English
উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের কৌশল ক্রমশই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য মূল্যবান হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। নতুন নতুন ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা তাদের অনুসন্ধানকে বিস্তৃত করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু নজিরও তাঁরা গড়েছেন। যেমন:
বিমান খোঁজার উপায়গুলো সংক্ষেপে জানতে জিআইজেএন এর এই টিপশীট পড়ুন।
এক রাশিয়ান ধনকুবেরের মালিকানাধীন বিমানের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় সন্দেহজনক ভ্রমন পর্যবেক্ষণ
হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিমালিকানাধীন উড়োজাহাজ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন
তুরস্ক সরকারের রেনডিশন ফ্লাইটের (উড়োজাহাজে গোপনে বন্দি স্থানান্তর) তথ্য উন্মোচন
সরকারি কর্মকর্তাদের সফর অনুসরণ
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের যাতায়াত পর্যবেক্ষণ
বিমান দুর্ঘটনা বিশ্লেষণসহ এমন অনেক ঘটনা।
উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারুণ সময় পার করেছেন রিপোর্টাররা।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে জিআইজেএন তৈরি করেছে এই রিসোর্স। এখানে পাবেন:
সেই অভিজ্ঞতা থেকে জিআইজেএন তৈরি করেছে এই রিসোর্স। এখানে পাবেন:
প্রাথমিক ধারণা: বিমান ট্র্যাকের উপায় এবং নতুন একটি প্রযুক্তি কীভাবে তথ্যের গণতন্ত্রায়ণ ঘটাচ্ছে।
বিমান অনুসরণে কাজে আসবে যেসব সাইট।
ফ্লাইট ডেটা দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি: ডেটা বিশ্লেষণ এবং যাত্রীদের তথ্য বের করা।
সরকারি ও সামরিক বিমানের তথ্য যেখানে পাবেন।
করপোরেট জেট এবং আরও কিছুু।
এই লেখা বেশ বিস্তৃত। শুধু সংক্ষিপ্ত ধারণা পেতে আমাদের এক পৃষ্ঠার সারমর্মটি দেখতে পারেন।
ট্র্যাকিংয়ের পুরোনো ও আধুনিক পদ্ধতি
শৌখিন পর্যবেক্ষণকারীরা ( উড়োজাহাজপ্রেমী) দুরবিন এবং ক্যামেরা নিয়ে বিমানবন্দরে যান। উড়োজাহাজ দেখার পাশাপাশি তাঁরা এর শনাক্তকরণ চিহ্নটি খুঁজে বের করেন, ছবি তোলেন এবং তথ্য টুকে রাখেন । এই ব্যাপারটি উড়োজাহাজ চলাচলের শুরুর দিককার সময় থেকে এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে।
সব উড়োজাহাজেই অক্ষর আর সংখ্যার সমন্বয়ে একটি আলাদা শনাক্তকরণ চিহ্ন থাকে। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজটি কোন দেশে নিবন্ধিত সেটি যেমন বোঝা যায়, তেমনি তার পরিচিতিও জানা যায়। এই নিবন্ধন নম্বরটি মূলত বিমানের লেজের দিকে থাকে। দেখার সুবিধার্থে এটি কমপক্ষে ১২ ফুট উচ্চতায় স্পষ্ট করে লেখা হয়।
বিমানটি কোন দেশে নিবন্ধিত, তা জানান দেয় শুরুর কয়েকটি অক্ষর (দেশভিত্তিক নিবন্ধন নম্বরের তালিকা দেখুন)। এরপরের সংখ্যা এবং বর্ণগুলো মূলত ওই উড়োজাহাজের নির্দিষ্ট পরিচিতি নম্বর। তবে সামরিক উড়োজাহাজের শনাক্তকরণ (আইডি) ব্যবস্থা আলাদা।
এর সঙ্গে প্রতিটি উড়োজাহাজের আরেকটি স্বতন্ত্র ‘হেক্স কোড’ থাকে। এটি নেওয়া হয় ২৪ বিটের একটি সাংকেতিক ঠিকানা থেকে। প্রতিটি দেশের জন্য আলাদাভাবে এই কোড বরাদ্দ করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)।
আপনি উড়োজাহাজের লেজে থাকা নম্বরটি চোখে দেখার পাশাপাশি আর কোথায় খুঁজে পাবেন? এ ক্ষেত্রে নাম দিয়ে খোঁজার জন্য উড়োজাহাজের মালিকানাসংক্রান্ত জাতীয় রেজিস্ট্রি বা নথি হতে পারে সবচেয়ে ভালো উৎস। পাশাপাশি আদালতের ডকুমেন্ট দেখতে পারেন এবং অনলাইনে গবেষণাও করতে পারেন। (নিচে মালিকানার অংশটি দেখুন)
এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো: এন৯৭৪ (N974HR.)
যেহেতু এন (N) দিয়ে শুরু হয়েছে তাই বোঝা যাচ্ছে উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ রেজিস্ট্রিতে অনুসন্ধান চালিয়ে আপনি দেখতে পাবেন এটি একটি ফ্যালকন ২০০০ জেট বিমান। এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান নিউজার্সির ব্র্যাঞ্চবুর্গভিত্তিক রোশ ম্যানুফেকচারিং সিস্টেমস।
এডিএস-বি এক্সচেঞ্জের মতো ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যভান্ডারে এই নম্বরটি দিয়ে অনুসন্ধান করলে উড়োজাহাজটির চলাচল সম্পর্কিত তথ্য জানা যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০১৯ সালের ২১ মার্চ এটি আটলান্টা থেকে নিউজার্সিতে উড়ে যায়। যাবতীয় ফ্লাইট রেকর্ডই এভাবে বের করা সম্ভব।
ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া
উড্ডয়নের পর বিভিন্নভাবে উড়োজাহাজ ট্র্যাকিং সম্ভব। নতুন একটি ব্যবস্থা আন্তর্জাতিভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এর মাধ্যমে তথ্যও পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশি।
সেদিকে যাওয়ার আগে পেছনে ফিরে, যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসা রাডারভিত্তিক ব্যবস্থার দিকে কিছুটা নজর দেওয়া যাক।
‘প্রাইমারি’ রাডার: এটি রেডিও সিগন্যাল বা বেতার সংকেতের প্রতিফলন বিশ্লেষণ করে উড়োজাহাজের একটি সম্ভাব্য অবস্থান বের করে।
“সেকেন্ডারি সার্ভেইল্যান্স রাডার”: কোনো উড়োজাহাজ বেতার সংকেত গ্রহণের পর সেই তথ্য যখন আবার ফেরত পাঠায়, সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিমানের তথ্য জানা যায় এই পদ্ধতিতে। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের পরিচিতি নম্বর (আইসিএও হেক্স কোড) এবং উচ্চতারও তথ্য মেলে। কিন্তু অবস্থান জানা সম্ভব হয় না। তবে একাধিক স্থান থেকে পাঠানো সংকেত পেলে, সেখান থেকে বিমানের গতিপথ বের করা যায়। এভাবে অবস্থান নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাল্টিল্যাটারেশন বা এমএলএটি। (এখানে একটি গ্রাফিকের মাধ্যমে বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে।)
রাডারের এসব তথ্য মূলত দেশের সরকার থেকেই সংগ্রহ করা হয়। অনেক সময় সেগুলো সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
আগ্রহী ব্যক্তিরাও সেকেন্ডারি রাডার সিগন্যাল ট্র্যাক করতে পারেন। তারা অনেক সময় ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।
এডিএস-বি: বহরে নতুন সংযোজন
বিমান ট্র্যাকিংয়ের নতুন একটি প্রযুক্তি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফ্রিকোয়েন্সি, তথ্যের যথার্থতা আর বিস্তৃতি, সব দিক থেকে এটি ভালো। খরচও কম। এর নাম এডিএসব-বি, যার পূর্ণ রূপ অটোমেটিক ডিপেনডেন্ট সার্ভেইল্যান্স ব্রডকাস্ট।
এডিএস-বি পদ্ধতিতে বিমানের ভেতরে বসানো একটি যন্ত্র – স্যাটেলাইট নেভিগেশন ব্যবহার করে, তার অবস্থান নির্ণয় করে। আধা সেকেন্ড অন্তর উড়োজাহাজের উচ্চতা, গতি, দিক, পরিচিতি নম্বরসহ জিপিএস তথ্যটি ট্রান্সমিট করা হয়। একে বলা হয় এডিএস-বি আউট। গতি, উচ্চতা ও অবস্থানের নিরিখে উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের বিষয়ও অনুমান করা যায়।
এডিএস-বির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই সংকেতটি ধারণ করতে যে যন্ত্র লাগে তার জন্য মাত্র ১০০ ডলার খরচ করলেই চলে (রাডার বসানোর চেয়েও এটি সাশ্রয়ী)। এই আনএনক্রিপ্টেড সংকেত ১০৯০ মেগাহার্টজে ট্রান্সমিট করা হয়, যা ২০০ মাইলের মধ্যে থাকলে ধারণ করা যায়। পৃথিবীতে এখন এমন লাখো রিসিভার আছে, যা এই সংকেত ধারণ করতে পারে। এর বেশির ভাগই রয়েছে শৌখিন উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষকদের কাছে। তাঁরা ধারণ করা সংকেত পাঠিয়ে দেন বাণিজ্যিক অথবা অলাভজনক ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। অনেক সময় এর বিনিময়ে ভাালো অঙ্কের সম্মানীও পান তাঁরা।
এমন ব্যক্তিপর্যায়ের ডেটাগুলোকে এক করে সার্বিক একটি ট্র্যাকিং রেকর্ড তৈরি করা যেতে পারে।
এই রেকর্ডগুলো অবশ্য সব সময় সম্পূর্ণ নয়। মরুভূমি, সমুদ্র, মেরু অঞ্চল ও স্বল্প আয়ের কিছু দেশসহ অনেক জায়গায় কোনো রিসিভার নেই। তবে স্যাটেলাইটভিত্তিক এডিএস-বি রিসিভারের সহায়তায় এই সমস্যা সামনে অনেকটাই দূর হবে। টেরেস্ট্রিয়াল এডিএস-বি রিসিভারের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। সবচেয়ে বড় ট্র্যাকিং সাইটগুলোর একটি ফ্লাইট এওয়্যার। এর দখলেই রয়েছে ২০,০০০ কন্ট্রিবিউটিং রিসিভার।
এডিএস-বির কাভারেজ সামনের দিনে আরও বাড়বে, কেননা আরও অনেক উড়োজাহাজে এই যন্ত্র বসানো হবে।
আন্তর্জাতিকভাবেও এডিএস-বি প্রযুক্তি বসানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ এবং ইউরোপে ৭ জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে এডিএস-বি বাস্তবায়ন হয়েছে। (এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ইউএস এয়ারক্রাফট ওনার্স অ্যান্ড পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন। আরও দেখতে পারেন স্কাইব্রেরি।)
স্বচ্ছতা বাড়ছে
এডিএস-বি প্রযুক্তি উড়োজাহাজশিল্পে স্বচ্ছতা বাড়াচ্ছে। কেননা এই সংকেত খুবই সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে যে কেউ ধারণ করতে পারে।
তবে বড় বাধা হল অনেক দেশই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে উড়োজাহাজ নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে না।কোনোভাবে যদি উড়োজাহাজের পরিচিতি নম্বরটি জানা যায়, তাহলে তার মালিকানাসংক্রান্ত তথ্যও উন্মোচন করা সম্ভব।
তবে বড় বাধা হলো অনেক দেশ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে উড়োজাহাজ নিবন্ধনসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে না। (আরও জানতে, নিচের মালিকানা অংশটি দেখুন।)
যুক্তরাষ্ট্র সরকার উড়োজাহাজের মালিকানাসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু উড়োজাহাজের মালিক চাইলে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে আবেদন করে, তাদের ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে পারে। এয়ারক্রাফট সিচ্যুয়েশন ডিসপ্লে টু ইন্ডাস্ট্রি (এএসডিআই) ব্লকিং প্রোগ্রাম নামে দেশটির ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) একটি বিধি রয়েছে। (এই বিষয়ে এখানে বিস্তারিত পাবেন।)
এর আওতায় এফএএ-এর ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চয়তা দেয়, তারা ব্লক লিস্টে থাকা উড়োজাহাজের তথ্য প্রকাশ করবে না।
ফ্লাইট এওয়্যার এবং ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টিফোর এর মত বৃহৎ বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এই গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে চলে।
যে প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে সব কিছু
এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ নামের এই ট্র্যাকিং প্রযুক্তি হাজারো মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া (ক্রাউডসোর্সড) তথ্যের উপর নির্ভরশীল। এখানকার কোনো তথ্যই সরকারি নয়। তথ্যদাতারা স্বাধীন, তাই গোপনীয়তার কোনো অনুরোধ মানতে বাধ্য নন।
মজার ব্যাপার হল, যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের বিমানের ভ্রমন-তথ্য গোপন রাখার আবেদন করেন, তাদের তালিকাও কিছুদিন পরপরই প্রকাশ পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকরা ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের আওতায় সেই তথ্য সংগ্রহ করেন।
এডিএস-বি প্রযুক্তির কারণে এখন অনেক ফ্লাইটের তথ্যই আর গোপন থাকছে না। এ কারণে সেইসব উড়োজাহাজের মালিক ও পাইলটরা সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ শিল্প ও সরকারের সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছে, কীভাবে গোপনীয়তা নিশ্চিত করা যায়।
নতুন একটি পরিকল্পনাও ইদানিং আলোচনায় এসেছে। গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাওয়া উড়োজাহাজ মালিকদেরকে “রোলিং আইসিএও কোডস” নামের একটি সাময়িক নম্বর দেয়া হবে। এই কোডটি বজায় থাকবে শুধু নির্দিষ্ট একটি ফ্লাইটের জন্যই। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থা ছাড়া সাধারণ পর্যবেক্ষণকারীরা সেটি চিহ্নিত করতে পারবে না।
পরিকল্পনাটির বিস্তারিত রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এটি বাস্তবায়ন হলে উড়োজাহাজ চিহ্নিত করার উদ্যোগ বাধাগ্রস্থ হবে।
ট্র্যাকিংয়ের তথ্য মিলবে যেসব সাইটে
বাণিজ্যিক ও অলাভজনক সংস্থাগুলো সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে বিপুল পরিমান ফ্লাইট ডেটা সংগ্রহ করে। এর মাধ্যমে তারা অন্যদেরও উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ করে দেয়।
এখানে ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের কয়েকটি প্রধান সোর্স বা উৎস দেয়া হল। এর সবগুলোতেই বিনা খরচে সার্চের সুবিধা রয়েছে। তবে কিছু তথ্যের জন্য যেমন, কোনো নির্দিষ্ট বিমানের উড্ডয়নের অ্যালার্ট পেতে কিংবা তথ্যভান্ডারে পুরোপুরি প্রবেশাধিকারের জন্য আপনাকে সাবসক্রিপশন নিতে হবে।
এখানে সেই চারটি সাইটের কথা বলা হয়েছে, যারা সাংবাদিকদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ নিজেদেরকে যথার্থভাবেই বিশ্বের ‘আনফিল্টারড ফ্লাইট ডেটার সবচেয়ে বড় সাইট’ হিসেবে দাবি করে। এখানে আনফিল্টারড বলতে বোঝানো হয়েছে সাইটটি এডিএস-বি সিগন্যালের উপর নির্ভরশীল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট সংক্রান্ত কোনো তথ্য তারা সেখানকার সরকারের অনুরোধক্রমে বাদ দেয় না বা মুছে ফেলে না। আর এ কারণে এটি সংবাদকর্মীদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয়। ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে একমাত্র তারাই এমন সেবা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পাইলট ড্যান স্ট্রুফার্টের হাতে গড়া এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ, শুরু থেকেই ট্র্যাকিং শিল্পে নিজেদের একটি ডিসরাপটিভ অর্থ্যাৎ প্রথাভাঙা শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছে।
সাইটটি নির্ভর করে ২০০০ এরও বেশি মানুষের একটি সম্প্রদায়ের উপর। তারা রিয়েলটাইম এমএলএটি ও এডিএসবি ডেটা পাঠাতে থাকেন। সেগুলো সার্চযোগ্য একটি সাইটে আপলোড করা হয়। অবাণিজ্যিক ব্যবহার এবং সহযোগিতার জন্য তা উন্মুক্ত থাকে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমোদন নিতে হয়।
কোনো একটি নির্দিষ্ট উড়োজাহাজ অনুসন্ধানের জন্য সাইটের “আদার ট্র্যাকিং ইনফরমেশন’’ ট্যাবে গিয়ে, ড্রপডাউন মেন্যু থেকে “ফ্লাইট হিস্ট্রি ডেটা” ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। আর এই মুহুর্তে চলাচলকালী ফ্লাইটগুলো দেখতে, “গ্লোবাল রাডার ভিউ” অপশনের অধীনে “গ্লোবাল রাডার” ট্যাবে যেতে হবে। সেখানে অপশন মেন্যু থেকে ডেটা নিজের মত সাজিয়ে নেয়াও সম্ভব। যেমন, চাইলে শুধু সামরিক উড়োজাহাজগুলোর তথ্য দেখতে পাবেন। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেইস বা এপিআইয়ের মাধ্যমে আরো গভীরে গিয়েও তথ্য খোঁজা সম্ভব (আরো তথ্য মিলবে এখানে)। সম্ভব ডেটা ডাউনলোডও। তবে এজন্য কিছু অর্থ খরচ করতে হয়।
সাংবাদিকরা তাদের প্রয়োজনে এই ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।
ফ্লাইট এওয়্যার FlightAware অতিথি ব্যবহারকারীদের বিনা খরচে ট্র্যাকিং সুবিধা দিয়ে থাকে। পছন্দের নির্দিষ্ট কিছু উড়োজাহাজের অ্যালার্টও এর মাধ্যমে পাওয়া যায়। “বেসিক অ্যাকসেস” পেতে আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে। “প্রিমিয়াম” ও “এন্টারপ্রাইজ” ব্যবহারকারীদেরকে তারা বাড়তি সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে, অর্থের বিনিময়ে। ৯৫ টি দেশের ২০,০০০ এডিএস-বি সংকেত সরবরাহকারীকে নিয়ে তাদের কারবার।
২০১৮ সালে স্যাটেলাইট ভিত্তিক উড়োজাহাজ ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠান এইরিয়ন এর সাথে একটি চুক্তি করে ফ্লাইট এওয়্যার। যার মাধ্যমে তাদের ট্র্যাকিং সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তবে এই সুবিধাটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। ফ্লাইট এওয়্যার মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ফ্লাইট এওয়্যার এর বিপণন পরিচালক সারা ওরসি বলেন, “যখনই সম্ভব হয় আমরা সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা দেয়ার সব ধরনের চেষ্টা করি।” তারা সাংবাদিকদের বিনা পয়সায় ডেটা ব্যবহার করতে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ডেটা বিশ্লেষকরা প্রয়োজনমাফিক প্রতিবেদন তৈরি করে বলেও জানান ওরসি। তবে কিছু সংবেদনশীল ক্ষেত্রে কোম্পানিটি সূত্র হিসেবে নিজেদের নাম গোপন রাখে।
ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোর বিশ্বজুড়ে চলাচল করা বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো অনুসরণের সুযোগ করে দেয়। তা-ও বিনাপয়সায়। সাইটটিতে নিবন্ধন নম্বর, ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অথবা বিমানবন্দর ধরে তথ্য খোঁজার সুবিধা রয়েছে। তবে বাড়তি তথ্যের জন্য আছে বিভিন্ন ধরণের সাবসক্রিপশন বা গ্রাহক স্তর। যেমন: সিলভার (প্রতি মাসে ১.৫০ ডলার অথবা বছরে ১০ ডলার) এবং গোল্ড (প্রতি মাসে ৪ ডলার অথবা বছরে ৩৫ ডলার)। গ্রাহকরা ফ্লাইটের ঐতিহাসিক তথ্য এবং আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ পেয়ে থাকেন। কোম্পানিটি মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয়তার অনুরোধ বজায় রেখে চলে। পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে গ্রাহকদের উড়োজাহাজ ট্র্যাকিং বন্ধ রাখার সুযোগ দেয়।
প্রতিষ্ঠানটি ডেটা বিক্রি করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তারা সাংবাদিকদের সাথেও কাজ করে। “অনেক সময় আমরা গণমাধ্যমের অনুরোধে বিনাপয়সায় এমন সব ডেটা সরবরাহ করি, যেগুলো খুব একটা বিস্তৃত ও জটিল নয় এবং যা আমাদের সিস্টেমের উপর খুব একটা চাপ ফেলে না,” বলেন ইয়ান পেচেনিক। তিনিই প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের অনুরোধগুলো সামলান (তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনে এই ঠিকানায় ian@fr24.com)। তাঁর মতে ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোরের ডেটা তার প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক স্পষ্ট। তাদের অধীনে আছে ২১,০০০ স্টেশন নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক। তাদের ডেটার ব্যবহার নিয়ে দেখুন ২০১৬ সালে এক রিপোর্টারের লেখা প্রতিবেদন, “ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং”।
ওপেন স্কাই নেটওয়ার্ক হচ্ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা দাবি করে, বিশ্বে বিমান চলাচলের সবচেয়ে বড় সার্ভেইল্যান্স ডেটার ভান্ডারটি তাদের দখলে। “আমরা প্রতিটি বিমান থেকে পাওয়া প্রতিটি বার্তাই সংরক্ষণ করি,” জিআইজেএনকে জানান তাদের একজন স্বেচ্ছাসেবী। তাদের এয়ারক্রাফট ডেটাবেজ-এ গিয়ে উড়োজাহাজের লেজে থাকা নম্বরটি দিয়ে অনুসন্ধান করলে নিবন্ধন তথ্য, ফ্লাইট ইতিহাস এমনকি সেটি আকাশে নাকি মাটিতে, তা-ও জানিয়ে দিবে। এক্সপ্লোরার ফিচারে গেলে, যেসব উড়োজাহাজ আকাশে আছে শুধু সেগুলোই দেখাবে।
যত উড়োজাহাজ ট্র্যাক করা হয়েছে তার সবগুলোর ৩০ দিনের ইতিহাসও দেয়া আছে। জরুরী সতর্কবার্তার তালিকা নিয়ে রয়েছে আরেকটি ফিচার।
ওপেনস্কাই মূলত একাডেমিক এবং অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি। তবে সুনির্দিষ্ট অনুরোধ জানালে তারা সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা করে। নিজেদের পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, এমন ক্ষেত্রে তারা গণমাধ্যমের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।
অন্যান্য ট্র্যাকিং সেবাদাতা
এর বাইরে আরও কিছু ট্র্যাকিং সাইট রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বিনামূল্যে তথ্য সরবরাহ করে। কিন্তু স্পর্শকাতর তথ্যের জন্য টাকা দিতে হয়। মার্কিন গোপনীয়তা বিধি মেনে চলে তারা। বেশিরভাগ সাইটই ইংরেজিতে।
প্লেনরাডার ডট আরইউ রাশিয়ার একটি ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম। এটি মূলত রুশ বিমানের তথ্য দেয়।
আরও কয়েকটি ট্র্যাকিং সেবাদাতা সাইট: এভিডেলফি, প্লেন ফাইন্ডার, ফ্লাইট স্ট্যাটস, প্লেন ম্যাপার, ফ্লাইট বোর্ড, ফ্লাইটভিউ, ওএজি, প্লেনপ্লটার এবং এয়ারফ্লিটস।
বেশিরভাগ বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠান এবং অনেক বিমানবন্দরেরও নিজস্ব সাইট রয়েছে।
মালিকানা তথ্য
একটি উড়োজাহাজের পরিচিতি তথ্য থাকলে তাত্ত্বিকভাবে এর মালিকের পরিচয়ও খুঁজে বের করা সম্ভব বলে ধরে নেয়া যায়।
অক্ষর ও সংখ্যা দিয়ে তৈরি পরিচিতি নম্বরটি প্রতিটি উড়োজাহাজের ক্ষেত্রেই আলাদা। সেই নম্বরই আপনাকে বলে দেবে, বিমানটি কোন দেশে নিবন্ধিত। (দেশ সনাক্তকরণের র্পূণাঙ্গ তালিকাটি এখানে দেখুন।)
প্রায় ৬০ টি দেশের সরকার মালিকানা সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রকাশ করে। যা মূলত জাতীয় রেজিস্ট্রিতে থাকে। সেগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ, অনলাইনে এই তথ্য অনুসন্ধানের সুযোগ দেয়। কিছু দেশের ক্ষেত্রে ডেটা ডাউনলোডও করা যায়।
তবে ব্যক্তি-গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে বেশিরভাগ দেশই মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য উন্মুক্ত করেনি। উদাহরণস্বরুপ, জার্মানিতে কেবল মালিকের অনুমোদন সাপেক্ষেই মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে।
অনেক সময় প্রকাশিত তথ্য থেকে বিমানের ধরণ ও মালিকের নাম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। কিছু রেজিস্ট্রি প্রতিদিন হালনাগাদ হয়। কিন্তু এমনও অনেক রেজিস্ট্রি আছে, যা মাসে বা বছরে একবার হালনাগাদ হয়।
মালিকানার তথ্য কোথায় মিলবে
এরো ট্রান্সপোর্ট, এ ধরণের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য একটি ভাল জায়গা। এই ডেটা ব্যাংকে ৬০ টি দেশের তথ্য রয়েছে। সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে সার্চের ব্যবস্থাও রয়েছে। কিছু সার্চ বিনা মূল্যেই করা যায়, অন্যগুলোর জন্য টাকা খরচ করতে হয়। সেক্ষেত্রে এক মাসের জন্য ১২০ ইউরো এবং বছরব্যাপী ব্যবহারে জন্য ১২০০ থেকে ১৭০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ করতে হবে।
এয়ারফ্রেইমস এ মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য খোঁজার সুযোগ রয়েছে (ব্যবহার বিনা পয়সায় হলেও নিবন্ধন করতে হয়)। এখানে বিভিন্ন উৎসের তথ্য রয়েছে। এমনকি কানাডিয়, ফরাসী, মার্কিন, ড্যানিশ, ডাচ, সুইডিশ এবং অস্ট্রেলিয় রেজিস্ট্রির তথ্যও এখানে পাওয়া যায়।
আরজেডজেটস উড়োজাহাজের লেজে থাকা সনাক্তকরণ নম্বরসহ বিভিন্ন উপায়ে সার্চের সুযোগ দেয়। এখানে উড়োজাহাজের বিভিন্ন মডেলের একটি লম্বা তালিকাও আছে। বোয়িং ম্যাক্সের মত কোনো একটি মডেলে ক্লিক করলে, এই মডেলের যত বিমান আছে, তাদের সবার মালিকের তথ্য এখানে দেখতে পাবেন।
ফ্লাইট এওয়্যার ও ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোরেও মালিকানা সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি
সার্চ করার সুবিধা রয়েছে এমন কয়েকটি রেজিস্ট্রির তালিকা এখানে দেয়া হল:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্র্যাশন
ফ্রান্স- ডিরেকশন জেনারেল দ্য এভিয়েশন সিভিল
কানাডা- সিভিল এয়ারক্রাফট রেজিস্টার ডেটাবেজ
অস্ট্রেলিয়া- সিভিল এভিয়েশন সেইফটি অথরিটি
যুক্তরাজ্য- সিভিল এভিয়েশন অথরিটি
কিছু ওয়েবসাইটে ন্যাশনাল রেজিস্ট্রির তালিকা রয়েছে:
এয়ারনেট ওয়েব সাইট-এ অনলাইন ও জিপফাইলভিত্তিক ন্যাশনাল রেজিস্ট্রির তালিকা আলাদা আলাদাভাবে পাওয়া যাবে।
এয়ার ডেটা সার্চ, একটি ডাচ সাইট। তথ্যবহুল ৪৫ টি সাইটের তালিকা রয়েছে এখানে। যদিও সেগুলোতে অনলাইন সার্চের সুবিধা আছে কিনা তার কোনো নির্দেশিকা নেই।
এয়ারলাইন কোডস ওয়েবসাইট-এ ২৮ টি অফিসিয়াল সাইটের একটি তালিকা আছে। কিছু আনঅফিসিয়াল সাইটের একটি তালিকাও সেখানে আছে, যার বেশিরভাগই পুরাতন।
ল্যান্ডিংস-এ গেলে অসম্পূর্ণ একটি তালিকা পাবেন।
উইকিপিডিয়াতে ন্যাশনাল এভিয়েশন অথরিটি বা জাতীয় বিমান পরিহন কর্তৃপক্ষের একটি তালিকা রয়েছে। তবে সেখানে মালিকানা নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য নাও থাকতে পারে।
কর্পোরেট জেট ইনভেস্টর তাদের অফিসিয়াল গাইড টু এয়ারপ্ল্যান রেজিস্ট্রেশন ২০১৯ এ জাতীয় নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশভিত্তিক সংস্থাগুলোর নাম সেখানে দেয়া থাকলেও তাদের কোন লিংক নেই। তবে সেটি দেখে বুঝা যায়, কোন দেশে পাবলিক রেজিস্ট্রি আছে। তাদের “কান্ট্রি ডেটা এট আ গ্ল্যান্স” বিভাগে (৭৬ পৃষ্টা থেকে শুরু) রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন পাবলিক কিনা সেটি বলা থাকলেও বিস্তারিত কিছু দেয়া নেই।
মূলত স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এই সংক্ষিপ্তসারটি তৈরি করা হয়েছে। তাদের নাম এবং যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্যও তালিকাবদ্ধ রয়েছে।
রিপোর্টারদের হতাশা
তথ্যে ফাঁকফোকর থাকলে তা প্রতিবেদন তৈরির কাজটিকে অনেক জটিল করে তোলে।
ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি ব্যবহার করে কীভাবে বড় ধরণের একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল রয়টার্স তার ব্যাখ্যা রয়েছে তাদের ২০১৮ সালের এই প্রতিবেদনে। রিপোর্টটির বিষয় ছিল, “কীভাবে পশ্চিমা বিমান শেষ পর্যন্ত কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের হাতে পৌছে”।
প্রতিবেদনে রিপোর্টার রিনাত সাগদিয়েভ একটি সাইডবারে দেখিয়েছেন, কীভাবে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মালিকদের চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। “রয়টার্সের রিপোর্টারদের ট্র্যাকিং অনুযায়ী বেশিরভাগ উড়োজাহাজই ইউক্রেনের পর ইরান, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় গিয়েছিল। এসব দেশের কোনোটিরই সবার জন্য উন্মুক্ত এয়ারক্রাফট রেজিস্টার নেই,’’ লিখেছেন তিনি।
আরো বিস্ময়কর খবরও রয়েছে।
সার্বিয়ার রিপোর্টার ইভান আনগেলোভস্কি, ২০১৯ সালে তাদের প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার করা একটি জেট নিয়ে অনুসন্ধান চালান। বলকান ইনসাইটে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে তিনি বিভিন্ন টুল ব্যবহার করেন। আনগেলোভস্কি খুুঁজে পান উড়োজাহাজটি ব্রাজিলের একটি ঔষধ কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হয়েছিল। “তার কয়েক মাস আগেই সার্বিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেনার অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি।” ৬০ লাখ ডলারে এটি কেনা হলেও, তার কোনো দাপ্তরিক নথি নেই। কিন্তু ইভান খুঁজে পান, জেট বিমানটি নিবন্ধন করা হয় সার্বিয়া সরকারের নামেই।
রেকর্ড বা তথ্যে বিভ্রান্তি
উড়োজাহাজের প্রকৃত মালিকের তথ্য গোপন করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
রেজিস্ট্রেশন ডেটাবেজে থাকা নামটি শেষ পর্যন্ত হয়তো কোনো দেশের একটি ছায়া কোম্পানি হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। যেখানে প্রকৃত মালিক কে, তা প্রমাণ করা খুব কঠিন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার মালিকদের কীভাবে খুঁজবেন জানতে দেখুন জিআইজেএন এর এই রিসোর্স পেইজ।এর মানে হল বেনামী কোম্পানি এবং ছায়া ব্যক্তিদের পেছনে ছোটা।
মালিককে চিহ্নিত করতে না পারার হতাশাটি মিডল ইস্ট আইয়ের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, “আইল অব ম্যান ভিত্তিক কোম্পানি মাল্টিবার্ড ওভারসিজ লিমিটেড এর নামে গত বছর একটি উড়োজাহাজ নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু তার আসল মালিক কে সেটি অস্পষ্ট রয়ে গেছে। আইল অব ম্যান এর সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক সাইমন উইলিয়ামস এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা জানান।”
যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মালিকানা গোপন রাখা হয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অথবা ট্রাস্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করে কিছু মালিক তাদের উড়োজাহাজের পরিচিতি আড়াল করেন। দেশটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদকরা এমন কিছু ঘটনা উন্মোচন করেছেন।
তাদের আইনে বিদেশী উড়োজাহাজের মালিকানা, সেখানে নিবন্ধিত কোনো ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তরের সুযোগ আছে। দেশটিতে ১,০০০ এর বেশি বিমান ট্রাস্টের ঠিকানায় নিবন্ধিত। তারই একটি এয়ারক্রাফট গ্যারান্টি র্কপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই টেক্সাসের ওনালাস্কায়। অথচ এটি এমন এক শহর যেখানে কোন বিমানবন্দরই নেই। ডব্লিউএফএএ ২০১৯ সালে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বোস্টন গ্লোব, বেনামী নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে আকাশে গোপনীয়তা শিরোনামে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, “ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিথিল নজরদারি যুগের পর যুগ ধরে মাদক কারবারি, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং এমনকি সন্ত্রাসের সাথে জড়িতদের ব্যক্তিগত বিমান নিবন্ধন এবং পরিচয় লুকানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। যা বেরিয়ে এসেছে স্পটলাইটের (বোস্টন গ্লোবসের অনুসন্ধানী ইউনিট) একটি দলের অনুসন্ধানে।” গ্লোবের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত প্রতি ছয়টি উড়োজাহাজের একটির পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব নয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে কীভাবে রাশিয়ার একজন সম্পদশালী নিবন্ধনের এই ফাঁকফোকরের সুবিধা নিয়েছেন। (এই ধরনের চর্চার পক্ষ নিয়ে, বিজনেস জেট ট্রাভেলারের পর্যবেক্ষণধর্মী প্রতিবেদনটি পড়ুন।)
নিবন্ধনের জনপ্রিয় দেশ
উড়োজাহাজের মালিক যেখানে বসবাস করেন সেখানেই নিবন্ধন করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। উড়োজাহাজ পুনঃনিবন্ধনও করা যায়। অনেক সময় বদলে ফেলা যায় আইডি নম্বরও।
কর্পোরেট জেট ইনভেস্টর এর অফিসিয়াল গাইড টু এয়ারপ্লেন রেজিস্ট্রেশন ২০১৯ এ উড়োজাহাজ নিবন্ধনের জাতীয় বিধিবিধানগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে উড়োজাহাজ শিল্পের ব্যবসা সংক্রান্ত খবরাখবরও থাকে। শিথিল নিবন্ধন, গোপনীয়তা ও কর সুবিধা তাদের আগ্রহের বিষয়।
উড়োজাহাজ নিবন্ধনের অন্যতম জনপ্রিয় একটি গন্তব্য আইল অব ম্যান। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বশাসিত এই দ্বীপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে করফাঁকির সুযোগ করে দেয়।
এমন সুবিধা পাওয়া যায় আরুবা, বারমুডা এবং কেম্যান আইল্যান্ডসের মত জায়গায়ও।
ইজারার জটিলতা
যখন উড়োজাহাজ লিজ বা ইজারা দেয়া হয়, তখন কে তার টাকা পরিশোধ করছে সেটি বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।
এমনই এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন হাঙ্গেরিয়ান অনুসন্ধানী সাইট আটলাটসোর রিপোর্টার এর্দেলি কাতালিন। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বানের ব্যক্তিগত জেট ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার অনুসন্ধানে পাওয়া যায় উড়োজাহাজটি অস্ট্রিয়ায় নিবন্ধিত। কিন্তু কে এর জন্য অর্থ ব্যয় করেছে সেটি জানা যায়নি। জেটটি পরিচালনা করত বিজনেস জেট পরিচালনার জন্য খ্যাত অস্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল জেট ম্যানেজমেন্ট।
এই অনুসন্ধানের বর্ণনা দিয়ে আটলাটসোর রিপোর্টারদের একটি লেখা প্রকাশ করেছে জিআইজেএন। যার শিরোনাম, “একটি ব্যক্তিগত ইয়ট, একটি বিলাসবহুল জেট এবং হাঙ্গেরির শাসক এলিট।”
দরকারি নথির অন্যান্য উৎস
আরো কিছু সরকারি নথি কাজে লাগতে পারে। বিশেষ করে যেগুলো এভিয়েশন খাতের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। দুর্ঘটনার প্রতিবেদন থেকেও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশে উড়োজাহাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো দুর্ঘটনা ও তদন্তের নথি প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে এভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্ক (এএসএন) নামে একটি বেসরকারি ও স্বাধীন উদ্যোগ রয়েছে। তারা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ, সামরিক বিমান এবং কর্পোরেট জেটের দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর একটি অনলাইন তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে। এএসএন সেইফটি ডেটাবেজে রয়েছে ২০,৩০০ টি ঘটনা, ছিনতাই এবং দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ।
দুর্ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব পালন করা সংস্থাগুলোর একটি আন্তর্জাতিক তালিকাও আছে এএসএন-এ। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সংস্থা হিসেবে কাজ করে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড সেইফটি বোর্ড। এর পাশাপাশি ক্রয় ও চুক্তি সংক্রান্ত সংস্থার রেকর্ডগুলোও সরকারি উড়োজাহাজ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের কার্যকর উৎস হতে পারে।
বাজফিড তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে দেখিয়েছে কীভাবে মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিবন্ধন হস্তান্তরের মাধ্যমে তাদের বিমান বহরের আকার গোপন করেছে।
নথি কিনতে পারেন এফএএ থেকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিমান নিবন্ধনের ডেটাবেজটি ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) অধীনে। তবে এগুলো বেশ প্রাথমিক পর্যায়ের ডেটা। এক্ষেত্রে বাড়তি তথ্য পাওয়া যেতে পারে ভিন্ন দুটি প্রতিবেদনে।
তাদের একটি হল নিবন্ধন ও বিক্রয় ইতিহাস; আর অন্যটি উড়োজাহাজের মান সনদ, যেখানে আধুনিকায়ন ও মেরামত সংক্রান্ত তথ্য থাকে। এই সনদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি উড়োজাহাজে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে সেটি জানা যায়। যেমন উড়োজাহাজের কাঠামোতে ছিদ্র করে ক্যমেরা বসানো।
এইসব প্রতিবেদন ১০ ডলারেই পাওয়া যায় এবং অনলাইনে অর্ডার দিলেই চলে। আপনার লাগবে এন নম্বর এবং সিরিয়াল নম্বরটি। তথ্য পেতে সময় লাগবে এক সপ্তাহ।
ধনী ও বিখ্যাতদের নিয়ে বিশেষ সাইট
ডিক্টেটর অ্যালার্ট নামের টুইটার বট জেনেভা বিমানবন্দরে নামা সেইসব বিমান সনাক্ত করে, যারা একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিবন্ধিত।কিছু সাইট আছে যেগুলো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, নির্বাহী ও সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বিমানের তথ্য সংগ্রহ করে।
এখানে তার কয়েকটির তালিকা:
প্রাইভেট জেট ওনার রেজিস্টার মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের একটি নির্বাচিত তালিকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি এটি চালান। একই ব্যক্তি সুপার ইয়ট ফ্যান নামের একটি সাইটও পরিচালনা করেন।
এয়ার চার্টার সার্ভিস বিশ্বের প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের বহনকারী উড়োজাহাজের তালিকা ও বিস্তারিত বিবরণ সংরক্ষণ করে।
ডিক্টেটর অ্যালার্ট মূলত একটি টুইটার বট (সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে)। এটি জেনেভা বিমানবন্দরে নামা ও উড্ডয়ন করা, একনায়কতান্ত্রিক সরকারের নামে নিবন্ধিত উড়োজাহাজ সনাক্ত করে। প্রাপ্ত তথ্য টুইটার এবং ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। ফ্রাঁসোয়া পিলে এবং ইমানুয়েল ফ্রয়েডেনথাল নামের দুজন এই প্রকল্পটি চালান। পিলেট একজন ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং ভেসপার ডট মিডিয়া নামের একটি সংবাদ সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা। আর ফ্রয়েডেনথাল আফ্রিকায় ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। উন্মুক্তএবং আনুষ্ঠানিক নিবন্ধনের সূত্র ধরেই উড়োজাহাজ ট্র্যাকের তালিকাটি করা হয়। ট্র্যাক করা উড়োজাহাজের হালনাগাদ তালিকাটি আপনি এক্সেল ফাইল হিসেবে ডাউনলোড করতে পারেন।
রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজারা কীসে চড়েন?