অস্ত্র পাচার অনুসন্ধানের গাইড
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
গাইড রিসোর্স
রিপোর্টারদের জন্য সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
মাদক পাচার অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
সাইবার অপরাধ অনুসন্ধান
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
জোরপূর্বক গুম ও রাজনৈতিক অপহরণ অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
অস্ত্র পাচার অনুসন্ধানের গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
মাফিয়া রাষ্ট্র এবং চৌর্যতন্ত্র অনুসন্ধান
অবৈধ অস্ত্র বাণিজ্যের ওপর আলোকপাত করে সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধান গাইডের এই অধ্যায়টি লিখেছেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর আফ্রিকা শাখার জ্যেষ্ঠ সম্পাদক খাদিজা শরীফি।
২০০৫ সালে “লর্ড অব ওয়ার” নামের চলচ্চিত্রটির জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে রীতিমত চড়া মাশুল দিয়ে শিখেছেন পরিচালক অ্যান্ড্রু নিকোল। তিনি জানতে পারেন, নকল অস্ত্রের চেয়ে আসল অস্ত্র কেনা সহজ ও সস্তা৷ তাই দেরি না করে তিনি ৩,০০০ আসল কালাশনিকভ রাইফেল কিনে ফেলেন, সেই সঙ্গে সামরিক মানের ট্যাঙ্কও ইজারা নেন – যেমনটা তিনি বলেছিলেন চলচ্চিত্রটির প্রেস ট্যুরে। কিন্তু সত্যিকারের মাশুল গুনতে হয় আরও পরে। অস্ত্রগুলোর পুনঃব্যবহার ঠেকাতে তাঁকে কিছু অস্ত্র দক্ষিণ আফ্রিকায় নষ্ট করে ফেলতে হয়, আর বাজেটের কারণে বাকিটা বিক্রি করতে হয় অর্ধেক দামে (লোকসানে), কারণ বাজারে তখন অস্ত্রের যথেষ্ট সরবরাহ ছিল।
ছবিটি মোটাদাগে ভিক্টর বাউটের মতো সত্যিকারের রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের জীবনকে ঘিরে তৈরি। বারুদ থেকে ধাতব খোলস, কনভেয়র বেল্ট থেকে কাঠের ক্রেট হয়ে বুলেটের যে বাণিজ্য গড়ে ওঠে, তার-ই মোহ ও ঝুঁকিগুলোকে তুলে ধরা হয় “লর্ড অব ওয়ার” ছবির শুরুতে। আর বুলেটের বাক্স থেকে মানুষ হত্যার মাঝখানটাজুড়ে বিচিত্র রকমের সশস্ত্র গোষ্ঠী, সন্ত্রাসী ও গোত্র “প্রধানদের” মাধ্যমে অস্ত্রের পরিবহন এবং সরকার, মধ্যস্থতাকারী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, অর্থদাতা, গোয়েন্দা সংস্থা, বহনকারী ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার জটিল ও অস্বচ্ছ সম্পর্ক তুলে ধরে ছবিটি – যেখানে ক্রেতার ভূমিকায় রয়েছেন লাইবেরিয়ার একনায়ক চার্লস টেলর এবং যোগানদাতার ভূমিকায় বাউট।
ছদ্মবেশে পাতা সামরিক ফাঁদে পড়ে বাউটের ২৫ বছর এবং হেগের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে টেলরের ৫০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু এ দুজনের পতনের পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় বেড়ে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। অস্ত্রের পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচ করা চারটি দেশ – যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য – বিশ্বব্যাপী অস্ত্র সরবরাহকারীর তালিকায়ও শীর্ষে। বহুজাতিক সংগঠিত অপরাধ, যুদ্ধ থেকে মুনাফা ও কর্তৃত্ববাদী বা সংঘাতনির্ভর অর্থনীতিকে সচল রাখে যে ব্যবসায়িক মডেল, বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারও সেই একই কায়দায় চলে এবং একই বাণিজ্যিক ও আর্থিক বিনিময় কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
এর কারণ হলো অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জাতীয় আইনগুলো অসম, সাংঘর্ষিক, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত ও ত্রুটিপূর্ণ। অস্ত্র ব্যবসার স্বরূপ উন্মোচনের পথে আরও কিছু বাধা রয়েছে। যেমন: জাহাজ ও বিমান চলাচলে গোপনীয়তা যা অস্ত্র পরিবহনকে আড়াল করে; অস্ত্র ব্যবসায়ী ও পরিচালনাকারীদের রক্ষাকবচ হয়ে থাকা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান; বিকল্প পথ হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা; এবং একটি বিনিময় ব্যবস্থা, যেখানে হাতির দাঁতের মতো একটি অবৈধ পণ্যের সঙ্গে আরেকটি অবৈধ পণ্যের বিনিময় করা যায়।
কাগজপত্র ঠিক থাকলে দিনে-দুপুরেই এমন পণ্যের পরিবহন চলতে পারে, যদি না কাস্টমস বা অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলো মালামাল জব্দ ও তল্লাশীর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী প্রমাণ পায়। একটি বেসরকারি বিমানবন্দরে কর্মরত দক্ষিণ আফ্রিকার একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন: “আমাদের আয় নেই এবং আমাদের কিছুই নেই… শক্তিশালী কাউকে শত্রু বানানো বা মোকাবিলা করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে।”
মাদক বা মানব পাচার যেমন সর্বত্র নিষিদ্ধ, আর্থিক গোপনীয়তা, অস্ত্র, ও কাঠ পাচার বা বন্যপ্রাণী শিকারের মত পরিবেশগত অপরাধ তেমনটা নয়; এ তিন ধরনের খাত ফাঁকফোকর গলে প্রায়ই বেরিয়ে যায়। এর সবটাই নির্ভর করে বিভিন্ন দেশে গোপনীয়তা বজায় রাখার বিভিন্ন রকম সুবিধা এবং সেখানকার সংশ্লিষ্ট আইনি, আর্থিক ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর।
যেমন, বাউটকে জেলে পাঠানোর পরও, তার নেটওয়ার্ক ঠিকই সুদান থেকে সিরিয়া পর্যন্ত সবখানে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে গেছে এবং মরিশিয়ান দাতব্য সংস্থা, দক্ষিণ আফ্রিকান ও রুশ পরিচালক, এবং বিমান চালনার ভুয়া অনুমতিপত্র ব্যবহার করে তারা অস্ত্র-পরিবহনকারী বিমানের একটি বহরও কিনে নিয়েছে। এই বিমান সংস্থাগুলোর কয়েকটি এখনো “ব্যক্তিগত জেট” হিসেবে বুক ফুলিয়ে মরিশাসে কাজ করছে বলে জানা যায়।
বাণিজ্যিক বিমানগুলো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের অন্ধকারে রেখে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় সেগুলোর ট্রান্সপন্ডারগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু বাউটের ছোট প্লেনের বহর – বিশেষ করে স্বয়ংক্রিয় জিপিএস সিস্টেমবিহীন পুরানো মডেলগুলো – কার্যত সনাক্ত করা যায় না এবং প্রকৃতপক্ষে রাডার ফাঁকি দিয়ে বা দেশের ভেতর দিয়ে উড়তে পারে। সে সময় মরিশাস সরকার অপকর্মের অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়া ছাড়া বলার মত তেমন কোনো কাজ করেনি।
অস্ত্র বিক্রি বা গোপন শিল্পে ভর্তুকি সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারি ব্যবস্থা এবং গোটা কর্মকাণ্ডকে “যত্রতত্র” আউটসোর্সিংয়ের সুযোগ করে দেওয়া ট্যাক্সহ্যাভেনগুলোর কারণে সবার জন্য উন্মুক্ত তথ্য পাওয়ার সুযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে৷
অনেক সময় অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরাই সবার আগে অস্ত্র সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি এবং অবৈধ ও বেআইনি কর্মকাণ্ড শনাক্ত করে। আর এদের সঙ্গে প্রায় ক্ষেত্রেই চলমান বা আসন্ন কোনো সংঘাত, সংগঠিত অপরাধ, দুর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার জড়িত থাকে।
বৈশ্বিক সুযোগ
কলা বা সয়া শিল্পের তুলনায় অস্ত্র শিল্পে বাধ্যবাধকতা কম এবং প্রয়োগ করার মত আন্তর্জাতিক আইনের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আগেই দাবি করেছেন যে বিশ্বব্যাপী জ্ঞাত-দুর্নীতির অন্তত ৪০% এর জন্য এই খাত দায়ী।
মাত্র ১০টি দেশ বিশ্বের ৯০% অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশ্বব্যাপী নথিভুক্ত অস্ত্র চালানের প্রায় ৪০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। মার্কিন অস্ত্র রপ্তানির প্রায় অর্ধেক মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছে, আর বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ মূলত সৌদি আরব।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সম-শক্তির দেশগুলোর চাপের কারণে রাষ্ট্রগুলোকে অস্ত্র আমদানি ও রপ্তানির বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। যেমন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি (এটিটি) অস্ত্র ব্যবসা কমিয়ে আনতে এবং সংঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসবাদে অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে একটি বহুপাক্ষিক কাঠামো তৈরি করেছে। তবে ১০০ টির বেশি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ এতে স্বাক্ষর করেনি, এমনকি চীনের মতো কয়েকটি অনুমোদনকারী দেশ বার্ষিক প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
বাস্তবে এই তথ্যপ্রকাশে নিয়মিতভাবে সহায়ক ডেটা পাওয়া যায় না। এর পরিবর্তে কেবল দাবিদাওয়ার একটি চেকলিস্ট সামনে আসে, যা জনসাধারণ বা বিদেশি সরকারের পক্ষে যাচাই করা অসম্ভব। এছাড়া অস্ত্র ব্যবসার প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী কিছু দেশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পৃষ্ঠপোষক বা রাজনীতিবিদেরা আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে অবৈধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে দিতে পারে। আর অস্ত্র বাণিজ্যের ভূমিকায় থাকা দেশগুলোর কাছে কখনো কখনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের আইনি সংজ্ঞা অস্পষ্ট বা সাংঘর্ষিক।
আপাতদৃষ্টিতে একটি লেনদেনকে বৈধ মনে হলেও প্রায়ই তাতে সূক্ষ কিছু অসঙ্গতি থাকে, যা সহজে ধরা যায় না। এমন ভুলগুলো হলো: তালিকায় যত সংখ্যক পণ্যের কথা বলা হয়েছে তার চেয়ে চেয়ে বেশি পণ্যের চুক্তি বা চালান, রিপোর্ট করা তথ্যে বাৎসরিক হিসাবে পার্থক্য থাকা, এবং একেক দেশে একই অস্ত্রের আলাদা শ্রেণিবিভাজন। এটি অস্ত্র ব্যবসার উৎপাদন, বিস্তার ও ন্যায্যতার পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঋণ, বিনিময় বাণিজ্য, ও বিনিময়-মূল্য অনুধাবনের কাজটিকে কঠিন করে তোলে।
তাহলে, উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার করে আপনি কীভাবে অনুসন্ধানকে আরও গভীর ও অকাট্য করবেন?
গোপন বিষয়
একটি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি বা নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত দেশগুলোর মধ্যকার অস্ত্র ব্যবসা একটি অত্যন্ত গোপন বিষয়, যেখানে জবাবদিহিতার সুযোগ সামান্যই বলা চলে। তবে একটি অস্ত্র চুক্তির প্রাথমিক প্রক্রিয়া বুঝতে পারাটা, রিপোর্টিং শুরুর জন্য কাজে আসবে:
একটি আমদানিকারক সরকার সাধারণত দরপত্রের বিজ্ঞাপন দেয় বা গোপনে সরবরাহকারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে — অথবা অস্ত্র বিক্রয়ে আগ্রহী বিদেশি কোম্পানি ও সরকারগুলোর কাছ থেকে তদবিরের মুখোমুখি হন।
১. রপ্তানিকারক সরকার তখন আমদানিকারক পক্ষের কাছে অস্ত্র, সেবা ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রির অনুমোদন দেয়। (প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্থানীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া আছে।)
২. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলো অস্ত্র তৈরি এবং বিক্রি করতে পারে।
নোট: রপ্তানিকারক সরকার নিজ থেকেই (“বিদেশি সামরিক বিক্রয়” হিসেবে) বা রপ্তানিকারক দেশের বেসরকারি প্রতিরক্ষা খাতের সরবরাহ করা অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি করতে পারে (একটি “বাণিজ্যিক” চুক্তির অধীনে)।
বেশিরভাগ রপ্তানিকারক দেশ ভর্তুকি দেয় এবং তারা তাদের বেসরকারি প্রতিরক্ষা খাতকে জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ভূ-রাজনৈতিক জোট গঠনের হাতিয়ার হিসেবে নিরাপদে রাখে। আমদানিকারক সরকারের সই করা প্রাথমিক নথি হলো এন্ড-ইউজার সার্টিফিকেট। এতে অস্ত্রগুলোর তালিকা করা হয় এবং বলা হয় যে অস্ত্রগুলো কেবল “প্রশিক্ষণ, সন্ত্রাসবিরোধী, নিরাপত্তা, ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি” বজায় রাখার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হবে। এন্ড-ইউজার সার্টিফিকেটের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বর্বরতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনে অস্ত্রের ব্যবহার বিরত রাখা, সেই সঙ্গে দুষ্ট রাষ্ট্র বা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পুনরায় বিক্রি বা তাদেরকে “উপহার” দেওয়া ঠেকানো।
তবে বাস্তবতা হলো অনেক অস্ত্র, বিশেষ করে ছোটখাটো অস্ত্র, এক ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়ে আবার অন্য ক্রেতার কাছে বিক্রি হতে পারে। যেমন, লিবিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় সেই দেশে অস্ত্র সরবরাহে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ভুয়া পতাকা, কর্পোরেট গোপনীয়তা এবং বাহামা, লাইবেরিয়া ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মতো সামুদ্রিক ট্যাক্স হ্যাভেনের মাধ্যমে জাহাজে পণ্য পরিবহনের কারণে দেশটি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে অবৈধ বা নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির সুযোগ পেয়েছে। শেল কোম্পানিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সরবরাহকারীদের পাশাপাশি গোপন রুশ নিরাপত্তা সংস্থার কাছ থেকে সাঁজোয়া সামরিক যান, অস্ত্র ও বোমা পাওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছে লিবিয়াকে।
দেশগুলো সবসময় নগদে অর্থ পরিশোধ করতে পারে না। বাণিজ্য-ভিত্তিক অর্থায়ন এই ব্যবসায় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সুদানে যুদ্ধবিধ্বস্ত দারফুরে আফ্রিকার অন্যতম বৃহত্তম সোনার খনি জেবেল আমির থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বর্ণ রপ্তানি করা হয়েছিল। বিনিময়ে নিবন্ধিত শেল কোম্পানিগুলো উপসাগরীয় দেশটিতে সাঁজোয়া যান ও অন্যান্য উপকরণের যোগান দিয়েছিল।
অস্ত্র পাচার অনুসন্ধানে উঠে আসে, অস্ত্রের সহজ প্রাপ্যতা কেবল সংগঠিত অপরাধ, কর্তৃত্ববাদ ও সংঘাতকে টিকিয়ে রাখে না বরং ইন্ধনও জোগায়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সরকারের নগদ-ঘাটতির ফলে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের এন্ড ইউজার সনদ সংক্রান্ত নিয়মনীতি শিথিল করেছে। অস্ত্র পরিদর্শকদের মাধ্যমে স্থানান্তরের বৈধতা মূল্যায়নের পরিবর্তে চুক্তিগুলো এখন তুলনামূলক শিথিল “কূটনৈতিক প্রক্রিয়া” অনুসরণ করে৷
এত কিছুর পরও, আন্তর্জাতিক সীমানা পাড়ি দিতে সক্ষম অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে শনাক্ত, যাচাই ও নিশ্চিত করার মতো যথেষ্ট তথ্য আছে। অস্ত্র বিক্রেতার বিশ্লেষণ ও চুক্তি বাস্তবায়নে তারা যে ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে সেটিকে খতিয়ে দেখার মাধ্যমেই এটি করা সম্ভব। এমনকি যেখানে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা কাজের ধরনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে বা এটিকে আরো সুনিপুণ বা গোপন করার চেষ্টা করে, সেখানেও তারা নিঃসন্দেহে একটি নতুন ধরন দাঁড় করায়।
কেস স্টাডি
মৃত্যুর ফেরিওয়ালা
রুশ উদ্যোক্তা ভিক্টর বাউটই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র পাচারকারী ছিলেন। সব ধরনের পণ্যসম্ভার, বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের জন্য তাকে বিশ্বের “সবচেয়ে দক্ষ পোস্টম্যান” বলা হয়। তার অস্ত্রের গ্রাহক তালিকা বেশ জটিল ছিল। তার কোম্পানি মাঝে মাঝে নাম ও অবস্থান পরিবর্তন করে, আফগানিস্তানে উত্তর জোটের নেতা আহমেদ শাহ মাসুদের মতো গ্রাহকদের অস্ত্রের যোগান দিত, পাশাপাশি মাসুদের শত্রু তালেবানদের কাছেও অস্ত্র বিক্রি করত। তিনি অ্যাঙ্গোলা সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছিলেন, সেই সঙ্গে সরকার উৎখাতে সক্রিয় বিদ্রোহীদের কাছেও বিক্রি করেছিলেন। জায়ারের স্বৈরশাসক মোবুতু সেসে সেকো ও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের উদ্ধারে তিনি একটি বিমান পাঠিয়েছিলেন। তিনি কলম্বিয়ার বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী (ফার্ক) ও লিবিয়ার কুখ্যাত একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির সঙ্গেও কাজ করেছেন।
বাউট অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসার জন্য পরিচিত ছিলেন, তবে তিনি বৈধ কার্গো পরিচালনায়ও জড়িত ছিলেন। এই ব্যবসায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার শত শত ভ্রমণও হতো। তিনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা সরকারগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করেছিলেন। পেন্টাগন ও তাদের ঠিকাদাররা তাকে যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠনে সমর্থনের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়েছিল।
বাউটের কর্মকাণ্ডকে অনুসরণ করা কূটনৈতিক কর্মী, বাউটের একান্ত পরিচিত ব্যক্তি, বাউটের নিজের এবং তার অনুগত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডগলাস ফারাহ ও স্টিফেন ব্রাউন তাকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন: “মার্চেন্ট অব ডেথ: মানি, গানস্, প্লেনস, অ্যান্ড দ্য ম্যান হু মেইকস ওয়ার পসিবল।”
বিমানের টেইল কোড অনুসরণ
টেইল কোড (বা বিমানের নিবন্ধন নম্বর) সহ বিমান চালনা সম্পর্কিত ডেটা অনেক বিষয় উন্মোচন করতে পারে। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কথা ধরা যাক (কখনো কখনো কঙ্গো-ব্রাজাভিল নামে ডাকা হয়): তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে কোনো অস্ত্র আমদানির কথা শোনা যায়নি, আর দেশটির বিরুদ্ধে কোনো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা না থাকায় জাতিসংঘের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য দেশটির অস্ত্র চুক্তি প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই। তবুও সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুসারে, ২০১৬ ও ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে বড় ধরনের চালান সহ সম্প্রতি আজারবাইজান থেকে ৫০০ টনেরও বেশি অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে দেশটিতে। ওসিসিআরপির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই অস্ত্রের চালানগুলো নির্বাচনের পর ভিন্নমত দমনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। মর্টার শেল, রকেট, গ্রেনেড ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনগান সহ বেশিরভাগ অস্ত্র বুলগেরিয়া ও সার্বিয়ায় তৈরি করা বা তাদের থেকে আজেরি সরকার কিনেছিল।
নথিগুলোতে উঠে আসে, কিছু চুক্তিতে সৌদি আরব সরকারকে “পৃষ্ঠপোষক পক্ষ” হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে সৌদি-নেতৃত্বাধীন ওপেক গ্রুপে তেল উৎপাদনকারী কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের যুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত ছিল। এই গ্রুপ বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের চার-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। আজারবাইজান ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র দেশ দুটি সক্রিয়ভাবে পরিবারশাসিত স্বৈরতন্ত্র বজায় আছে, অন্যদিকে সৌদি আরব একটি পরিবারকেন্দ্রিক রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে। বিমান ট্র্যাক করে দেখা যায়, কীভাবে প্রাথমিকভাবে আজারবাইজানের বিমান বাহিনী অস্ত্রগুলো পরিবহন করেছিল, কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে বিকল্প হিসেবে সিল্ক ওয়ে এয়ারলাইন্স নামের একটি গোপন পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান অস্ত্রগুলো পরিবহনের কাজ শুরু করে। একটি গোপন পরিবহনকারী হিসেবে সিল্কওয়ে আজারবাইজানের শাসক পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত – সম্ভবত অন্যান্য সামরিক পরিবহনকারীর তুলনায় এটিকে কম পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
নাইজারের মধ্যসত্ত্বভোগী
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ নাইজারে ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অস্ত্রের পেছনে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে বড় অস্ত্র চুক্তিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কমপক্ষে ১৩৭ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। ২০১৬ সালে নাইজারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় সংস্থা রাশিয়ার রোসোবোরোনেক্সপোর্ট থেকে দুটি সামরিক পরিবহন ও অ্যাসল্ট হেলিকপ্টার কিনেছিল। এই ক্রয়ের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ ও গোলাবারুদের জন্য অতি উচ্চমূল্যের সামগ্রী অর্ন্তভুক্ত ছিল, যার পেছনে নাইজারে ৫৪.৮ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ১৯.৭ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত ব্যয় ছিল, যা উল্লেখ করা হয়নি এবং যার যৌক্তিকতা দেখানো হয়নি। রুশ সরকারের সিংহভাগ মালিকানার ব্যাঙ্ক ভিটিবি এর একটি শাখার মাধ্যমে এই অর্থ পাঠানো হয়েছিল ৷
নাইজারের পক্ষে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আবুবাকার হিমা নামের এক মধ্যস্থতাকারীকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়, যেন তিনি নিজের শেল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে চুক্তি করতে পারেন এবং এমনভাবে চুক্তিগুলো পরিচালনা করতে পারেন, যা তার দেশের আইন ও তদারকি কমিটিগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারে। তিনি একই চুক্তিতে সক্রিয়ভাবে সবগুলো পক্ষের মধ্যে সমস্ত তথ্য হাতে রেখে রুশ, ইউক্রেনীয় ও এমনকি চীনা কোম্পানিগুলোর এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেছিলেন। সে সময় পশ্চিম আফ্রিকার আরেকটি দেশ, নাইজেরিয়ার সরকারও হিমাকে চেয়েছিল। তিনি সেখানকার একজন নাগরিক হিসেবে ইতিমধ্যেই মার্কিন আদালতে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা সংক্রান্ত মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতের নথি, বিপণন পুস্তিকা ও কোম্পানির ওয়েবসাইটের মতো সোর্সগুলো থেকে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বা তুলনামূলক মূল্য সংক্রান্ত তথ্য জানা যায়। এমনকি ডোমেইনের নামের আইপি ঠিকানাগুলোও মূল্যবান সূত্র দিতে পারে।
কৌশল ও পরামর্শ
অন্য যে কোনো ধরনের পণ্য লেনদেনের মতো অস্ত্রের ক্ষেত্রেও অবশ্যই গ্রাহকেরা প্রেরককে ক্রয় আদেশ দেয়। এজন্য পণ্য প্রস্তুত করতে হয়, নথিভুক্ত করতে হয়, কিনতে হয়, বিক্রি বা বিনিময় করতে হয় এবং পরিবহন করতে হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য পেতে নিচের বিষয়গুলো সার্চ করতে পারেন:
অস্ত্রের রেজিস্ট্রি: দেশগুলোর মধ্যকার আনুষ্ঠানিক অস্ত্র-বাণিজ্যের স্বপ্রণোদিত নথিভুক্তি নিশ্চিত করতে ১৯৯১ সালে ইউনাইটেড নেশনস রেজিস্টার অব কনভেনশনাল আর্মস (ইউএনআরওসিএ) চুক্তিটি করা হয়েছিল। এই নথিগুলো উন্মুক্ত এবং অস্ত্র বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত কোনো দেশ যদি তথ্য গোপন রাখে তখন অপর দেশের প্রকাশ করা নথি থেকে সে সম্পর্কে জানা যেতে পারে। রেজিস্ট্রিতে মেশিনগান ও রকেট লঞ্চারের মত ছোট অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, জঙ্গি-হেলিকপ্টার ও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বড় অস্ত্র ব্যবস্থার তথ্য উল্লেখ থাকে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিআইপিআরআই) একই ধরনের তথ্যবহুল রিসোর্স যা দেশভিত্তিক প্রতিবেদন, সামরিক ব্যয়, অস্ত্র স্থানান্তর, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, এমনকি দেশগুলোর মধ্যকার সামরিক সহায়তাও ট্র্যাক করে।
পরিবহন নথি: রেডিটের আর/এভিয়েশন বা Airliners.net এর মতো বিমান চালনা সংক্রান্ত ফোরামগুলো বিশ্বজুড়ে বিমানচালক ও প্রযুক্তি কর্মীদের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্যের যোগান দেয়। অন্যদিকে ফ্লাইটরাডার২৪ ও ফ্লাইটঅ্যাওয়ারের মতো বিমান চলাচল সংক্রান্ত ডেটাসেটে বিমানের টেইল কোড, নিবন্ধনের দেশ ও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন রকম তথ্য থাকতে পারে। বিমান শনাক্তকরণে জিআইজেএনের গাইড ও সিফোরএডিএস এর ইকারাস ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্মও যাচাই করতে ভুলবেন না। সামুদ্রিক জাহাজ চালনার ক্ষেত্রে জিআইজেএনের ট্র্যাকিং শিপ অ্যাট সি দিয়ে শুরু করুন এবং রুট, পণ্য, প্রেরক, প্রাপক, তারিখ ও ঠিকানা সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য মেরিন ট্রাফিক, ইমপোর্ট জিনিয়াস ও পাঞ্জিভার মতো ডেটাসেট দেখুন৷ বিমানের মতো জাহাজগুলোও কোনো না কোনো দেশে নিবন্ধিত হয় এবং কোনো সরকার, কোম্পানি বা ব্যক্তির মালিকানাধীন হয়ে থাকে। সামুদ্রিক ও বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কর স্বর্গ হিসেবে ও গোপনীয়তার জন্য সুপরিচিত এলাকা দেখলে সতর্ক হোন। কারণ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, বারমুডা ও লাইবেরিয়ায় এই রেজিস্ট্রিগুলোকে আইন দ্বারা সুরক্ষিত ও বাণিজ্যিক করা হয়েছে।
কর্পোরেট কাঠামো: ডেটাবেসের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা শনাক্ত করার পাশাপাশি, সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের আইনি ও আর্থিক উপরিকাঠামোর খোঁজ করুন। এর মধ্যে রয়েছে: কোম্পানির উদ্দেশ্য, কার্যক্রম পরিচালনার দেশ, জড়িত বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিবরণ এবং সংঘটিত কর্মকাণ্ডের স্থান উল্লেখ থাকে। এছাড়াও, সম্পদ ও রাজস্বের উৎপত্তিস্থল, করের ধরন, রেকর্ডকৃত লোকসান ও লাভ এবং অবস্থান ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবকাঠামোও দেখুন। কোনো মামলা চলমান থাকলে সেখান থেকেও আইনী তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এজন্য আদালত ও কর রেকর্ডের মতো উন্মুক্ত ডেটার পাশাপাশি প্রতিটি খাতের আইন ও এর নির্দিষ্ট সুবিধাগুলো জানা প্রয়োজন।
তবে আমাদের চারপাশের জগতে অস্ত্র কেন অন্যায়ের কেন্দ্রবিন্দু, তা নিয়ে জানার ইচ্ছাটাই সম্ভবত একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। অস্ত্রের সহজলভ্যতার কারণেই কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন ও ইকুয়েটোরিয়াল গিনির মতো দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদ টিকে থাকে। অস্ত্র ব্যবহারের সুবিধার ফলে সংগঠিত অপরাধী চক্রগুলো গণতন্ত্র পিছিয়ে দিতে এবং মাদক, বন্যপ্রাণী ও মানব পাচারের মাধ্যমে সমাজকে জিম্মি করতে পারে। অস্ত্রকে দেখতে হবে এমন একটি বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে যার মাধ্যমে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যত নিয়ে জুয়া খেলা হয়। কিন্তু তার জন্য বিচ্ছিন্ন প্রচারণা যথেষ্ট নয়, বরং স্পষ্ট ও জোরালো এবং যথার্থ প্রমাণের সাহায্যে সংযোগগুলো স্থাপন করতে হবে। তা না হলে, অস্ত্রকে কেবল ওপর থেকে আবছা ভাবেই দেখে যেতে হবে।