স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে থেকেও সাংবাদিকদের কেন সাহসী রিপোর্টিং করা উচিৎ
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
কর্তৃত্ববাদী দেশ মাত্রই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ওপর সরকারের চাপ। হাজারো হয়রানি আছে, তার মধ্যেও পীড়াদায়ক হলো, সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে দারুন কিছু বেরিয়ে এলেও সরকার তা খুব একটা আমলে নেয় না।
যেমন, মে মাসে (২০২১ সালে) সার্বিয়ার অনুসন্ধানী সম্পাদকেরা জিআইজেএনকে বলেন, “সরকারি কর্মকর্তারা আমাদের আউটলেটগুলোকে রীতিমতো একঘরে করে রেখেছে। কেননা, আমরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছি। চলমান অবস্থার প্রভাব আগামীতে যে কতটা ভয়াবহ হবে, তুলে ধরছি তা।”
ডিজিটাল যুগে মানবাধিকার বিষয়ক বিশ্বের শীর্ষ সম্মেলন নামে পরিচিত রাইটসকন। সম্মেলনে সম্পাদকদের একটি প্যানেল দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। তাঁরা দারুণ একটি কৌশলের কথা বলেন। তা হচ্ছে, স্বৈরশাসনের মধ্যেও আপনি এমনভাবে কাজ করবেন যেন আপনার দেশে চমৎকার একটি গণতান্ত্রিক আবহ বিদ্যমান। অর্থাৎ, স্বৈরতন্ত্রকে আমলে না নিয়ে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করবেন।
এ সম্পর্কে নিক ডাজ বলেন, “গণতান্ত্রিক পরিবেশে আপনি যেমন নির্ভয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সংবাদ প্রচার করতেন ঠিক সেভাবে কাজ করুন।”
ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং নিজ জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বার্তাকক্ষে সম্পাদনার কাজ করেছেন নিক। তিনি আরো বলেন “[আমাদের উচিৎ] গণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা ঠিক যেভাবে কাজ করতাম তেমন আচরণ করা: যেমন, প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা নির্ঘাত এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতাম। এরপর হয়তো কোনো মন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব নড়ে যেত। আমাদের সংবাদের জোরে কাউকে হয়তো জেলে দেওয়া হতো, বা কারও ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করা হতো। গণতন্ত্রের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার একটি উপায় হচ্ছে সাংবাদিক হিসেবে কোন রকম ছাড় না দেয়া। এর জন্য প্রচণ্ড সাহস লাগে… কিন্তু এটিকে গুরুত্ব দেয়া হয় না।”
যে সব দেশে দুর্নীতিবাজদের সহজে জবাবদিহিতার মুখোমুখি দাঁড় করানো যায় না, তাদের নিয়ে প্রকাশিত কী ধরনের প্রতিবেদনকে আমরা ”সফল” বলবো? ডাজের উত্তর ছিল সবগুলোকে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবসময় ‘প্রভাব’ নিয়ে ভাবি। প্রতিবেদনটি যদি বড় ধরনের প্রভাব ফেলে, আমরা খুশি হই। তবে আপনি যদি প্রভাবের কথা চিন্তা না করে স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে যেতে থাকেন, তারও কিন্তু সূক্ষ্ম তবে শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে।”
ডাজ বলেন, মিশরের মাদা মাসরের মতো স্বাধীন অনলাইন নিউজপেপারের সাংবাদিকরা কিন্তু এভাবেই কাজ করা শুরু করেন—এভাবে তারা পাঠক মনে জবাবদিহিতাকে বাড়াচ্ছেন।
লিনা আত্তালাহ মাদা মাসরের প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, এভাবে কাজ করার মাধ্যমে সাংবাদিকেরা চরম স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে থেকেও টিকে থাকার কৌশল হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণ (সেলফ সেন্সরশীপ) এড়াতে পারেন। পাশাপাশি কিছুই হবে না—এমন হতাশা থাকলেও প্রতিবেদন হওয়ার যোগ্য এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে যান না।
“কর্তৃত্ববাদের চ্যালেঞ্জ: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখা” শিরোনামে জিআইজেন আয়োজিত রাইটসকনের এ অধিবেশনে ডাজ, আত্তালাহ এবং ভারতের ওয়াচডগ ম্যাগাজিন দ্য ক্যারাভানের নির্বাহী সম্পাদক বিনোদ কে জোস যে কৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, তার মধ্যে এটি অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫৭০ জন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এতে অংশ নেন।
আলোচনা থেকে যে বিষয়টি উঠে আসে তা হচ্ছে সাংবাদিকদের দমনে স্বৈরাচারেরা যে কৌশল অনুসরণ করে থাকে তার মোকাবিলায় ছোট স্বাধীন নিউজরুমগুলো জুডো সাংবাদিকতার (জুডোর কৌশল ও নীতি ব্যবহার করে সরকার, কর্পোরেশন বা প্রভাবশালী সত্তাকে মোকাবিলা করা) কৌশল অনুসরণ করে।
আত্তালাহ যেমন বলেন,মাদা মাসর যাতে বড় কোনো মিডিয়া আউটলেট না হতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করেছে। তারা সফলও হয়। এ অবস্থায় আত্তালাহ ও তার দল চিন্তা করেন, আচ্ছা আউটলেট হিসেবে বড় না হতে পারি, কিন্তু আমাদের তো নির্দিষ্ট সংখ্যক পাঠক-শ্রোতা রয়েছে। এ থেকে আমরা কী ধরনের সুবিধা নিতে পারি। এরপর তারা পাঠকদের সঙ্গে আউটলেটটির সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন। বিশ্বস্ত সূত্র আর আগ্রহী পাঠকদের জন্য তারা ইমেল অ্যাড্রেস তৈরি করেন। মিশরের কর্তৃপক্ষ যখন অস্থায়ীভাবে তাদের ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়, মাদা মাসর তখন পাঠকদের কাছে লেখাগুলো ইমেইল করে দিত।
“পাঠকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সুবিধাই এটা। আমাদের ওয়েবসাইটটি যখন ব্লক করা হয়, তখনও আমাদের প্রচার বেড়েছে,” আত্তালাহ ব্যাখ্যা করেন।
তিনি আরো বলেন, “ইমেল ক্যাপসুল— বুলেটিন এবং ডাইজেস্টের মতো করে আমরা আমাদের প্রতিবেদনগুলো পাঠাতাম। তখন আমাদের বিকল্প প্রচার পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল।”
আত্তালাহ বলেন, কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর ছোট নিউজরুমের জন্য পাঠকের ইমেইল তালিকা সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি পরিস্থিতি আপনাকে বিকল্প বিতরণ কৌশল গ্রহণের সুযোগ এনে দেয়।
তাঁর মতে, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় হয়তো আপানার প্রতিবেদন প্রকাশের পর বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু আপনার কাজ জবাবদিহি করতে থাকা। কারণ অধিকারহীনতার কালে জবাবদিহিতা আদায়ে একগুঁয়ে মনোভাব ধরে রাখার মধ্যেই আপনি আপনার অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন।
এ নিয়ে তিনি বলেন, “দেশে গণতন্ত্র রয়েছে— আমি সত্যিই এভাবে ভাবতে [ধারণা] পছন্দ করি। এ চিন্তাটা মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজেদের মনের ভেতর যে ভয় আছে তার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমাদের আত্ননিয়ন্ত্রণের যে প্রবণতা তাকেও আমরা তখন চ্যালেঞ্জ করি। আমরা যদি ধরে নিই যে আকাশ আমাদের সীমা তাহলেই আমরা যা করতে চাই তা করতে পারি।”
আত্তালাহ জানান, মাদা মাসরের সাংবাদিকেরা এমন চিন্তা থেকে অনুসন্ধানে নেমেছিলেন। ফলে ডেটা সংগ্রহে অনেক বেশি সফলও হয়েছেন। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁরা “নিজেদের খানিকটা আড়াল করেন।”
সাংবাদিকেরা দুর্নীতি উন্মোচনর পর হয়তো সরকার সরাসরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ নাও নিতে পারে। তবুও প্রতিবেদনগুলো দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিব্রত বা “মাথাব্যথার কারণ হতে পারে”। আর এভাবেও তাদের ওপর চাপ তৈরি করা যায়।
ভারতের জোস বলেন, রাজনৈতিক চাপ বা দমনমূলক পরিস্থিতির শিকার হওয়া বার্তাকক্ষের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল একাধিক ভাষায় প্রতিবেদন প্রকাশ। এর মাধ্যমে আপনি আঞ্চলিক ও প্রান্তিক শ্রোতাদের সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হবেন। সেন্সরশীপ থেকেও এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন। যেমন দ্য ক্যারাভানের এখন পূর্ণাঙ্গ একটি হিন্দি ওয়েবসাইট রয়েছে।
“আমাদের নতুন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিল্লি থেকে দূরে থাকা আমাদের আঞ্চলিক প্রতিবেদকেরা তা লুফে নেন এবং এর ওপর কাজ করতে থাকেন,” বলেন তিনি।
জোস আরো বলেন, একই বিষয়ের ওপর ধারাবাহিক কভারেজ জনমত গঠনকে জোরালো করে । এর প্রভাব পড়ে সরকারি অন্যায্য নীতির ওপর। উদাহরণস্বরূপ তিনি কভিড-১৯ টিকার কথা বলেন। বিশ্বজুড়ে বিনামূল্যে বিতরণ করা হলেও ভারত সরকার বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা বিক্রির অনুমতি দেয়। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে টিকা বিক্রির বিরুদ্ধে দ্য ক্যারাভানের টানা বিরোধী অবস্থান ভারত সরকারের টিকা নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে।
“ভারতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনের শাসন, আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা” বলেন জোস। “ক্ষমতায় থাকা অনেকেই মনে করেন এ সব তত্ত্বকথা একপাশে সরিয়ে রাখা উচিৎ।”
জোস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভারতের ৯৫ বছরের পুরনো অভিজাত নব্য ফ্যাসিস্ট মতবাদ শিকড় গেঁড়ে আছে শাসক শ্রেণির মধ্যেঅ সংখ্যালঘু মানুষের অধিকার আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দুটোই এখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের কারণে সরাসরি হুমকির সম্মুখীন।
“সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হতে চায় ভারত। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেশটির সাংবিধানিক মূল্যবোধকে সম্মান করে না, যেখানে— বহুত্বকে সম্মান করা; ভিন্নমতকে সম্মান করার কথা বলা আছে। দেশটিতে মানবাধিকারের রক্ষকদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। আমরাসহ আমাদের মতো অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
প্যানেলটি পরিচালনা করেন শিলা কর্নেল। যিনি তার জন্মভূমি ফিলিপাইনের দুইজন স্বৈরাচারী শাসক ফার্দিনান্দ মার্কোস থেকে শুরু করে বর্তমানের রদ্রিগো দুতের্তের উত্থান কালের স্বাক্ষী। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির স্টেবিল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের পরিচালক কর্নেল। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিচ্ছন্ন ছবি তুলে ধরে তিনি উপস্থিতি শ্রোতাদের বলেন, ” ১৯৯০ দশকের মধ্যে বর্তমানে প্রেস স্বাধীনতা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।”
সাংবাদিকদের যখন “শত্রু”, “ভুয়া খবর” বা “প্রেস-টিটিউটস” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তখন এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এবং ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী মনোভাব প্রতিরোধে বার্তাকক্ষের করণীয় কী তা জানতে চান কর্নেল। উত্তরে ডাজ জানান, অন্য গল্পগুলোর মতোই সাংবাদিকদের তাদের নিজস্ব গল্পগুলো বলা উচিত: তারা দুজনেই বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
“গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূল নীতিকে ধারণ ও প্রকাশ করতে হবে— আমাদের কাজের মাধ্যমে তা দেখাতে হবে,” বলেন তিনি।
আত্তালাহ মনে করেন, সাংবাদিকেরা যেসব তথ্য উন্মোচন করেছেন সেগুলো নিরলসভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে মাদা মাসর সত্যিকার ভূমিকা পালন করে। “পশ্চিমা এজেন্ট” কিংবা “সন্ত্রাসী” এমন ন্যক্কারজনক অভিযোগের বিরুদ্ধে কথা বলে।
“ক্ষমতায় থাকা লোকেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনেকেই আমাদের তখন শত্রু মনে করতো। ধীরে ধীরে আমরা এমন মানুষের নজরে আসতে শুরু করি যারা হয়তো রাজনৈতিকভাবে আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। কিন্তু জানে এটি এমন একটি সাইট যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে এবং এরা পেশাদার সাংবাদিকতা করে” বলেন তিনি।
কর্তৃত্ববাদী সমাজব্যবস্থায় বার্তাকক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে মানবাধিকারের পক্ষে বাজি ধরে নিপীড়িত মানুষের চাহিদা ও অধিকারের পূরণের দিকে মনোযোগ দেয়া।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, “মৌলিক স্বাধীনতা, মানুষের কল্যাণ আর মানবাধিকারের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা না ভেবে আমরা অনেক সময় নিজেদের পরিচয় ও পেশাগত আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
অন্য একটি পরামর্শে ডাজ বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে খোলাখুলিভাবে আলোচনা বা সম্পাদকীয় বৈঠক যে কোনো সমাজে জনমনে আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
ডাজ মনে করেন, সাংবাদিকেরা সাধারণত নিজেদের গল্প আর বিটগুলো নিয়ে বেশি মনোযোগী হন। আপনি একধাপ পিছিয়ে আসুন। সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলো যেভাবে দেখে, তেমনভাবে দেখতে চেষ্টা করুন। সাংবাদিকদের তুলনায় নাগরিক সংগঠনগুলো সমাজের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের হুমকিগুলো ঘিরে অনেক বেশি সচেতন ও সজাগ।
ডাজ বলেন, এসব হুমকির মধ্যে রয়েছে— নজরদারির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, গণমাধ্যমকে জনরোষের শিকার বানানো, এবং ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ। সব ধরনের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা এ প্রবণতাগুলো দেখতে পাচ্ছি, এমনকি গণতান্ত্রিক দেশেও বলে ।
তিনি বলেন, “চরম দমনমূলক ব্যবস্থা—যেমন মিশর, দমন-পীড়ন দ্রুতহারে বাড়ছে এমন দেশ—যেমন ভারত, এবং যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রাজিলের মতো রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের বোঝা জরুরি। এসব রাষ্ট্রের নেতারা গণমাধ্যমের মতো জবাবদিহিতা আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের গায়ে কলঙ্ক লেপনে আগ্রহী। ফিলিপাইনে যেমনটা আমরা দেখতে পাই। ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে পক্ষপাতদুষ্ট ও উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীদের (হাইপার-পার্টিজান ট্রোল) মধ্যে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখছি, নজরদারি টুলের সংখ্যা বাড়ছে, সহজে পাওয়া যাচ্ছে। যা ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল থেকে শুরু করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত। নজরদারির প্রযুক্তি বিভিন্ন উপায়ে ছড়ানো হতে পারে। তা সে হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার করে।”
এমন হাজারটা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সম্পাদকরা আশাবাদী যে সামনে আরও ভালো দিন আসবে। আর প্রশাসনের কদাকার কৌশলের বিরুদ্ধে তারা আরো নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করবেন।
কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো মাদা মাসর এবং দ্যা ক্যারাভানের মতো সংবাদমাধ্যমকে গুরুত্বহীন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে, তখন ওই সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা সরকারের নিম্নমানের জবাবদিহিতার প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করেন। তারা সরকারের কূট-কৌশলের ওপর নির্ভর না করে তাদের কাজ চালিয়ে যান। সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে সরকারগুলোকে জবাবদিহির আওতায় রাখার চেষ্টা করেন। এবং পাঠকদের মনে করিয়ে দেন সঠিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করেই তারা কাজ চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এই সাংবাদিকদের ”ওয়াচডগ ঐতিহ্যের রক্ষক এবং স্বৈরাচারী শাসনের চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধকারী” বলে আখ্যায়িত করে কর্নেল প্যানেলিস্টদের জিজ্ঞাসা করেন, কোন বিষয়টি তাদের ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী করে।
উত্তরে ডাজ বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ফিলিপাইনের সহকর্মীদের পাশাপাশি প্রতিদিন লিনা ও বিনোদের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করা, যাঁরা সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করা। যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলভিত্তিক রিপোর্টিং কে উজ্জীবিত করা ও স্থানীয় মানুষকে ঘিরে সাংবাদিকতার যে চেষ্টা সেসব কাজে যুক্ত হতে অত্যন্ত উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত বোধ করেন। বৈশ্বিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে বৈচিত্র্যময়, শক্তিশালী ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের নেটওয়ার্কগুলো আমাকে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে।”
আত্তালাহ বলেন, ছোটখাট সফলতাও আমাদের প্রশ্ন করার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখে। জবাবদিহিমূলক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
তিনি আরো বলেন, “আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন নাগরিক সংগঠনগুলো গভীর সংকটে পড়েছে। তাই এ প্রতিষ্ঠানের [মাদা মাসর] পথচলা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ লালন করেন এমন সহকর্মীদের নিয়ে কাজ করাটা মূলত অন্ধকারতম সময়েও সমালোচনামূলক চিন্তার প্রতি প্রতিশ্রুতি ধরে রাখা, সংগঠিত হওয়া, যা চাইনা তার মোকাবিলায় আশা যোগায় – যেন সবকিছুই সম্ভব। “
জোস বলেন, কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার পর তিনি ভারতের প্রথাগত সংবাদমাধ্যমেও সাহসী ভূমিকার রাখার বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, “তরুণদের সঙ্গে কাজ করার অনেক সুবিধা। সদ্য স্নাতকদের সঙ্গে কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এ দায়িত্ব তাদের হাতে তুলে দিতে হবে, এবং আমাদের অবশ্যই আশাবাদী হওয়া উচিত।”
দমন-পীড়নমূলক পরিবেশে কাজ করার সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে হাজারো সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জোসি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ছোট করে বলেন, আমি মনে করি সাংবাদিক হিসেবে আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে গণতন্ত্রের মশাল জ্বালিয়ে রাখবো।
রাইটসকন২০২১ সম্পর্কে আরও জানতে এবং সম্মেলনের সেশনগুলো দেখতে, সংস্থাটির অ্যাকসেসনাউ ইউটিউব চ্যানেলটি দেখুন।
আরো কিছু তথ্য:
Additional Resources
When Autocrats Attack: How Journalists Around the Globe Are Fighting Back
Understanding the Authoritarian’s Playbook: Tips for Journalists
GIJN Webinar: Investigating Autocracy
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফ্রিকায়।