Illustration: Ann Kiernan
নাগরিক অনুসন্ধান: নৈতিকতা ও সুরক্ষা
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান গাইড: ভূমিকা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: অনুসন্ধান পরিকল্পনা ও পরিচালনা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: নৈতিকতা ও সুরক্ষা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: ইন্টারনেটে খোঁজ
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: ব্যক্তি নিয়ে গবেষণা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: কর্পোরেশনের মালিক কারা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: সরকারি নথিপত্র নিয়ে অনুসন্ধান
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: রাজনীতিবিদদের নিয়ে অনুসন্ধান
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: সম্পত্তির মালিকানার খোঁজ-খবর
নাগরিক অনুসন্ধানকারীদের নৈতিক আচরণ কেমন হবে এবং কীভাবে তাঁরা সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করতে পারেন, তা নিয়ে পরামর্শ আছে এই অধ্যায়ে। দুই বিষয়ের ক্ষেত্রেই, আমরা সাংবাদিকতা জগতের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু তুলে এনেছি। একই সঙ্গে, সাংবাদিক নন– এমন মানুষদের জন্যও এটি প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা করেছি।
নৈতিকতা
নাগরিক সাংবাদিকের জন্য সাংবাদিকতার নৈতিক মূলনীতিগুলো হবে আচরণগত কিছু নিয়মকানুন।
এ ধরনের নৈতিকতার আচরণবিধি প্রায়ই লেখা হয় স্বীকৃত নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে, খুবই বিস্তৃত পরিসরের বিষয়কে ঘিরে। বিতর্কটি ওঠে: নির্দিষ্ট একটি পরিস্থিতিতে সেসবের প্রয়োগ কীভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে। যেমন, কোনো জায়গায় জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও কি পর্যবেক্ষণকারী নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবেন? বা কোনো কিছু ভুলভাবে উপস্থাপন করলে, তা কি কখনো শাস্তির আওতায় আসে?
আন্তর্জাতিক সংগঠন, দ্য ইথিক্যাল জার্নালিজম নেটওয়ার্ক পাঁচটি মূলনীতির কথা উল্লেখ করেছে:
১. সত্যতা ও যথার্থতা
২. স্বাধীনতা
৩. স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা
৪. মানবিকতা
৫. জবাবদিহি
কমবেশি এই বিষয়গুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আরও কয়েক ডজন নৈতিকতার নীতিমালা লেখা হয়েছে, প্রায়ই আরও অনেক বিস্তারিতভাবে। ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান ফেডেরেশন অব জার্নালিস্টস প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতার একটি বৈশ্বিক সনদ। (যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর নৈতিকতার কোডের লম্বা তালিকা দেখুন এখানে।) স্নোক জেন্ডার জাস্টিস ও হেলথ-ই নিউজ ২০১৯ সালে নাগরিক সাংবাদিকতার একটি গাইড প্রকাশ করেছে। যেখানে যুক্ত করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেস কাউন্সিলের নীতিমালা।
নাগরিক অনুসন্ধানকারী ও বেসরকারি সংগঠনের গবেষকরা প্রায়ই পেশাদার সাংবাদিকদের মতোই কাজ করেন। কিন্তু তাদের কাজের ক্ষেত্রে সামনে থাকতে পারে কোনো অ্যাক্টিভিস্ট এজেন্ডা। এবং পেশাদার সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার আবশ্যকতা তারা ততটা অনুভব নাও করতে পারেন।
তবে যথার্থতা ও স্বচ্ছতার মতো মানদণ্ডগুলো শুধু নৈতিক পাল্লাই ভারী করে না, এগুলোর বাস্তবিক অনেক মূল্য আছে। রিপোর্টিং প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকলে পাঠক আপনার কাজের মান আরও ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে পারে। এবং এ ধরনের উঁচু মানদণ্ড থাকলে সেটি আপনার প্রতিবেদনে বিশ্বাসযোগ্যতা যোগ করে, যা যে কোনো স্টোরিটেলারের একটি বড় গুন।
অনেক এনজিও-ও ক্রমশ আরও বেশি করে গভীর গবেষণামূলক কাজ ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছে (কখনো কখনো সাংবাদিকদের নিয়োগ দিয়ে)। কিন্তু তারাও সাধারণত তাদের রিপোর্টিংয়ের জন্য কোনো লিখিত নৈতিকতার নীতিমালা তৈরি করে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের গবেষণা পদ্ধতিতে কিছু মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছে। এইচআরডব্লিউ লিখেছে, সাক্ষাৎকারের কৌশল ভিন্ন রকম হতে পারে, কিন্তু “… মূল কিছু নীতিমালা, যেমন সত্য খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা, বিভিন্ন ভাষ্য ও বক্তব্যের যথার্থতা যাচাই করা, সাক্ষীর সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, এবং নিরপেক্ষ থাকা; ইত্যাদি বিষয় পুরো সংগঠনজুড়েই ধারাবাহিকভাবে চর্চা করা হয়।”
দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নন-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশনের একটি নীতিমালা আছে, যেখানে বলা হয়েছে: “সংগঠন যে তথ্যটি সংবাদমাধ্যম, নীতি-নির্ধারক বা সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করতে যাচ্ছে, তা অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে এবং যথার্থ প্রেক্ষাপটের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হবে।”
নাগরিক অনুসন্ধানকারীরা কি সাংবাদিক বা এমন এনজিও গবেষকদের চেয়ে আলাদা কিছু?
অনেক দিক থেকেই, উত্তরটি হবে: না। নাগরিক অনুসন্ধানকারীদেরও সুনাম ধরে রাখতে হয়। এজন্য তাদেরও কিছু নীতিগত মানদণ্ড মেনে চলতে হয়, ঠিক যেমনটি করতে হয় সাংবাদিক ও পেশাদার গবেষকদের।
এখানে বিবেচনা করার মতো বেশ কয়েকটি বিষয় আছে। একদিকে, নাগরিক অনুসন্ধানকারীরা হয়তো তাদের নিজেদের উদ্যোগেই নানাবিধ কাজ করবেন এবং হয়তো কোনো সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এই অষ্পষ্টতা নিশ্চিতভাবেই সম্ভাব্য সোর্সদের মধ্যে এই সন্দেহ তৈরি করবে যে, কীভাবে এই তথ্য ব্যবহার করা হবে। নাগরিক অনুসন্ধানকারীদের অবশ্যই এসব প্রশ্নের স্পষ্ট ও সৎ জবাব দিতে হবে।
সাংবাদিকেরা সাধারণত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন “অন দ্য রেকর্ড”-এ। যেন তারা সোর্সদের বক্তব্য উদ্ধৃতি আকারে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে নানা মাত্রায় নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়। নাগরিক অনুসন্ধানকারীদের অবশ্য এসব ক্ষেত্রে সোর্সের আস্থা অর্জন করতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। কিন্তু কীভাবে তারা এই তথ্য ব্যবহার করতে যাচ্ছেন, এবং সোর্সকে কেমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন– সে ব্যাপারে পুরোপুরি সৎ থাকা উচিৎ।
তথ্য পাওয়ার জন্য, অনেক সাংবাদিকের মতো, নাগরিক অনুসন্ধানকারীদেরও প্রলোভন তৈরি হতে পারে।
নানা কারণে তথ্য পাওয়ার জন্য টাকা দেওয়াকে সাধারণত সাংবাদিকেরা অনুমোদন দেন না। “চেকবুক সাংবাদিকতা”র কারণে সোর্স হয়তো আপনাকে শুধু সেসব তথ্য বলতেই উৎসাহিত হবে, যেগুলো আপনি শুনতে চান। এ ধরনের সম্পর্কের কারণে আপনি হয়তো আপনার সোর্সকে সেভাবে চ্যালেঞ্জও করবেন না বা ভিন্ন ধরনের তথ্যেরও খোঁজ করবেন না। এ থেকে পাঠক, এবং একই সঙ্গে আইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠবে।
ধোঁকা দিয়ে বা প্রতারণা করে তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। নিজের পরিচয় না দিয়ে বা চুপচাপ কোনো কিছু শোনা বা পর্যবেক্ষণ করা হয়তো কিছু পরিস্থিতির জন্য ঠিক হতে পারে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। মিথ্যা পরিচয় দেওয়া, ছদ্মবেশ ধারণ করা বা গোপনে ছবি-ভিডিও তোলা ইত্যাদি কাজের অনেক ঝুঁকিও থাকে।
নিরাপত্তা
অনুসন্ধান করতে গেলে নানাবিধ হুমকির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকারী হয়ে পড়ে।
অবস্থা খুব চরম আকার ধারণ করলে তৈরি হতে পারে ২০১৮ সালে ভারতের এক গোয়ালার সঙ্গে যেমনটি হয়েছিল, তেমন ঘটনা। তিনি স্থানীয় এক নির্মান প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিলেন তথ্য অধিকার আইনের (আরটিআই) অধীনে আবেদন করে। এজন্য তাকে সশস্ত্র আততায়ীরা খুন করে বলে জানা গেছে একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে।
জিআইজেএনের রিসোর্স সেন্টারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশে আরও কিছু দিক নির্দেশনা পাবেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে। সেখানে অভিজ্ঞ সাংবাদিকেরা তাদের বার্তা দিয়েছেন অন্য সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে।
এখানে থাকছে কিছু দরকারী সোর্স:
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’স সেফটি কিট: সুরক্ষা সংক্রান্ত সিপিজে-র এই চার-পর্বের সুরক্ষা কিটটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। এখানে অনেক দরকারি টুল ও রিসোর্সের সন্ধান আছে সাংবাদিক ও নিউজরুমের মৌলিক সব শারিরীক, ডিজিটাল ও মানসিক সুরক্ষা নিয়ে। এটি পাওয়া যায় ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসী, আরবি, রাশিয়ান, সোমালি, পার্সিয়ান, পর্তুগিজ, চীনা, তুর্কি ও বার্মিজ ভাষায়।
দ্য প্র্যাকটিক্যাল গাইড ফর দ্য সিকিউরিটি অব জার্নালিস্টস তৈরি করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও ইউনেস্কো। ২০১৭ সালে এটি হালনাগাদ করা হয়েছে। এটি পাওয়া যায় ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায়।
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট সেফটি প্রিন্সিপ্যালস: বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একটি জোটের মাধ্যমে এই নির্দেশনাগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে।