প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

কোভিড ১৯:  ঝুঁকিতে থাকা সংবাদকর্মীর সুরক্ষা ও বার্তাকক্ষের দায়িত্ব

ছবি: পিক্সাবে

নতুন করোনোভাইরাস যাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, সেই তালিকায় ডাক্তার, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম নিঃসন্দেহে সবার ওপরে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের এই তালিকা দেখলে বোঝা যাবে, সবচেয়ে বিপদে থাকাদের দলে সাংবাদিকরাও আছেন। এখন খবরের খোঁজে প্রতিনিয়তই রিপোর্টাররা চষে বেড়াচ্ছেন সংক্রমণের শিকার হওয়া অঞ্চল; ঘুরছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে; কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক থেকে শুরু করে নানা ধরণের মানুষের সাথে। এতে মাঠের সেই রিপোর্টার শুধু নয় – তাদের পরিবারের সদস্য, বার্তাকক্ষে থাকা সহকর্মী এবং রিপোর্টের প্রয়োজনে যাদের কাছে যাচ্ছেন – সবাই কমবেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন পালসের সম্পাদক জেইমি কাফাশ একে তুলনা করেছেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সাথে। তিনি বলেছেন, “যুদ্ধের ময়দানে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যে ধরণের নীতিমালা মানতে হয়, এখানেও ঠিক তেমনটাই প্রযোজ্য।”

গত কয়েকদিনে কোভিড-১৯ নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা প্রকাশ করেছে জিআইজেএন: দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার টিপস, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্ন, চীনা সাংবাদিকদের পরামর্শ, ইত্যাদি। গোটা বিশ্বে বিভিন্ন ভাষার হাজার হাজার সাংবাদিক লেখাগুলো পড়েছেন। এই গাইডটি ঝুঁকি নিয়ে যারা মাঠে কাজ করছেন, সেই সব রিপোর্টারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তৈরি। এখানে রিপোর্টার বা ক্যামেরাপার্সনের নিজস্ব সতর্কতার বিষয় যেমন আছে, তেমনি উঠে এসেছে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম কর্তাদের দায়িত্ব।

হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টিন জোনে কী করবেন?      

কোভিড-১৯ কাভার করা সাংবাদিকদের জন্য একটি অ্যাডভাইজরি প্রকাশ করেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এটি প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। এখানে অ্যাসইনমেন্টে যাওয়ার আগে, খবর সংগ্রহের সময় এবং ফিরে আসার পরে – কী করতে হবে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। তারা হাসপাতাল বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সংক্রমণ এড়ানোর জন্য যত পরামর্শ দিচ্ছে, এখানে তার-ই সারাংশ।

প্রবেশের আগে: যাতায়াতের ক্ষেত্রে গণ-পরিবহণ (যেমন বাস বা ট্রেন) পরিহার করুন, বিশেষ করে ব্যস্ত সময়ে। অন্য সময়ে যদি চড়তে বাধ্য হন, তাহলে নামার পর হাত অ্যালকোহল-সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিন। হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টিন জোনে প্রবেশের আগে জেনে নিন সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা সংক্রমণরোধী ব্যবস্থা কেমন। দুর্বল হলে প্রবেশ না করাই ভালো।

হাসপাতালে সার্জিক্যাল মাস্কের বদলে এন৯৫ রেসপিরেটর ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সিপিজে। ছবি: গার্ডিয়ানের ইউটিউব ভিডিওর স্ক্রিনশট

যখন ঘটনাস্থলে: হাসপাতালে যেন হাতে অবশ্যই গ্লাভস এবং পরনে পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট থাকে। সাথে ডিজপোজেবল জুতো অথবা পানিনিরোধী ওভারশু পরে নিন; সেখান থেকে বের হওয়ার পর ফেলে দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংক্রমিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের মাস্ক পরার দরকার নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের তারা মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতাল বা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় সাংবাদিকদেরও এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সিপিজে। এর দাম বেশি এবং এখন বেশ দুষ্প্রাপ্য।

বেরুনোর পরে: সংক্রমণ আছে এমন জায়গায় যাওয়ার আগে, সেখানে গিয়ে এবং ফেরার পরে যতবার সম্ভব গরম পানি ও সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। ধোয়ার আগে মুখে, নাকে বা চোখে হাত লাগাবেন না। এলাকা থেকে বেরুনোর পর আপনার প্রতিটি সরঞ্জাম (যেমন, ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন) অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ওয়াইপ দিয়ে ভালো করে মুছে নিন। অফিসে জমা দেয়ার আগে আরেকবার জীবানুমুক্ত করুন। অনেক রিপোর্টার বলেছেন, তারা সংক্রমণ আছে এমন জায়গা থেকে ফিরে নিজেদের পোশাক গরম পানিতে ধুয়ে নিয়েছেন এবং ভালোমত গোসল করেছেন। ফেরার পরে যদি সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখেন, তাহলে অফিসকে জানান এবং সঙ্গে সঙ্গে সেল্ফ-কোয়ারেন্টিনে চলে যান।

অন্যদের প্রতি দায়িত্ব: যখন কোনো বয়স্ক ব্যক্তির সাথে কথা বলছেন, তখন বাড়তি সতর্ক হোন। তাদের কাছ থেকে সচেতনভাবেই দূরে থাকুন। কারণ, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে কোভিড-১৯ রোগে প্রবীণদেরই মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। আপনার শরীরে, কাপড়-চোপড়ে অথবা যন্ত্রপাতিতে থাকা ভাইরাস থাকলে যেন তাদের শরীরে না ছড়াতে পারে, সেটি নিশ্চিত করুন। শুধু প্রবীন নয়, যে কারো ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসির মতে, এই রোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে দুই ধরণের মানুষ; যাদের বয়স বেশি, এবং যাদের আগে থেকেই গুরুতর অসুস্থতা বা স্বাস্থ্যসমস্যা আছে। তাই এমন কোনো রিপোর্টারকে হাসপাতাল, কোয়ান্টিন জোন অথবা সংক্রমণ আছে এমন জায়গায় পাঠাবেন না। অন্তসত্বা রিপোর্টারদেরও এমন অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। কোনো রিপোর্টারকে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় পাঠানোর আগে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। রোগের হটস্পট, অর্থ্যাৎ যেখানে বিস্তার বেশি – ঐসব জায়গায় কাউকে অ্যাসাইনমেন্ট দেবেন না। বাইরে অনেক গণমাধ্যমই এই নীতি মেনে চলছে। যদি দিতেই হয়, তাহলে দলের সদস্যদের বডিস্যুট, রেসপিরেটর এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠান।

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

সাক্ষাৎকার কিভাবে নেবেন?

ভারতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথম যে বৃদ্ধ মারা যান, তার বাড়ী কর্নাটকে। সেই বৃদ্ধের ছেলের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন চার সাংবাদিক। সেখান থেকে ফিরে, এখন চার জনই কোয়ারেন্টিনে আছেন। সাংবাদিকদের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার বড় ঝুঁকি থাকে এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। মার্কিন বিজ্ঞান সাংবাদিক লিসা এম ক্রিগার সম্প্রতি ২০২০ ক্যালিফোর্নিয়া ফেলোশিপ-জয়ী সাংবাদিকদের পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছেন, “আমাদের কাজ সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলা নয়। যা দরকার, তা যদি ফোনে পাওয়া যায়, সেভাবেই নিয়ে নিন।” পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো করোনাভাইরাসের এই সময়ে এসে বেশিরভাগ সাক্ষাৎকারই নিচ্ছে ফোন, স্কাইপ বা অন্য যে কোনো অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে।

একই কথা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিভি সাংবাদিক, সম্পাদক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীসহ ব্রডকাস্ট জগতের ১লাখ ৬০ হাজার পেশাজীবির প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠন স্যাগ-আফট্রা। করোনাভাইরাসের এই সময়ে সদস্যদের জন্য তারা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে:

সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাইক্রোফোনের ওপর ডিজপোজেবল কাভার লাগিয়ে নিন। ব্যবহারের পর ফেলে দিন। তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজার দিয়ে জীবানুমুক্ত করুন। লিপ মাইক্রোফোন কারো সাথে শেয়ার করবেন না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষের মতামত সংগ্রহের মত যেসব সাক্ষাৎকার, তা বাদ দিন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সাক্ষাৎকার নেয়ার ইকুইপমেন্ট থাকলে বিবেচনা করে দেখতে পারেন। যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত, অথবা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের সামনাসামনি সাক্ষাৎকার নেবেন না। তাদের বক্তব্য ফোন, ভিডিও চ্যাট, ইত্যাদির মাধ্যমে নিন। রোগী বা সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি বাদে বাকি সবার সাক্ষাৎকার নেয়ার আগেও সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং) বজায় রাখুন। সিডিসির পরামর্শ মেনে, অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বক্তব্য ধারণের চেষ্টা করুন।  যদি দূরত্ব বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে ফোন বা ভিডিও চ্যাটের সহায়তা নিন। কিভাবে রিমোট রেকর্ডিং করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ পাবেন এই টিপশীটে। এটি তৈরি করেছে রেডিও ও মাল্টিমিডিয়া প্রযোজকদের সংগঠন এয়ার। যদি কোনো সংবাদ সম্মেলনে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট থাকে, তাহলে সেখানে গিয়েও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মত ব্যবস্থা আগেই করে নিন। যদি না পারেন, তাহলে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করুন। (যেমন, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ)  সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাইক্রোফোনের ওপর ডিজপোজেবল কাভার লাগিয়ে নিন। ব্যবহারের পর ফেলে দিন। তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজার দিয়ে জীবানুমুক্ত করুন। লিপ মাইক্রোফোন কারো সাথে শেয়ার করবেন না।  আপনার প্রতিটি ইক্যুইপমেন্ট সাক্ষাৎকার শেষে অ্যালকোহল ওয়াইপ দিয়ে জীবানুমুক্ত করুন। আপনার সেলফোনটিও নিয়মিত ওয়াইপ দিয়ে মুছে নিন।

মনে রাখবেন, শুধু ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা নয়, আপনি যে কোন অ্যাসাইনমেন্টেই আক্রান্ত হতে পারেন। তাই সব সময় ছয় ফুট দূরত্বে থাকার বিষয়টি মাথায় রাখুন।

সরঞ্জাম কি ভাইরাসমুক্ত?

আপনি যেখানেই যাচ্ছেন, আপনার হাতে থাকছে মোবাইল ফোন। তা দিয়ে আপনি কথা রেকর্ড করছেন, ভিডিও বা ছবি তুলছেন, টেবিলে বা সারফেসে রেখে কাজ সারছেন। সেটি কি জীবানুমুক্ত?

মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় রুডি গোবার্ট একটি সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে নেহাত কৌতুক বশে সাংবাদিকদের রাখা মাইক্রোফোনে হাত দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি সংক্রমিত। এবং তার মাধ্যমে ইউটাহ জাজ দলের আরো কয়েকজন খেলোয়াড় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এভাবে সাংবাদিকরাও তাদের ইক্যুইপমেন্ট থেকে আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনো সময়। নতুন করোনাভাইরাস প্লাস্টিক বা ধাতব যে কোনো বস্তুর ওপরে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তাই যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম পরিস্কার রাখুন।

আপনার মাইক্রোফোন কিভাবে পরিস্কার করবেন, তার একটি বিস্তারিত নির্দেশনা পাবেন ট্রানসমের এই লেখা থেকে। তাদের মূল পরামর্শ: জীবানুনাশক স্প্রে না করে বরং মাইক পরিষ্কারের ফোম ব্যবহার করুন, এবং পরিস্কার কাপড় দিয়ে তা মুছে ফেলুন। আর পেটাপিক্সেলের এই লেখায় বলা হচ্ছে, আপনি কিভাবে আপনার স্মার্ট ফোন, ক্যামেরা এবং গিয়ার পরিস্কার করবেন। তারাও মূলত অ্যালকোহলভিত্তিক ওয়াইপস দিয়ে লেন্স মুছে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে।

টিভি হোক, অনলাইন বা প্রিন্ট – যে কোনো মাধ্যমের সাংবাদিকদের জন্য এখন সংবাদ সংগ্রহের বড় উপায় হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন। আপনি যেখানেই যাচ্ছেন, এটি আপনার হাতে থাকছে। তা দিয়ে আপনি কথা রেকর্ড করছেন, ভিডিও বা ছবি তুলছেন, টেবিলে বা সারফেসে রেখে কাজ সারছেন। সেটি কি জীবানুমুক্ত? করোনাভাইরাসের এই কঠিন সময়ে, আপনাকে এই দিকেও নজর দিতে হবে। এখানে বিবিসি ক্লিকের একটি ভিডিও, জেনে নিন ফোন কিভাবে নিরাপদে রাখবেন।

.

টিভি চ্যানেলের ভেতরেও কি নিরাপদ?

টিভি চ্যানেলের ভেতরে যারা কাজ করছেন, দয়া করে নিজেদের পুরোপুরি নিরাপদ ভাববেন না। আপনার স্টুডিওতে প্রতিদিন যত অতিথি আসছেন বা যাচ্ছেন, তারা সবাই কি সংক্রমণমুক্ত? আপনি যদি নিশ্চিত হতে না পারেন, তাহলে স্টুডিওটিকেও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করুন। একটি উদাহরণ দিলে আরো পরিস্কার হবে। গেল ৯ মার্চ, অস্ট্রেলিয়ার নাইন নেটওয়ার্ক টিভির স্টুডিওতে গিয়েছিলেন অভিনেতা টম হ্যাংকসের স্ত্রী রিটা উইলসন। তখনো কারো জানা ছিল না এই দম্পতি করোনাভাইরাস আক্রান্ত। তারা কিছুদিন পরই সেই ঘোষণা দেন। রিটা উইলসনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাংবাদিক রিচার্ড উইলকিন্স। কয়েকদিন পর তিনি নিজেও সংক্রমিত হন। এমন পরিস্থিতি এড়াতে স্যাগ-আফট্রার পরামর্শ হলো:

টিভি চ্যানেলের কমন জায়গা, যেখানে সবাই আসেন বা বসেন, তা নিয়মিত জীবানুমুক্ত করা;  প্রতিটি শো শেষে স্টুডিও অ্যালকোহলভিত্তিক জীবানুনাশক দিয়ে মুছে ভালো মত পরিস্কার করে নেয়া;  স্টুডিওতে যে মাইক্রোফোনগুলো ব্যবহার হচ্ছে তা প্রত্যেক শো শেষে জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার করে নেয়া; স্টুডিওতে ব্যক্তিগত মেক-আপ কিট, ব্রাশ ও ফোম নিয়ে আসা এবং শুধু সেগুলো ব্যবহার করা; প্রয়োজনে ঘরকেই স্টুডিও বানিয়ে নেয়া বা ভিডিও চ্যাটে অতিথিদের সংযুক্ত করা; ওয়াইপস সাথে রাখা এবং দরজার হাতল থেকে শুরু করে স্পর্শ করতে হবে এমন;জিনিস মুছে নেয়া: এবং টিভি শোতেও সামাজিক দূরত্ব অর্থ্যাৎ ৬ ফুট দূরে থাকার নীতি মেনে চলা।

নিউজরুমগুলো কী করছে?

বাড়ি থেকে কাজ গণমাধ্যমের জন্য বলতে গেলে নতুন বিষয়। করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বেই বার্তাকক্ষগুলোকে এমন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গিয়েছে।

বাংলাদেশের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। গণমাধ্যম সাময়িকী মুক্তবাকের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কিছু গণমাধ্যম তাদের কর্মীদের সুরক্ষায় ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। কেউ পুরোপুরি, কেউ আংশিকভাবে বাড়ি থেকে কাজের নীতি গ্রহণ করেছেন। অফিসে প্রবেশের আগে জ্বর মাপা, মাস্কের যোগান, জীবানুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, কর্মীদের নিজস্ব গাড়ি দিয়ে পিক এবং ড্রপের ব্যবস্থা, পালা করে কাজ করা – এমন অনেক উদ্যোগই নেয়া হয়েছে।

বাড়ি থেকে কাজ গণমাধ্যমের জন্য বলতে গেলে নতুন বিষয়। করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বেই বার্তাকক্ষগুলোকে এমন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গিয়েছে। অন্যান্য দেশের নিউজরুমগুলো কোভিড-১৯ এর সাথে যেভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তার একটি চিত্র পাওয়া যাবে ওয়ান-ইফরা ব্লগের এই লেখা থেকে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ।

স্ট্রেইটস টাইমস, সিঙ্গাপুর: তারা বার্তাকক্ষের সম্পাদকীয় বিভাগকে ২৫ জনের দুটি দলে ভাগ করে নিয়েছেন। প্রতিটিতে বিভিন্ন পদ মর্যাদার কর্মী আছেন। একদল ঘরে বসে কাজ করেন, আরেকদল অফিসে। দুই সপ্তা পর, তারা স্থান বদল করেন। এর উদ্দেশ্য হলো: একটি দলের কেউ আক্রান্ত হলে, তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে, বাকিদের নিয়ে কাজ চালানো। সম্পাদকীয় এই দল ছাড়া তাদের বাকি সব কর্মী ঘর থেকেই কাজ করছেন। অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে সেটি সেরে, বাড়ি থেকেই তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন গুগল হ্যাংআউটে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, হংকং: জনপ্রিয় এই পত্রিকাটি অর্ধেক কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে। যারা অফিসে কাজ করেন, তাদেরকে প্রতিটি ফ্লোরে বিভক্ত রাখা হয়েছে, যেন এক তলার কর্মী থেকে অন্য তলায় সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। তারাও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেন গুগল হ্যাংআউটে। নিজেদের বদ্ধ সম্মেলনকক্ষে বড় মিটিং বা সভা নিষিদ্ধ করেছে এসসিএমপি। বার্তাকক্ষের কর্মীরা ছোট ছোট দলে মিটিং সেরে নেন।

দ্য টাইমস, যুক্তরাজ্য: টাইমসের একজন কর্মী করোনাভাইরাসে আকান্ত হওয়ার পর থেকে লন্ডনে তাদের প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি লিফট, টয়লেট এবং বসার জায়গা ৩০ মিনিট পর পর জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে।

হার্স্ট, মেরিডিথ কর্প কর্পোরেশন, পেনস্ক মিডিয়া কর্পোরেশন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, বাজফিড, বিজনেস ইনসাইডার, রিফাইনারি ২৯, নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন, পলিটিকো, এক্সিয়োস, এবং ওয়ার্নার মিডিয়াসহ অনেকেই কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে উৎসাহিত করছে। রিপোর্টারদের যাতে বাইরে যেতে না হয়, সেজন্য কোয়ার্টজ এক্সপ্লেইনার ধাঁচের ভিডিও বানানোতে মন দিয়েছে। নাওদিস বলছে, তারা ভিডিওর জন্য প্রতিটি সাক্ষাৎকারই অনলাইনে নিচ্ছে, এবং দর্শকদেরও জানাচ্ছে, কেন এমন করতে হচ্ছে।

.

ওয়াশিংটন পোস্টের এই ভিডিও আপনাকে জানাবে বাড়ি থেকে কাজ করা সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা।

বার্তাকক্ষের কর্তাদের জন্যে…

কোভিড-১৯ রোগের গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে, যার ভভিষ্যৎও অজানা। বাড়ি থেকে বা অফিসে বসে, কাজ যেখান থেকেই হোক – এই অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে কতদিন যেতে হবে, তা কেউ বলতে পারে না। এই সময়টা যেমন কর্মস্থলকে নিরাপদ রাখার, তেমনি নিজেদের একে অপরের দিকে খেয়াল রাখারও বটে। আর এখানে বড় দায় আছে গণমাধ্যম ব্যবস্থাপকদের, অর্থ্যাৎ যারা বার্তাকক্ষকে নেতৃত্ব দেন। কঠিন এই সময়ে তাদের মূল দায়িত্ব দু’টি – প্রথমত, সহকর্মীদের ঝুঁকিতে না ফেলা; এবং দ্বিতীয়ত, কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা। কিভাবে সেটি করবেন? নিচে কয়েকটি পরামর্শ:

এই সময়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করুন, এবং তা কিভাবে মেনে চলতে হবে বার বার সহকর্মীদের বুঝিয়ে বলুন। বার্তাকক্ষের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে এই নীতিমালার মুখপত্র হতে হবে। বাস্তবায়নের জন্য জবাবদিহিও করতে হবে, তাকেই। রিপোর্টার অ্যাসাইনমেন্টের কাজে ভ্রমণ করবেন কি করবেন না, তিনি অফিস নাকি বাড়ি থেকে কাজ করবেন – সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে দিন। তার সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখুন, কোনো ব্যাখ্যা চাইবেন না। কর্মক্ষেত্রে এমন জায়গা রাখুন যেখানে সাংবাদিকরা একে অপরের সাথে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারেন, প্রশ্ন করতে পারেন। দলগত সভা দরকার তো বটেই, এসময় ওয়ান-টু-ওয়ান সাক্ষাতও খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন রিপোর্টার কত রিপোর্ট দেবে, তা নিয়ে আপনার প্রত্যাশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সময়টি কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ রিপোর্টারকেও অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যার প্রভাব পড়ে তাদের উৎপাদনশীলতায়।

প্রতিটি পরামর্শ নেয়া হয়েছে “নিউজরুম গাইড টু কোভিড-১৯” নামের একটি সহায়িকা থেকে। এটি তৈরি তৈরি করেছেন ১১ জন  সাংবাদিক, তাদের মত অন্য সাংবাদিকদের জন্যে। হাতে যদি সময় থাকে পুরো গাইডটি পড়ে দেখুন

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, জিআইজেএন-এর বাংলা সম্পাদক। এর পাশাপাশি তিনি জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন, গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা, এমআরডিআইয়ের হেড অব প্রোগ্রাম অ্যান্ড কমিউনিকেশনস্ হিসেবে কাজ করছেন। সাংবাদিকতায় তাঁর রয়েছে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা, যার বড় অংশই টেলিভিশনে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।