Image: Shutterstock
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত অপরাধ অনুসন্ধান
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
সম্পাদকের নোট: আগামী নভেম্বরে, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধ অনুসন্ধানের একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড। সেখান থেকে কিছু কিছু অংশ আগামী কয়েক সপ্তাহজুড়ে প্রকাশিত হবে জিআইজেএনের ওয়েবসাইটে। এই পর্বে নজর দেওয়া হয়েছে পরিবেশগত অপরাধের দিকে। লিখেছেন জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের সিনিয়র পরামর্শক, টবি ম্যাকিনটশ।
সরকারি কর্মকর্তা, অপরাধী চক্র ও ব্যবসায়িক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর নেটওয়ার্ক যেসব অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তা নানাভাবে পরিবেশেরও ক্ষতি করে। তারা বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী ও সামুদ্রিক মাছ, গাছ, খনিজ, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য এবং বিষাক্ত রাসায়নিকের অবৈধ পাচারের সঙ্গে জড়িত। এই ধরনের পরিবেশগত অপরাধের সংযোগ থাকে অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের (যেমন মাদক চোরাচালান ও অর্থ পাচার) সঙ্গেও।
পরিবেশগত সংঘবদ্ধ অপরাধ
বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কিভাবে “এক হন”, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি গল্প বলেছিলেন আর্থ লীগ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী আন্দ্রেয়া ক্রস্তা। দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশে এক এশীয় বন্যপ্রাণী পাচারকারীর সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি। সেই ব্যক্তি হাঙরের পাখনা (ফিন) এবং আরও অনেক কিছু বিক্রি করতেন।
তার সঙ্গে আলাপের সময়ই সেখানে আরেকটি অপরাধী চক্রের সদস্য চলে আসেন এবং “হঠাৎ করে আমাদের আলাপ গড়ায় অর্থ পাচারে।” এরপর তৃতীয় আরেক ব্যক্তি সেখানে যোগ দেন, যিনি একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগে কাজ করেন এবং “মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু” পাচারেই সহায়তা করেন।
“শীর্ষ পর্যায়ের পরিবেশগত অপরাধের চেহারা এমনই,” বলেন ক্রস্তা।
২০১৭ সালে, ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম বলেছে, “পরিবেশগত অপরাধ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অপরাধী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র, যেটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ২৫৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য। এটি প্রতি বছর ৫-৭ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।”
অর্থের মাধ্যমে অবশ্য পরিবেশগত অপরাধের মাত্র একটি দিকের হিসেব তুলে আনা যায়। এছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবের কথা তুলে ধরছেন বিজ্ঞানীরা। যেমন: বন ধ্বংস, অত্যাধিক মাছ ধরা, জীববৈচিত্র্যের দ্রুত বিনাশ, প্রাণীবাহিত রোগের সঙ্গে সম্পর্ক এবং জলবায়ু সংকটের প্রভাব।
পরিবেশগত অপরাধের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। অবৈধভাবে গাছ কাটার মাধ্যমে বনের ধ্বংস সাধন- এদের মধ্যে সবচে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত নিষিদ্ধ দ্রব্য বেচাকেনা হচ্ছে কালোবাজারে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তৈরি হচ্ছে নেতিবাচক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, যা পরিবেশের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
সূত্রের সন্ধান
দুর্নীতি, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও পরিবেশগত অপরাধের মধ্যে বিস্তৃত পরিসরের আন্তসম্পর্ক থাকায়, এই ক্ষেত্রের সোর্স খুঁজে পেতেও নজর দিতে হবে বিস্তৃত পরিসরে।
অপরাধীদের মধ্যে অনেক ধরনের মানুষ থাকতে পারে। মাঠ পর্যায়ের কর্মী থেকে শুরু করে শেষপর্যায়ের ভোক্তা পর্যন্ত। এর মধ্যে থাকে দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তাসহ গোটা সরবরাহ চেইনের ব্যক্তিরা। এই কাজে সংঘবদ্ধ অপরাধের যোগসূত্র সাধারণভাবে দেখতে পাওয়া যায়। তবে কিছু গবেষক অস্পষ্ট অনেক জায়গায়ও দেখেন। যেমন, অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচারকে একজন অভিহিত করেছেন “অসংগঠিত অপরাধ” হিসেবে।
কোন জায়গাগুলোতে অপরাধ করা হচ্ছে এবং কোথায় অবৈধ পণ্যগুলো শেষপর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে- তা নিয়ে গবেষণা করার দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন অনেক সাংবাদিক ও বিশ্লেষক। কারা এসব পরিবেশগত অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, কারা এতে অর্থ লগ্নি করছেন, এবং লাভবান হচ্ছেন- তা উন্মোচনের জন্য সরবরাহ চেইনের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন অন্যরা। অনুসন্ধান শুরুর এমন বেশ কিছু জায়গা আছে।
কিছু আদর্শ সূত্র হতে পারে:
- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন
- স্থানীয় নাগরিক
- বিভিন্ন ধরনের সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষভাবে যারা অর্থ-বাণিজ্য ও পরিবহন খাতে কাজ করেন
- সংরক্ষণ কর্মকর্তা
- আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা
- শিকারী, বনকর্মী ও জেলে
- সরবরাহ চেইনে থাকা লোকজন, যারা শুধু বিক্রি নয়, পরিবহনের সঙ্গেও জড়িত
- যারা পরিবেশগত অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বা কারাগারে আছেন
- বৈজ্ঞানিক গবেষণা
- ভোক্তা
- গ্রেপ্তার ও আদালতের মামলা সংক্রান্ত নতুন প্রতিবেদন
নানা প্রাসঙ্গিক তথ্যের জন্য অনলাইনে সার্চ করার প্রয়োজনীয়তাও দিন দিন বাড়ছে। বন্যপ্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিন, কারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা নানান ছদ্মবেশে এই লেনদেনগুলো করেন।
আইনি ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা, এবং কিভাবে এগুলোর ফাঁকফোঁকর কাজে লাগানো হয়- সেসব বিষয়ে জানাবোঝাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এবং কোনো নির্দিষ্ট পণ্য কেনাবেচার ব্যবসায়িক দিকটি সম্পর্কেও সময় নিয়ে জানার চেষ্টা করুন। যেমন, ২০১৮ সালের প্রতিবেদন, রেজিং আফ্রিকা: কমব্যাটিং ক্রিমিনাল কনসোর্টিয়া ইন দ্য লগিং সেক্টর থেকে কাঠ-ব্যবসার পাঁচটি ধাপ সম্পর্কে জানা যায়। যেমন: গাছ কাটা, কারখানায় প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, বিপণন ও মুনাফার অর্থ পাচার। পরিবেশগত অপরাধের অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত কৌশলের দিকেও নজর দিয়েছে প্রতিবেদনটি। যেমন, ধরা পড়ে যাওয়া এড়ানোর জন্য প্রায়ই অবৈধ পণ্যের সঙ্গে নানান বৈধ পণ্যও মিশিয়ে দেওয়া হয়।
কেস স্টাডি
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) এই অনুসন্ধানে খতিয়ে দেখা হয়েছে, অবৈধভাবে নামিবিয়ার সংরক্ষিত হার্ডউড প্রজাতির (যেমন আফ্রিকান রোজউড) গাছ কাটার বিষয়টি। কাজটি করছে দুটি চীনা-ফ্রন্টেড কোম্পানি। এই অনুসন্ধানে প্রত্যক্ষভাবে সব কিছু দেখা ও সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছেন সাংবাদিক জন গ্রোবলার। এছাড়াও তিনি এই কাজের জন্য একজন কাঠ ক্রেতা সেজেছিলেন। গ্রোবলার একটি অভ্যন্তরীণ সরকারি অডিট রিপোর্ট এবং রপ্তানির আনুষ্ঠানিক ডেটাও হাতে পেয়েছিলেন। তাঁর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন এক কোম্পানির কথা, যার মালিক একজন চীনা অভিবাসী এবং যার অপরাধের রেকর্ড বেশ পুরনো।
আমেরিকান বাঘের অঙ্গ খুঁজতে গিয়ে বলিভিয়ার জাগুয়ার নাশ
ভেনেসা রোমোর করা মোঙ্গাবে-র প্রতিবেদনটিতে উন্মোচন করা হয়েছে: কিভাবে চীনা নিয়ন্ত্রিত একটি চক্র বলিভিয়া থেকে জাগুয়ারের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চোরাচালান করছে। অনুসন্ধানে বলিভিয়ার এমন তিনটি অপরাধী চক্রকে চিহ্নিত করা হয়, যাদের প্রতিটি গড়ে উঠেছে চীনা জাতীয়তার মানুষদের নিয়ে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে আর্থ লীগ ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন)-এর ডাচ ন্যাশনাল কমিটির গোপনে সংগ্রহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
বুলগেরিয়াতে পোড়ানো আরডিএফ-এ থাকতে পারে দূষিত বর্জ্য
সাংবাদিক কেসেনিয়া ভাখরুশেভার এই অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে এসেছে: নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে পৌরসভার বর্জ্য পোড়ানো কিভাবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছে। “ইতালির মতো দেশগুলো থেকে আমদানি করে আনা বর্জ্য জনসাধারণের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিয়ে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ ইতালিয়ান মাফিয়া-বিরোধী অ্যাক্টিভিস্টরা দাবী করেছেন যে, তাদের দেশে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টির সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। এবং প্রায়ই ঘরোয়া বর্জ্যের সঙ্গে বিষাক্ত বর্জ্য মিশিয়ে দেওয়া হয়,” লিখেছেন ভাখরুশেভা। আদি প্রতিবেদনটি ২০১৯ সালের জুনে প্রকাশিত হয়েছিল বেলোনা ডট আরইউ-তে। রাশিয়ান ভাষা থেকে এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল ব্লুলিংক ডট ইনফো-র জন্য।
রেডিও ফ্রি ইউরোপের অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে: রাশিয়ায় তেল চুরি ও চোরাই তেল কেনাবেচা রীতিমত শিল্পের আকার নিয়েছে। “পাইপলাইনে অবৈধ কল ও হোস বসিয়ে বিপুল পরিমাণ তেল চুরি করে ট্যাংকার ট্রাক বা রিভার বার্জে সরিয়ে নেয় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। সের্গেই খাজোভ-কাসিয়ার অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, “অবৈধ মুনাফার ভাগ পেতে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এসব কাজে তাদের সহায়তা দেয়।”
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক এনজিও, এনভায়রনমেন্ট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির এই অনুসন্ধানে এমন এক অবৈধ নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা ইউরোপে হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (এইচএফসি) ঢোকানোর ক্ষেত্রে রোমানিয়াকে প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করে। এই গ্রীনহাউজ গ্যাসটি প্রধানত ব্যবহার করা হয় শীতলীকরণ ও রেফ্রিজারেশনের জন্য।
সামগ্রিক চিত্র
প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য, দেখতে পারেন আন্তর্জাতিক সংগঠনের এই প্রতিবেদনগুলো:
ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)-এর বিশ্ব বন্যপ্রাণী পাচার সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদন এবং ইউএনওডিসি-র ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে পাবেন একটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট।
ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর অর্থ পাচার ও অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য শীর্ষক প্রতিবেদনে পাওয়া যায় অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য। আরও দেখতে পারেন: ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের বাণিজ্য-ভিত্তিক অর্থ পাচার ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন।
বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার তথ্য সংকলন করা হয়েছে কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি-র গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি আউটলুকের পঞ্চম সংস্করণে।
ইউনাইটেড নেশনস ইন্টাররিজিওনাল ক্রাইম অ্যান্ড জাস্টিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইউএনআইসিআরআই)-এর প্রতিবেদন, অবৈধ কীটনাশক, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সরবরাহ চেইনে নৈতিকতা।
এই ক্ষেত্র নিয়ে দারুন কিছু অনুসন্ধান করেছে বিভিন্ন এনজিও। যেমন:
ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন: ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম — দ্য সফট আনডারবেলি অব অর্গানাইজড ক্রাইম।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশন: হোয়াই ইজ মানি লন্ডারিং আ ক্রিটিক্যাল ইস্যু ইন ন্যাচারাল রিসোর্স করাপশন?
ওশান প্যানেল’স রিপোর্ট: অর্গানাইজড ক্রাইম ইন দ্য ফিশারিজ সেক্টর।
একাডেমিক জগত থেকে এসেছে ২০২০ সালের একটি গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন: দ্য কনভারজেন্স অব এনভায়রনমেন্টাল ক্রাইম উইথ আদার সিরিয়াস ক্রাইমস। “বিশ্বের জন্য ধ্বংসাত্মক সব পরিণতি সঙ্গে নিয়ে পরিবেশগত অপরাধের পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে। এবং এটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে: প্রাকৃতিক সম্পদ সংক্রান্ত অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে অনুসন্ধান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ,” লিখেছেন অপরাধবিজ্ঞানী ডান পি. ভন উম ও রিক সি. সি. নিমান।
আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং এনজিওদের করা প্রতিবেদনের আরও দীর্ঘ একটি তালিকা পাবেন এখানে।
অনুসন্ধানের জন্য পরামর্শ ও টুল
ছদ্মবেশ
ছদ্মবেশে কর্মকাণ্ড পরিচালনা সাধারণত প্রযোজ্য হয় আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং কিছু এনজিও গবেষকদের জন্য। কিন্তু এটি খুবই বিপজ্জনক। নিজের ভুয়া পরিচয় দিয়ে অপরাধের গোপন দুনিয়ায় ঢোকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সাংবাদিকদের অবশ্যই খুব ভালোভাবে ভেবে নেওয়া দরকার। এই ধরনের রিপোর্টিং কৌশলের ঝুঁকি ও সুবিধা সম্পর্কে উপকারী দিকনির্দেশনা পেতে, দেখুন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টস-এর চেকলিস্ট।
“ছদ্মবেশী অনুসন্ধানের কিছু ভূমিকা আছে। কিন্তু আমার মনে হয় এটি একেবারে শেষ উপায় হিসেবে নেওয়া উচিৎ,” সতর্ক করে বলেছেন “কিলিং ফর প্রফিট: এক্সপোজিং দ্য ইল্লিগাল রাইনো হর্ন ট্রেড” বইয়ের লেখক, জুলিয়ান রাডেমায়ার। দক্ষিণ সুদানে ইন্টারনিউজের প্রশিক্ষক ও বিজ্ঞান বিষয়ক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, এস্থার নাকাজি আরেকটু যোগ করে বলেছেন: “পরিবেশগত অপরাধ নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আপনি যে মানুষদের নিয়ে কাজ করবেন, তারা এরই মধ্যে অপরাধী হয়ে উঠেছে। তারা সহিংসও হতে পারে।” শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ আরও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন নাকাজি ও অন্যান্যরা। কারো সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় সম্পাদক ও সহকর্মীকে আপনার অবস্থান জানিয়ে রাখুন। জোড়া বেঁধে কাজ করুন এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠুন। নাকাজি বলেছেন, সফল হওয়ার জন্য “আপনাকে নিজের ছদ্মবেশের ওপর বিশ্বাস করতে হবে,” “এটিকে ব্যবসার মতো দেখাতে হবে,” এবং “এমনভাবে কথা বলুন যেন মনে হয় আপনার কাছে অনেক নগদ অর্থ আছে।”
অবৈধ গাছ কাটা ও খনিজ উত্তোলনের মতো কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের সময় তুলনামূলক কম বিপজ্জনক বিকল্প হতে পারে ড্রোন ও স্যাটেলাইটের ব্যবহার।
“একবার এই তথ্যটি সংগ্রহ করে ফেলার পর আপনাকে সেই পথ ধরে দেখতে হবে যে সেটি কোথায় যায়,” ফোর্বসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ওসিসিআরপি-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা পল রাদু, “এই মানুষগুলোকে অবশ্যই অবৈধভাবে কাটা গাছগুলো কোনো না কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে হয়। আপনাকে জানতে হবে তাদের ব্যবহার করা যানবাহনগুলোর মালিক কে বা সেগুলো কোথায় যাচ্ছে। এজন্য আপনি ওয়াইল্ডলাইফ ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন, যেগুলো লাগিয়ে দেওয়া যায় গাছের সঙ্গে। কিছু ক্যামেরা আছে ইনফ্রারেড, আবার কিছু ক্যামেরায় আছে নয়েজ অ্যাক্টিভেশন, বা এয়ারপ্লেন সেন্সর, যা দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন সেখানে কখন বিমান আসছে বা ছেড়ে যাচ্ছে। এই সব তথ্য, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে আপনি তখন মেলাতে পারবেন ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে।”
আরও দেখুন, স্যাটেলাইট ছবি ও ড্রোন ব্যবহার নিয়ে জিআইজেএন-এর গাইড।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার
পাচার/চোরাচালানে সহায়তার জন্য এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এখানে সার্চ করে আপনি পেতে পারেন স্টোরি আইডিয়া, সন্দেহজনক ব্যক্তি, সোর্স ও ছবির খোঁজ।
সার্চের জন্য সঠিক কিওয়ার্ডের ধারণা গড়ে তুলতে কিছু বিশেষ জ্ঞান প্রয়োজন। এখানে প্রায়ই ব্যবহৃত হয় সাংকেতিক ভাষা। এগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের পরামর্শের জন্য জিআইজেএন কথা বলেছে কয়েকজন দক্ষ অনুসন্ধানকারীর সঙ্গে। নিচের তাঁদের পরামর্শ:
- যে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে যাচ্ছেন- সে সংক্রান্ত কিওয়ার্ডগুলো খুঁজে বের করুন।
- লেনদেনের ধরন সংক্রান্ত সার্চ টার্ম ব্যবহার করুন। যেমন: বিক্রি, অর্ডার, কেনা, ইত্যাদি
- কোন প্ল্যাটফর্মে সার্চ করবেন, তা ভালোমতো ভেবে নিন।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজাখুঁজির সময়নিজের পরিচয় সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে যত্নবান হোন।
আপনি কী ধরনের তথ্য পেতে পারেন, সেম সম্পর্কে ধারণা পেতে, হাউন্ডস অব অ্যাক্টিয়ন-এর টুইটার ফিড দেখুন। গ্রুপটি “সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্যপ্রাণী কেনাবেচার উদ্বেগজনক পরিস্থিতি উন্মোচন করার কাজে নিবেদিত।”
কিছু প্রতিবেদনের উদাহরণ:
কিভাবে ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটিরা দুবাইয়ের গোপন পশু ব্যবসার প্রচার করছে, ফোয়েকে পোস্টমা, বেলিংক্যাট;
আকাশ থেকে স্ক্রিনে: ইন্টারনেট যেভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে পরিযায়ী সারস পাখিদের, রাফিউল্লাহ মান্দোখাইল, পাকিস্তানের ডেইলি পার্লামেন্ট টাইমস;
ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে অ্যামাজন রেইনফরেস্টের জমি, জোয়াও ফেলেট) ও শার্লট পামেন্ট, বিবিসি ব্রাজিল।
দরকারি ডেটাবেজ
নির্দিষ্ট কিছু আইকনিক প্রাণীর জন্য বিশেষ ডেটাবেজ আছে। এগুলোর সংখ্যা এতো বেশি যে সবগুলোর তালিকা তৈরি করা কঠিন। তবে এখানে আপনি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ডেটাবেজের সন্ধান পেয়ে যাবেন। বাণিজ্য নথি এবং জব্দ ও আটক সংক্রান্ত নথি সেকশনের লিংকগুলোও খেয়াল করুন।
- বিলুপ্ত ও প্রায়-বিলুপ্ত প্রজাতির বৈধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর সবচে বড় ডেটাসেট পাবেন দ্য সিটিজ ট্রেড ডেটাবেজ-এ।
- বাণিজ্যিক মাছ ধরা জাহাজের চলাফেরা দেখিয়ে ম্যাপ ও ডেটা আছে গ্লোবাল ফিশিং ওয়াচ-এ।
- আইইউইউ ফিশিং ইনডেক্স-এ আইইউইউ ফিশিং নিয়ে বিভিন্ন দেশের ঝুঁকি, ব্যাপকতা ও মোকাবিলার উদ্যোগ মূল্যায়ন করা হয়।
- ইকোক্রাইম ডেটা মনোযোগ দেয় অ্যামাজন অববাহিকার দিকে।
বাণিজ্য নথি
চোরাচালানের সঙ্গে প্রায়ই ভুয়া নথিপত্র তৈরি, মালামাল লুকিয়ে রাখা, এবং কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মতো বিষয় জড়িয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক এনজিও, ট্রাফিক-এর এই বিবরণে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে বন্যপ্রাণী কেনাবেচার দিকে, এবং আলোচনা করা হয়েছে আইডব্লিউটি দুর্নীতির সাধারণ সব কৌশল।
ইউএন কমট্রেড ডেটাবেজ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানের আনুষ্ঠানিক তথ্যের ভাণ্ডার। ফলে এখানে বৈধ প্রাণী ব্যবসার দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি ও রপ্তানি তথ্যের মধ্যে তুলনা করে, এখানে কিছু মজার পার্থক্য সামনে এসেছে এবং অন্যান্য দিকে অনুসন্ধানের নির্দেশনা পাওয়া গেছে।
পণ্য গ্রহণকারী ও বহনকারীর মধ্যে হওয়া চুক্তির আনুষ্ঠানিক প্রমাণ, “বিলস অব লেডিং” নামে পরিচিত নথিটি হতে পারে তথ্যের স্বর্ণখনি। চালানটি কে পাঠাচ্ছে, কার কাছে এবং কোথায় এটি যাচ্ছে, কে সাক্ষর করেছে – এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই নথিতে পাবেন। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক দেশেই এই নথি উন্মুক্ত নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পানামা ও পেরুসহ লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে এগুলো পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য সংক্রান্ত নথি দেখলে হয়তো আপনি কোম্পানি এবং জড়িত ব্যক্তিদের নাম পেয়ে যেতে পারেন। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল নিয়ে বাণিজ্যিক কিছু সেবাও উপকার দেয় বলে মনে করেন কিছু সাংবাদিক। তবে এগুলো ব্যয়বহুল। এসব সেবার মধ্যে আছে পানজিভা, ইমপোর্ট জিনিয়াস, ও ইকুয়াসিস।
শিপিং কন্টেইনার ও বিলস অব লেডিংয়ের মতো নথিপত্র নিয়ে গবেষণার বিষয়ে এই স্লাইড প্রেজেন্টেশনে আলোচনা করেছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, জান্নিনা সেনিনি। আরও দেখুন: শিপমেন্ট নজরে রাখার জন্য গড়ে তোলা (কাস্টম) ভাষা শেখা নিয়ে তাঁর এই স্লাইড।
আরও গভীরে যাওয়ার জন্য অন্যান্য ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী দক্ষতাও বেশ কাজে দেয়। যেমন এটি জানতে শেখায় যে, কে সত্যিই একটি কোম্পানির মালিক।
আরও দেখুন সাগরে থাকা জাহাজ অনুসরণ, সরবরাহ চেইন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণার জন্য জিআইজেএন-এর গাইড।
জব্দ ও আটক সংক্রান্ত নথি
শিপমেন্ট জব্দ ও গ্রেপ্তার সংক্রান্ত নতুন সব প্রতিবেদন ও ডেটাবেজ থেকেও চোরাচালান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পাওয়া যায়। ধারণা পাওয়ার জন্য দেখতে পারেন ভারত (জব্দকৃত অবৈধ কাঠ নিয়ে) ও অস্ট্রেলিয়ার (মোরগ লড়াই নিয়ে) এই প্রতিবেদনগুলি।
ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট-এর এই প্রতিবেদনে, ওয়েস্ট আফ্রিকান কার্টেল, “দ্য এন্টারপ্রাইজ”-এর বন্যপ্রাণী পাচার সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড বর্ণনা করতে গিয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল গ্রেপ্তার সংক্রান্ত নথি। লস টোপোস, বা দ্য মোলস নামে পরিচিত একটি অপরাধী চক্রের অবৈধ স্বর্ণ খনি পরিচালনার কর্মকাণ্ড উন্মোচন করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক নথিপত্রের ওপর ভরসা করেছিল মোঙ্গাবে।
জব্দ সংক্রান্ত ডেটাবেজের মধ্যে আছে:
ট্রাফিক-এর দ্য ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেড পোর্টাল একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ টুল, যেখানে বন্যপ্রাণী জব্দ ও এ সংক্রান্ত ঘটনাগুলো ওপেন সোর্স ডেটা হিসেবে দেখানো হয়। পোর্টালটিতে সার্চ করা যায় এবং ফলাফলগুলো শুধু তালিকা আকারে নয়, ড্যাশবোর্ড ফরম্যাটেও দেখানো হয়।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক এনজিও, সি৪এডিএস ওয়াইল্ডলাইফ সিজার ডেটাবেজ পরিচালনা করে। এটিতে প্রবেশের অনুমতি পেতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায়: info@c4ads.org।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক এনজিও, এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি তৈরি করেছে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ক্রাইম ট্র্যাকার।
আদালত নিয়ে গবেষণা
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের সঙ্গে কী ঘটে- তা নিয়ে অনুসন্ধানও রিপোর্টিংয়ের একটি সম্ভাবনাময় অ্যাঙ্গেল হতে পারে। “পরিবেশগত অপরাধ মোকাবিলার প্রধান বিষয় আইনের শাসন প্রয়োগ করা,” মোঙ্গাবেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ইগারাপে ইন্সটিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট মুগাহ।
রেকর্ডগুলো হয়তো সংরক্ষিত হয় জাতীয় পর্যায়ে। এবং এগুলো হাতে পাওয়াও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তবে এই জটিলতাই হয়তো একটি গল্প বলে দেবে।
বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের বিচার নজরে রাখার জন্য বেশ কিছু ডেটাবেজ তৈরি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সংগঠন, অক্সপেকার্স সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিজম। ডেটাবেজগুলো “সাংবাদিকরাই তৈরি করেছেন সাংবাদিকদের জন্য”। #ওয়াইল্ডআই কাভার করে ইউরোপ, #ওয়াইল্ডআইএশিয় নজর দেয় এশিয়া মহাদেশজুড়ে হওয়া বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধে, এবং রাইনোকোর্টকেসেস-এ নজর দেওয়া হয় দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দিকে।
জাতীয় পর্যায়ের অন্যান্য তালিকাগুলোর দিকেও খেয়াল করুন। যেমন, ভারতে, ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (ডব্লিউপিএসআই) পরিচালনা করে একটি ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম ডেটাবেজ।
আরও পড়ুন
ইললিগাল ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাফিকিং: এ জিআইজেএন গাইড
জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া
আফ্রিকা থেকে: পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধানে যেভাবে শক্তি যোগাচ্ছে জিও-জার্নালিজম
টবি ম্যাকিনটশ জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের সিনিয়র পরামর্শক। তিনি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক রিপোর্টার ছিলেন এবং ৩৯ বছর ধরে বুমেরাং বিএনএ-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি অলাভজনক ওয়েবসাইট ফ্রিডমইনফো.ওআরজি-র সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। টবি আইঅনগ্লোবালট্রান্সপারেন্সি.নেট নামে একটি ব্লগ চালান।