

গত বছর ওয়ান ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক সাংবাদিক নির্বাচিত হন দ্য ডেইলি বিস্টের পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার সংবাদদাতা ফিলিপ ওবাজি জুনিয়র। পাশাপাশি ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর মনোনয়ন পান। ঠিক এক বছর আগে জিতে নেন জেইম ব্রুনে আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
টেলিভিশনের ক্রীড়া উপস্থাপক হিসাবে কাজ শুরুর পর, আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ওবাজির আসাটা ছিল অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। ২০১৫ সালের কথা, একটি এনজিওর শিশু শিক্ষা কর্মসূচিতে কাজ করতে গিয়ে ওবাজি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারামের আতুরঘর হিসেবে খ্যাত নাইজেরিয়ার শহর মাইদুগুরিতে যান। তার উদ্দেশ্য ছিল, কেন ওই এলাকার শিশুরা স্কুলে যায় না এবং বোকো হারাম তাদের জিহাদি আন্দোলনে নিয়োগ করে, এ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ।
এখান থেকে ফিরে ওবাজি তার অভিজ্ঞতাগুলো লেখেন এবং ফেসবুকে শেয়ার করেন। তার এ লেখাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল নিউজ সাইট দ্য ডেইলি বিস্টের একজন প্রতিবেদকের নজরে পড়ে। ওবাজির লেখাটি তিনি তার সম্পাদকদের কাছে পাঠান। অল্পদিনের মধ্যেই তারা ওবাজিকে দ্য ডেইলি বিস্টের হয়ে লেখার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। প্রায় দশ বছর ধরে অন্যান্য ফ্রিল্যান্স রিপোর্টিং অ্যাসাইনমেন্টের পাশাপাশি এ আউটলেটটির জন্য লিখছেন তিনি।
এ আলাপচারিতাটি শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে জিআইজেএনের চলমান সাক্ষাৎকার সিরিজের অংশ। ওবাজি এখানে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকাতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কিছু সহায়ক টুলের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তার অনুসন্ধানকে সহজতর করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থাগুলো কেন স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর আস্থা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন— কথা বলেছেন সে সম্পর্কেও।
জিআইজেএন: আপনার অনুসন্ধানী কাজের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে প্রিয় এবং কেন?
ফিলিপ ওবাজি জুনিয়র: আচ্ছা, কোনটা খুব প্রিয় তা বলাটা কিন্তু খানিকটা কঠিন। আমার বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন আছে, যা নিয়ে কাজ করাটা খুব জরুরী ছিল, তাই ওই কাজগুলোর কথা আমি কখনই ভুলব না। তবে আমার করা সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করতে পারি। এইতো, কয়েক সপ্তাহ আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে গিয়ে কাজটি করেছি। আমি একে আমার সেরা কাজ বলবো। কারণ আমার সঙ্গে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারতো; আমি মারা যেতে পারতাম, অথবা সীমান্তে গ্রেফতার হতে পারতাম, কিংবা মানহানির জন্য দীর্ঘদিনের জেল হতে পারত।

২০২৩ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত সেন্টার ফর জার্নালিস্ট (আইসিএফজে) সম্মেলনে ওবাজি জুনিয়রের প্রতিবেদনটি পুরস্কৃত হয়। ছবি: স্ক্রিনশট, আইসিএফজে, লিংকডইন।
আমি বিমানে করে বাঙ্গুইতে গিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইনি, ভেবেছিলাম দেশটিতে প্রবেশের সবচেয়ে ভালো উপায় হবে স্থল সীমান্ত দিয়ে যাওয়া। আমি এমন একটি জায়গায় যাচ্ছিলাম যেখানে সাধারণ সম্প্রদায়গুলোর ওপর বড় রকমের সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ স্থানীয় খনি শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে। ক্যামেরুন সীমান্ত থেকে এ সম্প্রদায়গুলোর অবস্থান খুব বেশি দূরে না। আমি যাত্রা করি ডিসেম্বরে। এরপর গ্রামের কাছাকাছি কোথাও, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের (সিপিসি) কিছু সশস্ত্র লোকের হাতে জিম্মি হই। আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হয়। কথা বলার জন্য রীতিমতো তাদের হাতে-পায়ে ধরি। তবে তারা যখন বুঝতে পারে যে আমি একজন সাংবাদিক ও সত্যিকার অর্থেই স্থানীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলো শুনতে এবং তা নিয়ে কথা বলতে চাই, তখন আমাকে যেতে দেয়, সম্ভবত ছয় ঘন্টা কিংবা তারও বেশি সময় আমাকে আটকে রাখা হয়।
আমি মধ্য আফ্রিকাতে থেকেছি। উত্তরাঞ্চলের কোকির খনি সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার আধাসামরিক বাহিনীর হাতে ওদের কয়েক ডজন লোক নিহত হন। সুতরাং, সেখানে অনুসন্ধান চালানো আর প্রতিবেদন তৈরি করাটা ছিল বেশ কঠিন। আমার ঘুমানোর কোনো জায়গা ছিল না; খোলা আকাশের নীচে শুয়ে থাকতাম। মনে আছে একদিন আমাকে রাস্তার পাশে রাত কাটাতে হয়েছিল। কারণ সত্য বের করে আনাটা খুব জরুরী ছিল; আর আমার এমন কিছু লোকের সঙ্গে আলাপ করা দরকার ছিল, যারা আমাকে গণহত্যা সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেন।
তাই, ক্যামেরুনে ফেরার পথে দেশ থেকে পালিয়ে আসা কিছু লোকের সাক্ষাৎকার নিতে আমি থামি। এ সময় কিছু সৈন্যের নজরে পড়ে যাই। তারা আমাকে গ্রেপ্তার করে অফিসে নিয়ে যায় ও রাতারাতি আটক করে। আমাকে বেল্ট ও ঘোড়ার চাবুক দিয়ে মারধর করা হয়, ক্যামেরা ও ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু কোনো এক উপায়ে পরের দিন মুক্তি পাওয়ার পর, আমি আমার ফোন ও ক্যামেরা ছাড়াই ক্যামেরুনে পৌছাঁই ও মধ্য আফ্রিকাতে ফিরে আসি। সুতরাং, কয়েক দশক ধরে একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার করা সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ এটি। আমি বলতে চাই না… প্রিয়, এ শব্দটিও হয়তো ব্যবহার করতে আমি আগ্রহী নই, তবে একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার কাছে এটি আমার করা সবচেয়ে কঠিন কাজ।

ফিলিপ ওবাজি জুনিয়র মার্কিন ডিজিটাল নিউজ সাইট দ্য ডেইলি বিস্টের জন্য সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চল নিয়ে রিপোর্টিং করেছেন। ছবি: স্ক্রিনশট, দ্য ডেইলি বিস্ট
জিআইজেনএন: একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনি যে অঞ্চলে কাজ করেছেন, সেখানে যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেছেন, তা হচ্ছে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। আপনি কি অন্য কোনো বড় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলতে আগ্রহী?
পিও: অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দায়ী করে— সত্যিকার অর্থে আপনি যখন এ ধরনের গল্পের খোঁজ করেন, তখন যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তা হচ্ছে আপনাকে গ্রেপ্তার বা কোনো না কোনোভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। বলতে পারেন, আমি এ চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করেছি। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকাতে মানব পাচার বড় রকমের সমস্যা, এবং আমি মানব পাচারের ওপর অনুসন্ধান করেছি। প্রতিবার যখন আমি এ কাজটি করি, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। বিশেষ করে লোকেরা আমাকে ইমেইল করে ও আমাকে হুমকি দিয়ে সতর্ক করতে থাকে।
গত কয়েক বছরে আমার বেশিরভাগ প্রতিবেদনই ওয়াগনার গ্রুপ এবং মানব পাচারের ওপরে ভিত্তি করে তৈরি। মানুষ ওয়াগনার সম্পর্কে তেমন কথা বলে না, কারণ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এখন মধ্য আফ্রিকায় রাশিয়ার আধাসামরিক বাহিনীর অপারেশনের দায়িত্বে রয়েছেন। আর রাশিয়ার অপারেশনগুলো খুব বিপজ্জনক, তাই আমাকে থেমে যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে তহবিল জোগাড়। সাংবাদিকদের এটা নিয়ে ধারণা থাকবে যে, কীভাবে এ ধরনের অনুসন্ধানী গল্পগুলো তুলে আনতে কাজ করে যেতে হয়, যা সত্যিকার অর্থেই প্রভাব ফেলে ও পরিবর্তন ঘটায়। তবে এর জন্য প্রচুর অর্থও খরচ করতে হয়।
কিছু কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পেছনে দুই থেকে আড়াই বছর লেগে থাকতে হয়। যদি আমার কাছে এগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল থাকত, তাহলে আমি প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে তা শেষ করতাম, কিন্তু এ পরিমান তহবিল সংগ্রহ করা আমার জন্য কঠিন ছিল, কারণ অনুসন্ধানের কাজে আমাকে বিভিন্ন জায়গাতে যেতে হয়েছে।
আমাকে অন্য যে চ্যালেঞ্জটির মুখোমুখি হতে হয় তা হচ্ছে: অনেক সময় অনুসন্ধান কাজে সূত্র থেকে যে ধরনের তথ্য চাই তা পাই না। সুতরাং আমাকে ওগুলো সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জায়গাতে সশরীরে যেতে হয়। ধারণা করি, আমি এভাবে দুর্দান্ত কিছু তথ্য পাবো। প্রায়ই আমি আমার নিজের অর্থ খরচ করে বিভিন্ন জায়গায় যাই, তথ্য সংগ্রহ করি। এরপর আশা করি, এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য আমাকে যে অর্থ দেওয়া হবে তা অন্তত আমার পরিবহন ও থাকার খরচ পুষিয়ে দিবে… আমি এভাবে কাজ করি। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে গল্পটি তুলে আনবো। আমি এভাবেই কাজ করি, নিজেকে এইভাবেই তৈরি করেছি।
জিআইজেএন: একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনার সবচেয়ে বড় বাধা কোনটি ছিল?
পিও: সম্প্রতি আমি ভীষণ উদ্বেগজনক সময় পার করেছি। আমার ওপর নজরদারি বা গুপ্তচরবৃত্তি করা হচ্ছে কিনা— তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে আমার কয়েকজন পরিচিত আমাকে বলেছে যে, আমি কী করেছি কিছু লোক হয়তো তা জানে । তাই ২০২২ সালে, আমি বার্লিনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে আবেদন করি ও সফলভাবে নির্বাচিত হই। গত বছর, আমি ডিজিটাল নিরাপত্তার ওপর পড়াশুনা করি। এটি সাংবাদিকদের একটি প্রোগ্রাম। এর লক্ষ্য সাংবাদিকরা যেন বুঝতে পারেন যে কীভাবে নিজেকে ডিজিটালি সুরক্ষিত রাখতে হয়। কারণ সাংবাদিক হিসেবে আমরা তো ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করি। ওটা ছিল চার মাসব্যাপী ভীষণ কঠোর এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। আমি নতুন টুল, পন্থা এবং বিভিন্ন বিষয় শিখছি যে কীভাবে নিজেকে নিরাপদ ও ডিজিটাল ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তাই প্রশিক্ষণটি আমার কাছে ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
কোর্সটি করার সময় আমি বুঝতে পারছিলাম সাংবাদিক হিসাবে কাজ করার জন্য অনেক সময়ই আমরা অরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি। মেসেজিং ও কাজের জন্য টাইপ করতে গিয়ে কীভাবে এনক্রিপ্ট করা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হয়, যা বুঝতে পারি না। এখানে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ টুল সম্পর্কে জেনেছি যা পরবর্তীতে আমার কাজের সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার অনেক সাংবাদিকের সত্যিই এই প্রশিক্ষণ থাকা দরকার এবং সেই কারণেই ফিরে আসার পর থেকে আমি নাইজেরিয়ায় সাংবাদিকদের ছোট ছোট প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি যে কিভাবে নিজেদের ডিজিটালি সুরক্ষিত রাখতে হয়। আমি আরও বুঝতে পেরেছি যে, অনেক সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেননি যতক্ষণ না আমি তাদের কাছে এই সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি।
জিআইজেএন: সাক্ষাৎকার গ্রহনের সেরা পরামর্শ বা কৌশল কী?
পিও: আমি প্রতিটি সাক্ষাৎকারের আগে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করি। এমনকি এই সাক্ষাৎকারটির কথাই ধরুন, আপনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আসুন, আমরা কথা বলি।’ আমি কিন্তু আপনার সম্পর্কে খোঁজ-খবর করেছি।
আপনার সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারে বসার আগে, আমি আপনার নাম, বেনন ওলুকা দিয়ে গুগল সার্চ করেছি। প্রতিটি সার্চ রেজাল্টে গিয়ে আমি আপনার সম্পর্কে পড়েছি এবং জিআইজেএনের সম্পাদক হিসাবে আপনার কাজগুলো বুঝতে চেষ্টা করছি। আমি নিজেকে খুব ভালভাবে প্রস্তুত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করি এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। সাক্ষাৎকারের শুরুতে আমি খোশগল্প করি, সাধারণ কথাবার্তা বলি, আমার বিপরীতে যিনি থাকেন তার সঙ্গে সহজ হওয়ার চেষ্টা করি।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর আমি অনেক প্রতিবেদন করেছি, তাই আমি যার সাক্ষাৎকার নিচ্ছি তার প্রতি আমাকে সহানুভূতিশীল হতে হবে। যেমন আমি এমন একজনের সাক্ষাৎকার নিতে যাচ্ছি যাকে হয়তো আধাসামরিক বাহিনী বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে নির্যাতিত হতে বা মারধর খেতে হয়েছে, তখন ওই ঘটনা নিয়ে আমরা আলাপ করি। কী ঘটেছে সে সম্পর্কে কথা বলি। তবে ওই খারাপ অভিজ্ঞতাগুলোর বাইরেও আলোচনা করি। যতটা পারি শোনার চেষ্টা করি।
এছাড়াও আমি সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখি। কারণ আপনি যদি সাক্ষাৎকারটি প্রয়োজনের চেয়ে দীর্ঘ করেন তবে এক পর্যায়ে তা খানিকটা অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। আমি এটি করার চেষ্টা করি। লেখাটি শেষ করার পর যে জায়গাগুলোতে অস্পষ্টতা থাকে সেগুলো বুঝে ওঠার জন্য আবার ফোনে কথা বলে নিই। বিষয়গুলো পুরোপুরি স্পষ্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমি বারবার ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলি।
জিআইজেএন: আপনার পছন্দের রিপোর্টিং টুল, ডেটাবেস বা অ্যাপগুলোর কথা বলুন, যেগুলো আপনি আপনার অনুসন্ধানে ব্যবহার করেন?
পিও: আমি অপতথ্য নিয়ে অনেক অনুসন্ধান করেছি এবং লোকেদের সনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে যখন আফ্রিকাতে রাশিয়ার অপারেশনের প্রসঙ্গ আসে। আমি যে টুলগুলো ব্যবহার করি তার মধ্যে একটি ইনভিড প্রজেক্ট। এটি একটি ভিডিও টুল যা গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলো সনাক্ত করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা মূল্যায়ন করে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাশিয়া থেকে পশ্চিমা দেশগুলো ও মধ্য আফ্রিকাতে প্রচুর ট্রল ছড়ানো হয়, যা অনেক ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তি তৈরি করে।
যারা ফেস রিকগনিশন চেক করতে চান তাদের জন্য আমি পিমআইজ ব্যবহারের পরামর্শ দেব। আপনি যদি সাধারণ গুগল সার্চ করেন তাহলে সম্ভবত এই [তথ্য] গুলো দেখাবে না। কিন্তু পিমআইজ আপনার সামনে অনলাইনে থাকা সব ছবি তুলে ধরবে এবং অনুসন্ধানের অনুমতি দিবে। যদি কেউ কোথাও আপনার একটি ছবি তুলে থাকে এবং তারপর এটি কোথাও পোস্ট করে থাকে বা ইন্টারনেটে কোথাও ব্যবহার করে থাকে, পিমআইজ আমাকে সেই ছবিটি অনলাইনে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
ল্যাম্পিয়ার নামে আরেকটি টুল আছে, যা বিশ্লেষণমূলক কাজগুলোতে ফোকাস করে। আপনি ওয়েবসাইটের সঙ্গে সংযুক্ত ইমেইল এবং ফোন নম্বরগুলো অনুসন্ধান করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, যদি আমি এই টুলে আপনার ইমেল বা ফোন নম্বর দেই, এটি আমাকে প্রতিটি ওয়েবসাইট দেখাবে যেখানে এই ইমেইল ও ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও এসএমএটি (এখন সেটি ওপেন মেজারস নামে পরিচিত) নামে একটি টুল রয়েছে । এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ টুল যা একাধিক প্ল্যাটফর্ম জুড়ে উদীয়মান প্যাটার্নগুলো খুঁজে পেতে ব্যবহার করা হয়। অনলাইনে ঘৃণা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করতে আমি এটি ব্যবহার করি। এগুলো হচ্ছে নতুন টুল যা আমি খুঁজে পেয়েছি, যেগুলো আফ্রিকাতে ওয়াগনার গ্রুপ ও রাশিয়ার কর্মকাণ্ডগুলো বিশ্লেষণ করতে আমার কাজে সহায়তা করেছে।

ছবি: স্ক্রিনশট, ওপেন মেজারস
জিআইজেএন: আপনার ক্যারিয়ারে আপনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো পরামর্শ কী পেয়েছেন এবং একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
পিও: আমি যেখানেই যাই সেখানেই একটা কথা বলে থাকি, তা হচ্ছে “সেরা সাংবাদিক সেই ব্যক্তি যিনি গল্প বলার জন্য বেঁচে থাকেন।” অনেক মানুষ আমার কাজ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন এটা জেনে যে, আমাকে খুব বিপজ্জনক এলাকায় যেতে হবে। যেসব জায়গাগুলোতে গিয়ে আমি কাজ করি বা যাদের পেছনে লেগে থাকি, তারা সাংবাদিকতা পছন্দ করেন না, আমাদের দেখতে চান না। তারা সব সময় বলে যে, এটি যদি আপনার জীবনের জন্য হুমকি তৈরি করে বা আপনার জীবননাশের কারণ হয় তাহলে কাজটি করা মোটেই মুল্যবান কিছু নয়। হ্যাঁ, এটি একটি ভাল উপদেশ। তবে কখনও কখনও আমি যে গল্পগুলোর পথ ধরে যাই, তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করি তা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আমি নিজেকে সুরক্ষিত রাখার সম্ভাব্য সমস্ত উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
তরুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আমি যা বলব, এটি খুব কঠিন কাজ এবং কখনও কখনও আপনি হাল ছেড়ে দিতে পারেন। তবে অধ্যবসায়ই মূল চাবিকাঠি। আপনাকে তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। এমন কিছু গল্প আছে যা খুব দ্রুত সামনে আনা উচিৎ নয়। এটি হয়তো অন্য কোনো ঘটনা দিয়ে ছাপিয়ে যেতে পারে বা অন্য কেউ তা প্রকাশ করে দিতে পারে, এক্ষেত্রে অধ্যবসায় ও ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু অনুসন্ধানে অনেক সময় লাগবে, কিন্তু খুব ভালো রিপোর্ট পেতে যদি সেটাই করতে হয়, তাহলে তা-ই করুন। গল্প বলা একজন সাংবাদিকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত, অর্থ নয়। সুতরাং, আপনাকে টিকে থাকতে হবে, চাকরিতে মনোযোগ দিতে হবে, আর কিছু নয়। কোনো কিছু দিয়ে আপনি নিজেকে বিভ্রান্ত হতে দিবেন না।
কোনোভাবেই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। তহবিলের জন্য আবেদন করতে থাকুন এবং নতুন উপায়, নতুন স্থান ও নতুন প্ল্যাটফর্মের জন্য গবেষণা চালিয়ে যান যা সাংবাদিকদের তাদের কাজের জন্য সহায়তা করবে। এটা শুধু কাজের জন্য তহবিল দিয়ে শেষ হয় না; প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও আপনার সমর্থন প্রয়োজন। আপনাকে নিজেকে খুব ভালোভাবে গড়ে তুলতে হবে কারণ এমন অনেক কিছু আছে যা আপনি একজন তরুণ সাংবাদিক হিসেবে জানেন না। কিছু জিনিস আপনি চাকরি করতে করতে শিখবেন, বাকি বিষয়গুলো আপনি নতুন প্রোগ্রাম, নতুন কোর্স এবং আপনার কাছে যা আছে তার মাধ্যমে অর্জন করবেন। শেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিজেকে উন্মুক্ত রাখতে হবে।
জিআইজেএন: আপনার পছন্দের সাংবাদিক কে এবং কেন?
পিও: আমার প্রথম সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত ক্রিস্টোফার ডিকি। যিনি ছিলেন ডেইলি বিস্টের বিদেশী সম্পাদক। তিনি আমাকে সাংবাদিকতা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। অতীতে যখন তিনি নিউজউইকে কাজ করতেন তখন আমি তার করা রিপোর্টগুলো পড়তাম। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তার প্রতিবেদনগুলো পড়তাম। আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। আমি জানতাম না যে একদিন আমি তাকে আমার সম্পাদক হিসেবে পাব। তিনি আমাকে সাংবাদিকতা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছেন: কীভাবে লিখতে হয়, কোন বিষয়ের ওপর ফোকাস করতে হয় এবং কীভাবে গল্পটি সর্বোত্তম উপায়ে বলতে হয়। সুতরাং, আপনি এমনভাবে একটি গল্প বলুন যাতে পাঠকদের মনে হবে তারাও আপনার সঙ্গে আছে। তাই আমি যদি উত্তর নাইজেরিয়াতে কোনো বোমা বিস্ফোরণের ওপর রিপোর্ট করি, তিনি আমাকে এমনভাবে রিপোর্টটি করতে বলতেন যেন, আমি পাঠকদের সেখানে নিয়ে যাই।
আমার বর্তমান সম্পাদক নিকো হাইন্স ভীষণ চমৎকার একজন মানুষ। আমি তার কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। তার কাজ আমাকে পাঠের অভ্যাসে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আরেকজন ছিলেন [ওয়াশিংটন পোস্টের অপ-এড কলামিস্ট] জামাল খাশোগি। আমি এ মানুষগুলোকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছি।
আমি যে কারণে বেশিরভাগ বিদেশী সাংবাদিকদের উল্লেখ করছি তা হচ্ছে, আমি সত্যিই নাইজেরিয়ায় একজন লেখক হিসেবে আমার সাংবাদিকতা শুরু করিনি। একজন সাংবাদিক হিসাবে আমি প্রথম স্বাক্ষরটি রেখেছিলাম পশ্চিমা একটি প্ল্যাটফর্মের হয়ে। কিন্তু আমি নাইজেরিয়াতে খুব ভালো কিছু গল্প দেখেছি। ফিসায়ো সোয়োম্বোর মতো আমার খুব ভালো বন্ধুও আছে। আমার জন্য তিনি খানিকটা অনুপ্রেরণাও। অন্য অনেক সাংবাদিকের মধ্যে যাদেরকে আমি দেখেছি, ডেভিড হুনডেইন তেমন একজন চমৎকার মানুষ, একজন ভালো লেখক যিনি নাইজেরিয়ায় অনেক পরিবর্তন এনেছেন। সুতরাং, এদের কথা উল্লেখ করতে চাই কিন্তু আমি পশ্চিমা সাংবাদিকদের কথা উল্লেখ করেছি কারণ আমার লেখালেখির শুরু সেখানে।
জিআইজেন: আপনি সবচেয়ে বড় ভুল কী করেছেন এবং আপনি তা থেকে কী শিক্ষা নিয়েছেন?
পিও: এমনও সময় ছিল যখন আমি অনুসন্ধান করেছি কিন্তু একাধিক সূত্র থেকে তথ্য পাইনি। আজ আর সেই ভুল করি না। এখন আমি যতটা সম্ভব এমন বেশি মানুষ খুঁজে পেতে চেষ্টা করি যারা অনুসন্ধানটিকে সমর্থন করবে বা অন্য কিছু বলতে পারবে। কিন্তু আমি যা করি তা হলো যতটা সম্ভব উৎস অনুসন্ধান। মধ্য আফ্রিকার কোকিতে একটি খনি সম্প্রদায়ের গণহত্যার ওপর আমার সর্বশেষ অনুসন্ধানের কথা বলতে চাই। আমি প্রায় ১৬জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। অতীতে আমি হয়তো দুই, তিন, বা চারজন লোকের সঙ্গে কথা বলতাম। কোনো কোনো অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আমি সপ্তাহ বা এমনকি মাস পর্যন্ত সময় নিই এবং নিশ্চিত হই যে, হ্যাঁ, আমার কাছে যে তথ্য আছে তা সঠিক।
জিআইজেএন: আপনি কীভাবে আপনার কাজের চাপ সামলান?
পিও: ডেইলি বিস্টের সৌন্দর্য হচ্ছে তারা আমার সঙ্গে নিজেদের কর্মীর মতো আচারণ করে, কারণ আমি তাদের হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে লিখছি। আমিও নিজেকে এ পরিবারের অংশ হিসেবে দেখি। তাই পরামর্শের জন্য আমি সবসময় ডেইলি বিস্টে আমার সম্পাদকদের কাছে যাই। আমি মূলত একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, একাধিক প্ল্যাটফর্মের জন্য লিখি। বেশিরভাগ সময়ই আমি একা কাজ করি। তারা আপনাকে অ্যাসাইনমেন্ট দিবে, বা আপনি তাদের কাছে কোনো প্রতিবেদনের প্রস্তাবনা দেবেন এবং অনুমোদনের পর কাজে নামবেন। তবে যখন আপনি মানসিক স্বাস্থ্য বা আইনি সমস্যার মুখোমুখি হবেন তখন আপনার কথা অনেকেই বিবেচেনা করবে না— এটাই চ্যালেঞ্জ। সুতরাং, আপনি সেই অর্থে যাদের জন্য লিখছেন তাদের কাছ থেকে এ ধরনের সমর্থন পাওয়াটা খুব কঠিন।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোন বিষয়গুলো আপনি হতাশাজনক বলে মনে করেন, বা ভবিষ্যতে কেমন পরিবর্তন আসবে বলে আশা করেন?
পিও: আমি আপনাকে একটি উদাহরণ দেই। আফ্রিকার কিছু দেশে— ক্যামেরুন, মালি এবং এমনকি সেনেগাল— যেখানে আমাকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করতে হয়েছিল। আমি আমার কয়েকজন সহকর্মী, সতীর্থ সংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, এটি বলতে যে, “আমি এখন এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আমরা কী একসঙ্গে এটা নিয়ে কাজ করতে পারি? অথবা আপনি আমাকে কী কোনো সাহায্য করতে পারেন?” প্রথম প্রথম তারা আমাকে উৎসাহিত করবে, আশাবাদী কথাবার্তা বলবে। কিছুদিন পরে, তারা নিরব হয়ে যাবে, আপনি তাদের কল করবেন, তারা ধরবে না। এমনকি তারা আপনার ক্ষুদে বার্তারও কোনো উত্তর দিবে না। যা হতাশাজনক হতে পারে। ওয়াগনার গ্রুপের এই শেষ প্রতিবেদনের করতে গিয়ে বিষয়টি আমার সঙ্গে অনেকবার ঘটেছে। যা খুবই হতাশাজনক, বিশেষ করে যখন আপনি ফলাফল অর্জনের খুব কাছাকাছি পৌঁছাবেন।
আমি আশা করি আগামীতে স্থানীয় সাংবাদিকেরা বিদেশী সংবাদ সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে। আপনি একটি ঘটনার কথা ভাবুন, ধরুন, উত্তর নাইজেরিয়ার কোনো সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। বেশিরভাগ সময় যেমনটা হয়, বিদেশী আউটলেটের কোনো একজন সাংবাদিককে আবুজায় নিয়ে আসা হয়, এরপর হেলিকপ্টারে করে মাইদুগুরিতে, তিনি সেখানে দুই বা তিন ঘন্টা সময় ব্যয় করেন, স্থানীয় লোকেদের সাক্ষাৎকার নেন এবং ফিরে আসেন। দেশে ফিরে উত্তর নাইজেরিয়ার সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন লিখেন।
বিদেশি সাংবাদিক কিন্তু স্থানীয়দের মতো করে ওই গল্পটি বলতে পারেন না। আমি আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি বিদেশী সংবাদ সংস্থা স্থানীয় সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। নাইজেরিয়ায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আছেন, যারা মেধাবী। যদি তাদের সুযোগ দেওয়া হয়, তারা খুব ভাল করবে এবং দেখা যাবে যে ওই গল্পগুলো সত্য ও সঠিকভাবে বলা হয়েছে। কখনও কখনও বিদেশী সংবাদদাতারা বিষয়টি ধরতে পারেন না, কারণ তারা প্রকৃতপক্ষে এলাকা, মানুষ, এমনকি স্থানীয়দের মতো করে চলমান পরিস্থিতিগুলো বুঝে উঠতে পারেন না।
বেনন হারবার্ট ওলুকা জিআইজেএনের আফ্রিকা সম্পাদক ও উগান্ডার মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক। এছাড়া তিনি ২০২৩/২০২৪ আফ্রিকান ইউনিয়ন মিডিয়া ফেলোশিপ কোহর্টের মেন্টর। ২০০৮ আকিনটোলা ফাতোয়িনবো আফ্রিকা শিক্ষা সাংবাদিকতা পুরস্কার (প্রথম পুরস্কার, ইংরেজি বিভাগ), ২০১১সালের সিএনএন-মাল্টিচয়েস আফ্রিকান জার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড (পর্যটন বিভাগ) এবং থমসন বিজয়ী হিসেবে আফ্রিকা মহাদেশে তিনবার তার কাজগুলো স্বীকৃত হয়েছে। তরুণ আফ্রিকান সাংবাদিক হিসেবে তিনি রয়টার্সের ২০১১ নিল ফিটজজেরাল্ড পুরস্কার লাভ করেন।