন মাত্রায় ব্যবহার করা উচিৎ এবং এটি পরবর্তী পরীক্ষাগুলো চালানোর জন্য আদৌ নিরাপদ কিনা। দ্বিতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা চালানো হয় আরো বড় পরিসরে। এখান থেকে আপনি টিকার কার্যকরিতা সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত পেতে পারেন। তবে এটি সত্যিই কাজ করে কিনা, তা স্পষ্ট হয় তৃতীয় পর্যায়ে এসে।”
ব্র্যানসওয়েল জানান, করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য প্রতিযোগিতারত কোম্পানিগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি তাদের ট্রায়াল সম্পর্কে তথ্য জানিয়েছে। কোনো বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ না করে সেই তথ্য জানানো হয়েছে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে।
মহামারি মোকাবিলায়, প্রিপ্রিন্ট সার্ভারগুলোর অনেক ভালো ব্যবহারও দেখা গেছে। এখানে বিজ্ঞানীরা নিঃশঙ্কভাবে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করতে পারেন। পিয়ার রিভিউড নয়, বা বড় কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয়নি – এমন যে কোনো গবেষণা প্রিপ্রিন্ট সার্ভারে পোস্ট করতে পারেন গবেষকরা।
তিনি বলেছেন, “এতেই তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে। কোভিড টিকার খবরের জন্য বাজার অস্থির হয়ে আছে। কিন্তু, এসব প্রেস রিলিজে আসল তথ্য খুব কমই থাকে।”
যেমন, কেমব্রিজ ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান, মডার্না, গত ১৮ মে একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানিয়েছে তাদের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে যে আটজনকে টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের সবার শরীরেই অ্যান্টিবডি (এই অংশটিই শরীরে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে) তৈরি হয়েছে।
“এটি অবশ্যই বিকল্প কোনো ব্যবস্থার চেয়ে ভালো। কিন্তু এই টিকার ব্যাপারে কাউকে কিছু জানানোর মতো সত্যিকারের কোনো তথ্য কোম্পানিটি দেয়নি। তারপরও তাদের শেয়ারের দাম বিপুল আকারে বেড়েছে”, বলেন ব্র্যানসওয়েল।
১৮ মে, শেয়ারবাজার বন্ধ হওয়ার সময়, মডার্নার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ছিল ৮০ ডলার, যা আগের দিন একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
“পরের দিন, আমি একটি লেখায় বলি, তাদের প্রেস রিলিজে খুব বেশি তথ্য নেই,” বলেন ব্র্যানসওয়েল। “আমি বলিনি যে তাদের টিকা কাজ করে না। শুধু বলেছি যে, তাদের প্রেস রিলিজে উল্লেখযোগ্য কিছু নেই।”
১৯ মে, মডার্নার শেয়ারের দর কমে যায়। সে দিন লেনদেনের শেষ বেলায় তা নেমে আসে ৭১.৬৭ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় ১০ শতাংশ কম।
শুয়িটজার বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা নিয়েও অনেক বেশি আশাবাদ ছড়ানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীদের ওপর করা ছোট আকারের গবেষণা নিয়েও এমন প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। যেমন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর গত মে মাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম ছিল, “ChAdOx1 nCoV-19 টিকার পরীক্ষায় কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা পেয়েছে বানর।” অথচ এনআইএইচ-এর উল্লেখ করা এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে মাত্র ছয়টি বানরের ওপর। গবেষণাপত্রটি একটি প্রিপ্রিন্ট সার্ভারে পোস্ট করা হয়েছিল।
এনআইএইচ-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই গবেষণার ফলাফল এখনো অন্য কেউ পর্যালোচনা করেনি। কিন্তু কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সবাইকে সাহায্য করার লক্ষ্যে এটি শেয়ার করা হলো।”
মহামারি মোকাবিলায়, প্রিপ্রিন্ট সার্ভারগুলোর অনেক ভালো ব্যবহারও দেখা গেছে। এখানে বিজ্ঞানীরা নিঃশঙ্কভাবে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করতে পারেন। পিয়ার রিভিউড নয়, বা বড় কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয়নি – এমন যে কোনো গবেষণা প্রিপ্রিন্ট সার্ভারে পোস্ট করতে পারেন গবেষকরা। এ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে জার্নালিস্টস রিসোর্সের এই এপ্রিল মাসের টিপশিটে।
কোভিড-১৯ রিপোর্টিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শুয়িটজার ও জেএএমএ-র সহযোগী সম্পাদক রিচার্ড সাইটজ এই প্রবন্ধে লিখেছেন, শুধুমাত্র একটি গবেষণা নিয়ে কোনো রিপোর্ট করলে, সেখানে বলে দেওয়া উচিৎ: এই গবেষণা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রমাণ করে না। সাংবাদিকদের উচিৎ, এই ক্ষেত্রের অন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের মতামত প্রতিবেদনে অন্তর্ভূক্ত করা।
২. করোনাভাইরাসের টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে কিনা, সে ব্যাপারে পাঠক-দর্শকদের জানান।
ব্র্যানসওয়েল বলেছেন, “যদি এই টিকাগুলো কিছু সময়ের জন্য হলেও অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তাহলে মানুষকে সে ব্যাপারে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। টিকা নেয়ার পর মানুষ যদি কিছু সময়ের জন্যও খারাপ অনুভব করে, তাহলে এগুলো নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কথাবার্তা হবে। ফলে পাঠক-দর্শকদের যদি আগে থেকেই বিষয়গুলো জানিয়ে রাখা যায়, তাহলে তা ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধেও টিকা হিসেবে কাজ করবে।”
করোনাভাইরাসের টিকা শেষপর্যন্ত সবার ব্যবহারের জন্য তৈরি হলে, মানুষকে তার কার্যকরিতা সম্পর্কে কিভাবে আশ্বস্ত করা যাবে, তা নিয়ে এখন কাজ করছেন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনওআরসি ও অ্যাসোসিয়েট প্রেস। সেখান থেকে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে এখনো অনিশ্চিত ৩১ শতাংশ মানুষ, এবং ২০ শতাংশ মানুষ বলেছে, তারা এই টিকা নেবেন না।
ব্র্যানসওয়েল বলেছেন, “কোভিড-১৯ টিকা তৈরির চেষ্টা চলছে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে। এবং এই জরিপ থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এ ব্যাপারে কিছুটা সংশয়ী।”
কোভিড-১৯ টিকার প্রথম দিককার ট্রায়ালের যেসব রিপোর্ট পাওয়া গেছে, তা থেকে দেখা যায়, যাদের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তারা টিকা গ্রহণের পর কয়েক দিনের জন্য মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টের পেয়েছেন। যেমন, যুক্তরাজ্যের বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্লাক ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করা টিকার ওপর প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট জার্নালে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবাই টিকা গ্রহণের পরের কয়েক দিন নানাবিধ অস্বস্তিতে ভুগেছেন। যেমন: মাংসপেশীতে ব্যথা ও বমি বমি ভাব। তবে এই জটিলতাগুলো ধীরে ধীরে চলে যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ল্যানসেটের প্রতিবেদনে।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রোগীরা একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন। যেমন, টিকা নেওয়ার জায়গায় ব্যথা, মৃদু মাথাব্যাথা, ক্লান্তি, জ্বর জ্বর ভাব, অস্বস্তি ও মাংসপেশীতে ব্যাথা। অন্তত দুটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের কোভিড-১৯ টিকার সর্বোচ্চ ডোজ ব্যবহারের পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কারণ এটি ব্যবহারের পর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, তা অত্যন্ত তীব্র ‘গ্রেড ৩’ ক্যাটাগরিতে পড়বে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট করার সময় সাংবাদিকদের অবশ্যই একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে: কাদের ওপর পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত জার্নালে, এই জনমিতিক তথ্য সাধারণত উল্লেখ করা থাকে গবেষণাপত্রের এক নম্বর টেবিলে।
এফডিএ-র তথ্য অনুযায়ী: গ্রেড ৩ ক্যাটাগরির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে বিবেচনা করা হয় গুরুতর হিসেবে। এটি হয়তো প্রাণঘাতী নয়, কিন্তু এক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. টিকা পরীক্ষায় অংশ নেয়া রোগীদের জনমিতিক বিবরণ পাঠকদের সামনে তুলে ধরুন
কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট করার সময় সাংবাদিকদের অবশ্যই একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তা হলো: কোন ধরনের রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
বাউচনার বলেছেন, “কাদেরকে নিয়ে এই গবেষনাটি করা হয়েছে? এখানে কি শুধু ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী সুস্থ্য মানুষরা ছিলেন?” তাহলে এই পরীক্ষার ফলাফল হয়তো ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সী বা কোনো অসুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
চিকিৎসা সংক্রান্ত জার্নালে, এই জনমিতিক তথ্য সাধারণত উল্লেখ করা থাকে গবেষণাপত্রের এক নম্বর টেবিলে।
৪. ভ্যাকসিন সম্পর্কে যা জানা গেছে, তার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বুঝতে পাঠক-দর্শককে সাহায্য করুন।
মহামারি সম্পর্কে যখন যা জানা যাচ্ছে, তা দ্রুত একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য চিকিৎসা জার্নালগুলো একদম প্রাথমিক ধাপের গবেষণাগুলোর প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে।
বাউচনার বলেছেন, “মহামারির সময় বলে আমরা এখন এমন অনেক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করছি যেগুলো হয়তো অন্য কোনো সময় করতাম না।”
তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন জেএএমএ-র জুন সংখ্যায়। শিরোনাম ছিল, “মহামারির সময়ে সম্পাদকীয় মূল্যায়ন ও পিয়ার রিভিউ: কিভাবে জার্নালগুলো মান ধরে রাখছে।”
বাউচনার বলেছেন, পাঠকদের এটিও বুঝতে পারা উচিৎ – টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে গবেষকদের আরো সময় লাগতে পারে। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কোনো টিকা বা ওষুধ কতটা নিরাপদ, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায় এসব ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেকে।
“মহামারির সময় বলে আমরা এখন এমন অনেক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করছি যেগুলো হয়তো অন্য কোনো সময় করতাম না।” — হাওয়ার্ড বাউচনার, জেএএমএ-র প্রধান সম্পাদক
একই সাথে, কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ভাসাভাসা ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট করা হলে পাঠকদের কাছেও অস্পষ্ট থেকে যায় যে, বিজ্ঞানীরা আসলে কী জেনেছেন। চিকিৎসা গবেষণায়, গবেষকরা প্রায়ই একটি জিনিস হিসেব করতে চান, যেটিকে তারা বলেন: ৯৫% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের ওয়েবসাইটে ৯৫% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে: “যদি একটি গবেষণা ৯৫% নির্ভরযোগ্য হয়, এবং এখানে কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল থাকে ৪৭-৫৩; এর অর্থ: যদি গবেষকরা পুরো জনগোষ্ঠী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে একের পর এক গবেষণা করতে থাকেন তাহলে তারা ৯৫% সময়ে ৪৭ থেকে ৫৩-র মধ্যে ফলাফল পাবেন।” কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালকে সংক্ষেপে সিআই বলেও উল্লেখ করা হয়। এটি ৯০% থেকে ৯৯%-এর মধ্যে যে কোনো কিছুই ধরা যায়। কিন্তু চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে ৯৫%-ই প্রচলিত।
কোনো নির্দিষ্ট টিকা, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করতে পারে কিনা, তা যাচাই করে দেখার উপায় হিসেবে আরেকটি অনুমানভিত্তিক উদাহরণ দিয়েছেন বুচনার।
এই অনুমানভিত্তিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে, গবেষকরা দেখেছেন: সংক্রমণ রোধে তাদের টিকার সাফল্যের হার ৪০ শতাংশ। কিন্তু এই সংখ্যাটি গবেষকদের একটি গড় হিসেব। যেটি তৈরি করা হয়েছে কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালের সাপেক্ষে সম্ভাব্য সফলতার হার বিবেচনায়।
বাউচনারের বর্ণনা করা এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে, কনফিডেন্স ইন্টারভ্যাল ধরা হয়েছে বিস্তৃতভাবে। এবং এই টিকার কার্যকারীতা সর্বনিম্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ হতে পারে।
৯৫% কনফিডেন্স ইন্টারভ্যালের দিকে ইঙ্গিত করে বাউচনার বলেছেন, “বিষয়টি মানুষের জন্য বোঝা একটু কঠিন হতে পারে। কিন্তু এটি সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। একটি টিকা কতটা কার্যকর, তার কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর আমরা কখনো পাব না। আমরা শুধু একটি ব্যাপ্তির কথা বলতে পারি এবং বোঝানোর চেষ্টা করতে পারি যে, এই ব্যাপ্তির কতটা সত্যি হবে।”
৫. সোর্স নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন, বিশেষভাবে তাদের সঙ্গে, যারা আপনাকে গবেষণার ডেটা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে রিপোর্ট করার সময় যত বেশি সম্ভব দৃষ্টিকোন অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন পলিটিকো প্রো-র ব্রেনান। বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ভালোভাবে খতিয়ে দেখারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। একই রকম পরামর্শ দিয়েছেন ব্র্যানসওয়েলও।
তিনি বলেছেন, “টিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলুন। এমন কাউকে খুঁজে বের করুন, যিনি আপনাকে গবেষণাপত্রের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে পারবেন। রিপোর্টাররা সাধারণত গবেষণা নিয়ে লেখা নিবন্ধ পড়েন। কিন্তু টিকার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো থাকে ডেটায়। কখনো কখনো ডেটা থেকে এমন অনেক কিছু পাওয়া যায়, যা লেখায় বলা থাকে না।”
অনেক ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯-এর পরীক্ষামূলক টিকা তৈরির ক্ষেত্রে নতুন কৌশল কাজে লাগানো হয়েছে। এগুলো নিয়ে রিপোর্টিংয়ের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও সজাগ থাকতে হবে সাংবাদিকদের। পরীক্ষার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, এমন টিকাকে অনুমোদন দেয়নি এফডিএ। যেমন এমআরএনএ টিকা। মডার্না, এই এমআরএনএ টিকাকে বর্ণনা করেছে প্রোটিনে জেনেটিক কোড সংযুক্ত করার উপায় হিসেবে। এই বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ? ব্রযানসওয়েল বলেছেন: “টিকা পরীক্ষা করার পদ্ধতি সম্পর্কে যত ভালো অভিজ্ঞতা থাকবে, তত ভালোভাবে নতুন এই টিকার কার্যকরিতা যাচাই করতে পারবেন এফডিএ-র বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কোভিডের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না।”
টিকার নিরাপত্তা ও বিতরণ নিয়ে রিপোর্ট করার সময়, রিপোর্টারদের আরো যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, তা জার্নালিস্টস রিসোর্সের আরেকটি লেখায় বর্ণনা করেছেন ডুলি ইয়ং।
অন্যান্য রিসোর্স
দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ কেয়ার জার্নালিস্টস নিয়মিতভাবে ওয়েবিনার আয়োজন করে এবং মহামারি কাভারের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহায়ক হবে- এমন লেখা প্রকাশ করে। এই মাসে, এএইচসিজে একটি লেখা প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ছিল: “প্রেস রিলিজ রিপোর্টিং ইজ ইররেসপন্সিবল — স্পেশালি ইন এ প্যানডেমিক।”
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির একটি বিনামূল্যের অনলাইন কোর্স আছে, যেখানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। টিকা তৈরি সংক্রান্ত বিষয়ও এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
এবছরের শুরুর দিকে একটি অনলাইন কোর্স চালু করেছে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের নাইট সেন্টার ফর জার্নালিজম ইন দ্য আমেরিকাস। কোর্সটির শিরোনাম ছিল: “কভারিং কোভিড-১৯ নাও অ্যান্ড ইন দ্য ফিউচার।” ইউনেসকো ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা এই কোর্সটি পাওয়া যাবে নাইট সেন্টারের ওয়েবসাইটে।
হেলথ নিউজ রিভিউ, প্রকাশনা বন্ধ করেছে ২০১৮ সাল থেকে। তবে শুয়িটজার ও আরো কয়েকজন অনিয়মিতভাবে নতুন নিবন্ধ পোস্ট করেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্টিংয়ের অনেক রিসোর্স ও টিপশিট পাওয়া যাবে এই সাইটে। যেমন: “টিপস ফর অ্যানালাইজিং স্টাডিজ, মেডিক্যাল এভিডেন্স অ্যান্ড হেলথ কেয়ার ক্লেইমস।”
কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত প্রধান ইস্যুগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে দ্য চিলড্রেনস হসপিটাল অব ফিলাডেলফিয়ার ওয়েবসাইটের প্রশ্নোত্তর পেজে।
কোভিড-১৯ টিকার জন্য নেওয়া “অপারেশন ওয়ার্প স্পিড” উদ্যোগ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস-এর ওয়েবসাইটে। কোন কোম্পানির সঙ্গে তারা চুক্তি করেছে, তার একটি টাইমলাইনও পাবেন এখানে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার সংবাদমূল্য যাচাইয়ের একটি টিপশিট তৈরি করেছে জার্নালিস্টস রিসোর্স।
এই লেখাটি গত ২৩, আগস্ট, ২০২০ তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল জার্নালিস্টস রিসোর্সের সাইটে। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো।