সাংবাদিকরা আইনি সুরক্ষা কোথায় পাবেন?
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
বিশ্বজুড়ে মতপ্রকাশ ও তথ্য পাওয়ার যে আইনি অধিকার সাংবাদিকদের রয়েছে, তা প্রতিনিয়তই কমবেশী বদলে যাচ্ছে। সাথে শারীরিক ঝুঁকি আর আর্থিক ক্ষতি তো, একরকম সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেনে রাখা ভাল, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা জাতীয়, আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সেই অধিকার রক্ষায় কাজ করে। অবশ্য আইনি সুরক্ষা ও সহায়তা দেয় যেসব সংস্থা, তাদের সংখ্যা সীমিত; সেবাও একটি নির্দিষ্ট আইনী বা ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
জিআইজেএন ও মিডিয়া ডিফেন্স একসঙ্গে মিলে তৈরি করেছে সাংবাদিকদের জন্য মামলা ও আইনি ঝুঁকি এড়ানোর গাইড
এখানে তেমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হলো, যারা সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষা এবং অন্যান্য সহায়তা দেয়ার জন্য সুপরিচিত।
সংগঠন
বেসরকারি এই সংস্থা সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সহায়তা করে – হোক তা যে কোনো দেশের- প্রিন্ট, ব্রডকাস্ট বা অনলাইন , যে কোন মাধ্যমের। লন্ডনভিত্তিক গ্রুপটি বিশ্বজুড়ে আইনী সুরক্ষা দেয়া প্রতিষ্ঠাগুলোর নেটওয়ার্ক, এমনকি সরাসরি আইনজীবিদের সাথেও কাজ করে। প্রয়োজন হলে, তারা আইনজীবীদের ফিও প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে, কোনো সাংবাদিক যখন কারাগারে যাওয়া বা আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন অথবা কোন গণমাধ্যম যখন অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়, এমন পরিস্থিতিতে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। সাংবাদিকদের যখন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনী সহায়তার দরকার হয়, তখনো সাহায্য করে এলডি। ২০০৯ সালে, মিডিয়া ডিফেন্স ঘোষণা করেছে একটি ফ্যাক্ট-চেকার্স লিগাল সাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ।
ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড লিগাল ডিফেন্স ফান্ড বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক ও সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়। “আমরা সেসব সাংবাদিকদের সহায়তা দেই যারা শাস্তি বা আটকের হুমকিতে আছেন এবং কোনো আইনজীবী বা বিচারকার্য-র ব্যয় বহন করার সামর্থ্য নেই।” আরও জানতে আমাদের ইমেইল করুন legalfund@freepressunlimited.org বা এই নম্বরে কল করুন ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের অফিসে: +31 20 8000 400।
অফিস অব দা স্পেশাল রেপোর্টেয়ার ফর ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন (আমেরিকা)
ওএএস স্পেশাল রেপোর্টেয়ার কাজ করে স্বাধীন ন্যায়পাল হিসেবে। ইন্টার আমেরিকান কমিশন অফ হিউম্যান রাইটসে (আইএএইচসিআর) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের কেনো অভিযোগ এলে তারা সেটি তদন্ত করে। এই বিষয়ে কেউ কোনো আবেদন দাখিল করলে তারা আইএএইচসিআরকে সেই আবেদন মূল্যায়ন ও রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করে। এটা তাদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি। তার ভিত্তিতে আইএএইচসিআর চাইলে মামলা দায়ের করতে পারে ইন্টার আমেরিকান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে। রেপোর্টেয়ার অবশ্য সাংবাদিক বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি আর্থিক বা আইনী সহায়তা দেয় না। তবে বিবেচনার জন্য তাদের পিটিশন গ্রহণ করে, বিনামূল্যে।
রিপোর্টার্স শিল্ড একটি মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম যেটি বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত আইনি হুমকি থেকে সুরক্ষা দেয় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আইনি সহায়তার জন্য তহবিল জোগানোর মাধ্যমে।
দ্য লিগাল নেটওয়ার্ক ফর জার্নালিস্টস অ্যাট রিস্ক (এলএনজেএআর)
বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠন যেসব সহায়তা প্রদান করে—সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এলএনজেএআর। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেসব সহায়তা প্রদান করা হয় তার মধ্যে আছে জরুরি আইনি প্রতিনিধিত্ব, চলমান কোনো মামলায় সহায়তা, যে আইনি পরিবেশের মধ্যে মিডিয়াকে কাজ করতে হয়— সেখানে ব্যবস্থাগত সহায়তা।
পার্স ফ্রাই হেইডস ফন্ডস (নেদারল্যান্ডস)
২০০৭ সালে ডাচ এসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টস্ এবং সোসাইটি অব এডিটরস মতপ্রকাশের অধিকার ও তথ্যে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বিস্তৃত পরিসরে সহায়তার জন্য ‘স্বাধীন মুক্ত সাংবাদিকতা ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। আমস্টারডামে এবং প্রাথমিকভাবে ডাচ ‘মিডিয়া কমিউনিটি’কে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই ফাউন্ডেশন ইউরোপের অন্য দেশেও এমন গ্রুপগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
রিপোর্টার্স কমিটি ফর ফ্রিডম অব দা প্রেস (যুক্তরাষ্ট্র)
২৪ ঘন্টা (24/7) জরুরি হটলাইনে সাংবাদিক ও আইন পেশাজীবীদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি এই অলাভজনক সংস্থা আদালতের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি, মিডিয়া আইন সম্পর্কিত সংবাদ এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে। ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক এই সংস্থা কাজ করে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য। ফেডারেল ও রাজ্য আদালতগুলোতে, পেশাজীবী এবং ছাত্রদের অধিকার সুরক্ষায়ও সহায়তা করে রিপোর্টার্স কমিটি। তারা ডিজিটাল সাংবাদিকতার জন্য অঙ্গরাজ্যের ক্রমানুসারে ওপেন গভর্নমেন্ট গাইড, প্রথম সংশোধনী হ্যান্ডবুক এবং রিপোর্টারের অগ্রাধিকার বিষয়ে তথ্যের একটি ধারাবাহিক নির্দেশিকাও তৈরি করেছে।
সোসাইটি অব প্রফেশনাল জার্নালিস্টস্ লিগ্যাল ডিফেন্স ফান্ড (যুক্তরাষ্ট্র)
সরকারী নথিপত্র ও কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার জোরালো করতে মামলা দায়ের ও পরিচালনার জন্য এই সোসাইটি একটি তহবিল গঠন করেছে। একই উদ্দেশ্যে নাগরিকদেরকে সংগঠিত, অবহিত এবং লবিং করতেও এই তহবিল ব্যবহার হয়। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে সাংবাদিকদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়) বিষয়ে আইনজীবি চিহ্নিত করতেও সাংবাদিকদের সহায়তা করে।
অন্যান্য উৎস
সাংবাদিক ও ব্লগার সুরক্ষা হ্যান্ডবুক
প্রায় ৩০০ পাতার এই হ্যান্ডবুক সংকলন করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, দ্য থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এবং আন্তর্জাতিক ল’ ফার্ম পল হেস্টিংস এলএলপি। এর অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে রয়েছে মানহানি, ব্যক্তি গোপনীয়তার অধিকার, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের গোপন তথ্যাবলী।
টিপসশীট: আইনি ঝুঁকি থেকে আত্মরক্ষা, কিউ হো ইউয়াম।
ইউনেসকো গাইডলাইনস ফর প্রোসিকিউটরস: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলাগুলো পরিচালনার বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা আছে এই রিপোর্টে। এটি আটটি ভাষায় পাওয়া যায়: ইংরেজি, পর্তুগিজ, রাশিয়ান, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, আরবি, ইন্দোনেশিয়ান ও চীনা।