Illustration: Ann Kiernan for GIJN
মাফিয়া রাষ্ট্র এবং চৌর্যতন্ত্র অনুসন্ধান
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
গাইড রিসোর্স
রিপোর্টারদের জন্য সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
মাদক পাচার অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
সাইবার অপরাধ অনুসন্ধান
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
জোরপূর্বক গুম ও রাজনৈতিক অপহরণ অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
অস্ত্র পাচার অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
মাফিয়া রাষ্ট্র এবং চৌর্যতন্ত্র অনুসন্ধান
রিপোর্টার্স গাইড টু ইনভেস্টিগেটিং অর্গানাইজড ক্রাইমের এই অধ্যায়টি লিখেছেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক ড্রিউ সুলিভান। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এই বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের কাজ হলো অপরাধ ও দুর্নীতি উন্মোচন করা, যেন জনগণ ক্ষমতাকে জবাবদিহি করতে পারে।
“মাফিয়া রাষ্ট্র” বলতে আমরা এমন সরকারের কথা বলি, যা কিনা নিজেই অপরাধকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত এই ব্যক্তিদের হাত থাকে সবখানে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হল সহিংসতা। মাফিয়া রাষ্ট্রে আমরা এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাই।
মাফিয়া রাষ্ট্র ও চৌর্যতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যটা বোঝা জরুরী। মাফিয়া রাষ্ট্র দুর্লভই বলা চলে। আর যদি ক্লেপটোক্রেসি বা চৌর্যতন্ত্রের কথা বলেন – এমন সরকার হরহামেশা দেখা যায়, যাদের সঙ্গে চুরি ও ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। উন্নয়নশীল বিশ্বে বেশিরভাগ সরকারই দুর্নীতিগ্রস্ত। তবে সম্ভবত ছয় বা সাতটি মাফিয়া রাষ্ট্র আছে, যাদের লক্ষ্য মাফিয়া-ধাঁচের সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া।
কসোভো এবং মন্টিনেগ্রো মাফিয়া রাষ্ট্রের উদাহরণ। রাশিয়াকে আপনি মাফিয়া রাষ্ট্র ভাবতে পারেন, তবে দেশটিকে হয়ত তার নিজস্ব শ্রেণীতে ফেলতে হবে। ইকুইটোরিয়াল গিনিও তেমনই। ভেনেজুয়েলা অবশ্যই মাফিয়া রাষ্ট্র, কারণ দেশটির কর্মকর্তারা আর রাষ্ট্র পরিচালনায় আগ্রহী নন। সেখানকার অভিজাত রাজনৈতিক শ্রেণী এবং সামরিক বাহিনী আর নিরাপত্তা বা শিক্ষাখাতের উন্নয়নে কাজ করে না, বরং অফশোর অ্যাকাউন্ট খোলা এবং ড্রাগ ব্যবসায় ব্যস্ত থাকে। মাল্টা এবং মেক্সিকোকেও এই কাতারে ফেলা যায়।
অন্যদিকে, শক্তিশালী গণতন্ত্র নেই, এমন সবখানেই চৌর্যতন্ত্রের দেখা মেলে। অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গাই এমন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আফ্রিকার কথা। এখানকার সিংহভাগ দেশে স্বৈরতন্ত্র চলে, ভোট জালিয়াতি হয়, আর খেসারত দেয় জনগণ। এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা নির্ভর একটি ব্যবস্থা। যেমন: আজারবাইজানকে বলতে পারেন চৌর্যতন্ত্র; একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরতান্ত্রিক দেশ। তারা জনগণকে দমনপীড়ন করে, আর চুরির অধিকাংশ অর্থ খরচ করে বাকিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যেন তারা ক্ষমতাসীন পরিবারের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়। তারা সবকিছু চুরি করে। অবশ্য এর কারণ অভাব নয়। বরং তারা চায় না, তাদের বিরোধিতা করার মত অর্থ কারো কাছে থাকুক।
প্রকৃত সমস্যা হয় তখন, যখন আপনি দেখেন রাষ্ট্র-ই জবরদখল হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, জঘন্য এই গোষ্ঠীকে ছুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা কি আপনার আছে? যদি না থাকে, তবে অবশ্যই আপনি রাষ্ট্র জবরদখলের কবলে পড়েছেন, এবং সম্ভবত, কমবেশি স্বৈর ও চৌর্যতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই আছেন। এমনকি পোল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশ, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানেও পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে।
মাফিয়া রাষ্ট্রের কার্যক্রম জানা এবং মুখোশ উন্মোচন করার মূলসূত্র তাদের অর্থ ও সম্পদ অনুসরণ। একটি জাতির জাতীয় সম্পদ মূলত তা, যা তার নিজ গুণেই দামী। তাই খনিজ সম্পদ খনন করা বা গাছ কাটার মানে হলো এদের মূল্য আছে। যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদই একধরনের শিল্প, যা নিয়ে আপনি জানতে আগ্রহী হবেন, কারণ স্বৈরতান্ত্রিক বা মাফিয়া রাষ্ট্র কেবলমাত্র এগুলোকেই টাকায় রুপান্তরিত করতে পারে।
অপরাধী গোষ্ঠীর চেয়ে মাফিয়া রাষ্ট্র নিয়ে অনুসন্ধান করা সহজ। কারণ আপনার হাতে রাষ্ট্রীয় রেকর্ড, নথি, টেন্ডার, প্রতিষ্ঠান – মোট কথা, তথ্য আছে। সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীর চেয়ে রাষ্ট্র তুলনামূলক স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান। আপনি টুকরো ধরে ধরে, একেবারে ওপর থেকে, একটি সংগঠনের পদক্রম সাজাতে পারবেন; একটি অপরাধী গোষ্ঠীর মতোই। তবে কখনো কখনো সরকারের ভেতরেই একটি অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক থাকে, যা আনুষ্ঠানিক কাঠামোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করুন। দেখুন কারা সম্পদশালী হচ্ছে, সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি কারা করছে, এবং নতুন সুরম্য শহরতলিতে রাষ্ট্র প্রধানের কাছাকাছি কারা বাস করছে।
এটি সাংবাদিকতার একটি বিট, এবং আপনাকে ধৈর্য ধরে যত বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সব ডেটার মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেন একটি নলেজ ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে, এবং এটি অন্য সফটওয়্যরের সঙ্গেও যুক্ত থাকবে। এরপর, আপনি অর্থের উৎস অনুসরণে নামবেন।
কেস স্টাডি
মন্টিনেগ্রো
মন্টিনেগ্রো হলো মাফিয়া রাষ্ট্রের একটি ধ্রুপদী উদাহরণ। মাত্র ছয় লক্ষ মানুষের ছোট্ট একটি দেশ। দেশটি পরিচালনা করেন এমন এক ব্যক্তি, যার জীবনের প্রথম চাকরিই হলো প্রধানমন্ত্রীত্ব। সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ গড়ে ওঠে আপন ভাইয়ের মাধ্যমে। তাই তারা অবৈধ তামাক বাণিজ্য শুরু করেন এবং রাষ্ট্রও সক্রিয়ভাবে এই বাণিজ্যে অংশ নেয়। দুর্নীতিকে মজবুত করতে তিনি যেসব কৌশল গড়ে তুলেছেন, তা আমরা বের করেছি অনেক দিনের চেষ্টায়। প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের জন্য একটি ব্যাংক বেসরকারিকরণ করেন এবং বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ সেখানে ঢালতে থাকেন। তারপর নিয়ম করে দেন, যেন অন্যরা সব ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন এই ব্যাংকের মাধ্যমে করতে বাধ্য হন। অতঃপর তিনি নিজে, তার বন্ধুরা এবং সংগঠিত অপরাধের সেই চক্রটিও ব্যাংকটি থেকে ঋণ নেয়া শুরু করে। ব্যাংকটি বসে গেলে, করদাতাদের অর্থ দিয়েই তিনি আবার সেটিকে উদ্ধার করেন।
ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলার ওপর অপরাধী গোষ্ঠীর পাইকারি দখলদারিত্বের বিষয়টি এখন কমবেশি নথিবদ্ধ। মার্কিন বিচার বিভাগে দাখিল করা অভিযোগ, গণমাধ্যমের অনুসন্ধান, এবং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, একটি সরকারের সর্বোচ্চ মহল সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে কতটা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নিকোলাস মাদুরো সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্যসহ ভেনেজুয়েলার একশোর বেশি কর্মকর্তা জ্বালানি পাচার, খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ কালোবাজারি এবং কোকেন পাচারের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইনসাইটক্রাইমের রিপোর্ট অনুসারে, “ইন্ডাস্ট্রিয়াল (ব্যাপক অর্থে) মাত্রায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুট করা হয়েছে।” এর সঙ্গে যোগ করুন সশস্ত্র জঙ্গিবাহিনী ও অপরাধ চক্রের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাপক আকারে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড; তাহলেই পেয়ে যাবেন একটি অপরাধী রাষ্ট্র কীভাবে গড়ে ওঠে।
উত্তর কোরিয়া
আরেকটি নিশ্চিত উদাহরণ হলো, উত্তর কোরিয়া। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট অনুসারে, দেশটি একটি অপরাধী গোষ্ঠীর মতো চলছে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের মাদক পাচার, জালিয়াতি, সাইবার অপরাধ, তামাক পাচার, শিশুপাচার, এবং আরো অনেক ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে দেখা গেছে। সাধারণত আমরা যখন একটি মাফিয়া গোষ্ঠীকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে দেখি, তা গোড়া থেকে ওপরের দিকে ওঠে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় উল্টো। সেটি পুরোপুরি ওপর থেকে নিচের দিকে নেমেছে। সেখানে অপরাধ চক্র গড়েই ওঠে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, যাতে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কূটনীতিক পর্যন্ত সবাই জড়িত থাকেন। দেশটির প্রধান সমস্যা হলো, বিদেশী মুদ্রার অভাব। কিন্তু তারা কিছুই বিক্রি করে না, এবং আর্ন্তজাতিকভাবেও অনেকটা একঘরে। তাই তারা মার্কিন ডলার জাল করে, মাদক পাচার করে এবং নগদ অর্থ উপার্জনের জন্য অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
টিপ ও টুল
চুক্তি দেখুন: সংগঠিত অপরাধ গোষ্ঠী সাধারণত মাদকের মতো অবৈধ বাণিজ্য থেকে অর্থ আয় করে। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার-ব্যবস্থায় এই অবৈধ আয় আসে মূলত রাষ্ট্রীয় চুক্তি থেকে। তেল উত্তোলনের এখতিয়ার কার আছে? গাছ কাটার সত্ত্ব কার হাতে? ফোন কোম্পানির মালিকানা কার? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে জানাবে, কারা এই মাফিয়া রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী।
সম্পত্তির দিকে তাকান: পরবর্তী ধাপ হলো সম্পত্তি খুঁজে বের করা। অনুসরণ করুন সম্পত্তিটি কখন কেনা হয়েছে, কোথায় কেনা হয়েছে, এবং কীভাবে কেনা হয়েছে। তারপরই হয়তো আপনি সরকারি চুক্তির সঙ্গে তাদের অর্থের সংযোগ ঘটাতে পারবেন। প্রত্যেকেরই কাছের মানুষের একটি ছোট দল থাকে, যারা তার আশেপাশে থাকে এবং তাদের নামেই এই সম্পত্তিগুলো কেনা হয়ে থাকে। আপনাকে এই সুবিধাভোগী দল খুঁজে বের করতে হবে, তাদের আইনজীবীদের জানতে হবে, জানতে হবে তাদের পরিবারের সদস্যদের, এবং তারপর এই নামগুলোর অধীনে থাকা সম্পত্তি অনুসন্ধান করতে হবে।
সরকারি রেকর্ড দেখুন: সম্পত্তির পথ অনুসরণ করতে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের সরকারি রেকর্ড যাচাই বাছাই করতে হবে: কর্পোরেট রেজিস্ট্রি, ভূমি রেকর্ড, সম্পত্তির রেকর্ড। ফ্রান্সের সম্পত্তির মালিকানার রেকর্ড এখন সহজেই অনলাইনে পাওয়া যায় – সেখানে থাকা নামগুলো দেখলে আমরা চমকে যাই।
ফাঁস হওয়া ডেটা যাচাই করুন: ফাঁস হওয়া অনেক ব্যাংকিং ডেটা আপনাকে পথ দেখাবে – কে, কোথা থেকে অর্থ পায়। আইসিআইজে এবং ওসিসিআরপির মতো জিআইজেএনের সদস্য ও অন্য প্রতিষ্ঠান ফাঁসকৃত তথ্যের ডেটাবেস তৈরি করে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এমনকি ১০ বা ১৫ বছরের পুরনো ডেটাও মূল্যবান কিছু প্রমাণে সহায়ক হতে পারে। পুরনো ডেটাবেসের ভাণ্ডার থেকে হঠাৎ নতুন কিছুর সূত্র পেতে পারেন। এটা স্পষ্ট যে, এমন অনেক ফাঁসকাণ্ড আছে, ডেটা যেখানে রিপোর্টিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থের উৎস অনুসরণে অনেকগুলো ফাঁসকাণ্ডের সম্পর্ক একসূত্রে গাঁথতে যথেষ্ট সময় লাগে। এমনকি এমন সব উপায়ে তথ্য আসে, যা প্রকৃতপক্ষে ফাঁসকৃত নয়, যেমন; হ্যাক, র্যানসমওয়্যার অথবা অনলাইন ওয়েব স্ক্র্যাপিং। রিপোর্টাররা প্রতিদিন শত শত ডেটাবেস স্ক্র্যাপ করছে। মানুষ এখন র্যানসমওয়্যারের উপজাত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য উদঘাটন করছে – কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান মুক্তিপণ না দেয়ায় তাদের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
প্রচলিত রিপোর্টিং কৌশল ব্যবহার করুন: অনুসন্ধানী রিপোর্টিং পরিবর্তন হয়নি। সবকিছু আপনি অনলাইনে করতে পারবেন না। অনেক তরুণ এবং অনভিজ্ঞ রিপোর্টাররা পুরনো রিপোর্টিং কৌশলের সঙ্গে পরিচিত নন। এখনো আপনার সোর্স তৈরি করতে হয়, এখনো সরকারি রেকর্ডের জন্য চড়া মূল্য গুণতে হয়। কিছু রিপোর্টার প্রচলিত ও মৌলিক পদ্ধতি ব্যবহারে ভালো এবং অন্যরা অনলাইন রিপোর্টিংয়ে পারদর্শী। এই দুয়ের সমন্বয় করা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। গত কয়েক বছরে ওপেন-সোর্স গবেষণা বিকশিত হয়েছে। যেমন; এক বান্ধবী ইন্সটাগ্রামে বাইচ-নৌকা ভ্রমণের ছবি দেয়। আর সেখান থেকে তৈরি হয় চমকে যাওয়ার মত অনেকগুলো বড় গল্প।
ডেটাবেস ব্যবহার করুন, নেটওয়ার্কের নকশা করুন: আলেফ একটি বড় রিপোর্টিং টুল এবং ওসিসিআরপি নিজেদের জন্য একটি নকশাও তৈরি করেছে। আমরা আমাদের সব তথ্য এখানে রাখি। আলেফের সঙ্গে লিঙ্কুরিয়াস যুক্ত, যা গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ডেটার ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ম্যাপ তৈরি করে। কার্যকরভাবে এটার একটি সময়রেখাও থাকে, তাই আপনি ঘটনাগুলোর একটি সময়ক্রম তৈরি করতে পারেন। এটা আপনাকে ক্রস রেফারেন্সিং করার সুযোগ করে দিবে, যেন আপনি একটির সঙ্গে অন্য ডেটার তুলনা করতে পারেন। আপনি আইটুর মত টুল ব্যবহার করতে পারেন, তবে টুলটি বেশ ব্যয়বহুল। তাই সাংবাদিকেরা সচরাচর এই টুল ব্যবহার করেন না। অনেকগুলো সামাজিক নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ টুল আছে, যার বেশিরভাগ বিনা খরচে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারে কিছুটা প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন। আলেফ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় এবং আপনি চাইলে লিঙ্কুরিয়াসও ব্যবহার করতে পাারেন।
জোট বেঁধে কাজ করুন: এখন দুর্নীতি ও সংগঠিত অপরাধের স্টোরিগুলো মূলত একেকটি আন্তঃসীমান্ত প্রকল্প। তাই যে কোন সময়ের চেয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ সদস্যের সমন্বয়ে একটি দল তৈরি করা বেশি জরুরি। আপনার প্রয়োজন স্থানীয় রিপোর্টার, সাইবার নিরাপত্তা রিপোর্টার, গবেষক এবং সামাজিক মাধ্যম বিশেষজ্ঞ। ডেটা বিশেষজ্ঞরা ফাঁস হওয়া তথ্য উদঘাটনে পারদর্শী হয়ে থাকেন। ওসিসিআরপির মত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আমরা একে অন্যের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারি। প্রকৃতপক্ষে এভাবে আমরা অল্প সময়ে অনেক স্টোরি তৈরি করতে পারি। আপনার যদি এ ধরনের সদস্যের সমন্বয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে, তবে জিআইজেএনের মত প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে এই সম্পর্ক তৈরি করুন। আমরা স্টোরি নির্মাণে তথ্য ভাগাভাগি ও সহযোগিতার জন্য একটি উইকি ব্যবস্থা ব্যবহার করি। নিজেদের মধ্যে নিরাপদ আলোচনার জন্য ব্যবহার করি সিগনাল। তাই এটা একেবারেই সাদামাটা। এটা করার জন্য আমাদের ভালো টুল প্রয়োজন, কিন্তু সিগনাল, উইকি এবং আলেফের মধ্যে আমরা সবধরনের প্রকল্পে সহযোগিতা করি এবং যে কোন রিপোর্টার সহজেই সেগুলো পেতে পারেন।
নৈতিক হোন: সতর্ক দৃষ্টি রাখুন, যেন আমাদের স্টোরিতে জনস্বার্থ সর্বোচ্চ প্রাধান্য পায়। আমি মনে করি, এটাই মূল কথা। আমরা নিজেদের মধ্যে সবসময় তর্ক করি: সত্যিই কি মানুষ এটা জানতে চায়? আমরা নিশ্চিত করতে চাই – আমরা যা-ই করি না কেন, সেটি যেন কোনো দুর্নীতি উন্মোচন করে, অথবা সরকার বা ব্যবসায় বা সংগঠিত অপরাধ কীভাবে কাজ করছে সেটি প্রকাশ করে, যেন জনগণই তাদের করণীয় সম্পর্কে ভালোমত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।