ইয়েমেন’স ডার্টি ওয়ার: একটি পুলিৎজারজয়ী অনুসন্ধানের নেপথ্য গল্প
হাগার ইয়াহিয়া তার পাঁচ বছরের মেয়ে আওসফকে ধরে আছেন। মেয়েটি অপুষ্টিতে ভুগছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ডার্টি ওয়ার অব ইয়েমেন সিরিজ থেকে নেয়া হয়েছে এই ছবি। তুলেছেন নারিমান আল-মুফতি। সৌজন্য: এপি
আরব উপদ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান ইয়েমেনের। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে দশকের পর দশক ধরে। কিন্তু ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তার ভয়াবহতা যেন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এরিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ, আরো কত শত-সহস্র পরিবার যে ঘরছাড়া হয়েছেন, তার আভাস পাওয়া যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে।
গার্ডিয়ানের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, “দেশটির ৮০% অধিবাসী – অর্থ্যাৎ প্রায় আড়াই কোটি মানুষের এখন সহায়তা ও সুরক্ষা দরকার, আর শুধু খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন প্রায় এক কোটি।” দেশটির স্বাধীন অলাভজনক গণমাধ্যম ইয়েমেন ডেটা প্রজেক্টের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে সেখানকার ১৮, ৩৩২ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন সংঘাতে। লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বুহ মানসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, হুতি বিদ্রোহীরা সমর্থন পাচ্ছে ইরানের কাছ থেকে। দুই পক্ষই আলাদা সরকার গঠন করেছে এবং দাবি করছে তাদের সরকারই আসল।
নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং আর্থিক সংকটের কারণে ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক এবং মূলধারার গণমাধ্যমের কাভারেজ ছিল সীমিত। কিন্তু ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সেখানে সাংবাদিকদের একটি দল পাঠায় এসোসিয়েটেড প্রেস, যারা একটানা কয়েক মাস থেকে অনুসন্ধান করে ইয়েমেনের বিভৎস যুদ্ধ। এই দলে ছিলেন ম্যাগি মাইকেল, নারিমান-আল মুফতি, এবং মাদ আল-জিকরি। তাদের রিপোর্ট ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক রিপোর্টিংয়ের জন্য পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়। কোনো আরব সাংবাদিকের জন্য এটাই প্রথম পুলিৎজার জয়। প্রতিষেধকের অভাবে কিভাবে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়েছে কলেরা, সামরিক সংঘাতে শিশুদের ব্যবহার, সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিচালিত কারাগারে কিভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ইয়েমেনী বন্দীরা এবং খাদ্য সাহায্য চুরি – এই ছিল তাদের উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন।
ম্যাগি মাইকেল একজন মিশরীয় সাংবাদিক, এবং থাকেন কায়রোতেই। জিআইজেএনের আরবী ভাষা সম্পাদক মাজদোলিন হাসানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন, পুলিৎজারজয়ী এই অনুসন্ধানের আদ্যোপান্ত। এই লেখা, মূলত তাদের আলাপচারিতার সারাংশ।
বাম দিক থেকে, ভিডিওগ্রাফার মাদ আল-জিকরি, প্রতিবেদক ম্যাগি মাইকেল এবং ফটোগ্রাফার নারিমন আল-মুফতি। ছবি: এপি
আপনি ইয়েমেন কাভার করছেন কত দিন হলো?
আমি ২০০২ সাল থেকে এই অঞ্চল কাভার করে যাচ্ছি। ইয়েমেনের ভেতরে ও বাইরে আরবি-ভাষী স্ট্রিংগার ও সাংবাদিকদের বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্কের সাথে কাজ করেছি। ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমি সেখানেই ছিলাম।
গ্রেগরি জনসেনের লেখা দ্য লাস্ট রিফিউজ: ইয়েমেন, আল কায়েদা, অ্যান্ড আমেরিকা’স ওয়ার ইস অ্যারাবিয়া বইটি যখন পড়ি, মূলত তখন থেকেই এখানকার ঘটনাপ্রবাহের আরো গভীরে যাওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়। বইটি বেশ বিশদ আর মূল্যবান তথ্যে ভরা। দেশটির ভেতরে সোর্স খুঁজে বের করার অভিযান শুরু হয় মূলত এরপর থেকে।
সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে ঘেঁটে, আমি আল কায়েদার এক সোর্সকে খুঁজে বের করি। তিনি ছিলেন বাহিনীর সোশ্যাল মিডিয়া অফিসার। তার সাথে অনেক কথা চালাচালির পর বুঝতে পারি, মাঠে নামলে আরো অনেক কিছু পাওয়া যাবে। এরপর এপি থেকে বিনা বেতনের ছুটি নিয়ে, চলে যাই ইয়েমেনে। একা, একদম একাই, দেশটিতে নিজের সোর্স নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা শুরু করি।
তার পরে কি হলো?
মাঠে ছয় মাস কাটানোর পর আমি ফিরে যাই, কর্মস্থল এপিতে। তখন আমার হাতে একগাদা স্টোরির রূপরেখা। এপি তখন, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ টিম গঠন করেছে মাত্র। সেখানে আমার পরিচয় হয়, ট্রিশ উইলসনের সাথে। অনুসন্ধানী দলের সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। ইউএই পরিচালিত গোপন কারাগারের স্টোরিটি প্রথমে তার কাছেই প্রস্তাব আকারে জমা দিই। তিনি বলেছিলেন, “এক্ষুনি চলে যাও।” আমার জীবনে গর্ব করার মত একটা সত্যিকারের অনুসন্ধানের শুরু, ঠিক সেখান থেকে।
দল গঠন করেছেন কিভাবে?
ফটো-সাংবাদিক নারিমান আল মুফতির সাথে আমার পরিচয় হয় ২০১১ সালে, কায়রোর এপি অফিসে। সে তখন মাত্র যোগ দিয়েছে। আর মাদ আল জাকরির সাথে প্রথম কাজ করেছি ২০১৬ সালের মার্চে। ইয়েমেনী এই ফ্রিল্যান্সার আমাদেরকে, দুর্ভিক্ষের কারণে মৃতপ্রায় একটি শিশুর ছবি দিয়েছিল, যা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ইয়েমেন অনুসন্ধানে মাদের ওপর একরকম নির্ভরশীল হয়ে পড়ি আমরা। কারণ, বিবদমান দুই পক্ষেই তার নেটওয়ার্ক ছিল, আর সে কঠোর পরিশ্রমী। আর নারিমানের বিশেষত্ব হলো, সে কঠিন কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান বের করে ফেলে। একটি উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে। হুতি বাহিনীতে শিশুদের নিয়োগ নিয়ে যে স্টোরি, তার কাজ করতে গিয়ে আমরা পৌঁছাই একটি শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেটি পরিচালনা করত সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী। আমাদের ভয় ছিল, সেখানে গেলে শুধু সৌদি প্রোপাগান্ডাই হজম করতে হবে। আমরা সত্যিকারের, তথ্যনির্ভর কিছু খুঁজছিলাম। তখুনি নারিমান বুদ্ধি দিল, সেই পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসা শিশুদের অনুসরণ করতে, যেন পরে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলা যায়। কারণ তারাই বলতে পারবে, হুতিরা আসলে শিশুদের কিভাবে নিয়োগ দেয়, বা সেখানে আসলে কী ঘটছে।
স্টোরির এত কাছাকাছি গেলেন কী করে? নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন?
আমরা শুরু করি বিস্তর গবেষণা থেকে। কারণ, জানা দরকার ছিল এই বিষয় নিয়ে আগে কী ধরণের স্টোরি হয়েছে। একদম শূণ্য থেকে অনুসন্ধান শুরু না করে, বরং আগে যা বেরিয়েছে তার ওপরই আমরা দাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এরপর কিছুটা গভীরে গিয়ে আমরা সোর্স খুঁজতে শুরু করি। এভাবে গবেষক, থিংক-ট্যাংক, অধিকার কর্মী এবং স্থানীয় রিপোর্টারদের একটি বলয় তৈরি করি। দ্বিতীয় বলয় ছিল সাবেক কর্মকর্তা, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। আর তৃতীয় বলয়ে ছিলেন তারাই, যারা স্টোরির সাথে সংশ্লিষ্ট, নিজ চোখে ঘটনা দেখেছে, ভুক্তভোগী, কোনো নির্যাতনের সাথে জড়িত, তার সাক্ষী, অথবা কর্মকর্তা হিসেবে ঐ সময় দায়িত্বে ছিলেন।
তারপর আমরা যোগাযোগ শুরু করি। এই কাজে নির্ভর করতে হয়েছে সিগন্যাল, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মত মাধ্যমের ওপর, কারণ বেশিরভাগ মানুষই ফোনে কথা বলতে ভয় পান।
কথা বলে বলে নির্ভরযোগ্য সোর্সের তালিকা ছোট করে আনার পর, আমরা ইয়েমেন সফরের পরিকল্পনা করি। মানচিত্রে বৃত্ত এঁকে স্থান-কাল-পাত্র নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা একের পর এক সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু করি। কখনো কখনো একেকটি সাক্ষাৎকার ছিল এক ঘন্টারও বেশি; তার সাথে রেকর্ডিং, নোট নেওয়া, অডিও থেকে গোটা আলাপ লিখে ফেলা, এবং সব ফাইল একটি ফোল্ডারে গুছিয়ে রাখার মত বিষয় তো ছিলই।
দিন শেষে আপনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন, তা নির্ভর করে স্টোরির ধরণের ওপর। কখনো কখনো আমি অর্ধেক কাজ করি মাঠে, আর বাকি অর্ধেক ঘরে ফিরে। আবার কখনো কাজের ২০% শতাংশ থাকে মাঠে, আর বাকিটা ঘরে বসে করতে হয়। সাধারণত, আমি যা পেয়েছি তা সম্পাদককে আগে জানাই, যাতে তার সাথে আলাপ করে ঠিক করে নেয়া যায় গল্পটা কিভাবে বলবো; আবিস্কার করা যায়, কোনো কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা; এবং জানা যায়, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। এর পর প্রতিবেদনের প্রথম খসড়া লেখা শুরু করি, এবং সেখান থেকে গল্পটাকে এগিয়ে নিই।
.
ইয়েমেনের ভেতরে সংযুক্ত আরব আমিরাত পরিচালিত কারাগারগুলোতে বন্দি নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করলেন কিভাবে?
আমরা স্টোরিতে সাবেক বন্দীদের সাক্ষ্য ব্যবহার করেছি, বিশেষ করে যারা নিজেরাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এবং অন্যদের নির্যাতিত হতে দেখেছেন। কারাগারে কাজ করা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, নির্যাতনের ঘটনাও নথিবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি নিজে তাদের সাথে (বন্দী এবং কারা-কর্মকর্তা) দেখা করেছি এবং যা ঘটছে তার প্রত্যক্ষ বিবরণ নিয়েছি।
বন্দীরা ছবি এঁকে জেলের ভেতরটা কেমন, তা দেখিয়েছিল আমাদেরকে। সেই নকশা আরো কয়েকজন বন্দীকে দেখিয়ে, সত্যতা যাচাই করে নিয়েছি। আমরা যখন আমেরিকানদের কাছে এই অনুসন্ধান তুলে ধরলাম, তখন তারাও নিশ্চিত করেছে, এমন কয়েকটি জায়গায় গিয়ে তাদের কর্মকর্তারা তদন্ত করেছেন। অবশ্য, তারা নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
আপনি তো হুতি কারাগারে হওয়া নির্যাতনও কাভার করেছেন। কোনো পার্থক্য দেখেছেন ?
আমিরাতীদের চেয়ে, হুতি কারাগার নিয়ে অনুসন্ধান করা সহজ ছিল, কারণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম উপেক্ষা করলেও, স্থানীয়রা বিষয়টি জানতেন। আমরা সাবেক যত বন্দীর সাথে দেখা করেছি, তারা নিরাপদ অঞ্চলে ছিলেন, এবং নির্দ্বিধায় কথা বলতে পেরেছেন। কিন্তু আমিরাতীদের হাতে ধরা পড়া ব্যক্তিরা এখনো দক্ষিণ ইয়েমেনের আমিরাত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বাস করছেন। আমরা হুতি কারাগারের এমন একটি বিরল ভিডিও পেয়েছি, যেখানে তাদের এক নেতাকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করতে দেখা যায়।
মূল বক্তব্যকে প্রমাণ করতে গিয়ে আপনারা তো ফাঁস হওয়া কিছু গোপন নথিও সংগ্রহ করেছেন। ইয়েমেনের মতো জায়গায় এটি কিভাবে সম্ভব হলো?
আমার মনে হয়, সোর্স বা হুইসেলব্লোয়ার পাওয়ার সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো সংশ্লিষ্ট বাহিনী এবং তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আপনি সবখানেই এমন লোক পাবেন যারা সিস্টেমের ওপর বিরক্ত, এবং অপেক্ষা করছেন সঠিক মানুষের জন্য, যার কাছে দুর্নীতির কথা বলা যাবে। তাদের পরিচয় গোপন রাখা এবং সুরক্ষার বিষয়টি আগেই পরিস্কার করে নেয়া জরুরি। এখানে মাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, দারুন কাজে এসেছে। সে-ই আমাদের বলে দিয়েছে কার সাথে কথা বলতে হবে, তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, এবং আস্থার সম্পর্ক গড়েছে। একজন গুরুত্বপূর্ণ সোর্সকে কথা বলার জন্য রাজি করাতে আমাদের এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। আমাদের করা কয়েকটি প্রতিবেদন দেখার পর, শেষপর্যন্ত তিনি রাজি হন। পরিচয় জানাজানি হয়ে যাবে এমন আশঙ্কায় ভোগা সোর্সদের সাথে কথা বলার একটি উপায় হলো, তাদের কাছ থেকে ঘটনা সত্য না মিথ্যা শুধু সেটি জানতে চাওয়া। তাদের কাছে যান, যা পেয়েছেন তুলে ধরুন, এবং জিজ্ঞেস করুন, “এই বিষয়টি কি আপনি আমাদের নিশ্চিত করতে পারেন?” বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা উত্তর দেন, এবং তার সাথে বাড়তি কিছু কথা বলেন।
১২ বছর বয়সী কাহলানকে দলে ভিড়িয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। তাকে এবং তাঁর সহপাঠীদের যোদ্ধা হওয়ার প্রশিক্ষণও দিয়েছে। ছবি: নারিমন আল-মুফতি / সৌজন্য এপি
সোর্সদের সাথে কাজ করার কৌশল কী ছিল? কিভাবে তাদেরকে কথা বলতে রাজি করিয়েছেন এবং কিভাবে সুরক্ষা দিয়েছেন?
আমরা যেখানেই “নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক” কোনো সূত্রের উদ্বৃতি দিয়েছি, তার প্রতিটি তথ্য আরো দুই বা তিনজন সোর্সের কাছ থেকে যাচাই করে নিয়েছি। এটাই নিয়ম। তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমি প্রায়ই মাদের সাহায্য নিয়েছি, কোথাও কোথাও অন্য সোর্সরাও সাহায্য করেছে। আমি সবসময় সোর্সদের নিশ্চিত করেছি – তাদের নাম, পদবি এবং পেশা গোপন রাখা হবে। তাদের আশ্বস্ত করতে আগের রিপোর্টগুলো দেখিয়েছি, এবং অনেক সময় আমি যা জানি শুধু তা-ই নিশ্চিত করতে বলেছি।
যুদ্ধাপরাধের ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে, সাংবাদিকরা কোন ধরণের বাধার মুখোমুখি হন, এবং আপনি কিভাবে তা সামাল দিয়েছেন?
সবচেয়ে কঠিন অংশটি আসে, যখন রিপোর্ট লেখা হয়, বিশেষ করে চূড়ান্ত করার সময়। আমাদের জন্য বিষয়টি আরো কঠিন, কারণ ওপরের বড় সম্পাদকরা সঠিক সময়ে রিপোর্ট চান। আর মাঠে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি হলো, আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কার সাথে কথা বলছেন, কী করছেন – তা যখন কেউ প্রতিনিয়ত অনুসরণ করে। যেমন, খাদ্য সাহায্য নিয়ে প্রতিবেদনটিতে হুতিরা কিভাবে সাহায্য সরিয়ে নিচ্ছে তা জানার জন্য, যত বেশি সম্ভব ত্রাণ-কর্মীর সাথে কথা বলা দরকার ছিল। কিন্তু গোটা সময়জুড়ে এক হুতি সৈনিক আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি কার সঙ্গে কথা বলবো, তার একটি তালিকাও দিতে হয়েছে তাদের হাতে, যাতে তারা জানতে পারে আমি কোথায় যাবো এবং সেই সোর্সকে আগেই চাপে রাখতে পারে।
শেষপর্যন্ত, তাদের নিরাপদ রাখলেন কী করে?
এটা খুব কঠিন ছিল। আমি ইয়েমেনের বাইরে তাদের কয়েকজনের সাথে দেখা করেছি – তাদের ক্ষতি থেকে দূরে রাখার এটাই একমাত্র উপায় ছিল। অন্য উপায় ছিল আশ্বস্ত করা, যে আমি তাদের নাম বা কর্মস্থলের পরিচিতি প্রকাশ করব না।
ডাঃ ফারুক আল মাদায় বাকাল দেখাচ্ছেন, কিভাবে ইয়েমেনের মারিবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। ছবি: নারিমন আল-মুফতি / সৌজন্য এপি
এই অনুসন্ধানে গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ফটোগ্রাফি। কেন ছবিতে এত গুরুত্ব দিলেন?
এই স্টোরিগুলোতে প্রাণ এনে দিয়েছে, ছবি। পাঠকরা সাধারণত গল্প পড়ার আগে ছবির দিকে তাকান। আমরা স্টোরিতে যা যা তুলে ধরেছি, তার সব কিছুর সমর্থনে শক্তিশালী ছবি যোগান দিয়ে গেছে নারিমান; বিশেষ করে যুদ্ধে শিশু নিয়োগ এবং কারা-নির্যাতনের অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানটিতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন মূলত স্থানীয় ও আঞ্চলিক সাংবাদিকরা। আপনার এই অভিজ্ঞতা থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো কী শিখতে পারে?
মাদ, ইয়েমেনের বাসিন্দা। তার সাথে কাজ করার কারণে, অনেক বন্ধ দরজা খুলে গেছে। যেহেতু আমাদের দলের সবাই আরব এবং আমরা একই ভাষায় কথা বলি, তাই জনগণ ও আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব ছিল না। আমরা সংস্কৃতি এবং সমাজের সাথেও পরিচিত ছিলাম।
মাজদোলিন হাসান জিআইজেএন-এর আরবি সম্পাদক। পুরস্কারজয়ী এই সাংবাদিক কাজ করেছেন গ্লোবাল ইন্টেগ্রিটি, ১০০রিপোর্টার্স ও আরব রিপোর্টার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এ। মাজদোলিন জর্ডানে একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ইউনিটের পরিচালক ছিলেন এবং দেশটির প্রথম নাগরিক হিসেবে তিনি তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য না দেয়ায় জর্ডান সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।