

Pictured: Global Investigative Journalism Conference in Hamburg 25. - 29.09.2019 Copyright: Nick Jaussi / nickjaussi.com
জিআইজেসি১৯: চার দিনের সম্মেলনে যত কিছু হল
হামবুর্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স (২৫-২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। কপিরাইট: নিক জাউসি
১১তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স শেষ হয়ে যাওয়াতে একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে? ভাববেন না! আপনি একা নন। গত চার দিনে ১৩০টি দেশ থেকে ১৭০০-র বেশি সাংবাদিক এসেছিলেন জার্মানির হামবুর্গে। তারা সেখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন, দক্ষ ও অভিজ্ঞ বক্তাদের কাছ থেকে শিখেছেন, সমমনা মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন, পরবর্তী অনুসন্ধানের জন্য নতুন বন্ধুর সঙ্গে জোট বেধেছেন। এটাই ছিল এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও বড় আন্তর্জাতিক জমায়েত। অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য এখানে ছিল অনেক কিছু।
২০০১ সাল থেকে, এই বৈশ্বিক সম্মেলনগুলো হয়ে উঠেছে সাংবাদিকদের পারস্পরিক সহযোগিতা, জোট বাঁধার আদর্শ জায়গা। প্রতিযোগিতা না, বরং সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারাটা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নিউজরুমগুলোর জন্য। এটা এমন এক সময় যখন দুর্নীতির কোনো সীমানা থাকছে না, বিদেশী চ্যানেল দিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে বেআইনি টাকা আর গুজব, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কায়দা ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে।
“জোট বাঁধো, জোট বাঁধো, জোট বাঁধো”- সম্মেলনে উপস্থিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এভাবেই একত্রিত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান বক্তা, ফিলিপাইনের মারিয়া রেসা। ব্যস্ত এই সম্মেলনে এত এত ঘটনা ছিল যে সেখান থেকে একটা সারমর্ম করা খুবই কঠিন। তারপরও আমরা এখানে একটা চেষ্টা করেছি।
প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতা করুন
সহযোগিতা শব্দটি ছিল সম্মেলনের প্রধান গুঞ্জন। কোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধের অনুসন্ধান করতে গিয়ে আপনার হয়তো অন্য কোনো দেশের সাংবাদিকের সহযোগিতা দরকার। এরকম জায়গা থেকে সহযোগী বন্ধু-সহকর্মী খুঁজেছেন ও জোট বেঁধেছেন ১৩০টি দেশ থেকে আসা অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা।
.
নারী সাংবাদিকরা ছিলেন পুরো শক্তি নিয়ে
এবার সাহসী নারী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কোনো কমতি ছিল না। সম্মেলনের ৪৮ শতাংশ বক্তা আর ৫০ শতাংশ সাংবাদিক ছিলেন নারী। আমরা ১৩টি বিষয়ভিত্তিক নেটওয়ার্কিং সেশন আয়োজন করেছি। যেখানে পরিবেশ থেকে শুরু করে নারী, আর ভূয়া তথ্য থেকে শুরু করে নির্বাসনে থেকে সাংবাদিকতা পর্যন্ত নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নারীদের শক্তিশালী একটা প্যানেলও আমরা তৈরি করেছি। মার্থা মেনডোজা, প্যাট্রিসিয়া এভানজেলিস্তা, মিন্না নুস-গালান, মার্সেলা তুরাতি, মিরান্ডা প্যাট্রুসিচ, জুলিয়ান লোফলার, শিওরি ইতো, ওরিয়ানা জিল, আশা মুইলু, আলেহান্দ্রা জানিক ভিবি, শিলা কোরোনেলের মতো সাংবাদিকরা অন্য নারী সাংবাদিকদের অনুপ্রাণিত করেছেন নিজেদের ব্যক্তিগত গল্প দিয়ে, আর বলেছেন টিকে থাকার কৌশল।
.
মানসিক আঘাতের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এই বৈশ্বিক সম্মেলন এক জায়গায় এনেছে সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত ও মুক্ত – দুই পরিবেশে কাজ করা সাংবাদিকদের। তারা আলোচনা করেছেন রিপোর্টিংয়ের শত বাধাবিপত্তি, ভীতিকর অভিজ্ঞতা আর সুরক্ষার উপায় নিয়ে। সহকর্মীর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত থেকে শুরু করে গণহত্যার অনুসন্ধান- এমন নানা চ্যালেঞ্জিং কিন্তু জরুরি বিষয় নিয়ে তারা আলাপ করেছেন।
.
ওপেন সোর্স অনুসন্ধান
ইন্টারনেটে খোঁজ করলে এখন অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো ঠিকঠাক খুঁজে বের করার জন্য অনলাইন গবেষণার কৌশল শিখে নেওয়া জরুরি। অনলাইন অনুসন্ধানে অভিজ্ঞ পল মায়ার্স ও হেঙ্ক ভন এস – সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের শিখিয়েছেন, কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করতে হয়। জিওলোকেশন, অর্থ্যাৎ ছবি থেকে অবস্থান খুঁজে বের করার কৌশল নিয়ে হয়েছে কুইজটাইম সেশন।
.
মোবাইল সাংবাদিকতা
এখনকার দিনে, ভালো ভিডিও সাংবাদিকতা করার জন্য একটা স্মার্টফোনই যথেষ্ট। আমাদের মোবাইল সাংবাদিকদের একটা টিম পুরো সম্মেলনকেন্দ্র ঘুরে ঘুরে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, আর মজার মজার কাহিনীগুলো শেয়ার করেছেন। তাদের কাজ ও ভিডিও দেখতে পারেন জিআইজেএন-এর ইন্সটাগ্রাম পেজে। জানতে চান তারা কী অ্যাপ ব্যবহার করেছে? উত্তর পাবেন এখানে।
..
নাগরিক, আদিবাসী ও নির্বাসিত সাংবাদিক
সম্মেলনে নাগরিক, আদিবাসী ও নির্বাসিত সাংবাদিকদের জন্য ছিল বিশেষ সেশন, ওয়ার্কশপ, আলোচনা ও গাইড। এজন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই আমাদের স্পন্সর ও পার্টনারদের। ডিগল্যাব ফাউন্ডেশন, ন্যাটিভ আমেরিকান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন ও কোরবের-স্টিফটুঙ। দেখুন জিআইজেএন-এর নাগরিক অনুসন্ধান রিসোর্স ও আদিবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের গাইড।
…
অনলাইন ডকুমেন্টরি ফেস্টিভাল
ডিআইজি অ্যাওয়ার্ডসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমরা করেছিলাম একটা অনলাইন ডকুমেন্টরি ফেস্টিভাল। যেখানে ডিআইজি অ্যাওয়ার্ডসের পুরস্কারজয়ী সব ভিডিও দেখার বিশেষ সুযোগ পেয়েছেন সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে নবীন ডকুমেন্টারি নির্মাতারা পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা পেয়েছেন অভিজ্ঞদের কাছ থেকে।
.
ডেটা সাংবাদিকতার গভীরে
ডেটা নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, কীভাবে ডেটা সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো যায়, ডেটাবেজ তৈরি করা যায়, ভিজুয়ালাইজেশন বানানো যায় এগুলো জানতে উদগ্রীব হয়ে ছিলেন সম্মেলনে আসা সাংবাদিকরা। ২৫০টি প্যানেল, ওয়ার্কশপ, আলোচনা ও বিশেষ ইভেন্টের মধ্যে ৬০টিই ছিল ডেটা সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে।
.
গুজব বা ভূয়া তথ্যের অনুসন্ধান
অনলাইনে ভুয়া তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে প্রায়শই প্রভাবিত করা হয় গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে। সেগুলো নিয়ে সাংবাদিকরা কীভাবে কাজ করতে পারে – সম্মেলনে এটা ছিল অনেকের আগ্রহের জায়গা। তারা একে অপরের কাছ থেকে ধারণা নিয়েছেন, কীভাবে এই ভুয়া তথ্যের উৎস খুঁজে বের করা যায়, আর সেখান থেকে ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট করা যায়।
.
জিআইজেসি১৯-এর আন্তর্জাতিক নিউজরুম
৩০টি দেশ থেকে ৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার ও ইলাস্ট্রেটরের একটি দল এই সম্মেলনের খবরাখবর প্রস্তুত করেছে আটটি ভাষায়। তাদের লেখা পাওয়া যাবে সম্মেলনের ওয়েবসাইটে। ইন্সটাগ্রাম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছিল এসবের খবরাখবর। সম্মেলনের বক্তাদের টিপশিটগুলো দেখতে আগ্রহী? পেয়ে যাবেন এখানে।
.
#হোল্ডদ্যালাইন
২০১৮ সালের টাইম ম্যাগাজিন বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব মারিয়া রেসা তার বক্তৃতা শুরু করার আগেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিলেন। হলভর্তি সাংবাদিক উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন রেসাকে। ফিলিপাইনের এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক একইরকমভাবে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন অন্যান্যদের। দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, “ক্ষমতা আর নীপিড়করা কখনোই থামবে না যদি আপনি তাদের কাছে আত্মসমর্পন করেন। আমাদের খুবই জরুরিভাবে একজোট হতে হবে। কারণ আমাদের একজনের ওপর আক্রমণ মানে সবার ওপরই আক্রমণ।”
.
গ্লোবাল শাইনিং লাইট পুরস্কার বিজয়ীরা
এবছরের গ্লোবাল শাইনিং লাইট পুরস্কার দেওয়া হয়েছে দুটি ক্যাটাগরিতে। ছোট/মাঝারি প্রতিষ্ঠান ও বড় প্রতিষ্ঠান। পুরস্কারজয়ীদের মধ্যে ছিল আইডিএল রিপোর্তেরোস। লাতিন আমেরিকান দুর্নীতি নিয়ে করা প্রতিবেদনগেুলোর জন্য। ফিলিপাইনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কাভারেজের জন্য র্যাপলার এবং #গুপ্তালিকস উন্মোচনের জন্য ডেইলি ম্যাভেরিক, আমাভুঙ্গানে, ওপেন আপ এসএ, নিউজ২৪ ও ফাইন্যান্স আনকভার্ড। আফ্রিকা আনসেন্সরড ও অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট পেয়েছে বিশেষ স্বীকৃতি।
.
আমাদের সহ-আয়োজক নেটওয়ার্ক রিসার্চ ও ইন্টারলিংক অ্যাকাডেমিকে অনেক ধন্যবাদ। একই সঙ্গে সম্মেলনটি সফল করার জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই আমাদের স্পন্সর, পার্টনার, সদস্য সংগঠন, বক্তা, মডারেটরসহ উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের। আবার দেখা হবে পরবর্তী সম্মেলনে!
জিআইজেএন১৯-এর সহ-আয়োজক নেটওয়ার্ক রিসার্চ ও ইন্টারলিংক অ্যাকাডেমি। কপিরাইট: নিক জাউসি / nickjaussi.com
ইউনিস অউ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর। এর আগে তিনি মালয়েশিয়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমসে। মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইটস টাইমসেও ছিলেন জেনারেল বিট রিপোর্টার হিসেবে।