প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Image: Pexels

রিসোর্স

বিষয়

ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: জেনে নিন কীভাবে পিচ করবেন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

ছবি: পেক্সেলস

একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক কোনো গণমাধ্যমের কাছে একটি সাধারণ রিপোর্ট যেভাবে প্রস্তাব করেন, একই পদ্ধতিতে অনুসন্ধানী রিপোর্টও প্রস্তাব করতে হয়। কিন্তু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বেলায় প্রস্তাব বিক্রি করা একটু কঠিন। কারণ, এ ধরনের ওয়াচডগ সাংবাদিকতায় আগ্রহী হওয়ার মতো গণমাধ্যমের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

অনিশ্চিত ও বিতর্কিত ফল আসতে পারে, এমন অনুসন্ধান পিচ বা প্রস্তাব করার বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জিং। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের দরকার হয়।

সমস্যা আরও আছে। যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনুসন্ধানের বাড়তি খরচ মেটানোও অনেক সময় দায় হয়ে পড়ে। অনুসন্ধানটিতে আপনার ঠিক কতটা সময় ও শ্রম দিতে হবে, তা অনুমান করাও খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে লাভ-খরচের খসড়া হিসাব করতে গেলেও সেটি আন্দাজে ঢিল ছোড়া ছাড়া আর কিছু হয় না।

সবশেষে, এই কাজে ব্যক্তিগত ঝুঁকি থাকে। বিতর্কিত ইস্যুতে কাজ করতে গিয়ে ফ্রিল্যান্সাররা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন; পড়তে পারেন আইনি ও শারীরিক ঝুঁকির মুখে; যা হয়তো সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারণার বাইরে।

এত কিছুর পরেও অনেকেই কাজ করছেন ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে। কারণ, এই কাজে স্বাধীনতা আছে। কোন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করবেন, কোন বিষয় নিয়ে কাজ করবেনসবকিছুই তিনি নিজেই বেছে নিতে পারেন। কেউ কেউ সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কেউ কেউ বাড়তি আয়ের জন্য এর পাশাপাশি আরও নানা কাজ করেন। নিজেদের পরিচিতি ও আয় বাড়িয়ে নেন লেখক, শিক্ষক ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে এই লেখায় জিআইজেএন তুলে ধরেছে: একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে কীভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রস্তাব জমা দেবেন এবং কাজ পাওয়ার পথে মূল বাধাগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবেন।

আমরা এখানে যে বিষয়গুলোতে নজর দিয়েছি:

  • সম্ভাব্য সংবাদমাধ্যম খুঁজে বের করা
  • কার্যকরভাবে প্রতিবেদন পিচ করা
  • চিন্তা ও আইডিয়ার সুরক্ষা
  • বাজেট তৈরি করা

এই গাইডের বাইরে কোভিড-১৯ মহামারির সময় ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ পরামর্শ ও কৌশল শিরোনামে আরেকটি লেখা তৈরি করেছে জিআইজেএন।

সম্ভাব্য সংবাদমাধ্যম খুঁজে বের করা

কোনো সংবাদমাধ্যম একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ওপর তখনই বাজি ধরে, যখন তাদের গভীর বিশ্বাস ও আস্থা থাকে; যে কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দেয়।

শুরু করুনঅনুসন্ধানী নয়, এমন প্রতিবেদন দিয়ে। এটি সম্পর্ক গড়ে তোলার ভালো উপায়। হুট করে একটি সংবেদনশীল প্রতিবেদন নিয়ে গিয়ে সেটি বিক্রির চেষ্টা করা কঠিন হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে সাধারণ পরামর্শ হলো: বিভিন্ন সেমিনার বা সম্মেলনে গিয়ে সমমনা সম্পাদকদের সঙ্গে আলাপ করা।

গবেষণা করে নিন

আপনি যাদের কাছে আপনার প্রতিবেদন প্রস্তাব করতে পারেন, এমন সম্ভাব্য সংবাদমাধ্যমের ওপর গবেষণা করুন। সাধারণত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, শুধু এমন সংবাদমাধ্যমই নয়, বরং আপনার অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে আগ্রহ আছে, এমন প্রতিষ্ঠানেরও খোঁজ করুন।

সম্ভাবনা আছে, এমন মনে হলে এসব বিষয়ে আরও খোঁজখবর করুন:

  • দেখুন, আপনার বিষয়টি নিয়ে আগে কী কী প্রকাশিত হয়েছে।
  • তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানুন।
  • তাদের মিশন সম্পর্কে আরও খুঁটিয়ে দেখুন।
  • শীর্ষ সম্পাদকদের ব্যাপারে খোঁজখবর করুন।
  • খোঁজ নিন, পরিচিত এমন কেউ আছে কি না, যার সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে, এবং যিনি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন।

২০১৯ সালের জিআইজেএন সম্মেলনে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে একাধিক সেশন ছিল। সেই আলোচনা নিয়ে একটি প্রবন্ধে রোয়ান ফিলিপ লিখেছিলেন, “সংবাদ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার প্রতিটি অংশের যথাযথ মূল্য” বের করে আনার জন্য আপনাকে বিষয়টি একাধিক মাধ্যমে বিক্রি করার কথা চিন্তা করতে হবে।

অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রোয়ান লিখেছেন, “বিকশিত হতে গেলে বা এমনকি টিকে থাকতে গেলেও প্রতিটি রিপোর্টিং কর্মকাণ্ড একাধিক জায়গায় বিক্রি করাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে হবে ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের।”

এই সেশনের আলোচকেরা বলেছিলেন, কীভাবে আয় বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সাংবাদিকেরা একই অনুসন্ধানকে প্রিন্ট, ভিজ্যুয়াল ও অডিওসহ নানা রকম ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে উপস্থাপনের কথা চিন্তা করতে পারেন।

এবার প্রস্তাব তৈরি করুন

ছবি: আনড্র

প্রতিবেদন কোন জায়গায় পাঠাবেন, তা ঠিক করে ফেলার পর আপনাকে প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাধারণ পরামর্শগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিক্রির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। প্রতিবেদনের প্রস্তাব হওয়া উচিত যথাযথ, বলিষ্ঠ ও আকর্ষণীয়।

“সম্পাদককে আপনার বোঝাতে হবে যে, কাজটির জন্য আপনিই সঠিক ব্যক্তি। আসলে তাকে বোঝাতে হবে: এই প্রতিবেদন একমাত্র আপনিই করতে পারেন। কারণ, বিষয়টির ইতিহাস, প্রেক্ষাপট, সোর্স, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে। বা আপনার কাছে ফাঁস হওয়া এমন কিছু নথি আছে, যা অন্য কারও কাছে নেই,” বলেছেন কলম্বিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও জিআইজেএন-এর সাবেক সম্পাদক কাতালিনা লোবো গেরেরো

সম্পাদকদের পরামর্শ

২০১৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে এই পরামর্শগুলো দিয়েছিলেন আটলান্টিকের জাতীয় সংবাদ বিভাগের সম্পাদক স্কট স্টোসেল:

  • কিছু প্রি-রিপোর্টিং করুন। আপনার প্রতিবেদনের পিচ বা প্রস্তাবটি যেন সুবিবেচনাপ্রসূত হয়, তা নিশ্চিত করুন।
  • বিস্তারিত বর্ণনা দিন। এখানে কোন কোন চরিত্র সম্পৃক্ত, পরিণাম কী হতে পারে এবং পাঠকের জন্য বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা তুলে ধরুন।
  • আপনার লেখনীর দক্ষতা দেখান। আপনার এই প্রস্তাবটিই যেন একটি গল্প বলে দেয় এবং এখানেই যেন প্রতিবেদনের দৃষ্টিভঙ্গিটি ফুটে ওঠে।
  • কিছুটা নাটকীয় ভাব রাখুন। প্রস্তাবটিতেও সেই নাটকীয়তার কেন্দ্রে চলে যান।
  • সংবাদের গুরুত্ব বুঝুন। সমসাময়িক সংবাদের সঙ্গে এটির সংযোগ যত স্পষ্ট হবে, তত ভালো।
  • সময়োপযোগী করে তুলুন।

কনরাড অ্যাডেনাওয়ার স্টিফটুং-এর গ্লোবাল মিডিয়া প্রোগ্রাম প্রণীত, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ম্যানুয়াল অনুযায়ী, একটি প্রস্তাবের মধ্যে থাকা উচিত:

  • প্রতিবেদনের ধারণা
  • প্রতিবেদনটি কেন এই নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যম বা তাদের পাঠকদের জন্য যথার্থ
  • কাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
  • সময় পরিকল্পনা
  • বাজেট

প্রতিবেদন প্রস্তাব লেখা নিয়ে একটি টিপশিট তৈরি করেছিলেন টাইপ ইনভেস্টিগেশনের (পূর্বের ইনভেস্টিগেটিভ ফান্ড) নির্বাহী সম্পাদক সারাহ ব্লুস্টেইন। সেখানে তিনি জোর দেন প্রস্তাবটিকে “ছোট রাখা”, “সুনির্দিষ্ট হওয়া” এবং “প্রতিবেদনটি সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পাদকদের যা যা প্রয়োজন, তা সরবরাহ করার” দিকে। তিনি সাধারণত চার অনুচ্ছেদের একটি প্রতিবেদন প্রস্তাব তৈরির পরামর্শ দেন, যেখানে এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থাকতে হবে:

  • প্রতিবেদনটি কী নিয়ে।
  • কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন এটি এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনি কী কী খুঁজে পেয়েছেন।
  • কেন একমাত্র আপনারই এই বিষয়টি নিয়ে লেখা উচিত।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি ম্যাগাজিন, মাদার জোনসও তাদের ফ্রিল্যান্স লেখক গাইডলাইনে এই বিষয়গুলোর দিকে জোর দিয়েছে:

“অল্প কয়েকটি অনুচ্ছদের মধ্যে আমাদের বলুন: আপনি কোন বিষয়টি কাভার করার পরিকল্পনা করছেন, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় এবং কীভাবে আপনি এটি রিপোর্ট করবেন। এখানে আপনার কাজের দৃষ্টিভঙ্গি, পদ্ধতি, প্রকাশভঙ্গি ইত্যাদি উঠে আসবে। এবং আপনাকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে: এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য আপনার কী কী নির্দিষ্ট যোগ্যতা আছে? সোর্সের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া কেমন? এই বিষয়ে যদি অন্য আরও অনেক বড় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাহলে আপনারটি কীভাবে সবার চেয়ে আলাদা ও ভালো হবে?”

“আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে দু-এক লাইন ও প্রাসঙ্গিক দু-তিনটি কাজের কথা যোগ করবেন।”

দ্য পিচ: অ্যাট দ্য গার্ডিয়ানস লং রিড, নো রিজিড ফর্মুলা অর জিওগ্রাফিক্যাল লিমিটস – ২০১৮ সালের নিম্যান স্টোরিবোর্ডে প্রকাশিত এই প্রবন্ধ, ঠিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে নয়। কিন্তু এখানে প্রতিবেদনের প্রস্তাব তৈরি নিয়ে অনেক খোলামেলা আলাপ করা হয়েছে। “সম্পাদকের পরামর্শ: আগে কী প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে গবেষণা করুন। নির্ভরযোগ্য, নতুন ও ‘মনোযোগ আটকে রাখার মতো’ কিছু করুন। সাহস করে, একটা দারুণ পিচ পাঠিয়ে দিন।”

অনুদানের কথা মাথায় রেখে লেখা হলেও, এরিক কারস্টেন্সের এই লেখায় (হাও নট টু উইন আ জার্নালিজম গ্র্যান্ট) কোনো বিষয় উপস্থাপন করা নিয়ে ভালো কিছু ধারণা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে এটি জিআইজেএন-এ পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রস্তাব পাঠানো নিয়ে সলিউশন জার্নালিজম নেটওয়ার্কের তিন পর্বের সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ছিল: হোয়াট এডিটরস আর লুকিং ফর ইন সলিউশন পিচেস। এখানে আটটি বিষয় তুলে ধরেছিলেন জুলিয়া হটজ:

১. “পাঠকদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ? ”- এই প্রশ্নের স্পষ্ট, বিস্তারিত ও সময়োপযোগী উত্তর দিতে হবে।

২. ধারণা দিতে হবে, আপনি খুব ভালো স্টোরিটেলার এবং এখানেও বলার মতো একটি গল্প আছে।

৩. পরিসংখ্যানগত বা গুণগত, কী ধরনের প্রমাণাদি আপনার কাছে আছে।

৪. সীমাবদ্ধতাগুলোও তুলে ধরা এবং বিষয়টি নিয়ে আরও কী হতে পারে, সেদিকেও নজর রাখা।

৫. কীভাবে প্রতিবেদনটি শুরু হবে এবং কীভাবে এগিয়ে যাবে, তার একটি ধারণা।

৬. কীভাবে আপনি রিপোর্টিং করবেন এবং কেন আপনি এ কাজের জন্য যোগ্য, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা।

৭. প্রতিবেদনের গুরুত্ব ও সময়োপযোগিতা তুলে ধরে, এমন একটি শিরোনাম।

৮. সংবাদমাধ্যমটি কোন ধরনের বিষয় কাভার করে (এবং কোনগুলো করে না), সে বিষয়ে বোঝাপড়া।

এই ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে ছিল: প্রতিবেদন প্রস্তাব তৈরির শুরুর দিকের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা। এবং শেষ পর্বে দেওয়া হয়েছে কিছু সফল প্রস্তাবের উদাহরণ

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রস্তাব পাঠানোর গাইডলাইনের একটি তালিকা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে সোসাইটি অব প্রফেশনাল জার্নালিস্টস।

অনুসন্ধানী গণমাধ্যমের চাহিদা কিন্তু অনেক

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই কিছু নির্দেশনা দেওয়া থাকেতারা কী খুঁজছে। তার বেশির ভাগটাই নির্দিষ্ট প্রকাশনাকেন্দ্রিক হলেও সেখানে সাধারণ কিছু বার্তাও থাকে।

দ্য সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের অনুসন্ধানী রেডিও শো, রিভিল অনেক তথ্য জানতে চায় এবং কিছু কঠিন প্রশ্ন দিয়ে রাখে।

এটি শুরু হয় সাধারণ সব প্রশ্ন দিয়ে। সাংবাদিককে ৫০০ শব্দের মধ্যে বলতে হবে “প্রতিবেদনটি কী বিষয়ে এবং সেখানে কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”

অন্য প্রশ্নগুলোর মধ্যে থাকে:

  • কাদের ওপর প্রভাব পড়ছে?
  • কী কারণে এটি একটি জাতীয় বিষয়?
  • কেন এটি “রেডিও-র জন্য একটি আকর্ষণীয় গল্প”?

এরপর নয়টি প্রশ্ন দিয়ে আরও গভীরে যান রিভিলের সম্পাদকেরা। এগুলোর মধ্যে আছে:

  • আপনি এরই মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন বা পাওয়ার জন্য কাজ করছেন, এমন পাঁচটি মৌলিক তথ্যের তালিকা।
  • প্রতিবেদনের প্রধান চরিত্র কারা এবং তাদের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে কেমন পরিস্থিতি হতে পারে বলে মনে করছেন।
  • এই বিষয় আগে কে কে কাভার করেছে (লিংক দিন), এবং আপনার প্রতিবেদনটি কীভাবে অন্যদের থেকে আলাদা হবে?

অনিশ্চয়তা থাকবেই

প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত কী অবস্থায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকতে পারে। কিন্তু সেটি যে অসুবিধাজনক কিছু হতে হবে, তা না-ও হতে পারে।

লোবো-গেরেরো বলেছেন: “অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রস্তাবে হয়তো এ রকম বলা যেতে পারে: আমি আশা করছি, আমার হাইপোথিসিস প্রমাণ করতে পারলে আপনি এমন কিছু পাবেন। কিন্তু যদি আমি সেটা না-ও করতে পারি তাহলেও প্রতিবেদনটি ফেলনা হবে না; কারণ…এখানে আপনি ক, খ, গ ধরনের অন্য পরিকল্পনাগুলোর কথা বলবেন। অনেক সম্পাদক বিষয়টিকে ডাকেন সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন প্রতিবেদন হিসেবে।”

বলকান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক (বিআইআরএন) ২০১৫ সালে একটি গাইড তৈরি করেছে, যেখানে প্রতিবেদনের সম্ভাব্যতা যাচাই, হাইপোথিসিসের সংজ্ঞায়ন এবং সর্বোচ্চ/সর্বনিম্ন প্রতিবেদনের ধারণা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা আছে। এটি লেখা হয়েছে ইংরেজিতে।

কোন কোন বিষয় বাদ দেবেন

দারুণ কোনো প্রতিবেদন প্রস্তাব বা বিক্রি করতে যাওয়ার সময় কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্বেরও বিষয়ও থাকে। কীভাবে আপনি সেই আইডিয়া প্রকাশ করবেন এবং একই সময়ে সেটি রক্ষাও করবেন? এ ক্ষেত্রে আপনার প্রস্তাবটি হতে হবে সুনির্দিষ্ট। কিন্তু এত বিস্তারিত হবে না, যেন অন্য কেউ সেটি কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারে।

টাইপ ইনভেস্টিগেশননের ব্লুস্টেইন পরামর্শ দিয়েছেন: “আপনি নিশ্চয়ই সেখানে খুব বেশি তথ্য দেবেন না, আর যা খুঁজে পেয়েছেন বিস্তারিত লিখে দেবেন না। এতে হয়তো সংবাদমাধ্যমটি অন্য কোনো রিপোর্টারকে সেসব তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি করিয়ে ফেলতে পারে।” তিনি বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন সোর্সের তথ্য-পরিচয় না জানাতে।

আপনি চাইলে হয়তো কোনো সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, বা কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন কিংবা একটি গোপনীয়তা চুক্তি (নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট- এনডিএ) করার কথাও জানাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এটির ভাষা হতে হবে খুবই সাধারণ।

এটি হতে পারে এ রকম:

“লেখক খ-এর লিখিত অনুমতি ছাড়া প্রতিবেদন প্রস্তাবে থাকা কোনো বিষয় প্রকাশ না করার ব্যাপারে সম্মত হচ্ছেন প্রকাশক ক।”

ঠিক এই ভাষাই ব্যবহার করেছেন নিউ অরলিনস, লুইজিয়ানার ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার সামান্থা সানি। তিনি টুলস ফর রিপোর্টার নামে একটি নিউজলেটার প্রকাশ করেন।

২০১৮ সালের একটি পোস্টে সামান্থা লিখেছিলেন, “গোপনীয়তা চুক্তির বিষয়টি অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচকও হতে পারে। এটি নির্ভর করবে প্রকল্পের ওপর। আমি সব প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহারের পরামর্শ দেব না। কারণ, আমি একবার আগে কখনো একসঙ্গে কাজ না করা এক সম্পাদকের কাছে এই চুক্তির বিষয়টি তুলেছিলাম এবং তিনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।” সামান্থা জিআইজেএন-কে জানিয়েছেন, তিনি এখন নিজের পরিচিত মানুষজনের সঙ্গে কাজ করেন এবং এ ধরনের কোনো চুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।

কোনো সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের সোর্স ও নথিপত্র উন্মুক্ত করে দেওয়াটাই সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হতে পারে বলে মনে করেন ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা। কিন্তু সেটি যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তথ্যগুলো রক্ষার জন্য একটি গোপনীয়তা চুক্তি করে নেওয়া ভালো।

কেউ কেউ মনে করেন, গোপনীয়তা রক্ষার এই নিশ্চয়তা পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, এটি ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাতে বলা।

অনেক ফ্রিল্যান্সারের জন্যই, বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায় বিশ্বাসের প্রশ্নে। যারা নিয়মিত একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা হয়তো এটি নিয়ে তেমন চিন্তা করবেন না। এবং কিছু প্রতিষ্ঠান লেখক/প্রতিবেদকের তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হয়।

যেমন, গোপনীয়তা নিয়ে এমন অবস্থান নিয়েছে টাইপ ইনভেস্টিগেশন:

“আপনার প্রতিবেদনের ধারণাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সম্পাদকীয় দলের বাইরে এই তথ্য আর কোথাও যাবে না। আমরা এ-ও উপলব্ধি করি যে, আপনার প্রস্তাবে সংবেদনশীল তথ্য থাকতে পারে। আপনি যদি  ইমেইলে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে না চান, তাহলে আমরা আরও সুরক্ষিত কোনো যোগাযোগ পদ্ধতি বেছে নেব।”

খরচের হিসাব করুন

ছবি: আনড্র

ফ্রিল্যান্সিংকে লাভজনক করে তোলার জন্য বাজেট তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

খরচের হিসাব করা থাকলে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে যে, প্রতিবেদনটির জন্য কত অর্থ দাবি করবেন এবং কখন কম অর্থের প্রস্তাব পেলে সেটি ফিরিয়ে দেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার সামান্থা লিখেছেন, “ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাস্তবতায় কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন শনাক্তের চেষ্টা করার পর আমি একটি কাঠামো তৈরি করেছি, যাকে আমি ডাকি ‘টায়ারস/পর্যায়’ বলে।”

প্রতিটি পর্যায়ে, তিনি বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে খোঁজখবর করার জন্য কেমন শ্রম দেবেন, তা ঠিক করে নেন: “কারণটা খুবই পরিষ্কার। প্রতিবেদনটি যদি শেষ পর্যন্ত কোথাও দেওয়াই না যায়, তাহলে আমি সাক্ষাৎকার, উন্মুক্ত নথিপত্র জোগাড়, এমনকি যাতায়াতের খরচসবকিছু একবারে করে ফেলতে চাইব না। আমি যদি কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করি বা অন্তত কোনো সম্পাদকের আগ্রহ না দেখি, তাহলে আমি প্রতিবেদনটিতে হাত দেব না।”

অন্য ফ্রিল্যান্সাররাও একমত হয়েছেন যে: আপনার ব্রেক-ইভেন পয়েন্টের নিচে থাকে এমন প্রজেক্ট নাকচ করে দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সম্ভাব্য খরচের বিষয়ে পরিকল্পনা করে নেওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এতে আপনার নানা অনুমানযোগ্য খরচ (যেমন যাতায়াত) বা অনিশ্চিত খরচের (কোনো নথিপত্র পেতে সরকারকে দেওয়া ফি) বিষয়ে দেনদরবার করতে সুবিধা হবে।

বাজেট তৈরি করতে সহায়তার জন্য বেশ কিছু টেমপ্লেট তৈরি করেছে রোরি পেক ট্রাস্ট

একাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে ফ্রিল্যান্সার জন্য ছয়টি টিপস দিয়েছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইমানুয়েল ফ্রয়েডেনথাল। খরচের হিসাব রাখার জন্য তিনি স্মার্টরিসিটস, ওয়েভঅ্যাপস বা এক্সেলের মতো অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।


টবি ম্যাকিনটশ জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের সিনিয়র পরামর্শক। তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক রিপোর্টার ছিলেন এবং ৩৯ বছর ধরে বুমেরাং বিএনএ-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।  তিনি অলাভজনক ওয়েবসাইট ফ্রিডমইনফো.ওআরজি-র সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। টবি আইঅনগ্লোবালট্রান্সপারেন্সি.নেট নামে একটি ব্লগ চালান।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

প্রতিবেদন প্রকাশ বণ্টন ও প্রচার

সাংবাদিকতায় আস্থা ধরে রাখতে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ কীভাবে কাজ করছে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ। উত্তর মেসিডোনিয়ায় এমন একটি বার্তাকক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের আস্থা অর্জন করেছে। তাঁরাই বার্তাকক্ষে ছুটে যাচ্ছেন সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নিজেরাও।

অনুসন্ধান পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

টিকটকে ভুল তথ্য: ডকুমেন্টেড কীভাবে বিভিন্ন ভাষার শত শত ভিডিও যাচাই করেছে 

শুধুমাত্র সঠিক তথ্যের অভাবে কত অভিবাসীই না প্রতারিত হন। অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ কখনও কখনও টিকটকের তথ্যের ওপর ভর করে ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমায়। কোন অ্যাকাউন্টগুলো এসব অপতথ্য ছড়ায়? কীভাবে পাওয়া যাবে তাদের হদিস? অনুসন্ধান পদ্ধতিই বা কি – জানতে পড়ুন এই প্রতিবেদনটি।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের ২০২৪ সালের সেরা গাইড ও টিপশিট

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সাংবাদিকদের। তথ্য সংগ্রহ, অংশীদারত্বমূলক কাজ, প্রকল্পের অর্থ যোগান , পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা জ্বালানী বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার রসদ পেতে বেশ কিছু গাইড প্রকাশ করেছে জিআইজেএন। দেখুন এই প্রতিবেদন।

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএনের ২০২৪ সালের সেরা অনুসন্ধানী টুল

কৌতূহল, সাহস ও অংশিদারত্ব বছরজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছে। এই সাংবাদিকতাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে দারুন কিছু টুল। একনজরে দেখে নিন চলতি বছরের সাড়া জাগানো অনুসন্ধানে ব্যবহৃত টুল ছিল কোনগুলো।