প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

কোভিড-১৯: যত দেশে যেমন অনুসন্ধান 

English

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টারের চিত্র। ছবি কৃতজ্ঞতা: জেমস গাথানি/সিডিসি

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকরা যে কতরকমের অনুসন্ধান করছেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। তবুও এখন পর্যন্ত যত রিপোর্ট বেরিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে সেরা কিছু অনুসন্ধান এক জায়গায় জড়ো করেছে জিআইজেএন। আমাদের আশা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আরো অনুপ্রাণিত করবে ১৭টি দেশ থেকে বাছাই করা এই ৫০টি প্রতিবেদন।

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারে দেখুন কোভিড-১৯ কাভারের গাইড ও রিসোর্স।

সময়টা অবশ্যই, নির্ভুল কাভারেজ এবং ব্যাখ্যামূলক সংবাদ দিয়ে পাঠক-দর্শকদের সচেতন করার। কিন্তু একই সঙ্গে সময়টা সংকট মোকাবিলায় নেয়া পদক্ষেপ খতিয়ে দেখার, সত্য উন্মোচনের এবং ক্রমাগত প্রশ্ন তোলার। আমরা এখানে যেসব প্রতিবেদনের কথা বলছি, তার সবগুলোই যে ইন-ডেপথ অনুসন্ধান, তা নয়। কিন্তু প্রতিটিতে ছিল কঠোর পরিশ্রম ও খোঁজাখুঁজির প্রবণতা। প্রতিবেদনগুলো করা হয়েছে সময়ের চরম সীমাবদ্ধতায়।

জাতীয় ও আঞ্চলিক; দুই ক্ষেত্রেই প্রশংসা করার মত রিপোর্টের সংখ্যা নেহাত কম নয়। জিআইজেএন সম্পাদকরা সেগুলো সাজিয়েছেন সাতটি ক্যাটাগরিতে। আপনার সন্ধানে অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন থাকলে জানাতে পারেন এই ঠিকানায়: hello@gijn.org.

যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে:

সরকারের প্রস্তুতি হাসপাতালের প্রস্তুতি মাস্কের মতো উপকরণের সরবরাহ কর্তৃপক্ষ কি সত্য বলছে? বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড

বেশিরভাগ প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ প্রসঙ্গ ছিল, প্রস্তুতি। ভাইরাসের বিস্তারের সাথে সাথে, সাংবাদিকরা তলিয়ে দেখেছেন আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবিলায় সমাজের প্রস্তুতি।

যথেষ্ট পরিমাণ টেস্টিং কিট, সুরক্ষা পোশাক, মাস্ক, ভেন্টিলেটর ও হাসপাতাল বেড কি আছে? যদি না থাকে, তাহলে কী হবে? কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে কি আগে থেকে সতর্ক করা হয়েছিল সরকারী কর্মকর্তাদের? তারা কি সেজন্য দেশকে প্রস্তুত করেছে?

পরীক্ষার সক্ষমতা যাচাই  

কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ফিলিপাইনের মানুষদের। স্ক্রিনশট: র‌্যাপলার

করোনাভাইরাস সংকটের শুরু থেকে, চিকিৎসা সামগ্রীর স্বল্পতা ছিল অন্যতম প্রধান সমস্যা। বিশেষ করে, পরীক্ষার উপকরণ। এটি কি যথেষ্ট পরিমাণে আছে? কাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে? অনেক দেশেই বড় হয়ে উঠে এসেছে এই প্রশ্নগুলো।

ফিলিপাইনে র‌্যাপলার পরীক্ষার বিষয়টি তুলে এনেছে অপেক্ষমান রোগীদের বলা ব্যক্তিগত গল্পের মাধ্যমে। র‌্যাপলারের মারা সিপেদা দেখেছেন: “জায়গা ও উপকরণের অভাবে হাসপাতালগুলো কিভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ থাকা অনেক রোগীকে। তারচেয়েও করুণ হলো, অনেকে রোগ নিশ্চিত হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছেন; জানতেও পারছেন না, তারা আসলেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন কিনা।”

ভারতে পরীক্ষার স্বল্পতার বিষয়টি তুলে এনেছে ইন্ডিয়াস্পেন্ড। চীনের উহানে যে স্বল্পতা ছিল, তা নিয়ে লিখেছে পোর্ট্রেইট ম্যাগাজিন। পরীক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতার কারণে মুশকিল হচ্ছে কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ (চীনা ভাষায়)

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারে দেখুন কোভিড-১৯ কাভারের গাইড ও এই মহামারি নিয়ে অন্যান্য রিসোর্স।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, পরীক্ষা উপকরণ প্রাপ্তির ধীরগতি হয়ে উঠেছে একটি বড় ইস্যু। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফারাহ স্টকম্যান নয়টি শহরের ১১ জন রিপোর্টারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে তৈরি করেছেন এই প্রতিবেদন: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অসুস্থ মানুষেরা বলছেন, তাদের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায়ের ডেটা জরিপ করে, আটলান্টিকের রবিনসন মায়ার ও অ্যালেক্সিস সি. মাদ্রিগাল দেখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা করার সক্ষমতা বিপজ্জনকভাবে কম।”

যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যার পেছনে আংশিক ভূমিকা আছে ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতির। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন দ্য নিউ ইয়র্কারের রবার্ট পি. বেয়ার্ড।

পেরুতে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে রোগীরা অনলাইনে তাদের লক্ষণের কথা জানাচ্ছেন, তাতে তাদের ডেটা উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে, প্রাইভেসি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে স্যালুদ কন লুপা। (স্প্যানিশ ভাষায়)

মাস্ক, প্রটেকটিভ গিয়ার, ইকুইপমেন্ট

মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণের ঘাটতি এসেছে একটি বড় ইস্যু হিসেবে। হার্ড ডেটার ঘাটতি থাকলেও, রিপোর্টাররা অনুসন্ধানের বেশ কিছু জায়গা খুঁজে নিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, উপকরণ ঘাটতি নিয়ে ভেতরকার কিছু নথিপত্র পেয়ে যান বাজফিডের রোসিল্যান্ড অ্যাডামস। এর প্রভাবে নিউ ইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে কী প্রভাব পড়েছে, তিনি সেটিই তুলে আনেন প্রতিবেদনে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্টার মার্থা মেনডোজা ও জুলিয়েট লিন্ডারম্যান দেখেছেন, এই স্বল্পতার মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সামগ্রী আমদানী কতটা দ্রুতগতিতে কমেছে।

দেশটিতে, সুরক্ষা উপকরণের চাহিদা সম্পর্কে সরকার গুরুত্ব না দেওয়ায় যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সে বিষয়টি স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে জেনেছেন এবং রিপোর্ট করেছেন গার্ডিয়ানের ডেনিস ক্যাম্পবেল ও ম্যাথা বাসবি

সার্বিয়ায় কতগুলো কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্র আছে, তা জানার জন্য দেশটির তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করেছে বেলগ্রেডের সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম। স্ক্রিনশট: সিআইএনএস

ভেন্টিলেটর কী পরিমাণে আছে এবং কোথায় কোথায় আছে, সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অব সার্বিয়া। এ নিয়ে রিপোর্ট করেছেন ইয়োভানা টমিচ, টিওডোরা চুরচিচ , ও দিনা জর্জেভিচ।

হাফিংটন পোস্টের জনাথন কোন তলিয়ে দেখেছেন ভেন্টিলেটর উৎপাদকদের অবস্থা এবং লিখেছেন কিভাবে আমরা আরো বেশি পরিমাণে ভেন্টিলেটর পেতে পারি এবং না পাওয়া গেলে কী করা যায়

মাস্ক স্বল্পতার মৌলিক কারণগুলো বুঝতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর।

রয়টার্সের রিপোর্টার অ্যালিসন মার্টেল ও মোইরা ওয়ারবার্টন অনুসন্ধান করে বের করেছেন, কানাডায় মজুদ থাকা লাখ লাখ মাস্ক কিভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফ্রান্সে মাস্কের মজুদ সময়ের সাথে সাথে কিভাবে কমেছে তা খুঁজে বের করেছেন বাস্তার রিপোর্টার সোফি চ্যাপেল।

ইউক্রেনে, এসব উপকরণ কেনাকাটার দিকে নজরে রাখার জন্য সরকারী ঠিকাদারির একটি ডেটাবেজ অনুসরণ করে চলেছে স্লিস্তভো.ইনফো

হাসপাতালের প্রস্তুতি নিয়ে অনুসন্ধান

এই ম্যাপে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কোন কাউন্টিতে কোনো হাসপাতাল নেই, কোথায় হাসপাতাল আছে কিন্তু আইসিইউ বেড নেই, আর কোথায় আইসিইউ আছে। স্ক্রিনশট: কাইজার হেলথ নিউজ

কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা যখন ক্রমশ বড়ছে, তখন আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড আছে কিনা, তা নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে অনেক দেশে। হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলার জন্য একদিকে ডেটার ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে রিপোর্টাররা বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ঘুরে দেখেছেন সরেজমিনে।

ইউএসএ টুডে-তে জেমি ফ্রেজার ও ম্যাট ওয়েন লিখেছেন, “অন্যান্য দেশে যেভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, তেমন হলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজ্যেই চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে না।” আমেরিকান হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন, ইউএস সেনসাস, সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণ করেন তাঁরা।

কোভিড-১৯ রোগী দিয়ে ভরে যেতে পারে হাসপাতালের বেড। কিন্তু বেড আছে কতগুলো? যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মডার্ন হেলথ কেয়ারে এই শিরোনামের প্রতিবেদন লিখেছেন টিম ব্রোডারিক। লাখ লাখ প্রবীণ আমেরিকান এমন কাউন্টিতে থাকেন যেখানে কোনো আইসিইউ নেই। কাইজার হেলথ নিউজের পাঁচজনের একটি দল করেছিল এই রিপোর্টটি। হার্ভার্ড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট আক্রান্তদের নিয়ে যে প্রক্ষেপণ তৈরি করেছে, সেই তথ্য ব্যবহার করে একটি টুল বানিয়েছে প্রোপাবলিকা। তাতে পোস্টাল কোড ব্যবহার করে পাঠক নিজেই দেখে নিতে পারবেন স্থানীয় পর্যায়ে কোন হাসপাতালে কত হাসপাতাল বেড আছে; এবং কিভাবে বেডের পরিমানকে ছাপিয়ে যেতে পারে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

ইউক্রেনে, রিভেন ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এজেন্সির লিলিয়া প্রচেশনা ও ভোলোদিমির তোরবিচ দ্য ফোর্থ পাওয়ার-এ লিখেছেন, হাসপাতালগুলোতে ১২৬টি ভেন্টিলেশন ইউনিট আছে। এর মধ্যে আটটি ত্রুটিপূর্ণ এবং ৬১টি মেয়াদোত্তীর্ণ।

নাইজেরিয়ায়, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (আইসিআইআর) সতর্ক করেছিল: স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাড়িয়ে বলছেন, নাইজেরিয়া করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়। হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখার পর সিউন ডুরোজায়ে লিখেছেন, “আইসিআইআর এটি খুব জোরের সঙ্গে বলতে পারে, ফেডেরাল ক্যাপিটাল টেরিটোরিতে অবস্থিত নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল হসপিটালে মাত্র দুই বেডের একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য।”

বাংলাদেশে, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের জুবায়ের হাসান ও আদনান হোসেন ভুঁইয়া মাঠ-রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে তুলে এনেছেন এই প্রতিবেদন: বিশেষায়িত হাসপাতলগুলোর প্রস্তুতি দুর্বল

দেশের প্রস্তুতি

যুক্তরাষ্ট্র কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এবং দেখেছে: কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্র, মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণের ঘাটতি আছে আশঙ্কাজনক পরিমাণে। স্ক্রিনশট: নিউ ইয়র্ক টাইমস

“আমার দেশ কি করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত?”

গোড়ার দিকে এই সাধারণ প্রশ্নটিই ছিল অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মূল বিষয়। এখন ফলো-আপ অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে উঠেছে: কিভাবে আরো ভালো করা যেত।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে: “করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ঝুঁকি নিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খারাপ কিছুর সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আইনপ্রণেতারা এই ঝুঁকি অগ্রাহ্য করেছেন এবং এমন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যা হয়তো এই রোগের বিস্তার কমিয়ে আনতে পারত। এমনটাই বলেছেন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে পরিচিত কিছু কর্মকর্তা।” এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন শেন হ্যারিস , গ্রেগ মিলার, জশ ডাউসিএলেন নাকাশিমা

অস্ট্রেলিয়ায়, এবিসি-র ফোর কর্নার তুলে এনেছে চীনের উহানে কী ঘটেছিল, সেই গল্প। অসাধারণ রিপোর্টিং ও ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট দিয়ে এই তথ্যচিত্র বানিয়েছিল তারা। অনুসন্ধান করে দেখেছিল, চীনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করাতেই ভাইরাসটি এভাবে ছড়িয়ে গেছে কিনা।

সংকট ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে, কিছু সংবাদমাধ্যম খতিয়ে দেখেছে বিভিন্ন দেশের জাতীয় প্রস্তুতির বিষয়টি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার অ্যান্ড্রু জ্যাকবস ও শেরি ফিঙ্ক কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন, যার মধ্যে আছে ভেন্টিলেটরের অপর্যাপ্ততা।

বোতসোয়ানার সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর জন্য রিপোর্টিং করতে গিয়ে কাগো কোমানে লিখেছেন, “বোতসোয়ানার বিকেন্দ্রায়িত কর্তৃপক্ষ, দুর্বল স্বাস্থ্য সেবা এবং অপ্রতুল সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা কঠিন হবে।”

গ্লোবাল নিউজের এমেরাল্ড বেনসাডোন প্রশ্ন তুলেছেন, কানাডা প্রস্তুত আছে কিনা। উপসংহারে বলেছেন, “একইসঙ্গে হ্যাঁ এবং না।”

ইইউ কিভাবে করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে, এই শিরোনামে একটি বিশ্লেষণ করেছে ইনভেস্টিগেটিভ ইউরোপ (জার্মান ভাষায়)।

প্রতারণা ও বাণিজ্যিক মুনাফা

মানুষের ভয় কাজে লাগিয়ে কি মুনাফা করা হচ্ছে?

চিলিতে সাইপারের রিপোর্টার নিকোলস সেপলভেদা ও বেঞ্জামিন মিরান্ডা অনুসন্ধান করেছেন ব্যয়বহুল ক্লিনিক ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে।

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চান: আমাদের কি যথেষ্ট পরীক্ষা ও সুরক্ষা উপকরণ আছে? মাস্ক, ভেন্টিলেটর ও হাসপাতাল বেড আছে? কী হবে যদি সেগুলো পাওয়া না যায়? কর্তৃপক্ষ কি এটি মোকাবিলার জন্য দেশকে প্রস্তুত করেছিল?

অনলাইনে পুনরায় বিক্রির জন্য বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা এক ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার জ্যাক নিকাস। প্রথম পাতার এই প্রতিবেদনটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। সিবিএস ডেনভারের ব্রায়ান মাস গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে দেখিয়েছেন কিভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

অনেক রিপোর্টার নজর দিয়েছেন সন্দেহজনক পণ্য ও নানারকম প্রতারণার দিকে। রাশিয়ায় তৈরি অপরীক্ষিত একটি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দ্য বেল। সেই ওষুধ চীনে ব্যবহার করা হচ্ছে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নিরাময়ে।

সাধারণত চিন্তায় আসবে না, এমন কিছু বিষয় নিয়েও হয়েছে অনুসন্ধান। যেমন, মার্কিন দুই সিনেটর তাদের বিপুল পরিমাণ শেয়ার বেচে দিয়েছিলেন শেয়ার বাজার পতনের আগ দিয়ে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছিলেন প্রোপাবলিকার রবার্ট ফাতুর্চি ও ডেরেক উইলিস এবং ডেইলি বিস্টের তিন সাংবাদিক লাকলান মারকে , উইলিয়াম ব্রেডারম্যান, ও স্যাম ব্রোডি।

কর্তৃপক্ষ কি সত্যি বলছে? আক্রান্তের সংখ্যা কত?

সরকারী তথ্যের যথার্থতা কতখানি, এ বিষয়ে প্রশ্ন ছিল সংবাদের একটি মূখ্য দিক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বলা কথাগুলো যাচাই করা ছিল সাংবাদিকদের প্রতিদিনকার কাজ।

ইরানের সরকার কিভাবে সেন্সরশিপ আরোপ করেছে, সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছে, খারাপ সংবাদগুলো ধামাচাপা দিয়েছে- তার একটি সারসংক্ষেপ করেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস। নাগরিকদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বানানো প্রতিবেদনগুলোই (যেমন ইরান নিউজ আপডেটের এই প্রতিবেদন) হয়তো সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য বেশি সমস্যা তৈরি করেছে।

বিশ্বজুড়ে যেভাবে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কাজ করেছেন দ্য ন্যাশনাল অবজার্ভারের ক্যারোলিন ওর। চীনের রিপোর্টার ও নাগরিক সাংবাদিকরা কিভাবে এই সংকট নিয়ে অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন তুলেছে, তা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন মারিয়া রেপনিকোভা।

রাশিয়ার ওয়েবসাইটগুলো কিভাবে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ভাইস। এক্ষেত্রে তারা উদ্ধৃত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সূত্রকে।

রাশিয়াপন্থী নেটওয়ার্কগুলো কিভাবে ইউক্রেনের নোভি সানজারি-তে “করোনাভাইরাস দাঙ্গা” তৈরি করেছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে দ্য প্যানিক উইজার্ড শিরোনামের এই প্রতিবেদনে। ইউক্রেনীয় ভাষার এই প্রজেক্টে কাজ করেছে টেক্সটিলিগা

উৎসের সন্ধানে

অনেক বিস্তারিতভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় কোভিড-১৯-এর বিস্তার সনাক্ত করেছে রয়টার্সের ডেটা টিম। স্ক্রিনশট: রয়টার্স

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নেয়া কৌশল, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা এবং ওষুধের সরবরাহ নিয়ে  হয়েছে, বেশ কিছু অনুসন্ধান।

রয়টার্সের ডেটা টিম তৈরি করেছে দ্য কোরিয়া ক্লাস্টার্স শিরোনামের এই প্রতিবেদন। যেখানে তারা গ্রাফিক্স ব্যবহার করে ফুটিয়ে তুলেছে কিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার চার্চ ও হাসপাতাল থেকে ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এই প্রকল্পে কাজ করেছে মার্কো হার্নান্দেজ, সিমন স্কার ও মানস শর্মা।

ভাইরাসটি কতখানি সংক্রামক, তা বোঝা যায় চিহ্নিতকরণ, বিচ্ছিন্নকরণ এবং ভাইরাসের জেনেটিক সিকুয়েন্সিং থেকে। চীনের কাইক্সিন বিষয়টি তুলে এনেছে বেশ কিছু সাক্ষাৎকার, প্রাসঙ্গিক গবেষণাপত্র ও ডেটাবেজ ব্যবহার করে।

ফাইভ ডব্লিউ ম্যাগাজিনে (স্প্যানিশ), জিগর আলদামা লিখেছেন কোভিড-১৯ ঠেকাতে চীনের কোন পদক্ষেপ কাজ করেছে, আর কোনগুলো করেনি।

চীনে, ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে সংক্রমণ, সেন্সরশিপ ও তথ্যের ঘাটতিকে পরোয়া করেননি কাইক্সিনের সাহসী সাংবাদিকরা। স্ক্রিনশট: কাইক্সিন

চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু এটি সবার নজরে আসে ২০২০ সালের মধ্য জানুয়ারির দিকে। কেন এতো সময় লাগল, তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছে সানলিয়ান লাইফ ম্যাগাজিন

সমস্যার শেকড় সন্ধান করতে গিয়ে আরেকভাবে চিন্তা করেছেন সুইসইনফোর জেসিকা ডেভিস। তাঁর প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: কেন বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো করোনাভাইরাসকে অগ্রাহ্য করছে? এখানে তিনি দেখিয়েছেন কেন বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো এই সংক্রামক রোগটির দিকে তাকাচ্ছে না এবং বিনিয়োগ করছে অন্যান্য লাভজনক খাতে। ওষুধের জন্য চীনের ওপর নির্ভরতার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে ভক্সইউরোপ

করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারিত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিশ্লেষক জলবায়ু পরিবর্তনকে এর একটি প্রভাবক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এনসিয়া সম্পাদক জন ভিদাল লিখেছেন, জীববৈচিত্র্য ও আবাসস্থল ধ্বংসের মাধ্যমে কিভাবে কোভিড-১৯-এর মতো রোগ আবির্ভাবের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে

ক্রাউডসোর্সিং

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বেশ কিছু সংগঠন সাধারণ নাগরিকদের অনুরোধ করেছে তথ্য জানাতে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন উদ্যোগ নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসপ্রোপাবলিকা। ফ্রান্সে মিডিয়াপার্ট

শুধু হাত ধোয়া!

শুধু সাড়া জাগানো অনুসন্ধানের দিকেই বেশি নজর দেওয়ার ফলে, অনেক সময় মৌলিক কিছু রিপোর্টিং আড়ালে চলে যায়।

সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার চর্চা কতটা আছে, তা দেখার জন্য সরকারি কার্যালয়গুলোতে ঘুরেছেন উগান্ডার ডেইলি মনিটরের রিপোর্টার টবি আবেট। তিনি দেখেছেন বেশিরভাগ কর্মকর্তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বা হাত ধোয়ার জায়গাগুলো এড়িয়ে গেছেন। এবং আবেট উপসংহারে বলেছেন, এই কর্মকর্তারা নিজেদের হাত ধোয়ার ব্যাপারে “খুবই অসচেতন”।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।