প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Graphic: Courtesy Coda Story

লেখাপত্র

লেখাপত্র

কারা কোভিড গুজব ছড়ায় খুঁজে বের করার ৬টি টুল ও ৬টি কৌশল

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

চিত্র:  কোডাস্টোরির সৌজন্যে।

কোভিড-১৯ গুজবের পেছনে কারা অনুসন্ধান করতে গিয়ে আলেক্সান্ডার ক্যাপ্রন ভেবেছিলেন, তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে যাচ্ছেন, যাদের পেছনে শক্তিশালী কেউ আছে, এবং অনেক টাকা ঢালছে। কারণ, তাদের ছড়ানো ভুয়া খবর ততদিনে আফ্রিকা থেকে পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষের মনে প্রভাব ফেলেছে।

পাঁচটি জনপ্রিয় ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ভুয়া উক্তি পোস্ট করে যাচ্ছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তাদের উদ্দেশ্য হলো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং ফ্রান্স-নিবাসী কঙ্গোলিজদের ক্ষেপিয়ে তোলা। সেসব পোস্টের কোনো কোনোটির পরিণামে মানুষের মৃত্যুও হতে পারতো।

ক্যাপ্রন কাজ করেন ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী দল দ্য অবজার্ভার্সে। ভুয়া খবরের নেপথ্য কারিগরদের খুঁজতে তিনি ব্যবহার করেন নানা ধরনের নেটওয়ার্ক ট্র্যাকিং টুল  — যেমন হোক্সি, হুপোস্টেডহোয়াট, আর ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি বক্স।

এতোকিছুর পর তিনি আবিষ্কার করলেন, বড় এই গুজব কেলেংকারির পেছনে কলকাঠি নাড়ছে মাত্র ২০ বছর বয়সের এক যুবক আর ১৬ বছরের এক কিশোর। তাদের একজন পড়েন কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার একটি কলেজে, আরেকজন স্কুলে।

ফেসবুকে পেইজ চালানো সেই ২০ বছরের যুবক ক্যাপ্রনকে বলেছিলেন, “আমরা গল্প বানাই ফলোয়ার পেতে। আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের এমন নতুন নতুন তথ্য দেই, যা তারা আগে কোথাও পড়েনি।”

কঙ্গোর ২০ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি এরকম নকল কোভিড -১৯ পোস্ট দিয়ে এক মাসে ৬০,০০০ ফলোয়ার অর্জন করেছিলেন। ছবি: দ্য অবজার্ভার, ফ্রান্স ২৪।

দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের ফেসবুক পেইজে দেড় লাখ ফলোয়ার ছিল, এবং তার মিথ্যা কোভিড-১৯ লেখাগুলো মাত্র পাঁচ সপ্তাহে ২০৬,০০০ বার শেয়ার হয়েছিল।

চলমান মহামারি নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিকল্পিত মিথ্যাচারের যে বন্যা দেখা যাচ্ছে, তার সাথে কট্টর মতাদর্শী গোষ্ঠী থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক প্রতারক, রাষ্ট্রীয় শক্তি, “ডার্ক পিআর” এজেন্ট, ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক সংবাদ নেটওয়ার্ক, এবং এমনকি সামান্য টাকা বা মনোযোগপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ নিয়ে যত ভুয়া খবর দেখা গেছে, তার ৪০ ভাগই পুরোপুরি বানোয়াট। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী, পশ্চিম ইউরোপের প্রথাগত মিডিয়ার সঠিক খবরগুলো সামাজিক মাধ্যমে যতটা সাড়া পেয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছে রুশ এবং চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ছড়ানো ভুয়া খবর। পরিস্থিতি এখন এতই গুরুতর যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও বলতে হয়েছে, এই স্বাস্থ্য মহামারির হাত ধরে একটি তথ্য-মহামারিও এসেছে পৃথিবীতে।

রাজনৈতিক মিথ্যার মতো, সংক্রামক রোগ নিয়ে মিথ্যাচারের বেলায়ও দেখা যায়, এর বিস্তার ঘটানো হয় কৌশলে এবং প্রায়ই তার পরিণাম হয় ভয়াবহ। এর মধ্যে রয়েছে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, ভুয়া বা বিষাক্ত “নিরাময়ের” কারণে সংঘটিত মৃত্যু এবং সহিংসতায় প্ররোচনা, যেমনটি দেখা গেছে ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ক্ষেত্রে।

জিআইজেএন সাত জন সাংবাদিক ও সম্পাদকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা কোভিড -১৯ সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য নিয়ে কাজ করছেন। আমরা দেখতে পেয়েছি, এই বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের ভূমিকা নিয়ে তাদের সবার মত-ই এক: ভুয়া খবরকে নিছক যাচাই করে ছেড়ে দেওয়ার বদলে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত মূলত মানুষের ওপর তার প্রভাব এবং এই প্রচারণার পিছনে অর্থের উৎস খতিয়ে দেখা।

আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি – ভুয়া খবরের নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে – তারা ডজন ডজন টুল ব্যবহার করেন। কিন্তু তাদের সাক্ষাৎকার থেকে আমরা অনুসন্ধানের ছয়টি টুল এবং ছয়টি কৌশল চিহ্নিত করেছি, যা কমবেশি সবার জন্যই দরকারি।

“আমি মনে করি, যে সমস্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ক্ষতিকর ভুয়া খবর তৈরি করছে এবং ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের মুখোশ খুলে দেয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে,” বলেন বাজফিড নিউজের সম্পাদক ক্রেইগ সিলভারম্যান। “ট্রল গ্রুপ, রাষ্ট্রীয় শক্তি, বা টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা দল –সবাইকে নিয়ে অনুসন্ধান করা দরকার। এর একটি কারণ, স্টোরি হিসেবে এগুলো দারুন; আর দ্বিতীয় কারণ, এটি তাদেরকে থামাতে সহায়তা করে। সাংবাদিকরা পিছু নিলে, ক্ষতিকর ভুয়া খবর ছড়ানোর কাজটি তাদের কাছে অতটা আকর্ষণীয় বলে মনে হবে না।”

সিলভারম্যান সম্প্রতি ওপেন-সোর্স প্লাগইন ও টুলের একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরি করেছেন, যা ব্যবহার করে সাংবাদিকরা ভুয়া তথ্য ছড়ানো ব্যক্তিদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন।

রিপোর্টাররা বলছেন, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে যাচাই প্রতিষ্ঠানগুলোর অসামান্য সম্মিলিত চেষ্টা, ভুয়া তথ্যের কুশীলবদের খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পয়েন্টার ইনস্টিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক সম্প্রতি ১০০টি সংগঠনকে নিয়ে গঠন করে করোনাভাইরাস ফ্যাক্টস অ্যালায়েন্স। এই জোট একাই প্রায় ৭০০০ কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ভুয়া খবর যাচাই করেছে ২০২০ সালে। তথ্যের মহামারি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নীতি-কাঠামো তৈরি করতে ফোরাম ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি গঠন করেছে একটি শক্তিশালী ওয়ার্কিং গ্রুপ। আর অলাভজনক জোট ফার্স্ট ড্রাফটের মতো গবেষণা সংস্থাগুলো সাংবাদিকদের অনলাইন পোস্ট যাচাইয়ের কৌশল এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

একটি সহজ রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফার্স্ট ড্রাফট দেখিয়েছে, চীনে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর বাস্তব চিত্র দাবি করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো এই ছবি, আসলে ২০১৪ সালে জার্মানিতে হওয়া একটি  শিল্প প্রদর্শনী থেকে এসেছে। ছবি: ফার্স্ট ড্রাফট

ফার্স্ট ড্রাফ্টের মার্কিন উপপরিচালক এইমি রাইনহার্ট বলেছেন, তারা অনেক আগে থেকেই বার্তাকক্ষগুলোকে সহায়তা করছেন, যেন ভাইরাল হওয়ার আগেই তারা বিপজ্জনক করোনাভাইরাস গুজব ঠেকাতে পারে।

“অনলাইন গুজবে আমরা যে ধরনের উদ্দেশ্য, এবং ভয় ও ঘৃণা ছড়ানোর প্রবণতা দেখি, এখানেও তাই। ভুয়া খবরের এই কেকের ওপর আইসিংটা শুধু করোনাভাইরাসের,” বলেন রাইনহার্ট। “আগে জর্জ সোরোসের ওপর হামলা হতো, আর এখন ট্রলদের নতুন লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন বিল গেটস। এর আগেও ভুয়া তথ্য ছিল, তবে ডিজইনফর্মেশন – অর্থ্যাৎ পরিকল্পিত মিথ্যাগুলো – আসতে শুরু করে ‘রি-ওপেন’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে। [কোভিড-১৯ লকডাউনের পরে]। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আমরা দেখেছি – ভ্যাক্সিনবিরোধী গোষ্ঠী এবং অস্ত্র সঙ্গে রাখার পক্ষপাতী গ্রুপ দু’টির অবস্থান রাজনীতির মাঠে বিপরীত মেরুতে হলেও, তারা উভয়ই একটি বিষয়ে একজোট, ‘আপনি আমাদের বলতে পারবেন না, কি করতে হবে।'”

পরিকল্পিত মিথ্যাচার নিয়ে স্কুপ

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট ভোটকে প্রভাবিত করতে যে মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা চালানো হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি বোমা ফাটানো স্টোরি ব্রেক করেছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। তাদের একটি ছিল ক্রেইগ সিলভারম্যানের। তিনি দেখিয়েছিলেন, মেসিডোনিয়ার একটি ছোট শহরে কয়েকজন তরুন মিলে অন্তত ১৪০টি প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট তৈরি করেছিল, যা মার্কিন নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আরেকটি স্টোরি ছিল নিউ ইয়র্ক টাইমসের, যেখানে তারা রাশিয়ার রিপোর্টারদের একটি স্কুপের ওপর বাড়তি অনুসন্ধান করে তুলে এনেছিল, ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি নামে সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি ট্রল ফার্ম কিভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে।

কোভিড-১৯ নিয়ে এরকম বড় মাপের কোনো স্টোরি এখনো বেরিয়ে আসেনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিকল্পিত মিথ্যাচারের এমন অনেক সম্ভাব্য স্কুপ হয়তো উন্মোচনের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে।

জর্জিয়ার তিবলিসি ভিত্তিক অলাভজনক গণমাধ্যম কোডা স্টোরির প্রধান সম্পাদক নাতালিয়া আন্তেলাভা বলেন, পরিকল্পিত মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা দেখে অনেক বার্তাকক্ষ রীতিমত হতচকিত হয়ে গেছে এবং এধরনের প্রবঞ্চনার পেছনে যেসব প্রতিষ্ঠান বা যে ধরনের উদ্দেশ্য কাজ করছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করাকেই তারা সমাধান হিসেবে দেখছে।

“আমি মনে করি, নেহাত সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে সাংবাদিকদের মনোযোগ অন্য দিকে সরে গেছে,” বলেন আন্তেলাভা। “অন্যের এজেন্ডায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, আমাদের উচিত নিজস্ব স্টোরিটেলিংয়ে মনোযোগ দেওয়া। আমার মতে ডিজইনফর্মেশনও এমনভাবে কাভার করা উচিত, যেভাবে আমরা অন্য যে কোনো সংকট কাভার করি। মূলনীতি আসলে একই।”

চিত্র:  কোডাস্টোরির সৌজন্যে।

গেল ফেব্রুয়ারিতে, স্টপ ফাইভ-জি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ নিয়ে অনুসন্ধান করে কোডা স্টোরি। তারা ফাইভ-জি ডেটা প্রযুক্তিকে আক্রমণ করতে গিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছিল। এই মহামারিতে বিষয়টি ফের নতুন করে সামনে আসে। এই প্রযুক্তির কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যাচ্ছে এবং এতে কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার বাড়ছে – এমন গুজব বিশ্বাস করে শুধু যুক্তরাজ্যে সাধারণ মানুষ অন্তত ৭০টি মোবাইল টাওয়ার ভাঙচুর করে।

কোডা স্টোরির অনুসন্ধানী দল এই ফেসবুক পেইজের ম্যানেজারকে আবিষ্কার করেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে, একটি বাড়ির বেইজমেন্টে। সাক্ষাৎকার নিতে গেলে, সেই ব্যক্তি হাতে-ধরা একটি রেডিয়েশন ডিটেক্টর দিয়ে তাদের রিপোর্টারকে স্ক্যান করেন। কোডা স্টোরি এই প্রতিবেদনে কাউকে দোষারোপ করেনি বা তারা অদ্ভুত যেসব কথা ছড়াচ্ছে, সেদিকে মনোযোগ দেয়নি। বরং সম্মান বজায় রেখে সেই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা, তার মনে এই প্রযুক্তি নিয়ে যে ভয়, এবং তার যে উদ্দেশ্য – সেই বিষয়গুলোকে সামনে এনেছে। তার সাথে জুড়ে দিয়েছে প্রাসঙ্গিক বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো।

পরিকল্পিত মিথ্যাচারের ওপর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রভাব

গেল মে মাসে আর্মেনিয়ার সাংবাদিক তাতেভ হোয়ানিসিয়াঁ দেখতে পান, মেডমিডিয়া.এএম নামের একটি সংবাদ সাইট থেকে মহামারি নিয়ে বেশ কিছু ভুয়া এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন স্টোরি ছড়ানো হয়েছে। তার মধ্যে একটিতে, তারা আর্মেনিয়ার সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে “সব ধরনের ভ্যাক্সিন বা টীকাদান কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান” করার জন্যে। হোয়ানিসিয়াঁ জানান, সেই স্টোরিটি দেশটির ৩০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ১৩১,০০০ জনই দেখেছেন।

তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ-পঠিত স্টোরি ছিল এমন: একটি মর্গে গিয়ে যদি কেউ এই মর্মে লিখিত সাক্ষ্য দেন যে তাদের আত্মীয় কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাহলে সেই মর্গ তাদেরকে নগদ অর্থ সহায়তা দেবে। এই গল্পটিও ছিল ভুয়া।

তিনি পরে খুঁজে বের করেন, সাইটটি চালান একজন উগ্র ডানপন্থী ডাক্তার এবং তাদের দাবি সাইটটি চলছে, ”(মার্কিন) পররাষ্ট্র দফতরের অনুদানে।” দাবিটি সত্যি না আরেকটি হাস্যকর মিথ্যা – এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান হোয়ানিসিয়াঁ। তাই নিছক তাদের ছড়ানো ভুয়া খবরের পেছনে না ছুটে, তিনি তাদের টাকার উৎস অনুসন্ধানে নেমে পড়েন। সহজ পথের বদলে কঠিনটিকেই বেছে নেন।

তার চেষ্টা শুরু হয়, গ্রান্টস.গভ নামের একটি সাইট থেকে। মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকার এই সাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, কোন দেশ বা এলাকায় কোন প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্যের টাকা পেয়েছে। এর পর তিনি একটি হু-ইজ সাইটে গিয়ে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেন, মেডমিডিয়া.এএম ডোমেইনটি কার নামে নিবন্ধন করা। কিন্তু তখনো তিনি অতটা সফল হননি।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, মার্কিন সাহায্য পেতে হলে ডানস্ নাম্বারের জন্য আবেদন করতে হয়। এটি প্রতিটি অনুদানপ্রার্থী প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি নাম্বার দেয়। একই সাথে অনুদানপ্রার্থীদের স্যাম নিবন্ধনও করতে হয়। স্যাম অর্থ হচ্ছে সিস্টেম ফর অ্যাওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট।

হোয়ানিসিয়াঁ এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাম.গভ সাইটে খোঁজ শুরু করেন এবং “আর্মেনিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ইয়ুথ ডক্টরস” নামে একটি এনজিওর নিবন্ধন রেকর্ড ‍খুঁজে পান, সেই একই ডাক্তার যার প্রতিষ্ঠাতা। এবার নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল, সেই প্রতিষ্ঠান আসলেই মার্কিন সরকারের অনুদান পেয়েছে কিনা। তাই তার পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের ফেডারেল অ্যাসিসটেন্স স্ট্যাটাস সক্রিয় কিনা যাচাই করে দেখা।

এখানেই দরকারি তথ্য পেয়ে যান হোয়াসিনিয়াঁ। সব প্রমাণ নিয়ে আর্মেনিয়ার মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলে, আট দিন পর জানানো হয়, এনজিও এবং ওয়েবসাইট – দুটোকেই অর্থায়ন করেছে তারা।

 ওপেন ডেমোক্রেসির সাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার এক সপ্তাহ পর, দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসি জানান, তাদের দূতাবাস এই ওয়েবসাইটে অর্থায়ন বন্ধ করে দেবে এবং ”কিছু পদ্ধতিও কঠোর করা হবে।”

ওপেন ডেমোক্রেসির এই প্রতিবেদন অন্তত আটটি ভাষায় বিশ্বের ৭০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

“আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি: মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর কিভাবে এমন একটি আর্মেনিয় ওয়েবসাইটকে অনুদান দেয়, যারা কোভিড-১৯ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ায় এবং ভ্যক্সিন কর্মসূচির বিরুদ্ধে কথা বলে,” বলেন হোয়াসিনিয়াঁ। “কোভিড-১৯ নিয়ে ভয়ংকর সব মিথ্যা প্রচারণা চলছে। (এই স্টোরির) প্রতিক্রিয়া আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।”

“এখন মেডমিডিয়া তাদের কাজের ধরন বদলে ফেলেছে। কোভিড-১৯ নিয়ে তাদের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর পোস্টের সংখ্যাও কমে এসেছে। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় ইমপ্যাক্ট!”

কোভিড-১৯ গুজবের কুশীলব খুঁজে বের করার ৬টি টুল

  • হোক্সি। কোনো পোস্ট বা আর্টিকেল অনলাইনে কিভাবে ছড়াছে তা ছবির মাধ্যমে বুঝতে সাহায্য করবে এই ওপেন সোর্স টুল। স্বল্প-বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে কোন কোন পোস্ট আসছে এবং সময়ের সাথে সাথে তা কতবার শেয়ার হয়েছে, সেই  সংখ্যাও জানাবে টুলটি।
  • ক্রাউডট্যাঙ্গল। বেশিরভাগ ডিজইনফর্মেশন বিশেষজ্ঞের বিচারে ক্রাউডট্যাঙ্গল হলো এই ধরনের কাজের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী টুল। সামাজিক মাধ্যম মনিটরিংয়ের এই প্ল্যাটফর্ম আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কীভাবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং রেডিটের মতো প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট শেয়ার হচ্ছে।
  • গ্রাফিকা। এই টুলের মাধ্যমে আপনি চাইলে সোশ্যাল মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপকে মানচিত্রের মত করে দেখতে পারবেন এবং একটি ডোমেইনের সাথে আরেকটির সংযোগও খুঁজে বের করতে পারবেন। গেফি এমন আরেকটি কার্যকরী টুল, যার মাধ্যমে ভুয়া তথ্যের প্রবাহকে চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়।
  • ডিএনএসলিটিকস.কম। এই টুল দিয়ে কোনো সাইটে থাকা বিজ্ঞাপন কোথা থেকে আসছে এবং তাদের সন্দেহজনক বাণিজ্যিক কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে – এধরণের বিষয় সনাক্ত করা যায়। মোটাদাগে ভুয়া খবর যারা ছড়ায় তাদের আর্থিক সংযোগ বা কেলেংকারির মত বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানে এটি কাজে আসে। এর প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চাইলে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পেছনে টাকা খরচের সামর্থ্য আছে, এমন নিউজরুমের জন্য অ্যাডবিট আরেকটি পেইড টুল, যা ওয়েবে ট্রল করে এবং সাইটে থাকা বিজ্ঞাপন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
  • হুপোস্টেডহোয়াট। অনলাইন গোয়েন্দাগিরির জন্য বিখ্যাত হেন্ক ভ্যান এস, এই টুলটি তৈরি করেছেন জনস্বার্থ নিয়ে কাজ করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য। এটি আপনাকে তারিখ ধরে ফেইসবুকে কীওয়ার্ড সার্চ করার সুযোগ দেবে। বিভ্রান্তি ছড়ানো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পেছনে থাকা মানুষ খুঁজে বের করার কাজে – ভিডিও যাচাই টুল ইনভিড এবং ক্রাউডট্যাঙ্গলের মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি।
  • গুগলকে প্রশ্ন করে উত্তর জানা। এটি অনুসন্ধানের বেশ কার্যকর কৌশল। রাইনহার্ট বলেছেন, “ফেডারেল সরকার কেন …” এমন অর্ধেক প্রশ্ন গুগলে টাইপ করলে, সার্চ বক্সে একই প্রসঙ্গে বেশ কিছু পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নের তালিকা পাবেন। ইউজাররা যেসব প্রশ্ন বেশি করেন, তালিকায় সাধারণত তা-ই দেখানো নয়। এখান থেকে বোঝা যায়, কমিউনিটির মানুষেরা কোন প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় বা কোন বিষয় নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে। এমন একটি বিখ্যাত টপ ট্রেন্ডিং গুগল প্রশ্ন “ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী?” – যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট ভোটের পরদিন ব্রিটেনের অধিবাসীরা, এই প্রশ্নটির উত্তর সবচেয়ে বেশি খুঁজেছিলেন।

ভয়ানক মিথ্যার স্রোতে এশিয়া

দিল্লি-ভিত্তিক সোসাইটি অফ এশিয়ান জার্নালিস্টের সভাপতি এবং জিআইজেএন বোর্ডের সদস্য সৈয়দ নাজাকাত বলেছেন, তিনি এশিয়াতে মহামারি নিয়ে চারটি আলাদা স্রোত দেখেছেন: প্রথমত, ভাইরাসের উৎস নিয়ে ভুয়া খবর, তারপর এসেছে অতীতের সম্পর্কহীন গল্পকে এই ভাইরাসের উদাহরণ হিসেবে দেখানো, তারপর রোগ নিরাময়ের নানা কৌশল এবং সবশেষে লকডাউন।

নাজাকাত সতর্ক করে বলেন, পরবর্তী স্রোতটি চলবে আগামী কয়েক মাস ধরে – এবং সম্ভবত পরিকল্পিত মিথ্যা প্রতারণা দেখা যাবে ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন নিয়ে।

“আমি দেখতে পাচ্ছি এটি আসছে, এবং আমরা যা দেখেছি তার চেয়ে আরো সমন্বিত ও তীব্রভাবে,” তিনি বলেন। “এটি ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, আবার গুজবের কারণে সাধারণ মানুষও সত্যিকারের ভ্যাক্সিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আমি বলছি, ভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে প্রতিদিন আসা হাজার হাজার ভিডিওর কথা। রিপোর্টারদের হাত এমন উদাহরণে পরিপূর্ণ থাকবে।”

ডেটাভিত্তিক স্টোরিটেলিং স্টার্টআপ ডেটালিডসের প্রতিষ্ঠাতা নাজাকাত বলেন, এর আগে পাকিস্তানে ভ্যাক্সিন নিয়ে ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক খবর ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, এমনকি বেশ কয়েকটি বড় স্টোরিও হয়েছে যে, ২০১১ সালে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার জন্য মার্কিন সামরিক অভিযানের আগে ভ্যাক্সিন কর্মসূচির নাম করে সিআইএর লোকেরা তার বাড়ীতে এসেছিল। তাঁর মতে, কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে সেই সব উদ্বেগকে ফের কাজে লাগানো হচ্ছে।

“মহামারি শুরু হয়ে যাওয়ার পরও লোকেরা বলছিল, কোভিড বলে কিছু নেই, এটি একটি গোপন সিআইএ মিশন,” তিনি বলেছেন। “আমরা হিন্দিতে এবং বাংলাতেও বিকল্প ওষুধ এবং নিরাময়ের প্রচুর ভিডিও দেখেছি – যেমন রসুন বা গো-মূত্র আপনাকে কীভাবে নিরাময় করতে পারে – এবং এরপরে আমরা প্রচুর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেখেছি উর্দু ভাষাতেও, যা পাকিস্তান এবং ভারতে ব্যাপকভাবে বলা হয়। এর একটি কারণ ছিল ভ্যাক্সিন। কোভিডকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অস্ত্র হিসাবেও ব্যবহার করা হয়েছে। এবং কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই আমরা রোগ ‘নিরাময়ের’ প্রায় শতাধিক গল্প দেখেছি। কারা এটি করছে তদন্ত করতে গিয়ে, আমরা বিকল্প ওষুধের সাথে স্বার্থ জড়িত আছে, এমন গোষ্ঠী পেয়েছি। ”

হেলথ অ্যানালিটিক্স এশিয়ার এই প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা লেবুর রসের সুরক্ষা গুণাবলী সম্পর্কে একটি ভাইরাল দাবি দ্রুত খণ্ডন করেছেন। এশিয়ার ডাক্তাররা এই অংশীদারিত্বমূলক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত ভুয়া দাবি যাচাই করছেন। স্ক্রিনশট: হেলথ অ্যানালিটিক্স এশিয়ার সৌজন্যে।

ডেটালিডসের উদ্যোগ হেলথ অ্যানালিটিক্স এশিয়ার মাধ্যমে এই মহাদেশের ১৭ দেশের  চিকিৎসকরা অংশীদারীত্বের মাধ্যমে, পোস্ট এবং নিবন্ধে মহামারির চিকিৎসা সংক্রান্ত দাবির রিয়েল-টাইম যাচাই পরিচালনা করছেন।

গুজবের পিছনে যারা তাদের মুখোশ উন্মোচন

মিথ্যা তথ্যের বিস্তার ঠেকানোর উপায় নিয়ে কয়েকটি বই সম্পাদনা করেছেন সিলভারম্যান। যেমন: “ভেরিফিকেশন হ্যান্ডবুক: জরুরি পরিস্থিতিতে ডিজিটাল কনেটেন্ট যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট গাইড।” এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়।

গেল মে মাসে, তিনি ফেসবুকে কোভিড -১৯ প্রতিরোধী ফেস মাস্ক নিয়ে পরিকল্পিত মিথ্যা প্রচারণার দিকে মনোনিবেশ করেন। তারই সূত্র ধরে উন্মোচন করেন, একটি গোষ্ঠী কিভাবে মাস্কের বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে, এবং একই সাথে ফেসবুককেও ফাঁকি দিচ্ছে

মাত্র একটি প্রশ্নবোধক কন্টেন্টের সূত্র ধরে কিভাবে বাণিজ্যিক ডিজইনফর্মেশন নেটওয়ার্ক ও সেই কেলেংকারির হোতাদের খুঁজে বের করা যায় – রিপোর্টারদের জন্য তার বড় একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে সিলভারম্যানের এই প্রতিবেদন।

ক্রেইগ সিলভারম্যানের অনুসন্ধানে আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি বড় নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হয়েছে। অনুসন্ধানটি মাত্র একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে শুরু হয়েছিল। স্ক্রিনশট

ডিজইনফর্মেশন নিয়ে জিআইজেএন ওয়েবিনারে সিলভারম্যান ব্যাখ্যা করেন, একটি ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে তিনি কিভাবে অনুসন্ধান শুরু করেন। সেই বিজ্ঞাপনে মিথ্যা পরিসংখ্যান ছিল, আর ছিল ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের “সার্জন জেনারেল” এর একটি উদ্ধৃতি, যেই পদবীর আসলে অস্তিত্বই নেই।

অনলাইন স্টোরের ইউআরএল লিঙ্কে তেমন তথ্য ছিল না। ইউআরএলটিকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখে গুগলে সার্চ করেন সিলভারম্যান। সার্চ ফলাফলে সেই ইউআরএল সম্পর্কে যা কিছু আছে, তা তুলে ধরেছিল গুগল। এর মধ্যে ছিল তাদের পেপাল কমিউনিটি, প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের অভিযোগ এবং মাস্ক বিক্রয়কারী সংস্থার নাম, অর্থ্যাৎ জেস্টঅ্যাডস। “মাস্ক” এবং “জেস্টঅ্যাডস” লিখে আলাদা সার্চ দিয়ে – মিথ্যা তথ্য প্রদান, বাড়তি দাম নেয়া এবং কেনার পরও পণ্য হাতে না পাওয়ার আরো শতাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়।

আরো মন্তব্য দেখার জন্য তিনি “রিলেটেড পেইজেস” সেকশন এবং, ”রিভিউ” ও ”অ্যাবাউট”-সহ  মূল ফেসবুক পেইজের সাইডবারে থাকা সব তথ্য ঘাঁটাঘাটি শুরু করেন। ট্রান্সপারেন্সি বক্সে ক্লিক করে তিনি দেখতে পান, জেস্টঅ্যাডস নয়, বরং একটি মার্কিন সংস্থা সেই পেইজের মালিক হিসাবে তালিকাভুক্ত।

যেসব চিহ্ন দেখে সিলভারম্যান সতর্ক হন, তার একটি ছিল এই মালিকানার তথ্য। আরেকটি হলো, আমেরিকান বলে মনে হওয়া পেইজটি চালাতেন বা ম্যানেজ করতেন স্পেনের এক ব্যক্তি।

তাদের সম্পর্কে আরো খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেল, এই কোম্পানি সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে পুরোদস্তুর একটি গ্রুপই আছে ফেইসবুকে। সেখানে বিক্রয় রসিদের কপি এবং জেস্টঅ্যাডসের তৈরি অনলাইন স্টোরগুলোর লিংকও পাওয়া যাচ্ছিল।

এরপর একটি “স্নো-বলিং” (গবেষণায় স্যাম্পলিংয়ের পদ্ধতি) কৌশল ব্যবহারে মাধ্যমে সিলভারম্যান বের করেন, তাদের নেটওয়ার্কটি আসলে কত বড় এবং তাদের ফেসবুক পেইজ ও মাস্ক বিক্রির অনলাইন স্টোর আছে কতগুলো।

“আমরা দেখেছি, শপিফাইকে স্টোর হিসেবে ব্যবহার করে ফেসবুকে পণ্য বিক্রয় করার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে এধরনের স্টোর [সেট আপ] করা যায় এবং এভাবে তারা প্রচুর সাইট তৈরি করে যাচ্ছে; তার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে,” তিনি বলেন। ।

এই প্রতারক দল প্রতিটি স্টোরের জন্য আলাদা বিবরণ লেখারও চেষ্টা করতো না। সিলভারম্যান কিছু অনলাইন স্টোরের “অ্যাবাউট আস” পাতা থেকে বাক্য কপি করে, উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখে গুগলে সার্চ দেন। এভাবে তিনি আরো ৩০০টি স্টোর খুঁজে পান। এরপর নিজে প্রতিটি সাইটে যান – তাদের বিবরণ একটি স্প্রেডশিটে লিপিবদ্ধ করে দেখার চেষ্টা করেন, তারা সবাই একই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত কিনা।

“অনেক সময় অনুসন্ধানের গ্ল্যামার এখানেই থমকে যায়,” তিনি বলেন। “তবে ম্যানুয়াল কাজটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, নিজ চোখে দেখার কারণে স্টোরগুলোকে আমি অনুভব করতে পারছিলাম।”

তারপরে তিনি “সাইট: ফেসবুক.কম” সার্চ অপারেটর দিয়ে একটি একটি করে অন্তত ২০০টি কোম্পানি সম্পর্কে গুগলে অনুসন্ধান চালান। এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কত বড় নেটওয়ার্ক আছে, তা ম্যাপ করা সম্ভব হয়।

২০০টি কোম্পানির মধ্য থেকে একটির ফেইসবুক পাতার ট্রান্সপারেন্সি বক্স – যেখান থেকে সিলভারম্যান খুঁজে বের করেন কোম্পানিটির সত্যিকারের অবস্থান আসলে মালয়েশিয়ায়। স্ক্রিন শট।

এটি তাকে “কওমিংসুন.কম” নামে একটি অনলাইন স্টোরের ফেসবুক পেইজে নিয়ে যায়, যার ট্রান্সপারেন্সি ফাংশনে গিয়ে সন্ধান মেলে কেলেঙ্কারির হোতা বা মূল সদর দফতরের অবস্থান। জানা যায় প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়ায়।

“এভাবে প্রমাণিত হয়, সত্যিকারের পেইজ মালিকের নাম দেয়ার যে বাধ্যবাধকতা তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় বের করেছিল জেস্টঅ্যাডস। তাই তারা গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে গেছে এবং ফেসবুককেও নিজেদের মত করে ব্যবহার করতে পেরেছে,” তিনি বলেন।

এরপর প্রতিটি স্টোরের নিবন্ধন ইতিহাস খতিয়ে দেখতে ডোমেইনবিগডাটা.কম এবং হুইজ.নেট-এ অনুসন্ধান চালান সিলভারম্যান।

সিলভারম্যান বলেছেন, “ঐ সময় নাগাদ মাস্কের যাবতীয় বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছিল ফেসবুক। তাই আমরা কেবল মিথ্যা তথ্য দিয়ে লোক-ঠকানো একটি প্রতিষ্ঠানকেই উন্মোচন করিনি, বরং এটিও প্রকাশ করেছি যে ফেসবুক তার নিজস্ব নীতি প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।”

বাজফিড ফেসবুককে জেস্টঅ্যাডের সাথে সংযুক্ত প্রায় ১০০টি পেইজের একটি তালিকা পাঠিয়েছে। ফেসবুক এই প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্লাটর্ম থেকে নিষিদ্ধ করেছে এবং চিঠি দিয়ে একাউন্ট বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছে।

মিথ্যা প্রচারের নেপথ্য-ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার ছয়টি কৌশল

  • সন্দেহজনক সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের আপলোড করা প্রথম প্রোফাইল ছবি বা ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি সন্ধান করুন। তারপর দেখুন সেই ছবিতে কারা “লাইক” দিয়েছে এবং কমেন্ট করেছে। প্রায়ই দেখা যায়, পেইজের মালিকের কাছের লোকেরা – বা তিনি নিজে – প্রথম দিককার ছবিতে “লাইক” বা কমেন্ট করেন।
  • ফেসবুকের পুরানো এবং নতুন ডিজাইনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে, তাই অদল-বদল করে নতুন ও পুরনো দুই ফরম্যাটেই পেইজটিকে দেখুন এবং বের করার চেষ্টা করুন কোথাও আরো দরকারি ডেটা বা লিঙ্ক রয়েছে কিনা। ফেসবুক গ্রুপগুলোতে রসিদের ছবি দিয়ে গ্রাহকরা পণ্য বা সেবা সম্পর্কে কোনো অভিযোগ করছেন কিনা দেখুন।
  • সরাসরি ট্রলদের সাথে যোগাযোগের সময় – এবং তাদের অভিপ্রায় সম্পর্কে জানতে হলে – নিজেকে রিপোর্টার হিসাবে পরিচয় দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাংবাদিক দেখতে পেয়েছেন, ট্রলেরা সাধারণত সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয় এবং তারা ভুয়া খবরের চেয়ে নিজেদের পেইজের জনপ্রিয়তা নিয়ে কথা বলতে বেশি পছন্দ করে। “আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিথ্যা বলবেন না, তবে [ট্রলগুলো] তাদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে কথা বলতে পছন্দ করেন,” বলেন ক্যাপ্রন।
  • সন্দেহভাজন স্ক্যাম (প্রতারণাকারী)ওয়েবসাইটের অ্যাবাউট আসবিভাগে লেখা বিবরণ উদ্বৃতি চিহ্ন দিয়ে সার্চ করুন, এবং দেখুন তাদের নেটওয়ার্কে আরো স্টোর আছে কিনা। ইউআরএল দিয়ে বা ডোমেইনের মধ্যে – দুই ক্ষেত্রেই অনুসন্ধানের সময় উদ্ধৃতি চিহ্ন সার্চ অপারেটর ব্যবহার করুন – “site:youtube.com.”
  • কন্টেন্টে কোনো মিথ্যা তথ্য পেলে তাকে রেড ফ্ল্যাগ দিয়ে চিহ্নিত করুন; এমনকি তা আবেগী বা কঠিন ভাষা এবং করুণ আবেদন হলেও। যেমন: “টুইটার সরিয়ে দেওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পড়ুন।” নিউজফিডে একই ধরনের কাঠামোতে লেখা পোস্ট আরেকটি বড় সূচক। “.news” ডোমেইনের সাইটগুলোতে মনোযোগ দিন, কারণ ডিজইনফর্মেশন নেটওয়ার্কগুলো কখনো কখনো এভাবেই বিভিন্ন মতাদর্শের ইউজারদের কাছে টানার চেষ্টা করে।
  • অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভুয়া খবর বা তাদের ব্র্যান্ডকে আরো বড় করে তুলবেন না। ফার্স্ট ড্রাফ্টের এইমি রাইনহার্ট যেমন পরামর্শ দিয়েছেন, কিউআননের মতো ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচারণা নিয়ে রিপোর্ট করতে গেলে, “কিউআনন” শব্দটিকে শিরোনাম এবং প্রথম তিনটি বাক্য থেকে বাদ দিন। এতে করে ট্রেন্ডিং শব্দ হিসাবে তাদের নাম-ডাক আরো প্রশস্ত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। সিলভারম্যানের পরামর্শ – এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকৃত সত্য দিয়ে শুরু হওয়া উচিত এবং এরপরে মিথ্যার বিষয়টি সতর্কতার সাথে বর্ণনা করা উচিত। পাঠকদের স্মৃতিতে সত্যকে আরো শক্তিশালী করার জন্য যাচাই করা তথ্যগুলো শেষের দিকে আবার বলা উচিত। তিনি বলেন, “ট্রলেরা কুখ্যাতি-ই চায়, তাদের সেই সুযোগ না দিয়ে জবাবদিহি করুন।”

মিথ্যাচারের সাম্রাজ্যে নাড়া দেবেন কিভাবে

কোভিড -১৯ মিথ্যাচারে যারা বিশ্বের সবচেয়ে বড়, তাদের নিয়ে গত জুন মাসে বিশদ একটি অনুসন্ধান প্রকাশ করেছে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ (আইএসডি)। উগ্রবাদবিরোধী এই নাগরিক সংগঠন সাংবাদিকদের সাথেও কাজ করে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উগ্রডানপন্থী প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল নিউজ নেটওয়ার্ক এবং তার প্রতিষ্ঠাতা মাইক এডামসের সাথে সংশ্লিষ্ট, ৪৯৬টি ডোমেইনের অস্তিত্ব বেরিয়ে আসে আইএসডির অনুসন্ধানে। যদিও একই গোষ্ঠীর মূল ডোমেইনটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়, ২০১৯ সালের জুনে।

প্রচারণা নেটওয়ার্কটি বিল গেটস এবং ফাইভ-জি টাওয়ারের মতো অসংখ্য মিথ্যা ষড়যন্ত্রের গল্প বানিয়েছিল। এই মহামারি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ফসল বলে মিথ্যা দাবি করা হয়, “প্ল্যানডেমিক” শিরোনামের যে ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক ভিডিওতে, তারও “সুপার স্প্রেডার” ছিল নেটওয়ার্কটি।

ন্যাচারাল নিউজের কোভিড-১৯ ডিজইনফর্মেশন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ডোমেইন মালিক এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের এই স্পাইডার ওয়েব মানচিত্রটি সংকলন করেছেন আইএসডি’র তদন্তকারীরা। চিত্র: আইএসডির সৌজন্যে

আইএসডি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়: “২০১২সালে এবং ফের ২০২০ সালে ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ন্যাচারাল নিউজ এবং সংশ্লিষ্ট ডোমেইনগুলো কোভিড-১৯ ও জর্জ ফ্লয়েড বিক্ষোভসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা-তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে।” ২০২০ সালে নিষেধাজ্ঞার তিন মাসেরও কম সময়ে ন্যাচারাল নিউজ ডোমেইন থেকে ছড়ানো পোস্টে গবেষকরা ৫৬২,১৯৩ টি পাঠক-প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন।

আইএসডি-তে ডিজিটাল রিসার্চ ইউনিটের প্রধান ক্লো কলিভার বলেন, “অপরাধীদের সাথে পোস্টের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করাটাই ডিজইনফর্মেশন নিয়ে রিপোর্টে অনুপস্থিত থেকে যায়। কারণ এটি বেশ কঠিন কাজ।” “আপাত দৃষ্টিতে সাদামাটা মনে হওয়া এই চরিত্রগুলোকে উন্মোচন করতে কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা এবং সাহস থাকতে হয়। বিষয়টি যে নিয়ন্ত্রণহীন নয় – তা জনগণের কাছে প্রকাশ করা জরুরী। এর পেছনে ক্ষমতার যে সমীকরণ, তা অনুসন্ধান করা সাংবাদিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

কলিভার বলছিলেন, জটিল নেটওয়ার্ক নিয়ে বড় কয়েকটি অনুসন্ধানে ক্রাউডট্যাঙ্গেল, গেফি এবং বেলিংক্যাটের ওসিন্ট টুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আইএসডি গবেষকরাও গুগল আর্থ প্রো ব্যবহার করে দেখেছেন, ন্যাচারাল নিউজ সংশ্লিষ্ট অনলাইন ঠিকানাগুলো ইট-পাথরের সত্যিকারের কোনো অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল কিনা।

এই তদন্ত থেকে সাংবাদিকদের জন্য যে মূল পরামর্শ উঠে এসেছে তা হলো, কয়েকটি বড় মতাদর্শভিত্তিক ডিজইনফর্মেশন নেটওয়ার্ক পাঠকদের আদর্শিকভাবে বিভক্ত করার জন্য গভীর যত্ন নিয়ে কাজ করে এবং তাদেরকে বিভিন্ন সাইটে এমনভাবে ভাগ করে দেয়, যেন অন্য কন্টেন্ট তাদের বিরক্ত করতে না পারে।

যেমন, তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন, স্বাস্থ্য নিয়ে আগ্রহী কিন্তু অস্ত্র-অধিকার-বিরোধী যারা, তাদের এমন “.news” সাইটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক ভুয়া খবর আছে, কিন্তু অস্ত্র রাখার অধিকার সম্পর্কে কিছু নেই।

যেদিকে নজর রাখতে হবে

কলিভার বলেছেন, সামনের মাসগুলোতে বার্তাকক্ষের জন্য অনুসন্ধানের বিষয় হওয়া উচিত “ডার্ক পিআর” ফার্ম, অর্থ্যাৎ কৌশলগত মিথ্যাচারের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার জন্য যেসব জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করা হয়।

“আমি মনে করি, ডার্ক পিআরের বাজার নিয়ে এখনো ব্যাপক গবেষণা হয়নি, এবং সম্ভবত কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ডিজইনফর্মেশনের মাধ্যমে ক্ষতিসাধনের ক্ষেত্রে তাদের বড় ভূমিকা রয়েছে,” তিনি বলেন।

বাজফিডের ক্রেইগ সিলভারম্যান বলেছেন, “বিশ্বজুড়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারে চীন যা করছে, তাকে ঘিরে আরো অনেক কিছু পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়।” তিনি বলেন, “বিশ্বে এমন অনেকে আছেন, যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন, যা আমরা এখনো উদঘাটন করতে পারিনি। আমরা এখন পর্যন্ত কিউআনন ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক, ভ্যাকসিন বিরোধী গোষ্ঠী এবং সরকারবিরোধী চরমপন্থীদের মহামারিকে কেন্দ্র করে জোট বাঁধতে দেখেছি। তারা একজোট হয়ে মাস্ক পরার বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং মহামারিকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে দেখানোর ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক ন্যারেটিভ সবার মনে গেঁথে দিতে চাইছে।”

ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদক আলেকজান্দ্রে ক্যাপ্রন বলেছেন, সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, গুজব ছড়ানো ২০ বছর বয়সী পেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কোনো ধারণাই ছিলনা তার বানানো ৩৭টি কোভিড -১৯ “সংবাদ” মানুষের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তার মিথ্যা খবরের একটিতে এমন ভুয়া দাবিও করা হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড -১৯ নিরাময়ের জন্য একটি মাদাগাস্কান ভেষজ ওষুধকে সমর্থন করেছে। আর আরেকটিতে বিখ্যাত ফরাসি মহামারি বিশেষজ্ঞ দিদিয়ের রাউলের নাম দিয়ে ভ্যক্সিন-বিরোধী মিথ্যা উক্তি প্রচার করা হয়েছে।

সেই শিক্ষার্থী তার অদ্ভূত এই খেলা এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন। তিনি ক্যাপ্রনকে বলেন, “আমাদের কৌশল হলো এই পোস্টগুলো কয়েকটি বড় বড় [প্রধান] গ্রুপে ভাগ করে ছড়িয়ে দেয়া। আমাদের লক্ষ্য সংবাদকে এমনভাবে শেয়ার করা, যাতে মনে হয় আসলেই এমনটা ঘটেছে।”

ক্যাপ্রন বলেন “তাঁর মিথ্যা প্রচারণা এত জনপ্রিয় ছিল কারণ এটি প্রবাসী কঙ্গোলিজদের মনে পাশ্চাত্য নিয়ে যে ক্ষোভ আছে তাকে উস্কে দিতে পেরেছে এবং গল্পগুলো এমন ছিল যা মানুষ বিশ্বাস করতে চায়।” তিনি বলেন, “এই ছেলেরা অল্প বয়সী, কিন্তু খুব স্মার্ট; তারা জানে সামাজিক মাধ্যমে মানুষ কী পড়তে চায়; আর এটুকুই যথেষ্ট।”


রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল থেকে ফিলিপাইন : জিআইজেএনের অনুসন্ধানী বইয়ের তাকে

ঐতিহাসিক ভুলভ্রান্তি, করপোরেট লুকোছাপা আর অসদাদচরণ – যা লুকিয়ে রাখাই ক্ষমতাবানদের কাজ তার উদ্ঘাটন নিয়ে লেখা বই এবার জায়গা পেয়েছে জিআইজেএনের বইয়ের তাকে।

হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বার্তাকক্ষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রিপোর্টার্স শিল্ড

অনেকটা শূন্য থেকেই গত বছর যাত্রা শুরু করা রিপোর্টার্স শিল্ড বিশ্বেজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর পাশে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অলাভজনক সংস্থাটি স্ট্র্যাটেজিক ল-স্যুটস অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পার্টিসিপেশন—সংক্ষেপে স্ল্যাপের (জনস্বার্থ বিরোধী কৌশলগত মামলা) বিপরীতে আর্থিক ও প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে থাকে। স্ল্যাপ মূলত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে নিরুৎসাহিত আর অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় ।

অনুসন্ধান পদ্ধতি

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছেন? এই তথ্য ও পরামর্শ আপনার জন্য

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে নির্মিত “অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন” কিংবা হালের “দ্য পোস্ট”, “স্পটলাইট” এবং “সেইড” এর মতো চলচ্চিত্র অনেককেই সাংবাদিকতায় উদ্বুদ্ধ করে। বাস্তবে কিন্তু সাংবাদিকতা আরও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। যদি আপনি অনুসন্ধানের কলাকৌশলটা শিখে নিতে পারেন, তাহলে সফল আপনি হবেনই।

পরামর্শ ও টুল

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে বিস্ফোরক শনাক্ত করবেন কীভাবে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ছবি পোস্ট করার হার বেড়েছে। উন্মুক্ত সূত্র থেকে বিস্ফোরক অস্ত্র শনাক্ত করায় এই ছবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করে। কিন্তু এই ছবিগুলো থেকে অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কখনও কখনও অপতথ্যও ছড়ায়।