প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

কমোরোসের অনুসন্ধানী সাংবাদিক হায়াত আবদুর কাছ থেকে যা শেখার আছে

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

Hayatte Abdou

অলংকরণ: স্মারান্দা তোলোসানো জিআইজেএনের জন্য এঁকেছেন

আমাদের চলমান ধারবাহিক সাক্ষাৎকারের অংশ হিসেবে এবার কমোরোসের ন্যাশনাল ম্যাগাজিনের রিপোর্টার হায়াত আবদুর সঙ্গে কথা বলেছে জিআইজেএন। কমোরোস এমন একটি দ্বীপরাষ্ট্র যেখানে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের আধিপত্য বিরাজ করে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনঠাসা। সেখানে যে গুটি কয়েক অনুসন্ধানী সাংবাদিক রয়েছেন, তাদের একজন আবদু। নিজের দুঃসাহসী ওয়াচডগ রিপোর্টিংয়ের কারণে তিনি বহুবার হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সহকর্মী সাংবাদিক আলি আবদুর (আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই) হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাহসী প্রতিবেদনের জন্য তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন, অথচ এই সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনাকে দেশটির সরকার মোটেই গুরুত্ব দেয়নি ।

১. আপনার সমস্ত অনুসন্ধানী কাজের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের কোনটি এবং কেন?

হায়াত আবদু: কমোরোসের কর কর্তৃপক্ষ এজিআইডির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানটি আমার খুব প্রিয়। ধর্ষণের ঘটনায় দায়মুক্তি বা সহকর্মী আলি আবদুর মৃত্যু নিয়ে লেখার মতো এই লেখাটি লিখতে গিয়েও আমার হাত কাঁপেনি, বরং উপভোগ করেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমার অনুসন্ধানে কষ্ট, দুঃখ ও ক্ষোভের বিষয় থাকে। তবে কর কর্তৃপক্ষ নিয়ে প্রতিবেদন লেখার সময় আমার অন্তর জুড়ে ছিল প্রশান্তি। ঘটনাটি সবাই জানত, কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে মুখ না খোলেনি। কমোরোসের সবাই যা ভাবছিল, আমি কেবল তাই বলেছি — আর আমার বিশ্বাস, এই সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার এখনই সময়। তাই সত্যিই আমি লেখাটি উপভোগ করেছি।

২. আপনার দেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

হা. আ.: আমি অন্যদের কথা বলতে চাই না, তবে সাধারণত কমোরোসে সাংবাদিক হিসেবে নিজের ব্যয়ভার মেটানো রীতিমত একটি সংগ্রাম। অনেক সাংবাদিকই নিজেদের পেশাগত আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন না। তাই প্রত্যেকেই সাধ্যমত অন্যান্য কাজও করে থাকেন।

কোনো অনুসন্ধান করা বেশ ব্যয়বহুল এবং অনেকের কাছে এ ধরনের অনুসন্ধানী প্রকল্প শুরুর আর্থিক সার্মথ্য থাকে না। আর সাহস করে কেউ কোনো নিবন্ধ লিখলেও প্রকাশের দিন দেখা যায়, পত্রিকায় সেই শব্দগুলো নেই – হয় সবকিছু বাদ দেয়া হয়েছে, নয়তো বদলে দেয়া হয়েছে।

আমার ধারণা, এই বিষয়গুলো আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।

তবে আমার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো নিজেকে নিয়ে ভয়; নিজেকে সন্দেহ করার অভ্যাস। নিজেকে প্রশ্ন করা: আমি কি ন্যায্যতা বজায় রাখতে পেরেছি? আমি কি সঠিক তথ্য দিতে পেরেছি? তথ্যটি কি যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ ছিল? আমি কি পাঠকদের প্রত্যাশা মেটাতে পারছি?

আরও ভাল কাজ করতে, সবসময় নিজেকে প্রশ্নের মুখে রাখতে আর নিজেকে আরও কিছুটা সামনে এগিয়ে নিতে আমি এই ভয়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আমি বলতে চাই যে আমি যেদিন কারাগারে যাব, সেটা হবে অন্যায়, কারণ এই নয় যে আমি একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, বরং কারণ হলো আমি আমার কাজটা ভালোভাবে করেছি। আর ঠিক এই ভয়টাই আমি কাজে লাগাই।

৩. অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনার সামলানো সবচেয়ে বড় বাধা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

Hayatte Abdou photo

কমোরোসের এই ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রে কর্মরত গুটি কয়েক অনুসন্ধানী সাংবাদিকের একজন ন্যাশনাল ম্যাগাজিনের রিপোর্টার হায়াত আবদু। ছবি: আবদুর সৌজন্যে

হা. আ.: আমি স্থানীয় সংবাদে কাজ করি না। আর আমার বস ক্রিস্টেল বোর্দো এমন একজন মানুষ, যিনি বলেন “সবুজ সংকেত, ম্যাম, এগিয়ে যান। বিষয়টি দারুণ।” তিনি কখনই লম্বা সময়ের জন্য আমাকে একা ছাড়েননি। অনুসন্ধান কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে তিনি সবসময় ওয়াকিবহাল থাকেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমার ওপর তাঁর আস্থা আছে। তিনি প্রায়ই বলেন, আমরা ব্যতিক্রম, অন্যদের মত নই। আমাদের অনলাইন গণমাধ্যম ন্যাশনাল ম্যাগাজিনে আমরা একসঙ্গে কাজ শুরুর পর থেকে তিনি একবারও আমার কোনো শব্দ বাদ দেননি বা আমার কোনো বিষয়ে বাধা দেননি। তিনি সবসময় প্রক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করেন এবং কখনোই চাপিয়ে দেন না। তাই এ ব্যাপারে আমাকে কখনোই সেন্সরশিপ বা সেলফ-সেন্সরশিপের ধকল সামলাতে হয়নি।

আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক আলী আবদুর (হায়াত আবদুর সঙ্গে তাঁর কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই) মৃত্যু নিয়ে একটি লেখা ছাপানোর পর সত্যিই মনে হয়েছিল, আমি বিপদে আছি। মামলার দায়িত্বে থাকা সাবেক প্রসিকিউটর জেনারেল সবাইকে, বিশেষ করে সাংবাদিকদের, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন। তবে বিপদের মুখে আমি প্রচুর সমর্থন পেয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে সত্যিকার অর্থেই কমোরোসে আমার সহকর্মী সাংবাদিকদের একাত্মতা ও আত্মনিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমি কেবল তাঁদের কথাই বলছি না, বরং গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (জিআইজেএন) সম্পর্কেও বলতে হয়, কারণ তারা আমার পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। জিআইজেএনের ভূমিকা অঞ্চল নির্বিশেষে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাজে সমর্থন ও প্রচারের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।

আমার মতে, এখন সবচেয়ে বড় বাধা হলো চাপ, নিরুৎসাহিত করা…এমন কিছু কথা যেমন, “এসব নিয়ে কেন নাড়াচাড়া করছেন?” অথবা “সবাই এ ব্যাপারে জানে, আর কথা বলতে চায় না, এটি কোনো খবর নয়।” তবে কোনো কিছুকে স্বাভাবিক মনে করার মানে এই নয় যে আমাদের এটি গ্রহণ করা উচিত। কখনো কখনো অনেকে এমন কিছু বলবে, “নারী হিসেবে আপনার ভয় হয় না?” অথবা “এ ধরনের বিষয় আপনার পুরুষ সহকর্মীদের ওপর ছেড়ে দেন না কেন, কারণ নারীরা এমনিতেই দূর্বল।” এমনকি, “আপনার এই ছাইভষ্ম বন্ধ করুন!”

৪. সাক্ষাৎকার নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার সেরা কৌশল কী?

হা. আ.: সাধারণত, আমি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি। আমার মতে, সাক্ষাৎকারদাতাদের কথা শোনা, তাদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, তাদেরকে বোঝা এবং নিজেকে সবসময় সঠিক প্রমাণের চেষ্টা না করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আপনার সামনে বসা মানুষটি যদি মিথ্যাও বলে, সেই মিথ্যা একান্তই তার আপনার উচিত শোনা ও বিনয়ী থাকা। আপনার সামনে যেই থাকুক না কেন, বিনয় ও সম্মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। আপনি যা চান, তা অনেক সময় হাসি ও “প্লিজ” দিয়েই বাগিয়ে নিতে পারেন। যারা আমাকে তাদের গল্প বলে আমি প্রায়ই তাদের বলি, “অনেক প্রশ্ন করে আপনাকে আমি নাজেহাল করলেও এর মানে এই নয় যে, আমি আপনার বিপক্ষে, বরং আমি বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে চাইছি।”

৫. আপনার অনুসন্ধানে ব্যবহৃত প্রিয় রিপোর্টিং টুল, ডেটাবেস বা অ্যাপ কোনটি?

হা. আ.: আগে আমি গুগলে সার্চের মত কেবল মৌলিক কাজগুলো করতাম। জিআইজেএন, ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে), এবং নর্বার্ট জঙ্গ সেল ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ইন ওয়েস্ট আফ্রিকা (সেনোজো) এর মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি মিডিয়া অ্যান্ড ডেমোক্রেসি প্রজেক্টের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি৷ এখন এটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। আর যখন বুঝতে পারি না যে কোথায় খুুঁজতে হবে – তখন আমি সোজা প্রশ্ন করি।

৬. আপনার পেশাজীবনে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ভালো পরামর্শ কী ছিল আর সম্ভাবনাময় কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

হা. আ.: আমাকে দেওয়া সেরা পরামর্শ হলো “চুপ থাকো এবং নিজের কাজ কর।” আর এই একই পরামর্শ আমি অন্যদেরও দিতে চাই। আমাদের পাঠকরা আমাদের মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চান না, তারা তথ্য চান, সত্য তথ্য। এটি আরও জরুরি, কারণ আমরা নিজেদের জন্য কাজ করছি না, আমাদের কাজ মানুষের জন্য, নাগরিকদের জন্য। আপনার কাজ করে যান আর আপনি যাদের জন্য কাজ করেন, আপনাকে বিচারের ভার তাদের হাতে ছেড়ে দিন। সাংবাদিক এবং আমাদের স্টোরি সংশ্লিষ্ট চরিত্রগুলো- দু’পক্ষের জন্যই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কখনও কখনও কষ্টের কারণ হতে পারে। তাই আমার মতে, এটি নিরবে করে যাওয়াই ভাল।

৭. একজন সাংবাদিকের নাম বলুন, যার প্রতি আপনার মুগ্ধতা কাজ করে এবং কেন?

হা.আ.: প্রশ্নটি আমার জন্য কিছুটা জটিল, কারণ আমার একজন নয়, বরং তিনজন! এমন তিনজন সাংবাদিক আছেন, যাঁরা কমোরোসের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে কীর্তি রেখে গেছেন, যাঁরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তাঁদের পেশার জন্য লড়াই করেছেন। তাঁদের দেখানো পথেই আমরা আজকের এই কাজ করতে পারি।

প্রথমত, এএফপির প্রাক্তন সংবাদদাতা ও স্থানীয় পত্রিকা আর্চিপেলের প্রতিষ্ঠাতা আবুবাকার ম্যাকাঙ্গামা। তারপর আছেন আরএফআই-এর প্রাক্তন সাংবাদিক এবং ন্যাশনাল কাউন্সিল অব দ্য প্রেস অ্যান্ড অডিওভিজ্যুয়ালের প্রাক্তন পরামর্শক কামালেদ্দিন সাইনদু। দু’জন মিলে স্বাধীন মাসিক পত্রিকা কাশকাজি প্রতিষ্ঠা করেন। আর তারপর আছেন আল-ওয়াতওয়ান প্রকাশনার সাবেক পরিচালক আহমেদ আলী আমির। নিঃসন্দেহে তাঁরা কমোরোসের সেরা সাংবাদিকতার আদর্শ। আর তাঁরা আমারও আদর্শ।

৮. আপনার সবচেয়ে বড় ভুল কী ছিল আর এই ভুল থেকে আপনি কী শিখেছেন?

হা. আ.: আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল পূর্বকল্পিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা নিয়ে মাঠে নামা। আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে শুরুর অনুমান নয়, বরং মাঠে যা পাবেন, তাই আপনার অনুসন্ধানের গতিপথ নির্ধারণ করে।

সাংবাদিক আলী আবদুর মৃত্যুর পর আমি তিউনিসিয়ার একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গিয়েছিলাম। আমি সেখানে একদিন আলী আবদুর বোনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা বলছিলাম। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে তাঁর বড় ভাইয়ের “স্বাভাবিক” মৃত্যু হয়নি।

Ali Abdou death investigation - Hayatte Abdou

হায়াত আবদুর প্রতিবেদনে সহকর্মী সাংবাদিক আলী আবদুর মৃত্যু নিয়ে সরকারের অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি উঠে এসেছে। ছবি: স্ক্রিনশট, ন্যাশনাল ম্যাগাজিন কমোরোস

আমি একেবারেই নির্বোধ ছিলাম। আবদুর মৃত্যু নিয়ে তৎকালীন প্রসিকিউটরের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে আমার ভাবনাগুলো প্রভাবিত হয়েছিল। তাই আমি আবদুর বোনের কথায় গুরুত্ব দেইনি, মনে হয়েছিল, শোকাহত এই অল্পবয়সী মেয়েটি হয়ত কেবল নিজের মনগড়া কথাই শোনাতে চাইছে।

কমোরোসে ফিরে আমি তিনিসহ আবদু পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, প্রসিকিউটরের কথাগুলো তখনও আমার মাথায় ঘুরছে। আমার বিশ্বাস ছিল, তিনি এ ধরনের ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না। আমার মতে, এটি এক কথায় অসম্ভব। এমনকি সেই পরিবারের কথা শুনেও আমার মাথায় তখনও অনেক প্রশ্ন ঘুরছিল।

পরে, আমার নিজের ওপর রাগ হয়েছিল, কারণ আমার ভাবনা আর বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। আলি আবদুর লাশের ছবি দেখে আমাকে মেনে নিতে হয়েছিল যে আমি ভুল ছিলাম আর সেই সঙ্গে আমার ধারণা পুরোপুরি বদলে যায়। (তাঁর প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে আবদুর শরীর রক্তে ডুবে ছিল আর একটি চোখে সম্ভাব্য হামলার চিহ্ন ছিল স্পষ্ট। তিনি আরও দাবি করেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যে ব্যক্তির জমি নিয়ে বিরোধ ছিল, তার সঙ্গে তদন্তকারী প্রসিকিউটরের সম্পর্ক ছিল।)

আর নিজের ভুল স্বীকার করা মোটেও সহজ নয়। তাই আমি শিখেছি: আমি এখনও পূর্বানুমান দিয়েই শুরু করি, তবে জানা সবকিছু ভুলে গিয়েই তারপর রিপোর্টিং শুরু করি। তাই পূর্বানুমান একপাশে রেখে, আমি শুনি, শিখি এবং রিপোর্ট যে পথ দেখায়, সেই পথ ধরে চলি।

৯. আপনি কাজের চাপ কীভাবে সামলান?

হা.আ.: অনুসন্ধানের শুরুতে আমি জানতাম, কাজটি কঠিন, তবে কতটা কঠিন, তা জানতাম না। এক সময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সমস্যাটা কী, তখনও জানতাম না। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার আমাকে দেখে বলেছিলেন, আমি পরিশ্রান্ত।

কখনও কখনও আমি এক সপ্তাহ ধরে ঘুমাতে পারতাম না। ঘুমানোর জন্য শারীরিক কসরত করে নিজেকে ক্লান্ত করতে হত। আমার পায়ে ক্লান্তি ভর না করা পর্যন্ত আমি দৌঁড়াতে থাকি। বেশিরভাগ দিন ব্যায়াম দিয়ে শুরু করি। ফলে আমার শরীর শিথিল হয়, ভাল বোধ হয় এবং আরও ভালো ঘুম হয়।

বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটানোও জরুরি, যারা হাত ধরে আপনার নিজের যত্নের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কথা বলে আপনাকে বোঝাতে পারে, আপনাকে বোঝাতে পারে যে ‘কিছু না করে কেবল বিশ্রামের জন্য’ কখন ছুটি নিতে হবে… এমনকি আপনার কম্পিউটার জব্দ করে হলেও।

১০. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোন বিষয়টি আপনার কাছে হতাশাজনক বলে মনে হয়, অথবা সামনে কী পরিবর্তনের আশা করেন?

হা.আ.: আমার কাছে সবচেয়ে হতাশাজনক হলো কয়েক মাস সময় নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার পরও, প্রভাবের অপেক্ষায় বসে থাকা। আমি শেয়ার বা লাইকের সংখ্যা বা এমনকি ফলোয়ারের সংখ্যা নিয়ে বলছি না। 

আমি প্রতিক্রিয়া, পরিণতি, প্রভাবের মত সেই বিষয়গুলোর কথা বলছি যা প্রত্যাশিত, হতে পারে বিচার ব্যবস্থা থেকে একটি পদক্ষেপ নেওয়া হলো বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাউকে জবাবদিহি করলো।

কিন্তু, দুঃখের বিষয়, যখন কিছুই হয় না, তখন আসলে উপর থেকে ধপাস করে পড়ার মতো অবস্থা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকেই উল্টো বিচার, হয়রানি ও হুমকির শিকার হতে হয়।

যাইহোক, শেষ পর্যন্ত, আমি সবসময় ফিরে আসি, নিজেকে সান্ত্বনা দিই, আর আশ্বস্ত করি। সর্বোপরি, আমরা সব কিছুর ওপর বিবেক, স্মৃতি ও রেকর্ডকে গুরুত্ব দিই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের বিবেকের কাছে পরিস্কার থাকাে এবং নিজেকে বলা, “আমি আমার কাজ করেছি, বাকিটা আমার হাতে নেই” এবং তারপর পরবর্তী কাজে যান, তা সে যতই তেতো লাগুক।

আরও পড়ুন

আমি যা শিখেছি: দ্য ক্যারাভানের বিনোদ কে. যোশির শিক্ষা ও পরামর্শ

সম্পাদকের বাছাই: ২০২১ সালে ফরাসি ভাষার সেরা অনুসন্ধান

গাইড টু ইনভেস্টিগেটিং অর্গানাইজড ক্রাইম ইন আফ্রিকা


ম্যাক্সিম কোয়ামি ডোমেগ্নি জিআইজেএনের ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকা সংস্করণের সম্পাদক এবং পদকজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তিনি টোগোর পত্রিকা এল’ অল্টারনেটিভের প্রধান সম্পাদক এবং সেনেগালের ডাকারভিত্তিক বিবিসি আফ্রিকায় সাংবাদিক ও ফরাসি-ভাষী আফ্রিকার পরিকল্পনা প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের ২০২৪ সালের সেরা গাইড ও টিপশিট

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সাংবাদিকদের। তথ্য সংগ্রহ, অংশীদারত্বমূলক কাজ, প্রকল্পের অর্থ যোগান , পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা জ্বালানী বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার রসদ পেতে বেশ কিছু গাইড প্রকাশ করেছে জিআইজেএন। দেখুন এই প্রতিবেদন।

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএনের ২০২৪ সালের সেরা অনুসন্ধানী টুল

কৌতূহল, সাহস ও অংশিদারত্ব বছরজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছে। এই সাংবাদিকতাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে দারুন কিছু টুল। একনজরে দেখে নিন চলতি বছরের সাড়া জাগানো অনুসন্ধানে ব্যবহৃত টুল ছিল কোনগুলো।

সম্পাদকের বাছাই

প্রাণঘাতী আন্দোলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি অনুসন্ধান: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

আরও স্থান পেয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুসন্ধান, জনসংখ্যার ডেটা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গরমিল ও ক্ষমতাধর পুলিশ প্রধানের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসঙ্গ।

অনুসন্ধান পদ্ধতি শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ‘হাব’ যেভাবে একটি প্রজন্মের রিপোর্টারদের তৈরি করেছে

মেক্সিকো সীমান্তে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য তাঁদের পেশাটা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কেন্দ্রে যাঁরা সাংবাদিকতা করেন, তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তো ছিলই, ছিল সার্বক্ষণিকি নিরাপত্তাহীনতাও। সাংবাদিকেরা একজোট হয়ে এই দূরত্ব ঘুঁচিয়ে আনতে গড়ে তোলেন একটি সংগঠন। প্রয়োজনীয়ল প্রশিক্ষণ শেষে হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা অনুসন্ধান করে তুলে আনেন বেশ কিছু প্রতিবেদন।