প্রবেশগম্যতা সেটিংস

জিআইজেসি২৩-তে যৌথভাবে ২০২৩ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড জিতেছে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার জামফারা প্রদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীদের নিয়ে বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের প্রতিবেদন। ছবি: স্ক্রিনশট, বিবিসি আফ্রিকা আই

লেখাপত্র

বিষয়

মোটরসাইকেলে চেপে দুর্গম এলাকা চষে নাইজেরিয়ার এক সাংবাদিক যেভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করেছেন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

একজন নির্ভীক সাংবাদিক এবং তার মোটরসাইকেল ঠিক কী কী করতে পারে?

মাত্র ২৭ বছর বয়সী নাইজেরিয়ান সাংবাদিক ইউসুফ আনকা, তিন বছর ধরে মোটরসাইকেলে করে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার বিপজ্জনক অঞ্চলগুলো চষে বেড়িয়েছেন এবং বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের হয়ে নিজ অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। তাঁর কাজের ফল হলো, “দ্য ব্যান্ডিট ওয়ারলর্ডস অফ জামফারা” নামের একটি তথ্যচিত্র, যা ১৩তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে লার্জ আউটলেটস বিভাগে যৌথভাবে ২০২৩ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড জিতেছে

বিগত পাঁচ বছর ধরে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল ও খোলা ট্রাকে করে গোটা অঞ্চল জুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, নিরাপত্তা পোস্টে হামলা করছে এবং গণ অপহরণ করে লাখ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবী করে আসছে।

আনকা জানান, তিনি আগে হিউমঅ্যাঙ্গেলের প্রতিবেদক হিসাবে কাজ করতেন এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন।

তিনি বলেন, “আমি লিখছিলাম, তবে জানতাম যে অঞ্চলটিতে সংকটের মাত্রা ব্যাখ্যা করার জন্যে তা যথেষ্ট নয়।” অবশেষে বিবিসির যখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং অঞ্চলটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক বিমান হামলার ওপর প্রতিবেদন তৈরির কথা বলে, তখন তার জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়।

“২০১৯ সালে নাইজেরিয়ান এয়ার ফোর্স একটি বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর বোমা হামলা চালায়,” বলেন তিনি। “ঘটনাটি ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে যায় এবং বিবিসি তা নিয়ে বড় পরিসরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা আমাকে এটি নিয়ে কাজের কথা বলে, এবং আমি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র খুঁজতে শুরু করি।”

তবে আনকা বলেন, কাজে নেমে তিনি দ্রুতই অনুসন্ধানের ফোকাস পরিবর্তন করে সংঘাতের নেপথ্যের গল্প এবং বাইরে থেকে যা ভাবা হয় সার্বিক পরিস্থিতি যে তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ ও জটিল – সেদিকে মনোযোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। “আমি যখন বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে কথা বলি, তখন বুঝতে পারছিলাম অনেক লোক নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার হওয়া লোকগুলোও আবার কোনো না কোনোভাবে অপরাধের সঙ্গে জড়িত” ব্যাখ্যা করেন তিনি। জমি ও গবাদি পশুর চারণভূমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে প্রতিশোধমূলক হামলার ঘটনার ঘটে, “যা ছিল খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি।”

সংযোগ প্রতিষ্ঠা

দস্যু নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটা ছিল অনুসন্ধানের সবচেয়ে কঠিন অংশ, বলেন আনকা। বেশ কয়েক মাস সময় নিয়ে তিনি উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় চলমান সশস্ত্র মিলিশিয়া সংঘাতের নেতৃত্বদানকারী দস্যুদলের নেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালান।

প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ করার সময় ইউসুফ আনকা ছিলেন আইনের ছাত্র। তিনি বেড়ে উঠেছেন জামফারায়। ছবি: স্ক্রিনশট, বিবিসি আফ্রিকা আই

“ঠিক কোন বা কার নম্বরে ফোন করার মাধ্যমে আমি কাজ শুরু করতে পারি তা খুঁজে বের করতে আমার বেশ কয়েক মাস সময় লেগে যায়,” বলেন তিনি। “লোকেরা আপনাকে ফোন নম্বর দেবে কিন্তু সেখানে ফোন করার অনুমতি দেবে না। তাছাড়া তারা জানেনই না যে, একজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে ঠিক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন বা কী বলবেন। মাঝে মাঝে আমি যখন তাদের ফোন নম্বরে কল দিতাম, তারা আমার ব্লক করে দিত। সে ছিল ভীষণ অস্থির আর অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি।”

২০২০ সালে সরকারের নেতৃত্বে দস্যু-দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সময় আনকার সামনে একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সুযোগ আসে। জনৈক ব্যক্তি তাকে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক দস্যুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য আনকাকে একটি সশস্ত্র ক্যাম্পে দুইবার যেতে হয়, কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।

“আমি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ওখানে গিয়ে আমাকে মূলত নিজের সাক্ষাৎকারই দিতে হয়েছিল,” বিষয়টিকে তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেন। “আমি কাদের হয়ে কাজ করছি তা জানতে তারা আমার নাম যাচাইয়ের জন্য গুগলে তাদের নিজস্ব অনুসন্ধান চালায়। আপনি তাদের সম্পর্কে যা বলেছেন তা দেখতে তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে গিয়ে যাচাই করবে, আপনাকে ওই সব পোস্টের ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং তারপর নতুন আলোচনা শুরু করতে হবে।”

আনকা বলেন যে, প্রায় তিন মাস ধরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলার ব্যর্থ চেষ্টা এবং শারীরিক ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার পর বিবিসি প্রতিবেদনটি থেকে তাঁকে সরিয়ে নেওয়ার এবং অনুসন্ধানটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।

“সে ছিল সত্যিই কঠিন ও কঠোর এক সিদ্ধান্ত,” বলেন তিনি। “সশস্ত্র দলগেুলোর ক্যাম্প যে সব জঙ্গলে অবস্থিত, সেখানে ইন্টারনেট সংযোগের অপ্রতুলতার কারণে কারো গতিবিধি ট্র্যাক করার কোনো উপায় ছিল না।”

তবে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অনড় ছিলেন আনকা। তিনি বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে যেতে থাকেন, যোগাযোগ তৈরি করেন এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে চ্যাট করতে থাকেন।

অবশেষে, একটি সুযোগ

অবশেষে, তিনি সশস্ত্র দলগুলোর নেতাদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার ও চিত্রধারনের সবুজ সংকেত পান এবং চিত্রগ্রহণ ও সাক্ষাৎকারের জন্য ১০টিরও বেশি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর দলগুলো সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল। যেদিন কারো সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা থাকতো সেদিন সকাল ৮ টায় আনকা বাড়ি থেকে বের হতেন এবং প্রায় ১০ ঘন্টা ধরে বিপজ্জনক ও ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় মোটরসাইকেল চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতেন।

কখনও কখনও, নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর বিমান হামলার কারণে দস্যু-নেতাদের সাক্ষাৎকার বাতিল করতে হতো। আনকা নিজেই দুটি বিমান হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান এবং সংঘাত তীব্রতর হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে দস্যু-ক্যাম্পগুলোতেই রাত কাটাতে শুরু করেন।

The Bandits of Zamfara

মোটরসাইকেলে করে দস্যুদের দখলাধীন এলাকায় যাওয়ার সময় আনকা শুধুমাত্র একটি আইফোন, একটি ট্রাইপড এবং সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের যন্ত্র ব্যবহার করে ডকুমেন্টারির কিছু বিপজ্জনক দৃশ্যের শুটিং করতে সক্ষম হন। ছবি: স্ক্রিনশট, বিবিসি আফ্রিকা আই

তবে তাঁর কঠোর পরিশ্রম সার্থক হয়। আনকা বলেন, এক বছর ধরে চিত্রগ্রহণ করে করে, তাঁর দল ৪০০টির বেশি ভিডিও সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।

তখন যে কত দ্রুততার সাথে কাজ সারতে হয়েছে, সেটি স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা শুধু চিত্রধারণ করে গেছি, দস্যু নেতারা যেভাবে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, আমাদের ঠিক সেভাবে সাক্ষাৎকারগুলো নিতে হয়েছে।” তিনি বলেন, “সামগ্রিক একটি চলচ্চিত্র প্রস্তাব করা, সেটি বানানো, কোন কোন বিষয়কে সামনে আনতে হবে তা ঠিক করা এবং সবকিছুকে একত্রে উপস্থাপন করার কাজটি খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।”

বাইরে থেকে সমর্থন

ড্যানিয়েল অ্যাডামসন, বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের নির্বাহী প্রযোজক ও ডকুমেন্টারি বিষয়ক পরিচালক। তিনি অনুসন্ধানের সময় আনকার সঙ্গে কাজ করেন এবং তাঁকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে কাজ চালিয়ে যেতে দরকারি সহযোগিতা ও রিসোর্সের যোগান দেন।

অ্যাডামসন বলেন, “আমরা যখন দেখলাম যে গল্পটি দাঁড়াচ্ছে এবং ইউসুফ এটি করতে সক্ষম, তখন আমরা টুইটারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা তাকে সমর্থন এবং অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছি,” অ্যাডামসন বলেন।

মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করার আগে, কীভাবে ফিল্ম শ্যুট করতে হয় এবং ক্যামেরার অন্যান্য কাজগুলো করতে হয় সে সম্পর্কে বিবিসির পক্ষ থেকে আনকাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাকে একটি আইফোন, একটি ট্রাইপড এবং সাউন্ড রেকর্ডার দেওয়া হয়, যা তিনি ডকুমেন্টারিতে বিপজ্জনক কিছু দৃশ্যের শুটিংয়ে ব্যবহার করেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্পাদকীয় ও স্টোরিটেলিং বিষয়ক সহায়তা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানের অগ্রগতি হলে আনকার সঙ্গে যোগ দেন বিবিসির আলোকচিত্র বিভাগের পরিচালক টম সাটার। পেশাদার সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, তিনি আধুনিক ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে চিত্রধারণের কাজও করেন।

“আমরা প্রতিদিন টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলে প্রতিটি কৌশল ও পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে সুক্ষ্ণভাবে দিকনির্দেশনা ও সমর্থন দিতাম,” বলেন অ্যাডামসন। ”কীভাবে এ গোষ্ঠীগুলোর কাছে পৌঁছানো যায় ও গল্পগুলো বলা যায় সে বিষয়ক কৌশল নিয়ে আমরা তার সঙ্গে আলোচনা চালাই। আমরা তাকে ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকির মাত্রা প্রশমনে সাহায্য করি, যা ছিল অনেক বড় ব্যাপার, যা আপনি অনুমান করতে পারেন।’’

সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও চিত্রধারনের পর, আনকা বিবিসি দলের সঙ্গে গল্পের চিত্রনাট্য তৈরি ও ভিডিও সম্পাদনার জন্য লন্ডনে যান।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারিত হওয়ার পর বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয় — তবে সবাই যে সাধুবাদ দিয়েছে তা নয়। নাইজেরিয়ান সরকার এ তথ্যচিত্রটিকে “সন্ত্রাসবাদের গুণকীর্তন” হিসাবে নিন্দা করেন এবং নাইজেরিয়া থেকে বিবিসিকে নিষিদ্ধ করার হুমকি দেন, যদিও পরবর্তীতে তা আর করা হয়নি। কারণ নাইজেরিয়ায় তথ্যচিত্রটি ঘিরে ব্যাপক জনসমর্থন তৈরি হয়, অ্যাডামসন বলেন।

তিনি আরো বলেন, “নাইজেরিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, অনেকেই বলেছেন যে তথ্যচিত্রটি জনসেবামূলক সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ এবং এটি এমন একটি সংঘাতের ওপর আলোকপাত করে যা সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই সবার খুব অস্পষ্ট ধারণা ছিল; আর এটি নাইজেরিয়ার লোকেদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নাইজেরিয়ান দর্শকেরা ইউসুফ ও তার দলের সাহসিকতা ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রশংসা করেন।”

আনকা বলেন, সরকার ও এ অঞ্চলের অভিজাতেরা তথ্যচিত্রের সঙ্গে একমত পোষণ করেননি, কেননা এতে এ অঞ্চলের চলমান সংঘাতের নেপথ্য কারণ হিসেবে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যকার জমি ও চারণ ভূমি বিষয়ক মতবিরোধকে দায়ী করা হয়েছে।

আনকা এটি মেনে নিয়েই বলেন, “তথ্যচিত্রটি ঘিরে আমি শতভাগ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করিনি।” তিনি জানান, এটি ঘিরে অভিজাতদের বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়াই নেতিবাচক ছিল, কারণ হাউসা ও ফুলানি সম্প্রদায়ের মধ্যকার মেরুকরণকে তথ্যচিত্রটি আরো প্রশস্ত করেছে বলে তারা মনে করেছেন। আনকা বলেন, আঞ্চলিক সরকারের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও হুমকির কারণে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে পরাজয়ের আগ পর্যন্ত তিনি জামফারায় ফিরতে পারেননি।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়াগুলো এসেছে তথ্যচিত্রে যে সম্প্রদায়গুলোকে দেখানো হয়েছে তাদের কাছ থেকে। তিনি বলেন, “তারা তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত; কিছু লোক আমাকে এটাও বলেছে যে, তথ্যচিত্রে সংকটের মাত্রা অনেক কম তুলে ধরা হয়েছে।”

আনকা বলেন, দস্যুগোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে অনেকেই তথ্যচিত্রে তাদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এটি সম্প্রচারের পর বোকো হারামের একটি দল তাকে বিশ্বাসঘাতক এবং চর হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের এই হুমকি সত্ত্বেও আনকা জানিয়েছেন যে তিনি কোনো প্রতিশোধ আশঙ্কা করেন না, কারণ চলমান সামরিক বিমান হামলার মতো আরও বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে এ গোষ্ঠীগুলো।

যৌথভাবে জিএসএলএ পুরস্কারের পাশাপাশি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রটি ২০২২ ররি পেক ট্রাস্ট পুরস্কার জিতেছে এবং একাধিক প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন পেয়েছে।

“আমি খুশি যে, তথ্যচিত্রে তার অবিশ্বাস্য সাহসী কাজ স্বীকৃত হয়েছে। ইউসুফ এ স্বীকৃতির যোগ্য কারণ তিনি সত্যিই গল্পের অন্তর্মূলে পৌঁছতে পেরেছিলেন, যা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে খুব কঠিন ও বিপজ্জনক,” অ্যাডামসন বলেছেন। অন-দ্য গ্রাউন্ড রিপোর্টিংয়ে আনকার সাহস ও সংকল্প তার দলের জন্য সাফল্য বয়ে এনেছে বলে তিনি দাবি করেন।

”বিবিসি আফ্রিকা আই মূলত প্রাসঙ্গিক গল্পগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছে”, বলেন অ্যাডামসন। “আর এটি করার অন্যতম উপায় হচ্ছে মহাদেশের স্থানীয় সাংবাদিকদের দিয়ে গল্পগুলো বলানো, যেমন আফ্রিকার সাংবাদিকেরাই তাদের গল্পগুলো বলেছেন।” বিবিসি আফ্রিকা আই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কৌশলগুলোর তালিকা নিয়ে চমৎকার একটি “ফরেনসিক ড্যাশবোর্ড” তৈরি করেছে। (একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন আইডিয়া কিভাবে পিচ করতে হয়, সে বিষয়ক একটি বিশদ নির্দেশিকাও তৈরি করেছে।)

“আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো কীভাবে স্থানীয় গল্প তুলে আনার সর্বাত্নক চেষ্টা করতে পারে, এটি তার একটি ভালো উদাহরণ; এছাড়া এটিও বুঝতে পারা যে, স্থানীয় কোনো রির্পোটার সত্যিকার অর্থে গল্পটি বলতে সক্ষম,” তিনি যোগ করেন।

নাইজেরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (আইসিআইআর)-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বামাস ভিক্টোরিয়া বলেন, এ অঞ্চলের পরিস্থিতির সঙ্গে আনকার ব্যক্তিগত সংযোগ অনুসন্ধানকে বিকৃত বা বিয়োজন করার পরিবর্তে বরং সত্যিকার মাত্রা যোগ করেছে। “এটি বিশেষভাবে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ছিল কারণ তিনি এমন একটি পরিবেশে এ গল্পটি বলছিলেন যেখানে তিনি বড় হয়েছিলেন এবং সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সম্পর্কেও তারা বোঝাপড়া রয়েছে,” তিনি বলেন।

দুর্ভাগ্যবশত, প্রতিবেদনের উল্লেখ করা ঘটনাগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক হয়েই আছে, কারণ এই অঞ্চলে দস্যুতা বেড়েই চলেছে এবং তা দ্রুত দেশের উত্তর-পূর্বে ছড়িয়ে পড়ছে যেখানে বোকো হারামের বিদ্রোহীরা আগে রাজত্ব করেছিল, আনকা বলেন।

কিন্তু গল্পের পরবর্তী কিস্তিটা বলতে হবে অন্য কাউকে। আনকা সম্প্রতি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অ্যালায়েন্স ফর ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল অ্যাকশনে যোগ দিয়েছেন। মানবিক এ সংস্থাটি উত্তর নাইজেরিয়া ও আফ্রিকা জুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

“আমি বরাবরই মানবিক সেবায় আগ্রহী ছিলাম,” বলেন তিনি। “এ সংস্থাটির কার্যক্রমও সাংবাদিকতা থেকে খুব বেশি দূরের কিছু নয় কারণ এটি এখনও গোষ্ঠীগুলোকে নিয়েই কাজ করছে। আমি মানবতাবাদী অংশীজনদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব, যাতে সম্প্রদায়গুলোর কাছে পৌঁছানো যায়, এবং মানুষের প্রতিবন্ধকতা, দুঃখ দুর্দশা আর প্রয়োজনগুলো নিয়ে কাজ করা যায়।”


প্যাট্রিক এগউ নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক যিনি শিকাগো, টরন্টো, জোহানেসবার্গ, বার্লিন এবং লাগোস থেকে গ্লোব অ্যান্ড মেইল, ফরেন পলিসি, এনপিআর, রেস্ট অফ ওয়ার্ল্ড, ডেইলি ম্যাভেরিক, ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স রিভিউ, আমেরিকা ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন প্রকাশনার হয়ে কাজ করেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

জিআইজেসি২৫

জিআইজেসি২৫-এর জন্য কোনো সেশনের আইডিয়া থাকলে পাঠিয়ে দিন!

জিআইজেসি মূলত প্রশিক্ষণমূলক সম্মেলন। তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় প্রশিক্ষণের বিষয়গুলোকে, যেখানে শতভাগ নজর থাকে অনুসন্ধানী কৌশল ও পরামর্শ ঘিরে। আমরা চাই সম্মেলনের অধিবেশনগুলো যেন দক্ষতা-ভিত্তিক হয়, যাতে সারা বিশ্বের সাংবাদিকেরা নতুন জ্ঞান ও অনুসন্ধান কৌশলগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন।

সঠিক ওপেন সোর্স টুল খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন? দেখতে পারেন বেলিংক্যাটের নতুন অনলাইন ইনভেস্টিগেশনস টুলকিট

নতুন অনলাইন ইনভেস্টিগেশনস টুলকিট শুধু স্যাটেলাইট ছবি ও মানচিত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পরিবহন, অথবা অভিলেখাগারের (আর্কাইভ) মতো বিভাগের টুল সম্পর্কিত তথ্য দিয়েই সাহায্য করে না, টুলগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয়— সে বিষয়ক বিস্তারিত দিকনির্দেশনাও দিয়ে থাকে।

টিপশীট

রিপোর্টারের টিপশীট: ওসিসিআরপির আলেফে কীভাবে তথ্য খুঁজবেন

আলেফ এমন একটি তথ্যভান্ডার, যেটি সাংবাদিকদের হাজার হাজার ডেটাসেট ও সূত্রের সংযোগ বের করতে সহায়তা করে। আলেফের বিদ্যমান ডেটার সাথে আপনার হাতে থাকা তথ্যগুলো মিলিয়ে সুগভীর অনুসন্ধান চালাতে পারেন।