Cartoon: Al Hudood. (It’s Arabic, so goes from right to left.)
সাংবাদিকতার পাঠক বাড়াতে স্যাটায়ার
কার্টুন: আল হুদুদ। (কার্টুনটি আরবি অনুসারে করা। ফলে ডান থেকে বামে দেখুন।)
“যদি মানুষকে সত্য জানাতে চাও, তাহলে হাসাও, নইলে তারাই তোমাকে মেরে ফেলবে।” ― অস্কার ওয়াইল্ড
স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গ আপনার সাংবাদিকতাকে বিনোদনময় করে তুলতে পারে, নতুন পাঠকদের কাছে প্রতিবেদনকে করে তুলতে পারে আরো বোধগম্য। অবশ্য ভুয়া খবরের এই যুগে স্যাটায়ার তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। তাই মাথায় রাখতে হবে এটি যেন ভালো সাংবাদিকতা থেকে পাঠকের মনোযোগ না সরিয়ে, বরং তাকে আরো শক্তি যোগায়। প্রশ্ন হলো: আপনি খবরের শিরোনামকে ব্যঙ্গধর্মী পাঞ্চলাইন (যে বাক্য গভীরভাবে নাড়া দেয়) কিভাবে বানাবেন?
স্বৈরশাসক বা বাকস্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরতে চান যারা, তারা স্যাটায়ার পছন্দ করেন না। একারণে স্যাটায়ারিস্ট এবং কার্টুনিস্টরা তাদের কোপানলে পড়েন সবার আগে। মনে রাখবেন, “হাসি” এমন এক বস্তু যা চরম আশাহীনতার মধ্যেও শক্তি যোগায়; যেখানে ভয়ের রাজত্ব, সেখানে মানুষের মনে সাহস জাগায়। যদি দক্ষতার সাথে তৈরি করা যায়, তাহলে স্যাটায়ার তুলে ধরতে পারে রুঢ় সত্য, প্রতিরোধ হয়ে দাঁড়াতে পারে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, বিষয়বস্তুকে করে তুলতে পারে প্রাণবন্ত, আর পাঠককে বিনোদন দিতে পারে এমনভাবে যা সোজাসাপ্টা সাংবাদিকতার মাধ্যমে সম্ভব নয়।
স্যাটায়ার মানে নিছক কৌতুক নয়। তাতে মজা থাকবে অবশ্যই, কিন্তু একই সাথে চাই শক্তিশালী বক্তব্য। তাতে থাকতে হবে বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর অন্তদৃষ্টি, আর পাঠকের মনে ধাক্কা দেয়ার মত ক্ষমতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেইলি শো ইফেক্ট বলে একটি কথা আছে। সেখানে মানুষের মনে স্যাটায়ারধর্মী কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স শোর প্রভাব নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। এই ধরণের ফরম্যাট তরুণ দর্শকদের দারুনভাবে আকৃষ্ট করে, এবং রাজনৈতিক কমেডি দেখতে দেখতে তারা সংবাদ দেখা, সঠিক তথ্য জানা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। জার্নাল অব কমিউনিকেশন থেকে ২০১৭ সালে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে – রাজনীতিতে যাদের আগ্রহ নেই, তাদের মনেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এই স্যাটায়ার। এটি তাদের মনে বিশ্বাস যোগায়; ভাবতে শেখায়, চাইলে তারাও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এতো গেল ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা। কিন্তু এর কিছু খারাপ দিকও আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সময় স্যাটায়ারের প্রভাবে পাঠকের মনোভাব আরো উগ্র ও রক্ষণশীল হয়ে ওঠে, এটি উন্মাদনা তৈরি করে, এবং সমাজে রাজনৈতিক বিভক্তি আরো বাড়িয়ে তোলে। ( অবশ্য এসব গবেষণা হয়েছে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তাদের দেশের দর্শকদের ওপরে এবং সেখানকারই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।)
স্যাটায়ার মানে নিছক কৌতুক নয়। সেখানে মজা থাকবে অবশ্যই, কিন্তু একই সাথে থাকবে শক্তিশালী বক্তব্য। তাতে থাকতে হবে বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর অন্তদৃষ্টি, আর পাঠকের মনে ধাক্কা দেয়ার মত ক্ষমতা। এসব বিষয় নিয়ে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের স্বাধীন সাংবাদিকতা কর্মসূচির প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আমিনা বুবিয়া কথা বলেছেন খ্যাতনামা দুই স্যাটায়ারিস্টের সাথে। তাদের একজন ইসাম উরাইকাত, অপরজন হুয়ান রাভেল। ইসাম হলেন আল হুদুদ নামের একটি ব্যাঙ্গধর্মী গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা। তাদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের অনিয়ন (বিখ্যাত স্যাটায়ার সাইট) বলে ডাকেন অনেকেই। আর হুয়ান হলেন ভেনেজেুয়েলার কন্টেন্ট যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান প্লপ মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী। তিনি একই সাথে ব্যঙ্গধর্মী গণমাধ্যম এল চিগুয়ের বাইপোলার পরিচালনা করেন।
ইসাম বলুন তো, মধ্যপ্রাচ্যে পাঠকদের কাছে টানতে স্যাটায়ার এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কেন?
ইসাম উরাইকাত: স্যাটায়ার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ এটি একসাথে অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারে। যেসব বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না, সমাজের সেসব ইস্যুকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত। তাই এখানে এর গুরুত্ব আরো বেশি। এটি এমন এক ফরম্যাট যা সেন্সরশিপ এড়াতে পারে, কারণ কর্তৃপক্ষ জানে না কিভাবে একে সামাল দিতে হবে।
আল হুদুদের প্রতিদিনকার কার্যক্রম কেমন?
উরাইকাত: আমরা প্রতিদিন এডিটোরিয়াল মিটিং করি। আলোচনা করি, মধ্যপ্রাচ্যে ঐ দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে। এজন্য আমাদের ব্যাপক মিডিয়া মনিটরিং করতে হয়। সেখান থেকে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বাছাই করতে হয়। তারপর নিজেদের প্রশ্ন করি: “এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান কি হওয়া উচিত? আমারা কী বলব? কেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ? এখানে সমস্যা কোথায়? মোচড় কোনখানে?” এভাবেই আমরা অ্যাঙ্গেল খুঁজে বের করি। তারপর আমরা কৌতুক কিভাবে করব, সেই ভাষা ঠিক করি।
”আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, শিরোনাম। যে শিরোনামটি ছাপা হয়, সেটিতে পৌঁছানোর আগে আমরা কোনো কোনো সময় ৩০টি পর্যন্ত বিকল্প নিয়ে কাজ করি।” — ইসাম উরাকিয়াত, প্রতিষ্ঠাতা, আল হুদুদ
কৌতুক বা মজা খুঁজে বের করা খুব কঠিন নয়। এজন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পথে চিন্তা করা শিখতে হবে। বিষয়টি অনেকটা মগজের ভেতরে থাকা কিছু ছাঁচ বা টেমপ্লেটের মধ্য থেকে সঠিকটিকে বেছে নেয়ার মত। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে সম্পাদকীয় অবস্থান ঠিক করা। মতামত পাতায় কিছু লেখার আগে যা করতে হয়, এটিও ঠিক তেমনই। প্রত্যেক দিন নতুন ব্যঙ্গধর্মী লেখা প্রকাশের জন্য আমরা একটি পদ্ধতি তৈরি করে নিয়েছি। মাসিক ছাপা সংষ্করণেও এই পদ্ধতি কাজে আসে। স্যাটায়ার কিভাবে লিখতে হয়, কোনটি ভালো স্যাটায়ার আর কোনটি মন্দ – এসব বিষয় ব্যাখ্যা করে আমরা ৩০ পাতার একটি নীতিমালা বানিয়ে নিয়েছি। এটি তৈরি করতে আমাদের প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। দলে নতুন কোনো সদস্য যোগ দিলে, তাকে আগে এই নীতিমালা পড়ানো হয়।
ভালো স্যাটায়ার তৈরির সেরা রেসিপি কী?
উরাইকাত: কঠিন কোনো বিষয়কে মজা করে উপস্থাপনই হচ্ছে স্যাটায়ারের প্রাণ। আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে শিরোনাম। যে শিরোনাম ছাপা হয়, তাতে পৌঁছানোর আগে আমরা কোনো কোনো সময় ৩০টি পর্যন্ত বিকল্প নিয়ে কাজ করি। গল্প যত গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে গল্পের প্যাকেজিং কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
স্যাটায়ার কি শেষ পর্যন্ত লেখকের ব্যক্তিত্ব ও রসবোধের ওপরই নির্ভরশীল নয়?
উরাইকাত: ব্যক্তিত্ব অনেক সময় ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি করে। কারণ আপনাকে যা বলতে হবে, তা বস্তুনিষ্ঠভাবে উচ্চারণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দেখা যায়, অনেক স্যাটায়ারিস্ট সঠিক আধেয় বা শব্দের চেয়ে তার ব্যক্তিগত কারিশ্মার ওপর নির্ভর বেশি করেন। আমাদের দলে অবশ্য বেশিরভাগ সদস্যই লাজুক প্রকৃতির। মনে রাখবেন, স্বভাবজাত কৌতুকবোধ না থাকলেও ব্যঙ্গধর্মী লেখা কিভাবে লিখতে হয়, অনেকে তা শিখে নিতে পারেন। আমরা ব্যঙ্গধর্মী সংবাদ লেখার ওপরে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করি। প্রশিক্ষণার্থীদের ছোট ছোট অনুশীলন করতে দিই, আমরা কিভাবে কাজ করি দেখার সুযোগ করে দিই, সম্পাদকীয় বৈঠকে নিয়ে তাদের সাথে স্টোরি আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করি। ভালো কন্টেন্ট তৈরির জন্য সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এখান থেকে তারা বুঝতে পারে। আল হুদুদে শুধু একটি কথাই বলা বারণ: “এটা মজার হয়নি।” এমন সমালোচনা দিয়ে কাউকে কিছু শেখানো যায় না।
আপনাদের স্টোরি যে সঠিক বার্তা দিচ্ছে বা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেনা, তা কিভাবে নিশ্চিত করেন?
“আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি, যাতে আমাদের ব্যঙ্গধর্মী প্রতিবেদনগুলোর অপব্যাখ্যা না হয়। কারণ তাহলে সেটি ভুয়া খবরে পরিণত হবে। গল্পে পর্যাপ্ত রসবোধ না থাকলে এমনটা ঘটে।” — ইসাম উরাকিয়াত, প্রতিষ্ঠাতা, আল হুদুদ
উরাকিয়াত: আপনাকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অনেক সময় স্যাটায়ার পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তোলে। দেখা যায়, তার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে এবং সেই ভুলব্যাখ্যার কারণেই সেটি ভাইরাল হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি এড়াতে আমরা ১১টি নীতিমালার একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। (এর মানে এই না আমরা ভাষাকে নরম করি। তবে চেষ্টা করি, যাতে ভাষার ব্যবহারে অতিরঞ্জন না থাকে। ১১টি নীতির মধ্যে ১০টি মানা হলো, আর রিপোর্ট ছেড়ে দিলাম – এমন নয়। আমরা নিশ্চিত করি যেন ১১টি নীতির প্রত্যেকটি মেনে চলা হয়।)
আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি, যাতে আমাদের ব্যঙ্গধর্মী প্রতিবেদনগুলোর অপব্যাখ্যা না হয়। কারণ তাহলে সেটি ভুয়া খবরে পরিণত হবে। গল্পে পর্যাপ্ত রসবোধ না থাকলে এমনটা ঘটে। আমরা যতটা সম্ভব স্টোরির সব দিক বিবেচনা করি। যেমন, সৌদি-ইরান বিরোধের ঘটনায় আমরা যদি সৌদি আরব নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করি, তাহলে নিশ্চিত করি সেখানে ইরান নিয়েও যেন কিছু থাকে। যেখানে সম্ভব আমরা একই স্টোরিতে দুই দিকই তুলে ধরার চেষ্টা করি, কারণ স্টোরিরও একটি জীবনকাল আছে। এমনকি আমরা শিরোনামেও সেই ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করি। কারণ স্টোরি যত জন পড়েন, তার চেয়ে ছয়গুণ বেশি মানুষ শিরোনাম পড়েন।
ল্যাটিন আমেরিকায় ঝড় তোলা লাভা হাতো (‘কার ওয়াশ’) কেলেঙ্কারি নিয়ে, কয়েকটি “মজার কিন্তু ব্যাখ্যামূলক” ভিডিও তৈরি করতে প্লপ মিডিয়া সাহায্য করেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাইট আইডিএল-রিপোর্টেরোসকে। ভিডিওগুলো ইউটিউবে প্রকাশ করেছে আম্পলি কন্টেন্ট ল্যাব। হুয়ান, এই ভিডিওতে আপনার সবচেয়ে প্রিয় অংশ কোনটি?
হুয়ান রাভেল: একটি অংশ আছে যেখানে “ব্রাইবারি ডিপার্টমেন্ট” অর্থ্যাৎ ঘুষ বিভাগ কিভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করা হয়। সেটিই আমার সবচেয়ে প্রিয়। এর উপস্থাপনা সাদামাটা এবং বেশ মজার, আর অ্যানিমেশনও একেবারে নিখুঁত। এই কাজের জন্য আমরা একটি মেক্সিকান অ্যানিমেশন স্টুডিওর সহায়তা নিয়েছি। তারা বিবিসি, ডিসকভারি কিডস্ এবং কার্টুন নেটওয়ার্কের সাথে নিয়মিত কাজ করে। এটি ছিল তাদের প্রথম রাজনৈতিক স্যাটায়ার, যদিও কাজটি তারা করেছে বেশ দক্ষতার সাথে।
.
(ভিডিওর ৫ মিনিট ২৮ সেকেন্ড থেকে দেখুন)
এই কোলাবরেশন থেকে আপনারা কী শিখলেন?
রাভেল: বিষয়বস্তু হিসেবে লাভা হাতো কেলেঙ্কারি বেশ জটিল, আর আমাদের হাতে তথ্যও ছিল একগাদা। তাই অন্য যে কোনো ব্যঙ্গধর্মী কাজের চেয়ে এখানে গবেষণায় সময় দিতে হয়েছে অনেক বেশি। এটাই আমাদের প্রথম শিক্ষা। প্রথমে ভেবেছিলাম, শুধু স্কেচ অ্যানিমেশন দিয়ে কাজ চলবে। কিন্তু বিষয়বস্তু জটিল হওয়ার কারণে তাতে স্যাটায়ার, রসিকতা এবং সাক্ষাৎকারও দিতে হয়েছে। ভিডিওগুলো আমরা তৈরি করেছি ব্যাখ্যামূলক (এক্সপ্লেইনার) ডকুমেন্টারি ধাঁচে, যাতে বৃহত্তর চিত্রটা তুলে ধরা যায়, আর দর্শকরাও সহজে বুঝতে পারেন।
গোটা সিরিজে আমাদের অনেক তথ্য যাচাই করে নিতে হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, ভিডিওর প্রতিটি তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা এবং তাকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। এজন্যই সহযোগী সংগঠনের সাথে (এখানে আইডিএল রিপোর্টেরোস) ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। এখানে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে, কিন্তু আমরা কাজ করে আনন্দও পেয়েছি। অবশ্য পেশায় নতুন হলে, শুরুতেই এত বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত নয়।
এর পরে আপনাদের কাজের ধরণ কি বদলেছে?
“অনেক গল্পই আরো বেশি সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছানো যায়, যদি তাতে একটু কৌতুক বা স্যাটায়ার মেশানো থাকে।” হুয়ান রাভেল, সিইও. প্লপ মিডিয়া
রাভেল: সব গল্পই যে আপনাকে একই ধাঁচে বা ছাঁচে বলতে হবে, তা নয়। কখনো কখনো ছোট ভিডিওতেই বেশি কাজ হয়। আপনার যদি একজন ভালো উপস্থাপক থাকে – একটি ভালো স্ক্রিপ্ট তৈরি করে, তার মুখের ওপর ক্যামেরা ধরে, সেই ভিডিও কিছুটা কাটছাঁট করে নিয়ে – আকর্ষণীয় শো বানিয়ে ফেলা যায়। আমরা অন্যখানেও এমন কাজ করেছি। এখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বাধীন কিছু গণমাধ্যমের সাথেও কথাবার্তা চলছে। আমরা তাদের সহযোগী হতে চাই, যেন তারা নিজ নিজ সাইটের জন্য এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে। আরেকটি বিকল্প নিয়েও আলোচনা হচ্ছে – দুই মিনিটের ছোট ভিডিও তৈরি করা, যাতে সেটি দেখে পাঠকরা ওয়েবসাইটে গিয়ে মূল স্টোরিটি পড়তে আগ্রহী হন। যদি তারা না-ও পড়েন, তারপরও ছোট ভিডিও দেখে বুঝে যাবেন, আসলে কী ঘটেছে। আমরা ধীরে ধীরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কন্টেন্ট এজেন্সি হয়ে যাচ্ছি।
এই কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় কোন বাধাটি আপনাদের উৎরাতে হয়েছে?
রাভেল: লাভা হাতো কেলেংকারি নিয়ে কাজ করাটা বেশ কঠিন ছিল। আমাদের সাইট এল চিগুয়ের বাইপোলারে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কাজ করে অভ্যস্ত। এটি অনেকটা অনিয়নের মত: আমরা বাস্তবতা নিয়েই কথা বলি, কিন্তু তাতে হাস্যরস জুড়ে দিই। কেউ আমাদের বলে না, কী করতে হবে। কোনো বিষয়ে কাউকে কোনো ছাড়ও দিতে হয় না। কিন্তু লাভা হাতোতে কাজ করতে গিয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো: আমরা মজা করে যা-ই বলতে চাচ্ছি, সত্যিকারের ঘটনার সাথে তা ঠিক মিলছে না। তাই আমাদের ছাড় দিতে হচ্ছিল। আমরা খুব মজার একটা কিছু বলতে যাই, আর তারা (অনুসন্ধানী সাংবাদিক) শুধু সেখানে ভুল ধরিয়ে দেয়। তাদের শঙ্কা ছিল, কৌতুকময় উপস্থাপন শেষ পর্যন্ত পাঠককে বিভ্রান্ত করবে, এবং তারা ঘটনাটিকে মিথ্যা বলে ধরে নেবে। এই কোলাবরেশনে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আমরা যদি শুধু নিজেরা এই ভিডিও বানাতাম, কোনো সন্দেহ নেই তাতে অনেক ভুল থাকতো।
আপনি কি বলেন, পাঠক আকর্ষণের জন্য সাংবাদিকতায় হাস্যরস ব্যবহার করা উচিত?
রাভেল: অনেক গল্পই আরো বেশি সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছানো যায়, যদি তাতে একটু কৌতুক বা স্যাটায়ার মেশানো থাকে। ওয়াশিংটন পোস্টে তো এমন লোকই আছে, যিনি স্যাটায়ার করেন এবং তাদের টিকটক একাউন্ট চালান। কিন্তু এমন কিছু বিষয়ও আছে যা হাস্যরস দিয়ে উপস্থাপন অসম্ভব, অথবা স্পর্শকাতর। যেমন, আমরা এখন সেন্ট্রাল আমেরিকার অভিবাসন সংকট নিয়ে একটি কাজ করছি। আমাদের সাথে বার্তোলো ফুয়েন্তেস নামের একজন রিপোর্টার কাজ করছেন। তিনি অভিবাসীদের বহরের সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু তার সাথে আমরা ভেনেজুয়েলার একজন কমেডিয়ানকেও রেখেছি। তিনি একটি ক্যামেরা নিয়ে কুকুতা থেকে বোগোতা পর্যন্ত শরণার্থীদের সাথে হেঁটে হেঁটে এসেছেন। তার ওয়েব শোতে সবচেয়ে দারুন যে বিষয়টা ছিল, সেখানে হাস্যরস ভরা কথাগুলো আসছিল চারপাশের অভিবাসীদের কাছ থেকে। এখানে আমরা তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করিনি, বরং তাদের সঙ্গে হেসেছি। এটা যে কত কঠিন, বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এজন্য তাদের সাথে লম্বা পথ হাঁটতে হয়েছে, ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে হয়েছে, একসাথে থাকতে হয়েছে; আর একই সময় নিজের কল্পনাশক্তি ও রসবোধকেও চাঙ্গা রাখতে হয়েছে। এভাবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে, ফলে কঠিন এই সময়েও তারা ক্যামেরার সামনে মজা করতে পেরেছেন।
এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ফর ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিজম নিউজলেটারে। এখানে অনুমতি নিয়ে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। নোট: ওএসএফ হচ্ছে জিআইজেএনের অন্যতম দাতা প্রতিষ্ঠান।
আমিনা বুবিয়া ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ফর ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিজমে কর্মসূচি বিশারদ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এর আগে দিন ওয়া দুনিয়া নামের একটি গণমাধ্যমে কলামিস্ট ছিলেন। বুবিয়া, সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে (ইসলামী বিশ্ব বিষয় নিয়ে) পিএইচডি করেছেন।