প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

আফ্রিকা থেকে: পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধানে যেভাবে শক্তি যোগাচ্ছে জিও-জার্নালিজম

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

দক্ষিণ আফ্রিকায় পানি সংকটে ভোগা অঞ্চলে কিভাবে নানা পরিবেশগত অপরাধ করা হয়েছে, তা উন্মোচন করেছে অক্সপেকার্স। ছবি: মার্ক ওলালডে

কিছু জায়গায়, পানির মধ্যে স্পষ্ট ধুসর ধুলিকনা দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে কিছু একটা সমস্যা আছে। খনি থেকে আসা বর্জ্য দিয়ে এগুলো দূষিত হয়েছে। অন্য কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে, খনিজ কোম্পানিগুলো বিষাক্ত বর্জ্য জমা করে রেখেছে এবং সেগুলোর কারণে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হচ্ছে।

অক্সপেকার্স ইনভেস্টিগেটিভ এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিজমের অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে: পানি সংক্রান্ত বিধিমালা লঙ্ঘন ও অপর্যাপ্ত পরিবেশগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১০০টিরও বেশি খনি, সেখানকার স্থানীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে দূষিত করেছে

স্বচ্ছতার অভাব এবং কমিউনিটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনায় না নেওয়ার কারণে বিধি লঙ্ঘনকারী এসব কোম্পানিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চেয়েছে অক্সপেকার্স। এই কাজে তারা ব্যবহার করেছে বিধি লঙ্ঘনের নানা ডেটা।

জিআইজেএনএর এই সিরিজে, আমরা তুলে ধরছি আমাদের সদস্য সংগঠনগুলোর পরিচিতি। তাদের দারুন সব কাজ ও মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলোর কথা, অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলা পর্যন্ত।

সংসদীয় নথিপত্রের মাধ্যমে আরো গভীর অনুসন্ধান চালিয়ে তারা দেখেছে: অনেক জায়গায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে না পারলেও, কোম্পানিগুলোকে কাজ চালিয়ে যেতে দিয়েছে দেশটির সরকার। যার ফলে খনির দূষিত পানি সরাসরি পরিবেশে মিশেছে, দূষিত পানির জলাশয় তৈরি করেছে, তেল বিপর্যয় ঘটেছে এবং খনি থেকে অ্যাসিড মিশ্রিত পানি অন্যান্য জলাশয়ে মিশেছে। এমন কিছু জলাশয় আশেপাশের শহর ও গ্রামগুলোর পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত।

অক্সপেকার্স এই বিষয়গুলোকে এক জায়গায় আনতে পেরেছে। এবং পরিণামে, ফেডারেশন ফর এ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট-এর মতো অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ, এই পানি দূষণকারী কোস্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।

একটি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম হিসেবে, অক্সপেকার্স সব সময়ই মনোযোগ দিয়েছে ডেটা বিশ্লেষণ ও সহযোগিতার দিকে। খনিজ উত্তোলন নিয়ে করা এই অনুসন্ধানটিতেও দেখা গেছে এই বৈশিষ্ট্য। অ্যানিমেটেড ম্যাপ ও ইনফোগ্রাফিক্সের মতো ইন্টারঅ্যাকটিভ ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল ব্যবহার করে তারা খুবই আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করেছে: কিভাবে ভূমি দূষণ হচ্ছে এবং কারা সেগুলো করছে।

অনুদান-দাতা, নাগরিক সংগঠন ও বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সঙ্গে জোট বেঁধে এই কাজগুলো করে অক্সপেকার্স। দীর্ঘমেয়াদি এসব সম্পর্কের কারণে তাদের ডেটা সংগ্রহ ও অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী হয়েছে। এবং যার ফলে, উন্মোচিত হচ্ছে পরিবেশগত নানা অপরাধের ঘটনা এবং জবাবদিহির আওতায় আসছে সংশ্লিষ্টরা।

২০১৩ সালে অভিজ্ঞ পরিবেশ সাংবাদিক ফিওনা ম্যাকলিওড প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ আফ্রিকা-ভিত্তিক এই সংগঠন। দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের নানা বিষয় কাভার করে অক্সপেকার্স। তারা বড় কিছু প্রতিবেদন করেছে অবৈধভাবে বণ্যপ্রাণী পাচার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে। খনিজ, পানি ও পরিবেশ দূষণ তাদের আরো কিছু প্রধান কাজের জায়গা।

ডেটা-ভিত্তিক সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠান হিসেবে, অক্সপেকার্সের কাজের একটি প্রধান জায়গা মূল ডেটাগুলো সংগ্রহ করা। তারা প্রায়ই রিপোর্টিং সংশ্লিষ্ট ডেটাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। ডেটা সংগ্রহের জন্য তারা ব্যবহার করে ওপেন আফ্রিকাসোর্স আফ্রিকার ডেটাসেট ও নথিপত্র। এরপর তারা এই ডেটাসেটগুলো সাজিয়ে নেয় নিজেদের কিছু জিও-জার্নালিজম টুল দিয়ে। যেমন, #মাইনঅ্যালার্ট নজর রাখে খনিজ উত্তোলন সেক্টরের দিকে। এবং #ওয়াইল্ডআই, নজর দেয় অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী পাচারে। তাদের এই কাজগুলো প্রায়ই প্রকাশিত হয় ইন্টারনিউজের আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক ও দক্ষিণ আফ্রিকার মেইল অ্যান্ড গার্ডিয়ানে। এগুলোর জন্য অক্সপেকার্স জিতেছে বেশ কয়েকটি পুরস্কার। এবং তাদের ২০ সদস্যের এই দল মনোনীত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মানজনক টাকো কুইপার পুরস্কারের জন্য

খনিজ আহরণ ডেটার পর্দা উন্মোচন

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ৩১। আফ্রিকা মহাদেশের অন্য দেশগুলোর তুলনায় কিছুটা স্বাধীন হলেও, দক্ষিণ আফ্রিকায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি এখনো নড়বড়ে অবস্থাতেই থেকে গেছে। সরকারের কোনো দুর্নীতি বা অর্থবাণিজ্য বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনা, সেখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।

পানি দূষণ, খনি থেকে এসিড পানি ও বিষাক্ত বর্জ্য নির্গমনের বিষয়গুলো সামনে আসতে শুরু করার পর বিষয়টিকে পরিবেশগত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়।

একইসাথে, দেশটির বড় বড় কিছু সংবাদমাধ্যমের মালিক নানাবিধ শিল্প-বাণিজ্যের সাথে জড়িত। এবং এখানে খনি সংক্রান্ত বিষয়গুলি বরাবরই থেকে গেছে একটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র হিসেবে। কারণ এটি দেশটির খনিজ উত্তোলন সেক্টরের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে। এবং মোট জিডিপির ১৮ শতাংশই আসে এখান থেকে।

এক দশক আগে, এই খনি সংক্রান্ত বিষয়গুলো কাভার করতেন অর্থবাণিজ্য বিটের সাংবাদিকরা। মাইনিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তারা রিপোর্ট করতেন মজুত ও বিনিয়োগের ওপর। তবে ধীরে ধীরে পানি দূষণ, খনি থেকে এসিড পানি ও বিষাক্ত বর্জ্য নির্গমনের বিষয়গুলো সামনে আসতে শুরু করার পর বিষয়টিকে পরিবেশগত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়।

পরিণামে, নীতি নির্ধারক ও সাংবাদিকরা নজর দিতে শুরু করেন খনিজ কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ার দিকে।

খনি পরিচালনা সংক্রান্ত নানা আবেদনপত্র, লাইসেন্স ও প্রাসঙ্গিক ইস্যুগুলোর দিকে নজর রাখার জন্য অক্সপেকার্স তৈরি করেছে জিও-স্পেশিয়াল ডেটা বিশ্লেষণ টুল, #মাইনঅ্যালার্ট। এর লক্ষ্য: খনি পরিচালনার ক্ষেত্রে, সরকারি ও বেসরকারিখাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

এই টুলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক অনুসন্ধান ও খনি কর্মকাণ্ডের হালনাগাদ খবরাখবর জানাতে পারে অক্সপেকার্স। এখান থেকে নানা তথ্য নিতে পারেন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্ট, এনজিও, অ্যাডভোকেসি সংগঠন ও সাংসদরা। খনিজ উত্তোলন শিল্পে স্বচ্ছতা আনতে কাজ করা সাংসদরা তাদের আলোচনায় প্রায়ই অক্সপেকার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর কথা টেনে আনেন। বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি গ্রুপ সেগুলো ব্যবহার করেছে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

অক্সপেকার্সেরর #মাইনঅ্যালার্ট প্ল্যাটফর্মের স্ক্রিনশট

অক্সপেকার্সের এই রিপোর্টিং বড় ধরণের প্রভাবও ফেলতে পেরেছে। ২০১৭ সালে সাংবাদিক মার্ক ওলালডে উন্মোচন করেন, যে ১২৪ টি কোম্পানিকে খনি বন্ধ করে দেওয়ার অনুমতি-সনদ দেওয়া হয়েছে, তারা কয়লা খনি এলাকার পূনর্বাসনে ব্যর্থ হয়েছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে দূষণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তারা ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের শিকার হয়েছেন এবং সেখানে পানির স্তরও নিচে নেমে গিয়েছে।

এই অনুসন্ধানের ফলে পানি-সংকটে থাকা কিছু অঞ্চলে, বেশ কয়েকটি খনি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং খনি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় আরো স্বচ্ছতা আনতে সরকার কিছু আইনও পরিবর্তন করে।

অ্যান্ডিসওয়া মাটিকিনিকার আরেক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ফাস্ট-ট্র্যাক, অর্থ্যাৎ দ্রুতগতিতে পানি ব্যবহারের অনুমোদন দিতে গিয়ে দেশটির সরকার কিভাবে স্থানীয় সম্প্রদায়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরে, খনির লাইসেন্স পেতে কোম্পানিগুলোর অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনার প্রস্তাবটি কীভাবে ঝুঁকি এবং পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনার সময়কে সীমাবদ্ধ করবে।

অনুসন্ধানী টুল তৈরিতে অংশীদারিত্ব

প্রকল্প ভিত্তিক কাজ করায় অক্সপেকার্সের বাৎসরিক বাজেট একেক বছর একেক রকমের হয়। তাদের বড় কিছু অনুদানদাতার মধ্যে আছে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন ফর সাউথ আফ্রিকা (ওএসএফ-এসএ) এবং কোড ফর আফ্রিকা। গত কয়েক বছরে তারা সমর্থন পেয়েছে পুলিৎজার সেন্টার, আফ্রিকান নেটওয়ার্ক অব সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমঅর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট থেকে।

২০১৮ সালে, অক্সপেকার্সের বাজেট ছিল ১০৫০০০ ডলার। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ এসেছিল বিভিন্ন অনুদান থেকে। এবং বাকি ১৫ শতাংশ এসেছিল অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সাথে সহযোগিতামূলক জিও-জার্নালিজম প্রকল্প থেকে। ২০১৯ সালে, এই অংকটি বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০০০ ডলারে। ওয়েবসাইটে পাঠকের বিচারে, গত বছর অক্সপেকার্সের বিভিন্ন অনলাইন টুলের ব্যবহারকারী ছিল ৪০ হাজার ও তাদের প্রতিবেদনগুলোতে পেজ ভিজ ছিল ৭০ হাজার।

গত পাঁচ বছরে অক্সপেকার্সের একটি বড় পার্টনারশিপ গড়ে উঠেছে ওএসএফ, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। এটি শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার খনিজ উত্তোলন শিল্পের (বিশেষভাবে খনিগুলোর) সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও তৈরির মাধ্যমে। তারা ধারণা করেছিলেন: এই অনুদানের মধ্য দিয়ে খনি পরিচালনার লাইসেন্স, কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে স্বচ্ছতা তৈরি করা যাবে। এবং দুর্নীতি মোকাবিলার পাশাপাশি, খনির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কমিউনিটির অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা যাবে।

ওএসএফ-এসএ’র কাছ থেকে পাওয়া সেই অনুদান দিয়ে অক্সপেকার্স ধীরে ধীরে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা এখন পরিচিত #মাইনঅ্যালার্ট নামে।

ওএসএফ-এসএ’র রিসার্চ ও অ্যাডভোকেসি ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার  নাটিকো চাওকি বলেছেন, “ওএসএফ-এসএ সব সময়ই বিট রিপোর্টিং, বিষয়ভিত্তিক সাংবাদিকতা, অর্থনৈতিক নানা অপরাধ, ভূমি সংস্কার প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক অবস্থান উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছে।”

জোহানেসবার্গের উইটওয়াটারস্ট্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেশন ফর এ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্টসেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড লিগাল স্টাডিজের মতো সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা সত্ত্বেও, অক্সপেকার্স খুবই সতর্কভাবে আলাদা করেছে সাংবাদিকতা ও অ্যাডভোকেসিকে।

ম্যাকলেওড বলেছেন, “#মাইনঅ্যালার্ট-কে কেউ অ্যাক্টিভিজমের কাজে ব্যবহার করতে পারে। আমাদের কাজের মধ্যেও এক ধরনের অ্যাক্টিভিস্ট ভাব আছে।  কিন্তু আমরা অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে সামনে আসতে চাই না। প্রচারপ্রচারণার কাজটা আমরা ‘বিশেষজ্ঞদের’ হাতে ছেড়ে দিতে চাই।”

জিও-জার্নালিজমের ভবিষ্যৎ

অক্সপেকার্স এখন নিজেদের কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বাইরেও। বিশ্বজুড়ে অবৈধ বন্যপ্রাণীর ব্যবসা কাভার করার জন্য তারা তৈরি করছে নতুন টুল। বিভিন্ন মহাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনি ব্যবস্থা যেভাবে বন্যপ্রাণী পাচার সংক্রান্ত অপরাধগুলো মোকাবিলা করে, তাতে ফাঁক দেখতে পেয়ে, নতুন এই টুল তৈরিতে হাত দেয় অক্সপেকার্স ও আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক। বন্যপ্রাণী পাচার বিষয়ে নজর রাখার জন্য গত বছর তারা চালু করেছে #ওয়াইল্ডআই

#ওয়াইল্ডআই প্ল্যাটফর্মের স্ক্রিনশট। এটি বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধগুলো লিপিবদ্ধ করে।

তাদের ইউরোপিয় পেজ এবং #ওয়াইল্ডআই এশিয়া যাত্রা শুরু করেছে এবছর। বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটে চলেছে, তা এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করার জন্য হাজারো সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অক্সপেকার্স। এখানে বন্যপ্রাণী জব্দ, গ্রেপ্তার, আইনি মামলা ও অভিযুক্তদের সব তথ্য পাওয়া যায়।

এই প্ল্যাটফর্মে, ব্যবহারকারীরা দেখতে পারেন এশিয়াজুড়ে কোথায় কোথায় অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য হচ্ছে। ম্যাপের ওপরে থাকা আইকনগুলোতে ক্লিক করে জানতে পারবেন কোন জায়গায় কী পরিমাণ পণ্য জব্দ করা হয়েছে, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, এবং তাদের কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

#ওয়াইল্ডআই ম্যাপের ডেটাসেটগুলো দেখার জন্য অনুরোধ করতে হয়। তবে অবৈধ বন্যপ্রানী পাচার নিয়ে করা অনুসন্ধানের ডেটাসেটগুলো যে কেউ সঙ্গে সঙ্গে ডাউনলোড করে নিতে পারে। এগুলোর মধ্যে কিছু ডেটাসেট তৈরি করা হয়েছে ইউরোপজুড়ে অবৈধ আইভরি বাণিজ্যঅনলাইনে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া সরীসৃপের মূল্য তালিকার মতো ডেটাসেট থেকে তথ্য নিয়ে।

এই প্ল্যাটফর্মে, ব্যবহারকারীরা দেখতে পারেন এশিয়াজুড়ে কোথায় কোথায় অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য হচ্ছে। ম্যাপের ওপরে থাকা আইকনগুলোতে ক্লিক করে জানতে পারবেন কোন জায়গায় কী পরিমাণ পণ্য জব্দ করা হয়েছে, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, এবং তাদের কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই ম্যাপ থেকে বন্যপ্রাণী পাচার সংক্রান্ত নানা খবরাখবর জানা যায়। যেমন মালয়েশিয়ায় ৪০০০ সংরক্ষিত কচ্ছপসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক জেলেকে। বা ১৩ হাজারেরও বেশি প্রানী ও প্রায় ২৩ হাজার এয়ারগান বুলেটসহ একটি পাচারকারী চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে চীনা পুলিশ।

#ওয়াইল্ডআই এশিয়ার প্রথম দিককার একটি অনুসন্ধান করেছিলেন হংকং ভিত্তিক সাংবাদিক বাও চোয়। তিনি দেখেছিলেন, চীনে প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই পাচারের জন্য শাস্তি এতই কম যে, এতে কেউ এই কাজ করার জন্য নিরুৎসাহিত হবে না। চোয়ের রিপোর্ট থেকে দেখা যায়: ২০১৯ সালের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত বনরুই পাচারের জন্য ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে অর্ধেকেরই কোনো কারাদণ্ড হয়নি। যদিও সেখানে এই অপরাধের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডের আইন আছে।

এটিও চিহ্নিত করা গেছে যে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে মানুষের বনরুই কেনাবেচার সম্পর্ক আছে। এই পরিস্থিতিতে চোয়ের এই ডেটা-ভিত্তিক অনুসন্ধান স্পষ্টভাবে দেখায়, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের আইনকানুনগুলো আমূল পরিবর্তন করা দরকার এবং সেগুলো প্রয়োগ করা দরকার।

সমস্যাটি অনেক বড় হলেও, ম্যাকলয়েড মনে করেন, অক্সপেকার্স এক্ষেত্রে একটি বড় প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেছেন, “সাধারণত আমাদের প্রতিবেদনগুলো থেকে বড় ফলাফলই আসে। আমরা প্রায়ই তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করি, তবে সরকারের মধ্যেও কিছু শুভবুদ্ধির মানুষ আছেন, যারা আমাদের কথা শোনেন।”

পরিবেশ নিয়ে জিআইজেএন-এর আরো কিছু রিসোর্স:

জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া

জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি

পরিবেশগত ডেটা ও সোর্স

খনিজ উত্তোলন শিল্প কাভারের গাইড

গ্রেগরি ফ্রাঙ্কোইস একজন লেখক, গবেষণা পরামর্শক। তিনি উন্নয়ন চর্চায় জনপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাবেক এই বন্যপ্রাণী জীববিজ্ঞানী বসবাস করছেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। এবং তিনি জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।

 

শ্রুতি কেদিয়া একজন পলিসি বিশ্লেষক। তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাবেক এই সাংবাদিক এখন থাকেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। এবং কাজ করেন প্রিসিশন এগ্রিকালচার ফর ডেভেলপমেন্ট ও জাতিসংঘের পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিসবিল্ডিং অ্যাফেয়ার্সে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সদস্য প্রোফাইল

আমি যা শিখেছি: দ্য ক্যারাভানের বিনোদ কে. যোশির শিক্ষা ও পরামর্শ

বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন একটি ধারাবাহিক শুরু করেছে জিআইজেএন। ’১০ প্রশ্ন’ শীর্ষক এই ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে আছে ভারতের প্রথম সারির লং-ফর্ম সাংবাদিকতা সাময়িকী, দ্য ক্যারাভানের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক বিনোদ কে. যোশির সাক্ষাৎকার। এখানে তিনি জানিয়েছেন তাঁদের অনুসন্ধান, এর প্রভাব, ভুলভ্রান্তি ও চ্যালেঞ্জগুলোর কথা। এবং দিয়েছেন কিছু শিক্ষণীয় পরামর্শ।

সদস্য প্রোফাইল

মুক্ত সাংবাদিকতার তিউনিসিয় মডেল ইনকিফাদা

তারা কোনো সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির বিজ্ঞাপন নেন না। দেশি-বিদেশী দাতাদেরও খুব একটা পরোয়া করেন না। বিজ্ঞাপণ ও অনুদানের কথা ভাবতে হয় না বলে, তারা সাংবাদিকতাও করতে পারেন কোনোরকম চাপের কাছে নতি স্বীকার না করেই। তাহলে আয় কোথা থেকে আসে ইনকিফাদার? কেমন তাদের মুক্ত সাংবাদিকতার মডেল? যদি জানতে চান আপনাকে অবশ্যই পড়তে হবে, এই লেখা।

সদস্য প্রোফাইল

টাকার গন্ধ শুঁকে সংঘবদ্ধ অপরাধ খুঁজে বের করে যে চেক অনুসন্ধানী দল 

নিজ দেশ থেকে টাকা পাচার করে, চেক প্রজাতন্ত্রে এসে জমি কিনে কিনে রীতিমত জমিদার বনে গিয়েছিলেন মেসিডোনিয়ার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সেই গোয়েন্দা জমিদারের কাহিনী ফাঁস করে দিয়েছিল চেক সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (সিসিআইজে)। তাদের বিশেষত্বই হচ্ছে টাকার গন্ধ খুঁজে খুঁজে মাফিয়া গোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের স্বরুপ উন্মোচন করা। সীমিত লোকবল আর টাকার টানাটানির মধ্যেও কিভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অনুসন্ধানী দলটি, তারই বিস্তারিত এই লেখায়। 

সদস্য প্রোফাইল

ইমপ্যাক্ট এডিটর: খবরের প্রভাবকে আরো ছড়িয়ে দিতে তৈরি হল যে নতুন পদ

সাংবাদিকতা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন, পদও বিলুপ্ত হচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তিত বাস্তবতায় নতুন নতুন পদও তৈরি হচ্ছে সাংবাদিকতায়। যারা ব্যবসার কৌশল ও পাঠকের সাথে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার মত নানান কাজ করে যাচ্ছেন। এমনই একটি পদ ইমপ্যাক্ট এডিটর। পড়ুন, বর্তমান সময়ের প্রয়োজন মেটাতে, কেন পদটি জরুরি বলে ভাবছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম।