প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

রিসোর্স

ইভেন্ট

স্বাস্থ্য নিয়ে ভুয়া তথ্য – অপতথ্য, অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা কীভাবে লড়তে পারেন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

কল্পনা করুন তো, প্রতি বছর বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী কেবল চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। অথচ তাদের ব্যাপারে প্রতিবেদন নেই বললেই চলে।

আপনারা ভাবছেন আমি হয়তো বানোয়াট কথা বলছি!  একদমই না, এটাই হচ্ছে আমাদের বাস্তবতা—ইতালির পেরুজিয়াতে ২০২৪ আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা উৎসবে এ কথা বলেন সাংবাদিক উইল ফিটজগিবন। উৎসবে অনুসন্ধানমূলক স্বাস্থ্য প্রতিবেদনের ওপর অনুষ্ঠিত একটি প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল এটি।

ফিটজগিবন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী স্বাস্থ্য সাংবাদিকতার নতুন আউটলেট দ্য এক্সজ্যামিনেশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বমূলক প্রতিবেদনের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন।

ফিটজগিবন তার প্যানেল আলোচনার শুরুটা করেন “হতাশাজনক পরিসংখ্যান” দিয়ে। তিনি বলেন, “কনফারেন্স কক্ষে যারা উপস্থিত আছেন, তাদের তিনজনের মধ্যে একজনের মৃত্য কারণ হলো চার ধরনের কর্পোরেট বাণিজ্য যেমন: তামাক, অ্যালকোহল, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর একটি।”

তবুও, বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের অভাব আর নিউজরুমগুলোতে স্বাস্থ্য ঘিরে অনুসন্ধানী দক্ষতার ঘাটতির কারণে এই কর্পোরেট খেলোয়াড়রা “সাংবাদিকতার দৃশ্যপটের ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন,” বলে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন।

প্যানেল আলোচনার শিরোনাম ছিল স্বাস্থ্য-বিষয়ক অপ ও ভুয়া তথ্যগুলো কীভাবে আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের করণীয় কী? সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন পুলিৎজার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক সুসান ফেরিস।  আলোচনায় উঠে আসে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের অভাবকে পুঁজি করে ওষুধ শিল্পের সুনির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় তাদের পণ্য ও নীতির পক্ষে অপ ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে।

ফিটজগিবনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন লন্ডন ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ব্যুরোর (টিবিআইজে) উপ-সম্পাদক ক্রিসি জাইলস এবং দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ভেকিসিসা সেন্টার ফর হেলথ জার্নালিজমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক মিয়া মালান।

আলোচনার সময় বক্তারা নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে যারা প্রতিবেদন তৈরি করতে চান কিন্তু ঠিক কোথা থেকে কাজ শুরু করবেন তা বুঝে উঠতে পারছে না, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ এবং কৌশলও তাঁরা বাতলে দেন।

অক্সিজেনের আকাশচুম্বী দাম

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক স্বাধীন নিউজরুম টিবিআইজের কাজ সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে ক্রিসি জাইলস বলেন, আমরা আমাদের কাজের প্রভাবকে সবসময় গুরুত্ব দিই… তাই এমন গল্পগুলো তুলে আনতে চাই, যা সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।”

ক্রিসি জাইলস আরা জানান, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরি করার সময় তাঁরা দুটি দিক বিবেচনা করেন :

১. মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে এমন জিনিস পেতে কোন বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

২. টিকা, শিক্ষা, গর্ভপাত, ওষুধ ইত্যাদির মতো পণ্য।

৩. ক্ষতিকারক ওষুধ সম্পর্কে মানুষকে কী ধরনের তথ্য দেওয়া হয়?

৪. তামাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মানহীন ওষুধ, বাজে নীতি ইত্যাদি।

প্রতিবেদন বাছাইয়ের সময়, তাঁরা এমন গল্পের পক্ষে ভোট দেন, যেগুলো পদ্ধতিগত সমস্যার ওপর আলোকপাত করে। এর ফলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয়। উদাহরণ হিসেবে এ সময় ক্রিসি জ্যাওলস তাদের কোভিড-১৯ বিষয়ক অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করেন।

ওই অনুসন্ধানে দুটো বিষয় বেরিয়ে আসে। প্রথমত, আফ্রিকায় অক্সিজেন সরবরাহে অনৈতিক চর্চা চলে আসছিল। দ্বিতীয়ত, বহুজাতিক গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো কীভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য বেশি অর্থ আদায় ও অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করেছিল।

তিনি বলেন, “আমরা বাইরের দেশগুলোতে খোঁজ নেওয়া শুরু করি। বিভিন্ন দেশের ক্লিনিক ও হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দেখতে পাই যে ক্লিনিক এবং হাসপাতাল ভেদে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দাম ধরা হয়েছে, এমনকি একই দেশের মধ্যেও ভিন্ন দামে সরবরাহ করা হয়েছে।”

একই পরিমাণ অক্সিজেনের জন্য একই দেশের কোনো একটি হাসপাতালকে অন্য হাসপাতালের তুলনায় চারগুণ বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহকারীরা হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ কমানোর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা কমানোর চেষ্টা করছে। জাইলস বলেন, আফ্রিকার কিছু অংশ নিয়ে প্রতিবেদন করার পরে, তাঁরা মেক্সিকোর মতো অন্যান্য দেশের কথা জানতে পারেন।

যেখানে “নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করেছে এমন হাসপাতালগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে কোম্পানিগুলো বলেছে যে, ‘হাসপাতালগুলো খারাপ মানের অক্সিজেন উৎপাদন করছে, যা মানুষকে হত্যা করবে। …’ যদিও তাদের এসব দাবী মোটেও সত্য ছিল না, ” বলেন জাইলস ।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম প্রকাশের মাধ্যমে টিবিআইজে মানুষের হাতে সরাসরি তথ্য তুলে দিয়েছে। এতে করে হাসপাতালগুলো যেন কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের এ প্রতিবেদনটি ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।

তিনি  বলেন,“এ প্রতিবেদনের সবচেয়ে বড় দিকটি ছিল, আমরা প্রধান দুটি বহুজাতিক গ্যাস কোম্পানিকে দাতব্য সংস্থা, ডাক্তার, এনজিও এবং সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করি। এর আগে কখনো তাদের আলোচনার টেবিল পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়নি।”

জাইলস আরও বলেন, “আমি কিছুটা বড়াই করেই বলছি, আমরা যদি এমনটা না করতাম তাহলে হয়তো অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হতো।”

জাইলস ও তাঁর টিবিআইজের দল বিশ্বাস করে যে, শুধু তথ্য প্রকাশের মধ্যেই সাংবাদিকতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য নিয়ে হাজিরও হতে হয়। যারা প্রতিনিয়ত একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে চেষ্টা করেন, তারা যেন তথ্যগুলোকে কাজে লাগাতে পারেন।

তিনি বলেন, “আপনি যদি কিছু খুঁজে পান, আর তা ভুক্তভোগী সম্প্রদায়, নীতিনির্ধারক, কর্মকর্তা কিংবা মন্ত্রীদের সামনে তুলে না ধরেন, তাহলে কাজটি আপনি কেন করছেন?”

TBIJ - Comparing Oxygen Prices in Africa

বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ বৃদ্ধির সময় বোতলজাত অক্সিজেনের জন্য কতটা মূল্য ধরা হয়েছিল— তা তুলে ধরেছে লন্ডন-ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ব্যুরো। ছবি: স্ক্রিনশট, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ব্যুরো

হ্যাশট্যাগ অ্যান্টি-ডায়েট: আপনার যত খুশি চিনি খান

“গত দশকে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে” বলে উল্লেখ করেন এক্সজ্যামিনেশন উইল ফিটজগিবন। তিনি আইসিআইজের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে পানামা পেপারস, ফিনসেন ফাইলস এবং প্যান্ডোরা পেপারসের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ওয়াশিংটন, ডিসি থেকে বুর্কিনা ফাসো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন সাংবাদিকদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আর্থিক অপরাধ শনাক্তের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক তিনি।

“আমরা কীভাবে স্বাস্থ্য বাণিজ্যের বলি হচ্ছি, ওষুধ শিল্পের কর্পোরেট খেলোয়াড়রা কীভাবে আমাদের অসুস্থ ও হত্যা করছে— নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের যদি এ বিষয়ক অনুসন্ধানের জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলা যায়, তবে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও রীতিমতো বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। যেমন করে আর্থিক অপরাধ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে, “অপরাধ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর” বা অর্থ পাচারের বিষয়গুলো সাংবাদিকেরা তুলে ধরতে সক্ষম হন।

তিনি বলেন, এটি করার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া ও তা বিশ্লেষণে পারদর্শী করে তোলা।

যেমন, ভেপিং ধূমপানের চেয়ে ৯৫ শতাংশ নিরাপদ— এমন দাবী করে একটি “বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র” প্রকাশ করা হয়েছে। এ ধরনের গবেষণাপত্রের তথ্যে উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন লেখার পরিবর্তে অবিলম্বে প্রশ্ন করা যে, কে বা কারা এ গবেষণাতে অর্থায়ন করেছে। পাশাপাশি গবেষণাপত্রের লেখক, সুনির্দিষ্ট কোম্পানি আর দালাল গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার সংযোগগুলো খতিয়ে দেখা।

এ সময় তিনি এক্সজ্যামিনেশন সঙ্গে ওয়াশিংটন পোস্টের সর্বশেষ যৌথ অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে “ডায়েট-বিরোধী” (এন্টি-ডায়েট) বার্তা প্রচার করতে খাদ্যপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো কীভাবে ডায়েটিশিয়ানদের স্পনসর করে তা নিয়ে বলেন। মূলত অতিরিক্ত ওজন কিংবা অতিরিক্ত হালকা-পাতলা শারিরিক গড়ন থাকার অস্বাস্থ্যকর দিকগুলোর বিরুদ্ধে  লড়াই করার লক্ষ্যে ডায়েট-বিরোধী আন্দোলন শুরু হলেও বিশ্বব্যাপী খাদ্য বিপণনকারীরা এখন বিষয়টিকে পুঁজি করে তাদের পণ্যের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।

অনুসন্ধানটি প্রকাশের পর ভোক্তাদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পক্ষ থেকেও ইনফ্লুয়েন্সারদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের অর্থ দিয়েছে, আর কতজন তা নিয়েছে সে বিষয়ক কোনো তথ্য তুলে ধরা হয়নি।

ফিটজগিবন বলেন, “যে কোম্পানিগুলো আইসক্রিম এবং চিনিযুক্ত সিরিয়াল তৈরি করে তারা এ ধরনের [আন্দোলন] পছন্দ করে ও বার্তাটি প্রচার করে।” অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তৈরির সময় কমপক্ষে ১০ হাজার অনুসারী (ফলোয়ার) রয়েছেন এমন ৬৮ জন নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ানদের ৬ হাজারের বেশি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায় ডায়েটিশিয়ানদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ—সম্মিলিতভাবে যাদের অনুসারীর সংখ্যা ৯০ লাখের বেশি— তারা খাদ্য, পানীয় ও বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট প্রস্তুতকারী কোম্পানির পণ্যের প্রচারণা চালানোর সময় এন্টি-ডায়েট শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যদিও কে তাদের অর্থায়ন করেছে তা কখনও উল্লেখ করেননি।

তবে রিপোর্টাররা খুঁজে পেয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান “ফুড শেমিং” (কোনো ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস বা পছন্দের খাবার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা)-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এন্টি-ডায়েট গবেষণা ব্যবহার করে “বহু-মুখী প্রচারাভিযানের” নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে দেশে হ্যাশট্যাগ ডিরেইল দ্যা শেম (#DerailTheShame) ব্যবহার করে অনলাইনে তাদের সিরিয়ালের প্রচার-প্রচারণার চালাতে ডায়েটিশিয়ান এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের স্পনসর করে। শুধু এই নয়, পণ্যের লেবেলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য যোগ করার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে।

@no.food.rules So many things need to stay in the early 2000’s…. especially when it comes to food rules! #nofoodrules #intuitiveeating #foodfreedom #nondiet #nutritiontips ♬ Monkeys Spinning Monkeys – Kevin MacLeod & Kevin The Monkey

সাংবাদিকেরা আরও দেখেছেন যে, গত তিন বছরে, “অ্যান্টি-ডায়েট” উল্লেখ করা একাডেমিক গবেষণার সংখ্যাও বেড়েছে তিনগুণ

অনুসন্ধানটি প্রকাশের পর ভোক্তাদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পক্ষ থেকেও ইনফ্লুয়েন্সারদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে কোন প্রতিষ্ঠান অর্থ দিয়েছে, আর কতজন তা নিয়েছে সে বিষয়ক কোনো তথ্য সামনে তুলে ধরা হয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এন্টি-ডায়েট ধারণার প্রতি আগ্রহ যেভাবে বেড়েছে

The Examination - Anti-Diet messaging spikes

এক্সজ্যামিনেশন ও ওয়াশিংটন পোস্টের যৌথ অনুসন্ধানে তুলে ধরা হয়, কীভাবে প্রধান খাদ্য কর্পোরেশনগুলো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং একাডেমিক স্টাডিতে “ডায়েট-বিরোধী” বার্তাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছবি: দ্য এক্সজ্যামিনেশন

রিপোর্টিং এবং সামাজিক আন্দোলন: সাংবাদিকেরা কি সীমারেখা পেরিয়ে যাচ্ছেন?

কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অলাভজনক মিডিয়া সংস্থা ভেকিসিসার মিয়া মালান। রিপোর্টিংয়ের জন্য ৩০ টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন।

তিনি লক্ষ্য করেছেন যে ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের চিরন্তন সমস্যা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধটি তৈরি করতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে (ডেভলপমেন্ট কস্ট) তা গোপন রাখে। এছাড়া তারা যে দামে ওষুধগুলো সরকারের কাছে বিক্রি করে সে সম্পর্কিত কোনো তথ্যও প্রকাশ করে না।

মালান যেমন বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন যে, এইচআইভি নয়, বরং যক্ষ্মা রোগে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাধিক লোকের মৃত্যু হচ্ছে। “যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ… তবে কে বাঁচবে আর কে মারা যাবে, আজও সে সমাধান মেলেনি।”

একাধিক ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর-টিবি) রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বাজারে খুব কম ওষুধ পাওয়া যায়। এ রোগের চিকিৎসায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় ভুক্তভোগীকে। যেমন টানা ১৮ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত ইনজেকশন নিতে হয় তাদের। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াটি হচ্ছে, এটি শোনার সক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস করে আপনাকে বধির করে দেয়। তাই আপনাকে বেছে নিতে হবে, আপনি কী যক্ষ্মা থেকে মুক্তি চান, নাকি কানে শুনতে চান। তবে ব্যতিক্রম শুধুমাত্র একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান”, বলেন মালান।

মালান ও তার দলটি দেখতে পেয়েছে, ব্যতিক্রমী ওই ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি আফ্রিকার অন্যান্য সরকারগুলোর তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিগুণ দামে ওষুধ বিক্রি করে। আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক সমঝোতা চুক্তি বা অন্য কোনো উপায়ে কম ব্যয়ে ওষুধটি কিনতে পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে উচ্চ মূল্যে তা কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, “দ্বিগুণ মূল্য চুকিয়ে আমাদের সরকার যে পরিমাণ ওষুধ কিনতে সক্ষম হয়, তা দিয়ে কেবল অর্ধেক লোকের চিকিৎসা সম্ভব হয়… তাই এক্ষেত্রে আমরা এমন একটি পন্থা অবলম্বন করেছি, সচরাচর আমরা যা করিই না।”

এক্ষেত্রে তারা অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যারা ওষুধের ন্যায্য মূল্যের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর, তারা এনজিওর সঙ্গে একটি ইভেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর দুই সপ্তাহ পরেই সংস্থাটি ঘোষণা করে যে, তারা ওষুধের দাম অর্ধেক কমিয়েছে। “রিপোর্টিং এবং সামাজিক আন্দোলন—একসঙ্গে না এগোলে এটি কখনই সম্ভব হতো না… আমার কাছে স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই: এটি করা কি ঠিক ছিল? যদি আমরা না করতাম, আমরা কখনই এই ফলাফলটি দেখতে পেতাম না। তবে এটি এমন একটি সীমানা— যা সাংবাদিকদের সবসময় অতিক্রম করা উচিত নয়,” মনে করেন মালান।

দায়-দায়িত্ব ভাগ করে নিন

বড় করপোরেশনগুলোর ওপর কাজ করার সময় তারা কী ধরনের আইনি ও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন তা নিয়ে বলেন মালান।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরির জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। বিশেষ করে আইনি খরচ আছে, যা অনেক সময় আমাদের সামনে বাধা তৈরি করে। কারণ আমাদের এমন সব বহুজাতিকদের প্রতিষ্ঠানকে মোকাবিলা করতে হয়, যাদের ঝানু আইনি দল রয়েছে। আর আমাদের একজন আইনজীবীকে নেওয়ার জন্য তাকে ঘন্টা প্রতি অর্থ দিতে হবে।”

তামাক কোম্পানিগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার লিম্পোপো প্রদেশের দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ কৃষকদের কীভাবে শোষণ করছে তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি সম্পর্কে মালান বলেন, “আমরা শুধুমাত্র একটি পর্যায় পর্যন্ত তুলে ধরতে পারি। এর বেশি করার আইনি প্রভাবগুলো আমাদের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না।”

 

অন্য প্যানেলিস্টরাও একমত যে, আর্থিক সীমাবদ্ধতাগুলো আমাদের বাস্তবতা। অনেক সাংবাদিককেই যেটির মুখোমুখি হতে হয়। আর তা মোকাবিলার জন্য সবাইকে আরও বেশি আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান তারা।

পুলিৎজার সেন্টারের সুসান ফেরিস বলেন, “আন্তর্জাতিক মিডিয়া অংশীদাররা জটিল বা বিপজ্জনক প্রতিবেদন তৈরিতে জড়িত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”

আইনি হুমকি আর কর্পোরেট চাপ সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা তাদের লক্ষ্যে অটল থাকে, জটিল ডেটা ঘেঁটে তথ্য উদ্ধার করে সত্য খবর তুলে ধরে। তাদের বার্তা স্পষ্ট: তামাকের বড় বড় কোম্পানি হোক বা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা, আমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা, অনুসন্ধান চালানো এবং তা নিয়ে প্রতিবেদন করতে হবে।

কারণ আজকে আমরা প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে গল্পগুলো বলি, আগামীকাল তা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।

আইজেএফের পুরো প্যানেলটি ইউটিউবে নীচে দেখুন:


Serdar Vardarসেরডার ভার্ডার একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। বুয়েনস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রী নিয়েছেন। এক দশকেরও বেশি সময় দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাস করার পর তিনি ডয়চে ভেলের হয়ে তুরস্ক এবং পরিবেশের ওপর বৈশ্বিক প্রতিবেদন করতে জার্মানিতে চলে আসেন। ভার্ডার আইসিআইজে-এর গ্লোবাল প্যান্ডোরা পেপারস এবং শ্যাডো ডিপ্লোম্যাটদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে অংশ নিয়েছেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

AI fact checking 2024 elections

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ঠেকাচ্ছে জেনারেটিভ এআই, বৈশ্বিক দক্ষিণে প্রভাব কম

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এআই ব্যবহার করে ভুয়া তথ্যের প্রচার যেমন চলছে, তেমনি সত্যতা যাচাইয়ের কাজও করছে এআই। কিন্তু পশ্চিমের বাইরের দেশগুলোয় তথ্য যাচাইয়ে এআই খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। আছে নানা সীমাবদ্ধতা।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত ৮টি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে। যেখানে উঠে এসেছে ভুয়া লেখক-বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্য; টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল; বিদেশে রাজনীতিবিদের সম্পদের খোঁজ— এমন নানা বিষয়।

threats democracy journalism tips expose disinformation

পরামর্শ ও টুল

গণতন্ত্রের জন্য ৫টি আসন্ন হুমকি এবং তা উন্মোচনের কৌশল

বিশ্বজুড়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বড় পাঁচটি হুমকি এবং সাংবাদিকরা কীভাবে এর বিরুদ্ধে লড়তে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন অভিজ্ঞ সাংবাদিকেরা।

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ফেসবুক, টুইটার ও টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি অনুসন্ধান নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বললেন

গত এক দশকে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্রুতগতির বিবর্তন সমাজের ওপর সুদূরপ্রসারী ও গুরুতর প্রভাব বিস্তার করেছে। এসব প্রভাব নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অবশ্যই কোম্পানিগুলোর জটিল ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বুঝতে হবে এবং প্রতিবেদনের অভিনব অ্যাঙ্গেল নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। ২০২৩ ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিজম ফেস্টিভ্যালের একটি আলোচনায় এমনটাই বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পড়ুন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে অনুসন্ধানের এমন কিছু ভাবনা।