বোইয়ং লিম একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং পুলিৎজার সেন্টারের এআই অ্যাকাউন্টেবিলিটি নেটওয়ার্কের প্রধান। ইলাস্ট্রেশন: জিআইজেএনের জন্য স্মারান্ডা টোলোসানো
কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র: প্রতারণা ও অপরাধ, এবং বর্তমানে, এআই নিয়ে অনুসন্ধানে কাটছে যে কর্মজীবন
পুলিশ অফিসার ছিলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক হলেন, এরপর পুলিৎজার সেন্টারের এআই অ্যাকাউন্টেবিলিটি নেটওয়ার্কের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। বোইয়ং লিমের কর্মজীবনটা এমনই; ঠিক সরলও নয়, আবার পরিকল্পিত গতিপথেও আটকে যায়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বেড়ে ওঠা লিম কখনও কল্পনাই করেননি যে ভবিষ্যতে একজন সাংবাদিক হবেন। তিনি বরং পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
বোইয়ং লিম কোরিয়ান ন্যাশনাল পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিপরীতে সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজন বিদেশী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রয়োজনীয় আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা। সাইবার ক্রাইম নিয়ে দলীয়ভাবে কাজের সময়টা তাকে এ বিষয়ক অনুসন্ধানের ওপর প্রশিক্ষিত করে তোলে। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম অলাভজনক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কেন্দ্র কোরিয়া সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম— নিউজটাপার (কেসিআইজে- নিউজটাপা) একজন অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে অর্জিত দক্ষতাগুলো কাজে লাগান।
(“নিউজরুমগুলো কীভাবে কাজ করে” তা সরোজমিনে দেখার জন্য লিম মূলত ওই আউটলেটের প্রশাসনিক একটি পদে আবেদন করেছিলেন, তবে পরিবর্তে যখন আউটলেট কর্তৃপক্ষ তার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারেন তখন তাকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসাবে কাজের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়।)
নিউজটাপাতে যোগ দিয়ে চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ত্রুটিপূর্ণ বিধিবিধান নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এর সহযেগিতামূলক অনুসন্ধানী প্রকল্প ইমপ্লান্ট ফাইলস-এ কাজ করেন লিম। জার্মান পাবলিক ব্রডকাস্টার এনডিআরের সঙ্গে মিলে উন্মোচন করেন, ‘ফেক সায়েন্স’ ফ্যাক্টরি। তুলে ধরেন, কোরিয়ার শিক্ষাবিদেরা তাদের পেশাগত প্রোফাইলকে শক্তিশালী করার জন্য কী উপায়ে ভুয়া সম্মেলন ও প্রকাশনার দোহাই দিয়ে সাধারণ করদাতাদের অর্থ উড়িয়ে আনন্দ ভ্রমণ ও স্ফূর্তি করে বেড়িয়েছেন।
কিন্তু জিনজিয়াংয়ের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি উইঘুর গোষ্ঠীর ওপর সরকারের নজরদারি এবং গণ বন্দিদশার ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চায়না কেবলস-ই লিমকে নিয়ে যায় অ্যালগরিদমিক নজরদারির (অ্যালগরিদমের সাহায্যে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি চালানো) জগতে। সরকারগুলো কীভাবে এটিকে ব্যবহার করছে এবং সমাজ কীভাবে এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, এই ভেবে রীতিমতো বিষ্মিত হয়ে পড়েন তিনি।
বর্তমানে পুলিৎজার সেন্টার এআই অ্যাকাউন্টেবিলিটি নেটওয়ার্কের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লিম। সংস্থাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) কাজে লাগিয়ে এআই সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরির ওপর সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও অনুদান প্রদান করে। লিমের মতে, একজন পুলিশ অফিসার কিংবা একজন রিপোর্টার হিসাবেও তিনি সবসময় অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়াটাকেই পছন্দ করেন। বর্তমান পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদমবিষয়ক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় তহবিল এবং সমর্থন জোগাতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
এ আলাপচারিতাটি শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে জিআইজেএনের চলমান সাক্ষাৎকার সিরিজের অংশ। পুলিশ অফিসার থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক হয়ে ওঠার কথা বলতে গিয়ে লিম যেখানে অকপটে তার ইম্পোস্টার সিন্ড্রোম এবং বার্ন-আউট পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন।
জিআইজেএন: এ পর্যন্ত আপনি যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কাজ করেছেন, তার মধ্যে কোনটি আপনার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেন?
বোইয়ং লিম: নিউজটাপাতে ‘ফেক সায়েন্স’ ইনভেস্টিগেশন কাজটি করতে গিয়ে আমি ভীষণ মজা পেয়েছিলাম। কাজটি আমরা করি এনডিআরের সঙ্গে। ওরা ভুয়া জার্নালে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি কোরিয়ান নাম খুঁজে পায়। যার মাধ্যমে আমরা উন্মোচন করি কীভাবে কোরিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা (বিশ্বাস করুন বা না করুন, উত্তর ও দক্ষিণ দুই কোরিয়াতেই) নিজেদের নিম্নমানের গবেষণাপত্রের বিপরীতে একাডেমিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অভিনব পন্থায় ভুয়া সম্মেলন ও জার্নালগুলোকে ব্যবহার করেছে।
প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে তা পাঠকদের সামনে তুলে ধরার জন্য, আমাদের দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি সম্মেলনে অশুদ্ধ ও এলোমেলোভাবে লেখা অটো-জেনারেটেড একটি গবেষণাপত্র জমা দেওয়া হয়। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে, গবেষণাপত্রটি গৃহীত হয়েছে। এগুলো মূলত ব্যবসায়িক মডেল: আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবেন, আপনি যা কিছুই জমা দেন না কেন, তা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করা হবে। এমনকি সম্মেলনের কথা বলে অনেকে ইতালি বা ভেনিসে গেলেও তারা কোনো আলোচনায় উপস্থিত থাকেন না, বরং শহরগুলো ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দ করে সময় কাটান। তবে সমস্যাটি হচ্ছে কোরিয়ার এই শিক্ষাবিদ ও গবেষকেরা তো নিজেদের অর্থ খরচ করে ওখানে যান না, তারা যান সরকারী খরচে, করদাতা বা জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করে। কোরিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনে আমরা এমন অনেক শিক্ষাবিদকে খুঁজে পেয়েছি, যারা তাদের রিপোর্টে সম্মেলনে অংশ নেওয়াটা বিষয়টিকে রীতিমতো অনন্য অর্জন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমাদের এ অনুসন্ধানটি কোরিয়ার একাডেমিক গবেষণা ক্ষেত্রজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পাশাপাশি গবেষণার নৈতিকতা ও যোগ্যতা মূল্যায়নের মানদণ্ড ঘিরেও আলোচনা শুরু হয়।
জিআইজেএন: আপনি যে দেশ বা অঞ্চলগুলোতে রিপোর্ট করছেন সেখানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী?
বোইয়ং লিম: দক্ষিণ কোরিয়াতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি দুইভাগে বিভক্ত: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। আইনকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে আর্থিক সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে বেশিরভাগ নিউজরুমই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যায় বা কম গুরুত্ব দেয়।
সেপ্টেম্বরে, আমার সাবেক নিউজরুম ও দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীন অনুসন্ধানী নিউজরুম আউটলেট নিউজটাপার অফিসে দেশটির রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মানহানির দাবি এনে প্রসিকিউটর অফিসের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হওয়া আগে, তিনি দেশের প্রসিকিউটর জেনারেল (প্রধান আইনজীবি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ও, একটি কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজটাপা। পাশাপাশি ফার্স্ট লেডি জড়িত থাকার ঘটনা নিয়ে আদালতের একটি মামলা ঘিরেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে আউটলেটটি।
সর্বোপরি, এই বছরের শুরুর দিকে নিউজটাপা এবং নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলো মিলে সরকারের প্রসিকিউশন পরিষেবার বিপরীতে বিশেষ বাজেট ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য উন্মোচনের দাবীতে সফলভাবে মামলা করতে সক্ষম হয়। ব্যয় সংক্রান্ত এই তথ্যগুলো আগে কখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। করদাতাদের কাছে প্রসিকিউটর অফিসের জবাবদিহিতার লক্ষ্যে তিন বছর ধরে এ আইনি লড়াই চলেছিল। আমি ধারণা করতে পারি যে, বিষয়টি ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য খুব অস্বস্তিকর হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া একটি প্রমাণিত গণতন্ত্র। সাংবাদিকেরা গণতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন— অথচ কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দ্বিধায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে— তা দুঃখজনক।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বললে: আমি দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনেছি যে, নিউজরুমগুলো আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হলে সবার আগে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট কাটা হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনুসন্ধানী এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিবেদনের ইতিবাচক ভূমিকাকে স্বীকৃতির অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ভাগ্যক্রমে, এখনও খানিকটা আশা অবশিষ্ট আছে। অনেক সাংবাদিকই তাদের কাজকে সমর্থন করার জন্য অলাভজনক ও অন্যান্য বিকল্প আর্থিক মডেল অন্বেষণ ও পরীক্ষা করছেন। যেমন নিউজটাপা জার্নালিজম স্কুলের মাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কৌশল এবং কীভাবে একটি অলাভজনক নিউজরুম চালাতে হয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করে স্বাধীন অনুসন্ধানী নিউজরুমগুলোকে সুরক্ষিত করছে। এ প্রকল্পের আওতায় একটি স্থানীয় অনুসন্ধানী নিউজরুম স্টার্টআপ চালু করা হয়েছিল। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ১০০টি স্বাধীন অনুসন্ধানী আউটলেট প্রতিষ্ঠার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে নিউজটাপা।
জিআইজেএন: একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনার সবচেয়ে বড় বাধা বা চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?
বোইয়ং লিম: আমি একজন প্রতারক — আমাকে এই মানসিক যাতনার সঙ্গে লড়ে যেতে হয়েছে। সাংবাদিকতাবিষয়ক শিক্ষাগত শূন্যতা পূরণ ও নিউজরুমে আমার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য আমি সারাক্ষণ কাজে ডুবে থাকতাম।
মানসিক যাতনার বিষয়টি কখনও কখনও আমাকে এতটাই নাজুক করে তুলতো যে, সপ্তাহান্তে আমি নিজেকে দোষী মনে করতাম, নিজেকে আরও বেশি পরিশ্রমের দিকে ঠেলে দিতাম এবং কোনো বিরতি নিতাম না এটা ভেবে যে, আমি এ কাজের যোগ্য নই। আমি মূলত আমার কর্মজীবনের গতিপথের অনন্যতার প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছি। ইম্পোস্টার সিন্ড্রোম হলো বার্নআউটের সেরা বন্ধু, যা আমাকে মারাত্মকভাবে ভুগিয়েছে। এখন মনে হয়, ভেতরের ওই দ্বিধান্বিত কণ্ঠস্বরগুলোকে চুপ করিয়ে নিজেকে আমার কিছুটা বেশি কৃতিত্ব দেওয়া উচিত ছিল।
জিআইজেএন: সাক্ষাৎকারের জন্য আপনার সেরা কৌশল বা পরামর্শগুলো কী?
বোইয়ং লিম: সাক্ষাৎকার গ্রহণের আগে আমি সবসময় কিছু বিষয়কে দরকারী হিসেবে খুঁজে পেয়েছি, যেমন:
- ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে প্রকাশিত যা যা আছে, সেগুলো পড়ুন।
- গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করুন।
- সাক্ষাৎকারের শুরুতেই মূল প্রশ্নগুলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। মনে রাখবেন, আপনি তাদের ভয় দেখাতে চান না।
- আপনি কারো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন, লোকেরা তা পছন্দ করে। তাই কেউ কথা বলার সময় আন্তরিকভাবে শুনুন, যেন তিনিই ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র ব্যক্তি… তবে তারা যা বলে সেগুলো অবশ্যই যাচাই করবেন।
জিআইজেএন: আপনি কি আপনার কোনো পছন্দের রিপোর্টিং টুল, ডেটাবেস বা অ্যাপের কথা বলবেন, যা আপনি আপনার তদন্তে ব্যবহার করেন?
বোইয়ং লিম: এটি মূলত অনুসন্ধানের ধরনের ওপর নির্ভর করে। আমি সবসময় উন্নতমানের সাবেকি কলম আর কাগজ দিয়ে কাজ চালাই। স্প্রেডশীট, পোস্ট-ইটস ব্যবহার করি। সময়ানুক্রমিকভাবে তথ্য উপাত্তগুলো সাজিয়ে রাখি।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির ওপর দরকারী অনেক লেখা হাউ-টু’স অ্যান্ড রিসোর্স পাবেন জিআইজেএনে, পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন টিপশিট। কেউ যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং এর নেপথ্যের লোকদের দায়বদ্ধতা ওপর কাজ করতে আগ্রহী হন, সেক্ষেত্রে পুলিৎজার সেন্টারের এ সংক্রান্ত দুর্দান্ত টিপ ও টুলকিটগুলো আপনার কাজে লাগবে।
জিআইজেএন: আপনার ক্যারিয়ারে আপনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো পরামর্শ কী পেয়েছেন এবং একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অনুসন্ধানী সাংবাদিককে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
বোইয়ং লিম: লেখালেখি ও সাংবাদিকতা সম্পর্কে আরো ভালো বোঝাপড়া তৈরি ও জানার জন্য আমি যে বইগুলো পড়েছি বা চলচ্চিত্রগুলো দেখেছি, তার আলোকে বলছি। অ্যান ল্যামটের লেখা, “বার্ড বাই বার্ড” গ্রন্থে যেমনটা বলা হয়েছে যে,’’পরিপূর্ণতাবাদ হচ্ছে নিপীড়কের কণ্ঠস্বর, মানুষের শত্রু। এটি আপনি ও আপনার লেখা প্রথম খসড়ার মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টির প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে এবং আপনাকে সারা জীবন অবরুদ্ধ ও বাতিকগ্রস্ত করে রাখবে”। জাপানি চলচ্চিত্র, “দ্য জার্নালিস্ট” এ যেমন বলা হয়েছে, “নিজেকে সবার চাইতে বেশি বিশ্বাস করুন, একইসঙ্গে সমপরিমাণ সন্দেহের চোখে দেখুন।”
জিআইজেএন: সাংবাদিকদের মধ্যে আপনি কার সবচেয়ে বেশি অনুরাগী এবং কেন?
বোইয়ং লিম: এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। অনেকেই আছেন, আমি যাদের গুণগ্রাহী, প্রশংসা করি। আপনি তাদের বেশিরভাগকেই চিনতে পারেন, কারণ তারা সুপরিচিত ও বিখ্যাত। তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, অনেক সাংবাদিক আছেন যাদের সম্পর্কে আমরা অবগত নই, কিন্তু তারা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, জীবন হারিয়েছেন কিংবা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন। তারা হয়তো কম পরিচিত বা বিখ্যাত, কারণ তারা এমন একটি দেশ বা অঞ্চলে কাজ করেন যা অন্যদের তুলনায় কম মনোযোগ পায়।
সম্প্রতি আমি জিআইজেসি২৩ একটি প্যানেলে অংশ নিয়েছিলাম, সেখানে জেন টাইমসের (আফগানিস্তান) সাংবাদিকদের নির্ভীক কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি, নিরাপত্তার কারণে যাদের নামগুলো আমরা জানি না। তালেবান শাসনের অধীনে একজন নারী সাংবাদিককে কাজের মূল্য হিসেবে নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে হতে পারে, তবুও তারা এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের সম্প্রদায় ও বিশ্বকে ওখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই সাংবাদিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সাহস ও প্রতিশ্রুতির গল্পগুলো শুনে আমি অভিভূত।
“আমাদের শিল্প তাদের কদর করে না যারা সরাসরি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নন, কিন্তু নেপথ্যের ওই মানুষগুলোর সহযোগিতা আমাদের কাজকে সম্ভব করে তোলে। আমাদের নিজেদের পরস্পরকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, সাংবাদিক হোক বা না হোক, আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেন ও আমাদের কাজগুলোকে সমর্থন যুগিয়ে চলেন, তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করতে হবে।
জিআইজেএন : আপনার করা সবচেয়ে বড় ভুল কী ছিল এবং আপনি তা থেকে কী শিক্ষা পেয়েছেন?
বোইয়ং লিম: আমি নিশ্চিত যে কাজ করতে গিয়ে আমি ভুল করেছি —ছোট-বড় — দুটোই। যার মধ্যে একটি আজও আমার পিছু ছাড়েনি। তখন একবারে অনেক কিছু ও সবকিছু নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করছি, আর নিজেকে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেইনি। একটা পর্যায়ে, আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি ও জড়তা বোধ করতে থাকি, নিজেকে দিয়ে কিছু আর লেখাতে পারতাম না। আমি আমাকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করতাম আর আমার কাজগুলোকে খাটো করে দেখতাম।
ওই অনিশ্চয়তার দিনগুলোতে নিজেকে একটি দুষ্টচক্রে বন্দি করে রাখার পরিবর্তে আমার কাজ সম্পর্কে সহকর্মীদের নিকট থেকে জানতে চাওয়া উচিত ছিল। কাজের খাতিরে নিজের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা, মানসিক এবং শারীরিক উভয়ই, বড় বোকামী ছিল আমার। আমাদের শরীর যন্ত্র নয়— এমনকি যন্ত্রেরও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। আজকাল আমি নিজের যত্ন নেওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, ভাল খাওয়া আর শরীর চর্চার চেষ্টা করছি। কাজই সব নয়। কাজের বাইরে আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। মহান সাংবাদিক হওয়ার চেষ্টা করার আগে আমাদের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য নিজেদের যত্ন নিতে হবে।
জিআইজেএন: আপনি বার্ন আউট সামলান কীভাবে?
বোইয়ং লিম: আমি চরম বার্নআউটে আক্রান্ত হয়েছি, যেমনটি আমি আগেও উল্লেখ করলাম। আমাদের কাজ কখনও কখনও খুব চাপের হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো আপনাকে হতাশ করেও তুলতে পারে। তাই আমি আমার কাজগুলোকে টুকরো টুকরো আকারে ভাগ করার চেষ্টা করি। এক কামড়ে খাওয়ার চেয়ে আরাম করে চিবানোর জন্য আমি “না” বলার অনুশীলন করছি।
অন্যান্য পরামর্শ; বাড়তি কাজের জন্য নিজেকে কৃতিত্ব দিন। একটু থামুন, নিজেকে সময় দিন। আমরা যদি পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হই, সেক্ষেত্রে কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসবো না।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোন দিকটিকে আপনি হতাশাজনক বলে মনে করেন, নাকি ভবিষ্যতে পরিবর্তন হবে বলে আশা করেন?
বোইয়ং লিম: অনুসন্ধানী ও সহযেগিতামূলক সাংবাদিকতাকে আরো বেশি বৈশ্বিক ও উৎসাহিত করতে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। আজ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তার বিপরীতে জিআইজেএনের নেটওয়ার্ক ও উদ্যোগ, সহযোগী নেটওয়ার্কগুলোর বিকাশে আশা খুঁজে পাচ্ছি।
আমরা যেটা করতে পারি তা হচ্ছে বৈশ্বিক পরিসরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটিকে আরো বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তভুক্তিমূলক করা। সমান অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা, সম্মানজনক কর্মমসংস্কৃতি এবং নায্য কৃতিত্বের বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি আরো বেশি বেশি দেখতে ও শুনতে চাই।
আনা পি. সান্তোস একজন সাংবাদিক, যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য, এইচআইভি এবং যৌন সহিংসতার ওপর লিঙ্গ বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির দশ বছরের বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। পুলিৎজার সেন্টার ২০১৪ পার্সেফোন মাইল ফেলো ও গ্র্যান্টি হিসাবে তিনি ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্যে শ্রম অভিবাসন নিয়ে রিপোর্ট করেছেন। তার কাজ র্যাপলার, ডয়চে ভেলে জার্মানি, দ্য আটলান্টিক, এবং দ্য লস এঞ্জেলেস টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে।