প্রবেশগম্যতা সেটিংস

"এটি কোনো একাডেমিক গবেষণা নয়," দেজোর্মে তার কোর্স সম্পর্কে বলেছেন। "এটি সংবাদ, এবং আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছি।" ছবি: নিনা ওয়েইম্যান শুলজ / নিনা-ওয়েইম্যান-শুলজ.কম

লেখাপত্র

মাত্র ১৫ সপ্তাহে একজন শিক্ষার্থীকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বানাবেন যেভাবে

English

“এটি কোনো একাডেমিক গবেষণা নয়,” দেজোর্মো তার কোর্স সম্পর্কে বলেছেন। “এটি সংবাদ, এবং আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছি।” ছবি: নিনা ওয়েইম্যান শুলজ / নিনা-ওয়েইম্যান-শুলজ.কম

সেনাবাহিনীতে যৌন নির্যাতনের বিচার না করে, উল্টো এর বিরুদ্ধে কথা বলা নারী সৈনিকদের সাজা; রাষ্ট্রীয় সংশোধন কেন্দ্রে থাকা কিশোর-কিশোরীদের শাস্তি হিসেবে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো; সরকারী কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে আদিবাসী জমি কেনা – গত দুই বছরে এই প্রতিবেদনগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে। আর এমন সব অনুসন্ধান জন্ম দিয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা।

চিলির সেই পন্টিফিকা ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পড়ান পলেট দেজোর্মো। তিনি একই সাথে সান্টিয়াগোভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম পরিচালনা করেন। ক্যারিয়ারের গোড়ার দিকে, তার ওপর দায়িত্ব পড়ে দেশটির সবচেয়ে বড় খুচরাপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম অনুসন্ধানের।

দেজোর্মো কিছুটা ঘাবড়ে যান। কারণ, লা পোলার নামের সেই কোম্পানিতে তার কোনো সোর্স ছিল না। আর্থিক লেনেদেনের মত জটিল বিষয় নিয়ে কাজের পূর্ব-অভিজ্ঞতাও নেই। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় লা পোলার নিয়ে তার করা প্রতিবেদন রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেয়। জিততে থাকে একের পর এক পুরস্কার। তিনি তখনই বুঝতে পারেন, একেবারে শূন্য থেকেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা সম্ভব, এর কৌশলগুলোও দ্রুত শিখে নেয়া যায়।

“আমার মনে হয়েছে, যদি আমি করতে পারি, তাহলে যে কেউ এটি করতে পারবে,” তিনি বলেন। “আপনাকে এজন্য মানসিকতা বদলাতে হবে সবার আগে এবং শিখতে হবে কোনো মানুষ সোর্সের সাথে পরিচয় ছাড়াই কীভাবে কাজ করা যায়।

এখন দেজোর্মো “অ্যাডভান্সড জার্নালিজম ওয়ার্কশপ” পরিচালনা করেন। তার ভাষায়, এই কর্মশালা মাত্র ১৫ সপ্তাহের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বানিয়ে দেয়। কীভাবে? সেই টিপস তিনি শেয়ার করেছেন এখানে।

বড় চিন্তা করুন

কোর্সের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের একটি কাজ দেয়া হয়। “নিজে নিজে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। অনুসন্ধানের বিষয় হবে সমাজের জন্য প্রাসঙ্গিক। জোর দিতে হবে সরকারের নীতি; অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা বিচারিক ক্ষমতা; বা সংগঠিত অপরাধে।” শুনে মনে হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাসাইনমেন্টটি একটু উচ্চাভিলাষী। কিন্তু দেজোর্মো মনে করেন, শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানে পুরোপুরি নিয়োজিত করতে হলে, চিন্তার সীমারেখাটি একটু উঁচু হওয়া প্রয়োজন। এবং, এই পদ্ধতি বেশ ভালো ফল দেয়। একবার শিক্ষার্থীরা খুঁজে বের করে, কীভাবে সরকারী হাসপাতালে আসা প্রতিবন্ধী নারীদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছিল, তাদের অমতেই। দেজোর্মো বলেন, তার কোর্স থেকে বেরিয়ে আসা এই প্রতিবেদনের কারণে সরকারকে বিদ্যমান আইনই বদলে ফেলতে হয়েছিল।

কাজে লাগান তথ্য অধিকার আইন

দেজোর্মো তার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উৎসাহিত করেন, “নথি সংগ্রহের মানসিকতা” তৈরিতে। আপনার কাছে এসে কেউ গোপন খবর ফাঁস করে দেবে অথবা হাতে কোনো নথি তুলে দেবে, এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সরকারে এরিমধ্যে যেসব নথি প্রকাশ করেছে, তার ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির পথ দেখাতেন তিনি। তার এই কোর্সে শেখানো হয়, কীভাবে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে নথিপত্র সংগ্রহ করা যায়। কারণ সেই আইনেই বলা আছে, তথ্য চাওয়ার ২০ দিনের মধ্যে সেটি দিতে হবে কর্তৃপক্ষতে। আর শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য দরকারি নথি পেতে ২০দিন খুব একটা বেশি সময় নয়। এই সময়ের মধ্যে তথ্য না দেয়া হলে অথবা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে, কীভাবে চিলির কাউন্সিল ফর ট্রান্সপারেন্সিতে আপিল করতে হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের। এতে একদিকে তাদের আপিল করার অভিজ্ঞতা হয়, অন্যদিকে কাউন্সিলের রায়ের মধ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রটা আরো বাড়িয়ে নেয়া যায়, তিনি বলেন।

সম্পাদকদের কাছে পিচ করুন

শিক্ষার্থীদেরকে স্টোরি খুঁজে বের করা এবং সেটিকে আকর্ষনীয় করে পিচ (প্রস্তাব) করা শেখাতে দেজোর্মোকে সাহায্য করেন পেশাদার সাংবাদিক ও সম্পাদকদের একটি দল (সকালের নাস্তার বিনিময়ে)। শিক্ষার্থীরা এই পেশাদার সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন, মানুষ কেন তাদের স্টোরি নিয়ে মাথা ঘামাবে, তাদের প্রধান সোর্স কী এবং তথ্য অধিকার আইনে তারা কোন কোন নথি চেয়ে আবেদন করবে। “আমি সাংবাদিকদের দলটিকে বলেছি (শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা নিয়ে) কঠোর মন্তব্য করতে। এতে প্রতিবেদনগুলো আরো ভাল হবে,  আর শিক্ষার্থীরাও শিখবে কীভাবে সমালোচনা সহ্য করতে হয়,” তিনি বলেন।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগান

শিক্ষার্থীরা অনুসন্ধান করে বের করেছিল, বাস অপারেটররা কোন স্বার্থে গাড়ী ছাড়তে দেরি করে, কারণ এতে তাদের ক্লাসে ধরতে সমস্যা হচ্ছিল। ছবি: কিলোমেট্রো সেরো

দেজোর্মোর কোর্সে, শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয়, নিজেদের দৈনন্দিন জীবন থেকে গল্প খুঁজে বের করতে। বাসের গল্পটির উদাহরণ দিলে আরো পরিষ্কার হবে। বাসের কারণে এই কোর্সে থাকা দুই শিক্ষার্থীর প্রতিদিনই ক্লাসে আসতে দেরি হচ্ছিল। বাসগুলো কেন দেরি করে, এক পর্যায়ে এই বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুই শিক্ষার্থী।

এই কাজ করতে গিয়ে তারা নিয়ন্ত্রণহীন পরিবহন কোম্পানীগুলোর এমন একটি চক্র উন্মোচন করে, যারা ইচ্ছামত ভাড়া ঠিক করে, শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্য করে এবং গাড়ীতে দুর্বল সুরক্ষা ব্যবস্থা রেখেও পার পেয়ে যায়। তাদের এই অনুসন্ধানের আগে “কী ঘটছে সে সম্পর্কে সরকারের কোনো ধারণা ছিল না,” জানান দেজোর্মো।

তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করুন

সব শিক্ষার্থীর স্টোরি অনলাইনে প্রকাশ করুন। দেজোর্মো বলেন, রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটু ভয়ে থাকে। কী হতে কী হয়! এমনকি মন্তব্য যে প্রকাশিত হবে, এই কথাও সোর্সকে জানাতে তারা সংকোচ বোধ করে। প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্য দিয়ে তারা এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে।

“এটি একাডেমিক গবেষণা নয়,” তিনি বলেন। “এটি সংবাদ, এবং আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছি।”

শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্বাস রাখুন

দেজোর্মো বলেন, তার কোর্সের সাফল্যের মূলেই রয়েছে বিশ্বাস। তিনি বিশ্বাস করেন, তার ছাত্র-ছাত্রীরা বড় বড় স্টোরি তুলে আনতে পারবে। কোনো কোনো শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা অলস, অমনোযোগী। কিন্তু দেজোর্মোর মতে, অ্যাসাইনমেন্ট যদি একঘেঁয়ে হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরাও আগ্রহ হারায়। তাদেরকে বড় কাজ দিন। যদি আপনার বিশ্বাস থাকে, তাহলে তারাও সফল হবে এবং মানসম্পন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে পারবে। তিনি বলেন, “শিক্ষক হিসেবে আমাদেরকে, তাদের সক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে হবে।”

মেগান ক্লিমেন্ট একজন সাংবাদিক ও সম্পাদক। তিনি জেন্ডার, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নীতিতে বিশেষজ্ঞ। তার লেখালেখির আরেক বিষয় প্যারিস নগরী, যেখানে তিনি ২০১৫ সাল থেকে রয়েছেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

GIJN এর সদস্যপদ জিআইজেসি২৫

মালয়েশিয়াকিনি: স্বাধীন বার্তাকক্ষ যেভাবে ইটের পর ইট গেঁথে ক্ষমতাবানদের “গলার কাঁটা” হয়ে ওঠে

“মালয়েশিয়াকিনি সবচেয়ে জরুরী কাজটি করেছে। বার্তাকক্ষটি সরাসরি এবং সুস্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে ক্ষমতাবানদের কর্তৃত্বকে। সাধারণ মালয়েশিয়ানদের জন্য নিষিদ্ধ বিষয় যেমন জাতি, রাজপরিবার এবং ধর্ম নিয়ে মতামত প্রকাশের একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করেছে।”

অনুসন্ধান পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

নির্বাসিত লোকেদের ওপর রাষ্ট্রের হামলা: ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী সিরিজ “দমন নীতির দীর্ঘ হাত” থেকে আমরা যা শিখতে পারি

দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী দল রিপ্রেশন’স লং আর্ম ধারাবাহিকে তুলে ধরেছে, কীভাবে নিজ দেশের সীমানার বাইরে থেকেও নিশানা হচ্ছেন ভিন্ন মতাবলম্বীরা।

প্রতিবেদন প্রকাশ বণ্টন ও প্রচার

সাংবাদিকতায় আস্থা ধরে রাখতে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ কীভাবে কাজ করছে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ। উত্তর মেসিডোনিয়ায় এমন একটি বার্তাকক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের আস্থা অর্জন করেছে। তাঁরাই বার্তাকক্ষে ছুটে যাচ্ছেন সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নিজেরাও।

Toxic Waste Pollution Factory Bank

পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে বিনিয়োগ করছে কারা-বিনিয়োগকারীদের খোঁজ করবেন যেভাবে : দ্বিতীয় পর্ব

ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি করছে বা দূষণে ভূমিকা রাখছে—সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের এমন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা বা প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। লক্ষ্য, নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও যেসব দেশে তাঁরা বিনিয়োগ করছে সেসব দেশের টেকসই উন্নয়ন। অনেক সময় খনিজ উত্তোলন ও বন উজাড় করার কাজেও বিনিয়োগ করে থাকে তারা। আর প্রচারণা চালায় উন্নয়ন বিনিয়োগ বলে। এই নিবন্ধটি পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।