Image: Shutterstock
টুইটার স্ক্রিনশটের সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের সহজ উপায়
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
টুইটারে কোনো টুইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করা তথ্য প্রচারের একটি পরিচিত পন্থা। কোট বা উদ্বৃতিসূচক টুইটে যেমন কোনো একাউন্ট থেকে পোস্ট করা আসল টুইটটিকেই পাওয়া যায়, স্ক্রিনশটের বেলায় তেমন নয়। ব্যবহারকারীরা স্ক্রিনশটে পাওয়া পোস্টটিকে সত্য বলে মনে করছেন কিনা, তার ওপরই এর বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমরা সবাই জানি ইন্টারনেট আসলে সেভাবে কাজ করে না। কতগুলো সহজ কৌশল অবলম্বন করে সহজেই টুইটের নকল স্ক্রিনশট তৈরি করা যায়, আর বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নেটিজেনদের বিভ্রান্ত করা যায়।
সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যে টুইটার অনেক জনপ্রিয়। তাই কোনো স্ক্রিনশটকে বড় কোনো সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের টুইট ভেবে, ভুল একটি তথ্যকে লক্ষ লক্ষ বার দেখা ও শেয়ার করা হতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধের গোটা সময়জুড়ে সংবাদ সংস্থা বা সরকারি কর্মকর্তাদের কথিত প্রতিবেদন সম্বলিত একাধিক মিথ্যা স্ক্রিনশট অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে।
আগস্টে, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা নোবুও কিশির নামে করা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি টুইটের স্ক্রিনশট অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করা হয়। নকল স্ক্রিনশটটিকে কিশির প্রকৃত বক্তব্য ভেবে যুক্তরাজ্যের রুশ দূতাবাসও এটি টুইট করেছিল; তবে কিশি নিশ্চিত করেছেন, তিনি কখনো এই টুইট পোস্ট করেননি।
যেভাবে নকল স্ক্রিনশট তৈরি হয়
তাহলে, সাংবাদিকেরা কীভাবে নকল টুইট থেকে আসল টুইট স্ক্রিনশট আলাদা করবেন?
প্রথমত, জানা জরুরি যে এই স্ক্রিনশটগুলো কীভাবে তৈরি হয়।
প্রাথমিকভাবে, তিনটি পদ্ধতির যে কোনো একটি ব্যবহার করে নকল টুইট স্ক্রিনশট তৈরি করা হয়: ফটো এডিটিং অ্যাপের মাধ্যমে, নকল টুইট জেনারেটর ব্যবহার করে, অথবা একটি আসল টুইটের এইচটিএমএল সোর্স কোড সম্পাদনার মাধ্যমে৷
একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, নকল স্ক্রিনশটগুলো সবসময় ছবি আকারে থাকে; এমন কোনো ওয়েবপেজ বা লিংক হিসেবে থাকে না যা ব্যবহারকারীরা লাইক, রিটুইট, টুইট কোট বা রিপ্লাই করতে পারেন। কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে সত্যিকারের ওয়েব লিঙ্ক সহ আসল টুইট পোস্ট করতে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জানতে হবে বা হ্যাক করতে হবে, যা এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু নয়।
স্ক্রিনশট যাচাই করার কৌশল
এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনি ভেরিফাইড ট্যাগসহ নকল টুইট বানাতে পারবেন।
একটি জাল টুইট এখানে তুলে ধরা হল, যা আপাতদৃষ্টিতে বিবিসির ব্রেকিং নিউজ অ্যাকাউন্টের কন্টেন্ট বলে মনে হবে। ঐ জেনারেটরগুলোর একটি ব্যবহার করে আমি এই নকল টুইট তৈরি করেছি: “মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন যে তিনি বছরের শেষ নাগাদ পদত্যাগ করবেন।”
প্রথম দেখায় বৈধ ও যাচাইকৃত মনে হলেও আসলে এটি ভুয়া। @BBCBreaking কখনো এই টুইটটি করেনি। তাহলে কীভাবে আপনি এর সত্যতা যাচাই করবেন?
স্ক্রিনশটের সত্যতা যাচাইয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আসল অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখা যে তার টাইমলাইনে টুইটটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কিনা। স্ক্রিনশটের তারিখটি সাম্প্রতিক সময়ের না হলে কিছু সময় নিয়ে আরও নিচে স্ক্রল করুন, টুইটারের অ্যাডভান্সড সার্চ ব্যবহার করুন আর দেখুন সেই অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি টুইটটি খুঁজে পান কিনা।
যেমন: এখানে আমি @BBCBreaking টুইটার অ্যাকাউন্টের এমন টুইটগুলো সার্চ করেছি যেখানে “Biden” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, আর সেগুলোকে সময়ানুক্রমে সাজিয়েছি। ভুয়া স্ক্রিনশটটিতে তারিখ আছে ৭ই সেপ্টেম্বর। @BBCBreaking অ্যাকাউন্টে অ্যাডভান্স সার্চের ফলাফলে ২৪শে আগস্ট থেকে ২১শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে “Biden” শব্দ সহ টুইটের কোনো রেকর্ড দেখা যায় না৷
টুইটটি সেখানে পাওয়া না গেলে, অবশ্যই তা নকল হতে পারে।
আমরা এরইমধ্যে প্রমাণ করেছি যে টুইটারের ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে আসল টুইটটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন আরেকটি প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার। এমন যদি হয় যে অ্যাকাউন্টটি থেকে সত্যিই টুইটটি করা হয়েছিল, কিন্তু পরে মুছে ফেলা হয়েছে?
মুছে ফেলা টুইট যাচাই করার সেরা উপায় হল ইন্টারনেট আর্কাইভের মতো বিনামূল্যের ওয়েব আর্কাইভ সেবা ব্যবহার করা৷ কোনো টুইটার অ্যাকাউন্টের লিংক দিয়ে সার্চ করে আপনি দেখতে পাবেন ঐ অ্যাকাউন্টের আর্কাইভের টাইমলাইনে স্ক্রিনশটের সেই টুইটটি আছে কিনা, যা মুছে ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছিলেন।
এই সেবায় প্রতিটি টুইটার অ্যাকাউন্ট আর্কাইভ সুবিধা না পেলেও সুপরিচিত নিউজ ব্র্যান্ড সহ বেশিরভাগ প্রসিদ্ধ অ্যাকাউন্টগুলো নিয়মিত আর্কাইভ করা হয়।
টুলটি কাজে আসে, কারণ বেশিরভাগ নকল টুইট সুপরিচিত অ্যাকাউন্টগুলোকে ঘিরে হয়ে থাকে৷
এখন পর্যন্ত মুছে ফেলা টুইট যাচাইয়ে ফ্যাক্ট-চেকার ও ওপেন সোর্স অনুসন্ধানকারীরা সচরাচর যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেন তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা ও নির্ভরযোগ্য হল আর্কাইভ ওয়েবসাইট।
গুগল, টিনআই, ইয়ানডেক্স ও বিং-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করে স্ক্রিনশটের রিভার্স ইমেজ সার্চ করা ফ্যাক্ট-চেকারদের ব্যবহৃত আরেকটি সহজ ও বহুল পরিচিত পদ্ধতি। এমনও হতে পারে যে নকল স্ক্রিনশটটি বেশ পুরনো, সেটি আগে শেয়ার করা হয়েছে এবং তা মিথ্যা বলেও প্রমাণিত হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে আপনি এটি নিয়ে একটি ফ্যাক্ট-চেকও খুঁজে পেতে পারেন।
উদাহরণ হিসেবে একটি ভুয়া সিএনএন টুইটের স্ক্রিনশটের কথা ধরা যাক। এখানে দাবি করা হয়েছে, অভিনেতা স্টিভেন সিগালকে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে দেখা গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে স্ক্রিনশটটি ভাইরাল হয়েছিল, এমনকি মার্কিন পডকাস্ট পরিচালক জো রোগানও তা শেয়ার করেছিলেন।
চট করে গুগল ইমেজ রিভার্স সার্চ করলেই আপনি ফ্যাক্ট-চেকারদের লেখা নিবন্ধগুলো পাবেন, যেখানে সেই স্ক্রিনশট ও দাবি মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে।
এমনকি কোনো ফ্যাক্ট-চেক পাওয়া না গেলেও রিভার্স ইমেজ সার্চ আপনাকে স্ক্রিনশটের সোর্স সনাক্ত করতে বা অন্তত এর বিস্তার সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে সাহায্য করবে।
সম্ভাব্য মুছে ফেলা টুইটটি সাম্প্রতিক সময়ের হলে গুগল সার্চ ও অ্যাকাউন্টের ক্যাশ ভার্সন পরীক্ষা নিরীক্ষাও যাচাইয়ের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
টুইটের স্ক্রিনশটে কোনো সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব বা রাজনীতিবিদ সম্পর্কে বক্তব্য থাকলে সরাসরি গুগলে সার্চ করুন। একই বক্তব্য অন্য কোনো নামকরা সংবাদমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদনে পান কিনা, দেখুন।
রাজনীতিবিদদের মুছে ফেলা আসল টুইটের ডেটাবেসের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য ভালো একটি রিসোর্স হল পলিটউপ্স ওয়েবসাইট৷
তবে আপনি যা খুঁজছেন, কেবল ইন্টারনেটে সার্চ করেই সেটি পেতে পারেন।
টুইটটি কোনো সংবাদ সোর্সের হলে তাদের ওয়েবসাইট দেখুন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পদত্যাগ নিয়ে @BBCBreaking এর নকল টুইটের ক্ষেত্রে, যে কেউ কয়েক মিনিটের মধ্যে বিবিসি নিউজ ওয়েবসাইটে স্টোরিটির খোঁজ করতে পারে। স্টোরিটি না থাকলে, সম্ভবত স্ক্রিনশটটি ভুয়া।
প্রয়োজনে স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদনে চোখ রাখুন। ঠিক এমনি একটি উদাহরণ হল এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উদ্ধৃতি সহ এই ভুয়া বিবিসি টুইট।
ভুয়া স্ক্রিনশটটি ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু বিবিসিওয়ার্ল্ড অ্যাকাউন্টের টাইমলাইন ও উল্লিখিত অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে যাচাই না করে কোনো স্বনামধন্য ফরাসি সংবাদমাধ্যম সেই ভুয়া উদ্ধৃতি রিপোর্ট করবে, এমনটা হওয়ার কথা নয়।
আমরা যা বিশ্বাস করি তার অনুকূলে যায় না বলে কোনো কিছু ভুল বা ঠিক বলে অনুমান করা উচিত নয়। একটি টুইট নকল বলে মনে হয়, মানে এই না যে সেটি সত্যিই নকল। আবার একটি টুইট আসল মনে হয়, মানে এই না যে সেটি সত্যিই আসল। যেমনটা সাংবাদিকতার মৌলিক নিয়মের একটি হল: সবসময় দু’বার যাচাই করুন।
আরও পড়ুন
স্মার্টফোনে ছবি যাচাইয়ের চারটি সহজ পদ্ধতি
বিশ্বব্যাপী মিসইনফরমেশন অনুসন্ধান থেকে গৃহীত শিক্ষা
এক্সপার্ট টিপস ফর ডিগিং আউট দ্য রুটস অব ডিসইনফরমেশন
শায়ান সরদারিজাদেহ একজন সাংবাদিক। তিনি বিবিসি মনিটরিংয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, সংস্কৃতি ও উগ্রপন্থা নিয়ে প্রতিবেদন করেন।