

অলংকরণ: জিআইজেএনের জন্য এঁকেছেন মার্সেল লু
ডিজিটাল হুমকি অনুসন্ধান: ট্রোল বাহিনীর প্রচারণা
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
সম্পাদকের নোট: এই পোস্টটি জিআইজেএনের রিপোর্টার্স গাইড টু ইনভেস্টিগেটিং ডিজিটাল থ্রেটস্ থেকে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিসইনফর্মেশন নিয়ে প্রথম, ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়ে দ্বিতীয় এবং ডিজিটাল থ্রেটস নিয়ে তৃতীয় অধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে পুরো গাইডটি প্রকাশ করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চ্যাট রুম, অনলাইন গ্রুপ কিংবা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো ঘাটতে ঘাটতে অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা প্রায়ই এমন কিছু ব্যবহারকারীর দেখা পাই, যারা অন্যদের আবেগকে নাড়া দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা ছড়ায় বা উস্কানি দেয়। এদের ইন্টারনেট ট্রোল বলা হয়।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রায়ই বিতর্কিত কোনো মতামত বা বিরুদ্ধমতকে ট্রোলিং হিসাবে গণ্য করেন। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রোলিং করছে কিনা তা প্রমাণ করাটা কঠিন হতে পারে, তবে বর্তমানে হয়রানিমূলক প্রচারণার অংশ হিসাবে ট্রোলিং কৌশল ব্যবহার করছে এমন ছদ্মবেশি বা বেনামী অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ। এ ধরনের অ্যাকাউন্টগুলো মূলত অপমান ও কটূক্তিসূচক মন্তব্য করে, মিথ্যাতথ্য বা অপতথ্য ছড়ায়, অথবা আপত্তিকর বা অযৌক্তিক মিম দিয়ে প্রকৃত আলোচনাকে বিঘ্নিত করে। তাদের উদ্দেশ্য বিরক্ত করা, ক্ষতি করা এবং একটি নির্দিষ্ট বার্তাকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা। তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জানতে হবে, কীভাবে ট্রোলিং শনাক্ত করতে হয় এবং এগুলো নেহাতই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি হয়রানিমূলক প্রচারণার অংশ।
ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে ট্রোলিং
ট্রোল ও ট্রোলিং প্রচারণাকে চিহ্নিত, বিশ্লেষণ এবং উন্মোচিত করতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে, ট্রোলিং কীভাবে একটি ব্যবসায়িক মডেল হয়ে উঠেছে।
১৯৮০ এর দশকের শেষ ও ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের হাস্যকর আচরণকে সংজ্ঞায়িত করতে এবং নতুনদের উপহাস করতে ট্রোলিং শব্দটি ব্যবহার করা হতো—যা ছিল ইন্টারনেট সংস্কৃতির অংশ। ফোরচ্যান এর মতো ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ইন্টারনেট ফোরামের গোড়ার দিকে, ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জবাবে ট্রোলিং ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত আচরণের অংশ। তাই যখন সোশ্যাল মিডিয়া এলো, তখন কিছু ব্যবহারকারী অনলাইন ট্রোল বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। অনেকের অবশ্য কোনো ধারণা ছিল না, কিন্তু তারা সামাজিক মাধ্যমে প্রথম এই উপসংস্কৃতির স্বাদ পেতে শুরু করেন। ইন্টারনেটের প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ট্রোলিং সামাজিক আচরণের চরম বহিঃপ্রকাশের অংশ হয়ে ওঠে এবং ক্রমশ এর সঙ্গে যুক্ত হয় বুলিং (অপদস্থ করা) ও স্টকিংয়ের (গোপনে কাউকে অনুসরণ) মতো বিষয়গুলো, যা মানসিক বিকারগ্রস্তদের ব্যবহার্য হাতিয়ারে পরিণত হয়।
শেষ পর্যন্ত, সরকার এবং রাজনৈতিক পদধারীরাও ট্রোলিংকে তাদের প্রতিপক্ষ, বিরোধী দল ও গণমাধ্যম দমনের “অস্ত্র” বানিয়ে ফেলে। ২০১৪ সালে ইমেইল ফাঁসের একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে চীন সরকারের গড়ে তোলা ইন্টারনেট ট্রোল বাহিনীর বিষয়টি সামনে আসে। তথাকথিত এই ৫০ সেন্ট আর্মির কমপক্ষে ৫ লাখ সদস্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত লেখার নীচে ভুয়া মন্তব্য করার কাজে নিয়োজিত ছিল। ২০১৭ সাল নাগাদ এ কর্মীবাহিনীর সংখ্যা পৌঁছে ২০ লাখে (২ মিলিয়ন)। বিশাল এ কর্মযজ্ঞের উদ্দেশ্যে ছিল চীনের সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে গুণগান করা এবং শাসনব্যবস্থার বিপক্ষে যায় এমন আলোচনা ও তথ্যগুলোকে নিজেদের মন্তব্যের তোড়ে ভাসিয়ে দেওয়া।
সাইবার যুদ্ধের অংশ হিসেবে নানা রকমের অ্যাস্ট্রোটার্ফিং অপারেশনের ঘটনা (নিজের প্রচার ও ভিন্নমত নিয়ে অপপ্রচার) উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে, বিষয়টি নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে শুরু করে। ২০১৬ সালে লাটভিয়াকে রাশিয়ার তরফ থেকে এক ধরনের হাইব্রিড যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সেখানে অনলাইন ট্রোলিং ব্যবহার করা হয়েছিল। লাভিয়ার এ ঘটনা সম্পর্কে ন্যাটোর একটি প্রতিবেদনে বিশ্লেষকেরা ক্লাসিক ট্রোল (এক বা একাধিক মানুষ দ্বারা পরিচালিত) এবং হাইব্রিড ট্রোলের (আংশিকভাবে স্বয়ংক্রিয় এবং আংশিক মানুষের দ্বারা পরিচালিত) মধ্যকার পার্থক্যগুলো তুলে ধরেছেন।
২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের সময় বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাশিয়ার ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি (আইআরএ) ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে হিলারি ক্লিনটন ও তার সমর্থকদের ট্রোল করার মাধ্যমে আক্রমণাত্মক প্রচারণা চালিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে নির্বাচনকে লক্ষ্য করে আইআরএ কীভাবে ক্রেমলিনের নির্বাচনী হস্তক্ষেপের প্লেবুকের একটি অংশ হয়ে উঠেছে, গবেষকেরা তা-ও নথিভুক্ত করেছেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটররা আইআরএর বিরুদ্ধে ট্রোলিং ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনে। অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও শিকড় গেড়েছে ট্রোলিং। ফিলিপাইনে, নির্বাচনী প্রচারকার্যের সময় প্রচারণা ও বিরোধীদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে ট্রোল ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ বিপণন এজেন্সিকে নিয়োগ দেওয়া এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ট্রোলিং এখন বিবর্তিত হয়ে ইনফর্মেশন অপারেশন (তথ্য যুদ্ধ) ও সামরিক কৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ছোট দেশগুলোর পাশাপাশি এশিয়ার কিছু অংশে ট্রোল ফার্ম ও ট্রোল সৃষ্টি কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন মাত্রা অনুসারে ভুয়া তথ্য তৈরিতে সক্ষম। লাতিন আমেরিকায় অনুরূপ একটি মডেল বিদ্যমান, যেখানে ডিজিটাল সংস্থাগুলো নির্বাচনী উদ্দেশ্যে ট্রোল তৈরির কেন্দ্র গড়ে তোলে, যেমনটা মেক্সিকোর সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখা যায়। বর্তমানে পেশাদার ট্রোলিং একটি বৈশ্বিক ব্যবসা।
ট্রোল যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে
সব ট্রোল একরকম নয়, তবে কিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও কৌশল রয়েছে, যা তারা প্রয়োগ করে। সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে:
১. সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া: ট্রোলকারীরা তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগায়। এক্ষেত্রে তারা প্রায়ই একাধিক অ্যাকাউন্ট তৈরি অথবা স্বয়ংক্রিয় বট তৈরির মাধ্যমে কন্টেন্টগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। লাইক, শেয়ার ও কমেন্টের মাধ্যমে নিজেদের বার্তা ও কন্টেন্টকে আরও দৃশ্যমান করার পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদমকে প্রভাবিত করে ব্যাপকসংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে পারে।
২. হ্যাশট্যাগ হাইজ্যাকিং: ট্রোলকারীরা ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগগুলোকে কাজে লাগায় কিংবা নিজস্ব হ্যাশট্যাগ তৈরির মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ায় বা টার্গেট করা ব্যক্তিদের হয়রানি করে। এভাবে তারা চলতি আলোচনার মধ্যে তাদের বার্তাগুলো ছড়িয়ে দিতে এবং অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
৩.আবেগীয় বিভ্রান্তি সৃষ্টি: ব্যবহারকারীদের অনুভূতিকে উসকে দেওয়ার মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য ট্রোলেরা প্রায়ই আবেগপ্রবণ ভাষা ও উত্তেজক কন্টেন্ট ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে তথাকথিত রেইজ ফার্মিং (ক্রোধ বা রাগ ছড়ানো) বিষয়টি ভীষণ প্রচলিত।
৪. অ্যাস্ট্রোটার্ফিং: ট্রোলকারীরা ব্যাপকসংখ্যক ভুয়া অ্যাকাউন্ট সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বিষয়, মতবাদ বা ঘটনার পক্ষে তৃণমূলের সমর্থনের মিথ্যা আবহ তৈরি করে। এই কৌশল তাদের অপতথ্যের প্রচারণাকে (ডিজইনফর্মেশন ক্যাম্পেইন) আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে এবং তাদের পক্ষে অনেক বেশি জনসমর্থনের আবহ তৈরি করতে পারে।
৫. প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা: ট্রোলকারীরা অনেক সময় রাজনীতিবিদ, খ্যাতনামা কিংবা হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের টার্গেট করে এবং সেই ব্যক্তিদের ফলোয়ার-সংখ্যাকে পুঁজি করে আরো বেশি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়।
৬. মিম তৈরি ও ছড়িয়ে দেওয়া: ট্রোলকারীরা বিকৃত তথ্য বা আপত্তিকর বিষয়বস্তু ছড়িয়ে দিতে রসাত্নক বা উত্তেজক মিম ব্যবহার করে। মিম দ্রুত ভাইরাল হয়, ব্যাপকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছায়।
৭. ডিপফেক ও বিকৃত ছবি-ভিডিও: ডিপফেক হচ্ছে ভিডিও কিংবা ছবিতে ব্যক্তির চেহারা বদলে দেওয়া। ট্রোলকারীরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাল ভিডিও, ছবি বা অডিও রেকর্ডিং তৈরির মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানো, ব্যক্তির সুনামহানীসহ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ইন্ধন যোগাতে পারে।
৮. বিদ্যমান বিভাজনগুলোকে বাড়িয়ে দেওয়া: ট্রোলেরা প্রায়শই সামাজিক বিভাজন যেমন রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পার্থক্যকে পুঁজি করার মাধ্যমে বিরোধকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইন আলোচনায় মেরুকরণ বা বিভাজন তৈরি করে।
ট্রোল ও হয়রানিমূলক প্রচারণা
ট্রোল কারখানাগুলো কীভাবে কাজ করে ও হয়রানিমূলক প্রচারণার সময় কী ধরনের আচরণ করে তা বোঝার জন্য, তাদের কার্যপ্রণালী ও পদ্ধতিগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
ট্রোল ফ্যাক্টরিগুলো তাদের বিষয়বস্তুকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রথমে ভুয়া সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট তৈরি করে। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ও সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বিষয়বস্তুকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরে। এগুলো কাজ করে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির মতোই। তারা বার্তা ও আধেয় (কন্টেন্ট) তৈরি করে এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন চ্যানেলে কৌশলগতভাবে লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণ করে।
হয়রানিমূলক প্রচারণার অংশ হিসাবে তাদের কর্মকাণ্ড বোঝার দুটি উপায় রয়েছে: প্রথমত, একটি অ্যামপ্লিফিকেশন (বিস্তার বা প্রসারণ) ইকোসিস্টেমের (আন্তঃসংযুক্ত প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াগুলোর নেটওয়ার্ক— যা তথ্য, আধেয় বা বার্তা ছড়াতে একসঙ্গে কাজ করে) অংশ হিসাবে ভূমিকা। দ্বিতীয়ত, আক্রমণ পরিচালনায় ভূমিকা।
অ্যামপ্লিফিকেশন ইকোসিস্টেম
অ্যামপ্লিফিকেশন ইকোসিস্টেম মূলত ব্যক্তি, অ্যাকাউন্ট, চ্যানেল, পেজ কিংবা অনলাইন স্পেসের সমন্বয়ে তৈরি, যার মাধ্যমে কোনো বার্তাকে যে কোনও কৌশলের অংশ হিসেবে প্রচার ও প্রসারিত করা হয়। নিচের চিত্রটিতে অ্যামপ্লিফিকেশন ইকোসিস্টেমের উপকরণ এবং কীভাবে জনমতকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করা হয় তার কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে। প্রতিটি কৌশলের জন্য বিস্তৃতির এই কাঠামো আলাদা হতে পারে।

একটি ট্রোলিং প্রচারণার অ্যামপ্লিফিকেশন ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন উপাদান। ছবি: লুই আসার্দোর সৌজন্যে
আক্রমণ অভিযান
সোস্যাল মিডিয়াতে কোনো বিষয় বা ঘটনা ভাইরালের লক্ষ্যে মৌলিক কার্যপ্রণালীগুলোকে তুলে ধরে নিচের ফ্লোচার্টটি।
১. কন্টেন্ট ঠিক করা: আমরা প্রথমে দেখছি বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্টধারী দলের (হলুদ রঙ) ট্রোলিং পোস্ট (বানোয়াট, মিথ্যা, জাল ইত্যাদি)। এ অ্যাকাউন্টগুলোর অন্য কোনও কাজ নেই; তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কন্টেন্ট পোস্ট করা যা পরবর্তীতে বৃহত্তর সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পাঠানো হবে।
২. এরপর কন্টেন্টগুলো নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের (যাদের বেশিরভাগ সমর্থক বা উগ্রপন্থী ব্যবহারকারী) মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করবে লাল দল (ট্রোলকারী ও পাবলিক ফিগার)। লাল দলের কাজ হচ্ছে প্রতিপক্ষকে উস্কে দেয়া এবং কন্টেন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সমর্থকদের আর্কষণ করা। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম (টুইটার বা মেটা) যদি তাদের কন্টেন্টের বিপরীতে রিপোর্ট পায়, তাহলে লাল দল সাসপেনশন এড়াতে সমর্থ হবে কারণ তারা অন্য অ্যাকাউন্টের পোস্টগুলো “শুধু” শেয়ার করেছে। যাই ঘটুক না কেন, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র হলুদ অ্যাকাউন্টগুলো সাসপেনশনের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আর এভাবেই ট্রোলকারীরা অ্যাকাউন্ট হারানোর ঝুঁকি এড়ায়।
৩. যে কোনোভাবে বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক কন্টেন্টগুলো যদি একবার সবুজ রঙের অ্যাকাউন্টগুলোর কাছে পৌঁছে যায় তবে তা অর্গানিকভাবেই ছড়িয়ে পড়বে এবং ব্যাপকসংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যাবে। এটি ঘটার পর, হলুদ দলের অ্যাকাউন্টের আরেকটি সেট ( অথবা ওই অ্যাকাউন্টগুলো যদি স্থগিত না হয়, তাহলে একই অ্যাকাউন্টগুলো) সবুজ অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ওই পোস্টগুলোকে আবার ছড়িয়ে দিবে।

একটি ট্রোলিং প্রচারণার রোলআউট কৌশলের ফ্লো চার্ট। ছবি: লুই আসার্দোর সৌজন্যে
অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা যেভাবে ট্রোল সনাক্ত এবং বিশ্লেষণ করতে পারেন
ট্রোল নিয়ে অনুসন্ধানের দুটি প্রধান ধাপ রয়েছে: সনাক্তকরণ এবং বিশ্লেষণ।
সনাক্তকরণ
সনাক্তকরণ পর্যায়ে, সন্দেহজনক আচরণ বা আধেয়গুলোকে নিরীক্ষণ এবং সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন সমন্বিত (কোঅর্ডিনেটেড) পোস্টিং, বারবার একই বার্তা প্রচার, অথবা নেতিবাচক মন্তব্য বা ইন্টারঅ্যাকশনের (লাইক, শেয়ার, ইত্যাদি) আকস্মিক বৃদ্ধি। কাজটি করার জন্য আমাদের সোস্যাল লিসেনিং ও সোস্যাল মনিটরিং টুল প্রয়োজন। এগুলো আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, অনলাইন ফোরাম এবং অন্যান্য ডিজিটাল স্পেসগুলোকে অনুসরণের সুযোগ করে দেয়, যেখানে ট্রোলকারীরা সক্রিয় থাকতে পারে। এছাড়াও আক্রমণের শিকার হতে পারে এমন যেকোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য একটি নিরাপদ চ্যানেল তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ঘিরে আক্রমণ, ডক্সিং (অনলাইন হয়রানির আরেকটি ধরন: ভিকটিমের অনুমতি ছাড়াই তার ছবি ও পরিচয় প্রকাশ) কিংবা প্রদত্ত হুমকিগুলো চিহ্নিতের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রচারণার ধরনগুলো আগাম আঁচ করা সম্ভব।
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষণ পর্বের ধাপে, কন্টেন্টগুলো সমন্বিত প্রচারণার অংশ কিনা তা যাচাই করতে সাংবাদিকদের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের আধেয়, সময় ও উৎসগুলো পরীক্ষা করা উচিত। এদের মধ্যে রয়েছে, বার্তাগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে কিনা তা অন্বেষণ, সংশ্লিষ্ট প্রোফাইলগুলোকে বিশ্লেষণ (অ্যাকাউন্ট তৈরির তারিখ, পোস্টিং প্যাটার্ন এবং ইন্টারঅ্যাকশন বা হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে অন্যান্য পরিচিত ট্রোল অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যকার সংযোগসহ) এবং সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ওপর প্রচারণার সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন।
বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটের মাধ্যমে কীভাবে একটি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় তার একটি চমৎকার উদাহরণ রয়েছে এখানে। টুইটগুলোতে দেখা যাচ্ছে, সদ্য সৃষ্ট বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে সুনির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগসহ কিছু পোস্টকে দ্রুত (চব্বিশ ঘন্টারও কম সময়ের ব্যবধানে) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিটুইট করা হয়েছে। এটি ২০০টির বেশি অ্যাকাউন্টের একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের অংশ ছিল, যারা একই কাজ করেছে। টুইটার আর্কাইভার, টুইট আর্কাইভিস্ট বা অন্যান্য সুনির্দিষ্ট টুল ব্যবহার করে টুইট ডাউনলোডের মাধ্যমে আমরা একই সময়, দিন ও ঘন্টায় তৈরি করা অ্যাকাউন্টগুলোকে চিহ্নিত করতে পারি। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই ধরনের বার্তা বারবার শেয়ার করা এবং গতিবিধির তীব্রতর হওয়া নিরুপণ করতে পারি।

একগুচ্ছ টুইটার অ্যাকাউন্ট কীভাবে ট্রোলিং প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে স্প্রেডশিটের মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ ছবি: লুই আসার্দোর সৌজন্যে
এটি এমন একটি রূপরেখা যার মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ট্রোল অ্যাকাউন্টগুলো সনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে পারেন।
১. সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণ। দেখুন সন্দেহজনক গতিবিধি বা অনলাইন আলোচনার নির্দিষ্ট ধরন কিংবা বিষয়বস্তুর আকস্মিক পরিবর্তন চোখে পড়ে কিনা।
২. সোস্যাল লিসেনিং টুল। ট্রোলিং বা হয়রানিমূলক প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে এমন নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড, হ্যাশট্যাগ বা বাক্যাংশগুলো চিহ্নিত করতে ব্র্যান্ডওয়াচ, মেল্টওয়াটার, ব্র্যান্ড২৪, টকওয়াকার ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
৩. নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস টুল। বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মধ্যকার সংযোগ সম্পর্কে ধারণা পেতে এবং সম্ভাব্য সমন্বয় সনাক্তের লক্ষ্যে ব্যবহার করুন গ্রাফেক্সট, গ্রাফিস্ট্রি, গেফি বা নোডএক্সএল।
৪. বার্তার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ। বার্তার মধ্যে প্যাটার্ন, সংযোগ, কিংবা ভুল তথ্যের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করুন।
৫. সম্ভাব্য ট্রোল প্রোফাইল অনুসন্ধান। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট তৈরির তারিখ, পোস্টিং প্যাটার্ন, এবং পরিচিত ট্রোল অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে সংযোগ আছে কিনা তা যাচাই করুন।
৬. জোট বাঁধুন। প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই এবং এ সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত ধারণার জন্য অন্যান্য সাংবাদিক, অপতথ্য নিয়ে কাজ করা গবেষক কিংবা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিন।
৭. তথ্য নথিভুক্ত ও সংরক্ষণ। এজন্য স্ক্রিনশট নিন এবং ওয়েব্যাক মেশিনের মতো পাবলিক আর্কাইভ ব্যবহার করুন৷
৮. রিপোর্ট করুন। ভুয়া প্রচারণার চিহ্নিত করতে সক্ষম হলে সেগুলো রিপোর্ট করার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি ও প্রভাব প্রশমনে কাজ করুন।
আরো কিছু টুল রয়েছে যা ট্রোলিং প্রচারণা সনাক্তকরণ, বিশ্লেষণ এবং চিত্রায়ণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সোস্যাল লিসেনিং টুল: মেনশন।
- নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ টুল: ইউসিনেট (শুধুমাত্র উইন্ডোজে)।
- ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল: ট্যাবলিউ , ডি৩.জেএস বা গুগল ডেটা স্টুডিও।
- ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স (ওএসআইটি) টুল: মালটিগো , টুইটডেক , কিংবা গুগল অ্যাডভান্স সার্চ।
- ফ্যাক্ট-চেকিং রেফারেন্স: স্নোপস, ফ্যাক্টচেক.অর্গ, বা ফুল ফ্যাক্ট।
- সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের পরিষেবার শর্তাবলী, নিয়মাবলী এবং নীতি (টুইটার, ফেসবুক, টিকটক ইত্যাদি) পড়ুন৷
- আপনার তথ্য এবং যোগাযোগ সুরক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা টুল এবং আপনার প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর সুরক্ষায় এনক্রিপশন ব্যবহার করুন।
ট্রোলিংয়ের ক্ষেত্রে সত্যিকার নাম বা পরিচয় ব্যবহার করা হয় কিংবা যারা ভুয়া বা ছদ্মনামের অ্যাকাউন্টও ব্যবহার করা হয়, যেমনটা এই টেবিলে দেখানো হয়েছে:
অ্যাকাউন্টের ধরন | চিহ্নিত (আসল নাম) | বেনামী/ছদ্মনাম |
প্রকৃত | সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত প্রকৃত ব্যক্তি | প্রকৃত ব্যক্তি অ-পরিচিত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার |
ভুয়া | বিভিন্ন সেবা বা বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা হয় এমন চিহ্নিত বট, ছদ্মবেশি ও প্যারোডি অ্যাকাউন্ট। | বিভ্রান্তি ছড়ানো বা হয়রানির উদ্দেশ্যে ব্যবহারিত বট, সক পাপেট অ্যাকাউন্ট এবং প্যারোডি অ্যাকাউন্ট। |
ট্রোলের মুখোশ খোলা: অনুসন্ধানের ফলাফল প্রকাশের উত্তম চর্চা
ট্রোলিং সংক্রান্ত যেকোন প্রতিবেদনে চারটি মৌলিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত: পদ্ধতি, ব্যবহৃত কন্টেন্টের ধরন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত (যদি প্রমাণিত হয়), এবং আরোপিত (যদি প্রমাণিত হয়)।
প্রথমত, হয়রানি বা ট্রোলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট এবং ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য দেয়া গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে ট্রোলিংয়ের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ব্যক্তি ও সম্প্রদায়, প্রকৃত ঘটনার ব্যাখ্যা ও প্রচারণার পেছনের উদ্দেশ্য এবং এর সঙ্গে বৃহত্তর সামাজিক বা রাজনৈতিক সমস্যার কোনও সম্ভাব্য সংযোগ আছে কিনা তা ব্যাখ্যা করা। এ ধরনের তথ্যগুলো মূলত পাঠকদের প্রচারণার তাৎপর্য এবং সম্ভাব্য পরিণতি বুঝতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে অহেতুক চাঞ্চল্য তৈরির বিষয়টি এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কাজটি করতে গিয়ে আপনি যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এবং টুলগুলো ব্যবহার করেছেন তা অন্তর্ভুক্ত করুন। সুস্পষ্ট ও উদ্দেশ্যমূলক সুর বজায় রেখে গবেষণায় ব্যবহৃত টুল, কৌশল এবং ডেটা সোর্সগুলো ব্যাখ্যা করুন। একটি স্বচ্ছ বিশ্লেষণ আপনার প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে এবং জনসাধারণের বোঝার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করে।
এছাড়াও আপনার রিপোর্টিংয়ের নৈতিক প্রভাব বিবেচনা করুন। আপত্তিকর বিষয়বস্তুকে পুনরায় ছড়িয়ে দেয়া বা হয়রানিকারীদের বার্তা বা কৌশলকে সম্প্রসারিত না করার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কেননা এটি তাদের লক্ষ্য হতে পারে। ট্রোলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের সম্মতি ছাড়া তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বা সংবেদনশীল ছবি শেয়ার না করে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখুন।
হয়রানিমূলক প্রচার অভিযান ও ট্রোলিং সম্পর্কিত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এমন কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো-
- ক্যাম্পেইনের প্রেক্ষাপট ও ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য।
- লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ব্যক্তি বা সম্প্রদায়।
- হয়রানিকারী বা ট্রোলকারীদের প্রণোদনা ও উদ্দেশ্য।
- সমন্বিত বা সংগঠিত প্রচেষ্টার তথ্য-প্রমাণ।
- সনাক্তকরণ এবং বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি ও টুলস।
- পরিমাণগত ও গুণগত ডেটা, যেমন বার্তার পরিমাণ বা হয়রানির তীব্রতা।
- লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের ওপর সম্ভাব্য পরিণতি ও প্রভাব।
- প্রাসঙ্গিক বৃহত্তর সামাজিক বা রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে সংযোগ
- সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পক্ষগুলোর তরফ থেকে সমস্যাটি সমাধানের জন্য নেওয়া কোনো পদক্ষেপ।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার সময় যে সব বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলা উচিত।
- ট্রোলিংয়ের প্রভাবকে অতিরঞ্জিত করা বা চাঞ্চল্যকরভাবে উপস্থাপন।
- পরিচ্ছন্ন সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য বহির্ভূত আপত্তিকর বা ক্ষতিকর কন্টেন্ট তৈরি।
- ট্রোল বা হয়রানিকারীদের লক্ষ্য বা বার্তাগুলোতে অযথা মনোযোগ দেওয়া।
- সম্মতি ছাড়াই সংবেদনশীল তথ্য বা ছবি শেয়ার করে হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের গোপনীয়তা বা নিরাপত্তা লঙ্ঘন করা।
- পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়াই হয়রানিকারী বা ট্রোলকারীদের পরিচয় বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুমান করা।
কেস স্টাডি
আমরা জানি তাদের উৎস কোথায়, তাদের কৌশল কী এবং তাদের টোপগুলো কেমন। কিন্তু একটি ট্রোলিং প্রচারণা আসলে দেখতে কেমন? এই উদাহরণগুলো, প্রচুর টাকা খরচ করে পরিচালিত প্রচারণাগুলো সম্পর্কে জানাবে, যেখানে প্রচুর পরিমাণে কন্টেন্ট এবং হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট থাকে— যার বেশিরভাগই জাল বা ভুয়া।
সৌদি ইমেজ মেকার: একটি ট্রোল আর্মি এবং একটি টুইটার ইনসাইডার— নিউ ইয়র্ক টাইমস
জামাল খাশোজি ছিলেন একজন সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক, যিনি ২০১৮ সালে খুন হন। এর আগে, সৌদি আরবের অন্যান্য সমালোচকদের মতো তারও কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা করা হয় এবং তাকেও গুরুতর ট্রোল প্রচারণার মোকাবিলা করতে হয়। তারা একটি রাষ্ট্র-সমর্থিত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং প্রচারণা চালায়। ট্রোল প্রচারণা অনুসরণ এবং প্রথাগত সাংবাদিকতা ও সোর্সের মাধ্যমে কীভাবে বড় ধরনের অপপ্রচার কার্যক্রম, তার কৌশল ও নেপথ্যের কুশীলবদের তুলে ধরা যায়— এটি তার একটি যথাযথ উদাহরণ।
মারিয়া রেসা: অনলাইন ভায়োলেন্সের আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছেন— ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্ট (আইসিএফজে)
২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক ও র্যাপলার সিইও, মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে একটি ট্রোলিং প্রচারণার অংশ হিসাবে পাঁচ বছর ধরে প্রকাশিত ৪ লাখের বেশি টুইট এবং ৫৭ হাজার পাবলিক ফেসবুক পোস্ট ও মন্তব্য বিশ্লেষণ করেছে আইসিএফজে। তথ্য সংগ্রহ এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল ব্যবহার করার মাধ্যমে রিপোর্টিং দলটি বুঝতে পারে যে আক্রমণকারীরা কীভাবে কাজ করেছে এবং কী পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও লেখকদের সনাক্ত করেছে। এক্ষেত্রে, মূল বিষয় ছিল তাদের আচরণ উন্মোচন করা। ট্রোলদের সহিংস হওয়ার মাত্রা তুলে ধরে যে, হামলার নেপথ্যে কাদের হাত ছিল।
রানা আইয়ুব: ইসলামোফোবিয়া ও নারীবিদ্বেষের কবলে পড়ে অনলাইন সহিংসতার শিকার— আইসিএফজে
রানা আইয়ুব পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানী রিপোর্টার এবং ওয়াশিংটন পোস্টের একজন কলামিস্ট। ভারতে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তার মন্তব্য ট্রোলিংয়ের শিকার হয়, যেখানে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি লিঙ্গসম্পর্কিত আক্রমণ এবং নারীবিদ্বেষী হুমকিগুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কয়েক বছর ধরে গবেষণার পর গবেষকেরা আক্রমণের একটি টাইমলাইন তৈরি এবং প্রায় ১৩ মিলিয়ন টুইট এবং কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করেন।
ট্রাম্প সমর্থক থেকে শুরু করে মানবাধিকার অ্যাটর্নি পর্যন্ত যেসব ডিজিটাল প্রভাবশালীরা একজন সাংবাদিককে হয়রানি করেছিল— ফরবিডেন স্টোরিজ
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, স্টোরি কিলার নামে একটি বিশদ অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফরবিডেন স্টোরিজ। এটি এমন এক ঘটনাকে উন্মোচিত করে যার মধ্যে আল জাজিরার জন্য কাজ করা প্রবীণ সাংবাদিক গাদা উয়িসের বিরুদ্ধে করা ট্রোলিং অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঘটনাটি যেসব সাংবাদিক অনুসন্ধান করেছেন, তারা হয়রানিমূলক প্রচারণার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি প্রোফাইল এবং সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগসূত্র অনুসরণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন
ডিজিটাল হুমকি অনুসন্ধান: ডিজিটাল নজরদারি
ডিজিটাল ঝুঁকি অনুসন্ধান: ডিসইনফর্মেশন
ডিজিটাল ঝুঁকি অনুসন্ধান: ডিজিটাল অবকাঠামো
লুই আসার্দো একজন ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষক, ওপেন সোর্স গবেষক, তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং কনফিরমাডোর প্রতিষ্ঠাতা, গুয়াতেমালাভিত্তিক তার এ প্রজেক্টটি অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত। তিনি ট্রোল ফ্যাক্টরি, ডিজইনফরমেশন, মৌলবাদ, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং প্রভাব সম্পর্কে তদন্ত ও গবেষণার জন্য পুরস্কার জিতেছেন। বার্লিনে বসবাসরত লুইস রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ), হলিস্টিক প্রোটেকশন কালেক্টিভ (এইচপিসি) এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন।