প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট থেকে যেভাবে উন্মোচিত হলো উহানের বিপর্যয় ও নিপীড়ন

English

উহানে কী ঘটে চলেছে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট থেকে। স্ক্রিনশট: করোনাভাইরাস, ফোর কর্নারস ডকুমেন্টরি

অস্ট্রেলিয়ার এবিসি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ফোর কর্নারস যখন চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ওপর একটি তথ্যচিত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়, ততদিনে প্রয়োজনীয় ছবি বা ভিডিও ধারণের সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তারা দমে যাননি। সেখান থেকে ঠিকই ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন।

সংক্রমণের মূলকেন্দ্র, উহান শহরের বাসিন্দা বা সেখানে বেড়াতে যাওয়া মানুষেরা এই ছবি-ভিডিওগুলো ধারণ করেছিলেন। তাতে দেখা গেছে কিভাবে সংক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ টানতে টানতে ভ্যানে নিয়ে তুলছে, হাসপাতালের মেঝে ও রাস্তায় কিভাবে মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছে, এবং সবচেয়ে করুণ দৃশ্য — মানুষকে ঘরের ভেতরে বন্দি রাখতে গিয়ে কিভাবে কর্মকর্তারা একটি আবাসিক ভবনের দরজা সিলগালা করে দিচ্ছেন এবং প্রতিবেশীরা ভয় নিয়ে সেটি দেখছেন।

ফোর কর্নারস এই ভিডিওগুলো সংগ্রহ করেছে, প্রতিটির সত্যতা যাচাই করেছে এবং নিজেদের রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে দারুনভাবে যুক্ত করে, বানিয়েছে ৪৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র। পুরো কাজটি তারা করেছে মাত্র তিন সপ্তাহে, যা কিনা একটি ৪৫ মিনিট দীর্ঘ তথ্যচিত্র বানানোর জন্য সাধারণত যে সময় লাগে, তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। কাজটি করতে গিয়ে নানা পদ্ধতিতে ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে ফোর কর্নারস। যেমন, একটি হাসপাতালের বিভিন্ন ভিডিও সংগ্রহ করে, তারা মিলিয়ে দেখেছেন প্রতিটিতে মেঝের ছবি একরকম কিনা। একটি ভিডিওর সত্যতা তারা নিশ্চিত করেছেন রাস্তায় দেখা যাওয়া পোস্টার পরীক্ষা করে।

তাদের তথ্যচিত্রটি প্রচারিত হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেসময় পুরো বিশ্বই বোঝার চেষ্টা করছে ভাইরাসটির ঝুঁকি কেমন। কোভিড-১৯ অন্য যেকোনো ফ্লুয়ের মতো – এই ভুল ধারণা পুরোপুরি ভেঙ্গে দেয় অনুষ্ঠানটি।

সংক্রমণের মূলকেন্দ্র, উহান শহরের বাসিন্দা বা সেখানে বেড়াতে যাওয়া মানুষেরা এই ছবি-ভিডিওগুলো ধারণ করেছিলেন।

করোনাভাইরাস নামের এই তথ্যচিত্র ইউটিউবে পেয়েছে ১২ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ। অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামেও পেয়েছে অনেক ভালো রেটিং।

মাঠপর্যায়ে থাকা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অডিও-ভিডিও-ছবি (ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট বা ইউজিসি) নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এই প্রজেক্টে কাজ করা রিপোর্টার শন নিকোলস। কারণ এর কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৯ সালের দাবানল নিয়ে একটি বড় তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন তারা। তাতেও ব্যাপকভাবে অপেশাদার ভিডিও ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া ফুটেজের ওপর নির্ভর করেছিল ফোর কর্নারস। এটি প্রচারের ২৪ ঘন্টা পরই তারা উহান করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্যচিত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

নিকোলস বলেছেন, “দাবানলের তথ্যচিত্রের বেশিরভাগ ছবি-ভিডিও তুলেছিলেন ঝড়ের মাঝে আটকে পড়া মানুষেরা। কেউ প্রাণ নিয়ে ছুটছেন বা কেউ নিজের বাড়ি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন – এমন নাটকীয় মুহূর্তের সব ছবি ও ভিডিও দর্শকরা খুবই পছন্দ করেছিলেন। এখান থেকে আমরা ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি। যখন আপনি মানুষকে জিজ্ঞাসা করবেন, এই [করোনাভাইরাসের] তথ্যচিত্র নিয়ে তারা কী মনে রেখেছে, মানুষ সেই ভিডিওগুলোর কথাই বলবে, যেগুলো সেখানে থাকা মানুষ ধারণ করেছে তাদের আইফোন বা স্মার্টফোন দিয়ে। কারণ এটি এতো বাস্তব, এতো অকপট সত্য!”

উহান নিয়ে তথ্যচিত্রটি বানানো হয় এমন একটি কাঠামো ধরে, যেখানে ছিল চীন থেকে পাওয়া ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট, অস্ট্রেলিয়াতে ধারণ করা স্টুডিও স্টাইল ইন্টারভিউ, বিবিসির সহযোগিতা, কোন সময়ে কী ঘটেছে অর্থ্যাৎ টাইমলাইন ধাঁচে গল্প বলা, এবং পাশাপাশি এগিয়ে চলা ব্যক্তি অভিজ্ঞতার বর্ণনা। এই গল্পে ভয় গ্রাস করা একটি শহরের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তারচেয়ে বড় হয়ে উঠে এসেছে চরম সরকারী নিপীড়নের পরও কেন এই মহামারির তথ্য চেপে রাখা যায়নি।

অস্ট্রেলিয়া থেকে উহানে বেড়াতে গিয়েছিলেন টিম ম্যাকলিন ও ইং ওয়াং। মহামারির মুখ থেকে কিভাবে তারা শহরটি ছেড়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন – সেই গল্পই বলা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে।

ওয়াংয়ের কথা থেকে বোঝা যায় চীনা সরকারের ভুল তথ্যের কারণে তিনি কিভাবে এই সমস্যার মুখে পড়েছেন। জানুয়ারি মাসে তিনি ও তাঁর পরিবার অস্ট্রেলিয়া থেকে উহানে আসার সিদ্ধান্ত নেন কারণ উহানের কর্তৃপক্ষ তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, “রোগটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব।”

ফোর কর্নারসের তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক টিম ম্যাকলিনের গল্প। এই ছবিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে সঙ্গী জু কিয়ংয়ের সঙ্গে। ছবি কৃতজ্ঞতা: টিম ম্যাকলিন

ম্যাকলিনের ভিডিও ডায়েরি থেকে দুটি নাটকীয় আবেগী মুহূর্ত পাওয়া যায়। সেগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। ততদিনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে উহানে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তিনি ছয় সপ্তাহ পার করেছেন। প্রথম ভিডিওতে, ম্যাকলিনকে দেখা যায় খুবই উচ্ছসিত অবস্থায়। তিনি ও তাঁর চীনা সঙ্গী জু কিয়ং অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন।

তার পরের ভিডিওতে দেখা যায়, শহরের মধ্যে কোয়ারেন্টিন বিধিনিষেধ বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ফ্লাইট মিস করেছেন। চরম হতাশা নিয়ে এসময় ম্যাকলিনকে বলতে শোনা যায়, “আমি এখন চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এখানে এরই মধ্যে ১৩০০-র বেশি মানুষ মারা গেছে। পুলিশ যে কোনো সময় দরজায় টোকা দিয়ে তাপমাত্রা মাপছে। একটু বেশি দেখলেই টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। এটা কোয়ারেন্টিনের চেয়েও বেশি কিছু। আমি জানিনা এটাকে ঠিক কী বলে ডাকা যায়।”

ফোর কর্নারসের নিকোলস সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যাকলিনের এই ভিডিও ডায়েরির বিষয়টি খেয়াল করছিলেন জানুয়ারির শেষ দুই সপ্তাহ। এরপর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই তিনি ম্যাকলিনকে “কিছু নির্দেশনা” দেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত চরিত্রগত দিক দিয়ে এটি ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্টই।

৫২ বছর বয়সী ম্যাকলিন এখনো চীন ছেড়ে যেতে পারেননি। গত ২ মে তিনি জিআইজেএনকে বলেছেন, উহান ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার ব্যাপারটি এখন তিনি অন্যভাবে দেখছেন। সেই ভিডিও করার সময় থেকে এখন পর্যন্ত, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল এসেছে।

“আমাকে জুনের মাঝামাঝিতে চীন ছাড়তে হবে। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি এখন অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যেতেই ভয় পাচ্ছি। আমি এখানে অনেক নিরাপদ বোধ করি। বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মাস্ক পরি, কিন্তু এখানে শপিং মলগুলোতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করার অ্যাপ আছে। আর সরকারও ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে। আমি অস্ট্রেলিয়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে একেবারেই আত্মবিশ্বাসী না,” বলেছেন ম্যাকলিন।

ম্যাকলিন জানিয়েছেন, এবিসি অস্ট্রেলিয়াকে তিনি ভিডিও ডায়েরিগুলো পাঠিয়েছেন উইট্রান্সফার নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে। একটি ভিপিএন অ্যাকাউন্টের সাহায্যে। এই ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ডেটা এনক্রিপ্টের মাধ্যমে। তিনি বলেছেন, “আমি কম্পিউটারে তেমন পারদর্শী নই। ফলে আমাকে কিছুটা কষ্টই করতে হয়েছে। আমি আসলে এই ভিডিওগুলো দিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের দেখাতে চাচ্ছিলাম, কী ঘটতে যাচ্ছে এবং সেজন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট দিয়ে তথ্যচিত্র বানানোর অভিজ্ঞতা থেকে নিকোলস একটি শিক্ষার কথা বলেছেন। সেটি হলো: পরিকল্পনার সময়ই মাথায় রাখতে হবে, বড় ভিডিও ফাইল কমপ্রেস করে পাঠানোর সময় যে কারোই সাহায্য দরকার হতে পারে।

নিকোলস বলেন, পুলিশ যে লকডাউনের মধ্যেও বাড়ি গিয়ে তাপমাত্রা মাপছে – ম্যাকলিনের দেয়া এই ভাষ্য পরে সমর্থন করেছিল আরো অনেক মিডিয়া রিপোর্ট।

এই তথ্যচিত্র নির্মানের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রাসঙ্গিক কন্টেন্টের জন্য খোঁজাখুঁজি করতে হয়েছে অনুসন্ধানী দলটিকে। সেগুলো তারা পেয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ম্যাকলিন ও ওয়াংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর এই ভিডিওগুলো একসঙ্গে জোড়া দিয়ে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।

ছবি যাচাই

ফোর কর্নারস তথ্যের একটি বড় সূত্র খুঁজে পেয়েছিল একটি ইউটিউব চ্যানেল আবিস্কার করে। চীনা সরকার যেন মুছে দিতে না পারে, সেজন্য চীনের কিছু ইউজিসি নির্মাতা উহানের বিভিন্ন রাস্তার দৃশ্য ধারন করে সেগুলো ইউটিউবে আপলোড করে যাচ্ছিলেন।

নিকোলস বলেছেন, “অনলাইনে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ নতুন করে যেসব পোস্ট শেয়ার করছে, সেগুলোর রেখে যাওয়া ডিজিটাল চিহ্ন অনুসরণ করেছেন আমাদের গবেষকরা। আমরা দেখেছি যে, চীন ও হংকংয়ের কিছু মানুষ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা নানা কন্টেন্ট একটি ইউটিউব চ্যানেলে আর্কাইভ করে রাখছেন। এই পোস্টগুলো অন্য সব জায়গা থেকে মুছে দিয়েছে চীনের সেন্সরশিপ কর্তৃপক্ষ।”

তাদের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিল: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া এসব পোস্টের সময়, স্থান ও বাস্তব পরিপ্রেক্ষিত যাচাই করা। ইউজিসি নিয়ে কাজ করা বিশ্বের যে কোনো সাংবাদিককেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

সাদা স্যুট পরা কিছু মানুষ একটি পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে, এমন নাটকীয় দৃশ্যই হোক বা সাধারণ একটি ফাঁকা রাস্তার চিত্র; সব ক্ষেত্রেই প্রতিটি ছবি-ভিডিওর সময়, স্থান ও প্রেক্ষিত যাচাই করেছেন গবেষকরা।

মজার ব্যাপার হলো: চীনা সরকারের একটি প্রচারণা ভিডিও থেকে সহজ হয়ে গেছে অনেক ভিডিও যাচাইয়ের কাজ। সেখানে উহানের একটি হাসপাতালের ভেতরের সাজসজ্জা দেখা গিয়েছিল। পরে সেটির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া ভিডিও মিলিয়ে তারা সেগুলোর সত্যতা যাচাই করেছেন।

নিকোলস বলেছেন, “হাসপাতালের মেঝের প্যাটার্ন, দেয়ালের ধরন, দরজার নক্সা ইত্যাদি খেয়াল করে যাচাইয়ের কাজটি করা হয়েছিল।”

সাদা স্যুট পরা কিছু মানুষ একটি পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে, এমন নাটকীয় দৃশ্যই হোক বা সাধারণ একটি ফাঁকা রাস্তার চিত্র; সব ক্ষেত্রেই প্রতিটি ছবি-ভিডিওর সময়, স্থান ও প্রেক্ষিত যাচাই করেছেন অস্ট্রেলিয়ায় বসা গবেষকরা। তাঁরা একাজে ব্যবহার করেছন রিভার্স ইমেজ সার্চ এবং কাজ করেছেন চীনের একটি পেশাদার ভিডিও কন্টেন্ট এজেন্সির সঙ্গে।

গোটা তথ্যচিত্রে মাত্র একটি ব্যাপারই পুরোপুরি যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন নিকোলস। সেটি ছিল: মানুষকে ভেতরে বন্দী রাখার জন্য একটি ভবনের দরজা সিলগালা করে দেওয়ার ভিডিও। এটি যদি সত্যি হয়, তাহলে বলতে হবে কোয়ারেন্টিনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ চরম আকারে কঠোর হয়ে উঠেছিল। এটি যাচাই করতে গিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে স্থান সনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট করা যায়নি।

অবশ্য সিলগালা করার দুটো আলাদা আলাদা ক্লিপ তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে। এখান থেকে বোঝাও গেছে যে, যারা সেই ভিডিও ধারণ করেছেন, তারা কতটা ভয়ের মধ্যে ছিলেন। একইসঙ্গে তারা দর্শকদের এটিও জানিয়েছেন, ছবিগুলো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তথ্যচিত্রের ধারাবর্ণনায় বলা হয়েছে: “মানুষকে সিলগালা করে বাড়িতে রাখা হচ্ছে – এমন দাবি করে ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছিলো।” নিকোলসের ব্যাখ্যা: “আমরা এ কথাটি ইচ্ছা করেই বলেছি এটা দেখানোর জন্য যে, আমরা এটি যাচাই করতে পারিনি। ইউজিসি নিয়ে কাজ করার সময় এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।”

এই কাজ থেকে আর যা যা শেখার আছে:

অনলাইন স্ট্রিট ভিউ টুলের ব্যবহার। চীনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বাইদু টোটাল ভিউ। শুধু জিওগ্রাফিক ভেরিফিকেশনই নয়, তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্যও এটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাইদুর স্ট্রিট ভিউয়ে উহানের একটি সড়কের ধারে একটি পোস্টার খেয়াল করে ফোর কর্নারস দল। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া অন্য আরেকটি ভিডিওতেও তারা দেখেছিলেন একই জরাজীর্ন পোস্টার। সেখান থেকে তারা সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছিলেন। ফোর কর্নারস দলে আগে থেকেই একজন ম্যান্ডারিন ভাষী কর্মী ছিলেন। তাঁকে সহায়তার জন্য এ সময় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল আরেকজন পেশাদার অনুবাদককে। নিকোলস বলেছেন, অনুবাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আরেকটি মতামত পাওয়া এডিটিংয়ের কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সত্যতা যাচাইয়ের পরও খুবই আকর্ষণীয় কিছু ভিডিও বাদ দিতে হয়েছে, শুধু প্রাসঙ্গিক নয় বলে। নিকোলস বলেছেন, “শুধুই খুবই নাটকীয় বা দারুন বলেই আপনি কোনো জিনিস ব্যবহার করতে পারেন না। আপনি যে গল্পটি বলার চেষ্টা করছেন, সেটির সঙ্গে খাপ খায়; এমন কন্টেন্টই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে।” উহানে কাজ করা একটি বেসরকারি ড্রোন অপারেটরের কাছ থেকে ফুটেজ ব্যবহারের অনুমতি নিতে হয়েছে। চীনের একজন ভিন্ন মতাবলম্বীর সাক্ষাৎকার দুই দফায় নিতে হয়েছে। প্রথমবার স্কাইপের মাধ্যমে নেওয়া সাক্ষাৎকারটির ফুটেজ ছিল খুব লো কোয়ালিটির। সেজন্য পরে এই সাক্ষাৎকারটি ধারণ করা হয়েছে আইফোনের মাধ্যমে। রিভার্স ইমেজ সার্চ ও ফ্রিজ-ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে। বারবার পোস্ট করা সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ঘাঁটতে ঘাঁটতে সবার আগে পোস্ট করা মূল ভিডিওটি খুঁজে বের করা হয়েছে। পুরোনো ধাঁচের নেটওয়ার্কিং দিয়ে কিছু সহযোগী পার্টনার খোঁজা হয়েছে। চীনে বিবিসির প্রতিনিধি এবং এবিসি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রিপোর্টার স্টিফেন ম্যাকডোনেলের কাছে সাহায্য চেয়েছিল ফোর কর্নারস। হুবেই প্রদেশের সীমান্তে পুলিশি তৎপরতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছিলেন ম্যাকডোনেল। বিবিসি তাদের কিছু ভিজ্যুয়াল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল কৃতজ্ঞতা স্বীকারের শর্তে।

রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।