মোজো ওয়ার্কিং: দেখে শুনে কিনুন আপনার নতুন স্মার্টফোন
ছবি: ডেভিড সারকিসভ / আনস্প্ল্যাশ
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ছাত্র বা সাংবাদিকরা শুরুতেই যেসব প্রশ্ন করেন, তার অন্যতম হলো “আমি কি আমার ফোনে মোজো করতে পারবো?”
উত্তর হলো, “মেমোরি না থাকলে পারবেন না।” মেমোরির অভাব থাকলে ফোনের গতি কমে যায়। এর মানে হলো, আপনি পর্যাপ্ত ছবি বা ভিডিও সংরক্ষণ করতে পারবেন না।
“আমার ফোন, অ্যান্ড্রয়েড।”
“খুবই ভালো…কিন্তু অনেক মেমোরি আছে?”
“ফোনটি বেশ পুরনো। তাহলে কি নতুন একটা দরকার?”
“অবশ্যই, অনেক মেমোরি-ওয়ালা একটি নতুন ফোন নিন।”
“আচ্ছা, কোন ফোন কিনবো?”
২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী আড়াইশো কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ছিল। যে পরিমাণ মোজো-উপযোগী স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে, তাতে “কোন ফোনটি” কেনা উচিৎ, সে প্রশ্ন এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠে আসছে। ২০১৮ সালে আইফোনের বিক্রি কমে মাত্র ২১ কোটি ৭০ লাখে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, পাঁড় আইফোন ভক্তরাও অন্য দিকে ঝুঁকছেন, অথবা অপেক্ষায় বসে আছেন, ভবিষ্যত-ডিভাইসের গুজব কবে সত্যি হবে।
স্মার্টফোন মূলত, দুইটি প্ল্যাটফর্মের হয়। অ্যান্ড্রয়েড, যেটি জোটবদ্ধ হয়ে সংখ্যার বিচারে প্রতিযোগিতায় জিতে চলেছে। অন্যদিকে আইওএস একাই এগিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানে আছে। তো, দামী অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন এর মধ্যে কি বড় ধরণের তফাৎ রয়েছে? উত্তর হলো – কিছুটা। তুলনামূলক সস্তা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো কি ভালো? অবশ্যই। পুরনো ফোনটি দিয়ে কি আমার চলবে? যদি না হয়, তাহলে কোন ফোনটি আমার কেনা উচিৎ?
উত্তর খুবই সহজ। আপনার পুরনো ফোনটি দিতে যদি আপনি মোজো স্টোরি তৈরি না করতে পারেন, তাহলে আপনার নতুন একটি ফোন দরকার। আপনার ফোনটি যদি মোজো স্টোরি তৈরি করার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত হয়ে থাকে, অর্থাৎ লো লাইটে শ্যুট করা, ভালো ক্যামেরা, মাল্টি-লেয়ার্ড ভিডিও সম্পাদনার অ্যাপস এবং যদি অনেক মেমোরি থেকে থাকে, তাহলে আপনার উচিৎ টাকা বাঁচানো। আপনার এতেই চলবে।
পরামর্শ: পুরনো ফোনটি ছুঁড়ে ফেলবেন না। এর ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে শিখুন (মোজো ওয়ার্কিং কলামগুলো পড়ুন) এবং তারপর এটি বিক্রি করে দিন বা রেখে দিন। কেন রেখে দিবেন, তার কারণগুলো দেখুন নিচে।
এখানে থাকছে স্মার্টফোন নিয়ে প্রচলিত মিথগুলো খণ্ডন করার জন্য আমার চেকলিস্ট।
প্ল্যাটফর্ম – অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইওএস
আমি যখন মানুষকে মোজো বিষয়ক প্রশক্ষণ দিতে শুরু করি, তখন ফোন দিয়ে এতোকিছু করা যেতো না। প্রাথমিক অবস্থায় আইওএস নিঃসন্দেহে এগিয়ে ছিলো। কারণ, কাজের গতি, ভাইরাসের স্বল্পতা, মাইক্রোফোন বা ক্রেডলের মতো আনুষঙ্গিক টুলস ব্যবহারের সুবিধা এবং বেশি মোজো অ্যাপসের উপস্থিতি (দেখুন প্রয়োজনীয় মোবাইল সাংবাদিকতা টুলস)। আইওএস প্ল্যাটফর্ম এখনও ভাইরাস-মুক্তই বলা চলে, কিন্তু আনুষাঙ্গিক মোজো টুলস এখন সব প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহার করা যায়।
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যার অর্থ হচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মের জন্য যে কেউ অ্যাপ তৈরি করতে পারেন। যদিও, অ্যান্ড্রয়েড গুগলের অ্যালগরিদমিক শক্তির সহায়তা পায়, তবু মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ওএস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির একটা প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিটি মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই স্বকীয়তার ছাপ রাখার জন্য ওএস নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করে নেয়। এই কারণে সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য মানানসই অ্যাপ তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, বলেন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ প্রস্তুতকারকরা।
মোবাইল ব্যবহার করে স্টোরি তৈরি করার আরো পরামর্শ পেতে দেখুন জিআইজেএন এর মোবাইল জার্নালিজম রিসোর্স।
অর্থাৎ, একমাত্র সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে হাই-এন্ড মোজো অ্যাপস এর স্বল্পতা, বিশেষত সব ধরণের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য অডিও অ্যাপ, যেমন আইওএস এর ফেরিতে। আরেকটা সমস্যা দেখা দিতে পারে আপডেট নিয়ে। এতোগুলো ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ফোনে আপডেট পৌঁছানোর ব্যাপারটা বেশ সময় সাপেক্ষ। সবচেয়ে ভালো ফোনগুলোই আগে আপডেট পায়। সব ডিভাইসে আপডেট পৌঁছাতে বেশ সময় লাগে, এবং এ কারণে তা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
পরামর্শ: চীনের মতো দেশগুলোতে, যেখানে গুগল প্লে স্টোর ব্যবহার করা যায়না এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ স্টোরে সবকিছু পাওয়া যায়না, সে সব জায়গায় আপনার সতর্ক থাকতে হবে।
অ্যাপস
আমার মনে হয় অ্যাপস এর জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে আইওএস। আমি আইওএস এর মতো এতো ভালো ফ্রি অ্যাপস (আইমুভি, ভিডিওল্যাপ, ফেরিতে, ভন্ট ইত্যাদি) অ্যান্ড্রয়েডে পাইনি। অ্যাপগুলো দেখার জন্য প্রয়োজনীয় মোবাইল সাংবাদিকতা টুলস এবং স্মার্টফোনে সম্পাদনা কলাম দুইটি দেখুন। চীনের মতো দেশগুলোতে, যেখানে গুগলের সাথে সরকারের শীতল সম্পর্ক, সেখানে আপনি গুগল প্লে স্টোর না থাকার মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এর বদলে আপনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্টোর (ওইএম) পাবেন। অ্যালাইট ক্রিয়েটিভ এর সিইও অ্যাপ গুরু ম্যাথিউ ফেইনবার্গ বলেন, “চীনের অ্যাপ মার্কেটের অবস্থা বেশ বিভক্ত। শীর্ষ তিন অ্যাপ স্টোর হচ্ছে টেনসেন্ট, ৩৬০ এবং বাইডু। এগুলো হচ্ছে হুয়াওয়ে, ওপো, শাওমি (মিইউআই) এবং ভিভো এর ওইএম (নির্মাতা প্রতিষ্ঠান) অ্যাপ স্টোর।
পরামর্শ: এমন একটি ভালো ফোন কিনুন যেখানে আপনার মোজো কনটেন্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যাপ পাবেন।
ফোনের মৌলিক বিষয়
কাজ করার প্রক্রিয়া এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জানায়, এমন স্টোরি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে কার্যকরী মোজো শুরু হয় (দেখুন স্মার্টফোনে নির্মাণ এবং প্রযোজনা)। এর সাথে সাথে, শক্তিশালী চিপসেটসহ একটা সহজে ব্যবহারযোগ্য ফোন খুঁজে নিন, যাতে আনুষঙ্গিক টুলস, সব ধরণের ফরম্যাট এবং ওয়ার্কফ্লো কাজ করে। মাল্টি-কোর চিপসেট আছে, এমন ফোন ব্যবহার করুন। এগুলোতে অনেকগুলো কোর একসাথে কাজ করায় অ্যাপের গতি বেশি থাকে এবং চার্জ কম খরচ হয়। আপনি সম্পাদনার কাজ কিসে করবেন – ফোন, ট্যাবলেট না ল্যাপটপে? আপনার ফোনে কি ডিএসএলআর থেকে এসডি কার্ড ভিডিও নেওয়া যায়? এটায় কি এয়ারস্ট্যাশ এর আইএক্সপ্যান্ড এর মতো ট্রান্সফার ডিভাইস ব্যবহার করে ল্যাপটপে কন্টেন্ট পাঠানো যায়? এটার ব্যাটারি কি শক্তিশালী? এটি কি সম্প্রচারের উপযোগী হাই-এন্ড অ্যাপ চালাতে পারে?
আপনার ফোনে প্রচুর মেমোরি, স্বল্প আলোয় শ্যুট করার ক্ষমতা, ভালো ক্যামেরা এবং মাল্টি লেয়ার্ড ভিডিও অ্যাপ এর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।
মাইক্রোফোন পরিবর্তন করা বেশ খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। এবং নতুন হলেই ভালো হবে, এমন কোনো কথা নেই। কার্যকরিতাই মূল কথা। আমার পুরনো আইফোন ৬এস প্লাস এখনো আমার প্রিয় ফোন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার চয়েস ম্যাগাজিনের রিভিউতে এটি ৮১ শতাংশ স্কোর করেছে, যেখানে বাজারের সেরা ফোনটি সামান্য এগিয়ে থেকে করেছে ৮৪ শতাংশ। এতে ৪কে ভিডিও করা যায় (আমি প্রায় সবসময়েই ফুল এইচডি তে শ্যুট করি) এবং মাইক্রোফোন লাগানোর জন্য রয়েছে মিনি-জ্যাক। আপনি যদি লাইটনিং মাইক্রোফোন ইনপুট এর ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার মিনি জ্যাক টু লাইটনিং ক্যাবল বা অ্যাপলের মিনি-জ্যাক টু লাইটনিং অ্যাডাপ্টার দরকার হবে। অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করলে আপনার হয়তো টিআরএস টু টিআরএসএস অ্যাডাপ্টারও দরকার হতে পারে (দেখুন স্মার্টফোনে অডিও রেকর্ড)। আমি সবচেয়ে বেশি স্টোরেজ-ওয়ালা ফোন কিনি (এসডি কার্ডের সুবিধা-ওয়ালা অ্যান্ড্রয়েডে এটি কোন সমস্যাই না) এবং ফোনটি প্রাথমিকভাবে মোজো এর কাজেই ব্যবহার করি।
পরামর্শ: আপনি যদি নতুন ফোন কেনার কথা ভাবেন, তাহলে এর ফলে আপনার ক্রেডল, অ্যাডাপ্টার এবং মাইক্রোফোনও পরিবর্তন করতে হবে কিনা, ভাবুন। আমি এ কারণে বিস্টগ্রিপ ক্রেডল সিস্টেম ব্যবহার করি, কারণ এটি সব প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহার করা যায়।
পিক্সেলের রহস্য
বেশি মানেই সবসময় ভালো না। পিক্সেল হচ্ছে বৈদ্যুতিক সেন্সর (ফিল্ম) এর ওপর আবদ্ধ আলোর লাল, নীল এবং সবুজ রঙের একক। সেন্সর হচ্ছে ডিজিটাল ক্যামেরায় ফিল্মের পরিবর্তিত রূপ। এই সেন্সরে থাকে পিক্সেল, যাতে লেন্সের মধ্য দিয়ে আলোর মাধ্যমে দৃশ্য ধরা পড়ে এবং তা সেখান থেকে এসডি কার্ডে ছবি আকারে সংরক্ষিত হয়। পিক্সেলকে রূপক অর্থে পানি(এ ক্ষেত্রে আলো) রাখার বালতির সাথে তুলনা করা হয়।
পিক্সেলের ব্যাপারে সত্যিটা হচ্ছে, সংখ্যায় বেশি হলেই সেটি সবসময় ভালো না। অ্যাপল এর প্রাক্তন প্রকৌশলী নিখিল ভোগাল, যিনি ক্যামেরা প্রযুক্তির পেছনের কারিগর, বলেন, স্মার্টফোন ক্যামেরার ক্ষেত্রে, সেন্সরে থাকা পিক্সেলের গুণগত অবস্থা পিক্সেলে পরিমাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি যা বলতে চান তা হলো, পিক্সেলের আকার যতো বড় হবে, ততোই তার আলোর ধারণ ক্ষমতা বেশি হবে। সংখ্যায় বেশি হলে তা খুব একটা কাজে আসেনা। ধরি, একটি ১ ইঞ্চির ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সর এবং একটি ১ ইঞ্চির ২৪ মেগাপিক্সেলের সেন্সর আছে। তাহলে এখানে প্রথম সেন্সরে পিক্সেলের আকার দ্বিতীয়টির দ্বিগুণ হবে। তার মানে, স্বল্প আলোয় দ্বিতীয়টি থেকে প্রথম সেন্সরটি দ্বিগুণ বেশি আলো ধারণ করতে পারবে।
পরামর্শ: ২৪ মেগাপিক্সেল কখন বেশি ভাল কাজ করবে? যখন সেন্সরের আকারও দ্বিগুণ হবে। আপনার যদি একটি বাজে ক্যামেরা এবং বাজে লেন্স থাকে, তাহলে পিক্সেল বেশি হলেও তা বাজে ছবিই তুলবে। মূল ছবিটি যতো স্পষ্ট হবে (এক্সপোজার, ফোকাস, গতি), ছবিও ততো ভালো হবে – দক্ষতা প্রযুক্তিকে মোবাইলের জগতেও টেক্কা দেয়।
একটি লেন্স, নাকি দুটি?
২০১১ সালে দু’টি লেন্স সহ প্রথম স্মার্টফোন ক্যামেরা বাজারে আনে এইচটিসি। এই দু’টি ক্যামেরা ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা যেত, যা থ্রিডি টিভিতে বা ফোনটির নিজস্ব থ্রিডি পর্দায় দেখা যেত। এটা ছিলো স্বল্প রেজুলেশনের ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, যার ছবি অতো ভালো আসতো না, বরং এটা এমন একটা গিমিক ছিলো, যা ক্যামেরার বাইরে অন্য কোথাও সহজে ব্যবহার করাও যেত না।
২০১৬ সালে এলজি ডুয়েল ক্যামেরা নিয়ে আসে। ২০১৭ তে আইফোন ৭ প্লাস ফোনটিতে দুইটি আলাদা ১২ মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা দেওয়া হয়, যার দ্বিতীয় ক্যামেরাটিতে ২এক্স অপটিকাল জুম সুবিধা ছিলো। আপনি বিষয়বস্তুর ক্লোজ-আপ দৃশ্য ধারণ করতে যখন জুম করেন, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় লেন্সটি কাজ করতে শুরু করে এবং এতে ছবির গুণগত মান একই থাকে। অন্য দিকে, ডিজিটাল জুম ব্যবহার করলে তা পিক্সেলের আকার বাড়িয়ে ছবির মান খারাপ করে ফেলে। জুমের সঠিক সমাধান রয়েছে অপটিকাল জুমে, অর্থাৎ হার্ডওয়্যারে, সফটওয়্যারের কারিকুরিতে না। দুঃখের বিষয়, বেশিরভাগ স্মার্টফোনই মাত্র ২এক্স অপটিকাল জুমের সুবিধা দেয়। এখানে স্মার্টফোনের জন্য তিনটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সের তুলনামূলক একটি ভিডিও রয়েছে।
এ সম্পর্কিত সর্বশেষ গুজবটি হচ্ছে চাইনিজ প্রযুক্তি নির্মাতা ওপো এবং হুয়াওয়ে তাদের স্মার্টফোন ক্যামেরায় ১০এক্স পেরিস্কোপিক জুম লেন্স আনতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে স্পোর্টস, ওয়াইল্ডলাইফ এবং অন্যান্য কাভারেজ, যেখানে লম্বা লেন্স দরকার হয়, সেখানে আরো উন্নত কাভারেজ করা সম্ভব হবে। এখন অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে লেন্সের গতি। আপনার সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় অ্যাপার্চারের লেন্স খুঁজে দেখা উচিৎ। যেমন, আমার আইফোন এক্সএস-এ একটি লেন্সে এফ/১.৮ অ্যাপার্চার এবং টেলিফটো লেন্সে এফ/২.৪ অ্যাপার্চার রয়েছে। অ্যাপার্চার দিয়ে বোঝা যায় যে স্বল্প আলোয় লেন্স কতোখানি বড় জায়গা নিয়ে খুলবে। ‘এফ’ এর নিচের সংখ্যাটি যতো ছোট, অর্থাৎ অ্যাপার্চার যতো বড়, লেন্সের দাম ততো বেশি। ডান পাশের ছবিটি তোলা হয়েছে আইফোন এক্সএস দিয়ে। এখানে দেখা যাচ্ছে, ছবি তোলার পর ‘বোকেহ’ (ডেপ্থ অফ ফিল্ড ফোকাস) পরিবর্তন করার ক্ষমতা। এফ১৬ এ তুললে ডেপথ অফ ফিল্ড বড় পাওয়া যায়, আর এফ১.৪ এ তুললে ছোট ডেপথ অফ ফিল্ড পাওয়া যায়।
ট্রান্সফার ডিভাইস
২০১৩ সালে প্রথম যখন আই ট্রান্সফার ডিভাইস নিয়ে লিখি তখন বাজারে এগুলো খুবই সীমিত সংখ্যক ছিলো, কিন্তু এখন আর অভাব নেই। এগুলো হচ্ছে ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, যা সাধারণত আপনার ফোনে যুক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়। এগুলো মূলত দুই ধরণের হয়। একটি আপনার ফোনের সাথে লোকাল ওয়াইফাই কানেকশন তৈরি করে, আরেকটা আলাদাভাবে যুক্ত করতে হয় (লাইটনিং, মিনি ইউএসবি বা টাইপ সি)। আমার কাছে আলাদা যুক্ত ডিভাইসগুলো বেশি গতিময় মনে হয়, যদিও ওয়াইফাই কানেকশন ডিভাইসগুলো একসাথে অনেকগুলো ফোনে যুক্ত হতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সুবিধা হচ্ছে, বেশিরভাগ ফোনই এসডি কার্ডের সুবিধা দেয়।
পরামর্শ: আপনার অধিক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্ল্যাশ ড্রাইভ কিনে অনেক টাকা খরচ করার দরকার নেই। তাদের কাজ মূলত কন্টেন্ট এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ট্রান্সফার করা। কাজ শেষে আপনি কন্টেন্ট মুছেও ফেলতে পারেন।
প্রযুক্তিগত সহায়তা
ফোনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি সহায়তা দিবে কিনা, নিশ্চিত হয়ে নিন। অনেক মানুষ শুধু বিক্রয়োত্তর সেবার উন্নত মানের জন্য অ্যাপল পছন্দ করে। আপনার ফোনের কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেলে অ্যাপল আপনার ফোনটি পরিবর্তন করে দেবে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানের ফোনই কিনুন না কেন, তাদের বিক্রয়োত্তর সেবার ব্যাপারে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
সারাংশ
মোবাইল সাংবাদিকতার জন্য যদি স্মার্টফোন কিনতে যান, তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:
শক্তিশালী চিপসেট: মাল্টি-লেয়ার্ড সম্পাদনা অ্যাপ চালানোর জন্য জরুরী। অন-বোর্ড মেমোরি: র্যাম এবং স্টোরেজ যতো বেশি হবে ততো ভালো, কারণ এতে ফোনের গতি বেশি থাকে এবং দ্রুত কিছু সম্পাদনা করতে হলে প্রয়োজনে ভিডিও ফোনেই রেখে দিতে পারেন। এসডি মেমোরি: অতিরিক্ত এসডি কার্ডের সুইধা চাইলে আপনার দরকার অ্যান্ড্রয়েড। মাইক্রোফোন: মাইক্রোফোনের উপস্থিতি খুবই জরুরী এবং কোনটা ব্যবহার করবেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (দেখুন স্মার্টফোনে অডিও রেকর্ডিং)। ক্যামেরা: গতিশীল লেন্সসহ একটি ভালো ক্যামেরা খুবই জরুরী। ফ্রন্ট এবং ব্যাক ক্যামেরা মেগাপিক্সেলের দিক দিয়ে যতো কাছাকাছি হবে, ততো আপনি প্রয়োজনে একটা থেকে আরেকটায় বদল করতে পারবেন। বড় সেন্সর: পিক্সেলের আকার বড় হতে হবে। অ্যাপস: অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হিসাবে আপনি যতোই দক্ষ হোন না কেন, অ্যাপস হচ্ছে স্মার্টফোনের মূল চালিকাশক্তি। অতীতে সস্তা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে হাই এন্ড সম্পাদনার অ্যাপগুলো চলতো না। আজকাল আর ব্যাপারটা এমন নেই। মায়ানমারে যখন আমরা নিউজরুম গুলোতে মোজো সম্পর্কে জানিয়েছি, আমরা ১৬৫ ইউএস ডলার মূল্যের শাওমি ফোন ব্যবহার করেছি এবং সেগুলো আমাদের সকল অ্যাপেই দুর্দান্ত কাজ দেখিয়েছে (দেখুন প্রয়োজনীয় মোবাইল সাংবাদিকতা টুলস)। ৫জি: আপনার ফোনে কি ৫জি প্রযুক্তি কাজ করবে?
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, ২৮০ ইউএস ডলার দামের সস্তা একটি ফোন করেছে ৮১ শতাংশ স্কোর যেখানে সবচেয়ে দামী ফোনটি, যার মূল্য ১৫০০ ইউএস ডলার, করেছে ৮৪ শতাংশ স্কোর। অর্থাৎ, স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে দামই সবকিছু না।
আপনার কী কী সুবিধা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত হয়ে একজন বুদ্ধিমান ক্রেতা হোন। নিচের সি-নেট এর লিংকটিতে বর্তমান বাজারের ১৮০ থেকে ১৪০০ ইউএস ডলার মূল্যের মধ্যে শীর্ষ ফোনগুলোর একটি ধারাবাহিক রিভিউ করা হয়েছে।
অল্প কথায়, নিশিচত হোন আপনার স্মার্টফোনটি যেন পেশাদার মাইক্রোফোনের সাথে যুক্ত হতে পারে এবং অন্তত ফুল এইচডিতে ভিডিও করতে পারে (ইদানিং আমরা ৪কে তে ভিডিও করছি)। তাতে হাই এন্ড ক্যামেরা অ্যাপ (ফিল্মিকপ্রো, ক্যামেরা+২), উন্নত এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য অডিও অ্যাপ (ফেরিতে) এবং মাল্টি-লেয়ার্ড সম্পাদনা অ্যাপ (আইমুভি, কাইনমাস্টার, লুমা ফিউশন, পাওয়ার ডিরেক্টর) চালানোর ক্ষমতা থাকতে হবে, এবং তা ফোনের গতি ঠিক রেখে। আপনার বর্তমান ফোনটিতে কি এর সবই করা যায়? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে এই ফোনেই থাকুন। আপনি যদি তাও ফোন পরিবর্তন করেন, পুরনো ফোনটি ছুঁড়ে ফেলবেন না। এই ডিআইওয়াই রেডিও মাইক্রোফোন ভিডিও থেকে ঘুরে আসুন।
হয়ে যান মোজো!
মোজো ওয়ার্কিং কলাম দেখতে এবং আরো তথ্য পেতে মোবাইল সাংবাদিকতার ওপর জিআইজেএন এর রিসোর্স পেইজ দেখুন।
ইভো বুরাম একজন অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক, লেখক এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত টেলিভিশন প্রযোজক। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২৫০০ ঘণ্টার বিভিন্ন ধরণের প্রাইম টাইম অনুষ্ঠান প্রযোজনার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ইভো মোবাইল সাংবাদিকতার একজন অগ্রদূত। বুরাম মিডিয়া নামে তাঁর একটি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তিনি লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ বিষয়ের প্রভাষক ও সমন্বয়কারী।