Image: Shutterstock
জিআইজেএন বুকশেল্ফ: ২০২২ সালে আপনার পাঠ্যতালিকায় রাখার মতো অনুসন্ধানী বই
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
২০২২ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই বাজারে এসেছে। ছদ্মবেশে দুর্নীতি উন্মোচন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক অভিবাসনের গোপন জগত অনুসন্ধান, কোভিড-১৯ মহামারিকে ঘিরে ফাঁকফোকরে ভরা ক্রয়চুক্তি খতিয়ে দেখা, কিংবা নোবেলজয়ী মারিয়া রেসার বই – সবকিছু মিলে লংফর্ম ওয়াচডগ সাংবাদিকতা টিকে আছে এবং ভালোমতই।
এ বছরের গোড়ার দিকে যেসব বই বেরিয়েছিল আমরা আমাদের লেখায় এরইমধ্যে তাদের বেশ কয়েকটিকে তুলে ধরেছি; আর এই তালিকায় ২০২২ সালে প্রকাশিত একেবারে সাম্প্রতিক কিছু বই জড়ো করেছি।
জিআইজেএনের বৈশ্বিক দলের সুপারিশে তৈরি করা এই তালিকার পরিসর বিভিন্ন মহাদেশ-জোড়া এবং বিস্তৃত বিষয়াবলীর ঘেরা৷ এদের মধ্যে কিছু বই লিখেছেন পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা; কিছু আবার সাংবাদিকদের নিয়ে লেখা। একটি বইয়ে উঠে এসেছে মেক্সিকোর সাংবাদিক রেজিনা মার্টিনেজের মর্মান্তিক মৃত্যুর বর্ণনা।
ইন দ্য মাউথ অব দ্য উল্ফ: আ মার্ডার, আ কাভার-আপ, অ্যান্ড দ্য ট্রু কস্ট অব সাইলেন্সিং দ্য প্রেস
লিখেছেন ক্যাথরিন কর্কোরান
২০১২ সালে মেক্সিকান অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রেজিনা মার্টিনেজকে তাঁর বাথরুমের মেঝেতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। সেসময় তিনি দুর্নীতি ও মাদক চক্র নিয়ে রিপোর্ট করে সাড়া ফেলেছিলেন। সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক বলে পরিচিত একটি দেশে পরিস্থিতি যে কতটা খারাপ হতে পারে, এই মৃত্যু সেকথাই মনে করিয়ে দেয়। মার্টিনেজের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিল এবং এই মৃত্যু মেক্সিকোর বৃহত্তর নাগরিক সমাজের জন্য কী অর্থ বহন করে – এই বইয়ে ঠিক সেটিই অনুসন্ধান করেছেন অ্যাসোসিয়েট প্রেসের মেক্সিকো ব্যুরো প্রধান ক্যাথরিন কর্কোরান। সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণতন্ত্রে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেই প্রশ্নকে ঘিরে তিনি শুরু করেছেন। মেক্সিকোর মুক্ত গণমাধ্যমের শোচনীয় পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলকে সমান্তরালে রেখে তিনি লিখেছেন: “যে সমাজ সত্যহীন, সেখানে বসবাস ভয়ঙ্কর।” বইটি সম্পর্কে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন বলেছে, এটি “মেক্সিকোতে নির্ভীক সাংবাদিকতার একটি চমৎকার বর্ণনা এবং মেক্সিকো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনা এক কলঙ্কজনক অভিযোগনামা”। অন্যদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউতে বলা হয়েছে, “একটি দেশের শাসরুদ্ধকর ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা… যেখানে কেউ জানে না, কী বিশ্বাস করা যায় বা কার ওপর আস্থা রাখা যায়।”
মানি মেন: আ হট স্টার্টআপ, আ বিলিয়ন-ডলার ফ্রড, আ ফাইট ফর দ্য ট্রুথ
লিখেছেন ড্যান ম্যাকক্রাম
প্রভাব মানেই যেন ফাইনান্সিয়াল টাইমসের ড্যান ম্যাকক্রাম। তাঁঁর ধারাবাহিকটি জার্মানির অন্যতম বিখ্যাত – ও প্রতারণাপূর্ণ – আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান অয়্যারকার্ডের পতনে ভূমিকা রেখেছিল, যা দেশটিতে “টেক ডার্লিং” বা বিনিয়োগকারীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্যাপারটি সহজ ছিল না: ম্যাকক্রাম আইনি হুমকি, নজরদারি ও সাইবার হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। শনাক্ত হওয়া এড়াতে তিনি বার্নার ফোন এবং বাঙ্কার রুমও ব্যবহার করেছেন। সাংবাদিকতার এই গল্পটিকে অনেকটা অপরাধের কাহিনীচিত্র বলে মনে হয়। নেটফ্লিক্সও চলচ্চিত্রটির প্রচারস্বত্ত্ব কিনে নিয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে “স্ক্যান্ডাল! ব্রিংগিং ডাউন ওয়্যারকার্ড” নামে প্রচার করেছে। এ বছরের শুরুতে বইটি প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে ম্যাকক্রাম লিখেছেন: “আমার জীবনের গত সাত বছর ছিল বুনো, বৈচিত্র্যময়, গুপ্তচর, উদ্ভট আবিষ্কার, রহস্যোন্মচন, অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি, অপরাধ চক্রে হানা দেয়া, পাগলামি, লিবিয়ার সশ্রস্ত্র যোদ্ধা ও রাশিয়ার নার্ভ গ্যাস ইস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। আর এসব কিছুই আছে এই বইয়ে…”। ইকোনমিস্ট বইটিকে বলছে “অবশ্যপাঠ্য”, অন্যদিকে ফাইনান্সিয়াল টাইমসে কর্মরত তাঁর সহকর্মী ও সহযোগী অনুসন্ধানী সাংবাদিক টম বার্জিস বইটি সম্পর্কে বলেছেন, “বিশ্ব অর্থনীতির অন্ধকার জগতে উত্তাল অভিযান।”
লাইফ ইন এভরি ব্রিদ: এস্টার ব্লেন্ডা: রিপোর্টার, অ্যাডভেঞ্চারার, পাইওনিয়ার
লিখেছেন ফাতিমা ব্রেমার, অনুবাদ করেছেন গ্লোরিয়া নিওমা অনউনেমে
আমেরিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক নেলি ব্লাই-এর (যিনি মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন করতে ছদ্মবেশ ধরেছিলেন) সমসাময়িক এবং সুইডেনের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত এস্টার ব্লেন্ডা নর্ডস্ট্রোম, তাঁর চারপাশের নানাকিছু উন্মোচনের জন্য একেক সময় একেক পরিচয় ধারণ করতেন। খামারের চাকর ছদ্মবেশে কাজ করতে গিয়ে তিনি “কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া এক জনগোষ্ঠীর কঠোর কর্মপরিবেশের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন” এবং যাযাবর শিক্ষক সেজে সামি নামের একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে কাজ করেছেন। তাঁর রিপোর্টিংয়ের কেন্দ্রে ছিল সাধারণ মানুষ। কথিত আছে, ফিনিশ গৃহযুদ্ধ চলাকালে তিনি গ্রামগুলোকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। তিনি পায়জামা পরতেন, পাইপে ধুমপান করতেন এবং কাজেকর্মে যেতেন বাইকে করে। তাঁর এমন ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকতা সেসময়ের বিদ্যমান সামাজিক অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত বইটি ২০১৭ সালে সুইডেনের শীর্ষ সাহিত্য পুরস্কার আগস্ট পদক জিতেছে। বইটির লেখক সুইডিশ সাংবাদিক ব্রেমার দেশটির সবচেয়ে বড় দুটি দৈনিক পত্রিকা, আফ্টোনব্লাডে ও এক্সপ্রেসেন-এ কাজ করেছেন। নর্ডস্ট্রোমের সাফল্যের চিত্রগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি, ব্রেমার তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিপত্র ও দিনলিপি ঘেঁটে এটাও খোঁজার চেষ্টা করেছেন যে, কোন বিষয়গুলো শেষপর্যন্ত সুইডেনের সবচেয়ে সাহসী সাংবাদিকের স্নায়ুবৈকল্য ঘটিয়েছিল।” সাক্ষাৎকার নিতে আসা এক ব্যক্তিকে ব্রেমার বলেছেন: “তাঁর (নর্ডস্ট্রোমের) একটি কৌশল ছিল। কৌশলটিকে তিনি ‘বাস্তবতার চিত্রায়ন’ ও তা নিয়ে লেখা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ছিলেন একজন আবেদনময়ী লেখক; তাঁর লেখা মানুষকে ভাবায়।”
হাউ টু স্ট্যান্ড আপ টু আ ডিকটেটর: দ্য ফাইট ফর আওয়ার ফিউচার
লিখেছেন মারিয়া রেসা
২০২১ সালের শান্তিতে নোবেল জয়ের পর সম্পাদক মারিয়া রেসা বলেছেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর মূল লক্ষ্য দুটি : “সত্যকে তুলে ধরা এবং ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা।” রেসা ফিলিপাইনের ডিজিটাল নিউজ সাইট র্যাপলারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন। সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের মাদকবিরোধী অভিযানের নৃশংসতা নথিভুক্ত করার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বারবার সরকারি হামলার শিকার হয়েছে। রেসার বিরুদ্ধেও ১০ বারের বেশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। নোবেল পুরস্কার গ্রহণকালে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকতার জন্য যত বেশি হামলার শিকার হয়েছি, আমি তত বেশি দৃঢ় হয়েছি। ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রাথমিক প্রমাণ আমার হাতে ছিল। আমাকে ও র্যাপলারকে ভয় দেখানো বরং আমাদের শক্তিশালীই করেছিল।” প্রকাশকদের মতে, “সহস্র আঘাতে কীভাবে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়, আর অনলাইনে বিস্ফোরিত এক অদৃশ্য পরমাণু বোমা কীভাবে আমাদের স্বাধীনতাকে হত্যা করে,” সেটিই বিশদাকারে তুলে ধরেছে তাঁর বই।
মাই ফোর্থ টাইম, উই ড্রাউন্ড: সিকিং রিফিউজি অন দ্য ওয়ার্ল্ডস্ ডেডলিয়েস্ট মাইগ্রেশন রুট
লিখেছেন স্যালি হেইডেন
আইরিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক স্যালি হেইডেন বহু বছর ধরে অনুসন্ধান করেছেন আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগর জুড়ে আন্তঃসীমান্ত অভিবাসন নিয়ে। এ বছর, “মাই ফোর্থ টাইম, উই ড্রাউন্ড” মুক্তির মধ্য দিয়ে অবশেষে বিশ্ববাসী এ বিষয়ে নজর দিচ্ছে। এই বইটি দিয়ে হেইডেন নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে ২০২২ মিশেল ডিওন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, বেলি গিফোর্ড পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঢুকে পড়েছেন এবং রাজনৈতিক লেখনীর জন্য ২০২২ অরওয়েল পুরস্কার জিতেছেন। উত্তর থেকে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে দাসত্ব ও পাচার থেকে শুরু করে যৌন নির্যাতন ও কারাবাস পর্যন্ত যে অগণিত ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়, সেসবের অনুসন্ধান আর বেসরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংস্থাগুলোর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার আখ্যান উঠে এসেছে এই বইয়ে। তাঁর মতে, শরণার্থীদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব মানবাধিকার বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলছে। হেইডেন যেভাবে “পাচারকারী, আধা-সামরিক বাহিনী বা জাতিসংঘের অধীনে আটকে পড়া মানুষের জীবনকে প্রকাশ্যে এনেছেন এবং পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিরাপত্তার আশায় ক্ষুধার্ত, অসুস্থ, ও প্রায়ই নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা তুলে ধরেছেন– তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অরওয়েল পুরষ্কারের সভাপতি। বইটিকে তিনি অভিহিত করেছেন “সত্যিকার অর্থেই আমাদের সময়ের বই” বলে। তিনি এসব ভয়াবহ সত্য তুলে ধরেছেন “এমন এক বিশ্বের সামনে, যেটি এসব বিষয়ে অনেক বেশি উদাসীন।”
প্যানডেমিক, ইনক: চেজিং দ্য ক্যাপিটালিস্ট অ্যান্ড থিভ্স হু গট রিচ হোয়াইল উই গট সিক
লিখেছেন জে ডেভিড ম্যাকসোয়ান
করোনা ভাইরাস মহামারির ধাক্কায় মানুষ তাদের প্রিয়জনের সুরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সরকারগুলো হুড়োহুড়ি করে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল। তবে সব সংকটেই কিছু মানুষ লাভবান হওয়ার সুযোগ খোঁজে। অলাভজনক সংগঠন প্রোপাবলিকার প্রতিবেদক ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে হার্ভার্ডের গোল্ডস্মিথ পুরস্কারজয়ী জে. ডেভিড ম্যাকসোয়ান তাঁর এই বইয়ে নজর দিয়েছেন সেইসব “ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যারা নিজেদের পকেট ভারি করতে আমেরিকার সবচেয়ে অন্ধকার সময়কে ব্যবহার করেছেন।” এদের অনেকে সরকারের সঙ্গে লক্ষ লক্ষ ডলারের চুক্তি করেছেন, কিন্তু একটি মাস্কও সরবরাহ করতে পারেননি। পাবলিশার্স উইকলি বইটিকে “একচ্ছত্র পুঁজিবাদ, স্টার্টআপ সংস্কৃতি ও সরকারি দুর্নীতি যেভাবে মহামারির নিকৃষ্ট প্রভাবকে আরো গুরুতর করে তুলেছে, তার একটি চমৎকার উন্মোচন” বলে অভিহিত করেছে।
নিউজরুম কনফিডেনশিয়াল: লেসন্স (অ্যান্ড ওরিস) ফ্রম অ্যান ইঙ্ক-স্টেইন্ড লাইফ
লিখেছেন মার্গারেট সুলিভান
প্রতিদিনের গৎবাঁধা সংবাদের বাইরে এসে গণমাধ্যমের প্রথিতযশা লেখক মার্গারেট সুলিভান ওয়াশিংটন পোস্টে তাঁর শেষ কলামটিকে কাজে লাগিয়েছেন খুব পছন্দের একটি বিষয় তুলে ধরতে। ট্রাম্পের সময়কালে মার্কিন নির্বাচনী সংবাদ কভারেজ নিয়ে সতর্ক করে তিনি লিখেছেন, “ভাষণ, সমাবেশ ও বিতর্ক – নির্বাচনী প্রচারণা বিষয়ক সাংবাদিকতার মূল বিষয় হলেও সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো সেই পুরনো ধাঁচে খবর প্রচার চালিয়ে যেতে পারে না।” তিনি বলেন, “কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া সরাসরি সম্প্রচার নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, বরং সেই সব প্রতিবেদনে নজর দিতে হবে যা নিরবিচ্ছিন্ন অর্থপূর্ণ প্রেক্ষাপট তুলে ধরে।” তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাজনীতি বিষয়ে সংবাদ করার নতুন উপায়ের সন্ধানে অপারগতার কারণে আস্থার সংকট হয় ও গণতন্ত্র ক্ষুন্ন হয়, তাই সাংবাদিকদের “নিবেদিত সত্যভাষী” হতে হবে। “নিউজরুম কনফিডেন্সিয়াল” হলো নিজের বয়ানে স্মৃতিচারণ, যা “যৌন হয়রানি ও শারীরিক নিগ্রহের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই”, পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও পুলিৎজার পুরষ্কার পর্ষদে কাটানো প্রায় চার দশকের সাংবাদিকতার “সার কথা।” নিউ ইয়র্ক টাইমসের বুক রিভিউয়ে স্টিভ কল বলেছেন, “মার্কিন সাংবাদিকতার জন্য যেমন অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য সমালোচক প্রয়োজন ছিল, সুলিভান ঠিক সেটিই ছিলেন।”
সারভেইলেন্স স্টেট: ইনসাইড চায়না’স কোয়েস্ট টু লঞ্চ আ নিউ এরা অব সোশ্যাল কন্ট্রোল
লিখেছেন জশ চিন ও লিজা লিন
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি যেভাবে নিজ দেশের জনগণের ওপর নজরদারি করছে, এই বইয়ে তার গভীরে গিয়েছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জশ চিন ও লিজা লিন। প্রশ্ন তুলেছেন, দলের নেতৃত্ব ও তাদের অধীনস্ত সমাজ “ডিজিটাল ইউটোপিয়া ও ডিজিটাল পুলিশি রাষ্ট্রের” মধ্যে সীমারেখাটি কোথায় টানবেন? তারা তুলে ধরেন, জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং অনলাইনে বার্তা বিনিময়ের ওপর নজরদারি চালাতে চীন কীভাবে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং একইভাবে, “প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার” মধ্যে দেশটি ট্রাফিক ও জরুরি সাড়াদান পর্যবেক্ষণের মতো ভালো কাজে কীভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এখানকার কিছু বিবরণ উদ্বেগজনক — যেমন; জিনজিয়াংয়ে উঁচুমাত্রার বায়োমেট্রিক মনিটরিং চাপিয়ে দেয়া — এবং সেই অঞ্চলে জনগণের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি ও নিপীড়নের লক্ষ্যে “ডিজিটাল সেন্সরের জাল” বসানো। লেখক লিখেছেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্মূল করার জন্য নয় বরং তাদের বদলে দিতে চীনা নেতারা অতীতের একনায়কতান্ত্রিক কৌশলগুলো ফিরিয়ে এনেছে এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে।” ব্লুমবার্গের একজন পর্যালোচক “শিরদাঁড়া শীতল করার মতো তথ্য প্রমাণে ভরা ও ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে লেখা” এই বইয়ের প্রশংসা করে বলেছেন, এটি “ একটি অবশ্য পাঠ্য শুধু চীন সম্পর্কে যা বলছে তার জন্য নয়, বরং বাকি বিশ্ব সম্পর্কে কী জানাচ্ছে সেই বিচারেও।”
ভেরি ব্যাড পিপল: দ্য ইনসাইড স্টোরি অব দ্য ফাইট এগেইন্স্ট দ্য ওয়ার্ল্ডস্ নেটওয়ার্ক অব করাপশন
লিখেছেন প্যাট্রিক অ্যালি
১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে লন্ডনে কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন গ্লোবাল উইটনেস। তারপর থেকেই এটি সুখ্যাতি কুড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলে যাওয়ার কারণে। কয়েক দশক ধরে যার মধ্যে অবৈধ কাঠের ব্যবসা ট্র্যাকিং থেকে শুরু করে ব্লাড-ডায়মন্ড পর্যন্ত দুর্নীতি, পরিবেশগত অপরাধ, ও মুষ্টিমেয় অসাধু ব্যক্তিকে ধনী বানাতে মুনাফা লোপাট করার মতো বিভিন্ন ঘটনা অনুসন্ধান করেছে দলটি। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক অ্যালি বলেছেন, তার বইটি গ্লোবাল উইটনেসের ইতিহাস নয় বরং এটি “ভয়াবহ অপরাধের একটি তালিকা।” তাঁর আশা, “অন্যান্য প্রচারণার মতো” এই বইটিও সেই “খলনায়কদের” মনক্ষুন্নের কারণ হবে যাদের মুখোশ তারা আগেই উন্মোচন করেছেন। দ্য নিউ ভয়েস-এর একটি পর্যালোচনায় বইটিকে অভিহিত করা হয়েছে “আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের এক ধরনের পাঠ্যবই হিসেবে, যেখানে উঠে এসেছে লন্ডনের কিলবার্নে গুপ্তচরবৃত্তিক দোকান, জাল ব্যবসায়িক কার্ড ছাপানো ও সীমান্তজুড়ে নগদ টাকার পাচার পর্যন্ত অনেক কিছু।”
আরও পড়ুন
ননফিকশন বই লিখছেন? এখানে পুলিৎজারজয়ী বেস্টসেলার লেখকের পরামর্শ পড়ুন
বিকামিং বেলিংক্যাট: এন এক্সসের্পট ফ্রম ইলিয়ট হিগিন্স’স নিউ বুক
রিসোর্সেস: এ গাইড টু ইনভেস্টিগেটিভ বুকস অ্যান্ড ফিল্মস
লরা ডিক্সন সহযোগী সম্পাদক হিসেবে জিআইজেএনে যোগ দেওয়ার আগে চার বছর কলম্বিয়ায় রিপোর্টিং করেছেন এবং প্যারিস ও টেক্সাসের অস্টিনে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করেছেন। ফার্ক গেরিলা গোষ্ঠীর সঙ্গে কলম্বিয়া সরকারের সংঘাত ও ভেনেজুয়েলার অভিবাসন সংকট নিয়ে তাঁর কাজ টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, আটলান্টিক ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যে থাকেন।