ডিজিটাল নিরাপত্তার যে ৪টি টিপস প্রত্যেক সাংবাদিকের জানা উচিত
চারিদিকে ব্যক্তিগত ডেটা হাতিয়ে নেওয়ার যত খবর আসছে, তাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে সবারই কমবেশী শংকিত হওয়া উচিত। কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। কারণ, তারা গোপন সোর্স আর স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে কাজ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আনকভারিং এশিয়া ২০১৮ সম্মেলনে, ট্যাকটিকাল টেকনোলজি কালেক্টিভের ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্রিস ওয়াকার এই বিষয়ে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন, যা সাংবাদিকরা চাইলে এখনই প্রয়োগ করতে পারেন। নিশ্চিত করতে পারেন নিজের এবং সোর্সের নিরাপত্তা।
১. আপনার ডিভাইসকে এনক্রিপ্ট করুন
আপনি যদি আপনার ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক এখনো এনক্রিপ্ট না করে থাকেন, তাহলে জলদি করে ফেলুন। হালের ম্যাক পিসিগুলোতে ফাইলভল্ট ইনস্টল করাই থাকে। সিস্টেম প্রেফারেন্স থেকে সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি হয়ে ফাইলভল্টে গিয়ে, অ্যাপ্লিকেশনটি অ্যাকটিভ (সক্রিয়) করে নিতে পারেন। একবার চালু (অন) করার পর তাকে আর কখনোই বন্ধ (অফ) করবেন না। উইন্ডোজ পিসির জন্য বিটলকার ব্যবহারের পরামর্শ দেন ওয়াকার। অ্যাপ্লিকেশনটি উইন্ডোজ ১০ এর “প্রো” এবং এন্টারপ্রাইজ – দুই ভার্সনের জন্যই পাওয়া যায়। (আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ হোম ব্যবহার করেন, তাহলে আপগ্রেড করে নিতে পারেন। যদিও এতে খরচ অনেক।) একবার অ্যাকটিভেট হওয়ার পরে এটি আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভকে এনক্রিপ্ট করে ফেলবে। একই পদ্ধতিতে পিসির সাথে যুক্ত সব ইউএসবি ডিভাইসকেও এনক্রিপ্ট করা যাবে।
আপনি যে অপারেটিং সিস্টেমই ব্যবহার করেন না কেন, নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত আপডেট করতে হবে।
২. ভিপিএন নিন
প্রক্সি বা মধ্যবর্তী সার্ভার ব্যাবহার করে আপনাকে গোপনীয়তা বজায় রেখে ইন্টারনেট ব্রাউজের সুযোগ দেবে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। ভিপিএন সেবা সাধারণত টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটি স্মার্টফোনেও ব্যবহার করা যায়। একটু ঘাঁটাঘাটি করে দেখুন, অনেক কিছু জানতে পারবেন! যেমন, প্রাইভেসি সুরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ভিপিএন সেবার চাইতে ইউরোপেরগুলো ভালো। জেনে রাখুন ভিপিএন কখন চালু রাখতে হয় আর কখন বন্ধ রাখা যায়। ( অনিরাপদ গণ ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় অবশ্যই “অন” রাখবেন।)
আপনি কতটা ঝুঁকিতে আছেন, কোথায় বসে কী ব্রাউজ করছেন, তার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিন টর (Tor) ব্রাউজার ব্যবহার করবেন কিনা। ভিপিএনে আপনাকে ভরসা রাখতে হবে সেবা প্রদানকারী কোম্পানীর উপর। ধরে নিতে হবে, আপনি যে সাইটে যাচ্ছেন তার তালিকা তারা রেকর্ড বা কারো সাথে শেয়ার করছেন না। তারা এমন করলেই বিপদ। কিন্তু টর ব্রাউজার এমনভাবে ডিজাইন করা, অন্য কেউ তো দূরের কথা, টর সার্ভার নিজেই জানবে না, আপনি কোন সাইটে যাচ্ছেন, কী করছেন। এটি সবচেয়ে নিরাপদ, কিন্তু আপনার ব্রাউজিংয়ের গতি কমিয়ে দেবে। এই ক্ষেত্রেও নিশ্চিত হয়ে নিন, আপনি যে টর সফটওয়্যার ডাউনলোড করছেন, তা নির্ভরযোগ্য কিনা।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: কেমন নিরাপত্তা চান তার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে প্রয়োজন, ভিপিএন এবং টর ব্রাউজার ব্যবহার করুন।
৩. যোগাযোগ নিরাপদ করুন
সোর্সের সাথে গোপনে কথা বলতে চান? তাহলে সিগন্যাল বা অয়্যার এর মত নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ ডাউনলোড করুন। এগুলো আপনার বার্তা বা কথাকে এনক্রিপটেড রাখবে।
টুটানোটা বা প্রোটোন মেইলের মত এনক্রিপটেড সেবায় ইমেইল একাউন্ট খুলুন এবং আপনার সোর্সকেও একই কাজ করতে বলুন। আর যদি নিজের পুরোনো একাউন্টটিকেই কাজে লাগাতে চান, তাহলে মোজিলা থান্ডারবার্ড ইমেইল ক্লায়েন্ট, ইনিগমেইল এক্সটেনশন এবং জিএনইউপিজি এনক্রিপশন সফটওয়্যার নামিয়ে ব্যবহার শুরু করুন। নিজের যোগাযোগকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনে আরো ব্যবস্থা নিন।
৪. এবার চাই একটা কঠিন পাসওয়ার্ড
ওয়াকারের মতে, মানুষ পাসওয়ার্ড বাছাইয়ের জন্য যত কৌশলই নিক না কেন, তা একরকম অর্থহীন। আপনার পাসওয়ার্ড হতে হবে লম্বা, সেটি যেন খুব চেনা-জানা কোনো বাক্য না হয়, তা-ও নিশ্চিত করুন (যেমন, পরিচিত কোনো গান বা কিবতার লাইন।) আর প্রতিটি একাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এর একটি কৌশল হলো, পাসফ্রেইজ ব্যবহার করা। সাতটি আলাদা শব্দ নিন। তাদেরকে মিলিয়ে একটি “পাসফ্রেইজ” তৈরি করুন। অথবা এত ঝামেলায় না গিয়ে, সরাসরি কীপাসএক্সসি, ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটি আপনার হয়ে জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করবে এবং তাকে একটি এনক্রিপটেড ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করবে।
এরিমধ্যে বিশ্বে কয়েক দফা ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকের ঘটনা ঘটেছে। আপনি কী নিশ্চিত, আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসও এমন কোনো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়নি? নিশ্চিত হতে চাইলে হ্যাভআইবিনপনড নামের এই ওয়েবসাইটে যাচাই করে নিন। আপনার কোনো অনলাইন একাউন্ট যদি তথ্য চুরির শিকার হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।
অনলাইনের জগতে পুরোপুরি নিরাপদ বলে কিছু নেই। কিন্তু আপনি নিজেকে আরো সুরক্ষিত করতে পারেন অনায়াসেই। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে ঘুরে আসুন সিকিউরিটি ইন আ বক্স থেকে।
রোনাল্ড বেডনার্জ একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। নেদারল্যান্ডসের ডেলফ-এ তিনি পড়াশোনা করেছেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। জার্মান সংস্থা কনরাড এডিনাওয়ার স্টিফটুং পরিচালিত জার্নালিজম মাল্টিমিডিয়া প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিউলে অনুষ্ঠিত আনকভারিং এশিয়া: এশিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে, তিনি ফেলো হিসেবে যোগ দেন।