১০ অনুসন্ধানী টুল, যাদের কথা সম্ভবত আপনি আগে শোনেননি
যেমনটা অনেকেই বলেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আর দশটা স্টোরির মতই, তবে তাতে অনেক শ্রম দিতে হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নথিপত্র খোঁজাখুঁজি, উৎস যাচাই আর তথ্য বিশ্লেষণে অজস্র সময় ব্যয় করেন – অবশ্য শেষ পর্যন্ত যদি সেই তথ্য পাওয়া যায়। একজন অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসাবে, আমাকে অনেক স্টোরি করতে হয়। আর সেইসব স্টোরির উৎস, গল্প বা প্রাথমিক সূত্র খুঁজে বের করতে আমি কিছু টুল সবসময় ব্যবহার করি।
তথ্য খুঁজে বের করা, কাজের গতি বাড়ানো এবং অনুসন্ধানের ট্র্যাক রাখার জন্য সেরা তেমন ১০ টি টুলের সাথে এবার আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি:
হান্টার.আইও (Hunter.io)
কোনও ব্যক্তির যোগাযোগের ঠিকানা বা তথ্য খুঁজে বের করা অনুসন্ধানের একটি বড় অংশ এবং Hunter.io এই কাজের জন্য দারুণ। এটি যে কোনও ডোমেইন – যেমন, সরকারি অফিস – থেকে যে কারও ইমেইল অ্যাড্রেস বের করে আনতে পারে। যে ইমেলটি খুঁজছেন তা দেখাতে না পারলে, হান্টার তার নিজস্ব সূত্র ব্যবহার করে ( যেমন, “{last name} {first name}@company.com,”) আপনাকে কয়েকটি সম্ভাব্য ইমেইল ঠিকানা দেবে। যা ইমেল ভেরিফায়ার এর মাধ্যমে আপনি যাচাই করে নিতে পারবেন। আমি ক্রোম (Chrome) ব্রাউজারে হান্টারের এক্সটেনশন ইনস্টল করে রেখেছি। এটি লিঙ্কডইন প্রোফাইলে “তাদের ইমেল খুঁজুন” নামে একটি বাটন যুক্ত করে।
ইন্টেল টেকনিকস (IntelTechniques)
আমরা সবাই ফেসবুকে কাউকে না কাউকে গোপনে অনুসরণ করেছি – আমি তো করেছি-ই। সেই কাজটাই ইন্টেল টেকনিকসে করা যায়, একসাথে কয়েক ডজন সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েব প্লাটফরমে। কোনও ব্যক্তির নাড়ী-নক্ষত্র জানা, তাকে ট্র্যাক করা, এমনকি তার অনলাইন জীবনের মধ্যেও ঢুকে পড়তে পারেন – এর মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, এর ফেসবুক টুল আপনাকে দেখিয়ে দিবে, একজন ব্যক্তি কোন ছবিতে লাইক দিয়েছেন বা কোন ভিডিওতে তাকে ট্যাগ করা হয়েছে।
ইনভিড (InVID)
ওয়েবে ছবি এবং ভিডিও যাচাই করার প্রযুক্তি এখনও উন্নয়নশীল। সাধারণ ছবির তুলনায় ভিডিও যাচাই আরও কঠিন। এই কাজের জন্য এখন পর্য্ন্ত সবচেয়ে কার্য্কর টুল, ইনভিডের ব্রাউজার এক্সটেনশন। ইউরোপীয় সাংবাদিক এবং প্রোডাক্ট ডিজাইনারদের একটি কনসোর্টিয়াম এটি তৈরি করেছে। এটি ভিডিও থেকে তার থাম্বনেইল, ফ্রেম, মেটাডেটা এবং আরও অনেক তথ্য বের করে আনে; যা আপনাকে ভিডিওর ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে। অবশ্য, এখন পর্যন্ত ইনভিড কাজ করে শুধু ইউটিউব ও ফেসবুক ভিডিওতে। এর একটি ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন শিগগিরই ছাড়া হবে।
ইউটিউব ডেটাভিউয়ার (YouTube DataViewer)
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই ইউজার জেনারেটেড (সাধারণ ব্যবহারকারীদের তৈরি) কনটেন্ট এর সত্যতা যাচাইয়ে আগ্রহী। এজন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৈরি করেছে ইউটিউব ডেটাভিউয়ার, যা ইউটিউব ভিডিওর উৎস খুঁজে পেতে সহায়তা করে। আপনি যদি ভিডিওতে আগ্রহী না হন, তাহলে তার থাম্বনেইল (ভিডিওর অংশ বিশেষের ছোট ছোট স্থিরচিত্র) দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ চালাতে পারেন। দুর্ভাগ্য, আপাতত অনলাইনে ভিডিও যাচাইয়ের জন্য এর চেয়ে বেশী কিছু নেই।
স্কুপ (Sqoop)
কোন জিনিসটি অন্য রিপোর্টিং থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আলাদা করে? নথি। আর নানা ধরণের নথি অনুসন্ধানের সুযোগ করে দেয় স্কুপ। এটি একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাইট, যেখানে দেশটির ফেডারেল আদালতের রেকর্ড, ব্যাবসায় ফাইলিং এবং অন্যান্য দলিলপত্র পাওয়া যায়। চাইলে এর মাধ্যমে কোনও নির্দিষ্ট কেইসকে অনুসরণ করতে পারেন। অ্যালার্ট সেট করে রাখলে, ওই বিষয়ে যখনই কোনও নতুন নথি জমা হবে, আপনি সাথে সাথে তা জানতে পারবেন। এটি ব্যবহারের খরচ মাসে ৯৯ ডলার। কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য ফ্রি।
এভারনোট (Evernote)
অন্য কোন জিনিস অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আলাদা করে? একগাদা নোট, রেকর্ড, সাক্ষাৎকার এবং অন্যান্য উপাদান। আমি কাজ করছি, এমন একটি স্টোরিতে সাক্ষাৎকার, নিবন্ধ, একাডেমিক গবেষণাসহ প্রায় ১০০টি নোট রয়েছে। আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকের এই বিশাল গবেষণাকে এক জায়গায় ধারণ করতে পারে এভারনোট। এর আরেকটি সুবিধা হল, ফ্রি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, যা সেরা মানের স্ক্যানার এবং টেক্সট সার্চ সুবিধা, আপনার পকেটে এনে দেয়। এই দুটি বৈশিষ্ট্যের কারণে সাংবাদিকদের জন্য অন্যতম সেরা টুল হিসেবে বিবেচিত, এভারনোট।
ক্ল্যাক্সন (Klaxon)
ক্ল্যাক্সন ব্যবহারে যতটা ঝামেলা, তার চেয়ে অনেক বেশী সুবিধা। কারণ বাজারে ওয়েবসাইট এবং তার পরিবর্তন ট্র্যাক করার সেরা টুল, এটাই। মার্কিন বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকতার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, মার্শাল প্রজেক্টের কর্মীরা এটি তৈরি করেছেন। তবে যে কোনও ভাষার ওয়েবসাইটে, কাজ করে ক্ল্যাক্সন। এটি সেট আপ করার জন্য হেরোকুতে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন এবং গিটহাবে মার্শাল প্রজেক্টের দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করুন। প্রাথমিক সেই ঝামেলা একবার পার হয়ে এলে, আপনি ইমেইল নোটিফিকেশন সেট করে রাখতে পারবেন। তারপর থেকে সেই পেইজে কোনও পরিবর্তন হলেই, জেনে যাবেন।
বটোমিটার (Botometer)
হাজারো ট্রল, সমালোচক এবং গুপ্তচরের ভিড় থেকে অনলাইনে কোনও ব্যক্তির প্রোফাইল, আসল নাকি নকল, তা খুঁজে বের করা খুবই কঠিন। এটি জানতে পারলে, বড় একটি মাথাব্যাথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর এই কাজটিকে সহজ করে দেয় বটোমিটার। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষকদের তৈরি করা টুলটি, কৃত্রিম বা সফটওয়্যার (বট) চালিত টুইটার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে ধারণা দেয়। তার অনুমান যে পুরোপুরি সঠিক হবে, তা নয়, তবে এখনও এটি অন্যতম সেরা বট-স্পটার। ইউজারদের ফলোয়ার বা অনুসারী তালিকায় বট আছে কিনা, তা চেক করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন।
বার্নার (Burner)
গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা এখন সবারই একান্ত চাওয়া, আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের চিন্তা করার আরো কারণ আছে। আপনি যতই মেসেজ এনক্রিপ্ট বা ভিপিএন ব্যবহার করেন না কেন, মেটাডেটায় ঠিকই নিজের ট্রেস রেখে যাচ্ছেন। এই সমস্যা থেকে রেহাই দেবে বার্নার ফোন লাইন। বার্নার আপনাকে কানাডা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরিয়া কোডসহ একটি “ফোন নম্বর” দেবে, মাত্র ৫ ডলার বা তার চেয়ে কম খরচে। তবে এতে এখনও আন্তর্জাতিক কল সুবিধা নেই।
ওলিগ্রাফার (Oligrapher)
এটা যতটা না রিপোর্টিংয়ের টুল, তার চেয়ে অনেক বেশী প্রকাশ বা ভিজ্যুয়াল সংশ্লিষ্ট। নামেই ওলিগ্রাফার এর উদ্দেশ্য নিহিত। এর কাজ, ওলিগার্ক, অর্থ্যাৎ স্বৈরশাসকদের অনুগত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর গ্রাফ তৈরি। এটি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার নেটওয়ার্কের একটি মানচিত্র তৈরি করে দেবে আপনাকে। ‘লিটল সিসের’ ডেটাবেসে সংরক্ষিত, ওলিগার্কদের লাখ লাখ ডেটা থেকে, সহজেই সেই গ্রাফ তৈরি করা যায়। আপনি যে ব্যক্তি বা সংস্থাকে ম্যাপ করতে চান, তা ডেটাবেসে না থাকলে, নিজেই তাদের তথ্য সেখানে যুক্ত করতে পারবেন।
অনুসন্ধানের জন্য আপনি আর কী ব্যবহার করেন? আরো টুলস সম্পর্কে জানতে, জিআইজেএন এর রিসোর্স সেন্টার দেখুন এবং সামান্থা সান এর টুলস ফর রিপোর্টার্স নিউজলেটারে সাইন আপ করুন।
সামান্থা সান থাকেন লুইসিয়ানার নিউ অরলিনসে, কাজ করেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে। মূলত ডেটা এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তার আগ্রহ। তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে সাংবাদিকদের ডিজিটাল টুলস সম্পর্কে শিক্ষা দেন এবং ‘টুলস্ ফর রিপোর্টার্স’ নামে একটি নিউজলেটার প্রকাশ করেন।