ঘুরে আসুন বছরসেরা পডকাস্টের জগত থেকে
বছরের সেরা অনুসন্ধানী পডকাস্ট বাছাই করা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। সিরিয়াল-এর দারুন সাফল্যের পর, গত পাঁচ বছরে অনুসন্ধানী পডকাস্টের জোয়ার (এগুলোর সবই অবশ্য সত্যিকারের অপরাধের ঘটনা নিয়ে নয়) তৈরি হয়েছে।
তাই এখানে থাকছে ২০১৯ সালে সম্প্রচারিত হওয়া সবচে আকর্ষণীয় অনুসন্ধানী পডকাস্টের কথা। এই তালিকায় এমন কিছু পডকাস্ট আছে, যেখানে রিপোর্টিংয়ের পেছনের গল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন সাংবাদিকরা; যা তাদের রিপোর্টের মতোই আকর্ষণীয়। তাহলে শুনতে থাকুন! আর আপনার পছন্দের পডকাস্ট সম্পর্কে আমাদের জানান।
দ্য টিপ অফ
দ্য টিপ অফ-এর প্রতি পর্বে, উপস্থাপক মেইভ ম্যাকক্লিনাহান তুলে আনেন সাম্প্রতিক সময়ের বড় বড় অনুসন্ধানগুলোর পেছনের খবর। বেশিরভাগই তার নিজ দেশ যুক্তরাজ্যের, কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনও থাকে। এখানে সাংবাদিকরা অনুসন্ধানের প্রতিটি ধাপ নিয়ে কথা বলেন। সূত্রের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া থেকে শুরু করে পরিকল্পনা, রিপোর্টিং এবং সেটি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত নানা গল্প তারা তুলে ধরেন শ্রোতাদের কাছে। এবছর বিষয়বস্তুতে ছিল বৈচিত্র। গায়ক আর. কেলি-র বিরুদ্ধে ওঠা হয়রানির অভিযোগ কিভাবে অনুসন্ধান করেছেন এক সঙ্গীত সমালোচক; কিভাবে ক্যামেরুন সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন এক ওপেন-সোর্স অনুসন্ধানকারী, কিভাবে এক রিপোর্টার পুরো বিশ্ব ঘুরেছেন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্সের উত্থান নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে – এমন অনেক বিষয় স্থান পেয়েছে তা অনুষ্ঠানে।
দ্য বেলিংক্যাট পডকাস্ট
নেদারল্যান্ডভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের দল বেলিংক্যাট, তাদের প্রথম পডকাস্ট মিশনের জন্য বেছে নিয়েছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ১৭ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটিকে। ২০১৪ সালে এটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় পূর্ব ইউক্রেনে। মারা যান ২৯৪ জন। প্রতিষ্ঠাতা এলিয়ট হিগিন্সের উপস্থাপনায়, দ্য বেলিংক্যাট পডকাস্টে তুলে আনা হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, বিশ্লেষক, প্রত্যক্ষদর্শী এবং বেলিংক্যাটের নিজস্ব অনুসন্ধানকারীদের বক্তব্য। ছয় পর্বের এই সিরিজে থেকে জানা যায় কিভাবে এই অনুসন্ধানে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেন সোর্স অনুসন্ধান পদ্ধতি; এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও ব্যবহৃত অস্ত্র সনাক্ত করার জন্য কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট; এবং কিভাবে ছবি থেকে বের করা হয়েছে অবস্থান। ওপেন সোর্স অনুসন্ধান নিয়ে আগ্রহী যে কারো জন্য এটি একটি দারুন কেস স্টাডি।
ইন দ্য ডার্ক
ইন দ্য ডার্ক-এর দ্বিতীয় সিজনের বেশিরভাগ পর্বই প্রচারিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। সর্বশেষ দুটি পর্ব ছিল ২০১৯ সালের। পুরস্কারজয়ী এই পডকাস্টের এবারের সিজনে ছিল কার্টিস ফ্লাওয়ার্সের বিরুদ্ধে চলমান মামলা নিয়ে অনুসন্ধান। ১৯৯৬ সালে মিসিসিপিতে গুলি করে হত্যা করা হয় চারজনকে। এই ঘটনায় ফ্লাওয়ার্সকে ছয় বার আদালতে তোলা হয়েছে। তিনি একের পর এক আপিল করেছেন, জিতেছেন। কিন্তু আইনজীবীরা আবারো মামলা করেছেন । সিজনটি যত এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট হয়েছে যে, দ্য ডার্ক টিম নিছক একজন ব্যক্তির ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছে না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার নিয়মতান্ত্রিক ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরছে।
বান্ডিভিল: দ্য রেমন্যান্ট
গত বছর, প্রথম সিজনে বান্ডিভিল নজর দিয়েছিল কুখ্যাত বান্ডি পরিবারের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার-বিরোধী খামারমালিক ক্লিভেন বান্ডি ২০১৪ সালে সশস্ত্র লড়াই চালিয়েছিলেন নেভাদাতে। আর তার ছেলেরা ২০১৬ সালে ওরিগনে বন্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকা দখল করেছিলেন অস্ত্রের জোরে। বান্ডিভিল: দ্য রেমন্যান্ট-এর দ্বিতীয় সিজন শুরু হয় একটি বোমা বিস্ফোরণ দিয়ে। নেভাদার গ্রামে বোমা দিয়ে একটি বাড়ি উড়িয়ে দেয়া, শুরুতে মনে হবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এখান থেকেই জট খুলতে থাকে, অঞ্চলজুড়ে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু চরমপন্থী হামলার ঘটনার। এই পডকাস্ট অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সহিংসতার সাথে জড়িয়ে থাকা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, যা পশ্চিম আমেরিকার সরকার-বিরোধী আন্দোলনে খুব জনপ্রিয়। একই সঙ্গে দেখা গেছে এই সহিংসতার আগুনে কে বা কারা ইন্ধন দিচ্ছে।
হোয়াইট লাই
এনপিআর-এর হোয়াইট লাই পডকাস্টে নজর দেওয়া হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একটি ঘটনার দিকে। ১৯৬৫ সালে খুন হয়েছিলেন রেভারেন্ড জেমস রিব। এই যাজক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে, আলাবামাতে গিয়ে পুলিশী সহিংসতার বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল, কারণ হত্যাকাণ্ডের শিকার ও অভিযুক্ত হামলাকারী; সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। যে তিনজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল, তারা সবাই পরে বেকসুর খালাস পান। ব্যাপারটি তখন থেকে অমীমাংসিতই থেকে গেছে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগের একটি ঘটনায় আসলেই কী ঘটেছিল, তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখেও পড়েছে হোয়াইট লাইয়ের কর্মীরা। কিন্তু বেশ কয়েক বছরের অনুসন্ধানের পর, তারা শেষপর্যন্ত কিছু উত্তর পেয়েছেন। একই সঙ্গে নজির তৈরি করেছেন, কিভাবে এত আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করা যায়।
দ্য ক্যাচ অ্যান্ড কিল পডকাস্ট
রোমান ফ্যারো-র নতুন এই পডকাস্ট বানানো হয়েছে তাঁর বহুল-বিক্রিত বই “ক্যাচ অ্যান্ড কিল: লাইজ, স্পাইজ অ্যান্ড এ কন্সপাইরেসি টু প্রটেক্ট প্রিডেটরস” অবলম্বনে। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে কিভাবে তিনি মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনকে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান করেছেন। বইয়ের প্রধান চরিত্রের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এই পডকাস্টের জন্য। গল্প শুরু হয়েছে একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভকে দিয়ে, যার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল ফ্যারোকে অনুসরণ করার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে সেই গোয়েন্দা পরিণত হন ফ্যারোর একজন সোর্সে। এই অনুসন্ধানের সময় ফ্যারো যত অডিও রেকর্ড করেছেন, তাও উঠে এসেছে পডকাস্টে।
রানিং ফ্রম দ্য কপস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা, অথচ কপস-এর অন্তত একটি পর্ব দেখেননি, এমন মানুষ খুব কমই আছেন। এটি সে দেশের সবচে লম্বা সময় ধরে চলা রিয়েলিটি টিভি শো। পরবর্তীতে এর অনুকরণে আরো অনেক টিভি শো চালু হয়েছে। কপস-এর ফর্মুলা খুবই সাধারণ: কিছু ক্যামেরা ঘুরতে থাকে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে, সেখানে ধারণ করা হয় কিভাবে এই অফিসাররা চারিদিকে টহল দেন এবং আইনভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু এই শোতে দেখানো ঘটনাগুলো কি আসল? এটি কিভাবে মার্কিন পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করছে? রানিং ফ্রম কপস পডকাস্টে এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হয়েছে। কপস-এ যে ধরণের অপরাধের চিত্র দেখানো হয়, সেসব ডেটা খতিয়ে দেখেছে রানিং ফ্রম কপস। একই সঙ্গে তারা খুঁজে বের করেছে গ্রেপ্তার হওয়া মানুষদেরও। এবং জিজ্ঞাসা করেছে, টেলিভিশনে তাদের দেখানোর ব্যাপারে কোনো সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা। আসল, অসম্পাদিত ফুটেজ সংগ্রহ করে, তারা সেগুলো মিলিয়ে দেখেছে টিভিতে প্রচারিত ভিডিওর সঙ্গে।
ট্রাম্প ইনকর্পোরেটেড
এটি প্রোপাবলিকা এবং ডব্লিউএনওয়াইসি স্টুডিও-র একটি যৌথ প্রকল্প, যেখানে রিপোর্টাররা মার্কিন প্রেসিডেন্টের অর্থের উৎস অনুসন্ধান করেছেন। তাঁরা দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন-এর কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখেছেন এবং বুঝতে চেয়েছেন কিভাবে এটি কাজ করে। তারা এও দেখতে চেয়েছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এখানে কী কী হয়েছে, এবং কিভাবে তা ব্যবসা ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। এই পডকাস্ট চলছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে, কিন্তু এখনো অনেক কিছু নিয়ে অনুসন্ধান বাকি আছে। এই পডকাস্টের সাম্প্রতিক একটি পর্ব ছিল ট্রাম্পের আয়কর নথিতে সংখ্যার অসংগতি নিয়ে। আরেকটি পর্বে বলা হয়েছে ট্রাম্প রিসোর্টে আয়োজিত একটি সম্মেলনের কথা, যেখানে হাজির হয়েছিলেন প্রধান প্রধান ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা।
১০০০ ডিগ্রী
এই পডকাস্টটি ছিল ফরাসী ভাষায়। জিআইজেএন-এর ফরাসী সম্পাদক মার্থে হুবিও এটি নিয়ে বলেছেন:
“২০০৩ সালে, দানিয়েল মাসি নামের এক ফরাসীকে ২৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল: তিনি সাবেক দুই বন্ধু, জোসেফ ও ডোমিনিক হার্নান্দেজের চিঠির বাক্সে একটি পার্সেল বোমা রেখে এসেছিলেন, এবং এই ঘটনায় তারা দুজন আহত হয়েছিলেন। মাসি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। অন্যদিকে হার্নান্দেজ দম্পতি নিশ্চিত, মাসি-ই কাজটি করেছেন। এই ঘটনার ২৫ বছর পর, ফরাসী সাংবাদিক অ্যাডেলে হামবার্ট ও এমিলি দোনেত আবার অনুসন্ধান শুরু করেন। তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেন, আদালতের নথিপত্র বিশ্লেষণ করেন এবং অপরাধের জায়গা নিয়ে তদন্ত করার জন্য তুলুজ-এও গিয়েছেন। যখন এই আকর্ষণীয় পডকাস্টটির পর্বগুলো প্রচারিত হতে শুরু করে, তখন শ্রোতারা আবিস্কার করেছেন, কিভাবে একটি বন্ধুত্বের গল্প ধীরে ধীরে তিক্ততায় রূপ নেয়; এবং কিভাবে পুলিশি তদন্তে মাসি-র অপরাধের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। পুরো পডকাস্টজুড়ে সাংবাদিকরা আলোচনা করেছেন তাঁদের নৈতিক উভয়সঙ্কট, সোর্সদের চিহ্নিত করার জটিলতা এবং কোনটা সত্যি- তা নিয়ে নিজেদের সংশয়ের কথা।”
দ্য মিসিং ক্রিপ্টোকুইন
বিবিসি-র আট পর্বের এই পডকাস্টে তুলে আনা হয়েছে ড. রুজা ইগনাতোভার রহস্যময় কাহিনী। বুলগেরিয়ার এই ব্যবসায়ী ধনী হয়েছেন ওয়ানকয়েন নামের একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিক্রির মাধ্যমে। এক স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকের সামনে তিনি ওয়ানকয়েনকে বর্ণনা করেছিলেন “বিটকয়েনের ঘাতক” হিসেবে। ব্লকচেইনকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওয়ানকয়েন। কিন্তু দুই বছর আগে, ইগনাতোভা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যান। ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েন অনেক বিনিয়োগকারী। উপস্থাপক জেমি বার্লেটের ভাষায়, “তারা পুরনো পিরামিড স্কিমের ওপর আস্থা রেখেছিলেন।” তিনি ইগনাতোভার সন্ধান জানারও চেষ্টা করেছেন। ধারণা করা হয় ইগনাতোভা এখন ইউরোপের কোনো দেশে আত্মগোপন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন ওয়ানকয়েন বাণিজ্যের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কেও, যা এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
রিভিল
ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (সিআইআর)-এর সাপ্তাহিত পডকাস্টের নাম রিভিল। সিআইআর এবং তাদের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর কথা উঠে আসে এই পডকাস্টে। এর বিষয়বস্তু মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক। এবছর, উল্লেখযোগ্য পর্বের মধ্যে ছিল: ঘৃণা-ছড়ানো গ্রুপগুলোর বিস্তার, সেবা-কর্মীদের হাতে প্রবীন নির্যাতন, অপরাধী ধরতে জেনেটিকস-এর ব্যবহার, ইত্যাদি।
আইআরই রেডিও পডকাস্ট
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটরস (আইআরই)-এর এই পডকাস্টে, সাংবাদিকরা শ্রোতাদের শোনান তাদের বড় বড় অনুসন্ধানের নেপথ্যের গল্প। যেমন, ক্যাথোলিক অনাথ আশ্রমগুলোতে কিভাবে শিশুরা নৃশংস মৃত্যুর শিকার হয়েছে, তা নিয়ে কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধানের গল্প শুনিয়েছেন ক্রিস্টিন কেনলি। আইআরই-র সম্মেলনগুলোর বিশেষ মুহূর্তও উঠে আসে এই পডকাস্টে। যেমন সম্মেলনের একটি সেশনে টি. ক্রিশ্চিয়ান মিলার ও কেন আর্মস্ট্রং ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কিভাবে তাঁরা লিখেছিলেন পুলিৎজারজয়ী অনুসন্ধান, “এন আনবিলিভেবল স্টোরি অব রেপ।” এখান থেকেই তৈরি হয় নেটফ্লিক্স সিরিজ: আনবিলিভেবল।
এক দশকে কাইচিনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানগুলো
এই পডকাস্টটি ছিল ম্যান্ডারিন ভাষায়। জিআইজেএন-এর চীনা ভাষার সম্পাদক জোয়ি চি এই পডকাস্টটি নিয়ে বলেছেন,
“কাইচিন, চীনের অন্যতম প্রধান অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম। গত ১০ বছরে, তারা প্রকাশ করেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন, যেগুলো পুরো দেশজুড়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। এগুলোর মধ্যে ছিল: সাবেক জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ জোউ ইয়ংকাং-এর ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি, ২০১৫ সালের তিয়াংজিং বন্দরে বিস্ফোরণ, অনবাং ইনস্যুরেন্সের সাবেক প্রধান উ জিয়াওহুই-এর প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এবং এক-শিশু নীতির কারণে পরিত্যক্ত হওয়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনুসন্ধান। ২০১৯ সালে, পডকাস্টের মাধ্যমে এসব প্রতিবেদনের পেছনের কাহিনী বলা শুরু করে কাইচিন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে এই পডকাস্টই হয়তো ধরে রাখবে চীনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বর্ণালী যুগের স্মৃতি।”
বিবিসি-র দ্য ডকুমেন্টরি (নির্বাচিত পর্ব)
এই পডকাস্টটি পুরোপুরি অনুসন্ধানী চরিত্রের নয়। উডস্টকের উত্তরাধিকার থেকে শুরু করে দালাই লামার সাক্ষাৎকার; অনেক কিছুই থাকে এখানে। তবে বিবিসির অনুসন্ধানগুলোও নিয়মিত প্রচারিত হয়। যেমন, সম্প্রতি এখানে উন্মোচিত হয়েছে, কিভাবে পশ্চিম আফ্রিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করছেন অধ্যাপকরা। শুনতে পারেন ঘানার এক তরুনের তাক লাগানো কাহিনীও, যিনি স্পাই গ্লাস ব্যবহার করে ছদ্মবেশে ঘুরেছেন অভিবাসীদের সঙ্গে।
রেডিও অ্যাম্বুলান্তে (নির্বাচিত পর্ব)
এই পডকাস্টটি ছিল স্প্যানিশ ভাষায়। জিআইজেএন স্প্যানিশ সম্পাদক কাতালিনা লোবো-গুয়েরেরো এটি নিয়ে বলেছেন:
“এনপিআর-এর রেডিও অ্যাম্বুলান্তে শুরু হয় ২০১১ সালে। তাদের লক্ষ্য ছিল ন্যারেটিভ লংফর্ম জার্নালিজমকে রেডিও-তে নিয়ে আসা, স্প্যানিশ ভাষায় যা ‘ক্রনিকাস’ নামে পরিচিত। লাতিন আমেরিকার প্রথাগত রেডিও স্টেশনগুলোতে এমন কিছু আগে কখনো দেখা যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্প্যানিশ পডকাস্টেও দেখা যায়নি স্টোরিটেলিংয়ের এই ধারাটি। শুরু হওয়ার পর দ্রুতই তারা নিয়োগ দেওয়া শুরু করে বেশ কয়েকটি দেশের মেধাবী সাংবাদিক ও প্রযোজকদের এবং প্রচার করতে শুরু করে দারুন দারুন সব প্রতিবেদন। তাদের বেশ কয়েকটি পর্বে ছিল অসাধারণ কিছু অনুসন্ধান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের জামানত নিয়ে বাণিজ্য; হারিকেন মারিয়ার আঘাতে পুয়ের্তো রিকোতে নিহতের সংখ্যার হিসেব না থাকা; কলম্বিয়ায় ১৯৮৫ সালের অগ্ন্যুৎপাতের পর আর্মেরোর হারিয়ে যাওয়া শিশুরা; এবং কিভাবে এক আধ্যাত্মিক গুরু তার অনুসারীদের যৌন হয়রানি করেছেন বছরের পর বছর ধরে। এরকম অনেক পর্বই এখানে আছে। এবং সবগুলোর সঙ্গেই আছে ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট। খুব সম্প্রতি, রেডিও অ্যাম্বুলান্তে চালু করেছে একটি মোবাইল অ্যাপ (লুপা), যার মাধ্যমে আগ্রহী শ্রোতারা চাইলে স্প্যানিশ ভাষাও শিখতে পারবেন।”
লংফর্ম পডকাস্ট (নির্বাচিত পর্ব)
লংফর্ম পডকাস্টে তুলে আনা হয় বিভিন্ন ঘরানার নন-ফিকশন স্টোরিটেলারদের সাক্ষাৎকার। এক ঘন্টার এই আলাপচারিতায় তাঁরা তুলে ধরেন তাদের দক্ষতা-কৌশলের কথা। প্রায়শই, এখানে আসেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। যেমন, এ বছর, এসেছিলেন দুই অনুসন্ধানী পডকাস্টের প্রযোজক: সিরিয়ালের জুলি স্নাইডার এবং ইন দ্য ডার্কের ম্যাডেলিন বারান। কেসি নিউটন ও মাইক আইজ্যাকের মতো সিলিকন ভ্যালি কাভার করা সাংবাদিকরাও এখানে এসে বলেন কিভাবে তাঁরা ফেসবুক, উবারের মতো বড় কোম্পানি নিয়ে অনুসন্ধান করেন। এই ধরণের প্রযুক্তি কোম্পানি থেকে তথ্য বের করা সহজ নয়। কারণ তথ্য-ফাঁস ঠেকাতে তারা অনেক পদক্ষেপ নেয়।
পপুলার ফ্রন্ট
নিয়মিতভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার প্রচার করে, এমন আরেকটি পডকাস্ট, পপুলার ফ্রন্ট। এখানে তুলে ধরা হয় আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহ ও নানাবিধ দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে পর্যালোচনা। ঘটনাগুলো দেখা হয় গবেষকদের দৃষ্টিকোন থেকে। তাদের সাম্প্রতিক পর্বের মধ্যে রয়েছে: গুগল আর্থের মতো ওপেন সোর্স টুলের সাহায্যে যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধান। এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের ক্রিশ্চিয়ান ট্রিবার্ট। লিবিয়ায় শরণার্থীদের ওপর হেনস্তা-নিপীড়নের ঘটনা থেকে কিভাবে চোখ সরিয়ে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন – এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক স্যালি হেইডেন। আর বাণিজ্যিক ড্রোন কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যুদ্ধবিগ্রহে – এই পর্বে ছিলেন বেলিংক্যাটের নিক ওয়াটার্স।
সম্পাদকের নোট: বেলিংক্যাট, প্রোপাবলিকা, দ্য সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (সিআইআর) এবং ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটরস (আইআরই); সবাই জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন।
গেইল ফোর জিআইজেএন-এর সহযোগী সম্পাদক। তিনি এর আগে ফ্রান্স ২৪ চ্যানেলে সামাজিক মাধ্যম থেকে খবর সংগ্রহ এবং তা যাচাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নিউজ ডিপলির সম্পাদক ছিলেন এবং টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন।